পর্ব ২১+২২
#বৈবাহিক_চুক্তি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্বঃ২১
“রুহান তুমি খাচ্ছ না কেন? এভাবে বসে আছো কেন?”
“খাবো না আমি, তুমি খুব পচা।তুমি আমাকে বড় আব্বুর সাথে যেতে দাও নি, খাব না আমি”
“এটা কেমন কথা?দিনদিন অশভ্য হয়ে যাচ্ছ।খাও বলছি ” ধমক দিয়ে বললো রুশি
“খাবো না, খাবো না, খাবো না ”
“রুহান…” বলেই মারতে ধরলে সায়ান এসে হাত ধরে ফেলে, আর রুহান কান্না করে দেয়।কান্না করতে করতে হিচকি তুলে ফেলছো।
“রুশি, ওকে মারছো কেন?ছোট বাচ্চা ও এতকিছু বুঝে না এখনো ”
“মাম্মা অনেক পচা, রুহান হেটস মাম্মা। কথা বলবো না আমি ”
“আচ্ছা বাবাই খাইয়ে দেই?খেতে হবে তো তোমায় নাহয় তুমি বড় হবে কি করে?”
“মাম্মাকে যেতে বলো নাহয় খাবো না, বলো বলো বলো”
“আচ্ছা রুশি তুমি উপরে যাও, আমি ওকে খাইয়ে নিয়ে আসছি ”
রুশি কিছু বলতে গিয়েও বললো না, আজকে দুইদিন ধরেই রুহান এমন করছে কেমন জানি ওকে দেখতে পারেনা। ও কিছু বললেই চেতে যায় আর দৌড়ে বড় আব্বুর রুমে চলে যায়।দুইদিন ধরে ওর সাথে ঘুমায় না এমনকি ওকে দেখতেও পারেনা। আগে তো ওকে ছাড়া কিছুই বুঝতো না কিন্তু এখন মাকে যেন লাগেই না। রুশি উপরের রুমে এসে পায়চারি করছে।
“বাবাই, তুমি মাম্মাকে ওইভাবে বলেছো কেন? মাম্মা কষ্ট পেয়েছে না?”
“মাম্মাতো একটুও ভালোবাসেনা আমায়,শুধু মারতে চায়। তুমি না এলে তো মারতোই ”
“না বাবা কে বলেছে, মাম্মাতো অনেক লাভ করে তোমাকে। তুমি খাচ্ছিলে না বলেইতো মাম্মা ওমন করেছে,তুমি না খেলে অসুস্থ হয়ে যাবে না!তুমি যদি খেতে তাহলে কি মাম্মা মারতো? কখনোই মারতো না, মাম্মা তার রুহান বেবিকে অনেক ভালোবাসে ”
“তাহলে বড় আব্বুর সাথে যেতে দেয়নি কেন?”
“ওইখানে তো কতো নোংরা কতো জার্মস , বড় আব্বুতো বড় তাই তার কিছু হতো না, কিন্তু রুহান তো ছোট তাই তাকে সব জার্মস রা এটাক করলে রুহান বেবি কি করবে?এজন্য মাম্মা যেতে দেয়নি কারণ মাম্মাতো রুহানকে ভালোবাসে ”
“ওহ মাম্মাকে যে বকা দিয়েছি মাম্মা কি রাগ করছে?”
“হুমম তাতো করেছে একটু, রুহান যদি তাড়াতড়ি খেয়ে মাম্মাকে স্যরি বলে তাহলে হয়তো আর রাগ করবে না ”
“তাহলে তাড়াতড়ি খাইয়ে দাও, মাম্মার কাছে যাবো ”
সায়ান রুহানকে খাওয়াচ্ছিল তার মধ্যেই রুহানের বড় আব্বু ফিরেছে, বয়স তার সত্তরের কোঠায় পৌছালো বলে তবে দেখে বুঝা যায় অনেকটা স্ট্রং তিনি। এখনো লাঠি ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন তবে একটু ঝুকে চলেন।
“রুহান দেখো কি এনেছি তোমার জন্য! ”
“বড় আব্বু এসে গেছে, কি এনেছো আমার জন্য দেখাও দেখাও ”
“এই যে চকলেট আর এই গাড়িটা ”
“কতো সুন্দর গাড়ি!!” রুহান গাড়িটি হাতে নিয়ে চকলেট গুলো খাওয়া শুরু করলো। সায়ান ভাবছে আগে রুহান এতো চকলেট খেতো না কেভিটির ভয়ে তবে দুইদিন ধরে মনে হচ্ছে চকলেটের উপরই আছে। চকলেট ছাড়া অন্য খাবার তেমন একটা মুখে নিচ্ছে না।
“রুহান বাকি খাবার খেয়ে নাও আগে তারপর চকলেট খেও ”
“না আর খাবো না “বলেই দৌড়ে উপরের দিকে চলে যাচ্ছে
“মাম্মার কাছে যাবে না? ”
“পরে যাবো এখন না ” বলেই চলার গতি বাড়িয়ে চলে গেলো, ওকে আর পায় কে!
