#বাবার_ভালোবাসা
পর্বঃ৪১
লেখাঃ #রাইসার_আব্বু
আর হ্যাঁ যে কারণে আসা সামনে ৭ তারিখ আমার বিয়ে আপনারা কিন্তু আসবেন। এই যে আমার বিয়ের কার্ড। আর রাইসা মামনি সে দিন তুমি কিন্তু সারাদিন আমাদের বাসায় থাকবে!
” আমি রাইসার মুখের দিকে তাকালাম। রাইসা কেঁদে দিবে দিবে ভাব। কণা তার বিয়ের কার্ডটা হাতে দিয়েই আসি বলে তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বের হয়ে গেল। রাইসা কণা চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি রাইসাকে কি বলবো বুঝতে পারছি না। রাইসার মুখ দেখেই বুঝতে পারছি রাইসা অনেক কষ্ট পেয়েছে।
-মামনি কি ভাবছো? ঢাকায় যাবে না? আজ না তোমার রেকর্ডিং আছে।
– বাবাই ফোন করে উনাদের বলে দাও আমি আজ যেতে পারবো না।,
– রাইসার কথা মতো উনাদের ফোন করে না করে দিলাম। রাইসা সোজা তার রুমে চলে গেল।
– আমি কিছুক্ষণ পর রাইসার রুমে গিয়ে দেখি রাইসা উপুড় হয়ে শুয়ে রয়েছে। আমি গিয়ে রাইসার মাথায় হাত রাখতেই রাইসা ফুপিয়ে কান্না করে দিল।
-কি হলো আমার মা টা কাঁদছো কেন?
– রাইসা আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। আমি কি বলবো রাইসাকে বুঝতে পারছি না। রাইসার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললাম,’ মা যদি ছেলের সামনে কাঁদে তাহলে আমি ছেলে হয়ে কি করবো? আমিও কাঁদি। ”
” না বাবাই তুমি কাঁদবে না। জানো বাবাই কণা আন্টি আমাকে অনেক ভালোবাসতো। কখনো কখনো রাতে ফোন করলে রাতেই আসতো। কখনো বিরক্ত হতো না। যেদিন কথা আন্টির বিয়ে হলো সেদিন আন্টি আমাকে নিয়ে গিয়েছিল। আমার জন্য কথা আন্টি উনাকে অনেক অপমান করেছে।
” সেদিন বাসায় আসার সময় আন্টিকে বলেছিলাম আন্টি আমি আজ থেকে কাকে মম ডাকবো? যে মম আমাকে আদর করতো সেও আজ হারিয়ে গেলো অন্য কাউকে বিয়ে করে নিলো। ” সেদিন কণা আন্টি আমাকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বলেছিল, কে বললো রাইসা মামনির মম নেই? আমি তোমার মম। ”
” সেদিন সারা রাস্তা কণা আন্টিকে জড়িয়ে ধরে বাসায় এসেছে। বাবাই তুমি কণা আন্টিকে বলো গিয়ে যেন বিয়েটা না করে। তোমার কথা ঠিক শুনবে আন্টি। আর আমরা তো এখন গরীব না। আমাদের মহান আল্লাহ তায়ালা অনেক টাকা দিয়েছে। বাবা তুমি বলো আন্টিকে বলবে মম হতে আমার?
