বিরহ শ্রাবণ পর্ব ১২

0
881

#বিরহ_শ্রাবণ
#পর্ব_১২
#লেখিকা:সারা মেহেক

সামনে প্রত্যাশা আপুকে নিয়ে ছাদের দিকে উঠছেন প্রোজ্জ্বল ভাই ও অভ্র ভাই। তাদের পিছনে আমি, অনামিকা, আপুর কিশোরী বয়সের দুটো মামাতো বোন ও আপুর বান্ধবীরা। আমাদের প্রত্যেকের হাতেই হলুদের জন্য কিছু না কিছু আছেই।
প্রোজ্জ্বল ভাই ও অভ্র ভাই আপুকে নিয়ে স্টেজে বসালে আমরা বাকি মেয়েরা হাতের জিনিসগুলো নিয়ে আপুর সামনের টেবিলে রাখলাম৷ অতঃপর ক্যামেরাম্যানের নির্দেশনানুযায়ী আমরা কাজিনরা, আপুর বান্ধবীরা ও আশেপাশে যে ছোট বাচ্চারা খেলছিলো তারা হলুদের স্টেজের চারিদিকে দাঁড়িয়ে পড়লাম। আমি গিয়ে দাঁড়ালাম আপুর একদম পিছনে। আমার এক পাশে দাঁড়ালেন প্রোজ্জ্বল ভাই ও অপর পাশে দাঁড়ালেন অভ্র ভাই। এভাবেই কয়েকটি ছবি তোলার পর সবার একটি একটি করে সিঙ্গেল ছবি তোলা হলে হলুদের কার্যক্রম শুরু হয়।

আপুকে প্রথমে হলুদ লাগালো নানু। দু গালে আলতো করে হলুদ ছুঁইয়ে এক চামচ ক্ষীর খাইয়ে দিলো নানু। অতঃপর একে একে মামা, মামি, আপুর নানুবাড়ির মুরুব্বিরা আপুকে হলুদ ছুঁইয়ে দিয়ে ক্ষীর খাইয়ে দিলো। এরপর পালা আসলো কাজিনদের। প্রথমত আপুকে হলুদ ছুঁইয়ে দিলেন। প্রোজ্জ্বল ভাই। তবে অন্যান্য সবার মতো স্বাভাবিকভাবে কাজটা করেননি উনি। বরং আপুর দু গালে, কপালে, থুতনিতে, দু হাতে ইচ্ছেমতো হলুদ লাগিয়ে দিলেন উনি। উনার এ কাজে উপস্থিত সকলের মাঝে অট্টহাসির রোল পড়ে গেলো। প্রোজ্জ্বল ভাই ক্ষীর খাইয়ে উঠে গেলে যথারীতি অভ্র এসে নিয়ম পালন করলেন। অতঃপর আমি গিয়ে আপুর পাশে বসলাম। আপুকে হলুদ লাগিয়ে, ক্ষীর খাইয়ে উঠে এলাম। অমনিই সেখানে উপস্থিত হলেন শারমিন আপু। শারমিন আপুর হাসিমাথা চেহারা দেখে আমার ঠোঁটে ঠিকই হাসি ফুটে উঠলো। তবে প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের চেহারা হতে উদ্বায়ী বস্তুর ন্যায় হাসি উবে গেলো। আপুর ভাষ্যমতে প্রোজ্জ্বল ভাইকে ঠিক যেনো এখন গ্রাম্পি টেডিবিয়ার এর মতো দেখাচ্ছে। তড়িৎ-গতিতে পরিবর্তন হওয়া উনার মুখভঙ্গি দেখে হাসতে না চাইলেও আপনাআপনি আমার হাসি চলে এলো। ফলস্বরূপ ফিক করে হেসে ফেললাম। আমার পাশেই অভ্র ভাই দাঁড়িয়ে আছেন। আর আমাদের দুজন হতে কিছু দূরে দাঁড়িয়ে আছেন প্রোজ্জ্বল ভাই।
অভ্র ভাই আমার হাসির শব্দ শুনে জিজ্ঞেস করলেন,
” হঠাৎ এভাবে হাসলে কেনো চন্দ্রিমা?”

