#বিকেলের_মৃত্যু (পর্ব – ৩)
লেখক: শামীমা জামান
আবিদ ঢাকায় তার ছোট ভাই জহিরের সাথে একটা মেসে ওঠে। জহির একটা প্রাইভেট চাকরি করত। দুই ভাই একসাথে ভালোই চলছিল। এখানকার অফিস, থাকা, খাওয়া আবিদ বেশ গুছিয়ে নিয়েছে। ব্যাংকে চাকরি করার জন্য বিভিন্ন বীমা কোম্পানির সাথে তাদের যোগাযোগ হত। রুকাইয়া আক্তার নামের এক মেয়ে জীবন বীমা কর্পোরেশন থেকে মাঝে মাঝেই আসত অফিসের DGM এর কাছে বীমা করাতে। সেই সূত্রে আবিদের সাথেও তার পরিচয় হয়। কাজের সুবাদে টুকটাক কথাও হত দুজনার। ব্যস্ততার মাঝে, মাঝে সাঝে রুকাইয়ার আগমন, তার সাথে অল্প সল্প গল্প আবিদের ভালোই লাগত। আর গল্প করা, কাছে আসায় বীমা অফিসে কাজ করা মানুষ একটু বেশিই পারদর্শী হয়। আর মানুষটা যদি মেয়ে হয় তাহলে তো কোন কথাই নেই। তবে এই ভালো লাগায় আবিদের মনে অন্য কিছু ছিল না। কিন্তু রুকাইয়া?
আবিদ ঢাকায় জয়েন করার কয়েক মাস পর জহির কিশোরগঞ্জ বদলি হয়ে যায়। দুই ভাইয়ের একসাথে মানিয়ে থাকা জীবনে ছেদ পড়ে। জহির চলে যাবার পর একা একটু কষ্ট হলেও খুব একটা অসুবিধে আবিদের হচ্ছিল না। ওদিকে রুকাইয়ার সাথে তার পরিচয়ের কয়েক মাস হয়ে গেছে। তাই আবিদের ব্যক্তি জীবনের অনেক কিছুই সে জানত। সব জেনেও রুকাইয়া ক্রমাগত আবিদকে তার কথার যাদুতে ভুলিয়ে রাখতে চাইত, কাছে আসার চেষ্টা করত। আবিদ মেসে একা থাকছে শোনা মাত্রই সে আবিদকে তার ফ্ল্যাটে সাবলেট হিসেবে থাকতে প্ররোচনা দিতে থাকে। সে তো আর ফ্ল্যাটে একা থাকে না। তার সাথে তার বোনের মেয়েও থাকে। ফ্ল্যাটে রুম তো পড়েই আছে, সমস্যা কোথায় থাকতে? আবিদ প্রথমে আপত্তি করলেও রুকাইয়ার ক্রমাগত আহ্লাদী আবদারকে খুব বেশিদিন উপেক্ষা করতে পারে না। আসলে মেয়েদের ছলনাময়ী মন আর পুরুষের পুরুষালি মন কোনটাকেই নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। তাই আবিদ এক সময় রাজি হয়েই যায়।
এক ছুটির দিনে আবিদ রুকাইয়ার বাসায় ওঠে। এ ফ্ল্যাটে ৩টা রুম। একটাতে রুকাইয়া আর একটাতে তার বোনের মেয়ে ইরা থাকত। অন্য ফাঁকা রুমটা আবিদকে দেয়া হয়েছে। অল্পদিনেই আবিদ এখানে নিজেকে মানিয়ে নেয়। সারাদিন অফিস শেষে মেসের তুলনায় এই বাসাটায় ঢুকে অন্তত একটা শান্তির নীড় বলে মনে হয় তার। সময়ে অসময়ে ৩জনের আড্ডা হত। মাঝে মাঝে তা অনেক রাত অব্দিও গড়িয়ে যেত। তেমন আড্ডায় সব সময় ইরা থাকত এমন নয়। রুকাইয়া নিয়মিত আবিদকে রান্না করেও খাওয়াত। সাথে তার ছলাকলা তো ছিলই। দুজন প্রাপ্ত বয়স্ক বিপরীত লিঙ্গের মানুষ যখন একই ছাদের তলায় থাকে তখন তা স্বাভাবিকভাবেই আর খুব বেশিদিন স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকে না। আবিদ রুকাইয়ার ব্যাপারটাও তাই হল। রুকাইয়ার