বিরহের নাম তুমি পর্ব-১৩

0
481

#বিরহের_নাম_তুমি
#পর্ব_১৩
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
________________
৩৩.
নভেম্বরের মধ্যভাগ। শীত শীত ভাবটা এখন থেকেই অনুভূত হচ্ছে বেশ। এয়ারপোর্টে যাচ্ছে সূচনা, ভূমিকা, রিদি, জারিফ আর চাচা, এবং সূচনার বাবা-মা। ভূমিকার ফ্লাইট আজ রাতে। যদিও তার আরও আগেই রাসেলের কাছে যাওয়ার কথা ছিল, তবে আইইএলটিএস(IELTS) কোর্সের জন্য সেটি আর তখন হয়ে ওঠেনি। একদিকে তার মনে সুখ সুখ অনুভূতিগুলো গুণগুণ করে গান গাইছে। অন্যদিকে বিষাদে গুলিয়ে যাচ্ছে সব। নিজের দেশ নিজের আপন মানুষদের ছেড়ে যেতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। সূচনার মুখটা ভার হয়ে রয়েছে। অভিমানে নয় বরং কষ্টে। খুব বেশিই মন খারাপ হলে সে বোনের কাছে চলে যেত। কোলে মাথা রেখে চুপচাপ শুয়ে থাকত। এ বিশাল ঢাকা-শহরের বুকে বোন ছাড়া তার অতি আপন কেউ নেই যার কোলে মাথা রাখলে শান্তি পাওয়া যায়। আজ সেই বোনও চলে যাচ্ছে। অনেক দূরে। বাবা-মা’ও দূরে থাকে। কখনো তাদেরকে এটা বুঝতে দেয় না যে, এই দুজন মানুষের অনুপস্থিতি ওকে কতটা ভোগায়। বুকের ভেতর থেকে চাপা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। জারিফ ওর পাশেই বসেছিল। নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পেয়ে একবার আড়চোখেও তাকায়। সেদিনের পর থেকে সূচনার সঙ্গে আর দেখা হয়নি জারিফের। মোট কথা, সূচনা যেখানে যেতে পারে বলে আইডিয়া রয়েছে সেখান থেকে দূরে থাকে। ব্যস্ত সময় কাটাতে চাকরীও নিয়েছে একটা। আজ এতদিন বাদে আবারও সূচনার সাথে দেখা হলো। মেয়েটা আগের চেয়ে আরও বেশি সুন্দর হয়ে গেছে। চোখ ধাঁধিঁয়ে যায়। রাস্তায় চলাফেরা করে কীভাবে?

ভূমিকার যাওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে। বাবা আর মা ভূমিকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করছে। সূচনা কাঁদছে নিরবে। কোনো শব্দ নেই। সবসময় যেমন নিরব থাকে, আজ তার কান্নাগুলোও নিরব। ভূমি সূচনার কাছে এগিয়ে আসে। ভেজা ভেজা চোখগুলোর দিকে তাকিয়ে বলে,’তুইও যদি এভাবে কাঁদিস তাহলে আমি যাব কীভাবে বল তো?’
ঠোঁট উল্টিয়ে বাচ্চাদের মতো ফুঁপিয়ে কাঁদে সূচনা। বোনকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে ভূমি বলে,’আমার লক্ষী বোন। কান্না করিস না। আমি আবার আসব তো।’
অল্প সময়ের জন্য সূচনা শান্ত হলেও মাকে কোনোভাবেই শান্ত করা যাচ্ছে না। রিদি আর বাবা মাকে সামলানোর চেষ্টা করছে। এদিকে ভূমিরও যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। আর তো থাকার সুযোগ নেই। মায়ের কান্না দেখে ভূমির অস্থির লাগছে। আমেরিকা যেতে মন টানছে না। চাচা বোধ হয় ভূমির মন পড়তে পারলেন। ইমিগ্রেশন পর্যন্ত ভূমির সঙ্গে যেতে যেতে বললেন,’মনকে শক্ত কর মা। পিছু ফিরে তাকাস না।’
‘মা কান্না করছে, চাচ্চু!’ কাঁদতে কাঁদতে বলল ভূমি। চাচা ওর কাঁধ জড়িয়ে ধরে বললেন,’মেয়ে এতদূর চলে যাচ্ছে। কষ্ট তো হবেই। সামলিয়ে নেব। তুই আর দেরি করিস না।’
