#বিরহের_নাম_তুমি
#পর্ব_১৮
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
________________
৪৭.
লেখাগুলো পড়ে কিছুক্ষণ হতবাক হয়ে থাকে জারিফ। তার মাথা কি আউলিয়ে গেছে নাকি বুঝতে পারছে না। কোনো কিছু না ভেবেই সে মায়ের কথা শুনে, সূচনাকে একটা উদ্ভট প্রশ্ন করে ফেলল? কী আশ্চর্য! সূচনা তাকে কেন ভালোবাসতে যাবে? এইতো এখানে স্পষ্টভাবে লেখা আছে সূচনা জয়কে ভালোবাসে। খাতাটি টেবিলের ওপর রেখে সে মায়ের উদ্দেশ্যে বলে,’তুমি ওর সাথে কেন সবসময় বাজে আচরণ করো?’
তিনি রাগে ফুঁসে উঠে বললেন,’আমি ওর সাথে বাজে আচরণ করেছি? ও যা লিখল আর তুইও তাই বিশ্বাস করলি?’
‘অবিশ্বাস করার মতো কিছু পাইনি। তুমি এমনিতে ওকে দেখতে পারো না সেটি আলাদা বিষয়। কিন্তু এখন তো আমার বিয়ে তাই না? এখন আর কোনো হাঙ্গামা করো না।’
‘তুই হঠাৎ তোর বাপের মতো ওর সাপোর্ট কেন করছিস? মনে নেই ওর জন্য তোর বাবা আমাদের কী কী বলেছিল? বাড়ি থেকেও চলে যেতে বলেছিল।’
‘না, ভুলিনি। আর সেখানে সূচনার কোনো দোষ ছিল না।’
‘সূচনা এখন বাপ-ছেলের চোখে তুলসী পাতা হয়ে গেছে তাই না? তাহলে প্রীতিকে কেন বিয়ে করছিস? যা না সূচনাকেই বিয়ে করে এই বাড়িতে নিয়ে আয়। তাহলেই তো ভালো হয়।’
কথা শেষ করে তিনি গটগট করে জারিফের ঘর থেকে বের হয়ে যান। জারিফেরও মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। তবে সে মায়ের কথাগুলোকে পাত্তা দেয় না। বাইরে বের হয় সূচনাকে খুঁজতে। তবে কোথাও খুঁজেও ওকে পাওয়া গেল না। বাবা যখন জানবে সূচনা বাড়ি থেকে চলে গেছে, তখন বাড়িতে আবার নতুন একটা ঝামেলা বাঁধবে। তার মেজাজ আরও বেশি খারাপ হয়ে যাচ্ছে। সে উপায় না পেয়ে সূচনার নাম্বারে টেক্সট করে,’কোথায় তুই?’ ম্যাসেজ করে সে আশেপাশে খেলতে থাকা বাচ্চাগুলোকে সূচনার কথা জিজ্ঞেস করে। ওরা জানায়, সূচনাকে বাড়ির বাইরে বের হতে দেখেছে শুধু। তখন ম্যাসেজের উত্তর আসে,’আমি হোস্টেলে চলে এসেছি। চিন্তা করবেন না আপনি। পারলে চাচাকে একটু সামলিয়ে নিয়েন। আমি আপনার গায়ে হলুদে না থাকলেও বিয়ের দিন কমিউনিটি সেন্টারে উপস্থিত থাকব। চাচাকে বলে দিয়েন।’
হোস্টেলের রুমে আসা মাত্রই জারিফের ম্যাসেজটা এসেছিল। ম্যাসেজের উত্তর দিয়ে সে বিছানার ওপর বসে। তাকে দেখামাত্রই রুমমেটরা সবাই অবাক হয়েছে। ‘তোর না বিয়ের পর আসার কথা ছিল?’ প্রশ্নটি করল ফাতেমা। সূচনা ইশারায় বোঝাল,বিয়ে বাড়ির কোলাহল তার ভালো লাগছিল না। তাই চলে এসেছে। সূচনার উত্তরটি মনঃপুত হলো না কারোরই। তবে ওরা কেউ আর বাড়তি প্রশ্নও করেনি। কেননা সূচনার মুখের ভাব দেখেই বোঝা যাচ্ছে, তার মন-মেজাজ ভালো নেই। তবে কেন নেই? এ প্রশ্ন এবং কৌতুহল সবার মাঝেই উদয় হয়। কিন্তু তারা সূচনাকে বিরক্ত না করে অপেক্ষা করতে থাকে। মন ভালো হলে,সূচনা হয়তো নিজেই কারণটা বলবে।
অন্যদিকে বাম কাৎ হয়ে সূচনা শুয়ে আছে। চাচির অপমানসুলভ কথাগুলো বারবার তার কানে ভাসছে। সে বলে তো দিয়েছে, বিয়েরদিন উপস্থিত থাকবে। তবে সে যাবে না। এই মিথ্যাটুকু বলেছে জারিফ এবং চাচাকে ক্ষান্ত করতে। গ্রাম থেকে তার বাবা-মা, ছোটো চাচা,চাচি আরও অনেকেই আসবে। তার সেখানে যাওয়া, না যাওয়ায় কিছুই আসে যায় না।
.
