#বাবার_ভালোবাসা।
পর্বঃ৩১
লিখাঃ #রাইসার_আব্বু
– হ্যাঁ আমি। তোমরা কোথায় যাচ্ছো?
– এ শহর ছেড়ে।
– আমাকে নিবে না?
– সরি ম্যাডাম। আসি আমরা।
– রাইসাকে নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি।
– এমন সময় কণা ম্যাডাম বললো’ রাইসা মামনি চলেই যাবে আমার ফিস টা দিয়ে যাও। ‘
– রাইসা কণা ম্যাডামের গালে যখন পাপ্পি দিবে এমন সময় রাইসা চিৎকার দিয়ে বললো বাবাই সরো!
– আমি তাকাতেই দেখি একটা মাইক্রোবাস এসে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দিলো। রাইসার চিৎকার কানে ভেসে আসছে। চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। কিছুই দেখতে পারছি না। মনে হচ্ছে জীবনের অন্তিম মুহূর্তে পৌঁছে গেছি। রাইসার মুখটা বারবার চোখে ভাসছে।
– এদিকে রাইসা রাজের রক্তমাখা দেহটা বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগল’ বাবাই ও বাবাই কথা বলো বাবাই। আমরা না চলে যাবো। যেখানে কেউ তোমাকে কষ্ট দিবে না সেখানে। ও বাবাই চোখ খুলো বাবাই। কথা বলো।আমাকে ছাড়া তুমি কোথায় যাচ্ছো বাবাই?
– ও ডাক্তার আন্টি দেখ বাবাই কথা বলছে না। কণা কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না। নিজের উড়নাটা দিয়ে রাজের মাথাটা বেধে ফেলল। রাস্তায় অনেক লোক তাকিয়ে আছে। কেউ কেউ ভিডিও করছে। এটা বাংলাদেশের কালচার। কণা রাজকে নিয়ে গাড়ি করে হসপিটালে নিয়ে আসে।
– রাজের অপারেশন শেষ করে যখন বাহিরে বের হয়। তখন দেখে রাইসা অপারেশন থিয়েটারের দরজায় দাঁড়িয়ে কাঁদছে। রাইসার কান্না কণার কাছে সহ্য হচ্ছে না। একদম বুকে গিয়ে বিঁধছে। কেন জানি বুকের ভেতরটা চিনচিনে ব্যাথা করছে।
– ডাক্তার আন্টি বাবাই আমার সাথে কথা বলবে তো? বাবাই ভালো হয়ে গিয়েছে তো?কি হলো ডাক্তার আন্টি বলেন না কেন?
– কণা কিছু বলতে পারছে না। বুকের ভেতরটা ফেঁটে কান্না আসছে। কেন জানি মনে হচ্ছে রাজ আর রাইসা তার আপন কেউ।
– কি হলো?বলেন না কেন? আমার বাবা আমার সাথে কথা বলবে?
– কণা কিভাবে বলবে, রাইসাকে তার অবস্থা গুরুতর। কিছুদিন আগে মাথায় যেখানে আঘাত পেয়েছিল। এই একসিডেন্টে ঠিক একই জায়গায় ব্যাথা পেয়েছে। বাঁচার সম্ভবনা ক্ষীণ। কিন্তু এ কথাটা কিভাবে বলবে রাইসাকে।
– কি হলো আন্টি তুমি কথা বলছো না কেন? আমার খুব কান্না পাচ্ছে। খুব। তুমি না আমার আন্টি। বলো না বাবাই এর কি হয়েছে?
-কনা রাইসাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললো’ মামনি আল্লাহ অনেক মহান। তিনি তোমার কাছ থেকে তোমার বাবাইকে কেড়ে নিবে না। তোমার সাথে তোমার বাবা কথা বলবে। কিন্তু আল্লাহর কাছে তোমার চাইতে হবে। আল্লাহ সব পারে। তুমি আল্লাহকে বলবে তোমার বাবাইকে যেন ভালো করে দেয়।
– হুম আন্টি আল্লাহকে বলবো, বাবাইকে যেন কথা বলতে বলে। আল্লাহ জানে না কি? আমি বাবাইকে ছাড়া বাঁচবো না। বাবাই আমার জীবন। আচ্ছা আন্টি বাবাই এর অপারেশনের জন্য অনেক টাকা দিতে হবে তাই না?
– হ্যাঁ দিতে হবে। তুমি তো দাওনি?