” মামনি কান্না থামাও। শুনো আমি তোমাকে ভালোবাসি না মামনি? আমি তো তোমারে মা ডাকি। ” জানো মামনি কণা ম্যাডাম আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছে। তোমাকে সেদিন মম ডাকতে বলছে শুধু তুমি যেন হাসিখুশি থাকো সেজন্য। তোমার কথা তোমার কণা আন্টিকে বলতাম। কিন্তু এখন তো আর বলা যাবে না কারণ, তোমার কণা আন্টির বিয়ের কার্ড ছাপানো হয়ে গেছে। তাছাড়া তোমার আন্টির মা ছেলেকে পছন্দ করেছে। ছেলের পরিবারের সবাই কণাকে পছন্দ করেছে। এখন আমরা কিভাবে বলি? জানো মা সবসময় নিজের স্বার্থ খুজতে হয় না। অনেক সময় অন্যের প্রাপ্তিতে নিজের সুখ খুজে নিতে হয়। তাই মন খারাপ করো না। তার চেয়ে বরং এক কাজ করো, তোমার আন্টির জন্য কি গিফট দিবা সে কথা ভাবো। ”
” আচ্ছা বাবাই। আমরা আন্টিকে অনেক কিছু গিফট দিব। বাবাই চার তারিখে তাহলে আমরা সিঙ্গাপুর যাচ্ছি। তুমি টিকেটের ব্যবস্থা করো। সেখান থেকেই কেনা কাটা করবো। আর আমি রোহান আঙ্কেলকে বলে দিবো, যেন আমি আসার পর রেকর্ডিং এর ডেট ফিক্মড করে। বাবাই চলো আজ আমরা ঘুরতে যাবো।
” কিন্তু মামনি তুমি যেখানেই যাও সেখানে তো মানুষে জটলা করে ফেলে। সবাই তোমার সাথে কথা বলতে চাই। তখন আর ঘুরা হয় না।
” হিহি বাবাই আমি বোরকা পরে যাবো। তুমি একটু দাঁড়াও আমি রেডি হয়ে আসছি। ”
” এদিকে রাইসা বোরকা পরে আসলে রাইসাকে দেখে বড় বড় লাগছে। আমি হাসতে হাসতে বললাম, মামনি এখন তো তোমাকে সত্যি সত্যি আমার মা এর মতো লাগছে।
” তাই বুঝি?
” হ্যাঁ তাই। ”
”আচ্ছা বাবাই চলো। ”
এদিকে সারাদিন রাইসাকে নিয়ে শিশু পার্কে ঘুরাঘুরি এবং নদীতে নৌকা ভ্রমণ শেষ করে সন্ধ্যায় যখন রেস্টুরেন্টে ঢুকবো এমন সময় একটা লোক বললো, ‘স্যার ও স্যার কয়টা টাকা দেন? আজ সারাদিন কিছুই খায়নি। খুব ক্ষুধা পেয়েছে!
” আমি লোকটার দিকে তাকিয়ে ক্ষানিকটা অভাব হয়ে গেলাম। খুব পরিচিত পরিচিত লাগছে।
” বাবাই চলো আজ আমরা তিনজন মিলে রেস্টুরেন্টে খাবো। আঙ্কেল চলেন আমাদের সাথে রেস্টুেরেন্টে।
”রাইসা লোকটার হাত ধরে যখন রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাবে ঠিক তখন লোকটা বললো, ‘ মামনি আমি ওখানে গেলে ওরা তাড়িয়ে দিবে। ‘ আমি ফকির মানুষ। তার চেয়ে বরং বিশটা টাকা দেন। দু’টা রুটি খেয়ে নিবো।
” আচ্ছা ভাই আপনাকে পরিচিত পরিচিত লাগছে। বলেনতো আপনার নাম কী?
” স্যার নাম দিয়ে কি করবেন? টাকা দিন খুব ক্ষুধা পাইছে। ”
” না ভাই কিছু না মনে করলে বলেন আপনার নাম কি। আর হ্যাঁ চিন্তা করবেন না টাকা দিবো। ”
” তাহলে শুনবেন আমি কে? আমি সাইফ চৌধুরী। এখন ফকির।
” রাইসা লোকটার কথা শুনে বললো, ‘ বাবাই। ”
” আমি রাইসাকে চুপ থাকতে বললাম। ”’
” রাইসা আর কিছু বলবো না। আমি খেয়াল করে দেখলাম রাইসার চোখ দিয়ে পানি পড়বে পড়বে ভাব। ”
” কি হলো স্যার? চৌধুরীর নাম শুনে টাকা দিবেন না? আমি ফকির স্যার আমার কিচ্ছু নাই। আসি স্যার আপনাদের বড়লোকদের চেনা আছে টাকা দিবেন না জানি মজা করলেন। ”
”আচ্ছা ভাই চলেন রেস্টুরেন্টে যাই। তারপর না হয় টাকা দিবো। ”
” লোকটাকে নিয়ে বাবা-মেয়ে রেস্টুরেন্টে বসেই, গরু, মুরগি, মাছ সবকিছুই অর্ডার করলাম লোকটার জন্য। রাইসা জন্য বিরিয়ানী অর্ডার করলাম। রাইসাকে বিরিয়ানী খাইয়ে দিচ্ছি রাইসা আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে। লোকটার দিকে তাকালাম। দেখি লোকটা আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। রাইসা লোকটার দিকে তাকিয়ে দেখলো লোকটা কাঁদছে।
” আঙ্কেল আপনি কাঁদছেন কেন? কি হয়েছে আরো কিছু অর্ডার করবো?
