#বিরহের_নাম_তুমি
#পর্ব_১৬
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
________________
৪২.
এতগুলো সাদা হিজাব দেখে রুমমেটরা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,’একই কালারের এতগুলো হিজাব অর্ডার করেছ কেন?’
সূচনা ফ্যালফ্যাল করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ইশারায় বোঝায় সে এই হিজাবগুলো অর্ডার করেনি। এতদিন একসঙ্গে থাকার দরুণ সূচনার ইশারাকৃত টুকটাক কিছু কথা প্রায় সবাই-ই বুঝতে পারে। তাই তার এই কথাটাও বাকিদের বুঝতে অসুবিধা হলো না। সুখীর বয়স কম। সব কিছুতেই তার প্রবল আগ্রহ। যখন জানতে পারল হিজাবগুলো সূচনা অর্ডার করেনি, তখন সে লাফিয়ে, ঝাপিয়ে তার পাশে গিয়ে বসে। সামনের বব কাটা চুলগো কপালের ওপর থেকে সরাতে সরাতে জিজ্ঞেস করল,’তাহলে এগুলো কে পাঠালো আপু?’
‘জানিনা।’ ইশারায় বলল সূচনা। সুখীর আগ্রহ দমল না। সে পূণরায় আগ্রহবোধের সাথে জানতে চাইল,’তাহলে কি এগুলো জয় ভাইয়া পাঠিয়েছে?’
জয়ের নাম শুনতেই মুখটা পাংশু বর্ণ ধারণ করে সূচনার। বুকের ভেতর একটা চিনচিনে ব্যথা জেগে ওঠে। সেদিনের পর থেকে যে জয়ের সাথে ওর কোনো যোগাযোগ নেই সেটি রুমের সবাই-ই জানে। সূচনার এমন মুখভঙ্গি দেখে ফাতেমা সুখীকে ধমক দিয়ে বলল,’কোথায় কী বলতে হয় জানিস না? এগুলো জয় কেন দেবে? জয়ের সাথে তো ওর কোনো যোগাযোগ-ই নেই।’
ধমক খেয়ে সুখী দমে যায়। কাঁদো কাঁদো হয়ে তাকায় ফাতেমার দিকে। তখন সে চোখের ইশারায় সুখীকে পরিস্থিতিটা বুঝিয়ে বলে। কৌতুহলী হয়ে সুখী প্রায় ভুলেই বসেছিল, সূচনা জয়কে কতটা ভালোবাসে! সে বুঝতে পারে, জয়ের কথাটা বলা তার উচিত হয়নি। পরিস্থিতি পালটাতে সাথী বলল,’যে পাঠিয়েছে ভালোই করেছে। আমরা সবাই মিলেমিশে হিজাবগুলো পরতে পারব।’
এ পর্যায়ে সূচনা নড়েচড়ে বসে। টেবিলের ওপর থেকে খাতা-কলম নিয়ে লিখে,’না। এই হিজাবগুলো আমরা কেউই ব্যবহার করতে পারবে না। এমনকি আমিও না। কেননা আমি তো জানি না হিজাবগুলো কে পাঠিয়েছে। তাই পরবও না।’
লেখাগুলো পড়ে কেউ আর সূচনার কথার বিরুদ্ধে গেল না। এই টপিক বাদ দিয়ে যে যার কাজ করতে লাগল। বিকেলের দিকে হঠাৎ করেই শুরু হলো বৃষ্টি। সম্ভবত একে শীতের বৃষ্টি বলে। এমনিতেই যা ঠান্ডা পড়ে, তার মধ্যে আবার বৃষ্টি। বাইরে বের হওয়ার জো নেই। ওদিকে সূচনা ভেবে রেখেছিল হিজাব কিনতে বের হবে। তা আর হয়ে উঠল না। বাইরে বের হওয়ার দুঃসাহসও আর দেখাল না। বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর থেকেই ফাতেমা আর সাথী কম্বল জড়িয়ে ঘুমাচ্ছিল। সুখী এতক্ষণ পড়লেও সেও এবার গিয়ে শুয়ে পড়ে। কম্বলের ভেতর ঢুকতে ঢুকতে সূচনার উদ্দেশ্যে বলে,’জানালা ধরে দাঁড়িয়ে না থেকে তুমিও ঘুমিয়ে পড়ো। দেখবে জম্পেশ একটা ঘুম হবে।’
