বিরহ শ্রাবণ পর্ব ৭

0
1047

#বিরহ_শ্রাবণ
#পর্ব_৭
#লেখিকা:সারা মেহেক

শাহাদ ভাইয়াকে করা এহেন প্রশ্নে ভ্যাবাচ্যাকা খেলাম আমি ও অনামিকাও। পাত্রী দেখতে এসে পাত্র নিজেই এমন উদ্ভট প্রশ্নের শিকার হবে তা ভাবনার বাইরে ছিলো আমার। কিন্তু সেই অভাবনীয় কাজটি খুবই দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করেছেন প্রোজ্জ্বল ভাই।

ওদিকে শাহাদ ভাইয়া প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি এখনো। উনার এ নীরবতা প্রোজ্জ্বল ভাইকে দ্বিতীয়বার প্রশ্ন করতে বাধ্য করলো। তবে এবার পূর্বের তুলনায় ঈষৎ কাঠিন্যের সহিত প্রোজ্জ্বল ভাই বললেন,
” কি ব্যাপার মিস্টার শাহাদ? আমার প্রশ্নের অর্থ বুঝেননি নাকি প্রশ্নের জবাব আপনার কাছে নেই?”

শাহাদ ভাইয়া তড়িঘড়ি করে বললেন,
” না না, মোটেও তেমন না৷ আসলে হয়েছে কি, আজ পর্যন্ত প্রত্যাশাও আমাকে এমন প্রশ্ন করেনি। কিন্তু তুমি….কিছু মনে করো না ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করায়। তুমি আমার ছোট বলেই বলছি। ”

প্রোজ্জ্বল ভাই হালকা কেশে নিলেন। উনার স্বাভাবিক কণ্ঠের চেয়ে অপেক্ষাকৃত গম্ভীর এবং একরোখা গলায় বললেন,
” আমার আপু বেশ সহজ সরল প্রকৃতির মেয়ে। বয়সটা ভালোই হয়েছে৷ কিন্তু বাইরের মানুষকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বুঝার বয়সটা এখনও হয়নি এটা ভালো করেই জানি আমি। এজন্য এমনও হতে পারে যে আপনার প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে সে আপনার অতিত এবং চরিত্র সম্পর্কে ভুল ধারণা নিয়ে বসে আছে!”
এই বলেই প্রোজ্জ্বল ভাই কিছুটা নরম হলেন। বললেন,
” আমি এমনটা বলেনি যে আপনার চরিত্র খারাপ। তবে আমার একমাত্র বড় বোনের সারাজীবনের প্রশ্ন এরা একজন ভাই হিসেবে অবশ্যই আমার দায়িত্ব কর্তব্য আছে। তার মধ্যে এই দায়িত্বটাও পড়ে, যে ছেলের সাথে আপুর বিয়ে হবে তার সম্পর্কে পুরোপুরি জ্ঞান নিয়ে তবেই তার হাত আপুকে তুলে দেওয়া। ”

শাহাদ ভাইয়া হয়তো পূর্বের তুলনায় খানিক স্বাভাবিক হয়ে এসেছেন। উনি ভদ্রতাসূচক কণ্ঠে বললেন,
” হ্যাঁ অবশ্যই৷ তোমার অধিকার আছে তোমার আপুর জন্য পারফেক্ট লাইফ পার্টনার খুঁজে বের করা এবং সঠিক চরিত্রের মানুষের কাছে ওকে তুলে দেওয়া।”

” তাহলে নিশ্চয়ই আপনি বলে বুঝতে পেরেছেন আপনাকে করা প্রশ্নটা মোটেও অযৌক্তিক না?”

” হ্যাঁ অবশ্যই। তুমি চাইলে আমাকে প্রশ্ন করতে পারো। যা জানার জানতে পারো। আমি আগের চেয়ে একটু কমফোর্টেবল ফিল করছি। ”

” আচ্ছা, তো যে প্রশ্নটা আপনাকে করেছিলাম ওটার জবাব জানতে চাই।”

” এখন পর্যন্ত তোমার আপুকেই ডেট করেছি আমি৷ প্রত্যাশার আগে কোনো মেয়েকে ডেট করা হয়নি আমার। তবে হ্যাঁ, কলেজ লাইফে থাকতে একটা মেয়েকে খুব পছন্দ করতাম। কিন্তু আমার ভাগ্যে সেই মেয়েটা ছিলো না বলে কিছু হওয়ার আগেই হাওয়া হয়ে গিয়েছে সব। ”
এই বলে শাহাদ ভাইয়া খানিক হাসার চেষ্টা করলেন। হাসলেন প্রোজ্জ্বল ভাইও।
প্রোজ্জ্বল ভাই পুনরায় প্রশ্ন করলেন,
” ম’দ, সিগারেটের অভ্যাস নেই তো আবার?”