” না মামনি আমি অনেক খেয়েছি। তবে চোখের পানি আসছে তোমাদের বাবা-মেয়ের খাওয়ানো দেখে। আজ যদি আমার মেয়ে থাকতো তাহলে সেও আমাকে খাইয়ে দিতো। ”
” ওহ্হো তাই বুঝি। আচ্ছা হা করেন। ”
” রাইসা খাইয়ে দিচ্ছে লোকটাকে।”
” আমি রাইসার দিকে তাকিয়ে আছি আর মনে মনে ভাবছি আল্লাহর কাছে হাজারো শুকরিয়া যে রাইসার মতো একটা মেয়ে আমার ঘরে জন্ম দিয়েছে। যে কিনা শত্রুকেও নিজের হাতে পরম যত্নে খাইয়ে দিচ্ছে। যার জন্য সে তার মায়ের স্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছে সে লোকটাকে খাইয়ে দিচ্ছে। রাইসার এমন সহমর্মিতা দেখে চোখে জল এসে যাচ্ছে।
” এদিকে খাওয়া প্রায় শেষ এমন সময় ওয়েটার এসে বললো, ‘ রাইসা ম্যাম আপনি এখানে? ভাবতেই পারি না আপনাকে দেখতে পারবো। খুব স্বপ্ন ছিল আপনাকে দেখবো। যার গানে সারা বিশ্ব মুগ্ধ সে কি না একজন ভিক্ষুককে এভাবে খাওয়াচ্ছে। ”
” কি বলবেন আপনি? কে ভিক্ষুক? আল্লাহর দুনিয়ায় আমরা সবাই ভিক্ষুক। সবাই এক আল্লাহর সৃষ্টি।
বাবাই চলো বিল দিয়ে আসি। রাইসাকে নিয়ে যখন ক্যাশ কাউন্টারে বিল জমা দিতে যাবো এমন সময় দোকানের মালিক বললো,’ স্যার আপনাদের বিল লাগবে না। ” আমি আজ ধন্য রাইসা মামনিকে দেখতে পেয়ে। তার অনেক বড় ভক্ত আমি। প্লিজ বিল দিয়ে আমাদের ছোট করবেন না প্লিজ। আর সত্যিই আপনারা অনেক মহান, উনাকে যে ভাবে নিজ হাতে খাওয়ালেন।
” ভাইয়া এটা আপনার ব্যবসা প্লিজ টাকাটা রাখেন। অনেক রিকুয়েস্ট করে টাকা দিয়ে যখন বের হবো তখন প্রায় এক প্রকার ভীড় লেগে গেছে। বাহিরে সাংবাদিক দেখে আরো আশ্চর্য হলাম।
”সাংবাদিকেরা যে কোথা থেকে খবর পায়। কোন রকম রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠবো এমন সময় সাইফ চৌধুরীর কথা মনে পড়ল। বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। উনাকে ডাক দিয়ে বললাম, গাড়িতে আসেন। উনাকে গাড়িতে তুলে বললাম আপনার বাসা কোথায়?
” লোকটি বিনয়ী কন্ঠে বললো, সামনের বস্তিতে। ”
” সামনের বস্তিতে নামিয়ে দেওয়ার আগে বললাম, আচ্ছা ভাই আপনি তো সাইফ চৌধুরী। এতো টাকার মালিক থাকা সত্ত্বেও আজ এমন পরিস্থিতি কেন? ”
” আপনারা কে একটু বলবেন স্যার?” আপনাকে দেখে অনেকটা চেনা চেনা লাগছে?
