বিরহের নাম তুমি পর্ব-১৭

0
346

#বিরহের_নাম_তুমি
#পর্ব_১৭
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
_______________
৪৫.
হোস্টেলে ফেরার পর থেকে আরও বেশি অস্বস্তিবোধ হচ্ছিল সূচনার। প্রীতির কান্নারত মুখটা বারংবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। সেই সাথে অজস্র প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে তার মনের গহীনে। হিসাব মেলানোটা কঠিন। তবে সে চাচ্ছেও না এর হিসাব মিলুক। কিছু সমীকরণ অসমাপ্তই শ্রেয়। মাত্র যখন বিছানায় শরীর এলিয়েছে সে, তখন হল সুপার এসে বলল,’তোমার কলেজ থেকে নুসরাত নামে এক মেয়ে দেখা করতে এসেছে।’
সূচনা ধড়ফড়িয়ে বিছানা থেকে উঠে। ওড়নাটা শরীরে জড়িয়েই সে দ্রুত বেগে নিচে নামে। ভিজিটর রুমে অপেক্ষা করছিল নুসরাত। সূচনাকে দেখামাত্র-ই গম্ভীর হয়ে বলল,’তোমাকে আসলে আমার নতুন করে বলার কিছুই নেই। যতবার-ই কিছু বলব, আর তুমি স্যরি বলবে। তারপর আবারও এক-ই ভুল করবে।’
সূচনা বরাবরের মতো এবারও চুপ করে রইল। নুসরাত ঠিক-ই বলেছে। সে যতই বলুক না কেন, সূচনার কেয়ারলেসের স্বভাবটা যাবে না। নুসরাত বসা থেকে উঠে বলল,’হয়েছে এখন আর ঢং করতে হবে না। আমার বাসায় চলো।’
সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকায় সূচনা। সে যেতে নারাজ। নুসরাত বোধ হয় বুঝতে পারল, না যাওয়ার কারণ কী হতে পারে। সে অভয় দিয়ে বলল,’ভাইয়া বাড়িতে নেই। মাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেছে। আসতে আসতে সন্ধ্যা হবে। আর আব্বু তো অফিসে। অনেক রাতে আসবে। আমি বাড়িতে একা থাকব, তাই তোমায় নিয়ে যাচ্ছি।’
মূলত আদিলের জন্যই যেতে চাচ্ছিল না সূচনা। যেহেতু সে বাড়িতে নেই, তাই নুসরাতদের বাড়িতে যেতেও সমস্যা নেই। নুসরাতকে সাথে করে রুমে নিয়ে গেল। তারপর ঝটপট রেডি হয়ে নিল। ‘ফিজিক্স বই আর খাতা নিয়ে নাও। আগে কিছুক্ষণ পড়ব তারপর আড্ডা দেবো।’ বলল নুসরাত। সূচনাও তাই করল। দুই বান্ধবী মিলে গল্প করতে করতে নিচে নামে। হল সুপারের থেকে পারমিশন নিয়ে কোচিং-এর কথা বলে বের হয়।
.
বাড়িতে গিয়ে নুসরাত আগে ফ্রেশ হয়ে নেয়। কারণ সে কলেজ থেকে সরাসরি সূচনার হোস্টেলে গিয়েছিল। খাটের ওপর বসে ব্যাগ থেকে বই-খাতা বের করে সূচনা। খাতার পৃষ্ঠা উল্টাতেই জয়ের হাতের লেখা দেখতে পায়। ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসির রেখা ফুটে ওঠে। যেখানে আনন্দের চেয়ে বিষাদের ছোঁয়া অনেক বেশি।
‘তুমি অলরেডি পড়া শুরু করে দিয়েছ?’ ওয়াশরুম থেকে বের হতে হতে প্রশ্ন করল নুসরাত। সূচনা উপর-নিচ মাথা ঝাঁকাল।
