#বিকেলের_মৃত্যু (শেষ পর্ব )
লেখক: শামীমা জামান
শত বাঁধা অতিক্রম করে লিয়া পরীক্ষাটা শেষ পর্যন্ত শেষ করল। রুকাইয়া এই সময়টার জন্যই অপেক্ষা করছিল। পরীক্ষা শেষ হওয়া মাত্রই তিনি লিয়াকে গ্রামে পাঠাবার ব্যবস্থা করেন। লিয়া বুঝতে পারে তাকে গ্রামে পাঠাবার একটাই উদ্দেশ্যে, “আরিফুলের থেকে তাকে দূরে রাখা”। আরিফুলকে এটা জানালে সে বলে-
-তুমি নাহয় কিছুদিন গ্রাম থেকে ঘুরেই আস। ওখানে তোমার আম্মু থাকবে না। এসব ছেড়ে কিছুদিন দূরে থাকলে তোমার মন-মানসিকতাও ভালো থাকবে। এদিকে আমিও নিজেকে গুছিয়ে নেবার সময় পাব কিছুদিন।
লিয়া আরিফুলের কথায় আশ্বস্ত হয়। প্রস্তুতি নেয় গ্রামে তার চাচার বাড়ি যাবার। সেখানে অন্তত তাকে যন্ত্রণা দেবার মত কেউ থাকবে না। সে চাচার বাড়িতে ভালো থাকবে বলে কিছুটা ভরসা নিয়েই রওয়ানা হয়ে যায়। কিন্তু লিয়া তখনও জানত না রুকাইয়া কতদূর পর্যন্ত ভাবতে পারে, সে তার জন্য ওখানে কী ব্যবস্থা করে রেখেছে!
লিয়া গ্রামে গিয়ে চাচার বাড়িতে বেশ আদরেই আছে। সে বরাবরই এদের কাছ থেকে ভালোবাসা, আদর, স্নেহ পেয়ে এসেছে। কিন্তু সে খেয়াল করল, এখানে আসার পর এবাড়িতে বাইরের ছেলেদের আনাগোনা হচ্ছে! একটা সময় আঁচ করতে পারে এরা তাকে দেখতেই আসে। তখন সে জানতে পারে এরা রুকাইয়ার মাধ্যমে লিয়া সম্পর্কে জেনে এখানে আসছে, তাদের উদ্দেশ্য “বিয়ে”! লিয়ার ভেতর তখন আবার আতঙ্ক শুরু হয়ে গেল।
রুকাইয়া চেয়েছিল লিয়ার এ যাওয়াটা যেন স্থায়ীভাবে যাওয়া হয়। সেই ভাবনা থেকেই সেখানে সে লিয়ার জন্য দুইজন পাত্র ঠিক করে রেখেছিল। যারা কেউই কোন কাজ করত না। এদের মধ্যে একজন ছিল এলাকার বখাটে ছেলে জামাল। বখাটে জামাল প্রায় প্রতিদিনই লিয়ার সাথে কথা বলতে আসত। এমনকি সে মাঝে মাঝে রাতে আসত এবং লিয়ার সাথে একা কথা বলতে চাইত! লিয়া ভয় পেত। লিয়া ভেবেছিল এখানে অন্তত সে দুদন্ড শান্তি পাবে, কিন্তু কোথায় সেসব? ” ভালো থাকা” শব্দটা তার জন্য নয়, ওটা তার জন্য অস্পর্শনীয়! লিয়ার চাচীর কাছেও ব্যাপারটা ভালো লাগছিল না। লিয়া তার চাচীর সাথে এব্যাপারে কথা বললে তিনি লিয়াকে আগলে রাখতে শুরু করেন এবং জামালের সাথে কথা বলেন। তিনি রুকাইয়াকেও সরাসরি ফোন করে বলেন-
-জামালের ব্যাপারে কিছু কথা বলার ছিল…
-বলেন?
-কী শুরু করছেন এগুলা? জামাল তো দিন নেই রাত নেই যখন তখন বাড়ি চলে আসে। এভাবে আসাটা কেমন দেখায়? ভদ্রতা বলে একটা কথা আছে তো?
-লিয়াকে ওর খুব পছন্দ। দুদিন পর যার সাথে বিয়ে হবে তার সাথে দেখা সাক্ষাৎ করতে যাবে এতে এত সমস্যা কেন?
-বিয়ে হবে মানে? লিয়া কী এখানে মত দিয়েছে যে, আপনি বিয়ের কথা বলতেছেন?