” হুম নাম বললে অবশ্যই চিনবেন। আচ্ছা সাইফ সাহেব আপনার অফিসের মৌ নামে মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন। তার স্বামী ও সন্তান রেখে!
‘ আপনারা কে বলেন তো?”
” আমি সে মৌ এর হাসবেন্ড যে কি না তখন ছিল পঙ্গু। আর ছোট্ট মেয়েটা মৌ এর মেয়ে। ‘কথাটা শেষ করাই আগেই লোকটা দু’পা ঝাপটে ধরে বললো, ‘ ভাই ক্ষমা করে দেন আমাকে। অনেক বড় অন্যায় করেছিলাম সেদিন। আপনার ছোট্ট মেয়েটাকে মা ছাড়া করেছিলাম। আপনার পঙ্গুত্বের সময় আপনার স্ত্রীকে কেড়ে নিয়েছিলাম। আল্লাহ সে পাপের শাস্তি আমাকে দিচ্ছেন মনে হয়। আজ আমার কিছুই নেই। শেয়ার বাজারে আমাকে পথের বালির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে। সব আমার পাপের শাস্তি। আমাকে ক্ষমা করে দেন। প্লিজ ভাই, আপনি ক্ষমা না করলে, আল্লাও আমাকে ক্ষমা করবে না। আর আপনারা এতো মহান কেন? সবটা জেনেও বাবা -মেয়ে মিলে আমাকে ছোট্ট বাচ্চার মতো খাওয়ালেন। যে কিনা কাল-সাপ হয়ে আপনাদের বুকেই ছুবল মেরেছিলাম।
” কি বলছেন এসব? পাপকে ঘৃণা করতে হয় পাপীকে নয়। আপনি আপনার ভুল বুঝতে পেয়েছেন এতেই অনেক। আবার দেখা হবে। রাইসা কিছু টাকা লোকটার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,’ আঙ্কেল ভিক্ষা না করে কোন ব্যবসা করবেন। ভিক্ষাবৃত্তি করা ভালো না। আর হ্যাঁ নামায পড়বেন। দেখবেন আল্লাহ নিজের হাতে আপনাকে হেফাযত করবে।”
” লোকটা এবার হাও-মাউ করে কেঁদেই দিল। চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো,’ মা তুমি অনেক বড় হও। সত্যি তোমার বাবা মহান বাবা। যে মেয়েকে নৈতিকতা শিক্ষা দিয়েছে। মেয়েকে শিখিয়েছে শত্রুর সাথেও কিরকম ব্যবহার করতে হয় । ” আল্লাহর কাছে দো’আ করি তোমাকে উওম প্রতিদান দান করুক। আমি আর জীবনে ভিক্ষা করবো না মা।
” এদিকে লোকটাকে নামিয়ে দিয়ে বাসায় আসতে আসতে রাত নয়টা বেজে গেল। ‘ আমি জানি আজকে রাইসা কাঁদবে সারা রাত। কারণ তার মায়ের কথা মনে পড়ছে। রাইসা বাসায় এসে কোন রকম ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। আমি বুঝলাম মহারাণীর মন খুব খারাপ। তাই রাইসার পছন্দের লুডুস রান্না করে নিয়ে গেলাম। দেখি রাইসা কাঁদছে।কি হলো মামনি লুডুস দেখে কাঁদছো? খাবে না?
