বৃষ্টি ভেজা সেই রাত,পর্বঃ ০৩ শেষ

0
1493

বৃষ্টি ভেজা সেই রাত,পর্বঃ ০৩ শেষ
লেখকঃ আবির খান

ইতিহাসে আমিই মনে হয় একমাত্র ব্যক্তি হতে যাচ্ছি যে বাসর রাতে তার বউয়ের সাথে ঝগড়া করতে যাচ্ছে। আমি খুব রাগী ভাবে বৃষ্টির কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, এসবের মানে কি? ও কিছু বলল না চুপ করে ঘোমটা দিয়ে বসে আছে। আমি আবার বললাম,

– তুমি কেন এমন করলে আমার সাথে? তুমি তো সবই জানতে।

এবার ও একটু নড়েচড়ে বসে আস্তে বলল,

~ আগে ঘোমটা তুলে দিন। তারপর আপনার সাথে অনেক কথা বলবো।

বৃষ্টির কথা শুনে মেজাজ আরও খারাপ হলো। তাই ওর সামনে বসে দ্রুত ঘোমটাটা তুলে দিলাম। আর সাথে সাথে বৃষ্টির মুখখানা বেড়িয়ে এলো আমার সামনে। ওকে যে কত সুন্দরী আর মায়াবী লাগছে তা বলে বুঝাতে পারবো না। আমি ওকে দেখে হা করে তাকিয়ে আছি। রাগের কথা যেন ভুলেই গিয়েছি। বিশেষ করে ওর মিষ্টি ঠোঁটের কোণায় হাসিটার জন্য আমি যেন সব ভুলে গিয়েছি। একটা মেয়ে এতটা মায়াবী কিভাবে হতে পারে! আমি ওর বড়ো বড়ো পাপড়িওয়ালা চোখগুলোর দিকে তাকিয়ে ছিলাম। হঠাৎই ও বলে উঠলো,

~ এভাবে কি দেখছেন? আমি কি আপনার এক্স থেকেও অনেক সুন্দরী? হুম?

বৃষ্টির এই কথাটা শোনা মাত্রই মাথাটা গরম হয়ে গেল। সাথে সাথে রাগ করে বললাম,

– তুমি সব কিছু জেনেও কেন এমন করলে? বলেছি না আমি কোন মেয়ের সঙ্গ চাই না৷ তাহলে কেন?
~ কারণ আপনার মতো ভালো মনের একটা মানুষকে আমি মোটেও হারাতে চাই না৷ এ দুনিয়ায় অনেকেই সত্যিকারের ভালবাসতে পারে না। কিন্তু আপনি পারেন৷ তাই কি করে আপনাকে হারাই বলেন?
– আমি একটা মেয়েকে ভালবাসি জেনেও তুমি এমন করলে?
~ ভালবাসতেন৷ এখন আর বাসেন না আমি জানি৷ আপনার কি মনে হয় আমি আপনার সম্পর্কে কিছু জানি না? আপনি অনেক ভদ্র আর ভালো একটা ছেলে। আমি আপনার সামনে দিয়ে আপনার পাশ দিয়ে কত হেঁটে গিয়েছি। কিন্তু আপনি কখনো একবারও ফিরে তাকাননি৷ আমার এই বিষয়গুলো খুব ভালো লাগে। তাই আমি না করি নি। আর আমি চাই না আপনি আপনার পাস্ট নিয়ে আর কষ্ট পান। আপনার বর্তমান আমি আর ভবিষ্যৎও। অতীতকে ধরে রাখলে কখনো সামনে এগিয়ে যাওয়া যায় না। আপনার বর্তমানটা এখনো অনেক সুন্দর। অবহেলা করবেন না প্লিজ। আমি যা করেছি আপনার ভালোর জন্যই।
– আমি যদি স্ত্রী হিসেবে তোমাকে কোন অধিকার না দি তখন কি করবে?
~ অপেক্ষা করবো। যতদিন আপনি মন থেকে আমাকে কাছে না টানবেন ততদিন অপেক্ষা করবো।
– তুমি সত্যিই ভালো? নাকি ওর মতো অভিনয় করছো?
~ আগেও বলেছি এখনো বলছি। সবাই এক না। একজন খারাপ হলে সবাই খারাপ এটা ভুল। নতুন করে সব শুরু করেন। আমাকে ভালবাসেন। আমি আপনাকে ছেড়ে কখনো যাবো না।

বৃষ্টির কথা শুনে আস্তে করে উঠে বারান্দায় চলে যাই৷ ঠিক বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে এসব৷ ভেবেছি ওর সাথে রাগারাগি করবো। কিন্তু তার কিছুই হলো না। উল্টো বৃষ্টি এমন সব কথা বলল যা সবগুলোই যৌক্তিক। একটা মেয়ে কষ্ট দিয়েছে বলে আমিও যে অন্য একটা ভালো মেয়েকে কষ্ট দিব সেটা তো খুব খারাপ। আমি তো এ ধরনের ছেলে না৷ হঠাৎই বৃষ্টি পিছন থেকে এসে বলে,

