বোকা প্রেমিকা part 2

0
926

#বোকা_প্রেমিকা
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট২
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষেধ)

পহেলা ফাল্গুন আজ।প্রকৃতি নানা ইঙ্গিতে জানান দিয়ে দিচ্ছে বসন্ত এসে গেছে।যুবক-যুবতী,তরুণ-তরুণীরা জোড়া বেঁধে ঘুরতে বেরিয়েছে।বর্ষণও তার ব্যাতিক্রম যায় নি।আদিবাকে নিয়ে সেও ঘুরতে বেরিয়েছে।দুজনেই দুজনের সাথে মিল রেখে পরেছে হলুদ শাড়ি আর পাঞ্জাবী।জল প্রেমিকা হিসাবে বড্ড বেমানান।রগচটা,জেদি,কথা কম বলে।এমন মেয়ে কখনো প্রেমিকা হওয়ার যোগ্যতা আদোও কি রাখে?প্রেমিকা হবে বাচ্চাটাইপের।বাঁচাল, হাসিখুশি।জল সেরকম মেয়ে নয় দেখেই তো বর্ষণের জীবনে আদিবাকে আসতে দেওয়া।বর্ষণের কাঁধে মাথা দিয়ে পার্কের একটা ব্রেঞ্চে বসে ছিলো আদিবা।হঠাৎ করেই এক কিশোরী বেলিফুলের মালা নিয়ে হাজির হয়।আদিবা বর্ষণের কাছে বেলিফুলের মালার বায়না ধরে।বর্ষণ বেশ খুশী মনেই আদিবার জন্য বেলিফুলের মালা কেনে।আদিবা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,,,

” পরিয়ে দাও।”

বর্ষণ আদিবার দিকে তাকিয়ে কিঞ্চিৎ হাসে।জলের থেকে বর্ষণ এগুলো আবদার কখনোই পেত না।তিন বছরের সম্পর্ক জল বর্ষণের।অথচ এই তিনটে বছরে জলের আঙুল ছোঁয়াও হয়ে ওঠেনি বর্ষণের।অথচ কয়েকটা মাসেই আদিবা বর্ষণকে কত কাছে টেনে নিয়েছে!হাতেগুনে দুই একবার বর্ষণ জলকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছে।তাও বর্ষণ নিজে থেকে বলেছিলো বলে।জল এখন পর্যন্ত কখনো বর্ষণের কাছে আর পাঁচটা প্রেমিকার মতো ঘুরতে যাওয়ার বা কিছু কিনে দেওয়ার আবদার করেনি।উল্টো বর্ষণকে প্রায়ই সে টাকা দেয় যাবতীয় প্রয়োজন মেটানোর জন্য।এইদিক দিয়ে জল ভালো আছে।জলের জন্য এই টাকার শহর ঢাকাতে বর্ষণ কখনো টাকার অভাব অনুভব করেনি।মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে হওয়ায় অনেক শখও অপূর্ণ থেকে যায় বর্ষণের।কিন্তু জলের সাথে সম্পর্কের পরে আজ পর্যন্ত কোনো শখ ইচ্ছে অপূর্ণ থাকে নি বর্ষণের।
কথা গুলো মনের মধ্যে আওড়াতে আওড়াতে বর্ষণ মুচকি হাসে।আদিবার ডাকে তার ধ্যান ভাঙে।

” কি হলো?পরিয়ে দাও!”

বর্ষণ মুচকী হেসে আদিবার হাতে বেলিফুলের মালা পরিয়ে দেয়।আদিবার কোমল হাতে আলতো করে হাত বুলিয়ে বলে,,,

” পৃথিবীর সমস্ত সৌন্দর্য যেন বিধাতা তোমাকেই দিয়েছে।”

বর্ষণের কথা শুনে আদিবা লজ্জা পায়।সংকুচিত লাজুক কন্ঠে বলে,,

” তুমিও না…!”

” আমিও না কি?”

” পাগল একটা!”

লাজুক কন্ঠে বলে আদিবা।

অনুষ্ঠান শেষে সেই পার্কের পাশ দিয়েই যাচ্ছিলো জল।বর্ষণ আদিবাকে একসাথে দেখে জলের বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে।সে বর্ষণকে ফোন দেয়।প্রথমে বর্ষণ ফোন রিসিভ না করলেও তৃতীয় বার ফোন রিসিভ না করে থাকতে পারেনি।

” হ্যালো।”

” ফোন ধরলে না যে?বিজি আছো?”