(৪৮)
বেডরুমের জানালার পর্দা সরাতেই কাচরঙা রোদ্দুর ঘরের মাঝে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। খোলা চুলগুলোকে দু’হাতের সাহায্যে হাত খোঁপা করে নেয় ভূমিকা। কিছুক্ষণ জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে। গতকাল রাতের কথা মনে পড়তেই ফিক করে হেসে ফেলে। গতকাল সন্ধ্যেতে রাসেল অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পরই ভূমিকা রাগ করে বসে ছিল। রাসেলের কোনো দোষ নেই। তার কিছুক্ষণ পর-ই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়গুলো নিয়ে রাগারাগি শুরু করে ভূমিকা। অযথাই চেঁচায়। বেচারা রাসেল কিছুই বুঝতে না পেরে অসহায়ের মতো তাকিয়ে ছিল। সে সময়টাতে অনেক কষ্টে হাসি আটকে রেখেছিল ভূমিকা। এতসব নাটক করার কারণ হলো আজ রাসেলের জন্মদিন। তাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যই এই ছোট্ট নাটকটা করেছে। যাতে আজ বাড়িতে ফিরেই সে সারপ্রাইজ হয়ে যায়। ঝগড়ার জন্য ভূমিকা রাতে অন্য রুমে ঘুমিয়েছিল। রাসেলের রুমে এসে দেখে বিছানা একদম পরিপাটি করে গুছিয়ে রেখে গেছে। মাঝখানে একটা ফুল দিয়ে ছোট্ট চিরকুট রেখে গেছে। কৌতুহলী হয়ে ভূমি চিরকুটটি হাতে তুলে নেয়। সেখানে লেখা ছিল,’জানি না কী দোষ করেছি। তবুও স্যরি। রাগ করে থেকো না প্লিজ! ভালোবাসি।’
চিরকুট পড়ে ঠোঁট টিপে হাসে সে। অদ্ভুত ভালোলাগা তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে। তবে অনুভূতির জোয়ারে ভেসে অযথাই সময় নষ্ট করতে চাচ্ছে না সে। এখনো অনেক কাজ বাকি পড়ে আছে। সব তাকে একাই করতে হবে। প্রথমে সে রান্নার আয়োজন শুরু করে। আজ সবকিছু রাসেলের পছন্দমতো রান্না করা হবে। রান্নার জোগার সব রেডি করে, সে নিজেদের বেডরুম সাজাতে যায়। পুরো রুমটা সে ডেকোরেশন করেছে ক্যান্ডেল লাইট দিয়ে। ভূমি জানে, রাসেল এসেই আগে দ্বিতীয় রুমটিতে যাবে ভূমিকে খুঁজতে। ঐ রুমটা আলাদাভাবে ডেকোরেশন করা হবে। কেক কাটা হবে ঐ রুমেই। বেডরুমটা তাদের একান্ত সুন্দর মুহূর্তের জন্য সাজানো হয়েছে। বেড কভার, বালিশের কভার, জানালার পর্দা, দরজার পর্দা সব আজ সে পাল্টিয়েছে। দ্বিতীয় রুমটা ডেকোরেশন করেছে নীল আর সাদা বেলুন দিয়ে। এতগুলো বেলুন একা একা ফুলাতেই তার অর্ধেক সময় চলে গেছে। দু’রুম-ই সাজানো হলে সে রান্নাঘরে ফিরে আসে। রাসেলের পছন্দ চকোলেট ফ্লেভারের কেক। চাইলে সে দোকান থেকেই কেক আনতে পারত। তবে ভূমি চায়, বিয়ের পর তার প্রিয় মানুষটার প্রথম জন্মদিনে সবকিছু নিজের হাতে করতে। তাই তো কেকটাও নিজেই বানায়। রান্নাবান্না ছাড়াও বিভিন্ন আইটেমের খাবার বানানোতে তার হাত একদম দক্ষ। গায়ের রং কালো হলেও, গুণে সে কোনো অংশে কারো থেকে কম নয়।