-ঘন ঘন দেখা হলে, কথা হলে, এক সাথে সময় কাটালে একে অপরকে জানবে বুঝবে তখন আপনিই বিয়েতে মত দিবে। তখন বিয়ে করতে আপত্তি হবে না।” তাই জামালকে নিয়মিত লিয়ার সাথে দেখা করতে বলেছি।
-ছেলেটাকে আমার সুবিধার লাগে না। লিয়াও বিরক্ত হয়। আপনি ওকে এইভাবে আসতে মানা করবেন।
সেদিনের এই কথার পর জামালকে আর চাচী এবাড়িতে ঘেষতে দেয়নি।
লিয়া আরিফুলকে এসব জানালে সে তাকে এখান থেকে ফুপুর বাসায় চলে যাবার পরামর্শ দেয়। সেখানে গেলে এসব ঝামেলা হয়ত আর দেখতে হবে না তাকে। লিয়ার কাছে কথাটা যুক্তিসঙ্গত মনেহয় তাই সে ফুপুর বাসায় চলে যায়।
লিয়ার ফুপু লিয়াকে মেয়ের মতন স্নেহ করেন। সেই ভরসাতেই লিয়া সেখানে চলে যায়। ফুপুর বাড়ি গিয়ে অন্তত সে কিছুদিন ভালো থাকবে। কিন্তু কথায় আছে “অভাগা যেদিকে যায় সাগরও শুকিয়ে যায়!” লিয়ার অবস্থা হয়েছে তেমন। ফুপুর বাড়ি গিয়ে দেখে সেখানেও তার বিয়ের জন্য এক ছেলে দেখে রাখা হয়েছে! লিয়া প্রচন্ড হতাশায় পড়ে যায়। তবে এবারের পাত্র সব দিক থেকে ভালো ছিল। তার ফুপু নিজে দেখেছিলেন একে। তিনি চেয়েছিলেন এই ছেলের সাথে লিয়ার বিয়ে হলে লিয়া তার কাছাকাছি থাকবে, ভালো থাকবে। লিয়াকে তিনি নিজের কাছেই দেখেশুনে ভালোবাসায় আগলে রাখতে পারবেন। কিন্তু লিয়া কী করে এই প্রস্তাব মেনে নেবে? তার মন মগজ সবটাইতো আরিফুল দখল করে বসে আছে! সে দেরি না করে তার ফুপুকে আরিফুলের ব্যাপারে সব কিছু খুলে বলে। সে জানায়, আরিফুল ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। সে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায়। ফুপু সব কথা শুনে অবাক হন। তার সেদিনের সেই ছোট্ট লিয়া এত বড় হয়ে গেছে! তিনি লিয়াকে আশ্বস্ত করে তার বাবার সাথে কথা বলেন। লিয়াকে ঢাকায় নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করেন।
ঢাকায় ফিরে নতুন করে লিয়ার জীবন যুদ্ধ শুরু হয়। তার বাবাও চাইল মেয়ে পড়াশোনা করুক। লিয়া সাভারের সবগুলো ভালো কলেজেই ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। লিয়ার ইচ্ছে ছিল ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজে ভর্তি হবার। কিন্তু সেখানে বেতন ৮০০ টাকা হওয়ায় ভর্তি হতে পারেনি। এমন নয় যে তার বাবার ৮০০ টাকা দেবার সামর্থ্য নেই। আসলে তার বাবার ৮০০টাকা দেবার সাহস ছিল না। আবিদ সাহেব রুকাইয়াকে এতটাই ভয় পেতেন! রুকাইয়ার নিজের আত্মসম্মান বোধ বলতে কিছু নেই, সে অন্যের মান কী করে রক্ষা করবে? তাই আবিদ সাহেবকে বরাবরই চুপ থেকে চোখের পানিতে মেয়েকেই আড়াল করে নিতে হয়েছে। তিনি মেয়েকে সাভার পিএটিসি কলেজে ভর্তি করে দেন। কারণ এখানে মেয়েদের পড়ার কোন খরচ নেই। লিয়ার ভর্তির যাবতীয় কার্যক্রম আরিফুলই করে দেয়। লিয়া ভর্তি তো হয় কিন্তু তার মা রুকাইয়া ভেতর থেকে কিছুতেই এটা মেনে নিতে পারেনি। তিনি কেবলই লিয়াকে থামিয়ে দেবার যত অজুহাত খুঁজে বেড়াতেন।
দিন যেতে লাগল আপন গতিতে… লিয়ার এইচএসসি পরীক্ষা খুব সন্নিকটেই। লিয়ার এইচএসসি পরীক্ষা আসতেই পড়া বন্ধ করে দেবার জন্য রুকাইয়া আবার উঠেপড়ে লাগল। আরিফুল তখন সদ্য ইন্টার্নি শেষ করেছে। এই মুহূর্তেই লিয়াকে ঘরে তোলা সম্ভব নয়। এখন যেকোন একটা কিছু দ্রুত তাকে করতে হবে। কিছু একটা ব্যবস্থা হলেই সে আর এক মুহূর্ত দেরি করবে না। এদিকে রুকাইয়া লিয়াকে অযথাই বকাবকি করা, খরচ না দেয়া, খেতে না দেয়া, চুল কেটে দেয়া, গায়ে হাত তোলা… যা যা সম্ভব তার সবই করতে লাগল। এমন কোন নীচু কাজ নেই যা সে বাদ রেখেছে। হতাশ এবং আতঙ্কিত লিয়া এর মাঝেও যতটুকু পারল কখনো সহ্য করে কখনো যুদ্ধ করে পড়াশোনাটা চালিয়ে গেল। কিন্তু বিয়ে নিয়ে রুকাইয়া এত বেশি চাপ দিতে লাগল যে, লিয়া রোজ আরিফুলের কাছে কাঁদতে লাগল। আরিফুল না পেরে তাকে বলল-
-লিয়া একটা কাজ করলে কেমন হয়, চলো আমরা বিয়ে করে ফেলি?