” হু।কিছু কাজ ছিলো তো….”

” থাক আমি আর ডিস্টার্ব করলাম না।”

আবারও বর্ষণকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই জল ফোন কেটে দেয়।যদিও বর্ষণের এতে কিচ্ছু যায় আসে না।বর্ষণের এ হেন ব্যবহারে জলের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ আরও বেড়ে যায়।একটা মানুষ আর কতই বা সহ্য করবে?ছোটবেলা থেকে দ্বন্দের মাঝে বড় হয়েছে জল।বরাবরই ভালোবাসার কাঙালিনী ছিলো সে।কিন্তু প্রকাশ করেনি।বর্ষণের জীবনে তো জল নিজে থেকে আসে নি!বর্ষণ নিজেই জলের জীবনে এসেছে।সবটা জানার পরও বর্ষণের জলের প্রতি কিসের এত অবহেলা?নাকি জলের অসহায়ত্ব দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে বর্ষণ?আর থাকতে পারছে না জল।না পারছে সে সইতে।না পারছে কিছু বলতে।বর্ষণের দেওয়া সামান্য সময় টুকুই জলের কাছে আকাশ সমান।এর কারণেই সে বর্ষণকে ছাড়তে পারছে না।মায়া কি অদ্ভুত জিনিস।একটা মানুষকে তিলে তিলে শেষ করার জন্য মায়াই যথেষ্ট!

বাসায় এসেই নিজের ঘরে ঢুকে খট করে দরজা লাগিয়ে দেয় জল।যদিও এই বিশাল বাড়িতে জল আর একজোড়া চড়ুই,আর কিছু ক্ষুদ্র কীটপতঙ্গ ছাড়া কোনো প্রাণী নেই।তবুও জল চায় না ওর বিষাদের আওয়াজ এই অন্ধকার ঘর থেকে বের হোক।অন্ধকার আর বিষাদের মধ্যে জল অদ্ভুত মিল খুঁজে পায়।বিশেষ করে রঙের দিকটা।অন্ধকারের রঙও কালো বিষাদের রঙও কালো।পার্থক্য শুধু এটাই যে একটা চোখে দেখা যায় আর আরেকটা অনুভব করে নিতে হয়।

সময় বদলায়,মানুষ বদলায়।তিনবছর আগের এইদিনেই বর্ষণ জলের একসাথে পথচলা শুরু।ভার্সিটির বসন্তবরণ উৎসবে গান গেয়েছিলো জল।সেখানেই বর্ষণকে জলের প্রথম দেখা।যদিও বর্ষণ অনেক আগে থেকেই জলের ওপর নজর রাখছিলো!নির্জনে একা সিগারেট টানতে গিয়ে প্রথম জলের গান শুনে সে।আড়াল থেকে মেয়েটাকে দেখেই তার প্রেমে পড়ে যায় বর্ষণ। যাকে বলা যায় Love at first side..খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারে মেয়েটা একই ডিপার্টমেন্টের ফার্স্ট ইয়ারের। এতদিন ধরে একই ছাদের তলে আছে তারা অথচ জলকে সে আগে কখনো দেখেনি ক্যাম্পাসে!ক্লাসে গিয়েই জলকে সে নিজের হৃদয়ের অনুভূতির কথা জানিয়ে দেয়।জল তখন কোনো কথা বলে নি।চুপচাপ উঠে চলে আসে।মায়ের মতো ভুল সে করবে না।সে চায় না কোনো পুরুষ কেন! পুরুষের ছায়াও যাতে তার জীবনে না আসে।এরা জাত ঠকবাজ,প্রতারক। কিন্তু জলের আবেগ,অনুভূতি, মায়া জলকে জলের সিদ্ধান্তে অনড় থাকতে দিলো না।সেই এড়িয়ে যেতে যেতেই জড়িয়ে যায় জল।তিন বছর আগে এই দিনে জল মঞ্চে গান পরিবেশন করছিলো ঠিক সেখানেই মঞ্চের বা পাশে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে জলকে দেখছিলো বর্ষণ।গান শেষ করে যখন জল নামছিলো তখনই বর্ষণ,,,,

” ম্যাম বিগ ফ্যান..can i get your facebook id?”

ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র।এড রাখা নেহাৎ খারাপ না। অনেক সময় দরকার হলে পাওয়া যাবে।তাই জল বর্ষণকে ওর ফেসবুক একাউন্টের নাম বলে আসে।বর্ষণ সাথে সাথে রিকোয়েস্ট পাঠায়।ডিপিটা কেমন যেন জলের!একটা ঝুলন্ত মেয়ের ছায়া।যেন সে ফাঁসি দিয়ে ঝুলে আছে।বর্ষণ প্রোফাইল ঘেটেগুটে দেখে জলের কোনো ছবিই নেই।একটাই ছবি রয়েছে।তা ওই অদ্ভুত ডিপিটা। যা গত চার বছর জুড়ে ওভাবেই পরে আছে।ছেলেদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা মানা যায়।এরা এক ডিপি দিয়েই বছরের পর বছর ফেসবুক ব্যবহার করে যায়।কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অকল্পনীয় বেমানান।যে খানে মেয়েরা মুড চ্যাঞ্জ হলেই ডিপি চ্যাঞ্জ করে সেখানে জল চার বছর ধরে একই ডিপি দিয়ে রেখেছে!ব্যাপারটা অবাক করারই মতো।
বর্ষণ জলকে প্রথম মেসেজ দেয় কোনো এক ডে/স্টোরিকে বাহানা দিয়ে।

” ব্যাপার কি?তুমি এত স্যাড স্যাড ডে পোস্ট দাও!”

” এমনি ভাল্লাগে।”

রিপ্লাইটা দিয়ে জল বর্ষণকে ইগ্নোর করে দেয়।দেড়মাস পর জল বর্ষণের ইনবক্সে যায়।দেখে হাজারো মেসেজ।জল এক্টিভ স্ট্যাটাস অফ করে রাখে সবসময়।সেদিনের পর থেকে জল ওর ফেসবুক এক্টিভিটি কোনো এক কারণে কমিয়ে দেয়।জলকে ফেসবুকে না দেখে বর্ষণ উতলা হয়ে যায়।মেসেজের উত্তর না পেয়ে ক্যাম্পাসেও জলের খোঁজ লাগায়।জলকে পেয়েও যেন হারিয়ে ফেলে।একটা কথা আছে না?নিজে থেকে হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলোকে কখনো খুঁজে পাওয়া যায় না।জল আর বর্ষণের ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটাই হয়েছে।জল নিজেকে আড়াল করে রেখেছিলো।তাই জলকে বর্ষণ খুঁজে পায় নি।কিন্তু সেদিন বর্ষণের রিপ্লাই না পাওয়া হাজার হাজার মেসেজ দেখে জলের হৃদয়ে বর্ষণের জন্য একটা আলাদা জায়গার সৃষ্টি হয়।

” আচ্ছা ভাইয়া!আপনি আমার পেছনে এভাবে পরে আছেন কেন?”

” অপেক্ষা করছি।”

” নাহ!নিজেকে ছোট করছেন।এভাবে একটা মেয়ের পেছনে পরে থেকে আপনি নিজেই নিজেকে ছোট করছেন।সস্তা করছেন।”

” আপনার কাছে হয়তো তাই ই।কিন্তু আমার কাছে এই অপেক্ষা করে নিজেকে ছোট করাটা ভালোবাসা।”

বর্ষণের কথায় জল আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব।আর মেয়েরা হচ্ছে আল্লাহর সৃষ্টি করা সবচে সুন্দর মানুষ। এরা খুবই নরম মনের হয়।অনেকটা প্রজাপতির মতো।আপনি প্রজাপতিকে কখনো শক্ত করে চেপে ধরতে পারবেন না।তাহলে প্রজাপতিটা মারা যাবে।কিন্তু ভালোবাসার আলতো ছোঁয়ায় যদি কোনো প্রজাপতিটা ধরেন তাহলে প্রজাপতিটা দিব্যি আপনাকে বিশ্বাস করে আপনার সাথে থেকে যাবে। মেয়েরাও ঠিক তেমন।
বর্ষণের সেই ভালোবাসার আলতো ছোঁয়ার জন্যই আজ জল বর্ষণকে ছাড়তে পারছে না।এত অবহেলা তিতিক্ষার পরেও সে আজও বর্ষণের কাছে পরে আছে।

চলবে,,,ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here