‘ভালোই হলো। আগে তাহলে পড়া কমপ্লিট করি। তারপর ভূতের মুভি দেখব ওকে?’ নুসরাতের প্রস্তাবে সূচনা সায় দিলো। ঘণ্টা খানেকের মতো দুজনে ম্যাথ সলিউশন করে। তারপর বই রেখে ল্যাপটপ নিয়ে বসে। ইউটিউব থেকে সার্চ করে The Nun, Evil Dead, Evil Return এই তিনটে মুভি দেখে। পুরো বাড়িতে শুধুমাত্র ওরা দুজন। একই সাথে ভয় এবং চাঞ্চল্যকর অনুভূতি হচ্ছিল। মনে মনে আনন্দও লাগছিল। এজন্যই ভয় পাওয়া সত্ত্বেও প্রথম মুভিটি শেষ করে আরও দুটো হরর মুভি দেখে। এদিকে বিকেল গড়িয়ে সেই কখন যে সন্ধ্যে হয়েছে সে খেয়াল নেই দুজনের একজনেরও। খেয়াল হলো তখন, যখন কলিংবেল বেজে উঠল। দু’জনই ভয়ে আঁতকে ওঠে। দরজা খুলতে যেতেও ভয় পাচ্ছিল। ওদিকে বারবার কলিংবেল বাজিয়েই চলেছে আদিল। দরজা খুলছে না দেখে নুসরাতের নাম্বারে ফোন করে। আরও একবার ভয় পেয়ে যায় দুজন। ফোন বিছানাতেই ছিল। ধড়ফড়িয়ে সূচনাকে জড়িয়ে ধরে নুসরাত। আতঙ্কিত হয়েও সূচনা ইশারায় শান্ত হতে বলে। ফোন রিসিভ করে নুসরাতের হাতে দেয়।
‘হ্যা…হ্যালো!’ কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল নুসরাত। ওপাশ থেকে আদিল ধমক দিয়ে বলল,’দরজা খুলিস না কেন?’

নুসরাত ফোন কেটে দিয়ে সূচনাকে বলল,’প্লিজ গিয়ে দরজাটা খুলে দাও। আমি গেলেই ভাইয়া আমাকে বকবে। আমি দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে আছি। ভয় পেও না। জলদি যাও।’
কিছু বুঝে ওঠার পূর্বেই সূচনাকে জোর করে পাঠিয়ে দিলো। ভয়ে ভয়ে দরজা খোলে সূচনা। রাগান্বিত হয়ে আদিল যেই না বকা দিতে যাবে, তখনই সূচনাকে দেখে থমকে যায়। ভীতিগ্রস্ত হয়ে সূচনা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। নুসরাতের মা খুশি হয়ে বলে,’তুমিও বাসায়! ভেতরে চলো।’
সূচনা তার সাথে ভেতরে চলে যায়। দরজা লক করে আদিল। বাইরে থেকে আসার সময়ে নিয়ে আসা খাবারগুলো নুসরাতকে সার্ভ করতে বলে। নুসরাত ভয়ে ভয়ে ড্রয়িংরুমে আসে। আদিল কিছু না বললেও মা জিজ্ঞেস করে,’এতক্ষণ ধরে কলিংবেল বাজাচ্ছিলাম, দরজা খুলিসনি কেন?’
‘ইয়ে মানে, হরর মুভি দেখছিলাম মা। ভয় লাগছিল।’
‘ভয় পাস তাও কেন দেখিস?’
নুসরাত উত্তর দেওয়ার আগেই সূচনার ফোন আসে। চাচা ফোন করেছে। কল কেটে না দিয়ে রিসিভ করে নুসরাতকে দিলো কথা বলার জন্য। নাম্বার ‘বড়ো চাচা’ লিখে সেভ করা থাকায় সে বুঝতে পারে ফেনের অপর প্রান্তে সূচনার চাচা। সে সালাম দিয়ে নিজের পরিচয় দিলো। জানালো সূচনা এখন তাদের বাসায়। চাচা বললেন,’আচ্ছা ওকে বলো আমি হোস্টেলে অপেক্ষা করছি। আমি গিয়ে কি নিয়ে আসব?’