” উমম, ম’দ খাইনি কখনো। তবে অল্পস্বল্প সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস আছে। যদিও খুব বেশি প্রেশার আর টেনশনে থাকলে সিগারেট খাওয়া হয়। এর বাইরে খাওয়া হয় না। ”

” অফিস আওয়ারের বাইরেও এক্সট্রা কোনো কাজ করেন?”

” না। নাইন টু ফাইভ অফিস। এই তো। তারপর সন্ধ্যায় একটু আড্ডা দেওয়া হয়। তারপর তো বাসাতেই।”

” ওহ। শুনে ভালো লাগলো। ছেলে হিসেবে মনে হলো, আপনার রুটিন মোটামুটি ভালোই আছে। আপুকে যথেষ্ট সময় দিতে পারবেন।” প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের কণ্ঠ শুনে মনে হলো উনি শাহাদ ভাইয়ার জবাবগুলোয় বেশ ইমপ্রেস হয়েছেন। দুজনের এ কথোপকথনে আমি ও অনামিকাও স্বস্তি পেলাম। অনেকটা নিশ্চিতই হলাম, প্রত্যাশা আপু ও শাহাদ ভাইয়ার বিয়েটা বোধহয় এবার হলো বলে।

প্রোজ্জ্বল ভাই ও শাহাদ ভাইয়ার নিচে নামার কথা
শুনে তড়িঘড়ি করে আমি ও অনামিকাও নিচে নেমে এলাম। দ্রুত লুকিয়ে পড়লাম আমাদের পূর্বের স্থানে। প্রোজ্জ্বল ভাই ও শাহাদ ভাইয়া সোফায় বসতেই উপস্থিত সকলের উদ্বিগ্ন চাহনি উনাদের দুজনের উপর স্থাপিত হলো। আপু চোখের ইশারায় শাহাদ ভাইয়াকে বোধহয় জিজ্ঞেস করলো, সব ঠিক আছে কি না৷ শাহাদ ভাইয়া ইশারায় বুঝালেন সব ঠিক আছে। আপু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।

তখনই ড্রইং রুমেই বসে প্রত্যাশা আপু ও শাহাদ ভাইয়ার বিয়ের সিদ্ধান্ত হলো। কারণ দুপক্ষেরই ছেলে-মেয়ে পছন্দ হয়েছে। শাহাদ ভাইয়ার মা আপুকে আংটি পরিয়ে বিয়ের দিন তারিখ পাকা করলেন। সিদ্ধান্ত হলো, আমার ভর্তি পরীক্ষার পনেরো দিন পর অর্থাৎ আজ হতে এক মাস পর প্রত্যাশা আপু ও শাহাদ ভাইয়ার বিয়ে হবে। আপুর বিয়ের খবর শুনতেই আমি ও অনামিকা আড়ালে দাঁড়িয়ে নিজেদের মতো আনন্দ করলাম। স্বাভাবিকের ন্যায় তখনই সেখানে দাঁড়িয়ে বিয়ে নিয়ে দুজনে টুকটাক পরিকল্পনাও করে ফেললাম। ঐ যে একটা কথা আছে না, ‘যার বিয়ে তার খবর নেই, পাড়া-পড়শির ঘুম নেই।’ এ মুহূর্তে আমার ও অনামিকার অবস্থা হয়েছে তেমনই। অবশ্য হবেই না বা কেনো, একমাত্র আপু বলে কথা!

.

