#বিরহের_নাম_তুমি
#পর্ব_১৪
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
________________
৩৬.
কুয়াশাচ্ছন্ন খোলা আকাশের নিচে পাশাপাশি বসে রয়েছে সূচনা এবং জারিফ। পায়ের নিচে শিশিরভেজা ঘাস। তিরতির করে ছুটে আসা বাতাসে শরীরে কাঁপন ধরে যায় সূচনার। সে আড়ষ্ট হয়ে বসে থাকে। জারিফ লক্ষ্য করে বলে,’চাদর, সুয়েটার কিছুই পরিসনি কেন? ননসেন্স একটা!’
পূর্বের ন্যায় আড়ষ্ট হয়ে মাথা নত করেই বসে থাকে সূচনা। জারিফ জ্যাকেট খুলতে খুলতে বলল,’আমার জ্যাকেট পর আপাতত।’
দু’দিকে মাথা নাড়ে সূচনা। সে জারিফের জ্যাকেট নিতে ইচ্ছুক নয়। জারিফ চোখ রাঙিয়ে তাকায়। চোখ রাঙানো অবশ্য সূচনার দৃষ্টিগোচর হলো না। জারিফ এক প্রকার জোর করেই ওর জ্যাকেট সূচনার পিঠের ওপর রেখে বলল,’সরাবি তো ফেলে দেবো!’
সূচনা জ্যাকেটটি সরালো না, এমনকি ভালোমতো পরলও না। তার মনে এখন শান্তি নেই। বারবার জয়ের কথা মাথার ভেতর ঘোরপ্যাঁচ খাচ্ছে। কোনো কিছু-ই ভালো লাগছে না তার। কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে জারিফ বলে,’তুই নিজেও জানিস তুই কতটা সুন্দরী। এরপরও তোর সাহস হয় কীভাবে রাতের বেলায় একা বের হওয়ার? তাও আবার শাড়ি আর খোলা চুলে। তুই দেশের অবস্থা জানিস না এখন? কবে তুই নিজের ভালো বুঝতে শিখবি? তোর নিজের ভালোটা নিজের বোঝা উচিত।’
একটু থেমে জিজ্ঞেস করল,’কাঁদছিলি কেন? আর কোথায়-ই বা যাচ্ছিলি?’ প্রশ্নটি করে নিজের এন্ড্রোয়েড ফোনটি সূচনার হাতে গুঁজে দিলো। বলল,’ম্যাসেজে লেখ।’
ফোন হাতে নিয়ে বসে থাকে সূচনা। তার তো বলার মতো কিছু-ই নেই। বরং এখন আরও বেশি করে জয়ের কথা মনে পড়ছে। নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসে। কান্নারা আবার আসার জন্য যেন তোড়জোড় করছে। ওদিকে জারিফ তাড়া দিয়ে বলল,’কী হলো? লেখ।’
সূচনা ঈষৎ কেঁপে ওঠে। লিখে,’কোথাও যাচ্ছিলাম না।’
টাইপিং দেখছিল জারিফ। সে খুব ভালো করেই জানে সূচনা মিথ্যে বলছে। দীর্ঘশ্বাস গোপন করে সে বলে,’অযথা মিথ্যা বলে সময় নষ্ট করিস না। সত্যিটা লেখ।’
জারিফ বলার পরও সে কিছুই লিখল না। এবার জারিফ জিজ্ঞেস করে,’ঐ ছেলেটার কাছে যাচ্ছিলি?’
চকিতে ফিরে তাকায় সূচনা। আবছা আলো, আবছা অন্ধকারে দেখতে পায় জারিফ সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে তার দিকে-ই তাকিয়ে রয়েছে। দৃষ্টি নামিয়ে নেয় সে। উপর-নিচ মাথা ঝাঁকিয়ে জারিফের উত্তরে সায় দেয়। জারিফ প্রশ্ন করে,’এতে কান্না করার কী আছে? ছেলেটি আসেনি?’