ফোন লাউডে ছিল। সূচনা ইশারায় বারণ করল, নুসরাতও তাকে সেটি জানিয়ে দিলো। ফোন রাখার পর না খেয়ে যেতে চাইলেও নুসরাতের মা দিলো না। তারা বার্গার নিয়ে এসেছিল। সূচনাকেও খেতে হলো অর্ধেক। বাড়িতে এসেই আদিল নিজের রুমে চলে গেছিল, এখন পর্যন্ত নিজের রুমেই আছে।
নুসরাতকে তার মা বললেন,’সন্ধ্যা পার হয়েছে আরও আগেই। একা যাওয়ার দরকার নেই ওর। আদিলকে ডেকে বল ওকে পৌঁছে দিতে।’
সূচনা ব্যস্ত হয়ে বারণ করলেও তিনি শুনলেন না। অবশেষে আদিলের সঙ্গে যেতে রাজি হতে হলো। আড়ষ্ট হয়ে সে একপাশে হাঁটছিল আর অন্যপাশে আদিল। ‘আসার সময় আমরাও গাড়ি পাচ্ছিলাম না। এলাকায় একটু আগে গেঞ্জাম হয়েছে তো তাই রিকশা, বাইক, সিএনজি কিছু চলতে দিচ্ছে না। মেইন রাস্তায় গিয়ে গাড়ি নিতে হবে।’ কথাগুলো বলল আদিল। সূচনা নিরুত্তর। আড়চোখে একবার তাকিয়ে আদিল মনে মনে ভাবতে থাকে,’আল্লাহ্ কি প্রতিটা মানুষের মধ্যেই কোনো না কোনো কমতি রাখে? এই যেমন, এত সুন্দর মেয়েটার কথা বলার ক্ষমতা নেই!’ নুসরাতের কাছে যখন জানতে পেরেছিল, সূচনা কথা বলতে পারে না; তখন অন্য সবার মতো তারও খারাপ লাগার সাথে সাথে আফসোস লাগছিল। কী হতো, যদি কথা বলতে পারত?

গাড়ি না থাকায় সব মানুষকে হেঁটে হেঁটেই যেতে হচ্ছে। তাই রাস্তায় এখন ভিড়ও বেশ। হাঁটার সময়ে একজনের সাথে আরেকজনের গা লেগে যাচ্ছিল। সূচনাকে অনেক বেশি আড়ষ্ট লাগছিল। তার চোখে ভীতি এবং বিরক্তি। যখনই কারো সাথে ধাক্কা লাগছে সে অনেক বেশি বিরক্তবোধ করছিল। এটা লক্ষ্য করে আদিল তার হাত সূচনার দু’পাশে রেখে ওকে প্রটেক্ট করে নিয়ে যাচ্ছে।সূচনা অবাক হয়ে একবার আদিলের মুখের দিকে তাকায়। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এখানেও তার জয়ের কথা মনে পড়ে যায়। সেই বাসের ঘটনা! মেইন রোডে গিয়ে ওরা একটা রিকশায় ওঠে। ছোটো সিট, তাই দূরত্ব রাখা কষ্টকর। তবুও আদিল দূরত্ব রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে। চলতি রিকশায় বাতাসের দাপটে আরও বেশি শীত করছিল সূচনার। সে গায়ের শালটি জড়োসড়ো করে শরীরে জড়িয়ে নেয়। আদিল দৃষ্টি সামনে রেখেই বলে,’রুমে থাকার সময়ে শাল পার্ফেক্ট। কিন্তু বাইরে বের হলে তখন অবশ্যই সুয়েটার পরা উচিত কিংবা সাথে রাখা দরকার। কারণ ঘরের চেয়ে বাইরে শীত বেশি থাকে।’
সূচনার তো কিছু বলার ক্ষমতা নেই। তাই সে চুপ করেই রইল। পথিমধ্যে আদিল আর কিছু বলেনি। সূচনাকে একদম হোস্টেলের সামনে পৌঁছে দিয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছে।
____________
৪৬.
জারিফদের পুরো বাড়ি সাজানো হয়েছে। নানান রঙের আলোতে বাড়িটা ঝিকমিক করছে। আজ দু’দিন হবে সূচনা চাচার বাড়িতে আছে। সেদিন রাতে তাকে নিয়ে আসার জন্যই চাচা হোস্টেলে গিয়েছিল। চাচা তাকে আনতে গিয়েছিল বলে সে ফিরিয়ে দিতে পারেনি। কাল গায়ে হলুদ এবং পরশু বিয়ে। জারিফের ফোন দিয়ে প্রীতির সঙ্গে ভিডিয়ো কলে কথা হয়েছে সূচনার। প্রীতির আনন্দিত মুখটি দেখে অজানা অদ্ভুত সুখানুভূতি অনুভব করে সেও। কী মিষ্টি লাগছে মেয়েটাকে! বিয়ের সব শপিং করা হয়েছে প্রীতিকে সাথে নিয়ে। এ টু জেড তার পছন্দে কেনা হয়েছে। তবে বার বার সে জারিফ আর সূচনার মতামতও নিচ্ছিল। জিজ্ঞেস করছিল, ‘এই? এটাতে আমাকে কেমন লাগবে? সুন্দর লাগবে তো? এটা নেব সূচনা? জারিফ বলো তো, এটায় আমায় মানিয়েছে না?’
