#বেসামাল_প্রেম
#লেখা_জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_১৩
আজ পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় মেয়েটি যেন সূচনা৷ যাকে কিনা নিজের স্বামীর নিকট সতীত্বের পরীক্ষা দিতে হবে। সিদ্ধান্তটি তার নিজেরই। তার স্বামী তাকে এরূপ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেনি৷ তবুও তার আড়ালে যে ঘটনাগুলো ঘটছে সেগুলো টের পেয়ে নিজ থেকেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আদেও কি এমন কোনো পরীক্ষা আছে? যা প্রমাণ করবে সে সতী নারী? সূচনা এসবে অবগত নয়৷ তবে একদিন অতি প্রিয় এক বান্ধবীর কাছে শুনেছিল, একজন পুরুষ যখন একজন নারীকে গভীরভাবে স্পর্শ করে, ঠিক তখনি বুঝতে সক্ষম হয় তার করা স্পর্শ গুলো নারীটির জীবনে পাওয়া প্রথম স্পর্শ কিনা! নিজেকে নিয়ে সম্পূর্ণ কনফিডেন্ট সূচনা। ইতিপূর্বে কোন পুরুষের সঙ্গেই সে ঘনিষ্ঠভাবে মিশেনি। লিমনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক থাকলেও যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখেছে সব সময়। তাই নিজের প্রতি প্রবল বিশ্বাস রেখেই বারকয়েক ঢোক গিলল সে। নির্লিপ্ত কণ্ঠে ডাকল,
-” মাহের? ”
মৃদু নড়ে পাশ ফিরে তাকাতেই চমকে ওঠল মাহের। দৃষ্টি অসংলগ্ন করে বলল,
-” বলুন। ”
-” উই শুড বি ইন্টিমেট! ”
আকস্মাৎ ওঠে বসল মাহের। বিস্মিত দৃষ্টিতে কয়েক পল সূচনার পানে তাকিয়ে রইল। সূচনা মাথা নিচু করে টলমল দৃষ্টিজোড়া নিক্ষেপ করল বিছানার চাদের। মাহের থতমত খেয়ে বলল,
-” এই আবেদনটি তো ভালোবাসার নয় সূচনা, বন্ধুত্বেরও নয়। ”
সহসা মাথা তুলে ফ্যালফ্যালে চাহনি ছুঁড়ে দিয়ে সূচনা বলল,
-” এই আবেদনটি আমার চরিত্রের পরীক্ষার। পরীক্ষা করে দেখুন এরপর আপনার সিদ্ধান্ত জেনে হয় আমরা সম্পর্ক আগাবো নয়তো কাল থেকে এ সম্পর্কের ইতি টানবো! ”
ক্রোধ সংবরণে প্রথমবার বৃথা হয়ে হাত উঁচিয়েও থেমে গেল মাহের৷ বড়ো বড়ো নিঃশ্বাস ছেড়ে ত্যাগ করল বিছানা। দু-হাত কোমরে রেখে বুক টান টান করে মেঝেতে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল কতক্ষণ। সূচনার চোখ বেয়ে নোনা পানির স্রোত নামতে শুরু করল। দীর্ঘক্ষণ চলল পিনপতন নীরবতা। এরপর ব্যর্থ কণ্ঠে মাহেরই প্রথম বলল,
-” বিয়ের পূর্বে আপনার রুচিবোধ নিম্ন ছিল বলে বিয়ের পরও তাই থাকবে এটা আমি মানতে পারব না…”
বাকিটুকু বলতে পারলো না মাহের। তার পূর্বেই সূচনা হুহু করে কেঁদে ওঠল। অথচ একটু সময় দিলেই মাহেরের পূর্ণ কথাগুলো শুনতে পেতো,
-” আপনি আমার স্ত্রী। কোনো প্রয়োজন নেই আপনার সতীত্বের পরীক্ষা নেয়ার। আমার এই দু’টো চোখ কখনো ভুলটা বেছে নিতে পারে না। নিজের প্রতি আমার বিশ্বাস আছে। আপনি পবিত্র ঠিক ফুলের মতোনই পবিত্র সূচনা৷ বিয়ের পূর্বে আপনার রুচিবোধ ভুল ছিল বলেই লিমনের মতো জঘন্য ছেলেটাকে ভালোবেসেছিলেন৷ যে কিনা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আপনাকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করছে। রাগটা আমার এখানেই। কেন আপনি ওর মতো ছেলের সংস্পর্শে গিয়েছিলেন? যে কিনা বিন্দুমাত্র সম্মান দিতে পারেনি আপনাকে। কেন সূচনা কেন? এই ভুলের শাস্তি আমি আপনাকে কীভাবে দেব বলতে পারেন? ”
মাহের বলতে পারলো না। সূচনার কান্নার শব্দে তার সবটা এলোমেলো হয়ে গেল। সহ্য করতে না পেরে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেল সে। শাস্তি সূচনাকে দেয়ার পূর্বে লিমনকে দিতে হবে৷ এরপর না হয় সূচনা কঠিন এক শাস্তি দেবে। যে শাস্তি সারাজীবন বাধ্য করবে সূচনাকে তার বুকের অতি গোপন কুটিরে বন্দিনী হয়ে থাকতে!
লম্বা সময় পেরিয়ে গেল৷ নিজেকে শান্ত করে রুমে ফিরল মাহের। দেখল, কাঁদতে কাঁদতে বিছানার এক কোণে গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে সূচনা। তার একেকটা ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ কর্ণপাত হতেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল সে। ধীরপায়ে এগিয়ে এসে দু-হাতে সন্তর্পণে সূচনাকে কোলে তুলে নিল। কয়েক পল নির্নিমেষ চোখে তাকিয়ে রইল নাক, চোখ ফুলে লালিমা হয়ে ওঠা মুখশ্রীতে। নিজের পুরুষোচিত চিকন, পাতলা ওষ্ঠাধর এগিয়ে সূচনার ললাটপটে গাঢ় একটি চুমু খেল৷ বিরবির করে বলল,
-” আপনি ভীষণ বোকা, ভীষণ অভিমানী। ”
চলবে…