চাচার কথা শুনল সে। রাসেল তার অপেক্ষায় রয়েছে। মনের ওপর পাথর রেখেই সে চোখের পানি মুছে সামনের দিকে অগ্রসর হলো। ভূমির যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে রয়েছে সূচনা। মাকে সে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। চাচা কোনোরকম বুঝিয়ে-সুঝিয়ে গাড়িতে নিয়ে এসে বসায়। কাঁদতে কাঁদতে অবস্থা খারাপ। বাবার তো কিছু বলার ক্ষমতা নেই। সে নিজেও সূচনার মতো নিরবে কাঁদছে। গাড়িতে উঠে স্ত্রীর মাথাটা তিনি নিজের কাঁধের ওপর রাখেন। অসম্ভব রকমের ভালোবাসেন দু’জন দু’জনকে। বাবার বাকপ্রতিবন্ধিকতা কখনো দুজনের ভালোবাসার মাঝে বাঁধা হতে পারেনি। যাওয়ার পথে রিদির হাজবেন্ড তাকে বাইকে করে নিয়ে গেছে। আসার সময়ে সবাই মাইক্রোতেই এসেছিল। সূচনা আগে এসেই গাড়ির পেছনের সিটে বসে ছিল। অন্ধকারে বসে মুখে হাত রেখে নিঃশব্দে কাঁদছিল সে। চাচা সামনের সিটে ড্রাইভারের পাশে বসেছেন। পরের সিটে বাবা এবং মা। জারিফ সূচনার কাছে এসে বসল। সূচনাকে সে এর আগেও কাঁদতে দেখেছে। তবে সময়ের বিবর্তনে কেন জানি মেয়েটা কাঁদলে তার ভালো লাগে না।
এই গাড়িতে করেই বাবা-মা গ্রামে ফিরে যায়। মাকে এভাবে যেতে দিতে মন চাচ্ছিল না সূচনার। কিন্তু কিছু করারও তো নেই। এখানে থাকার ব্যবস্থা থাকলে সে মা আর বাবাকে নিজের কাছে রেখে দিত। জারিফ সূচনাকে হোস্টেলে দিয়ে গেছে। সূচনা পিছু ফিরে না তাকালেও জারিফ দাঁড়িয়ে ছিল, যতক্ষণ পর্যন্ত সূচনাকে দেখা যায়।
______
৩৪.
ছেলে হলেও রাসেল যথেষ্ট গোছানো একটি ছেলে। যেমন গোছালো সে, তেমনই গোছালো তার বাড়ি-ঘর, বিছানা। এছাড়া যাদের প্রবাস জীবন-যাপন করতে হয়, তাদের সবসময়ই নিজের কাজগুলো নিজেকেই করতে হয়। তবে আজ ভূমি আসবে বলে পুরো ফ্ল্যাটটিকে নতুন করে সাজাচ্ছে সে। নতুন বেড কভার, বালিশের কভার, জানালার পর্দা সব কিছু পরিবর্তন করেছে। কিছু তাজা ফুল এনে ফুলদানিতেও রেখেছে। আজ আর নিজে রান্না করেনি। আসার পথে বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আসবে। বাড়ি-ঘর সব গোছানো হলে রাসেল ভূমিকে আনার জন্য এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। এছাড়া সে ভূমির জন্য অফিস থেকে তিনদিনের ছুটিও নিয়েছে।

দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ভূমি যখন আমেরিকার মাটিতে পা রাখে তখন তার সর্বাঙ্গে এক নতুন অনুভূতির ছোঁয়া প্রবেশ করে। একদম অন্যরকম অনুভূতি। তার থেকে কিছুটা দূরেই দাঁড়িয়ে রয়েছে হাস্যোজ্জ্বল রাসেল। শ্যাম বর্ণের এই ছেলেটির সম্পূর্ণ মুখটিতে আল্লাহ্ যে কী মায়া ঢেলে দিয়েছেন, তা বোধ করি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। রাসেলের পরনে ব্ল্যাক ডেনিম প্যান্ট, সাদা টি-শার্ট। টি-শার্টের ওপর ব্ল্যাক জ্যাকেট। দূর থেকেই দু’চোখ ভরে দেখে নিচ্ছে ভূমিকা। অথচ এই মানুষটি সম্পূর্ণই তার। কাছে যাওয়াতে কোনো বাধা নেই। সে যেন কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে দেখতে পেয়ে দুনিয়াবি সবকিছু ভুলে বসেছে। অন্যদিকে তৃষ্ণার্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে রাসেল। কখন ভূমি কাছে আসবে, কখন একবার ছুঁয়ে দেবে। অবশেষে অপেক্ষার প্রহর সইতে না পেরে রাসেল নিজেই ভূমির কাছে এগিয়ে যায়। শক্ত করে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে নেয় ভূমিকে। অনুভূতির আবেশে দু’চোখ বন্ধ করে ফেলে ভূমি। এইতো! এই সুখই তো সে চেয়েছিল। স্বর্গীয় সুখ! আনন্দে তার দু’চোখের কোটর থেকে অশ্রু নির্গত হয়। এক হাত চলে যায় রাসেলের পিঠে। ভূমিকার কানে ফিসফিস করে রাসেল বলে,’ভালোবাসি বউ।’
হাসি চওড়া হয় ভূমিকার। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে উচ্চারণ করে,’ভা…লো…বাসি!’
