বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ #পর্ব_৬

0
1318

#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_৬
#নবনী_নীলা

আহান বিছানায় গা হেলিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লো তারপর বলল,” কিছু করার নেই এইখানে সব রুমেই এমন বেড। আর এই দুদিন আমাদের বেডটা শেয়ার করতে হবে।”

রুহি আশে পাশে তাকিয়ে দেখলো কোনো সোফা জাতীয় কিছুই নেই। দেখেই রুহির চোখ কপালে উঠে গেলো।

” এখানে সোফা নেই কেনো?”, বিষ্ময় নিয়ে বললো রুহি।
আহান বিছানা থেকে উঠে বসে বললো,” তোমার কি আমাকে এইখানকার ম্যানেজার মনে হয়? আমি কিভাবে জানবো?”

“মানে কি? এইটুকু জায়গায় দুজনে দূরত্ব বজায় রেখে কিভাবে ঘুমাবো?”, চোখে মুখে এখনো তার বিস্ময় ভাব কাটেনি।

” দূরত্ব বজায় যখন রাখতে চাও এসেছো কেনো আমার সাথে? কোনো বাহানা করে থেকে গেলেই পারতে? নাচতে নাচতে তো চলে এসেছো।”,

” দিদা বলেছে, আমার কি দোষ? আপনি আরেকটা রুম নিলেই তো পারেন?”, রাগ দেখিয়ে বললো রুহি।

” এই রুমটা কে বুক করেছে জানো? দিদা করেছে। যাও পারলে গিয়ে নিজের জন্য রুম নেও। যাও সব সময় তো বড়ো বড়ো কথা বলো যাও গিয়ে করে দেখাও।”, আহান এতটুকু বলতেই দরজায় নক পড়লো। আহান ঘাড় কাত করে দরজার দিকে তাকালো তারপর উঠে গিয়ে দরজটা খুললো।

এখানকার একজন স্টাফ ওয়েলকাম জানতে ফুল, পারফিউম আর কিছু জিনিস নিয়ে রুমে এলো। বেশ আলুর মতন চেহারার একজন। লোকটা ভিতরে যাচ্ছিলো আহান তাকে সেখানেই দাড় করালো।

” ওয়েট, কোথায় যাচ্ছো? আর এইগুলো কি নিয়ে এসেছো?”, ভ্রু একবার উপর নিচ করে বললো আহান।

” স্যার এইটা আমাদের ওয়েলকাম জানানোর পদ্ধতি।”, বিনয়ী ভঙ্গিতে বলল লোকটা।

” আচ্ছা ওয়েলকাম জানানোর পদ্ধতি? ফুল পারফিউম ঠিক আছে, এইটা কি? ডিড আই আস্ক ফর ইট?”, বেশ রেগে গিয়ে বললো আহান।

” স্যার এই রুমটা তো হানিমুন প্যাকেজে বুক করা হয়েছে। তাই সবাইকে যেভাবে ওয়েলকাম জানানো হয় আপনাদের ও।”, ভয়ে ভয়ে এতটুকু বোলেই লোকটা থেমে যায়।

আহান অগ্নি দৃষ্টিতে লোকটার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
” জাস্ট গেট আউট।”

লোকটা চলে যাবে সময় রুহি লোকটাকে থামতে বললো তারপর এগিয়ে এসে ট্রে থেকে হলুদ গোলাপের গুচ্ছটা হাতে নিলো। হলুদ গোলাপ রুহির অনেক পছন্দের, তাই ফুল নিয়ে লোকটাকে চলে যেতে দেখে থামালো। লোকটাও সুযোগ পেয়ে থেমে গেলো। আহান ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো,” কি করবে তুমি এটা দিয়ে?”

” হলুদ গোলাপ আমার অনেক পছন্দের কি করবো এটা আবার কেমন প্রশ্ন?”, আহান থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ফুলগুলোকে ধরে দেখতে লাগলো রুহি।
আহান লোকটাকে চলে যেতে বলবে এমন সময় রুহি একটু এগিয়ে এসে বলল,” এখানে এগুলো কি?”
রুহি এগিয়ে যাবার আগে আহান রুহির হাত ধরে পিছনে নিয়ে এলো। এর মাঝে লোকটা বলে উঠলো,” ম্যাডাম এইটা হানিমুন প্যাকেজ।”

আহান প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে বলল,” বললাম না তোমার এই হানিমুন প্যাকেজ আমাদের লাগবে না। জাস্ট গেট আউট।” বলেই লোকটার মুখের সামনে দরজা বন্ধ করে দিলো আহান।

রুহি আড় চোখে আহানের দিকে তাকালো তারপর প্রশ্ন করলো,” আপনি এমন ব্যাবহার করলেন কেনো লোকটার সাথে? কি সুন্দর ফুল, আরো কি কি নিয়ে এসেছিলো। আপনি কি মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করতে পারেন না? ”

” কি নিয়ে এসেছিলো জানো?”, রেগে গিয়ে বললো আহান।

” কি এনেছিলো?”, কিছু বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করলো রুহি।

” জাস্ট শাট আপ।”, ধমক দিয়ে আহান ফ্রেশ হতে চলে গেলো।

“কথায় কথায় খালি মেজাজ দেখায় অভদ্র কুম্ভকর্ণ কোথাগার!”, গাল ফুলিয়ে বললো রুহি।

???