দু’দিকে মাথা নাড়াল সূচনা।
‘হয়তো কোনো সমস্যা হয়েছে। এজন্য এতো ভেঙে পড়লে চলে নাকি? তুই অনেক বোকা সূচনা।’
নিজেকে তার সত্যিই নির্বোধ মনে হয়। তবে মন যে কিছুতেই জয়ের ব্যাপারটি ভুলতে পারছে না। যার থেকে কখনো আঘাত পাওয়া হয়নি, তার ছোটো ছোটো অবহেলাতেও মন বিষণ্ণতায় ছেঁয়ে যায়। এই যেমন বিষণ্নতা এখন সূচনাকে সম্পূর্ণ গ্রাস করে নিয়েছে। কিছুক্ষণ দুজনের মাঝে-ই পিনপতন নিরবতা চলে। বসে বসে হাতের নখ খুঁটছে সূচনা। জারিফ ওর দিকে তাকিয়ে বলল,’বাড়িতে প্রীতির সাথে বিয়ের কথাবার্তা চলছে।’
সূচনা সেভাবেই বসে রইল চুপচাপ। জারিফ পূণরায় নিজে থেকেই বলল,’ওর বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল। আর এখন তো আমি নিজেও জব করি, তাই ভাবলাম বিয়েটা করেই ফেলি। মেয়েটা আমায় ভীষণ ভালোবাসে জানিস?’
সূচনার এসব কথা জানার কথা নয়। প্রীতির সাথে তার আলাপও হয়েছে খুব কম। সে কী করে জানবে এসব? তবে সূচনা একটু ভালোভাবে খেয়াল করলেই বুঝতে পারত, জারিফের দ্বিধাদ্বন্দ্ব কথাটি। প্রীতিই ভালোবাসে শুধু? জারিফ নয়?
____________
৩৭.
বারান্দায় পাশাপাশি বসে রয়েছে রাসেল এবং ভূমিকা। এখানে আসার পর থেকে ভূমির মনে হচ্ছে, সে স্বপ্নের জগতে আছে। এত সুখ, এত আনন্দ তাকে সুখের সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ভালোবাসার মানুষটি কাছে থাকলে কার না ভালো লাগবে?
‘একটা কথা বলব?’ রাসেলের কাঁধে মাথা রেখে অনুমতি চাওয়ার ভঙ্গিতে বলল ভূমি। রাসেল মৃদু হেসে তার কপালে চুমু খেল। ভূমির এক হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,’বলো।’
‘আমার না এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না।’
‘কী বিশ্বাস হচ্ছে না?’
‘এইযে আমি সত্যিই তোমার কাছে।’
‘কী বলো? এত যে আদর করলাম, তাও বিশ্বাস হচ্ছে না। আরও লাগবে?’
ভূমির গাল লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে। সে মেকি রাগ দেখিয়ে সোজা হয়ে বসে। রাসেলের বাহুতে কিল-ঘুষি দিতে দিতে বলল,’মুখে একদম কোনো ব্রেক নেই। বেশরম!’
রাসেল শব্দ করে হাসে। ভূমিকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,’বউয়ের কাছে আবার লজ্জা কীসের? প্রত্যেক পুরুষের উচিত একমাত্র তার বউয়ের কাছেই বেশরম হওয়া। নাকি তুমি চাও অন্য মেয়েদের সামনেও আমি বেশরম হই?’
এবার সত্যি সত্যিই রেগে তাকালো ভূমিকা। রাসেল পূণরায় তার সুমিষ্ট হাসিটি প্রদান করে বলল,’আরে রেগে যাচ্ছ কেন? আমি তো মজা করে বলেছি।’
‘এসব মজা আমার ভালো লাগে না।’ অভিমানী কণ্ঠে বলল ভূমিকা।
‘আচ্ছা বউ,স্যরি। আর হবে না এমন। এখন কি কান ধরতে হবে?’
রাসেলের মুখের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেলে ভূমিকা। জড়িয়ে ধরে আদুরেস্বরে বলে,’না, কান ধরতে হবে না। শোনো, আমি না বাড়ির সবাইকে খুব মিস করছি।’
‘এই মাসেই বাবা-মা আর সূচনার জন্য স্মার্ট ফোন কিনে পাঠাব। তখন তুমি সারাদিন-ই ওদের সাথে ভিডিয়ো কলে কথা বলতে পারবে।’
ভূমিকা খুশি হয়। বলে,’জারিফকে একটা ফোন দেই?’
‘বিশেষ দরকার?’