-মানে?
-মানে, আমরা ২/৪ জন বন্ধু বান্ধব নিয়ে কাজী অফিসে গিয়ে কাবিন করে ফেলি তাহলে তো আর কোন রিস্ক থাকবে না।
-না। আমি এসব করতে পারব না… এভাবে ঠিক না… আমার ভয় করে…
-ভয়ের কী আছে? আমি আছি না? কাবিন করে ফেললে বরং সম্পর্কটা নিশ্চিন্ত হয়ে যায়। এরপর বিয়ে নিয়ে খুব বেশি ঝামেলা করলে কাবিননামা দেখিয়ে দেবে ব্যস ঝামেলা শেষ।
-কিন্তু…
-আবার কিন্তু কেন? কোন কিন্তু নাই। আমি তোমাকে কোন অবস্থায় হারাতে চাই না। আর পরিস্থিতি তেমন না হলে এটার কথা আমরা কাউকে জানাব না। হল তো?
লিয়া শেষ পর্যন্ত সভয়ে রাজি হয়ে যায়। ১২-০১-২০০৯ তারিখ, সোমবার লিয়া তার খুব ঘনিষ্ট দুই বান্ধুবী আর আরিফুল তার দুই বন্ধু নিয়ে তার এক বন্ধুর বাসায় গিয়ে এক লক্ষ টাকা দেন মোহরে কাবিন করে ফেলে। সেদিনের সেই মুহুর্ত থেকে লিয়াকে হারিয়ে ফেলবার চাপ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে যায় আরিফুল। লিয়া নিজেও অনেকটাই ভারমুক্ত হয়ে যায়। তারা দুজনেই সেদিন নিজেদের খুব সুখী অনুভব করেছিল।
এরপর লিয়া এইচএসসি পরীক্ষা দিল, পাসও করল কিন্তু তাকে কোথাও ভর্তি হতে দিলেন না রুকাইয়া। পরীক্ষা শেষ হতেই তিনি আবার উঠেপড়ে লেগেছিলেন লিয়ার বিয়ে দিতে। বিয়ের টানাহ্যাঁচড়ায় ভর্তির সময় চলে গেল। আবিদ সাহেব চাইলেন ডিগ্রীতেই ভর্তি হয়ে যাক লিয়া কিন্তু লিয়া ইয়ার ড্রপ দিয়ে পরের বছর বাংলা কলেজে অনার্সে ভর্তি হয়। লিয়ার পড়াশোনা বন্ধ করতে না পেরে রুকাইয়া ভেতরে ভেতরে শুধু জ্বলে পুড়েছে আর অত্যাচার করার নতুন নতুন উপায় খুঁজেছে। লিয়াকে দিয়ে সে নকশিকাঁথা করিয়ে নিত। একেকটা কাঁথা সে ৪/৫ হাজারে বিক্রি করত কিন্তু লিয়াকে এর এক পয়াসাও দিত না। এরপর সে শুরু করে আরিফুলকে ঘিরে লিয়ার সম্পর্কে নোংরা কথা ছড়ানো। পুরো এলাকা জুড়ে সে আজেবাজে যা নয় তাই বলে বেড়াতে লাগল। এক কথায় লিয়ার জীবন অসহনীয় করে ফেলার একটা উপায়ও সে বাদ রাখেনি। নিজের সম্পর্কে এত নোংরামি লিয়া আর সহ্য করতে পারছিল না। এমনকি একদিন বটি দিয়ে সরাসরি আঘাত করার চেষ্টা করেন। লিয়া হাত দিয়ে ফেরাবার চেষ্টা করলে হাতে লেগে যায়। তবে সৌভাগ্য বসত সেটা খুব বেশি খারাপভাবে লাগেনি। লিয়া তখন চিৎকার চেঁচামেচি করলে আশপাশের লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে। আবিদ সাহেব বাড়ি এসে এসব শুনে ভেঙে পড়েন। লিয়া তার বড়ো আদরের… লিয়ার ভেতরে তিনি মিনুর ছায়া খুঁজে বেড়ান, সেই লিয়াকে কেউ এভাবে টর্চার করছে এটা তিনি মানতে পারেন না। তিনি রুকাইয়াকে প্রশ্ন করতেই রুকাইয়া তার স্বভাব সরূপ সবটা অস্বীকার করেন। এসব নিয়ে আবিদ সাহেবের সাথে খুব কথা কাটাকাটি হয়।