আমি ঠোঁট চেপে নিজের হাসি আটকিয়ে অভ্র ভাইকে বললাম,
” প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের বেটার হাফ এসেছে অভ্র ভাই।”
এই বলে আমি চোখের ইশারায় আগত শারমিন আপুকে দেখালাম। শারমিন আপুকে দেখামাত্র অভ্র ভাইও আমার মতো হেসে ফেললেন। তবে প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের চেহারা হতে সেই যে হাসি হাসি ভাবটা চলে গেলো, এখনও অব্দি তা ফিরে এলো না। আর এ হাসি ততক্ষণ ফিরবে না যতক্ষণ শারমিন আপু উনার আশেপাশে থাকবেন।

শুনেছি, ছোট থেকেই প্রোজ্জ্বল ভাই শারমিন আপুকে পছন্দ করতো না। কারণ দুজনে একই সাথে পড়ালেখা করতো। ফলস্বরূপ দুজনের মধ্যে সবসময় প্রতিযোগিতা লেগেই থাকতো। শারমিন আপু যখন প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের থেকে পরীক্ষায় নম্বর বেশি পেতো, তখন মামি প্রোজ্জ্বল ভাইকে অনেক কথা শোনাতো। এ কারণে প্রোজ্জ্বল ভাই শারমিন আপুকে আরোও সহ্য করতে পারেন না। যদিও শারমিন আপু কখনো প্রোজ্জ্বল ভাইকে নিজের প্রতিযোগী ভাবেননি৷ বরং চেষ্টা করেছে প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের সাথে মিশে থাকার৷ কিন্তু প্রোজ্জ্বল ভাই কখনো সে চেষ্টাকে প্রশ্রয় দেননি।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে দুজনের এ প্রতিযোগিতাপূর্ণ ভাবটা ধীরেধীরে চলে যায়। তবে প্রায় বছর তিনেক পূর্বে যখন মামি ছলেবলে নানা কৌশলে প্রোজ্জ্বল ভাইকে জিজ্ঞেস করেন, শারমিন আপুকে উনি পছন্দ করেন কি না। তখনই প্রোজ্জ্বল ভাই বুঝে যান মামির মনে কি চলছে। ব্যস তখন থেকে প্রোজ্জ্বল ভাই শারমিন আপুর প্রতি পুরোনো সেই মনোভাব নিয়ে আসেন। যদিও শারমিন আপু এসব সম্পর্কে অবগত নন। কারণ প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের সাথে উনার দেখা হলেই প্রোজ্জ্বল ভাই স্বাভাবিক আচরণ করার ভান করেন। যদিও এর পিছনের রহস্যটাআমি, প্রত্যাশা আপু, অভ্র ভাই ঠিকই জানি।
মামি অনেক আগে থেকেই চান যে, একমাত্র বোনের মেয়েকে নিজের ছেলের বউ করে বাড়িতে আনবেন। যদিও উনি বিষয়টি ঠিক ওভাবে খোলাসা করেননি। কিন্তু উনার আচার আচরণে ঠিকই বুঝা যায়, উনি শারমিন আপুকে এ বাড়ির বউ করতে চান। এ বিষয়টি জানার পর হতে আমরা সুযোগ পেলেই প্রোজ্জ্বল ভাইকে জ্বালাতাম এবং ইচ্ছে আছে, আজকেও উনাকে আচ্ছামত জ্বালাবো।

শারমিন আপু এসে প্রত্যাশা আপুকে হলুদ লাগালো, ক্ষীর খাওয়ালো। অতঃপর দুজনে নিজেদের হালচাল জিজ্ঞেস করলো। শারমিন আপু দেখতে ভীষণ সুন্দর। একদম প্রত্যাশা আপুর মতোই। ফর্সা, মায়াবী। মাঝে মাঝে ভাবি, মামিদের জিনে বোধহয় সুন্দর, ফর্সা, নজরকাড়া হওয়ার কোনো জিন আছে। তা না হলে, মামি, মামির বোন, মামির দুই ভাই, প্রোজ্জ্বল ভাই, প্রত্যাশা আপু, শারমিন আপু, সকলে এতো সুন্দর হতে পারে কি করে! শারমিন আপুর গায়ে ডিপ পার্পেল রঙের শাড়িটা ভীষণ মানাচ্ছে। তার উপর খোঁপায় গোলাপি রঙের জবা, সব মিলিয়ে সাজটা দারুণ মানিয়েছে উনাকে।