শাহাদ ভাইয়ারা চলে যাওয়ার পর ছাদে প্রোজ্জ্বল ভাই ও শাহাদ ভাইয়ার মাঝে যা যা কথা হয়েছে, তা গুনে গুনে প্রত্যাশা আপুকে বললাম আমি। আমার নিকট হতে সব কথা শোনার পর প্রত্যাশা আপু প্রোজ্জ্বল ভাইকে এসব প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার জন্য আচ্ছামতো জেরা করলেন৷ এ নিয়ে দুজনের মাঝে টুকটাক কথা কাটাকাটিও হলো। পরে অবশ্য এর ফল ভোগ করতে হলো আমাকে। প্রত্যাশা আপু প্রোজ্জ্বল ভাইকে কথা শোনালেন, আর প্রোজ্জ্বল ভাই কথা শোনালেন আমাকে। এখানে অবশ্য দোষটা আমার ছিলো না। তখন আমাকে ছাদে যেতে বলেছিলো স্বয়ং প্রত্যাশা আপু। অথচ প্রত্যাশা আপুর বদলে কথা শুনলাম আমি! এ ভারী অন্যায় সহ্য করেও চুপচাপ পড়তে বসলাম আমি। কারণ এখন প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের সাথে তর্কে জড়ানো অর্থ নিজের বিপদ নিজ হাতে আমন্ত্রণ করা!

———–

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার আর এক সপ্তাহ বাকি। এ এক সপ্তাহ আমার উপর প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের কড়া নজরদারি চলার হুকুম দিয়েছেন স্বয়ং মামি। অবশ্য মামি না আদেশ দিলেও প্রোজ্জ্বল ভাই ঠিকই আমাকে নজরদারিতে রাখতেন।
মামির হুকুম, এই এক সপ্তাহ কোনোরকম ফোন চালানো যাবে না। গল্পগুজব, আড্ডায় সময় অপচয় করা যাবে না৷ আর সবচেয়ে বড় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন উনি বৃষ্টিতে ভিজা নিয়ে। বৃষ্টি হলেই ছুটে যাওয়া দস্যি এক মেয়েকে এ ঘোর শ্রাবণে পরীক্ষার দোহাই দিয়ে ঘরে বসিয়ে রাখছেন উনি। মাঝে মাঝে এ নিয়ে ভাবলেই বিস্ময়ে মুখটা হা হয়ে আসে আমার। বৃষ্টির পূর্ববর্তী আবহাওয়া উপভোগ করা, বৃষ্টিতে ভেজা, বৃষ্টির পানি নিয়ে কাল্পনিক, বাস্তবিক নানান কিছু ভাবা আমার শখের কাজের মধ্যে একটি। মন চাইলে বৃষ্টিতে ভেজা হতে কেউই আমাকে আটকিয়ে রাখতে পারে না, কেউ আটকায়ও না আমাকে। কিন্তু মামা মামির একান্ত বাধ্যগত হওয়ায় উনাদের কথা সবসময় মেনে চলার চেষ্টা করি আমি। এ কারণে মামির আদেশ পালন করার চেষ্টা করে লোভনীয় মুহূর্তেও বৃষ্টিতে ভেজা হতে বহু কষ্টে নিজেকে সংযত রেখে চলছি।

কিছুক্ষণ পূর্বেই প্রকৃতিকে সতেজ সবুজ সাজে সাজিয়ে দিয়ে গিয়েছে শ্রাবণের বৃষ্টি। চারপাশে শীতল বহমান হাওয়া বিরাজমান। অদূরে থেকে থেকে গর্জে উঠছে ক্রুদ্ধ মেঘপুঞ্জ। পড়ার ফাঁকে এ নমনীয় পরিবেশ উপভোগ করতে করতে অনামিকার ডাক এলো আমার উদ্দেশ্যে। নিচ হতে হাঁক ছেড়ে ডাকলো সে। ওর ডাকে দ্রুত বারান্দায় যেতে ও ইশারায় আমাকে ওদের বাসায় যেতে বললো। এর কারণ জিজ্ঞেস করলে ও বললো জরুরি ভিত্তিতে প্রাণিবিজ্ঞানের চতুর্থ অধ্যায় বুঝাতে হবে ওকে। আমি কয়েকবার ওর প্রস্তাব নাকচ করলেও ও তা মেনে নিলো না। অগত্যা অনামিকার কথায় আমাকে ওদের বাড়িতে যেতে হলো। তবে যাওয়ার পূর্বে প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের রুমে একবার উঁকি দিয়ে গেলাম। দেখলাম বৃষ্টিমুখর এই বিকেলে কাঁথা টেনে আরামে ঘুমাচ্ছেন উনি। এমন ঘুমু ঘুমু পরিবেশে উনার আরামের ঘুম দেখে ভীষণ হিংসে হলো আমার। যদিও এতে আমার সুবিধাই হলো।
বাড়ির সকলের অগোচরে লুকিয়ে বেড়িয়ে আসলাম আমি৷ অনামিকার সাথে ওদের বাড়িতে গিয়ে যত দ্রুত সম্ভব ওকে পড়াগুলো বুঝিয়ে দিলাম। অতঃপর অনামিকাকে পড়া বুঝানো শেষে বাড়ি হতে বের হতে গেলে খোদেজা মামি আমার জন্য গরম গরম তেল পিঠা বানিয়ে আমার সামনে এনে হাজির করলেন। বিপদাপন্ন এ মুহূর্তে পিঠা খাওয়ার প্রস্তাব নাকচ করলেও আন্টি আমার একটি কথাও শুনলেন না। অগত্যা গরম গরম তেল পিঠা খেতে বসতে হলো আমাকে।