__________
৩৫.
হোস্টেলের ছাদে পাটি বিছিয়ে বসেছে ফাতেমা, সূচনা, সাথী এবং সুখী। বিকালের নির্মল হাওয়া, মাথার ওপর সুবিশাল নীল-সাদা আকাশ। সাথী বলল,’খালামনি একটা গল্প বলো।’
ফাতেমা ঠোঁট টিপে বলল,’গল্প শুনবি? কীসের গল্প? প্রেমের?’
‘তোমার ইচ্ছা।’
‘প্রেমে পড়েছিস নাকি?’
‘ধুর! শুক্রবার বন্ধ তাই একটু গল্প করতে আসছি। আর তুমি আছো উলটাপালটা কথা নিয়া।’
‘আহা! বল শুনি।’
‘না, প্রেমে পড়ি নাই।’
‘কিন্তু তোর চোখ যে বলে তুই প্রেমে পড়েছিস।’
‘ইশ! না। কিন্তু অফিসের একটা ছেলেকে ভালো লাগে। মনে হয় ছেলেটাও আমায় পছন্দ করে।’ লাজুক হাসিটা প্রদান করে বলল সাথী। সুখী উচ্ছস্বিত কণ্ঠে বলে,’এই জানো আমায় না গতকাল একটা ছেলে প্রপোজ করেছে।’
‘তোরে প্রপোজ করছে? আর মানুষ পাইল না। শেষমেশ পিচ্চি মাইয়ারে।’ বলল ফাতেমা। সুখী ঝেঝে উঠে বলল,’সবসময় পিচ্চি কেন বলো খালামনি? কিছুদিন পর আমি এসএসসি দেবো।’
‘আগে দে। তারপর বলিস।’
একটু থেমে সূচনার দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন,’তোর কাউরে ভালো লাগে না?’
সূচনার বুকের ভেতর ধুকপুক আওয়াজ হচ্ছে। ওদের কথোপকথন শুনতে শুনতে জয়ের কথা ভীষণ মনে পড়ছিল। সূচনা কী বলবে বুঝতে পারছিল না। ফাতেমা বলল,’তোর চোখও কিন্তু সাথীর মতো বলতেছে তুইও প্রেমে পড়ছিস।’
সূচনা ফাতেমার ফোনে টেক্সট করল,’প্রেমে পড়িনি। সম্ভবত ভালোবেসে ফেলেছি।’
টেক্সট পড়ে অবাক হয়ে যান তিনি। সাথী এবং সুখী ফোন কাড়াকাড়ি করে নিয়ে ম্যাসেজটা পড়ে। তিনজনই চেপে ধরে বলে,’এই কারে ভালোবাসছিস? কবে থেকে?’
এবার সবথেকে মন খারাপের ম্যাসেজটি সে লিখে। লুকায়নি কিছুই। দুজনের বন্ধুত্ব, ভালোলাগা সব জানিয়েছে ওদের। এমনকি জয় যে হিন্দু এটাও লুকায়নি। ম্যাসেজের প্রথম অংশ পড়ে তিনজনে খুশি হলেও শেষের কথাটিতে হতাশ হলো। ‘ছেলেটি অন্য ধর্মের!’ হতাশারসুরে বলল সাথী।
সবাই নিশ্চুপ এখন। ফাতেমা জিজ্ঞেস করল,’তুই কি ওকে ভালোবাসার কথা জানিয়েছিস?’