তার লিয়ার জীবন নিয়ে টান দিয়েছে রুকাইয়া! আবিদ সাহেব এবার আর ছেড়ে কথা বললেন না! তিনি ভয়ানক ক্ষেপে গেলেন। তিনি এতটাই উত্তেজিত হয়ে পড়লেন যে রুকাইয়া যদি এ সংসার থেকে আজীবনের জন্যও চলে যায় তবুও তার কিছু এসে যায় না! রুকাইয়া ঝগড়ার এক পর্যায়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। আবিদ সাহেব তাকে ফেরালেন না (যাবার দুইদিন পরেই ফিরে এসেছিল)। তিনি ক্লান্ত বোধ করেন। তার ঘরে একাকী বিছানায় বসে ভাবতে থাকেন- তার জীবনটা তিনি নিজেই এলোমেলো করে ফেলেছেন, তার কারণে মিনু নিজের জীবনটাই দিয়ে দিয়েছে! মিনু বলেছিল- “সম্পদ আগলে রাখতে জানতে হয় নয়ত বরবাদ হয়ে যেতে হয়।” সে সম্পদ আগলে রাখতে পারেনি তাই আজ বরবাদ হয়ে যাচ্ছেন! এখন তার আদরের মেয়েটার জীবনও ধ্বংসের মুখে… সেটাও তারই কৃত কর্মের ফল! ছেলেটার জীবন কেমন ছন্নছাড়া হয়ে গিয়েছিল, নিজের ভাইবোনগুলোও দূরত্ব বজায় রাখে। তার কৃত কর্মের ফল আর কতজনকে কতভাবে বইতে হবে? নাহ, লিয়াকে তার প্রাপ্য সুখ পেতেই হবে। তার নিজের পাপের কারণে তার মেয়ে কেন জীবনভর কষ্ট পাবে?? সে লিয়াকে নিজের ঘরে ডেকে আনে। মেয়েকে পাশে বসিয়ে শান্তভাবে জিজ্ঞেস করেন-
-মা, তোমার অনেক কিছুই পাওয়ার ছিল আমার কাছে… বাবা হিসেবে আমি হয়ত তার অনেক কিছুই করতে পারিনি। এটা নিয়ে আমার ভেতরে কোন কষ্ট নেই তা নয়, কষ্ট হয়… মাঝেই মাঝেই নিজেকে খুব ব্যর্থ মনেহয়। কিন্তু এবার তোমার জন্য করতে চাই। তোমার পছন্দের ছেলের সাথেই আমি তোমাকে বিয়ে দিব। তুমি ওর সাথে কথা বলো। ওর বাসায় জানাতে বলো। ওরা যেন বিয়ের কথা বলতে খুব দ্রুতই এখানে আসে।
আরিফুল ততদিনে নিজেকে কোনরকম গুছিয়ে এনেছে। ভালোবাসার মানুষটার উপর এমন অত্যাচার সে নিজেও আর মেনে নিতে পারছিল না। এতদিন তার করার কিছু ছিল না তাই চুপ ছিল কিন্তু এখন তার পায়ের তলার মাটি শক্ত হয়ে এসেছে। লিয়ার কথায় সে তার বাসায় সব কিছু খুলে বলে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ের আয়োজন করতে বলে। লিয়ার পরিবার সম্পর্কে তাদের খুব ভালো করেই ধারণা ছিল তাই তারা রাজি হতে চাইলেন না। কিন্তু আরিফুল কোনভাবেই “না” শুনতে রাজি নয়। সে যেভাবেই হোক সবাইকে বুঝিয়ে রাজি করায়।
একটা ভালো দিন দেখে আরিফুলের পরিবার থেকে বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে আসে লিয়ার বাসায়। অতিথিরা আসা মাত্রই রুকাইয়া বাসা থেকে বের হয়ে যায়। সে এব্যাপারে কোন রকম সাহায্যই করবে না। আরিফুলের বাবা চাচা সহ ১১ জন আসেন। আরিফুল এবাড়ির পরিস্থিতি আগেই বলে রেখেছিল। সে আরও বলেছিল তারা যেন কোন অবস্থাতেই আংটি না পরিয়ে না আসে। তাই তারা সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে আসেন। লিয়া তাদের সামনে হাজির হওয়া মাত্রই আরিফুলের বাবা তাকে আংটি পরিয়ে দেন। তারপর তারা লিয়ার সাথে টুকটাক কিছু কথা বলেন। লিয়ার ভাই আবীরও সেদিন উপস্থিত হয়। সে বোনের জন্য সব কিছুই করে। আবীর জানে অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য ভালো কিছু আয়োজন করার সাহস তার বাবার নেই। তাই সেদিন সে মন খুলেই বাজার করে নিয়ে আসে। তার একমাত্র বোন এক জীবনে অনেক কষ্ট সয়ে নিয়েছে, সয়েছে সে নিজেও। সে মন খুলে বোনের জন্য দোয়া চায় আল্লাহর কাছে তিনি যেন লিয়াকে এবার সুখী করেন। আরিফুলের বাবা আমিনুল হক সেদিনই বিয়ের তারিখ পাকা করে ফেলেন। ১৯ জানুয়ারি ২০১২ তারিখ বিয়ের দিন ধার্য করা হয়।