“দাদাজি এভাবে চকলেট খেলেতো ক্ষতি হবে, ওর জন্য চকলেট কেন আনলেন কেন?”
“কি জানি আমাকে বললো নিয়ে আসতে তাই আনলাম, দুদিন ধরে একটু বেশিই চকলেট খাচ্ছে ও, আমি খেয়াল করেছি। কিন্তু না আনলে তো রাগ করতো ”
“একটু কম আনবেন, ক্ষতি হয়তো খেলে।”
“আচ্ছা আমি বুঝাবো যাতে আর না খায় ” বলেই দাদাজি উপরে চলে গেলেন আর সায়ান রুশির কাছে আসলো।
রুশি রুম জুড়ে পায়চারি করেছিলো, মুখখানি এটুকু করে রেখেছে, সায়ানকে আসতে দেখেই ওর কাছে আসলো
“রুহান কোথায়? ”
“দাদাজির রুমে গেছে, চিন্তা করোনা ঠিক আছে ও। আমি খাইয়ে দিয়েছি ”
“কিভাবে চিন্তা করবো না বলুন দুদিন ধরে কেমন জানি করছে ও, আমাকে মনে হচ্ছে দেখতেই পারেনা”
“এমন ভাবছো কেন তুমি?ছোট বাচ্চা মারতে নিয়েছো তাই এমন বলেছে, ওইটা মনে ধরে রেখেছ কেন? আমাকেও তো বলেছিলো মনে আছে!”
“আমার কেমন অস্থিরতা কাজ করছে মনে হচ্ছে কিছু একটা হবে ”
সায়ান রুশির চিন্তা বুঝতে পারলো, সন্তানের জন্য মায়েরা একটু বেশিই চিন্তা করে আর একটুতেই অস্থির হয়ে যায়। সায়ান রুশিকে জড়িয়ে ধরে বললো
“অযথা চিন্তা করছো, কিছু হবে না ওর। আমাকে বিশ্বাস করোতো? আমি আমাদের সন্তানের কিছু হতে দিবো না ইনশাআল্লাহ ”
রুশির মনে হলো এই কম্ফোর্টজোনের দরকার ছিলো যে বলবে “আমি আছিতো ভয় কিসের ” কি হচ্ছে কি হয়েছে কিছু মনে করতে ইচ্ছে হচ্ছে না বরং এই সময়টাকে আকড়ে ধরে রাখতে ইচ্ছে করছে, কিছু না ভেবে ও সায়ানকে জড়িয়ে ধরলো আর নিজের ভার ছেড়ে দিলো ওর উপর, কান্না পাচ্ছে খুব করে কান্না পাচ্ছে তাই কান্না করে দিলো। সায়ান বাধা দিতে গিয়েও দেয়নি। কাঁদুক এতে মন অনেকটা হাল্কা হয়, রুশি থেকে থেকে কেপে উঠছে, এভাবে কতক্ষণ জানা নেই,কান্নাটা কমে আসলে সায়ান বলে উঠলো
“তা বাবুর জন্য এতো চিন্তা করছো বাবুর বাবার দিকেও একটু তাকাও, বেচারা প্রেমতৃষ্ণায় কাতরাচ্ছে তোমার একটু ভালোবাসা পাবে বলে কখন থেকে অধীর আগ্রহে বসে আছে ”
রুশির মুচকি হেসে বুকে কিল বসাতে শুরু করলো সায়ানের,
“আরে আরে মারছো কেন?”
