#বাবার_ভালোবাসা
পর্বঃ৩৮
লেখাঃ #রাইসার_আব্বু
আমাকে আর কত কাঁদাবে? আমার চোখের জল আর কত চাও? বলোতো আমি ছোট্ট মানুষ সবাই আমাকে মারতে চাই। কেউ আমার কথা শুনে না। ছোট্ট বলে কি তুমি আমার কথা শুনবে না? তুমি আমার বাবাইকে ভালো করে দাও আল্লাহ। ভালো করে দাও। রাইসা মোনাজাত শেষ করে। তার বাবাই এর কাছে গিয়ে দেখে নাক রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে গেছে। আর কপালে হাত দিয়ে দেখলো সত্যিই জ্বর নেই। রাইসা মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানালো। আল্লাহ তার ডাক শুনছে ।
‘ এদিকে পরের দিন সকাল বেলা রাইসার গান রেকর্ড হয়। তিনদিন পর গান রিলিজ হওয়ার কথা।
– সকাল বেলা কাজের ভুয়া আসছে। রাইসা পড়া রেডি করে কাজের ভুয়াকে টুকটাক সাহায্য করছে। রান্না শেষ হলে কাজের ভুয়া রাইসাকে বললো’ মামনি তোমার কাছে টাকা আছে? কথা ম্যাডামকে ফোন দিয়েছিলাম বলেছে সে কোন টাকা দিতে পারবে না। ‘
– আন্টি আপনি উনার কাছে কেন টাকা চেয়েছেন? ” না মা, আসলে ছেলেটা অসুস্থ। অসুধ কেনার কোন টাকা নেই, তার উপর বাজার করার টাকাও নেই। তাই তোমাকে বলছিলাম যদি কিছু টাকা দিতে। ”
” আচ্ছা তুমি দাঁড়াও আমি দেখছি। রাইসা খরচের চারহাজার টাকা থেকে, দু’হাজার টাকা ভুয়াকে দিল। ভুয়া টাকাটা নিয়েই বাসায় চলে গেল।
রাইসা খারার প্লেটে সাজিয়ে রাজকে যখন আবারো খাইয়ে দিবে ঠিক সেই সময় লক্ষ করলো আবারো রাজের নাক দিয়ে ব্লেডিং হচ্ছে। আবারে জ্বর উঠছে।
। রাইসার খুব ভয় হচ্ছে। রাইসা কোন উপারান্ত না পেয়ে কণাকে ফোন করে আসতে বললো।
‘ কিছুক্ষণ পর দরজায় কে যেন নর্ক করলো। দরজা খুলেই দেখি বাড়িওয়ালা। রাইসা বাড়িওয়ালা রবিন সাহেবকে দেখে সালাম দিয়ে ভেতরে আসতে বললো।
‘ রবিন সাহেব বাড়ির ভেতরে না এসেই বললো’ এই যে মামনি বাড়ি ভাড়া টাকা আছে তোমার কাছে? এ মাসের বাড়ি ভাড়া টাকা কিন্তু ওই ম্যাডাম দিয়ে যায়নি। ম্যাডামকে ফোন করেছিলাম বলছে সে নাকি কোন টাকা দিতে পারবে না। শোন মাসের পাঁচ তারিখ চলে গেছে তোমাকে এর আগেও বলে দিয়েছিলাম পাঁচ তারিখের মধ্যে টাকা না দিতে পারলে বাড়ি থেকে বের করে দিবো। পাঁচ তারিখ গিয়ে দশ তারিখ মাঝে বাড়ি ভাড়া যদি না দিতে পারো তাহলে তোমার পঙ্গু বাবাকে নিয়ে বের হয়ে যাবে। দশ তারিখ হতে চললো। কালকের মধ্যে যদি টাকা না শোধ করতে পারো। তাহলে পরশুদিন নতুন ভাড়াটিয়া উঠবে কথা হয়েছে তাদের সাথে।
– আঙ্কেল কয়েকটা দিন সময় দেন, আপনার টাকা ঠিক শোধ করে দিবো। এমন অবস্থায় বাবাকে নিয়ে কোথাও যাবো বলেন?