অতিথিরা চলে যেতেই রুকাইয়া বাসায় ফেরে। সে এসেই হৈচৈ শুরু করেন। সব খাবার ছুড়ে ফেলে দিতে চায়। শুরু করেন অকথ্য ভাষায় গালাগাল। তাকে থামাবে বা বোঝাবে এমন সাধ্য কার? এক পর্যায়ে তিনি ঘোষণা করলেন এই বিয়ের কোন আয়োজনেই তিনি আর তার মেয়ে রুবা থাকবে না। রুবাকে নিয়ে চলে যেতে চাইলে রুবা কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। যে বোন তাকে সেই ছোট্ট থেকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে, যার কাছে তার হাতেখড়ি হয়েছে, যার কাছে সে পড়াশোনা করে, কী খাবে তার বায়না ধরে, রাত হলে আগডুম বাগডুম কত গল্প শোনে! সেই আপুর বিয়েতে সে থাকবে না সেটা কী করে হয়?? রুবা কাঁদতে থাকে… সে কিছুতেই আপুকে ছেড়ে যাবে না। রুকাইয়া অবশেষে নিজের মেয়ের জন্য হলেও নরম হলেন। তিনি রয়ে গেলেন।
এত অশান্তির মাঝেও লিয়ার বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসে। আবিদ সাহেব তার মাতৃহীন মেয়ের জন্য বুকের গভীরে যে ভালোবাসা লালন করেন তা হয়ত সে কখনোই প্রকাশ করবার সাহস করেননি। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর তারই চোখের সামনে তার রাজকন্যাকে কী ভয়ানক অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে! তিনি বাবা হয়েও কিছু করতে পারেননি, এই যন্ত্রণা তার ভেতরে কতটা রক্তক্ষরণ করেছে সেটা কেবল তার সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানেন। মেয়েটার বিয়ে হলে সারাজীবনের জন্য অন্যের ঘরে চলে যাবে… এই শেষবেলায়ও যদি তিনি মেয়ের জন্য কিছু করতে না পারেন তাহলে পিতা হিসেবে নিজেকে হয়ত কখনোই ক্ষমা করতে পারবেন না। তাই তিনি চাইলেন বিয়েতে মেয়ের জন্য যা কিছু করতে হয় তার সবই তিনি করবেন। গহনা, ফার্নিচার সব কিছুই দেবেন। রুকাইয়া এখানেও ভয়ানক আপত্তি তুললেন। ঝগড়া চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলেন। আবিদ সাহেব এসব কিছুই কানে তুললেন না। তিনি তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবে না বলে সাফ জানিয়ে দিলেন। এই প্রথমবার তিনি শক্ত হলেন! তিনি প্রচন্ড রেগে গিয়ে বললেন- “তোর ইচ্ছে হলে বিয়েতে থাকবি নয়ত যেখানে খুশি চলে যা। আমার মেয়ের বিয়ে যেভাবে হবার হবে। আমার সাথে আমার আল্লাহ আছে।” আবিদ সাহেবের এমন শক্ত আচরণে রুকাইয়া হয়ত প্রথমবার একটু ভড়কালো।
আবিদ সাহেব নিজের হাতে মেয়ের জন্য গহনা থেকে ফার্নিচার সব কিছু কেনাকাটা করলেন। রুকাইয়া পাশে থেকে সবকিছুই দেখলেন আর মনে মনে শুধু পরিকল্পনা করে গেছেন কী করে এই বিয়ে বন্ধ করা যায়? তবে এখানে তিনি একটা কাজ করলেন, রুবা আর লিয়াকে বিয়ে উপলক্ষে একই রকমের দুই সেট রুপোর গহনা তৈরি করে দিলেন। এটা তিনি রুবার জন্য নাকি শুধুই লোক দেখানোর জন্য করলেন সেটা বোঝা গেল না। কারণ লিয়ার প্রতি তার যে মনোভাব বা আচরণ তা থেকে এটা অন্তত প্রকাশ পায় না যে সে “ভালোবাসা” থেকে কাজটা করেছে। লিয়া ভীষণ অবাক হয় এটা দেখে আর রুবা ভীষণ খুশি। কী জানি, হয়ত লিয়ার প্রতি তার ভেতরের “মা” স্বত্তাটা কোনভাবে কাজ করেছিল কিছু মুহূর্তের জন্য!