সূচনা হেসেছে। যেটায় মানিয়েছে সেটি পছন্দ করে দিয়েছে। এমনকি বিয়ের লেহেঙ্গাটা সূচনারই পছন্দ করা। এসবকিছু চাচা এবং জারিফের ভালো লাগলেও চাচির ভালো লাগেনি। সূচনার সাথে প্রীতির এত সদ্ভাবও তার সহ্য হচ্ছিল না। তাই কেনাকাটা শেষ হওয়ার পর সবাই একসাথে রেস্টুরেন্টে গেলেও সে যায়নি। অসুস্থর বাহানায় বাড়িতে ফিরে এসেছে। তার অভিনয় বুঝতে অসুবিধা হয়নি চাচারও। তাই শপিং ব্যাগগুলো নিয়ে সেও স্ত্রীর সাথে বাড়িতে ফিরে এসেছিল।

সূচনা বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্রীতির কথাই ভাবছিল তখন জারিফ পেছন থেকে বলে,’ভূমি আপু ফোন করেছে। কথা বল।’
খুশিতে চকচক করে ওঠে সূচনার দু’চোখ। রাসেল ফোন কেনার জন্য আরও আগেই টাকা পাঠাতে চেয়েছিল, তবে সূচনা রাজি হয়নি। পড়াশোনা ঠিকমতো হবে না ইত্যাদি অজুহাত দেখিয়েছিল। তাই এখনও তার স্মার্ট ফোন কেনা হয়ে ওঠেনি। জারিফের হাত থেকে ফোন নিয়ে সূচনা হাই দেয়। ওপাশ থেকে ভূমিকাও হেসে হাই বলে। জিজ্ঞেস করে,’ভালো আছিস?’
সূচনা মাথা ঝাঁকায়। ভূমির পাশ থেকে রাসেল বলে,’হাই শালিকা। বিয়ে বাড়িতে তো ভালোই মজা করবে। কাউকে আবার পটিয়ে নিও না। আমি তো আছি তাই না?’
রাসেলের দুষ্টুমিতে সূচনা আর ভূমিকা শব্দ করে হাসে। পাশ থেকে জারিফ বলে,’আপনি আর কথা বইলেন না মিয়া! নিজে তো দূরে থাকেনই, এখন আবার আপুকেও নিয়ে গেছেন। বিয়েতেও আসবেন না। কত খারাপ লাগছে জানেন?’
‘কী করি বলো তো ভাই? বউকে ছাড়া থাকতে পারি না। আবার অফিস থেকে হুট করে ছুটিও দেবে না। নয়তো অবশ্যই বিডিতে গিয়ে তোমার বিয়ের দাওয়াত খেয়ে আসতাম। জানো বিয়ে বাড়ির রোস্ট আমার কত পছন্দ? নিজের বিয়ের সময় নিজেই তো তিনটা রোস্ট খেয়ে ফেলেছিলাম। মনে নেই?’
জারিফ হেসে বলল,’মনে থাকবে না আবার?’
