#বাবার_ভালোবাসা
পর্বঃ৩৩
লেখাঃ #রাইসার_আব্বু
এই বলে কাঁদতে কাঁদতে জায়নামাযে ঘুমিয়ে গেল। কথা রাইসাকে এভাবে ঘুমিয়ে যেতে দেখে চমকে যায়!
” রাইসার কাছে এসে তার মাথায় হাত রাখতেই বলে ওঠে ‘মম বাবাই কী সুস্থ হইছে? বলো না মম?
” কথা কি বলবে রাজের যে আর জ্ঞান ফিরছে না।”
” মম কি হলো কিছু বলছো না কেন? আমি বাবাই এর সাথে দেখা করবো। আমাকে নিয়ে যাবে?”
এমন সময় কণা এসে বললো রাজ আর কোনদিন কথা বলতে পারবে না, তুমি রাইসাকে বুঝাও। কণার কথা শুনে রাইসা বুঝে ফেলল তার বাবাইয়ের কিছু একটা হয়েছে। রাইসার চোখ থেকে পানি পড়বে পড়বে ভাব। কথা বুঝতে পারল রাইসা কাঁদবে এখন। কথার বুকটাও ফেটে যাচ্ছে রাজের জন্য। অনেক কষ্ট দিয়েছে সে রাজকে। কিন্তু একটিবার বুকেও নিতে পারলো না ।
“রাইসা কণার কথা শুনে কাঁদতে কাঁদতে বলল আমার বাবাই এর কিছু হতে পারো না। আল্লাহ আমার কাছ থেকে বাবাইকে কেড়ে নিতে পারবে না। আল্লাহ কী দেখে না আমার বাবাই ছাড়া কেউ নেই। ” কথাটা বলে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যেতে লাগল।
”রাইসা পড়ে যাওয়ার আগে কথা রাইসাকে ধরে ফেলল। কথা দেখলো যে রাইসা জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে।
” কথাকে হসপিটালের বেডে শুইয়ে দিয়ে ডক্টরকে খবর দিল। ডক্টর রাইসাকে দেখে বললো কিছু হয়নি। ছোট্ট মানুষ তো তাই একটু মানসিক আঘাত পেয়েছে। আর হ্যাঁ ওর জ্ঞান ফিরলে একটু হাসি -খুশি রাখার চেষ্টা করবেন।
” কথা রাইসার মাথার কাছে বসে, মাথায় হাত বুলাচ্ছে। সকালের সূর্যের মিষ্টি কিরণ জানালার কাঁচ ভেদ করে রাইসার উপর পড়ছে। ঘুমন্ত রাইসাকে অনেক সুন্দর লাগছে। কথার মাঝে মাঝে মনে হয়, এমন একটা মেয়েকে নিয়েই বাকিটা জীবন কাটিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু মৌ আপু রাইসাকে রেখে কিভাবে পারলো রাজের মতো একজন মানুষকে কষ্ট দিতে। কথা রাইসার কপালে একটা চুমু দিয়ে মনে মনে বলে ‘ আল্লাহ যেন তোর মা হয়েই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে দেয়।
” হঠাৎ রুমে কণা প্রবেশ করে বললো, রাইসার এখন কি অবস্থা?
” এখনো তো জ্ঞান ফিরছে না। টেনশন হচ্ছে । ”
” কথা আপু টেনশন করো না। রাইসার একটু পড়েই জ্ঞান ফিরবে। কিন্তু চিন্তার বিষয় রাইসা জ্ঞান ফিরেই তো রাজের কথা বলবে । কিন্তু চব্বিশ ঘন্টা পার হয়ে গেছে রাজের তো জ্ঞান ফেরার কোন নাম নেই। আমার বড্ড ভয় হচ্ছে। রাজের যদিও জ্ঞান ফিরে সে কথা বলতে পারবে না। এটাই ডাত্তার ফিলিক্স বললো। তার মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে।
” কণা আপু আমার রাজের কিছুই হবে না।”
” হুম বোন তাই যেন হয়। ”
“কণা কথার সাথে কথা বলছে এমন সময় দেখলো ইমুতে ফোন দিয়েছে তার মা।
” ফোনটা রিসিভ করতেই, ওপাশ থেকে বললো ‘ মা তুই কইরে? সিঙ্গাপুর গিয়ে এই বুড়ি মা টাকে ভুলেই গেছিস?
” আরে না মা। রাজের অবস্থা ভালো না। খুব টেনশন হচ্ছে। তুমি দোআ করো। ”
” হুম মা, ছেলেটার জন্য সবসময় দোআ করি। ছেলেটা কতো ভালো ছিল। আচ্ছা মা দেশে কবে আসবি?
” সিউর না মা তবে কয়েকদিনের মাঝেই আসবো । দোআ করো যেন সবকিছু ঠিক ঠাক হয়ে যায়। রাজের জন্য আমার খুব টেনশন হচ্ছে। ”
” আচ্ছা মা কণা, কিছু না মনে করলে তোকে একটা কথা বলি?
– হ্যাঁ মা বলো।
” একটা বিয়ের কথা এসেছে। ছেলেটা মাশাল্লাহ ভালো। পরিবারও ভালো। তুই চাইলে কথা বলে দেখতাম। ছেলে নাকি তোকে আগেও দেখেছে। তাদের সবকিছুই পছন্দ। তুই কি বলিস?
” মা আমি এখন বিয়ে করবো না। বিয়ে করতে দেরী আছে। ”
” আচ্ছা মা তুই কি রাজকে ভালোবাসিস?মিথ্যা বলবিনা। এর আগে তো তুই এতটা সিরিয়াস ছিলি না। আমাকে রেখে কোথাও যেতে না। আর ছেলেটার জন্য তুই দেশ ছেড়ে গেলি?”