চা ও পিঠা খেয়ে অনামিকার রুম হতে বের হলাম। চারপাশ তখন সদ্য সাঁঝের আলিঙ্গনে আবদ্ধ। বৃষ্টি পরবর্তী সাঁঝের আকাশ ঘোর কালো রঙ ধারণ করেছে। তবে এর ফাঁকে ফাঁকে এক চিলতে রোদের ন্যায় উঁকি দিচ্ছে শেষ বিকেলের গাঢ় কমলা রঙ।
অনামিকার রুম হতে বেরিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম৷ এক নজর আকাশের দিকে তাকিয়ে বাড়ি হতে উঠোনে পা রাখতে গেলেই অভ্র ভাই পিছন হতে ডাকালেন। উনার ডাকে চমকে ঘাড় ঘুরে পিছনে তাকালাম। এ সময়ে অভ্র ভাইকে এখানে আশা করিনি আমি। ফলস্বরূপ কিয়ৎ বিস্মিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলাম,
” আপনি এ সময়ে!”

অভ্র ভাই মুচকি হাসলেন। বিনা বাক্যে আমার পাশে এসে দাঁড়ালেন। অতঃপর বললেন,
” আজ নাইট ডিউটি নেই তাই তাড়াতাড়িই বাড়িতে চলে এসেছি। ”

” ওহ আচ্ছা। ”

” তোমার না এক সপ্তাহ বাদে পরীক্ষা? ”

” হ্যাঁ অভ্র ভাই। আগামী শুক্রবারেই পরীক্ষা। ”

” তাহলে অনামিকাকে পড়াতে এসেছো যে?”

” ওর প্রাণিবিজ্ঞানের একটা চ্যাপ্টার বুঝতে সমস্যা হচ্ছিলো বলে ওকে বুঝাতে এসেছিলাম। ”

” আচ্ছা। এসেছোই যখন, তখন আমার সাথে এক কাপ চা খেয়ে যাও। ”

অভ্র ভাইয়ের এহেন প্রস্তাবে আমি তৎক্ষনাৎ মাথা এপাশ ওপাশ নাড়িয়ে বললাম,
” না অভ্র ভাই। আমি চা খেয়েছি। আন্টি দিয়েছিলো।”

” তো কি হয়েছে। আরো এক কাপ খাও আমার সাথে। অনেকদিন তোমার সাথে চা খাওয়া হয় না।”

” আরেকদিন খাবো অভ্র ভাই। এখন আমাকে বাড়িতে না দেখলে প্রোজ্জ্বল ভাই চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় উঠিয়ে ফেলবেন।”

আমার কথায় পাত্তা দিলেন না অভ্র ভাই। উল্টো হেসে মাছি তাড়ানোর মতো হাত উড়িয়ে বললেন,
” ঐ রাগচনণ্ডীর কথা বাদ দাও৷ ওর তো কাজই ওটা। আমি ওকে সামলে নিবো। তুমি আমার সাথে চা খাবে কি না বলো। ”