– সেটা আমি কি করে বলবো? আমি কি এতিমখানা খুলে বসেছি নাকি? শোন কাল দুপুরের মধ্যে যদি টাকা না দিতে পারো তাহলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো। রবিন সাহেব কথাগুলো বলে বের হয়ে গেলো।
– রবিন সাহেব চলে যাওয়ার পর রাইসা আবারো চলে যায় তার বাবার কাছে। জ্বর কমছে না। ফোটা ফোটা ব্লাড আসছে নাক দিয়ে। রাইসা বারবার কণার ফোনে ট্রায় করছে। কিন্তু বারবার নাম্বারটা বন্ধ শুনাচ্ছে। ফোন ট্রায় করতে করতে আসরের আযান হয়ে যায়। রাইসা অযু করে আসরের নামায আদায় করে নেয়। নামায শেষ করতেই কলিং বেল বেজে ওঠে। গিয়ে দরজা খুলে দেয়। রাইসা দরজা খুলতেই কণা দেখে রাইসা কাঁদছে।
– মামনি কাঁদছো কেনো?
– ডাক্তার আন্টি, বাবাই আবার আগের মতো অসুস্থ হয়ে গেছে। কণা রাইসাকে নিয়ে রুমে গিয়ে দেখে রাজের কন্ডিশন তেমন ভালো নয়। কণা একটা ইনজেকশন আর কিছু মেডিসিন দিয়ে বললো’ রাইসা মামনি তুমি কোন চিন্তা করো না। তোমার বাবাই এখন ঘুমাবে।”
” রাইসা মনে মনে ভাবছে বাড়ি ভাড়ার কথা কণা আন্টিকে বলবে। কিন্তু কণা আন্টি ফ্রিতে চিকিৎসা করছে এখন যদি বাড়ি ভাড়ার কথা বলে কেমন দেখা যায়। এই ভেবে কণাকে কিছু না বলে রাইসা কণাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কণার দু’গালে পাপ্পি দিয়ে দেয়। কণা রাইসার কপালে চুমু দিয়ে চলে যায়।
‘ রাতে রাইসা আর খায় না। বারবার বাড়ি ভাড়ার টাকার কথা মনে পড়ছে। কালকে দশহাজার টাকা কিভাবে দিবে? এসব ভাবতে ভাবতে রাইসার চোখে পানি এসে যায়। রাইসা তার বাবার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ঘুমিয়ে যায়। ফজরের আযান শুনে রাইসার ঘুম ভেঙে যায়। রাইসা বিছানা থেকে উঠে অযু করে ফজরের নামায শেষ করে মোনাজাতে, সেদিনের ন্যায় আজও কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগে! হে বিশ্বজাহানের অধিপতী, তুমি চাইলেই ফকিরকে বাদশা আর বাদশাকে ফকির বানাতে পারো। ও আল্লাহ তুমি দেখো না আমার বাবা অসুস্থ, আমি অসুস্থ বাবাকে নিয়ে কোথাই যাবো বলো? কাল টাকা না দিলে আঙ্কেল বাসা থেকে বের করে দিবে। ও আল্লাহ তুমি না সর্বোত্তম সাহায্যকারী তুমি আমাকে সাহায্য করো। আমার বাবাকে সুস্থ করে দাও। ও আল্লাহ শুনেছি বাদশাহ শাজাহান যদি চাইলে তুমি তাকে মোঘল সাম্রাজ্য দিতে পারো। ও বাদশার বাদশাহ আমি কোন সাম্রাজ্য চায় না তুমি আমাকে মাথা গুজা একটু আশ্রয় দিয়ো। আমার বাবাকে সুস্থ করে দিয়ো। রাইসা মোনাজাত শেষ করে ডাইয়ি লিখতে বসলো। রাইসা তার মনের সকল কথা ডাইয়িতে লিখে রাখে।
– পরের দিন দুপুর বেলা বাড়ি ওয়ালা রাইসাকে বললো মামনি টাকা দাও বাড়ি ভাড়ার।
– আঙ্কেল কয়েকটা দিন সময় দেন। ঠিক দিয়ে দিবো?