‘আসলে সবচেয়ে বেশি সূচনার কথা মনে পড়ছে। বোনটা আমার একা একা ঢাকা-শহরে থাকে। তার মধ্যে কথা বলতে পারে না জানোই তো! আমাদের মতো চাইলেও সে তার মনের কথাগুলো মুখ ফুটে কখনো বলতে পারবে না। জারিফকে ফোন দিতে চাচ্ছি কারণ, ওকে তাহলে বলতাম কাল একটু সূচনার কলেজে যেতে। কথা বলতে পারতাম তাহলে।’
‘আচ্ছা তাহলে দাও।’
ভূমিকা ঘর থেকে ফোন নিয়ে আসে। আগে চেক করে দেখে জারিফ অনলাইনে আছে কি-না। জারিফকে একটিভ পেয়ে হোয়াটসএপেই ভিডিয়ো কল দিলো। তখনো জারিফ এবং সূচনা বাইরে বসে ছিল। ফোন রিসিভ করল জারিফ। ভূমিকা জিজ্ঞেস করল,’কীরে? কেমন আছিস?’
‘আলহামদুলিল্লাহ্ আপু। তুমি কেমন আছো?’
‘আলহামদুলিল্লাহ্ আমিও ভালো আছি। বাড়ির সবাই কেমন আছে?’
‘ভালো। দুলাভাই কোথায়?’
‘এইযে আমার পাশেই।’ রাসেলও এবার ফোনের সামনে এসে বলল,’কী অবস্থা শালাবাবু?’
‘ভালো দুলাভাই। আপনার কেমন?’ হেসে বলল জারিফ। রাসেল চোখ টিপে বলল,’এখন তো বউ আমার কাছেই থাকে। কেমন থাকা যায় বুঝে নাও।’
রাসেলকে কনুই দিয়ে গুঁতো দিলো ভূমিকা। এরপর ফোন শুধু নিজের দিকে রেখে প্রশ্ন করল,’সূচনার সাথে তোর দেখা বা কথা হয় না রে?’
সূচনা পাশে বসে দেখতে পাচ্ছিল ভূমিকাকে। ফোন রিসিভ করার আগে জারিফ বলে দিয়েছিল,’আগেই কথা বলবি না। আপুকে সারপ্রাইজ দেবো।’
জারিফ ভূমির প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বলল,’তেমন না। কেন?’
‘কাল একটু ওর কলেজে যেতে পারবি? ভীষণ কথা বলতে ইচ্ছে করছে ওর সাথে।’
‘চোখ বন্ধ করো।’
‘কী?’
‘বললাম চোখ বন্ধ করো।’
‘কেন?’
‘আগে তো চোখ বন্ধ করো।’
‘কীযে পাগলামি করিস বুঝি না। নে করলাম। এখন বল।’
ফোনটা এবার সূচনার হাতে দিয়ে জারিফ বলল,’এবার চোখ খোলো।’
ভূমিকা চোখ খুলে সূচনাকে দেখে অবাক হয়ে যায়। এদিকে ভূমিকাকে দেখতে পেয়ে যেন পূণরায় সূচনার কষ্টগুলো ফিরে এসেছে। এক হাত মুখের ওপর রেখে কেঁদে ফেলে সে। সূচনাকে কাঁদতে দেখে ভূমিকার চোখেও পানি চলে আসে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলে,’এই কাঁদছিস কেন তুই? সূচনা? আমার দিকে তাকা।’
জারিফ সূচনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। তবে ঠিক বুঝতে পারল না কান্না করার কারণটা ভূমিকা নাকি জয়! অনেক কষ্টে কান্না থামিয়ে ফোনের স্ক্রিনে তাকায় সূচনা। ভূমিকা অনেকক্ষণ যাবৎ তাকিয়ে থাকে। প্রশ্নের উত্তর যা দেওয়ার জারিফ-ই দেয়। বোনকে দেখতে পেয়ে একটু যেন কষ্ট লাঘব হয় সূচনার।
__________
৩৮.
দেখতে দেখতে তিনদিন কেটে গেছে ইতিমধ্যে। এখনো পর্যন্ত জয়ের কোনো খোঁজ-খবর পাওয়া যায়নি। ওর চাচার বাড়িতে আরেকবার গিয়েছিল। সেখানে গিয়েও কোনো লাভ হয়নি। এদিকে সর্বদা মনমরা হয়ে থাকে সূচনা। সকালে অফিসে যাওয়ার পূর্বে ফাতেমা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,’এভাবে কি চলবে? যে চলে গেছে তার জন্য কেন এত ভাবনা?’
ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে সূচনা। ফাতেমা ফের বলে,’তুই এতটুকু শিওর থাক, জয়ের এমনিতে কোনো ক্ষতি হয়নি। ও ইচ্ছে করেই চলে গেছে। কোনো ক্ষতি হলে নিশ্চয়ই ওর চাচা-চাচি জানতো। তোকেও বলত তাই না?’
ফাতেমার এমন যুক্তিতে সূচনার মন কিছুতেই সায় দেয় না। সে মনের দিক থেকে ভীষণভাবে ভেঙে পড়ছে। ফাতেমা হয়তো বুঝতে পারে। পাশে বসে এক হাতে কাঁধ জড়িয়ে ধরে বলে,’শোন, আমি তোকে বলছি না তুই জয়কে ভুলে যা। আর চাইলেও একটা মানুষকে ভুলে যাওয়া এত সহজও নয়। তবে আমি কী বলছিলাম শোন, তোর মেইন ফোকাস রাখা উচিত তোর পড়াশোনার দিকে। এই অচেনা ঢাকা-শহরের বুকে বাবা-মাকে ছেড়ে তুই কেন পড়ে আছিস? পড়াশোনা করার জন্যই তো? তাহলে কেন তুই সারাদিন এক বিষয় নিয়েই পড়ে আছিস বল তো?’
সূচনা মাথা নত করে বসে থাকে। সে নিজেও জানে, সে যা করছে তা ঠিক নয়। এই তিনদিন সে কলেজেও যায়নি। ফাতেমা ওর গাল ছুঁয়ে বলল,’কথাগুলো ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখিস। তোর ভালোর জন্যই বলেছি। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমি যাই লক্ষী।’
ফাতেমা আর সাথী একসাথে বেরিয়ে পড়ে। সকালে প্রাইভেট ছিল বলে সুখী আরও আগেই স্কুলে চলে গেছে। কিছুক্ষণ একা একা বসে থেকে নিজের মনকে ধাতস্থ করার চেষ্টা করে সূচনা। চোখের সামনে অসহায় বাবা-মায়ের মুখটা ভেসে ওঠে। মনে মনে ঠিক করে, এখন থেকে সে নিয়মিত কলেজে যাবে আর মন দিয়ে পড়াশোনাও করবে। তবে এ কথাও সত্য যে, নিজেকে সে যত ব্যস্তই রাখুক না কেন, দিনশেষে ঠিক-ই তার জয়ের কথা মনে পড়বে। কিন্তু জয়! সে কোথায়? তার কি একবারও সূচনার কথা মনে পড়ে না?
ভারী দীর্ঘশ্বাস সূচনার বুকচিরে বেরিয়ে আসে। বিছানা ছেড়ে উঠে রেডি হয়ে নেয়। বই-খাতা গুছিয়ে ব্যাগে ভরার সময়ে ফিজিক্স খাতাটির দিকে চোখ আটকে যায়। কাঁপা কাঁপা হাতে খাতাটি খুলে সে। জয়ের হাতের লেখাগুলোর ওপরে হাত বুলায়। কতগুলো ম্যাথ জয় করে দিয়েছিল! সূচনার হাসফাস লাগা শুরু করে। সেই সাথে অস্থিরতাও কাজ করছে। খাতাটি দ্রুত ব্যাগে ভরে নিয়ে হোস্টেল থেকে বেরিয়ে পড়ে। চারপাশে যেন শুধু জয়ের-ই স্মৃতি। আর এই স্মৃতিগুলোই বড্ড বেশি পোড়ায় তাকে।
কলেজ ক্যাম্পাসে যেতেই নুসরাতের সাথে দেখা হয়ে যায়। অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, যেন এখনই চোখের দৃষ্টি দিয়ে সূচনাকে ধ্বংস করে ফেলবে। নিজের মন খারাপ লুকিয়ে হাসার চেষ্টা করে সূচনা। ইশারায় জিজ্ঞেস করে,’কেমন আছো?’
নুসরাত কঠিনসুরে বলল,’তুমি কথা বলবে না আমার সাথে। কতগুলো টেক্সট করেছি ফোনে? একটা রিপ্লাইও কি দেওয়া যায়নি?’