কেক বানানো শেষ করে সে একে একে পায়েস,সাদা ভাত, বিরিয়ানি, চিংড়ি নুডলস্, এগ চাউমিন, গরুর মাংসের খিচুড়ি, ফালুদা সব বানিয়ে ফেলে। খাবার আইটেম অনেক হলেও সবকিছুই অল্প পরিমাণে রান্না করেছে; যাতে নষ্ট না হয়। সবশেষে তার মনে পড়ে সেদিন রাসেল পিঠা খেতে চেয়েছিল। পাটিসাপটা, তেলের পিঠা আর ভাঁপা পিঠা রাসেলের খুব-ই পছন্দ। ভাঁপা পিঠা বানানো হুট করে সম্ভব নয়। তাই সে গুটি কয়েক পাটিসাপটা আর তেলের পিঠা বানিয়েছে। সব কাজ শেষ করতে গিয়ে প্রায় সন্ধ্যে হয়ে গেছে। একটু পরই রাসেল আসবে বাড়িতে। তাই চটজলদি গোসল করে নীল রঙের শাড়িটা পরে। মুখে হালকা প্রসাধনী মেখে চুলগুলা আঁচড়ে নেয়। পুরো বাড়ির লাইট অফ করে দ্বিতীয় রুমে গিয়ে লুকিয়ে থাকে। ফোন হাতে নিয়ে দেখে রাসেল অনেকবার ফোন করেছিল। ভূমিকা মুখটিপে হাসে। মোবাইলে সময় দেখে নেয়, রাসেলের আসার সময় হয়ে গেছে। আর মিনিট দশেকের মধ্যেই চলে আসবে। বাসার কলিংবেল বেজে ওঠে তখন। রাসেল কি আজ সময়ের আগেই চলে এসেছে? ভূমিকা খুশি হয়। রাসেলের কাছে এক্সট্রা চাবি আছে। সাড়া না পেয়ে সে নিজেই ভেতরে আসবে। তাহলেই না সারপ্রাইজ পাবে! ভূমিকার মনে মনে আনন্দ হচ্ছে ভীষণ। কলিংবেল বেজেই চলেছে। এবার ভূমিকা অবাক হয়। তাহলে কি রাসেল আসেনি? সে ঘর থেকে বের হয়ে ড্রয়িংরুমে যায়। দরজা খুলে দেখতে পায় শ্বেতাঙ্গ নারীকে। ধবধবে শরীরে লাল একটা শর্ট ড্রেস পরেছে। চুলগুলো সোনালী কালার। লাইটের আলোতে সিল্কি সোনালী চুলগুলো চিকচিক করছে। ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক খেয়াল হলো, যখন মেয়েটি হেসে স্পষ্ট ইংরেজিতে বলল,’হাই, আমি লিন্ডা।’
ভূমিকা ঈষৎ হেসে বলল,’ভূমিকা।’
‘আমি তোমাকে চিনি। রাসেলের মুখে তোমার অনেক গল্প শুনেছি।’
‘আপনাকেও আমি চিনি। রাসেলের এক্সিডেন্টের সময় ভিডিয়ো কলে দেখেছিলাম।’
‘ওহ হ্যাঁ, আমি তো ভুলেই গেছিলাম।’ মনে পড়ার ভঙ্গিতে হেসে বলল লিন্ডা। অন্য সময়ে এলে হয়তো ভূমিকা খুশি হতো। তাই বলে লিন্ডার আজই আসতে হলো? তাও আবার রাতে! ভূমিকা লিন্ডাকে ড্রয়িংরুমে নিয়ে এসে বসায়। দু’মগ কফি এনে নিজেও এসে বসে। লিন্ডা কফির মগে চুমুক দিয়ে বলে,’তোমায় সুন্দর লাগছে। রাসেলের জন্মদিন আজ জানো?’
ভূমিকা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। লিন্ডা জেনে-বুঝেই কি তবে এসময়ে বাড়িতে এসেছে? নাকি অন্য কোনো কারণে?
____________
৪৯.