লিয়ার বিয়ের সমস্ত আয়োজন আবিদ সাহেব আর আবীর মিলে করছিলেন। রুকাইয়া এখানে কোভাবেই কোন কিছুতে অংশ নিলেন না তবে পাশে থেকে সব কিছুই দেখলেন। বিয়ে উপলক্ষে আত্মীয়স্বজনে বাড়ি ভরে গেছে। লিয়ার ফুপু চাচা চাচীরা সবাই এসেছেন। সবাই মিলে লিয়ার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান বেশ আনন্দের সাথেই করে। লিয়া ভেতরে ভেতরে আতংকে ছিল রুকাইয়া কখন কী করে বসেন সেই চিন্তায়। তাকে তো সে হারে হারে চেনে। তাই তাকে সর্বদাই সজাগ দৃষ্টি রাখতে হচ্ছে। একসময় তার ধারণা সত্যি করতেই যেন রুকাইয়া হুট করে সবার মাঝে বসে থাকা লিয়ার সামনে এসে তার হাতে পবিত্র কোরআন শরীফ ধরিয়ে দিয়ে বলেন-
-তুই এই কোরআন শরীফ ছুঁয়ে বল, “তুই আমার বাড়ি থেকে গহনা সহ মূল্যবান অনেক কিছুই চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিস।”
-লিয়ার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে… কী বলছে সে এসব!
শুধু তাই নয়, রুকাইয়া লিয়ার বান্ধুবীদের জড়িয়েই এসব কথা বলতে থাকেন। যেখানে লিয়ার বান্ধুবীর মাও উপস্থিত রয়েছেন! রুকাইয়া এলোমেলো অনেক কথা বলে পরিবেশ বাজেভাবে খারাপ করে ফেলে। সেই সাথে “বিয়ে কী করে হয় দেখে নেবে” সেই হুমকি তো আছেই। উপস্থিত সবাই রুকাইয়াকে ভালো করেই চেনেন তাই তার কোন কথাই ধোপে টিকতে দেয়নি তারা। এমন একটা দিনেও কেউ কাউকে নিয়ে এমন নোংরামি করতে পারে সেটা দেখে সবারই চোখে পানি চলে আসে।
লিয়া তখন সবাইকে পাশে পেয়ে সাহস সঞ্চার করে রুকাইয়াকে শক্ত করে বলে- “আমি এসব মিথ্যা কোন কথাই বলব না। যা আমি করিনি তা বলার প্রশ্নই ওঠে না। আর আপনি যদি এই বিয়ে ভাঙার জন্য কোন কিছু করেন বা আপনার কারণে বিয়ে ভেঙে যায় তাহলে মনে রাখবেন, ঘুমের ওষুধ, বিষ, দড়ি সব ব্যবস্থাই আমি নিয়ে রেখেছি। সুইসাইড নোটে স্পষ্টভাবে আপনার কথা আমি বলে যাব। এরপর যা হবার হবে।”
রুকাইয়া এই কথায় মারাত্মকভাবে ভড়কে যায়। শুধুমাত্র এই একটা কথাতেই রুকাইয়াকে শান্ত করে গেল। কিন্তু ভেতরে ভেতরে তিনি ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাবার চেষ্টা অব্যাহত রাখলেন। কারণ যেকোন উপায়েই তিনি চান লিয়ার জীবন নষ্ট করতে।
হলুদ শেষ হবার পর রাতে লিয়াকে তার ফুপুর সাথে থাকতে দেয়া হয় কিন্তু তার ঘরে নয়। ঠিক কী কারণে রুকাইয়া লিয়ার ঘরটা খালি রাখে তা কারো বোধগম্য হল না। বাড়ি ভর্তি এত মানুষ তারপরও কেন এমনটা করলেন তিনি তা তিনিই জানেন। রুকাইয়ার এমন আচরণ সন্দেহজনক হলেও তাকে কিছু বলার উপায় ছিল না। রাতে হুট করেই রুকাইয়া লিয়ার কাছে আসে। তার ফুপুর হাতে লিয়ার আলমারির চাবিটা দিয়ে বলে, “লিয়ার আলমারিতে ওর বিয়ের গহনা রাখা আছে। ঘরে অনেক লোকজন… কার কী উদ্দেশ্য জানি না, চুরি টুরি হলে আমার দায় নেই। তাই চাবিটা দিয়ে গেলাম।” সে চাবি দিয়ে চলে যাওয়া মাত্রই লিয়া তার ফুপুকে বলে-
“ফুপু, আম্মুর কাছে আমার আলমারির নকল চাবি আছে। কোন অঘটন ঘটলে সেটা তার দ্বারাই সম্ভব হবে।”
-আমারও তাই মনে হচ্ছে… কী করব তাহলে?