~ জানি আমি দোষী। কিন্তু বিশ্বাস করুন, যা করেছি সব আপনার ভালোর জন্য। একটা ডুবতে থাকা মানুষকে যদি আলোর পথ দেখাতে পারি সেটাই তো আমার জীবনের স্বার্থকতা তাই না? আমিও তাই করেছি। দয়া করে আমাকে মাফ করে দিন৷ আপনাকে আমাকে কোন অধিকার দিতে হবে না৷ শুধু আপনার খেয়াল রাখতে দিয়েন৷ আর কিছু চাই না।

আমি দ্রুত পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখি বৃষ্টি চলে যাচ্ছিল। আমি ওর হাতটা ধরে ফেলি। ও দাঁড়িয়ে যায়। আস্তে আস্তে ওকে টান দিয়ে কাছে আনি৷ ওকে জিজ্ঞেস করি,

– একটা সত্য কথা বলবে আমাকে?
~ বলবো। (লজ্জাসিক্ত কণ্ঠে)
– তুমি কি আমাকে আগে থেকেই পছন্দ করতে?
~ শুধু পছন্দ না ভালবাসতাম এবং এখনো বাসি। কারণ আপনার ব্যক্তিত্ব আমার অনেক পছন্দ। একদম আমার মনের মতো।

আমি বৃষ্টির চোখের দিকে তাকিয়ে আছি। ওর কথাগুলো সত্য। কোন মিথ্যা নেই। কেন জানি খুব কষ্ট হচ্ছিল। তাই বৃষ্টিকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরি। ও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,

~ জীবনের প্রথম ভালবাসাটা হয়তো আপনি কখনো ভুলতে পারবেন না৷ কিন্তু তাই বলে আমি হার মানবো না৷ আমার ভালবাসা দিয়ে আপনার জীবন আমি ভরে দিব৷ তাহলে আপনি আর ওসব মনেই করবেন না৷ শুধু একটু সুযোগ দিয়েন। আর কিছু চাই না।
– জানো অনেক মেয়েই ছেলেদের মন বুঝতে চায় না৷ তারা সবসময় চায় ছেলেরা তাদের মন বুঝুক। কিন্তু এতে যে ছেলেটা কত কষ্ট পায় তা সে বুঝে না। কিন্তু তুমি তেমন না৷ তুমি আমাকে বুঝার চেষ্টা করেছো। তোমার মতো ভালো মেয়ে আমি কখনো পাবো না৷ হয়তো আমার কপালে তুমি ছিলে তাই ওকে হারিয়েছি। আমি সেটা বুঝতে পারছি। কারণ ওর চেয়ে হাজার গুণ ভালো তুমি।
~ একটা কথা কি জানেন, যে যায় ভালোর জন্যই যায়। আর যে থাকে সে ভালোর জন্যই থাকে। আমি আছি তো আপনার পাশে সবসময়। আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত থাকবো।
– আমিও তোমাকে হারাতে চাই না৷ আমার উপর তোমার সম্পূর্ণ অধিকার দিলাম।
~ তাহলে আমাকে মন ভরে আদর করেন। আমার খুব ইচ্ছা আমার জামাইটা আমাকে মন ভরে আদর করবে৷ হিহি।
– অনেক দুষ্টু তুমি।
– আপনাকে হ্যাপি রাখার জন্য আমাকে যদি দুষ্টুও হতে হয় আমি তাও হবো৷ কারণ আপনি আমার স্বামী। আপনাকে খুশি রাখাই আমার কাজ।

বৃষ্টির প্রতিটি কথা শুনে ওর প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধা আর ভালবাসা অনেকগুণ বেড়ে যাচ্ছে। ও সত্যিই অনেক ভালো। আমাদের কথার মাঝেই আবার আকাশে মেঘের গর্জন। বৃষ্টি ভয় পেয়ে আমার বুকে মাথা লুকায়। বাতাসে বৃষ্টির ঘ্রাণ। এ যেন বেশ রোমান্টিক একটা মুহূর্ত। আমি বৃষ্টির মুখখানা বের করে ওর চোখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ওর কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে দি। ও চোখ বুঝে তা গ্রহণ করে। তারপর ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়। আমি আমার বৃষ্টিকে নিয়ে আমাদের রুমে চলে আসি। আজ ওকে অনেক আদর করতে হবে যে। পরিশেষে আমাদের এই বৃষ্টি ভেজা রাতটা অনেক সুন্দর হয়ে গেল। সাথে পুরনো বিষাক্ত স্মৃতি গুলো মাটি চাপা পড়লো।

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here