চারজন মিলে ত্রিশ মিনিটের মতো ভিডিয়ো কলে আড্ডা দেয়। কল কাটার সাথে সাথেই প্রীতির ফোন আসে। তাই জারিফ নিজের রুমে চলে যায়। আবার একা একা বসে থাকে সূচনা। বাড়িতে এখন অনেক মেহমান আছে। চাচির বাবার বাড়ির লোক সবাই। চাচার বাড়ির সবাই আসবে আগামীকাল। কিছুক্ষণ রুমে একা একা পায়চারি করে বিছানায় বসে সে। তখন এক পিচ্চি এসে বলে,’আপু, জারিফ ভাইয়া তোমায় ডেকেছে।’

পিচ্চির সাথেই জারিফের রুমে গেল সূচনা। জারিফ বলল,’একটু রুমে থাক তো। আমি দোকানে যাব। এত ইচ্চি-পিচ্চি বাড়িতে, কখন আবার বিয়ের কোন জিনিস নিয়ে যায় ঠিক নেই। আমি না আসা অব্দি কিন্তু যাস না।’
সূচনা মাথা নাড়ায়। জারিফ চলে যাওয়ার পরে পিচ্চিগুলোর সাথে দুষ্টুমি করতে থাকে। কিছুক্ষণ পর ওরা বাইরে চলে যায় খেলতে। সূচনা ফের একা হয়ে যায়। তাই সে জারিফের ঘরটা গুছিয়ে ফেলে। চেয়ারে বসে বই-খাতা উল্টিয়ে দেখতে থাকে। আনমনে সে খাতার পৃষ্ঠায় লেখে,’S+J’
সে সময়ে পেছন থেকে কাগজটি টান দিয়ে নিয়ে যায় চাচি। জিজ্ঞেস করে,’তুই জারিফের রুমে কী করছিস?’ সূচনা দাঁড়িয়ে যায়। তিনি উত্তরের অপেক্ষা না করে খাতাটি দেখে। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন,’S+J মানে? দু’দিন পর আমার ছেলের বিয়ে। আর তুই এখন আমার ছেলের মাথা খাওয়ার জন্য এসব লিখছিস? খুব শখ না জারিফের বউ হওয়ার?’ সূচনার ওপর এমনিতেই তিনি ক্ষেপে ছিলেন। এবার সুযোগ পেয়ে হাত ছাড়া করতে চাইলেন না। গালে থাপ্পড় দিতে গেলে চাচির হাত ধরে ফেলে সূচনা। কটমট করে তাকিয়ে থাকে সে। এক ঝটকায় হাত সরিয়ে দেয়। জারিফ সে সময়ে বাড়িতে ফিরে আসে। রুমে এসে দেখে তার মা সূচনাকে বিশ্রি ভাষায় গালি-গালাজ করছে। সে তার মাকে জিজ্ঞেস করে,’কী হচ্ছে এসব? তুমি ওকে গালি দিচ্ছ কেন?’
‘তো কী করব? মাথায় তুলে নাচব? তোর বিয়ে ভাঙতে এসেছে এই মেয়ে।’ ক্ষেপে বললেন তিনি। কিছুই বুঝতে না পেরে ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে থাকে জারিফ। চাচি খাতাটি দেখিয়ে বলেন,’দেখ! ওর আর তোর নামের অক্ষর লিখেছে তাও প্লাস দিয়ে। এর মানে কী দাঁড়ায়? ও ভালোবাসে তোকে। ভালো তো বাসে না, সব লোভ!’
সূচনা মাথা নত করে নিরবে চোখের পানি ফেলছে। কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে জারিফ তাকে প্রশ্ন করে,’তুই আমাকে ভালোবাসিস সূচনা?’
জলন্ত দৃষ্টিতে তাকায় সূচনা। জারিফের হাত থেকে খাতাটি নিয়ে সেখানে লিখতে থাকে,’আপনাদের কি ধারণা J-তে শুধু একটা নাম-ই হয়? না,আপনার প্রতি আমার কোনো আকর্ষণ আছে। আর না আপনাদের সম্পত্তির প্রতি! আপনার মায়ের এমন ব্যবহারের জন্যই আমি আসতে চাইনি। শুধুমাত্র চাচার জন্য এসেছি আমি। তবে আর এক মুহূর্তও আমি এই বাড়িতে থাকব না। একটা কথা মনে রাখবেন, কথা বলতে পারি না মানে এই নয় যে, আমি ফেলনা। আমারও আত্মসম্মানবোধ রয়েছে। পারলে আপনার মাকে, ভালো ব্যবহার করতে শেখাবেন।’

এরপর সে S+J এর জায়গায় J-এর পর OY যোগ করে লিখে,’Jarif নয় আমি Joy-কে ভালোবাসি।’
খাতাটি পূণরায় জারিফের হাতে তুলে দেয় সে। হাতের উলটোপিঠে চোখের পানি মুছে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে।

চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ। আপনাদের থেকে আবারও বিদায় নেওয়ার সময় চলে এসেছে আমার। পরশু একটা পর্ব দিয়ে এক মাসের বিরতি নেব। ডিসেম্বরে পরীক্ষা শুরু তাই লেখালেখি করার মতো সময় পাব না। বেঁচে থাকলে, সুস্থ থাকলে জানুয়ারিতে আবার ফিরে আসব ইন-শা-আল্লাহ্।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here