-আমাদের ঘুমানো চলবে না। জেগে থেকে পাহারা দিতে হবে।
সে রাতে তারা দুজন একমুহূর্তের জন্যও চোখের পাতা এক করতে পারল না। দুজন সারা রাত জেগে বসে রইল। সারা রাত জেগে ফুপু আর ভাতিজি মিলে সুখ দু:খের গল্পের ডালি মেলে বসে। লিয়া জীবনের দীর্ঘ একটা খারাপ সময় পার করেছে সৎ মায়ের কারণে। জীবন তাকে সংসারের নগ্ন একটা রূপ দেখিয়ে দিয়েছে। তাই তাকে এটা মনে করিয়ে বা শিখিয়ে দেয়াটা জরুরি যে, সব সংসার একরকম নয়, সব মানুষও একরকম হয় না। ফুপু লিয়াকে যত্ন করে শিখিয়ে দেয় শ্বশুরবাড়ি গিয়ে কী করে সবার সাথে মানিয়ে গুছিয়ে চলতে হবে। নতুন জীবনটা কীভাবে সাজাতে হবে। রাতের সুনশান নিরবতার মাঝে তাদের গল্প চলতে লাগল অবিরাম… এরই মাঝে অহেতুক দুবার রুকাইয়ার উঠে আসাটা তাদের নজর এড়াল না। রাত পোহালেই নতুন দিনের শুরু… শুরু হবে লিয়ার জীবনের নতুন অধ্যায়… যেখানে ভালোবাসার মানুষটাকে চিরতরে নিজের করে পাবার আনন্দে বিভোর থাকার কথা লিয়ার সেখানে তাকে প্রতি মুহূর্ত উৎকন্ঠিত থাকতে হচ্ছে”কী জানি কখন কী অঘটন ঘটে যায়?” সেই ভাবনায়। লিয়া অবাক হয়ে মাঝে মাঝেই ভাবে, ” একজন ‘মা’ কখনো এমন হতে পারে? জন্মসূত্রেই মেয়েরা মায়াবতী হয়। হয়ত মায়ের জাত বলেই তারা মায়াবতী। সেখানে নিজের একটা সন্তান থাকার পরও রুকাইয়া এতটুকুন বয়সে মা হারা লিয়াকে সন্তানের মত দেখতেই পারল না কোনদিন। কখনো ভাবতে পারল না তার দুটো মেয়ে? কোনো দয়াও হয় না! সে কী আসলেই মাতৃত্ব ধারণ করে? যেখানে মহাবিশ্ব “মা” শব্দটার পায়ের তলায় লুটায় সেখানে রুকাইয়ার মনে এত সংকীর্ণতা??? অথচ এই মহিলা তার মায়ের মৃত্যুর কারণ হবার পরও সে তাকে “আম্মু” বলে সম্বোধন করে!!!”