“আপনি আর বেচারা! ”
“আমার থেকে বড় বেচারা কে বলতো? সুন্দরি বউ পাশে আছে অথচ তাকে হিসেব করে ভালোবাসতে হচ্ছে ”
“তাই সুযোগের সৎ ব্যাবহার করলেন তাইতো? ছাড়ুন আমাকে ছাড়ুন বলছি ”
“না থাক আর কিছু বলবো না, তবুও ছাড়তে বলোনা ”
রুশি কিছুক্ষণ চেষ্টা করে ছাড়াতে না পেরে সায়ানের বুকে মুখ লুকিয়ে আছে আর সায়ান আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে, এমন সুযোগ দ্বিতীয় বার নাও পেতে পারে।
“বস কাজ মনে হয়ে গেছে,বাচ্চাটা দেখলেন তো কেমন বিহেভ করলো ”
“হুম দেখলাম, তুমি সবার দিকে নজর রেখো যাতে ধরা না খাও ”
“বস আপনিও সাবধানে থাকবেন যাতে আপনাকে সন্দেহ না করে”
“পুরো দুনিয়ার উপর আংগুল উঠলেও সায়ান জামিল খান আমি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবে না, আচ্ছা রাখি কয়েকদিন হয়তো যোগাযোগ করতে পারবো না কারণ আমার উপর সন্দেহ আসুক চাইনা আমি ”
ইনান বারান্দায় দাঁড়িয়ে গোধুলি লগ্ন উপভোগ করছে, ময়মনসিংহ শহরটি আসলে অনেক সুন্দর, চারদিকে পানি আর পানি যেন কোন দ্বিপ। তারউপর এই প্রাসাদের মতো বাংলোটি লোকালয় থেকে একটু দূরে। চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়েই ছিলো তখন কেউ একজন ওকে জড়িয়ে ধরলো, ও জানে নারীটি কে তবে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না, এই মুহুর্তটাকে অনুভব করতে চায় হয়তো এরপর আর কখনো ভাগ্যে নাও থাকতে পারে।
“কিছু বলছেন না যে? এখানে আসার পর একটা কথাও বলেননি আমার সাথে”
“সেই সুযোগ পেলাম কই? ”
“মন থেকে চাইলে সব পাওয়া যায় ”
“আচ্ছা মন থেকে চাই তোমাকে একটা কিস করতে, সেটা কি পাবো? ”
“আপনি সবসময় এমন বেশরম এর মতো কথা বলেন কেন?থাকবোই না এখানে ” হাত ছাড়িয়ে চলে যেতে নিলে ইনান হাত চেপে ধরে
“উহুম এভাবেই থাক, ভালো লাগছে এভাবে থাকতে ”
সামু আর হাত ছাড়িয়ে নিলো না।
“ভাইয়াকে কবে বলছেন আমাদের কথা?”
“কি কথা?”সামনে ফিরে ভ্রু কুচকে বললো,
“আরে এই যে আমাদের মধ্যে আছে আরকি ”
“কি আছে আমাদের মধ্যে! ” না জানান ভান করে
“ও তাহলে কিছু নেই?তাহলে আমি কেনো আছি এখানে চলে যাই ” যাওয়া ধরলেই ইনান বাধা দিয়ে বললো
“কি আছে সেটাতো বলে যাও?”
“কিছুই নেই হয়েছে!”
“কিছুই নেই? আমি আরো ভাবলাম কালকে তোমার ভাইকে বলবো আমাদের বিয়ের কথা, কিন্তু কিছু যেহেতু নেই তাহলে আর কি করার! ”
“আমি তাই বলেছি নাকি?”