শারমিন আপু আমাকে দেখে হাসিমুখে হাত নাড়ালেন। প্রত্যুত্তরে আমিও হাত নাড়ালাম। অতঃপর চট করে পাশে ফিরে প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের প্রতিক্রিয়া দেখার চেষ্টা করলাম। কিন্তু নিজের গ্রাম্পি চেহারায় প্রতিক্রিয়া দেখানোর বদলো আমাকে পুরোপুরি হতাশ করে উনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফোন টিপছেন। তাও আবার আমাদের হাতের নাগাল হতে দূরে। উনার এ কাজে বড্ড হতাশ হলাম আমি। উনাকে খেপানোর জন্য তাই অভ্র ভাইকে বললাম, উনাকে যেনো ছলেবলে এখানে নিয়ে আসে। অভ্র ভাইও আমার কথামতো প্রোজ্জ্বল ভাইকে এদিকে নিয়ে এলেন৷ আর আমি শারমিন আপুকে নিয়ে এলাম।
এ মুহূর্তে আমি ও শারমিন আপু পাশাপাশি ও আমাদের সামনে প্রোজ্জ্বল ভাই ও অভ্র ভাই দাঁড়িয়ে আছেন। প্রোজ্জ্বল ভাইকে দেখে শারমিন আপু মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলেন,
” কেমন আছো প্রোজ্জ্বল? ”

প্রোজ্জ্বল ভাই বহু কষ্টেসৃষ্টে ঠোঁটের কোনে জোরপূর্বক হাসি ফুটিয়ে বললেন,
” ভালো আছি। তুমি কেমন আছো? ”

” আমিও ভালো আছি। তোমাকে……”
শারমিন আপুর কথা সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই মামি গলা উঁচিয়ে প্রোজ্জ্বল ভাইকে বললেন, আপুর শ্বশুরবাড়ি লোকদের গেট হতে ছাদে নিয়ে আসতে। আপুর শ্বশুরবাড়ি লোকদের আজ তত্ত্ব নিয়ে আসার কথা ছিলো। সেই তত্ত্ব নিয়েই হয়তো তারা এসেছেন।

মামির এ আদেশ শুনে প্রোজ্জ্বল ভাই যেনো মুহূর্তে যেনো পিঞ্জরা বন্দি পাখির ন্যায় উড়ে গেলেন। অসময়ে উনার এ ডাক পড়ায় ছোটখাটো বিনোদন থেকে বঞ্চিত হলাম আমি ও অভ্র ভাই। ওদিকে হতাশও হলেন শারমিন আপু।

আপুর শ্বশুরবাড়ি হতে দেবর, ননদ, শাহাদ ভাইয়ার খালা, মামিরা এসেছেন। এসেছেন আরোও উনার কয়েক বন্ধুও। আগত এ মেহমানদের খাতিরযত্নে ব্যস্ত হলেন প্রোজ্জ্বল ভাই, অভ্র ভাই, পাশের বাড়ির ওসমান মামা, জলিল মামা। এদিকে এতোক্ষণ যাবত ক্ষীর খেয়ে বিরক্ত হয়ে আপু আমায় মিষ্টি আনতে বললো। হলুদের টেবিলে মিষ্টি আনার কথা থাকলেও ভুলবশত তা আনা হয়নি। ফলস্বরূপ তা আনতে আমাকে নিচে যেতে হলো।
নিচে গিয়ে মিষ্টির প্লেট হাতে নিয়ে উঠতে গেলে কোনোরূপ ঘোষণা ও পূর্ব প্রস্তুতি ব্যতিতই অকস্মাৎ শাড়ির কুঁচিতে পা আটকে সিঁড়িতে পড়ে গেলাম৷ ভাগ্যবশত মাত্রই দু সিঁড়ি উঠেছিলাম বলে বড় কোনো দূর্ঘটনা ঘটেনি এবং মুখ থুবড়ে না পড়ায় মিষ্টির প্লেটটাও বেঁচে যায়।