আমি পড়লাম তীব্র এক দোদুল্যমান পরিস্থিতিতে। একদিকে প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের ক্রোধের বর্ষণে পড়ার ভয়, অপরদিকে অভ্র ভাইয়ের আকুতিজনক চা খাওয়ার প্রস্তাব নাকচ করার অনুশোচনামূলক অনুভূতি।
অভ্র ভাই পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন,
” আচ্ছা চন্দ্রিমা, আগে বলো, দশ মিনিটে তোমার পড়ালেখার কি কোনো ক্ষতি হবে? ক্ষতি না হলে চা খাবো। আর হলে তোমাকে বাড়িতে দিয়ে আসবো। ”
এই বলে অভ্র ভাই মৃদু হাসলেন। অভ্র ভাইয়ের এ হাসি দেখে কয়েক সেকেন্ড ভেবে অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম, উনার সাথে সন্ধ্যার চা খেয়ে যাই। উনি যখন এতো করেই বলছেন, তখন দশ মিনিট সময় অপচয়ে কি আসে যায়। যদিও এতে প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের ভয় আছে। তবে আমার জানা আছে, উনার রাগকে একমাত্র অভ্র ভাইই সামলাতে পারবেন সে মুহূর্তে। এজন্য এখন অভ্র ভাইয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলাম।

অভ্র ভাই দু কাপ চা নিয়ে আমাকেসহ বাড়ির পেছনটায় গোল চত্বরের মতো বসার জায়গায় এলেন। এক কাপ চা আমার হাতে দিয়ে সিমেন্টের তৈরী মোজাইকের কাজ করা বেঞ্চিতে বসলেন। ইশারায় আমাকেও বসতে বললেন। চায়ের কাপ নিয়ে আমি বসলে অভ্র ভাই বললেন,
” রিল্যাক্স মুডে চা খাও। এতো টেনশন নিয়ে চা খাওয়া যায় না। আর প্রোজ্জ্বলকে এতো ভয় পাওয়ার কি আছে! ”

আমি চায়ের কাপে এক চুমুক দিয়ে বললাম,
” প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের ভয় যেনতেন,এখন মামির ভয় লাগছে বেশি। ”

আমার কথায় শব্দ করে হাসলেন উনি। বললেন,
” তোমার ক্যারেক্টারটা ভীষণ গড়বড়ে একটা ক্যারেক্টার চন্দ্রিমা। কখনো প্রোজ্জ্বলকে দেখে ভীষণ ভয় পাও। আবার কখনো ওকে দেখে পাত্তাই দেও না!”

অভ্র ভাইয়ের এ কথা বলার ধরণে সশব্দে হেসে উঠলাম আমি। বললাম,
” আমি নিজেও জানি, আমি গড়বড়ে একটা ক্যারেক্টার। আমি নিজেও মাঝে মাঝে বুঝতে পারি না নিজেকে। ”
এই বলে আমিসহ অভ্র ভাইও হেসে উঠলেন। এভাবে কথা বলতে বলতে আমাদের কথোপকথনের মাঝে হঠাৎ আমি জিজ্ঞেস করলাম,
” তো অভ্র ভাই, ভাবি কবে আনছেন?”

অভ্র ভাই চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিলেন। আমার এ প্রশ্নে আচমকা বিষম খেলেন উনি। তবে দ্রুতই নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন,
” এখনো ওসব নিয়ে চিন্তা করিনি।”

” কেনো? আমাদের ভাবি কি নেই? মানে, আপনার পছন্দের কোনো মেয়ে আছে? ”

আমার প্রশ্নে অভ্র ভাই মুচকি হাসলেন। চায়ে চুমুক দিয়ে সাবলীল গলায় বললেন,
” হ্যাঁ আছে তো। ”
উনার এহেন কথা কর্ণপাত হতেই আমার চোখজোড়া বিস্ময়ে বড় বড় হয়ে এলো। বিস্ময়াভিভূত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
” কে সেই মেয়ে! ”

অভ্র ভাই কয়েক সেকেন্ড সময় নিলেন। আমার দিকে এক নজর চেয়ে মেঘে ঢাকা অর্ধ চন্দ্রের দিকে দৃষ্টিপাত করে বললেন,………
®সারা মেহেক(কারা কারা গল্প পড়ছেন মন্তব্য করে যাবেন প্লিজ। আপনাদের কি গল্প ভালো লাগছে আদৌ? আপনাদের যে ভালো লাগা, খারাপ লাগা নিয়ে কোনো রেসপন্সই নেই! তাহলে কি ভাববো, গল্পটা ভালো হচ্ছে না? গল্পটা কয়েক পর্বেই শেষ করে দেওয়ার দরকার?)

#চলবে
(দুঃখিত দেরিতে দেওয়ার জন্য।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here