“বলেছো তো ”
“তো আপনিও তো বলেছেন যে কি আছে আআমাদের মধ্যে তাই বলেছে ”
“আমি তো ভাবি অনেক কিছুই আছে আমাদের মধ্যে কিন্তু তুমি কি ভাবো তাই ভাবছি ”
“সবসময় সব কথা মুখে বলতে হয়না, কিছু কথা বুঝে নিতে হয় ”
“আচ্ছা তাই!” বলেই টুপ করে গালে ঠোট ছোঁয়ালো,সামু চোখ বড় বড় করে বললো।
“এই এটা কই করলেন? ”
“তুমি বলেছো তাই করেছি “ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে
“আমি কখন বললাম? ”
“বললে তো আমি শুনেছি ”
“একদম মিথ্যে বলবেন না, আমি মুখ দিয়ে একটা শব্দও করিনি ”
“সব কথা কি মুখে বলতে হয় নাকি? কিছু কথা বুঝে নিতে হয় আর আমি বুঝে নিয়েছি ”
“একদম ফালতু কথা বলবেন না, আমি মোটেও এমনটা বলিনি ”
“ও আচ্ছা তাহলে ভালোলাগে নি তোমার তাইনা। ওকে তাহলে ফেরত দিয়ে দাও ”
“যাহ কি বলেন এসব ” বলে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো
“হাহা পাগলি ”
ইনান চুলে হাত দিয়ে হেসে বললো।
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্বঃ২২
“কিরে শালা মারছিস কেন এভাবে?”
“চুপ একদম শালা বলবিনা, এটা এখন থেকে আমার অধিকার। সম্মান দিয়ে কথা বল নাহয় কিছুই হবে না বুঝলি!”
ইনান মুখের মাঝে ইয়া বড় এক প্রশ্ন বোধক চিহ্ন ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করতে এসেছিলো।আজ তিনদিনে পা দিলো এ বাড়িতে এসেছে কিন্তু আজকেই সায়ানের এমন উদ্ভট ব্যাবহার দেখছে, আসার পর থেকেই মারছে তারউপর কিসব বলছে নিজে বুঝতে পারছে কিনা সন্দেহ
“কি বলছিস এসব?”
“একদম না জানার ভান করবিনা, আমি জানি সবকিছু ওকে!” সিরিয়াস ভংগিতে বললো সায়ান
ইনান একটু কেন জানি ঘামতে শুরু করলো, কি জানে ও? তারপর ভাবলো যদি জানে তাহলে এত নরমালি কথা বলতো না, তবে এখন সায়ান ক্রমশ সিরিয়াস ভাবে কথা বলছে, কি জানে ও!
“রুশি আমাকে সব বলে দিয়েছে বুঝলি! শালা আমার বাড়িতে আমার নাকের নিচে আমারি বোনের সাথে প্রেম করছিস আর আমি টেরই পেলাম না? তুই ব্যাটা সারাজীবনই গভির জলের ফিশ রয়ে গেলি ”
“ওহ, যখন জানিসই তাহলে এখন কি বলিস এ ব্যাপারে? ” রিল্যাক্স মুডে বললো ইনান।
“এটা কি ধরনের কথা? আমি তোর গার্লফ্রেন্ড এর বড় ভাই। কই সম্মান দিয়ে কথা বলবি তানা তুই এটিটিউড দেখাচ্ছিস?যদি আমি রাজি না হই?”
“তোর সাথে আমার সবার আগের সম্পর্ক হলো আমি তোর বন্ধু, আর আমি জানি বন্ধুর সুখের জন্য তুই যেকোন কিছু করবি ”
“শালা প্যাচে ফেলছিস! আমি নাহয় তোর সুখের জন্য সব করবো কিন্তু তুই! তুই কি আমার সুখের জন্য সব করবি?”
“সেটা সময় বলে দিবে “বলেই একটা ব্রেড মুখে দিয়ে চিবোতে চিবোতে সেই স্থান প্রস্থান করলো, আর সায়ান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে
“আমাকে ইগনোর করে চলে গেলো?আমি আমার বোনকে বিয়ে দিচ্ছি নাকি তুই দিচ্ছিস? মনে হচ্ছে জোর করে বোনকে চাপাচ্ছি, সায়ান তোর সম্মান দেখি দিনদিন লো হচ্ছে! ইদানীং কি বেশি কথা বলি আমি?”