আমি কোনোমতে মিষ্টির প্লেটটা নিয়ে শাড়ি সামনের দিকে ধরে উঠতে নিলাম। কিন্তু মিষ্টির প্লেট হাতে সামঞ্জস্য রেখে উঠে দাঁড়াতে পারলাম না৷
” দেখি হাতটা দাও। ”
অকস্মাৎ অভ্র ভাইয়ের প্রস্তাবে চমকে গেলাম। মাথা তুলে দেখলাম উনি হতাশাব্যাঞ্জক চাহনিতে আমার দিকে চেয়ে আছে। উনার সামনে এ উদ্ভট অবস্থায় বসে থাকার ফলে খানিক লজ্জা বোধ করলাম। ফলস্বরূপ পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দিতে উনার দিকে চেয়ে বোকা বোকা হাসি দিলাম। কিন্তু অভ্র ভাই আমার সে হাসি পাত্তাই দিলো না। বরং আমার হাত থেকে মিষ্টির প্লেট নিজের এক হাতে নিয়ে অপর হাত আমার দিকে এগিয়ে দিলেন। আমি সেই বোকাসোকা হাসি বজায় রেখেই উনার হাত ধরে উঠে দাঁড়ালাম। অতঃপর উনি জিজ্ঞেস করলেন,
” নিজ দায়িত্বে শাড়ি সামলাতে না পারলে শাড়ি পরো কেনো চন্দ্রিমা?”
অভ্র ভাইয়ের হতাশ গলার প্রশ্ন। উনার এরূপ হতাশ কণ্ঠ শুনে আমি কিয়ৎক্ষণ ড্যাবড্যাব করে উনার দিকে চেয়ে রইলাম। উনার হতাশার কারণও কিছুটা আঁচ করতে পেলাম। অভ্র ভাই হয়তো আশা করেননি যে আমি শাড়িসহ উল্টো হয়ে পড়ে যাওয়ার মতো মেয়ে!

আমি ক্ষণিকের জন্য কিছু ভেবে প্রশ্নটির যুক্তিসংগত একটি জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলাম। কিন্তু আমার প্রস্তুতিতে এক বালতি পানি ঢেলে সেখানে উপস্থিত হলেন প্রোজ্জ্বল ভাই। উনি এসেই অনেকটা ধমকের সুরে বললেন,
” দুনিয়ার মানুষ শাড়ি পরে নেচে বেড়ায় আর চন্দ্রিমা রাণী শাড়ি পরে দুই সিঁড়িও উঠতে পারে না। ও কি এখন চায়, ওকে কোলে করে উঠাই আমি?”
প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের শেষোক্ত প্রশ্নটি স্পষ্ট খোঁচামূলক ছিলো। উনার এ প্রশ্নে আমি মুহূর্তেই তেঁতে উঠে বললাম,
” আমি কি একবারো আপনাকে এ কথা বলেছি? সারাদিন শুধু প্যাঁ প্যাঁ করতে পারে। অসহ্যকর একটা লোক।”
এই বলেই নাকের ডগায় রাগ নিয়ে গা ঝাড়া দিয়ে প্রচণ্ড উদ্যমে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে নিলাম। বেমালুম ভুলে বসলাম পরনের শাড়ির কথা। ফলে এই ভুলে বসার খেসারতও গুনতে হলো তখনই। পুনরায় দু সিঁড়ি উঠতেই শাড়িতে পা আটকে গেলো। উল্টো হয়ে মুখ থুবড়ে পড়তেই নিলেই লক্ষ্য করলাম দু জোড়া হাত আমাকে দ্রুততার সহিত সামলে নিয়েছে। এই দু জোড়া হাত আর কারোর নয় বরং অভ্র ভাই ও প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের।

ঘটনার আকস্মিকতায় আমি কিয়ৎক্ষণের জন্য নির্বাক হয়ে রইলাম। অতঃপর বুঝ এলে আমি দ্রুত উনাদের হাত ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালাম। মাথা নিচু করে নরম কণ্ঠে বললাম,
” সরি।”

অভ্র ভাই বললেন,
” ঠিক আছো তো?”

” জি ঠিক আছি। ”

এবার প্রোজ্জ্বল ভাই অনেকটা চিন্তিত তবে ধমকের সুরে জিজ্ঞেস করলেন,
” শাড়ি পরে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে যাচ্ছিলো কেনো? তোকে নিয়ে বড্ড চিন্তা হয়। এভাবে হুটহাট যেখানে সেখানে পড়ে যাস। মাঝেমধ্যে ভয় হয়, কখন না কোনো বিপদ বাঁধিয়ে ফেলিস। আজ তো আমি আর অভ্র ছিলাম বলে একটা এক্সিডেন্ট হতে হতে বেঁচে গিয়েছে। একা থাকলে কি হতো!”