প্রত্যুত্তরে সূচনা মুচকি হাসে। জানালার গ্রিল ধরে তাকিয়ে থাকে বাইরের দিকে। একটা বৃষ্টির বিকেলে জয় তার সাথে ছিল। আর আজ মানুষটা কোথায় চলে গেছে, তাও সে জানে না। জীবন কতটা অদ্ভুত এবং পরিবর্তনশীল তা ভাবতেই ভেতরটা গুলিয়ে যায়। সে আর ভাবে না এসব। মুভ অন করার চেষ্টা করে। কিন্তু চাইলেই কি আর সম্ভব? এক তরফাভাবে ভালো যে বেসেছে, সে জানে মানুষটিকে ভুলে যাওয়া কতটা কঠিন। আর যাই হোক, কেউ যেন কখনো এক তরফাভাবে কাউকে ভালো না বাসে; এমন তার ভালোবাসার মানুষটিও যেন কোথাও হারিয়ে না যায় এই প্রত্যাশাই করে সে আল্লাহ্’র কাছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে সে মনে মনে সগতোক্তি করে,’তোমার ওপর আমার এক পৃথিবী অভিমান।’
হঠাৎ খেয়াল হলো, তারও ঘুম ঘুম পাচ্ছে। ঘুম হচ্ছে সব কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়। তাই সূচনা এই সুযোগটা হাত ছাড়া করল না। জানালার পর্দা টেনে দিয়ে শুয়ে পড়ল সে নিজেও।
_______
৪৩.
হোস্টেলের সামনে দাঁড়িয়ে বাইকের আয়নায় নিজের চুল ঠিক করছে জারিফ। প্রীতি আজকেও সূচনাকে নিয়ে দেখা করতে বলেছে। কিছু কেনাকাটা করবে আর আড্ডা দেবে। এজন্য জারিফকে মিথ্যে বলে অফিস থেকে ছুটিও নিতে হয়েছে। তাই সে শুক্রবারেই সূচনাকে বলে রেখেছিল। ক্লাস বাদ দিয়ে সূচনার কোথাও যাওয়ার ইচ্ছে নেই। কিন্তু জারিফও নাছোড়বান্দা। প্রীতি যখন বলেছে; তখন সে সূচনাকে সাথে করেই নিয়ে যাবে। এজন্য সূচনা কলেজে যাওয়ার আগেই সে হোস্টেলের সামনে এসে অপেক্ষা করছে।
ওপর থেকেই জারিফকে দেখতে পেয়েছিল সূচনা। বুঝতে আর বাকি নেই যে, ক্লাস করা আর হবে না। একটা কাগজ হাতে নিয়ে সে নিচে নামে। জারিফ তাকে দেখতে পেয়েই সুন্দর করে হাসলো। কিছু বলার পূর্বেই একটা কাগজ তার হাতে গুঁজে দিলো সূচনা। সেখানে লেখা ছিল,’কিছুদিন পর পরীক্ষা হবে। এখন আমার ক্লাস করাটা জরুরী।’
লেখাটি পড়ে জারিফ বলল,’তোকে ক্লাস করতে বারণ করল কে? তবে কাল থেকে করবি। এমনিতে তো কত এবসেন্ট করিস তখন তো কিছু হয় না। আজও এমন কিছুই হবে না।’
একটু থেমে সে আবার বলল,’কীরে তুই কলেজ ড্রেসের সাথে কালো হিজাব পরেছিস। সাদা হিজাব পরিসনি কেন?’
সূচনা কোনো উত্তর করল না। ‘আচ্ছা ঠিক আছে। বাইকে উঠ। প্রীতি অপেক্ষা করছে।’ বলল জারিফ
উপায়ন্তরহীন হয়ে সে জারিফের বাইকে উঠে বসে।
.
.
৪৪.
প্রীতি গম্ভীর হয়ে বসে আছে। তাকে এই অবস্থায় দেখে মিটিমিটি হাসছে শাহেদ। সেটি লক্ষ্য করে প্রীতি রাগে ফুঁসে উঠে বলে,’হাসছিস কেন?’