অপরাধীর মতো তাকিয়ে থাকে সূচনা। এ তিনদিন যে সে কীভাবে পার করেছে তা নিজেরও জানা নেই। দু’হাতে কান ধরে শব্দহীন কণ্ঠে, ঠোঁট দ্বারা উচ্চারণ করে,’স্যরি।’
‘হ্যাঁ, তোমার আর কী? স্যরি বলবে আর সাত খুন মাফ। এই তুমি এমন কেন? কেয়ারলেস!’
ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে সূচনা। তার যে রাগ ভাঙানোর মতো ভাষা নেই। কী করে এই মেয়েটার রাগ সে ভাঙাবে? নুসরাত অভিমানী কণ্ঠে বলল,’কাল আমার বার্থডে ছিল জানো? তোমায় খুব মিস করেছি।’
এবার আরও বেশি অপরাধবোধ কাজ করছে তার মনে। স্যরির চেয়ে বেশি কিছু তো বলার নেই তার। তবে শুধু স্যরিতেও নুসরাতের মন গলল না। সে জেদ ধরে বসে আছে, আজ কলেজ ছুটির পর নুসরাতের বাড়িতে যেতে হবে। ওর জন্য রেখে দেওয়া খাবারগুলো খেতে হবে। এছাড়া রাগ ভাঙানোর আর কোনো উপায় না পেয়ে সূচনা রাজি হয়ে যায়। ক্লাসে গিয়ে নিরব হয়ে বসে থাকে। হঠাৎ হঠাৎ উদাস হয়ে যায়। স্যারের লেকচার মস্তিষ্ক অব্দি পৌঁছায় না। সে বুঝতে পারে, এত সহজে মনকে মানানো সম্ভব নয়। তার সময় লাগবে কিছুটা। সে স্যারের লেকচার নোট করতে থাকে।
কলেজ ছুটির পর পাশাপাশি হাঁটে ইউসূফ। জিজ্ঞেস করে,’কী হয়েছে সূচনা? তোমার মন খারাপ?’
উদাস মনে দু’দিকে মাথা নাড়ে সে। ইউসূফ বলল,’দেখে তো মনে হচ্ছে মন খারাপ। তিনদিন কলেজে আসোনি কেন? তোমার দুঃখে নুসরাত তো প্রায় কেঁদেই ফেলছিল।’
এ কথায় নুসরাত ইউসূফের পিঠে কিল বসিয়ে দেয়। স্মিত হাসে সূচনা।
আজ আর ইউসূফের সাথে কোনো খারাপ ব্যবহার করেনি। করবে কী? তার তো চিন্তাধারা এখন কিছুই বাস্তবে নেই। সব স্মৃতির মাঝে আটকে আছে।
নুসরাতের বাড়িতে এসে নার্ভাস লাগছিল সূচনার। তবে নুসরাতের মা ভীষণ মিশুক মানুষ। তিনি যেন সূচনাকে অনেক আগে থেকেই চেনেন এমন ব্যবহার করলেন। সূচনাকে বসতে দিয়ে সে কিচেনে চলে যায়। নুসরাত বলল,’আমি কেক নিয়ে আসি। কালকের বাসি কেক-ই খাবে এখন।’
সূচনা মৃদু হাসে। সোফায় মাথা হেলিয়ে বসে থাকে। জয়ের কথা কিছুতেই মাথা থেকে বের করতে পারছে না। আচমকা মাথায় কিছুর বারি খেয়ে চকিতে চোখ মেলে তাকায় সে। বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সামনে তাকায়। বেশ লম্বা গড়নের কালো শার্ট পরা একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে মোটা একটা কাগজ মুড়িয়ে নেওয়া। সূচনার যদি ভুল না হয়,তাহলে ছেলেটি হাতের কাগজ দ্বারাই সূচনাকে মেরেছে। কেক নিয়ে নুসরাতও সেখানে উপস্থিত হয়। ওকে দেখে ভীতি চোখে তাকায় ছেলেটি। অপ্রস্তুতভাবে দাঁড়িয়ে থাকে।
সূচনার দিকে তাকিয়ে আরেক দফা অবাক হয়। পলকহীনভাবে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ।
চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]