প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের কণ্ঠে স্পষ্ট উত্তেজিত হওয়ার আভাস পেলাম। উনার এ কথা বলার ধরণ শুনে অভ্র ভাই উনার কাঁধে হাত রেখে নির্বিঘ্ন গলায় বললেন,
” রিল্যাক্স প্রোজ্জ্বল। এতো হাইপার হচ্ছিস কেনো? ও তো ঠিক আছে। ”

প্রোজ্জ্বল ভাই প্রত্যুত্তর করলেন না। বরং আমার দিকে কিয়ৎ রাগত চাহনিতে এক নজর চেয়ে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠে গেলেন।
অভ্র ভাই মিষ্টির প্লেট হাতে নিয়েই বললেন,
” চলো, উপরে যাই। তুমি শাড়ি ধরে উঠো চন্দ্রিমা।”

অভ্র ভাইয়ের এ কথা বলার পর আমি লক্ষ্য করলাম, শাড়িতে পা বেঁধে পড়ার ফলে নিচের কুঁচিগুলো অগোছালো হয়ে গিয়েছে। এজন্য এটা ঠিক করতে বললাম,
” অভ্র ভাই, আপনি চলে যান। আমি একটু রুমে যাবো। শাড়ি ঠিক করতে হবে।”

” আচ্ছা। তবে তুমি আসতে পারবে তো একা?”

” হ্যাঁ পারবো। এখন তো হাতে কিছু নেই। ”

অভ্র ভাই আর কথা বাড়ালেন না। প্লেট নিয়ে ছাদে চলে গেলেন। আর আমি নিচ থেকে এসে নিজের রুমে গেলাম। দরজা আটকিয়ে কোনোমতে শাড়ির কুঁচি ঠিক করে বেরিয়ে এলাম। এবার ভালোভাবে শাড়ি সামলে উঠতে নিলে দেখলাম ছাদ থেকে আপুর এক দেবর নেমে আসছেন। যতদূর সম্ভব উনি শাহাদ ভাইয়ার বন্ধু।
উনি আমাকে দেখেই মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করলেন,
” এখানে ওয়াশরুমটা কোথায়, যদি একটু বলতেন। ”

আমি পিছে ফিরে হাত বাড়িয়ে দোতলার কমন ওয়াশরুম দেখিয়ে বললাম,
” ঐ যে ঐটা। ”

” থ্যাংকস আ লট।”
এই বলেই ছেলেটি আমায় পাশ কাটিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। আর আমি উপরে চলে এলাম।

হলুদের প্রোগ্রাম এখনও চলছে। আপু স্টেজে বসে আপুর নতুন ননদের সাথে কথা বলছে। সাথে শারমিন আপুও আছে। প্রথমে আমিও ছিলাম তাদের সাথে। তবে একঘেয়েমি আলাপ আলোচনা শুনে সেখান থেকে চলে এসে ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছি। একা একা দাঁড়িয়ে রাতের ধূসর কালো মেঘের আনাগোনা দেখছি।

” এগেইন থ্যাংকস মিস। ”
অকস্মাৎ পিছন হতে অপরিচিত কণ্ঠ শুনে চমকে ঘুরে দাঁড়ালাম। দেখলাম, তখনকার সে ছেলেটি হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে।।
আমাকে এভাবে চমকিত হয়ে ঘুরতে দেখে উনি সপ্রতিভ হেসে বললেন,
” হঠাৎ ডাকায় আপনি বোধহয় ভয় পেয়ে গিয়েছেন। ”

বাস্তবে এ ঘটনাটি ঘটলেও আমি হাসিমুখে তা নাকচ করে বললাম,
” না না। তেমন কিছু না। ”

ছেলেটির চোখেমুখে এখনও হাসির ঝলক কমছে না। সেই পূর্বের মতো হাসি বজায় রেখেই সে বললো,
” ওয়াশরুম দেখিয়ে দেওয়ার জন্য থ্যাংকস। ”

” ইটস ওকে। ”

” আপনি বোধহয় জানেন আমি কে। ”

” জি। আপনি শাহাদ ভাইয়ার বন্ধু। তাই তো?”

” জি জি। আমি ওর বন্ধু। ওদের বাসা আমাদের পাশেই। তবে আপনাকে চিনতে পারলাম না। আপনি ভাবীর কে হোন?”

” আমি আপুর ফুপাতো বোন। ”

” ওহ আচ্ছা। আপনাকে দেখে খুব একটা বড় মনে হয় না। কিসে পড়াশোনা করছেন আপনি?”