কোনরকম নির্বিঘ্নে রাতটা পার হল। বিয়ে বাড়ির আনন্দময় আয়োজনে রুকাইয়া যতটা সম্ভব বিঘ্ন ঘটিয়ে গেলেন কিন্তু জোরালোভাবে কিছু করার সাহস করলেন না। বিয়ে ভাঙার সাধ তিনি অনেকটা “দুধের স্বাদ ঘোলে মিটিয়ে নেয়া”র মত ঝগড়াঝাটি বাঁধিয়ে করে গেলেন। চির শান্ত লিয়ার ঠান্ডা মাথায় শক্ত করে দেয়া হুমকিটা তাকে গুরুত্বের সাথেই মেনে নিতে হয়েছে। কিন্তু বর আসার সাথে সাথেই তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে বাইরে চলে যান।
অবশেষে লিয়ার বিয়েটা হয়ে যায় সকল বাঁধা বিঘ্ন পেরিয়ে। সন্ধ্যার দিকে লিয়া গাড়িতে ওঠে শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে। লিয়ার দুচোখ ভেসে যাচ্ছিল চোখের পানিতে… কাঁদছিল রুবাও। এই যে দীর্ঘ যুদ্ধ সে করেছে আজ তার প্রাপ্তির দিন। আজ তার মুক্তির দিন… তার কান্নায় কী বাবার বাড়ি ছেড়ে যাবার কষ্ট ছিল? লিয়ার কী বাবার বাড়ি বলে আদতে আছে কিছু? পৃথিবীর সব মেয়েরই বাবার বাড়ি ছেড়ে যাবার কষ্টটা এক নয়। কারো কারো জন্য সেটা “মুক্তি”র স্বাদ! অথচ পৃথিবীর কোন মেয়েই এমনটা চায় না।
বিয়ের গাড়ি বাড়ির গেট পার হয়ে মোড় ঘুরতেই লিয়া রুকাইয়াকে দেখল সে বাড়ির দিকে যাচ্ছে। রুকাইয়াকে পেছনে ফেলে লিয়ার গাড়ি এগিয়ে গেল। লিয়া শুধু রুকাইয়াকে নয় এ বাড়ি আর বাড়ির মানুষগুলোও পেছনে ফেলে এলো। এই যাওয়াটা যেন এবাড়ি থেকে তার শেষ যাওয়া! বাবার বাড়ি তার আর ফেরার সুযোগ হয়নি।
বিয়ের পরও রুকাইয়া নানাভাবে লিয়ার সংসার ভাঙার চেষ্টা করে গেছে আজাবাজে অশালীন সব কথা ছড়িয়ে, তাবিজ কবজ, ঝগড়াঝাটি যা কিছু তার দ্বারা করা সম্ভব তার সবই করেছে। লিয়া যেন আর কখনো বাবার বাড়ি ফিরে না যায় সেজন্যও সে যত হুমকি ধামকি দিয়ে রেখেছে। কিন্তু আল্লাহ সহায় ছিল বলে সে লিয়ার সংসারের কোন ক্ষতি করতে পারেনি।
লিয়ার বিয়ের আজ ১১ বছর পার হয়ে গেছে কিন্তু এই ১১ বছরে লিয়া একবারের জন্যও বাবার বাড়ি যেতে পারেনি! অথচ শ্বশুর বাড়ি থেকে পায়ে হেঁটেই তার বাবার বাড়ি যাওয়া যায়। সে চাইলেই বাবার সাথে যোগাযোগ করবে সেটাও পারেনা। তার বাবা রুকাইয়ার আড়ালে আবডালে গিয়ে মেয়েকে ফোন দিলে তবেই কথা হয়! বাবা সন্তানের যোগাযোগে কঠিন নিষেধাজ্ঞার ব্যাড়াজাল আজও অতিক্রম বা শিথিল কোনটাই হয়নি। লিয়া শ্বশুরবাড়িতে আলহামদুলিল্লাহ অনেক সুখে আছে। তার পরিবারের সঙ্কীর্ণতায় এবাড়ির কেউ কখনো তাকে সংকুচিত হতে দেয়নি। শ্বশুর শ্বাশুড়ি দুজনেই তাকে বাবা-মায়ের ভালোবাসাটা পুষিয়ে দিয়েছেন। বিয়ের প্রায় ৬ বছর পর লিয়ার শ্বশুর মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি ভয়ানক অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন। কাউকে চিনতে পারতেন না, এমনকি নিজের স্ত্রীকেও না। কিন্তু কী এক বিস্ময়কর কারণে তিনি শুধু লিয়াকে চিনতেন! তার অসহায় দুচোখ কেবল লিয়াকেই খুঁজে বেড়াত। লিয়ার প্রতি তার এতটাই স্নেহ ছিল! এমন পরিবার, স্বামী, সংসার পেয়ে লিয়া দুহাত তুলে তার সৃষ্টিকর্তার কাছে সুকরিয়া জানায়। সে এখন চমৎকার এক রাজকন্যার মা। এই পৃথিবী তার থেকে শৈশব আর কৈশোর নির্দয়ভাবে কেড়ে নিলেও তার বর্তমানকে করেছে প্রাপ্তিময়।
পৃথিবীর সকল গল্পগুলো এমন প্রাপ্তি দিয়েই শেষ হোক।
পুরো গল্পটা যখন শুনে শেষ করলাম তখন রিস্টওয়াচে তাকিয়ে দেখি বিকেল ৪টা বেজে গেছে। সূর্যের প্রখরতা মায়াময় আলোয় রূপ নিচ্ছে। ওই মুহূর্তে মনে হলো, সব বিকেল দিনের মৃত্যু নিয়ে আসে না। কিছু বিকেল তার আলোর রোশনাই রেখে যায়, সুখের অনুভূতি দিয়ে যায়। গল্পটা সুখের অনুভূতি দিয়ে শেষ করতে পারছি এটাই প্রাপ্তি।