ক্রমাগত আহ্লাদী আর উস্কানিমূলক আচরণ আবিদকে একটা সময় তার প্রতি ঝুঁকে যেতে বাধ্য করে। অল্প শিক্ষিত রুকাইয়ার পরিকল্পনা ছিল, যে করেই হোক ব্যাংকে চাকরি করা পয়সাওয়ালা আবিদ সাহেবকে বিয়ে করা। তাই তার প্রতি ঝুঁকে যাওয়া আবিদকে সে সম্পর্কের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল। এরপর তাকে ক্রমাগত বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। আবিদ রাজি না হলে রুকাইয়া তাকে ব্ল্যাকমেইল করতে শুরু করে। রুকাইয়ার এমন আচরণ এক পর্যায়ে আবিদকে দিশেহারা করে ফেলে। কী করবে সে? একটা সময় সে বাধ্য হয় রুকাইয়াকে বিয়ের জন্য “হ্যাঁ” বলতে। এই কথাগুলোই সেদিন রবিবার বিকেলে আবিদ মিনুকে জানিয়েছিল। যা শুনে মিনু তীব্রভাবে আঘাত পায়। এই অপমান মেনে বেঁচে থাকাটা মিনুর জন্য ছিল অসম্ভব। এক মুহূর্তেই পরিবার, পরিজন, জগৎ সংসার, স্বামী, বিশ্বাস, ভালোবাসা সব জায়াগাতেই নিজেকে সে অপাঙক্তেয়, অপ্রয়োজনীয়, অতি তুচ্ছ, নি:স্ব বলে মনে করল। এরপরে বেঁচে থাকাটা কী তার আদৌ বেঁচে থাকা হবে? এমন গ্লানি নিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে তার কাছে মৃত্যু সহজ সমাধান মনে হল!
মিনু বাড়ি এসেও সেদিন অনেক কাঁদল কিন্তু কান্নার কারণ তার পুত্র কন্যা কাউকে তিনি জানতে দিলেন না। জানতে দিলেন না অন্য কাউকেও। প্রতিদিনের মতই রাতের খাবার করে ছেলেমেয়েদের খাওয়ালেন, ঘুম পাড়ালেন। তারপর নিজের ঘরে একাকী নিশুতি নিশ্চুপ রাত গিলে নিল তাকে শত ভাবনার ব্যাড়াজালে। ভরসার মানুষটার বিশ্বাসঘাতকতা তাকে তীব্র হতাশায় জাপটে ধরে অন্ধকারের অতলে নিয়ে গেল। নির্ঘুম রাত কাটল মনের সাথে শত বোঝাপড়া করে। সকালে উঠে নাশতা তৈরি করলেন। আবীরকে স্কুলে পাঠিয়ে লিয়াকে স্কুলের জন্য রেডি করলেন। লিয়া মিশনারি স্কুলে পড়ত বলে সোমবারে তার ক্লাস প্রতিদিনের চেয়ে একটু দেরিতে শুরু হত। বাকি দিন ভাইয়ার সাথে সাইকেলে চড়ে স্কুলে গেলেও সোমবারে তাকে মায়ের সাথে যেতে হত। কিন্তু সেদিন লিয়া বুঝল না কী এক অজানা কারণে মা তাকে একা স্কুলে পাঠাতে চাইছেন। মিনুর বাসার কাজে সাহায্যকারী মহিলা শেফালির স্বামী ছিল রিকশাচালক। মিনু লিয়াকে তার রিকশায় চড়ে চলে যেতে বলল কিন্তু লিয়া কোনভাবেই যেতে চাইল না। একা কী করে যাবে সে? সে তো কখনো এভাবে একা যায়নি! লিয়া কাঁদছিল, কাঁদছিল মিনু নিজেও। লিয়ার কাছে ওই মুহূর্তে চিরচেনা মাকে দুর্বোধ্য লগছিল। মা কেন আজ এমন করছে? কেন সে লিয়ার ভয় দেখতে পাচ্ছে না? এক পর্যায়ে জোর করেই লিয়াকে একা পাঠিয়ে দিল মিনু। চোখ ভর্তি পানি আর বুকে ভয় নিয়ে লিয়া স্কুলে চলে গেল। ছোট্ট লিয়া তখনও জানত না সে তার মাকে শেষবারের মত দেখছে!