বিকেলে কটেজের সামনের খালি জায়গাটায় আহান আর অফিসের বাকিরা মিলে মিস্টার ফাহাদের সাথে জায়গাটার ব্যাপারে আলোচনা করছিলো। অবশ্যই রুহির সেখানে যাওয়া নিষেধ। গেলেই রেগে বসবে লোকটা। রুহি তাই করিডোরে দাড়িয়ে আছে। চুলগুলো তার খোলা বাতাসে উড়ছে। সূর্য আস্তে আস্তে অস্ত যাচ্ছে। কি অপূরূপ দৃশ্য!

করিডর থেকে নিচের সবাইকে দেখা যাচ্ছে। আহানের সামনের মিস্টার ফাহাদ বসে আছে ওনার ডান পাশে ওনার ম্যানেজার।
আর আহান তাদের সাথে কথা বলছে আর বাকিরা সাথেই বসে আছে। উপর থেকে আহানের চেহারা দেখা যাচ্ছে না সাইড প্রোফাইল দেখা যাচ্ছে শুধু আর মিস্টার ফাহাদকে দেখা যাচ্ছে। রুহি কিছুক্ষণ ওদের দেখলো তারপর দৃষ্টি সামনে স্থির রাখলো।

নীচ থেকে রুহিকে দেখা যাচ্ছে। মিস্টার ফাহাদের চোখ বার বার রুহির দিকে যাচ্ছে। ওনাদের বিসনেস নিয়ে কথা আজকের মতন শেষ যতটুকু দরকার ছিলো তারা করে নিয়েছে। এখন সবাই বসে অন্যান্য কথা বলছে।

” এই জায়গাটা নিয়ে আপনার মতামত কি? আই থিঙ্ক উই গেট হোয়াট উই ওয়ান্ট।”, আহানকে উদ্দেশ্য করে বলল মিষ্টার ফাহাদ।

” হুম, জায়গাটা ভালো কিন্তু সমস্যা অনেক আছে। লেটস ট্রাই আওয়ার বেস্ট।”, বলে মিষ্টার ফাহাদের দিকে তাকালো আহান। মিষ্টার ফাহাদের দেখে মনে হচ্ছে মুগ্ধ হয়ে কিছু দেখছেন। কি দেখে তিনি এতো মুগ্ধ হয়ে আছে। আহান ঘাড় বাঁকিয়ে এদিক সেদিক তাকালো আহানের দৃষ্টি আটকে গেলো রুহির দিকে গোধূলির আবছা হলুদরেখা এসে পরেছে তার মুখে অপরূপা লাগছে তাকে। আহান ঘাড় ফিরিয়ে একবার মিস্টার ফাহাদের দিকে তাকালো। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে তিনি রুহির দিকে তাকিয়ে আছে। আহানের মেজাজ বিগড়ে গেলো। সে জানে না কেনো তবে মিষ্টার ফাহাদের এভাবে রুহির দিকে তাকিয়ে থাকাটা আহানের পছন্দ হয়নি। আহানের চোখ মুখ শক্ত করে কিছুক্ষণ মিস্টার ফাহাদের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর রাগ সামলাতে না পেরে। কলম দিয়ে সামনের টি টেবিলটায় শব্দ করলো। মিস্টার ফাহাদ চোখ সরালো এবং দৃষ্টি আহানের দিকে রেখে তাকালো। হটাৎ এতো গম্ভীর ভাবে আহান তার দিকে তাকিয়ে আছে কেনো? তিনি বুঝতে পারছেন না।

” কি দেখছেন আপনি?”, সরাসরি প্রশ্ন করে বসলো আহান। মিস্টার ফাহাদের দিকে তাকালেই তার রাগ হচ্ছে তার।

আহানের প্রশ্নে মিস্টার ফাহাদ হেসে ফেললো তারপর ইশারায় রুহিকে দেখিয়ে বললো,” হুম, শি ইজ বিউটিফুল।”

আহান নিচের ঠোঁট কামড়ে রাগ সামলাচ্ছে তারপর মাথা নেড়ে নেড়ে বললো,” ইয়াহ, শি ইজ! ….. মাই ওয়াইফ।”, এতটুকু বোলেই নিজের রাগ সামলাচ্ছে আহান।
অন্য কেউ হলে এতোক্ষণে মুখ ফাটিয়ে দিতো আহান। এতো রাগের কারন সে নিজেও বুঝতে পারছেনা।

” নো ওয়ে! অ্যাম রিয়েলি রিয়েলি সরি মিস্টার আহান। আপনি বিয়ে করে ফেলেছেন? কিন্তু কবে ? ইনভিটেশন পেলাম না যে। এভাবে বলার জন্য রিয়েলি সরি।”, কথাগুলো বলতে থাকা অবস্থায় আহান এক্সকিউজ মি বলে উঠে চলে গেলো।

রুহি করিডোরে দাঁড়িয়ে আছে অনেক্ষন হলো কিন্তু তার ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করছে। এতো সুন্দর জায়গা এদের বুঝি ঘুরে বেড়াতে ইচ্ছে করে না?