সূচনা দু’দিকে মাথা নাড়ে। ফাতেমা তখন বলল,’শোন ভালোবাসা পূর্ণতা পাক বা না পাক, সেটি কোনো বড়ো কথা নয়। কিন্তু ভালোবাসার কথাটা লুকিয়ে রাখিস না। জয়কে বলে দে। পরে কী হবে সেটা পরে দেখা যাবে। একটা গল্প বলি শোন।
আমার বিয়ের আগে একটা ছেলেকে আমি খুব পছন্দ করতাম। এলাকার সিনিয়র ভাই ছিল। ভয়ে কখনো ভালোবাসার কথা প্রকাশ করতে পারিনি। এরপর বাড়ি থেকে তোদের খালুর সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়। একই এলাকায় থাকতাম বলে ছেলেটি আমার বিয়ের খবর জানতে পারে। বিয়ের দু’দিন আগে আমায় ডেকে বলে সেও নাকি আমায় ভালোবাসতো। প্রেম করবে না সে। বিয়ে করবে বলে অপেক্ষা করছিল। এটা জানার পর আমার এত খারাপ লেগেছিল! কিন্তু তখন আর কিছুই করার ছিল না। সবাইকে দাওয়াত দেওয়া হয়ে গেছে, বিয়ের আয়োজন, শপিং করা হয়েছে। সবচেয়ে বড়ো ছিল বাবা-মায়ের সম্মান। তাদের সম্মানের কথা ভেবে আমি আর আগাইনি। বলিওনি যে, আমিও তাকে ভালোবাসতাম। এখন খুব আফসোস হয় জানিস, কেন বললাম না সেদিন? সে-ই বা আগে কেন জানালো না? হয়তো আমার জীবনটাও অন্যরকম সুন্দর হতে পারত। সেদিন যদি বলতাম, তাহলে মানুষরূপী ঐ পশুটার সঙ্গে আমার বিয়ে হতো না।’ এতটুকু বলে থেমে যান তিনি। কান্না গলার মাঝে দলা পাকিয়ে রয়েছে। চোখের কোণে অশ্রু চিকচিক করছে। ধরে আসা গলায় বলেন,’তাই বলছিলাম, ভালোবাসার কথা কখনো লুকিয়ে রাখতে নেই। প্রকাশ করে দেওয়াই উত্তম। এতে আর যাই হোক, সারাজীবন আফসোস নামক শব্দটাকে বয়ে বেড়াতে হবে না। ভালোবাসার মানুষটিকে পেতেই হবে এমনও কোনো কথা নেই। কিছু না পাওয়াতেও সুখ থাকে।’

ফাতেমার বলা কথাগুলো সূচনাকে ভেতর থেকে নাড়িয়ে তুলছিল। সে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে আজ-ই ভালোবাসার কথা জানিয়ে দেবে। তারপর যা হয় হোক। আজ সন্ধ্যায় দুজনের লেকের পাড়ে দেখা করার কথা। নিজের এই সিদ্ধান্তের কথাও সামনে বসে থাকে তিনজন সঙ্গীকে জানিয়ে দেয়। তারা হৈহৈ করতে থাকে আনন্দে। জয়ের প্রিয় রং কালো। তাই সে আজ কালো রঙের শাড়ি পরেছে। শাড়িটা ফাতেমার। যদিও সূচনার শাড়ি পরার কোনো ইচ্ছে-ই ছিল না। ওদের তিনজনের জোড়াজুড়িতে সেই ইচ্ছে আর বেশিক্ষণ টিকল না। সূচনার রেডি হওয়া শেষ হলে সুখী শিস বাজিয়ে বলে,’ওয়ে হায়ে! কী লাগছে। আমি তো প্রেমে পড়ে গেলাম মায়াবতীর।’
সূচনা ওর গাল টেনে দেয়। সাজগোজ সে কিছুই করেনি। এমনকি কোনো কাজল,লিপস্টিকও দেয়নি। কালো শাড়ি, পিঠময় ছড়িয়ে থাকা দীঘল কালো চুল এতটুকুই তার সৌন্দর্যকে আরও বেশি ফুঁটিয়ে তুলেছে। নির্দিষ্ট সময়ের কিছুক্ষণ আগেই সূচনা লেকের পাড়ে পৌঁছে যায়। অপেক্ষা করতে থাকে। বুকের ভেতর এখনো ধুকপুক ধুকপুক শব্দ হচ্ছে। বিশ মিনিট পার হওয়ার পরও জয়ের আসার কোনো খবর নেই। সূচনা ম্যাসেজ করে। ম্যাসেজেরও কোনো উত্তর নেই। উপায় না দেখে ফোন করে। ফোন সুইচড অফ। এবার চিন্তা হচ্ছে বেশ। জয়ের কিছু হয়নি তো? আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সে। না, এখনো জয় আসছে না। এবার দুশ্চিন্তা বাড়ছে। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়েই সে উঠে পড়ে। সিদ্ধান্ত নেয় জয়ের চাচার বাড়িতে যাবে। সে চায় না জয়ের কিছু হোক। তবুও কোনো ইনফরমেশন তো নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। এমন কখনো-ই হয়নি, জয় দেখা করতে বলে আসেনি। বরং সময়ের অনেক আগেই এসে অপেক্ষা করত। একটা রিকশা নিয়ে সে জয়ের চাচার বাসায় চলে আসে। সংকোচ হচ্ছিল খুব। তবুও দরজায় কড়া নাড়ে। জয়ের খবর জানতে-ই হবে তার। দরজা চাচি-ই খুলে দিলেন। সূচনাকে দেখে অবাক হয়ে বললেন,’ওমা, তুমি! এসো এসো ভেতরে এসো।’
সূচনা ভেতরে গিয়ে ড্রয়িংরুমে বসে। কীভাবে নিজের ভাষা তাকে বোঝাবে বুঝতে পারছে না। বাটন ফোনে ম্যাসেজ লিখে, ‘জয় কোথায় জানেন?’