হ্যাঁ, মিনু তার জীবনের শেষ সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলেছে। লিয়া চলে যেতেই মিনু তার গায়ের যত গহনা খুলে ড্রয়ারে রেখে চাবিটা ঝুড়িতে রেখে দিয়ে শেফালিকে ডেকে বলে-
“দুপুরের খাবার রেডি করা আছে। লিয়া, আবীর এলে যেন তাদের খাইয়ে দেয়। আর চাবিটা ঝুড়িতে রাখা আছে সেটা যেন আবীরকে জানিয়ে রাখে।”
শেফালি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে- “আপনি কী কোথাও যাইতেছেন?”
-হুম।
-কই যান?
-কাজ আছে একটু। ওরা এলে তুমি ওদের খাইয়ে দিও। আমি যাই।
মিনু কখনো একা এভাবে কোথাও যায়নি তাই শেফালির কিছুটা সন্দেহ হয়। কিন্তু তার করারই বা কী আছে? সে নিজের কাজে মন দেয়।
মিনুর সাদা ওড়না খুব পছন্দের ছিল। সে বাসা থেকে বের হবার সময় একটা সাদা ওড়না জড়িয়ে নেয়। তারপর হেঁটে হেঁটে চলে যায় মুড়লির মোড়ে। তার মনে আজ আর কোন দ্বিধা নেই। সে সোজা রেললাইনের পাশে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে ট্রেনের। ১০ টার দিকে একটা মালবাহী ট্রেন যায় সে সেটার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। নাহ্, মিনুর মনে আজ কোন অনুভূতি আর সাড়া দিচ্ছে না। সে কেবলই মুক্তি চায়… মুক্তির দরজাটার খুব কাছে এসে গেছে সে। আর মাত্র কয়েকটা মুহূর্তই বাকি। তার কী একবারও আদরের লিয়া আবীরের মুখটা মনে জাগল? না। তার মনে তো কেবলই এক বিশ্বাসঘাতকের ছবি এঁটে আছে!
ট্রেন আসতেই মিনু লাইনের উপর বসে পড়ে। তার সাদা ওড়নাটা দিয়ে পুরো মুখ ঢেকে নিয়ে উল্টো দিকে ফিরে বসে থাকে শক্ত হয়ে। রেললাইনের পাশেই সামান্য দূরে কয়েকজন কৃষক কাজ করছিল। তারা মিনুকে ওভাবে দেখেই সরে যাবার জন্য চিৎকার করতে থাকে কিন্তু মিনুর কোন ভাবান্তর হয় না। আজ তাকে মুক্তি পেতেই হবে।
মাত্র কয়েকটা মুহূর্ত… ট্রেন চলে যাবার পর মিনুর দেহটা পড়ে রইল লাইনের উপর… মুহুর্তেই তীব্র ব্যথা মিনুর সমস্ত শরীরে, শিরা-উপশিরায় ছড়িয়ে গিয়ে তার সাদা ওড়নাটা লাল হয়ে উঠল। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে মিনু হয়ত তখনও ভাবছিল, “তার শরীরের ব্যথাটা কী মনের থেকেও বেশি? আরও কতগুলো মুহুর্ত পার হলে তার মুক্তির দ্বার খুলবে?”