– হাহা আমাকে পাগল পাইছো? টাকা কি আল্লাই দিয়ে যাবো? না টাকার গাছ লাগিয়েছো? না তোমার পঙ্গু বাবা টাকা দিতে পারবে? আমি কিছু জানি না। বাড়ি থেকে এখনি বের হয়ে যাও।
” রাইসা দৌড়ে গিয়ে, রবিন সাহেবের পা ধরে বললো, আঙ্কেল দয়া করেন। বাবাকে নিয়ে কোথাই যাবো বলেন? প্লিজ তাড়িয়ে দিবেন না।
-রবিন সাহেব রাইসাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। রবিন সাহেব তার সাথে থাকা দু’টি লোককে ডাক দিয়ে বললো, এই তোদের কিসের জন্য নিয়ে আসছি? বের কর পঙ্গুটাকে। ঘরে তালা দিয়ে দিবো। রবিন সাহেবের সাথে থাকা দুটি লোক রাজকে খাট থেকে বের করে বাহিরে শুইয়ে দেয়। রাইসা বাবার মাথাটা উরুর উপর নিয়ে কাঁদতে থাকে। আর বরিন সাহেবকে বলতে লাগে আঙ্কেল কয়েকটা দিন সময় দেন। প্লিজ দয়া করেন। রাইসার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। রাজের কলিজাটা ফেঁটে যাচ্ছি। নিজের প্রতি ধিক্কার জানাতে মন চাচ্ছে। মানুষ কতটা নিরুপায় হলে তার মেয়ের দু’চোখের পানি মুছে দিতে পারে না।
-রবিন সাহেব একটা তালা ঝুলিয়ে দিল দরজায়। রাইসা কত কাকুতি-মিনতী করছে সেসব কিছু শুনছে না রবিন সাহেব। হঠাৎ এমন সময় রবিন সাহেবের বাড়িতে দু’টি কার্র এসে দাঁড়ালো। রাইসা গাড়ির দিকে তাকাতেই দেখে রোহান চৌধুরী।
রোহান চৌধুরি রাইসাকে দেখেই বললো,’মামনি তোমার গান পূর্বের সকল রেকর্ডকে ভেঙে দিয়েছে। এতটা ফ্লপ হবে ভাবতেও পারিনি। আর তুমি বাহিরে এভাবে বসে আছো কেন?
” রাইসা রোহান চৌধুরীকে সব খুলে বললো। ”
” মিঃ রবিন আপনাকে তো পুলিশে দেওয়া দরকার। আর কতটাকা বাড়ি ভাড়া এই নেন এখানে পঞ্চাশ হাজার আছে। এই বলে রোহান চৌধুরী রবিন সাহেবের মুখে টাকার বান্ডেল ছুরে মারে। এমন সময় রবিন সাহেব এর স্ত্রী এসে বলতে লাগে, ‘ এই রাইসার ছবি টিভিতে টিভিতে দেখাচ্ছে! তুমি জানো? কি সুন্দর গান করে। এতো বড় শিল্পী আছে তুমি বলোই নি।
” রবিন সাহেব ঘরের দরজা খুলে দিয়ে বলে, রাইসা মামনি তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো। ”
” রাইসা কিছু না বলে শুধু মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দেয়। ”
” সত্যিই আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছো? ”
” হ্যাঁ আঙ্কেল, আপনার প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই। বাবাই বলেছে ক্ষমা কারীকে আমার আল্লাহ পছন্দ করে।
” রবিন সাহেব কি বলবে বুঝতে পারছে না।মাথাটা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