” বাবা আমি লুডুস খাবো না।
” ওহ্ আচ্ছা খেয়ো না তাহলে।আমিও খাবো না। আমি ভাবলাম আমার মা ‘টা আমাকে লুডুস খাইয়ে দিবে। কিন্তু না আমার মা খাইয়ে দিবে না। আচ্ছা আমি গেলাম।”
”ও বাবাই কোথায় যাচ্ছো তুমি বাবাই?যেয়ো না কে বলছে আমার বাবাইকে খাইয়ে দিবো না। হা করো। ”
” না না আগে মা খাবে তার পর আমি।
” আচ্ছা। এদিকে লুডুস শেষ করতেই রাইসা আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,’ বাবাই তুমি এতো ভালো কেন বাবাই? ও বাবাই তুমি আমাকে কখনো ছেড়ে যেয়ো না। জানো বাবাই আজ মমের কথা খুব মনে পড়ছে। তাই মমের ছবিটা বুকে নিয়ে কাঁদছিলাম। তুমি কষ্ট পেয়ে না বাবাই। আমি মমের চেয়ে তোমায় বেশি ভালোবাসি। জানো বাবাই, সবার মম সবাইকে কতো আদর করে যখন দেখি তখন আমার খুব কষ্ট হয়। আমার এতো টাকা দিয়ে কি হবে বাবাই? আমি পাবো কি এতো টাকা দিয়ে মায়ের ভালোবাসা কিনতে? ও বাবাই তুমি কাঁদছো কেন বাবাই?
” রাইসার কপালে চুমু দিয়ে বললাম,’ মারেরে ভালোবাসা টাকা দিয়ে কেনা যায় না। যেটা কেনা যায় সেটা হলো ভালোবাসায় আড়ালে প্রতারণা। সুখ যেমন টাকায় কেনা গেলেও শান্তি কেনা যায় না তেমনি ভালোবাসাও কেনা যায়না। এটা আল্লাহ তায়ালার নিয়ামত। ” আর মা’ কান্না করিস না। যখন মম ডাকতে ইচ্ছে করবে। তখন আমাকেই মম ডাকিস। আমিই তোর বাবাই, আমিই তর মম। ”
রাইসা এবার ফুঁপিয়ে কান্না করে দিল। আমি রাইসার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললাম,’ মা আমার এই দেখ তোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। চুপটি করে ঘুমা। ”
” আচ্ছা বাবাই একটা কথা বলি?”
” হ্যাঁ মামনি বলো।”
” বাবাই ওই লোকটাকে তুমি তো চিনতে। ওই লোকটাই তো তোমার আর আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে ছিলো। তারপরেও তুমি কিছু বললে না কেন?”
”তার আগে বলো তুমি লোকটাকে চিনেও খাইয়ে দিলে কেন?
” আচ্ছা বাবা তুমি বলো তো? চোখে ময়লা গেলে আমরা চোখ উপড়ে ফেলি নাকি, চোখের জলের ঝাপুনি দিয়ে চোখ পরিষ্কার করে নেয়?
” চোখ তুলবো কেন, চোখ পরিষ্কার করে নেয়য়। ”
” আমি ও তাই করেছি, শত্রুর চোখ থেকে পাপের পর্দাটা সরিয়ে দিয়েছি। সত্যের আলোয় এখন সে আলোকিত হবে।
” আচ্ছা, এই জন্যই তো তুই আমার মা। এদিকে টিভির দিকে চোখ যেতেই খানিকটা অবাক হলাম। রাইসার খাওয়ানোর ভিডিও হেডলাইন করে সম্প্রচার করা হচ্ছে। আমি মুচকি হাসলাম আর কিছু বললাম না।
২ দিন পর রাইসাকে নিয়ে সিঙ্গাপুর থেকে অনেক কিছুই কেনা কাটা করে নিয়ে আসলাম। সবকিছু রাইসায় পছন্দ করে এনেছে। বাসায় এসে দেখি, কণা আসছে।
” আমাদের দেখেই বললো, সেই কখন থেকে ওয়েট করছি। চলো রাইসাকে নিয়ে শপিং এ যাবো?
” হুম বুঝলাম, তবে তোমার হবু বর কই?
” সেও আসবে!