মাঠে কাজ করা কৃষকেরা ততক্ষনে ছুটে এসেছে। তারা মিনুর রক্তাক্ত দেহ দেখে শিউরে ওঠে। হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে দেখে কৃষ্ণচূড়ার লাল চাদরে কেমন ঢাকা পড়ে আছে মেয়েটা! মিনুর রক্তাক্ত দেহটা তাদের এতটাই আতঙ্কিত করে ফেলে যে তারা একে হাসপাতালে নেবার কথাটাও অনুধাবন করতে পারে না। মিনু পড়ে রইল অনন্তকালের যাত্রার অপেক্ষায়…
আবীর স্কুল ছুটির পর বাড়ি এসে দেখে মা বাসায় নেই, লিয়াকেও এখনো স্কুল থেকে আনা হয়নি। আবীর তখন শেফালিকে জিজ্ঞেস করে-
-আম্মু কোথায়?
-কী জানি, কই গেছে আমারে তো কিছু বইলা যায় নাই।
-আপনি জিজ্ঞেস করেন নাই? কিছুই বলে নাই?
-না, বলে নাই। কিন্তু যাওয়ার আগে বইলা গেছে, তুমি লিয়ারে যেন স্কুল থেকে নিয়া আসো। আর চাবি রাইখা গেছে তুমি আসলে যেন দেই। ওই যে ওইখানে ঝুড়িতে রাখছে।
আবীর বুঝল না মা হঠাৎ কোথায় গেল? আর চাবি দিয়ে গেল কেন? লিয়াকেও আনতে যায়নি! সে তখনই সাইকেল নিয়ে লিয়ার স্কুলে চলে যায়।
লিয়ার স্কুল ১২টায় ছুটি হয়। কিন্তু প্রতিদিনের মত তার মা আজ তাকে নিতে আসেনি। সে অপেক্ষা করেই যাচ্ছিল। একটা সময় স্কুলের দারোয়ান এসে তাকে জিজ্ঞেস করে-
-আজকে তোমাকে নিতে আসে নাই?
-না।
-তোমার আম্মুর কী আসতে দেরি হবে?
-আম্মু তো দেরি করে না।
-“সবাই চলে গেছে আমি তো আর থাকব না। তুমি তাইলে ট্রাফিক বক্সে গিয়ে বসো আম্মু আসলে চলে যেও” এই কথা বলে দারোয়ান তাকে ট্রাফিক বক্সে বসিয়ে দিয়ে চলে যায়। সেখানে লিয়া একা অনেক্ষণ বসে থাকে। একসময় দেখে সাইকেল নিয়ে তার ভাইয়া আসছে। ছুটি হবার প্রায় ঘন্টাখানেকের কিছু সময় পরে লিয়াকে নিয়ে আবীর বাসায় ফেরে। এসে দেখে তখনো তাদের মা বাসায় আসেনি! আম্মু তো কখনো এমন করেনি? আবীর, লিয়াকে বাসায় রেখে মাকে খুঁজতে বের হয়ে যায়। তপ্ত দুপুরে সাইকেলে চড়ে আবীর যতটা সম্ভব তার মাকে খুঁজল। এক পর্যায়ে সে তার বাবাকেও ফোন করে জানাল। কিন্তু দুপুর গড়িয়ে গেলেও মায়ের কোন খোঁজ পাওয়া গেল না। কোথায় গেল আম্মু?
মিনুরা যে বাড়িতে থাকে তার একটু দূরেই দীর্ঘ মাঠ পেরিয়ে রেলপথ চলে গেছে। যখনই ট্রেন যায় ঘরের জানালায় বসে দুই ভাই-বোন সেটা দেখত। বাড়ির পাশের খোলা মাঠটাতেই লিয়া খেলত। আজও সে সেখানে খেলছিল কিন্তু মা না থাকায় তাকে কেউ ডাকতেও আসছিল না! দুপুর হয়ে গেছে শেফালিকে বাড়ি ফিরতে হবে কিন্তু লিয়াকে কার কাছে রেখে যাবে? সে তখন লিয়াকে পাশের বাসার এক দাদির কাছে রেখে যায়। সেই বাসার কাজের মহিলা যখন জানতে পারল সকাল থেকে লিয়ার মা বাসায় নেই, তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তখন তার কেমন সন্দেহ হয়। সে ওই বাসার দাদিকে জানায়, এখান থেকে একটু দূরেই মুড়লির মোড় নামে যে জায়গাটা আছে সেখানে সকাল থেকে রেললাইনের পাশে এক মহিলা পড়ে আছে ট্রেন এক্সিডেন্ট করে। এতক্ষণে সে বেঁচে আছে কি না কে জানে! সে ওই পথে যাবার সময় দেখেছিল। দেখতে কেমন লিয়ার মায়ের মতই মনে হয়েছিল তার! আবীরকে যেন কথাটা জানায়, সেখানে গিয়ে একটা বার খোঁজ করে?