” রাইসা ও তার বাবাকে নিয়ে রোহান সাহেব, রুমে যায়। রুমে গিয়েই রোহান সাহেব রাইসাকে পাঁচ লক্ষ টাকার একটা চেক দিয়ে বলে মামনী তুমি আমার ভাগ্যের চাকা খুলে দিয়েছো। এটা তোমার জন্য সামান্য পরে আরো দিবো।
” রাইসার কাছে সবকিছু স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। সে কোন স্বপ্ন দেখছে না তো। এদিকে কয়েকমাসের মাঝে রাইসার গান, ছড়িয়ে পড়লো সারা বিশ্বে । সবাই রাইসার কন্ঠের পাগল। যেকোন গান সে গাইতে পারে। সবাই বলে রাইসার মাঝে আধাত্মিক কিছু রয়েছে। তা না হলে ক্লাস ফাইভে পড়ুয়া মেয়ে এতই বিস্ময়কর হয় কিভাবে।
” এতো কিছুর মাঝেও রাইসা আল্লাহকে ভুলে না। দিনদিন আল্লাহর প্রতি তার বিশ্বাস বেড়ে যায়। নামায পড়ে প্রতিদিন তার বাবার জন্য দোআ করে। রাইসা গত ছয় মাসে কোটি টাকার মালিক হয়ে যায়। বাড়ি গাড়ি সব হয়েছে।
” রাজ অনেকটা সুস্থ। কথা বলতে পারে। কিন্তু হাত পা নাড়াতে পারে না। রাইসার কাছে এটাই অনেক তার বাবা কথা বলতে পারে।
” রাইসা আজ তার বাবার পছন্দের বিরিয়ানী রান্না করেছে তাও নিজ হাতে। তার বাবাইকে খাইয়ে দিয়ে নামায পড়ে নেয় সে। নামায পড়ে এসে দেখে তার বাবা বিছানা থেকে পড়ে গেছে। রাইসা তার বাবাকে ফ্লরে পড়ে থাকতে দেখে দৌড়ে তার বাবার কাছে যায়। রাইসা গিয়ে দেখে তার বাবা সেন্সলেন্স হয়ে গেছে। রাইসা তারর বাবার মাথাটা উরুর উপর রেখে বলতে লাগে, কি হয়েছে বাবাই কথা বলো। প্লিজ কথা বলো। রাজ কোন কথা বলছে না। রাইসার অনেক ভয় হচ্ছে।
” রাজের কথা বলা না দেখে রাইসা কেদেয় দেয়। ও বাবাই কথা বলো বাবাই। কথা বলো না তুমি। প্লিজ কথা বলো তুমি। রাজ কোন কথা বলছে না । রাইসার চোখের পানি রাজের মুখের উপর পড়ছে। রাজ চেয়ে দেখে রাইসা কাঁদছে।
” কি হলো মামনি কাঁদছো কেনো? এই বলে রাজ রাইসার চোখের পানি মুছে দেয়।
” রাইসা চমকে যায়! বাবাই তুমি হাত নাড়াতে পারো? রাজও অবাক হয়ে যায়। তার হাত পা নাড়াতে পাচ্ছে। রাইসার কাধে ভর দিয়ে রাজ কোন রকম দাঁড়িয়ে যায়।
”’ রাজ এখন অনেকটায় সুস্থ একদিন, রাইসা তার বাবাকে নিয়ে হসপিটালে যায়। হসপিটাল থেকে ফেরার পথে কথাকে পুলিশের গাড়িতে হ্যান্ডকাপ পরা দেখে দাঁড়াতে বলে।
” রাজ পুলিশকে জিজ্ঞেস করে কথাকে কেন থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে?
” পুলিশ রাজকে যা বলে তা শোনার জন্য রাজ ও রাইসা কেউ প্রস্তুত ছিল না। কথাকে নাকি হোটেলে আপত্তিকর কাজের জন্য পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
চলবে””””””’