” মা তুমিও না। আমি কেন উনারে ভালোবাসতে যাবো?
” হুম মা জানি। আমি তোর মনের কথা বুঝবো না? তুই তো জানিস তোর বয়স যখন ছয় তখন তোর বাবা মারা যায়। সেদিন থেকে তোর মনের কথাটাও বুঝে নিয়েছি।”
” কণার ফুঁপিয়ে কান্না আসছে। সে নিজের অজান্তেই রাজকে ভালোবেসে ফেলেছে। অথচ রাজ কণার নয় কথার। কণা সেটা বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে। রাজ কণার হবেও না। কিন্তু মন কখনো বাস্তবতা বুঝতে চায় না । অথচ সে কখনো চায়নি সে কারো প্রেমে পড়বে। কিন্তু আজ তার কেন কান্না আসছে। চোখ থেকে পানি পড়বে ভাব। এমন সময় কণার মা ওপাশ থেকে বললো কিরে মা ছেলে পক্ষ আসছিল তাদেরকে হ্যাঁ বলে দিবো?
” মা তুমি বিয়ে নিয়ে আছো? প্লিজ মা এখন রাখছি। ”
” কণার মা ওপাশ থেকে কিছু বলার আগেই কণা ফোনটা কেটে দিল। বুকের ভেতরটা কেমন যেন করছে তার।” এদিকে রাইসার জ্ঞান ফিরতেই দেখে কথা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
”মম বাবাই এর জ্ঞান ফিরছে? মম বাবাই কোথায় বাবাই এর কাছে যাবো আমি। বাবাই এর কিছু হয়নি তো মম? আমার বাবা আমার সাথে কথা বলবে তো?
” কথা কি বলবে বুঝতে পারছে না। রাইসাকে বুকে টেনে নিয়ে বললো নারে মা তোর বাবাই এর কিছুই হবে না। কথা কণাকে বললো রাইসাকে রাজের কাছে নিয়ে যেতে।
” কণা ডাক্তারের সাথে কথা বলে রাইসাকে রাজের কেবিনে নিয়ে গেল।
” ডাক্তার ফিলিক্স কণাকে ডেকে নিয়ে বললো’ মিসেস কণা পেশেন্টের তো জ্ঞান ফিরছে না। কুমায় চলে যেতে পারে নয়তো যে কন্ডিশন এখান থেকে ফিরে আসার চান্স খুবই কম। আপনি কি চান পেশেন্টকে কুমোয় পাঠিয়ে দিতে। আর হ্যাঁ আপনাকে বললাম পেশেন্টে কুমোয় পাঠালে সেখান থেকে ফিরে আসার চান্স ০৫ পারসেন্ট। তাই অযথা টাকা নস্ট না করাই শ্রেয়।
” আচ্ছা ডক্টর আমরা ভেবে দেখছি।
” এদিকে রাইসা রাজের কাছে গিয়ে দেখে, তার পুরো মাথা ব্যান্ডেজ করা। এক হাতে স্যালাইন যাচ্ছে। মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো। রাইসা রাজের মাথার কাছে গিয়ে বলতে লাগল ‘ বাবাই ও বাবাই দেখ তোমার রাইসা তোমাকে ডাকতেছে। তুমি না বলেছে তোমার মা নেই বাবাই? আমিই তোমার মা। দেখ তোমার মা তোমাকে ডাকছে তুমি কথা বলবে না? বাবাই ও বাবাই কাল হতে কিচ্ছু খায়নি। তুমি সেই কবে থেকে খাইয়ে দেও না। তুমি আমাকে খাইয়ে দিবে না বাবাই। ও বাবাই কথা বলো। দেখ তোমার রাইসা মা কাঁদছে। তুমি কথা বলবে না ‘ বলবে না? রাইসা মা তুমি কেঁদো না তুমি কাঁদলে তোমার বাবাই এর কস্ট হয়।’জানো বাবাই আমার না খুব কষ্ট হচ্ছে। বাবাই আমাকে একবার মা বলে ডাকবে। ও আল্লাহ তুমি আমার বাবাইকে আর কত কষ্ট দিবে? বলো না আমার বাবাইকে বাবাই যেন কথা বলে। তুমি জানো না আল্লাহ আমার বাবাই ছাড়া আমাকে কে আদর করবে? বাবাইকে কথা বলতে বলো। ও বাবাই আমি তোমাকে আদর করবো। কাউকে কষ্ট দিতে দিবো না। তুমি অভিমান করো না? বাবাই ও বাবাই প্লিজ কথা বল। আমার আইসক্রিম চাই না। তুমি আমারর সাথে কথা বলো। হঠাৎ রাইসা খেয়াল করলো রাজের চোখে পানি।
‘ ‘ কণা আন্টি দেখে যান বাবাই কাঁদছে। বাবাই কাঁদতেছে দেখে যান। বাবাইকে না করেন। বাবাই যেন না কাঁদে। কণা দৌড়ে রুমে এসে দেখল যে সত্যিই রাজের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। হ্যাঁ রাজের জ্ঞান ফিরেছে। ডাক্তার ফিলিক্স রাজকে দেখে বললো ‘
সৃষ্টিকর্তার কৃপায় জ্ঞান ফিরেছে। তবে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের জন্য যা সন্দেহ করেছিলাম তাই হয়েছে। তিনি কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। সাথে প্যারালাইজড হয়ে গিয়েছে।
” চলবে””””””””