ইনান সামুর রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, নক করতে গিয়েও না করে ভেতরে ঢুকে গেলো। সামু এখনো ঘুমাচ্ছে, রুমে ঢুকে বেশ অবাক হলো ও, একটা টেডি জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে ও। বিশ বছরের একটা মেয়ে বাচ্চাদের মতো ঘুমাচ্ছে ভেবেই হাসি পেলো। খুব আস্তে খাটের পাশে সামুর মুখ বরাবর বসে খুব গভীর ভাবে দেখছে।
“আমি জানিনা ভবিষ্যতে আমাদের ভাগ্যে কি আছে, তবে এইটুকুর মধ্যে এটা সত্যি আমি তোমাকে খুব করে চাই, সারাজীবন তোমার খেয়াল রাখতে চাই। আমি অনেক খারাপ একটা মানুষ, হয়তো জীবনে অনেক ভুল করেছি সামনেও হয়তো করবো তবে তোমাকে নিজের করার জন্য জন্য আমি সব কিছু করতে রাজি আছি, আমি চাইলেই তোমার দ্বারা আমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি কিন্তু তোমার কিছু হলে যে নিজেকেই হারিয়ে ফেলবো আমি তখন তো জিতে গিয়েও হেরে যাবো। তাই এমন কিছু করবো যাতে সাপও মরে যায় আর লাঠিও ভেংগে যায়, পারলে ক্ষমা করে দিও আমায়। যদি বেচে থাকি তাহলে আবার দেখা হবে ”
ইনান সামুর কপালে ছোট্ট একটা কিস করে উঠে দাঁড়ায় আর পকেট থেকে একটা চিরকুট বের করে সামুর হাতে গুজে দিয়ে যায়। দরজা দিয়ে বের হতেই সায়ানের সাথে ধাক্কা খায়, সায়ান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে
“ওই তুই একা আমার বোনের রুমে কি করছিস? বিয়ের আগে আর কখনো একসাথে যাতে না দেখি ”
“হুম” বলে চলে যেতে নিলে সায়ান হাত ধরে বলে
“ঘুমের মধ্যে কি কথা বললি ওর সাথে?ওতো ঘুমাচ্ছে ”
“আজ চলে যাচ্ছি তাই গুড বাই বলতে এসেছিলাম ”
“চলে যাচ্ছিস মানে কোথায় যাচ্ছিস? ”
“ঢাকায়, একটু দরকার আছে ”
“হুম তাড়াতড়ি আংকেল আন্টিকে নিয়ে আসিস, বিয়ের কথা বার্তা বলতে হবে ”
“এত তাড়াহুড়ার কিছু নেই ওর গ্রেজুয়েশন পর্যন্ত আমি ওয়েট করতে পারবো ” বলে সামুর দিকে তাকালো
“ওকে উঠিয়ে দেই কথা বলে যা ”
“না ঘুমোক, ফোনে কথা বলে নিবো ”
“ওকে, বের হচ্ছিস কখন?”
“এখুনি, গুড বাই ”
“ভালো থাকিস, তোকে খুব মিস করতাম ” বলেই ইনানকে জড়িয়ে ধরলো সায়ান, ইনান হাত উঠিয়ে জড়িয়ে ধরতে গিয়েও ধরলো না ”
🌸🌸🌸
তিনদিন পর রাত ১২.০৩
রুশি ডায়রি লিখছিলো, সচারাচর লিখার অভ্যাস নেই তবে এই বিশেষ দিনে লিখতে ভুলে না, আজ ওর বার্থডে। কলকাতায় থাকাকালীন সুজি উইশ করতো একটু আগেও ফোন করে উইশ করেছে, ও ছাড়া বাকি কেউ হয়তো জানেই না ওর বার্থডে এর কথা। আজ রুহান ওর সাথে ঘুমাবে। দুইদিন ধরে রুহান ওর সাথে আগের মতো কথা বলে, আগের মতো খেলে। সবকিছু মনে হচ্ছে ঠিক হয়ে আসছে। সায়ান কে ক্ষমা করে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে, এই কয়দিনে এটা বুঝে গিয়েছে যে এই লোকটি ওকে ছেড়ে কখনো যাবে না, তার সাথে যাই করুক তার লাইফের একমাত্র প্রেয়সী শুধুমাত্র সেই। রবি ঠাকুরের একটা উক্তি আছে
“যদি ক্ষমা করতে নাই পারো তবে ভালোবাসো কেন?”