গায়ে হলুদের দিন সকালে চাচা একবার হোস্টেলে এসেছিল। চাচির সাথে ঝগড়ার বিষয়টি চাচা জারিফের কাছেই শুনেছে। এ নিয়ে তিনি স্ত্রীর ওপর ক্ষিপ্ত থাকলেও বাড়িভর্তি মেহমান থাকায় কিছু বলতে পারেনি। সূচনা বুঝিয়ে বলেছে বিয়ের দিন সে যাবে। তাই চাচা আর জোর করেনি। আজ জারিফের বিয়ে। সে বিয়েতেও যাবে না। সকাল থেকে চাচা অনেকবার ফোন করেছে। ম্যাসেজও করেছে। সূচনা কোনো রেসপন্স করেনি। ফোন অফ করে কলেজে চলে গেছে। কলেজে আসা মাত্রই নুসরাত বলে রেখেছে আজ তার সাথে এক জায়গায় যেতে হবে। কোথায় যেতে হবে, জিজ্ঞেস করলে নুসরাত তা বলেনি। ক্লাস ছুটির পর তারা যখন রিকশায় ওঠে, তখন নুসরাত বলে,’ভালোই হয়েছে আজ তুমি কাজিনের বিয়েতে যাওনি।’
সূচনা অবাক হয়ে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। নুসরাত বলে,’বিয়েতে গেলে আজ একজনের উইশ পূরণ হতো না। এখন কী উইশ সেটা আমি বলব না।’
রিকশা নিয়ে ওরা স্ট্যান্ডে আসে। সেখান থেকে ওরা মাইক্রোতে ওঠে। সূচনা কিছুই বুঝতে পারছে না। গাড়িতে নুসরাতের বাড়ির সবাই ছিল। সবাই মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে বসে আছে। শুধু এখানে আদিল নেই। নুসরাত মন খারাপ করে বলে,’ভাইয়া আজ চীনে চলে যাচ্ছে। ভাইয়াই বলেছিল আজ যেন তোমায় নিয়ে এয়ারপোর্টে যাই। বন্ধুদের সাথে দেখা করে ভাইয়া এয়ারপোর্ট চলে আসবে।’
বাড়ির সবার মন খারাপ দেখে সূচনারও একটু খারাপ লাগে। তবে আদিল কেন তাকে নিয়ে যেতে বলেছে? এয়ারপোর্ট গিয়ে একে একে সবাই গাড়ি থেকে নামে। আদিল বন্ধুদের নিয়ে আগেই চলে এসেছে। সে উৎসুক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে, কখন সূচনা নামবে। নুসরাতকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করে,’সূচনা কোথায়?’ ঠিক তখনই সবার শেষে সূচনা নামে। আদিলের ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসির রেখা ফুটে ওঠে। সে বাবা-মায়ের সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটায়। যাওয়ার সময়ে হাতে থাকা শপিং ব্যাগ থেকে লাল রঙের একটা হিজাব সূচনার মাথায় পরিয়ে দিয়ে বলে,’আপনার জন্য। আল্লাহ্ চাইলে একদিন এরকম লাল শাড়িতেই আপনাকে আমার বাড়িতে নিয়ে আসব।’
সূচনা হতবাক হয়ে যায়। তার বিস্ময়ের রেশ কাটার পূর্বেই আদিল দৃষ্টিসীমানার বাইরে চলে যায়। এক হাতে সে হিজাবটি ধরে রাখে ফাঁকা জায়গাটির দিকে তাকিয়ে থাকে।
.
(৫০)
পার্লার থেকে মাত্রই প্রীতিকে সাজিয়ে আনা হয়েছে। ওর দিক থেকে চোখ সরানো যাচ্ছে না। প্রীতি এখন ভীষণ খুশি। মনের ভেতর রং, বেড়ঙের প্রজাপতি উড়াউড়ি করছে। এত আনন্দ, সুখানুভূতি কখনোই তার হয়নি। ভালোবাসার মানুষটিকে নিজের করে পাওয়ার চেয়ে বড়ো আনন্দ আর কী হতে পারে? আজ তার ঠোঁট থেকে হাসি যেন সরছেই না। শাহেদ অস্বস্তি নিয়ে পায়চারি করছে। সাদিয়া ঠেস মেরে প্রীতিকে বলে,’দেখ ছাগলডায় কেমন করতাছে।’
‘ওর হইছে কী?’ জিজ্ঞেস করে নাতাশা। প্রীতি মুচকি হেসে বলে,’মনে হয় সূচনার জন্য অপেক্ষা করছে।’
ওদের তিনজনকে ওর দিকে তাকিয়ে হাসতে দেখে শাহেদ রেগে যায়। দাঁত কিড়মিড় করে জিজ্ঞেস করে,’তিন শাঁকচুন্নি এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেন? আমার কি রূপ টুপটুপ করে পড়তাছে?’