‘হাসছি তোর অবস্থা দেখে।’
প্রীতি আঙুল তুলে শাসিয়ে শাসিয়ে বলে,’দেখ শাহেদ, তোরে ভালো করে বলতেছি সূচনার সাথে একদম ফ্লার্টিং চলবে না।’
‘কী আজব! তোর কেন মনে হচ্ছে আমি ওর সাথে ফ্লার্ট করব?’
‘কারণ আমি জানি, এখন তোর অন্য গার্লফ্রেন্ডের সাথে ডেটে যাওয়ার কথা ছিল। তুই সেখানে না গিয়ে আমাদের সাথে এসেছিস। আর কেন এসেছিস সেটাও আমি খুব ভালো করেই জানি।’
‘আরে ইয়ার! কী করব বল তো? মেয়েটাকে আমার দারুণ লাগে।’ দু’হাত উপরে তুলে আড়মোড়া ভাঙার ভঙ্গিতে বলল শাহেদ। প্রীতি ভাষাহীনভাবে বলল,’সাদিয়া ওর কথাবার্তা শুনেছিস তুই?’
‘তোরে তো আমি আগেই বলছিলাম, এই বান্দরটারে সাথে আনিস না।’ বলল নাতাশা।
প্রীতি ফের শাসানোর ভঙ্গিতে বলল,’শাহেদ, তুই অন্য মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করিস আমরা কেউ কিন্তু কিছু বলিনি কখনো। তবে বোঝার চেষ্টা কর, সূচনা আর অন্য মেয়েরা এক নয়। একদম-ই আলাদা। বিবেক দিয়ে একটু ভাব। তাছাড়া ও জারিফের কাজিন।’
‘আমার সত্যিই ওরে ভাল্লাগে রে বাল। আচ্ছা প্রেম-পিরিতি বাদ। জারিফকে জিজ্ঞেস করিস ওর বোনরে আমার সাথে বিয়ে দিবে নাকি।’
‘তুই চুপ করে থাক তো! তোর কথা শুনতেই আমার ভালো লাগছে না।’ ক্ষেপে বলল প্রীতি। শাহেদও আর ওকে রাগালো না।
সাদিয়া কিছুক্ষণ পর একটা অপ্রত্যাশিত প্রশ্ন করে বসল। জিজ্ঞেস করল,’তোর বয়ফ্রেন্ড আর সূচনা সত্যিই কাজিন তো?’
এ প্রশ্নে বিচলিত হয়ে পড়ে প্রীতি। ‘কী বলতে চাইছিস তুই?’
‘দেখ, আমার কথায় রাগ করিস না। আমার কেন জানি মনে হলো তাই বললাম।’
শাহেদ সাদিয়াকে বলল,’উলটাপালটা কথা বললে নাক ফাটিয়ে ফেলব তোর।’
‘ইশ! এখনই সূচনার জন্য এত দরদ? লাভ নেই তো। মেয়েটা তোকে পাত্তাই তো দেয় না।’
‘আরে ভালো মেয়েরা প্রথমে পাত্তা দেয় না বুঝেছিস। আস্তে আস্তে দিবে।’
‘সে আশাতেই তুই ঘুমা।’
দু’বন্ধু যখন বাকবিতণ্ডায় ব্যস্ত, প্রীতির মনে তখন বারবার সাদিয়ার বলা প্রশ্নটি ঘুরপাক খাচ্ছে।
কিছুক্ষণ বাদেই জারিফ সূচনাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে উপস্থিত হয়। সূচনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে, তার অনিচ্ছায় সে এখানে এসেছে। তবে জারিফ বেজায় খুশি। হাসলে এই ছেলেটাকে এত্ত সুন্দর লাগে! প্রীতি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। সূচনাকে দেখামাত্র শাহেদ খুশিতে ডগমগ করে ওঠে। নিজের পাশের চেয়ারটি দেখিয়ে বলে,’এখানে বসো, এখানে।’
ভদ্রতার খাতিরেই সূচনা বসল। জারিফ বসেছে প্রীতির সাথে। শাহেদ তখন বলল,’কীরে প্রীতি তুই? সবসময় আমাদের সাথে বসে থাকিস। ভাইয়া এসেছে। তাকে নিয়ে আলাদা টেবিলে বোস গিয়ে।’
প্রীতি জানে শাহেদ কেন এই কথা বলেছে। সে জারিফের দিকে তাকায়। জারিফ তখন তাকে চোখ টিপ দিয়ে বলল,’চলো যাই।’
প্রীতি হেসে ফেলে। ওরা এখান থেকে গেলেই শাহেদ সূচনার সঙ্গে ফ্লার্টিং শুরু করবে; তাই প্রীতি রাজি হয় না। বারণ করে বলে,’উঁহু! বিয়ের আগ পর্যন্ত ফ্রেন্ডসদের সময় দেই। বিয়ের পর সব সময় তো তোমার-ই।’
শাহেদ বিরক্ত হলো। জারিফের উদ্দেশ্যে বলল,’ভাইয়া, আপনার হবু বউটা ভীষণ আনরোমান্টিক।’
জারিফ হাসে। প্রীতি বলে,’আমি আনরোমান্টিক নাকি রোমান্টিক তা আমার বর জানলেই হবে। তোকে জাজ করতে হবে না বুঝছিস?’