আসলেই তারা দুজনেই পরিস্থির স্বিকার ছিলো আর নিতান্তই ভুলবুঝাবুঝি ছিলো দুজনের মাঝে। তাছাড়া সেদিন এয়ারপোর্টে নিজের চোখে তার শত্রুদের দেখেছে, তারমানে যা বলেছে সব সত্যি। তাই আর রাগ পুষে রাখতে চায়না, কারণ এই রাগের বশে তাদের জীবনের সুন্দর মুহুর্ত গুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে। ও আর কতোদিনই বা বাচবে?তবে যতদিন বাচে এই পরিবারের সাথে বাচতে চায় হাসিখুশি ভাবে। রুশি লিখছিলোই হঠাৎ লাইট অফ হয়ে যায়, ও ভয়ে জড়োশড় হয়ে যাচ্ছে, অন্ধকারে ছোট থেকেই ভয় লাগে। সায়ানকে ডাকবে কিন্তু আওয়াজ বের করতে পারছেনা। তখনি হালকা সাউন্ড আসছে বারান্দা থেকে, টুংটাং গিটারের আওয়াজ সাথে এককা মিষ্টি সুর,,,
“থোড়ি জাগাহ দে দে মুঝে
তেরে পাস কাহি রেহ যাউ মে
খামোশিয়া তেরি সুনু
অর দূর কাহি না যাউ মে
আপনি খুশি দেকে মে তুঝে
তেরি দারদ সে জুড় জাউ মে
মিলা যো তু ইহা মুঝে
দিলাউ মে ইয়াকিন তুঝে
রাহু হোকে তেরা সাদা
বাস ইতনা চাহতা হু মে ”
সায়ান চোখ বন্ধ করে গান গাইছিল, চোখ খুলেই পাশে রুশিকে দেখতে পেলো, গিটারটা পাশে রেখে উঠে দাঁড়াল তারপর পাশের রাখা গিফট বক্সটা নিয়ে বললো
“হ্যাপি বার্থডে”
“থ্যাংক ইউ” বলে গিফট হাতে নিলো ছোট্ট একটা বক্স র্যাপিং করা, বুঝাই যাচ্ছে রিং এর বক্স।
“খুলে দেখো ”
রুশি র্যাপিং খুলতেই একটা কালো রঙয়ের একটা বক্স, বক্সটা খুলার আগেই সায়ান নিয়ে নিলো তারপর নিজেই খুললো। প্লাটিনামের দুটি কাপল রিং, খুব সুন্দর ডিসাইন এর। রুশির সামনে হাটু গেড়ে বসে বললো
“আই নো আই মেড প্লেন্টি অফ মিস্টেকস, হয়তো ক্ষমা করার মতো না, তবুও বলছি আমাকে কি একটাবার ক্ষমা করা যায়না! আমি সারাজীবন তোমার পাশে থাকতে চাই, আমি তোমাকে খুব করে চাই আর সারাজীবন চাইবো। একটা সুযোগ দিবে আমায় ভালো হাজবেন্ড হওয়ার ”
রুশি কি বলবে বুঝতে পারছেনা,চোখ গড়িয়ে দুফোটা জল পড়লো, এমন সারপ্রাইজ ও কখনো পায়নি। কিছু বলতেও যেন মুখে বাজছে তাই হাত বাড়িয়ে দিলো, সায়ান তার উত্তর পেয়ে গিয়েছে তাই রুশির হাতে পরিয়ে দিলো তারপর দাঁড়িয়ে রিং এর বক্স এগিয়ে দিলো, রুশি মুচকি হেসে রিং পরিয়ে দিলো।
তারপর হাত এগিয়ে দিলো ডান্স করার জন্য, বেকগ্রাউন্ডে মিউজিক চলছে খুব আস্তে
I need your love
I need your time
When everything’s wrong
You make it right
I feel so high
I come alive
I need to be free with you tonight
I need your love…
ডান্স করতে করতে রুশির খুব কাছে চলে এসেছে সায়ান, একপাশের চুলগুলো সরিয়ে গলায় গভিরভাবে ঠোট ছোঁয়াল, তারপর কানের কাছে আস্তে করে বললো “মে আই?” রুশির শক্ত করে জড়িয়ে ধরা যেন সব না বলা কথা বলে দিচ্ছিলো, রাত যত গভীর হচ্ছে অনুভুতিরা তত জড়োশড় হচ্ছে আর দুটি মন এক হওয়ার আকুতিতে ব্যস্ত, অপেক্ষা শুধু সময়ের,,,
পরবর্তী পর্ব পড়তে পেইজটি তে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন
#চলবে
(এক দুই পর্বে শেষ হয়ে যাবে গল্পটি, সবাইকে আর বেশিদিন কষ্ট করে থাকতে হবে না🙂)