সেন্ড না করে ম্যাসেজটা তাকে দেখাল। চাচি ভ্রুকুটি করে বললেন,’আমি তো বলতে পারব না। দিগন্তকে ডাকি দাঁড়াও।’
পাশের রুম থেকে দিগন্ত আসে। সূচনাকে দেখে অবাক হয়নি বিন্দুমাত্র। যেন সে জানতো-ই সূচনা আসবে। মুখটা অন্ধকারাচ্ছন্ন। সে মায়ের উদ্দেশ্যে বলল,’কী হয়েছে?’
‘তোর দাদা কোথায় জানিস?’
‘না। বিকেলের পর আর দেখিনি। কোথায় গিয়েছে বলেও যায়নি। ফোন বন্ধ।’
সূচনা ভেতর থেকে ভেঙে গুড়িয়ে যাচ্ছে। এভাবে কোথায় সে উধাও হয়ে গেল। ‘তুমি জানো না?’ প্রশ্নটি দিগন্ত সূচনাকে করেছে। ছলছল নয়নে মাটির দিকে স্থির দৃষ্টি রেখে সূচনা দু’দিকে মাথা নাড়ল। আর কিছু না বলেই চলে আসে বাড়ি থেকে। জয় এভাবে কোথায় চলে গেল? চোখের পানিতে সবকিছু ঝাপসা দেখছে সূচনা। এলোমেলো পা ফেলে হেঁটে চলেছে। কিছুদূর অগ্রসর হতেই বাইকের হেড লাইটের আলো তার চোখে-মুখে এসে পড়ে। চোখের ওপর হাত রেখে দাঁড়িয়ে পড়ে সূচনা। তখনো সে হেঁচকি তুলে কাঁদছিল। লাইট বন্ধ হলে চোখের ওপর থেকে হাত নামিয়ে ঝাপসা দৃষ্টিতে জারিফকে দেখতে পায়। কেমন সন্দিহান দৃষ্টিতে সে সূচনার দিকেই তাকিয়ে রয়েছে। বাইক থেকে নেমে সে সূচনার কাছে এগিয়ে আসে। জারিফকে দেখে যেন কান্না আরও বেশি পাচ্ছে সূচনার। প্রাণপনে কান্না আটকানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হতে হচ্ছে। সূচনার গালে চোখের পানি লেপ্টে আছে, চোখের পাঁপড়িগুলো ভিজে একটি আরেকটির সঙ্গে লেগে আছে। ঠোঁট কাঁপছে ঈষৎ। ‘কাঁদছিস কেন তুই?’ অনেকক্ষণ যাবৎ সূচনাকে পর্যবেক্ষণ করে প্রশ্নটি করল জারিফ। ভেজা দু’চোখ তুলে সে একবার জারিফের দিকে তাকাল। টলমল করা চোখ থেকে টপটপ করে গড়িয়ে পড়ল অশ্রুকণা। জারিফের সেই মুহূর্তে কী হলো জানা নেই; সে ক্রন্দনরত সূচনাকে শক্ত করে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরল।

চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ। ২০ তারিখ আমার পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও শেষ হয়নি। রুটির পরিবর্তন হয়েছিল। এরপর ২২ তারিখে পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০ তারিখ যেই পরীক্ষাটা হওয়ার ছিল, সেই পরীক্ষাটা ঐদিন হয়নি। কবে হবে সেটিও এখনো কলেজ থেকে জানানো হয়নি। অর্থাৎ ফ্রি হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। এছাড়া, জানুয়ারির আগে পুরোপুরিভাবে ফ্রি হওয়া’ও সম্ভব নয়।
যা হোক, অনেকদিন বাদে গল্প দিলাম। সবাই একটু রেসপন্স করার চেষ্টা করবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here