বিরক্তিতে বিড়বিড় করে শাহেদ সূচনার দিকে তাকায়। মাথা নত করে নখ খুঁটছে সূচনা। ‘তোমার কি মন খারাপ নাকি সূচনা?’জিজ্ঞেস করল শাহেদ। নিজের নাম শুনতে পেয়ে মাথা তুলে তাকায় সূচনা। সৌজন্যমূলক হাসি প্রদান করে দু’দিকে মাথা নাড়ে। সাদিয়া আর নাতাশা মুখ টিপে হাসে। শাহেদের কানে ফিসফিস করে সাদিয়া বলে,’বলেছিলাম না পাত্তা পাবি না?’
শাহেদ দাঁত-মুখ খিঁচে বলে,’চুপ কর তুই।’
কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে সকলে বেরিয়ে পড়ে। শাহেদ, সাদিয়া আর নাতাশা একসাথে চলে যায়। জারিফের গুরুত্বপূর্ণ ফোন আসে অফিস থেকে। এখনই তাকে একবার যেতে হবে। সে প্রীতিকে বলল,’সূচনার হোস্টেলের সামনে দিয়েই তো যাবে। ওকে নামিয়ে দিয়ে যেও।’
‘তুমি অফিসে যাচ্ছ?’
‘হ্যাঁ, জরুরী একটা কাজ আছে।’
‘আচ্ছা সাবধানে যেও।’
‘ঠিক আছে।’ বাইকের কাছে গিয়েও জারিফ আবার ফিরে আসে। প্রীতিকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়ে বলে,’তোমরাও সাবধানে যেও। টেক কেয়ার।’
দুজনকে দেখে সূচনার ভালো লাগে। ঠোঁটের কোণে একটুখানি হাসি ফুটে ওঠে। ব্যস্ততার সাথেই দ্রুত চলে যায় জারিফ। প্রীতি এবং সূচনা একটা রিকশা নিল। দুজনেই নিশ্চুপ। প্রীতির মনের ভেতর অনেকগুলো প্রশ্ন হাসফাস করছে। কথাগুলো নিজের মাঝে না রেখেই সূচনাকে জিজ্ঞেস করল,’তোমরা কি দুজন দুজনকে ভালোবাসো?’
অবাক হয়ে তাকায় সূচনা। বুঝতে পারে না, সে কার কথা বলছে। উত্তর প্রীতিই দিলো। বলল,’আমি জারিফের কথা বলছি। তোমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে?’
কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে তাকিয়ে থাকে সূচনা। কিছুক্ষণ আগেই জারিফ এবং প্রীতি দুজনে কত সুন্দর সময় কাটাল আর এখন সে সূচনাকে এসব কী বলছে! প্রীতি মাথা নত করে নেয়। তার চোখজোড়া পানিতে ছলছল করছে। কান্নায় গলা ধরে বসেছে। সে নিচের ঠোঁটে কামড়ে ধরে কান্না দমন করার চেষ্টা করে বলে,’দেখো, তোমার কাছে আমি কিছু লুকাব না। তোমায় আমি কোনো দোষও দিচ্ছি না। আমার যেসব কারণে এই কথাটা মনে হলো তা তোমায় বলছি। গতকাল রেস্টুরেন্টে ছাদে তোমাদের জড়িয়ে ধরতে দেখেছি আমি। আজও তোমায় দেখে মনে হচ্ছিল তুমি এখানে নিজের ইচ্ছেতে আসোনি। তুমি কি আমায় জারিফের সাথে দেখলে কষ্ট পাও? এছাড়াও তোমার প্রতি জারিফের এত কেয়ার, দুর্বলতা শুধু আমাকেই নয় আমার ফ্রেন্ডদের মনেও প্রশ্ন তোলে। সূচনা, এখনও আমাদের বিয়েটা হয়নি। প্লিজ, আমায় সত্যিটা বলো। যদি তোমাদের মাঝে কোনো সম্পর্ক থেকে থাকে তাহলে আমায় সেটা এখনই জানিয়ে দাও। আমি তোমাদের মাঝখান থেকে সরে যাব আমি কথা দিচ্ছি।’ কথাগুলো বলতে বলতেই প্রীতি শব্দ করে কেঁদে ফেলে। বোঝা যাচ্ছে, শেষের অপ্রিয় কথাগুলো বলতে তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। ভালোবাসার মানুষকে ছেড়ে থাকা কি এতই সহজ? অশ্রু চলে আসে সূচনার চোখেও। সে আকুতি ভরা শব্দহীন কণ্ঠে বোঝানোর চেষ্টা করে জারিফের সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই। এমনকি সে তো কখনো জারিফকে অন্য নজরে দেখেওনি। স্রেফ ভাইয়ের চোখে দেখে এসেছে। নিজের একজন গার্জিয়ান ভেবেছে। প্রীতি কাঁদতে কাঁদতে বলে,’আমি তোমায় হার্ট করতে কথাগুলো বলিনি সূচনা। তোমার এই বোনকে তুমি ভুল বুঝো না। ভীষণ কষ্ট হয়েছে তোমায় এই কথাগুলো বলতে। কিন্তু কী করব বলো? আমি তো একটা মানুষ! আমার এসব মানতে ভীষণ কষ্ট হয়। সহ্য করতে পারি না আমি। এই বিষয়টা যদি শুধুমাত্র আমার দৃষ্টি পর্যন্তই থাকত, তাও হতো। আমার ফ্রেন্ডরাও ভাবে তোমাদের কোনো সম্পর্ক আছে। এসব কথা শুনতে খুব খারাপ লাগে বোন।’
সূচনা তড়িঘড়ি করে ব্যাগ থেকে খাতা-কলম বের করে। চলতি রিকশায় লিখতে অসুবিধা হওয়া সত্ত্বেও সে লিখে,’আপু দোহাই লাগে, এমন কথা বোলো না। তুমি কেন ভাইয়ার লাইফ থেকে চলে যাবে? তুমি তার একমাত্র ভালোবাসা। সে তোমায় কতটা ভালোবাসে তা হয়তো তুমি নিজেও জানো না। আমি সত্যি বলছি, আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা কেউ-ই কাউকে ভালোবাসি না। তুমি প্লিজ, ভাইয়াকে ছেড়ে যেও না।’
কাগজটি সে প্রীতিকে দেখায়। জড়িয়ে ধরে সে দু’হাতে ক্রন্দনরত প্রীতিকে। ভাবতে থাকে এসব কী হচ্ছে! ভুলক্রমেও কখনো জারিফকে নিয়ে এসব কথা, প্রশ্ন কিংবা চিন্তা-ভাবনা তার মনে আসেনি। তবে সে আজ শুরু থেকে ভাবছে। হঠাৎ করেই জারিফের পরিবর্তন, পাগলামি, জ্বরের সময় টেক কেয়ার করা, সেই রাতে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করার পরে সবসময় সূচনাকে আগলে রাখা, লেকের পাড়ে জারিফের অচেনা চাহনী,জয়ের চাচার বাড়ি থেকে বের হওয়ার পরে দেখা হওয়া সবকিছু তার চোখের সামনে ভাসছে। যদি প্রীতির ধারণা সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে কি জয়ের হঠাৎ করে উধাও হওয়ার পেছনে জারিফের-ই হাত আছে? সে মনেপ্রাণে চাচ্ছে এসব সত্যি না হোক। তার প্রতি জারিফের ভালোবাসা নামক কোনো অনুভূতি যেন না থাকে। তবে এটা তো সে বেশ বুঝতে পেরেছে, জারিফের থেকে তার দূরে থাকা উচিত।
চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]