“রুহি”, হটাৎ করে আহানের কণ্ঠ শুনে রুহি ভয় পেয়ে গেলো। বুকে হাত দিয়ে পিছনে ফিরলো সে। আহান এগিয়ে এসে রুহির সামনে দাড়ালো দুই হাত পকেটে ভরে। শান্ত গলায় প্রশ্ন করলো,” কি করছো?”
রুহি নিজের দিকে আঙুল করে বললো,” আমি?”
” তুমি ছাড়া আশে পাশে কেউ আছে?”, আশে পাশে তাকিয়ে বললো আহান।
” না, আপনি এতো নরম গলায় বলছেন তো তাই ঠিক হজম হচ্ছে না।”, আহানের দিকে তাকিয়ে বললো রুহি।

” হজম না হলে হজমের ওষুধ খাও।”, বলে আহান রুমে চলে এলো। আহানকে আজ রুহির অদ্ভূত লাগছে। রুহি আহানের পিছু পিছু রুমে আসলো তারপর ক্ষীণ গলায় বললো,” আপনার কি কিছু হয়েছে?”

আহান দাড়িয়ে গিয়ে রুহির দিকে তাকালো তারপর কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে বললো,” বুঝতে পারছি না।”

রুহি নির্বুদ্ধিতার মতন তাকিয়ে রইলো। রুহি কিছুই বুঝলো না তারপর করিডোরের দিকে পা বাড়াতেই আহান শক্ত গলায় বলল,” থামো।”

রুহি ভ্রু কুঁচকে আহানের দিকে তাকালো। এর ভিতরের অগ্নিমূর্তি আবার জেগে উঠেছে।

” কেনো থামবো কেনো?”

” আমি বলেছি তাই থামবে। আমার ফোনটা খুঁজে পাচ্ছি না। একটু খুজে দেও।”, অর্ডারের মতন করে বললো আহান।

” আমাকে কি নিজের বউ ভাবতে শুরু করেছেন? এসব কাজ বউদের হয় জামাইয়ের ঘড়ি খোজা, ওয়ালেট খোজা এসব আমি করবো না।”, ডাট দেখিয়ে বললো রুহি।

আহান এবার এগিয়ে আসতে লাগলো, রুহি পিছাতে পিছাতে একদম দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়লো।

” তুমি খুজে দিবে নাকি ড্রাইভারকে বলে এক্ষুনি বাড়িতে পাঠিয়ে দিবো।”, ভয় দেখানোর জন্যে সিরিয়াস হয়ে বললো আহান। রুহি ভয় পেলেও বটে আহানকে মুখ বাঁকিয়ে সে ফোন খুঁজতে লাগলো। আহান একটা চেয়ার টেনে বসে রুহির খোজা খুজি দেখতে লাগলো।

” অলসের ঢেঁকি একটা। নিজের ফোন নিজে খুঁজে নিতে পারছে না। সাধে কি আর কুম্ভকর্ণ বলি?”, বির বির করে বলতে লাগলো রুহি।

রুহি অনেক্ষন খুঁজলো কোথায় পেলো না আসলে ফোন আহানের কাছেই আছে। রুহিকে করিডোরে যাওয়া থেকে আটকাতেই এই কান্ড করছে আহান। আহানের কাছে মনে হচ্ছে সে একটা মেয়েকে প্রোটেক্ট করছে এর চেয়ে বেশি কিছু না। যদি তাই হবে রুহির চোখে এভাবে হারিয়ে যায় কেনো? উত্তর তার জানা নেই।

অনেক্ষন খুঁজে রুহি বেশ বিরক্ত হয়ে গেলো। ফোন সাইলেন্ট করা দেখে কল করলে বাজছে না।

” ধুর ছাই আমি আর খুজতে পারবো না আপনার ঐ কুফা ফোন।”, রেগে গিয়ে বললো রুহি।

আহান পকেট থেকে ফোন বের করতে করতে উঠে দাড়িয়ে বললো,” দরকার নেই পেয়েগেছি।”

এতোক্ষণে রুহির বুঝতে বাকি রইলো না যে আহান ইচ্ছে করে এমন করেছে। রুহি রেগে গিয়ে আহানের দিকে বিছানা থেকে একটা বালিশ ছুড়ে মারলো। আহান এক হাতে বালিশটা ধরে ফেললো। ” আপনি হলেন একটা.. , অসভ্য লোক। রক্ত চোষা রক্কোস।”, রাগে গজগজ করে বললো রুহি।

” আগে তুমি এটা ঠিক করো আমি মানুষ নাকি রাক্ষস? তারপর আমি তোমায় বোঝাবো আমি অসভ্য নাকি রক্ত চোষা।”, এগিয়ে আসতে আসতে বললো আহান।

[ চলবে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here