কাজের মহিলার কথায় দাদি ভেতরে ভেতরে ভয় পেলেন। তিনি ব্যাপারটা আবীরকে না জানিয়ে আবীরের চাচা শফিককে জানায়। ততক্ষণে বিকেল হয়ে গেছে। ভদ্রমহিলার কাছ থেকে এসব শুনে শফিক তার এক বন্ধুকে নিয়ে সাইকেলে করে মুড়লির মোড়ে রওয়ানা দেয়। আবীর যেতে চাইলেও তাকে নেয় না। কী জানি, ওখানে পড়ে থাকা মহিলাটা যদি সত্যিই আবীরের মা হয়ে থাকে তাহলে? আবীর বাচ্চা ছেলে, ওর পক্ষে সেটা সহ্য করা সম্ভব হবে না।
বিকেলের শেষ আলোটুকুও তখন যাই যাই করছিল… এমন সময় শফিক মুড়লির মোড়ে পৌছায়। সেখানে অনেক মানুষের জটলা… তার বুকের ভেতর চেপে রাখা আশঙ্কাটা ততক্ষণে আতঙ্কে রূপ নিয়ে ফেলেছে। দেখল পুলিশ এসে চারপাশ ঘিরে রেখেছে… তারা উপস্থিত জনতাকে জিজ্ঞাসাবাদে ব্যস্ত। শফিকের গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে… তার পা দুটো লোহার মতন ভারী হয়ে আসছে… যেন শেকড় ছড়িয়ে মাটিতে গেড়ে অনঢ় হয়ে বসে থাকতে চাইছে! সামনে এগিয়ে যাবার দু:সাহস তাদের নেই। শফিক চোখ বন্ধ করে ফেলল… যেন চোখ বন্ধ করলেই কিছু সাহস সঞ্চার করে নেওয়া যাবে। তারপর শুকনো ঢোক গিলে ধীর পায়ে ভীড় ঠেলে এগিয়ে গেল জটলার ভেতর। যা সে দেখবে না বলে এতক্ষণ মনে প্রাণে প্রার্থনা করছিল ভীড়ের ভেতর ঢুকে গিয়ে তাই তাকে দেখতে হল। রেললাইনের উপর তার ভাবি মিনুর লাশ পড়ে আছে! ট্রেনের বারি খেয়ে একটা চোখ প্রায় খুলে এসেছে… সমস্ত মুখ রক্তে মাখামাখি হয়ে ফুলে আছে। কী বিভৎস দৃশ্য! শফিক নিজেকে ধরে রাখতে পারল না, সেখানেই বসে পড়ে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল। এমন ভয়ংকর একটা বিকেলের স্বাক্ষী তাকে হতে হবে সেটা তার কল্পনাতেও ছিল না।
এই নিষ্ঠুর পৃথিবী কী সেদিনের সেই বিকেলে জেনেছিল, একটা মানুষ কতটা অসহায় হয়ে গেলে এভাবে মুক্তি খোঁজে? নিজের অস্তিত্ব ভুলে যায়? মাতৃত্ব ভুলে যায়? সন্তানের মুখ পর্যন্ত শক্তি হতে পারে না, বেঁচে থাকার অবলম্বন হতে পারে না!!!?
আগের পর্বের লিংক