” এবার মেডিকেলে কলেজে ভর্তি হয়েছি। ”

” বাহ। আপনি তো তাহলে ভবিষ্যত ডাক্তার। শুনে ভালো লাগলো। আমি একটা বেসরকারি কোম্পানিতে জব করি। ”

” ওহ আচ্ছা। ”
এই বলে আমি চুপ করে রইলাম। এভাবে শুধু শুধু কথা বাড়ানো, পরিচিতি বাড়ানোতে খানিক বিরক্ত বোধ করছি আমি। ব্যাপারটিই পুরোপুরি অযাচিত বোধ হচ্ছে। কিন্তু আমার বিরক্তভাবটা হয়তো সামনের ব্যক্তিটি বুঝতে পারলো না৷ এজন্যই আবারো বলে বসলো,
” দেখেছেন! এতোক্ষণ কথা বললাম। অথচ নামটাই জানা হলো না। আমার নাম নাহিদ। আপনার?”
এই বলে আমার দিকে করমর্দনের ভঙ্গিতে হাত বাড়িয়ে দিলো। অমনিই অকস্মাৎভাবে কোথা থেকে যেনো টপকে এসে উনার হাতে এসে হাত মিলিয়ে দিলেন প্রোজ্জ্বল ভাই। ঠোঁটের কোনে বিস্তৃত হাসি এনে বললেন,
” আর আমার নাম প্রোজ্জ্বল। নাইস টু মিট ইউ। ”

অকস্মাৎ প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের এ আগমনে ভ্যাবাচ্যাকা খেলাম আমি। সাথে বিস্ময়ের চূড়ায় পৌঁছালেন নাহিদ নামের ছেলেটি। আমাদের এ বিস্ময়ের মাত্রাকে আরো এক দফা বাড়িয়ে দিতে সেখানে উপস্থিত হলেন অভ্র ভাই। প্রোজ্জ্বল ভাই নাহিদের নামের ছেলেটির হাত ছাড়তেই অভ্র ভাই উনার হাতে হাত মিলিয়ে বললেন,
” আমি অভ্র। নাইস টু মিট ইউ ব্রো।”

দুজনের এ অকস্মাৎ আগমনে আমি ড্যাবড্যাব করে উনাদের দিকে চেয়ে রইলাম। সাথে পর্যবেক্ষণ করলাম, উনাদের চোখের চাহনিকেও। এ মুহূর্তে দুজনের চাহনি স্পষ্ট জানান দিচ্ছে, নাহিদ নামের ছেলেটির উপর দুজনেই বড্ড রেগে আছেন এবং এমন রেগে আছেন যে, যেকোনো মুহূর্তে সামনের এ মানুষটিকে কাঁচা চিবিয়ে ফেলবেন দুজনে।

অভ্র ভাই ও প্রোজ্জ্বল ভাই নিজেদের পরিচিতি দিয়ে এগিয়ে এসে আমার দু পাশে দাঁড়ালেন। অভ্র ভাই আমার পাশে রেলিঙে হেলান দিয়ে আয়েশি ভঙ্গিতে দাঁড়ালেন। যথাসম্ভব শান্ত স্বরে নাহিদকে জিজ্ঞেস করলেন,
” তো কি কথা হচ্ছিলো আপনাদের মাঝে?”

অভ্র ভাইয়ের সহজ সরল প্রশ্নেও যেনো মিইয়ে গেলো নাহিদ। আমাদের অগোচরে শুকনো ঢোক গিলতে চাইলেও তা ঠিকই আমাদের দৃষ্টিগোচরে এলো। নাহিদ কেমন আড়ষ্ট হয়ে এলেন। ঈষৎ ভীতসন্ত্রস্ত গলায় বললেন,
” এই তো পরিচিতি আদানপ্রদান হচ্ছিলো। ”
এই বলে সে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করলো। তার এ জবাব শুনে আমার অপর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা প্রোজ্জ্বল ভাই বুকের উপর হাত আড়াআড়িভাবে রেখে রাশভারি গলায় জিজ্ঞেস করলেন,
” এতো লম্বা পরিচিতি নিয়ে মনে মনে ওর বায়োডাটা লেখা হচ্ছিলো নাকি?”
®সারা মেহেক

#চলবে
(সবার মন্তব্যের আশাবাদী ❤️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here