প্রীতি এবার শব্দ করে হেসে ফেলে। শাহেদ আরও রেগে বলে,’মহারাণীর হাসি যেন আজ থামছেই না! আচ্ছা শোন, সূচনা এখনো আসে না কেন রে? ভাইয়ারে একটু ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস কর তো, কখন আসবে।’
প্রীতি প্রত্যুত্তরে বলল,’তোর ঠেকা হলে তুই ফোন কর।’
‘দাঁড়া, আমিই ফোন করতেছি।’
পাঞ্জাবির পকেট থেকে ফোন বের করে জারিফের নাম্বারে ডায়াল করে শাহেদ। জারিফ তখন বরযাত্রী নিয়ে রওনা দেবে। ফোন রিসিভ করে জারিফ বলে,’হ্যাঁ, শাহেদ বলো।’
‘কী ব্যাপার দুলাভাই? আসবেন কখন আপনারা? প্রীতি কখন থেকে অধৈর্য হয়ে বসে আছে।’ মিথ্যে কথা বলায় প্রীতি শাহেদের পিঠে থাপ্পড় বসায়। জারিফ হেসে বলে,’এইতো আমরা এখন রওনা দেবো।’
‘ইয়ে মানে ভাইয়া, সূচনা কোথায়?’
জারিফ একটু থমকায়। জিজ্ঞেস করে,’সূচনা এখনো আসেনি?’
‘না তো! ও তো আপনাদের সাথে আসবে।’
জারিফ আর কিছু বলল না। আসছি বলে ফোন রেখে দিলো। আন্দাজ করল, সূচনা আসবে বললেও আসবে না হয়তো। সে বাবাকে ডেকে বলল,’তোমরা সবাই রওনা দাও এখনই। আমি সূচনাকে নিয়ে আসছি।’
এ কথা শুনে সকলে বিস্ময়ে হতবাক। এই ছেলের মাথা খারাপ নাকি? বর ছাড়া বরযাত্রী যায় কীভাবে? বাবা তখন বললেন,’তোমাকে ছাড়া বরযাত্রী যাবে কীভাবে? তুমি বরং সবার সাথে চলে যাও। আমি সূচনাকে নিয়ে আসছি।’
‘কোনো সমস্যা হবে না আব্বু। তোমাদের সাথে সাথেই আমি পৌঁছে যাব।’
‘তুমি বুঝতে পারছ না। মানুষজন খারাপ বলবে।’
‘মানুষের কথায় কান কেন দেবে? সময় নষ্ট করো না। তোমরা যাও। আমার বেশিক্ষণ লাগবে না।’
কারো কোনো বাধা না শুনেই জারিফ বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। যাওয়ার পূর্বে সূচনার নাম্বারে ফোন করেছিল। ফোন বন্ধ। মেজাজ খারাপ হয় জারিফের। মেয়েটার সমস্যা কী? আজ তার বিয়ে, আজ কি ওর রাগ করাটা শোভা পায়? নানাদিক ভাবতে গিয়ে খেয়ালই করেনি রাস্তার উলটা সাইড থেকে ট্রাক আসছে। এমনকি এতক্ষণ ধরে হর্ণ বাজানোতেও সে খেয়াল করেনি। যখন হুশে আসে তখন আর সময় নেই। কয়েক সেকেণ্ডের পলকেই ট্রাকের ধাক্কায় বাইকসহ জারিফ সিটকে পড়ে রাস্তার এক সাইডে। ভয়ে ট্রাকের ড্রাইভার আর থামেনি। মানুষজন দৌঁড়ে যাচ্ছে জারিফের কাছে। জারিফের অফ হোয়াট কালার শেরওয়ানি রক্তে মেখে একাকার অবস্থা! তার ঝাপ্সা চোখজোড়া ক্রমেই বন্ধ হয়ে আসে।
চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ। কাল থেকে বেশ কিছুদিন গল্প দিতে পারব না। জানি এতে হয়তো অনেকেরই বিরক্ত লাগবে, তবে আমার কিছু করার নেই। কারণ এটা সাধারণ কোনো এক্সাম নয়; বোর্ড এক্সাম! লেখালেখির ঊর্ধ্বে আমার ক্যারিয়ার। সো সবাই ভালো থাকবেন, আর আমার জন্য দোয়া করবেন।
আর হ্যাঁ, আজকের পর্বটি নিয়ে মন্তব্য করে যাবেন।]