” রাইসা কণার মুখে তার হবু বরের যাওয়ার কথা শুনে বললো’ আন্টি মন খারাপ করো না আজকে শরীর টা টার্য়াড লাগছে। তুমি শপিং করে নিয়ো।
” কণা কি যেন বলতে গিয়েও থেমে গেলো। রাইসাকে আর কিছু না বলে, বললো আসি তাহলে মামনি। রাজ আসি তাহলে। সাবধানে থেকো।
” কণা চলে যাওয়ার পর, দায়োরান বললো, ‘ স্যার আপনার সাথে একজন দেখা করতে চায়। ”
” দায়োরানকে বললাম।, পাঠিয়ে দাও।
” কিছুক্ষণ পর বাসায় কথাকে ঢুকতে দেখে খানিকটা অবাক হলেও কিছু বললাম না। কথা এসেই রাইসাকে বললো, মামনি কেমন আছো?”
” জ্বি আন্টি ভালো। ”
” রাইসা আমাকে আন্টি ডেকো না। আগে যেমন মম ডাকতে এখনো ডেকো। ”
” সরি আন্টি। ছোটলোকের রক্ত তো আমাদের শরীরে, বড়লোকদের মম ডাকলে সেটা অভিনয় মনে হয়। ক্ষমা করবেন আমায়। ”
” কথা কি বলবে বুঝতে পারছে না। সেদিন বিয়ে বাড়িতে রাইসাকে বলা কথাগুলো কথার কানে এখনো বারি খাচ্ছে। রাইসা কথার সামনে আর না থেকে তিন তলায় তার রুমে চলে গেল।
রাইসা তার রুমে চলে গেলে,’ কথা রাজকে বললো রাজ একটা কথা বলি?
” জ্বি ম্যাডাম বলেন। ”
” তুমি আমাকে ম্যাডাম ডাকতেছো কেন?”
” একসময় আমি আপনার অফিসের সাধারণ কর্মচারী ছিলাম। আপনি ছিলেন আমার মালিক। সে হিসেবেই আপনি আমার ম্যাডাম।
” রাজ প্লিজ থামো, আর কতো লজ্জা দিবে? আমু মানছি আমি যে অন্যায করছি তা ক্ষমা করার মতো নয়। তবুও বলছি আমাকে একটা সুযোগ দেওয়া যায় না রাইসার মম হবার। আমি আর কিছুই চায় না। তোমার পায়ের নিচে তোমার বাড়ির কাজের মেয়ে হয়ে বাকিটা জীবন কাটিয়ে দিতর চায়। ক্ষমা করে দিবে না আমায়। দিবে না আর একটি সুযোগ?
” ম্যাডাম প্লিজ আপনি চলে যান। ” রাজ চলে যাবো একবার বুকে নিবে আমায়?
” কি হলো আপনি বুঝেন না? আর কত কষ্ট দিবেন আপনি? প্লিজ অনুরোধ করছি আপনি চলে যান। ”
” রাজ তোমার পায়ে ধরি, আমাকে একটু বুকে নাও। ‘রাজের দু’পা ঝাপটে ধরে। ‘
‘ রাজ কথার থেকে পা ছাড়িয়ে নিয়ে বললো, ক্ষমা আপনাকে সে আগেই করে দিয়েছি। তাই বলে এই না রাস্তার মা বানাতে হবে?
‘ কথা এবার ফুঁপিয়ে কান্না করে দিয়ে রাজকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। রাজ এবার আর সহ্য করতে পারে না। কথাকে বুক থেকে সরিয়ে কষে একটা থাপ্পর দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলে। কথা কাঁদতে কাঁদতে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।
দু’দিন পর রাজ কণার গায়ে হুলুদের দিন,তাদের বাড়িতে যায়। বাড়িটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। কণাকে স্টেজে বসিয়ে রাখা হয়েছে। খুব সুন্দর লাগছে। সবাই হলুদ দিয়ে দিচ্ছে। রাজ রাইসাকে বলল মামনি তুমি হলুদ দিয়ে আসো। রাইসা বললো বাবাই তুমি যাও তারপর আমি যাবো। আমি আর কি করার । মেয়ের এমনিতে মন খারাপ তাই অল্প একটু হলুদ নিয়ে যখনি কণার গালে লাগাতে যাবে তখনি কণা রাজের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকালো ‘।এ দৃষ্টি যেন রাজের কলিজা ছিন্ন-ভিন্ন করে দিচ্ছে।
চলবে”””’