– আন্টি আমার কাছে তো কোন টাকা নেই।
– কে বলছে নেই? তুমি দু’গালে পাপ্পি দাও তাহলেই হবে।
– রাইসা কণাকে জড়িয়ে ধরে দু’গালে চুমু দিয়ে বলল ‘লাভ ইউ আন্টি। ‘
– কণা রাইসাকে জড়িয়ে ধরে বললো’ লাভিউ টু মামনি। ‘কণা যখন অপারেশন শেষ করে তার রুমে বসে আছে। এমন সময় ডাক্তার উম্মে কুলসুম এসে বললো’ কণা তুমি কি কাজটা ঠিক করছো?
– কি কাজ?
– এইযে অপারেশনের সমস্ত খরচের দায়িত্ব নিয়ে নিলে। যেখানে অপারেশন করেও কোন লাভ হওয়ার কথা না। এর আগেও একই রকম করছো। তুমি যা করছো, এটা ঠিক না! লোকটার একটা বাচ্চা আছে।
– তুমি কি বলতে চাচ্ছো আনিশা?
-যা বলতে চাচ্ছি তা বলার আগে বলতে চাই। তুমি কি পেশেন্টকে ভালোবাসো?
– আচ্ছা আনিশা কারো বিপদের দিনে, কারো পাশে দাঁড়ানোই কি ভালোবাসা? আর ভালোবাসা শব্দটাকে আমরা নোংরা করে ফেলছি তাই না। আমরা ভালোবাসা বলতে ছেলে আর মেয়ের ভালোবাসা টাকেই বুঝি। তাই না?
– কণা আমার এক্সপিরিয়েন্স যা বলে তা থেকে বলছি, তুমি পেশেন্টকে ভালোবাসো। অপারেশন শেষ করে যখন তুমি বের হও। তখন তোমার চোখের জল বলছিল তুমি ভালোবাসো। আর এমন একজনকে ভালোবাসো যার বেঁচে থাকার আশা করাটাও বোকামী। তোমাকে কিছু বলতে তুমি নিজেও ডাক্তার। আবেগ দিয়ে জীবন চলে না। আর হ্যাঁ ডাক্তার সিফাত তোমাকে অনেক ভালোবাসে। তুমি চাইলে বিয়ে করতেও রাজি।
– হুম আমি জানি সিফাত আমাকে পছন্দ করে। আমিও তাকে পছন্দ করি। অপছন্দ করি সেটা না। সে একজন এডুকেটেড পারসন। কিন্তু কি জানো আনিশা সিফাতের প্রতি আমার কোন ফিলিংস কাজ করে না। ভালোবাসা কি সিফাত সেটা বুঝেই না। আর হ্যাঁ আরেকটা কথা কি জানো আনিশা তুমি যা ভাবছো সেটা ভুল। রাজের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। তবে রাজকে আমি ফিল করি।
– আচ্ছা তাই যেন হয়। আর আমি এখন আসি। আর যা বললাম ফ্রেন্ড হিসাবে বললাম। কিছু মনে করো না।
– আরে না।
– আনিশা চলে গেলে। কণা ভাবতে লাগল সত্যিই কি আমি রাজকে ভালোবাসি? কেন রাজের জন্য এতো মায়া হয়। কেন রাইসাকে আপন মনে হয়। এসব কোন কিছুরই হিসাব মেলাতে পারছে না কণা। হঠাৎ কণার বাসা থেকে ফোন আসলো। ফোন পেয়ে কণা বাসায় চলে গেল।
– এদিকে কথা অনেকটা সুস্থ। রাজের কথা খুব মনে পড়ছে। বুক ফেঁটে কান্না আসছে। রাজের চেহারাটা বারবার ভেসে ওঠছে। কথা বালিশে মুখ লুকিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে।
– কথার বাবা কথার রুমের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বুঝতে পারল কথা কাঁদছে। কথার কান্না শুনে কথার রুমে গিয়ে তার মাথায় হাত রেখে বললো’ মারে এভাবে কাঁদিস না আর। ‘
– কথা তার বাবাকে দেখে জড়িয়ে ধরে বললো ‘ বাবা আমি রাজকে ছাড়া বাঁচবো না বাবা। আমি ওকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। বাবা আমার রাজকে এনে দাও না। আমি তোমার কাছে কিছুই চায় না।
-মারে, আমিও রাজের সাথে অন্যায় করেছিরে। ছেলেটা বড্ড ভালোরে। শোন না মা তুই রাজের কাছে যা।
– সত্যি যাবো বাবা?
– হ্যাঁ মা। তোর ভালোবাসার মানুষ তোর ভালোবাসা দিয়েই জয় করে নে।
– কথা রাজের বাসায় এসে জানতে পারে রাজ একসিডেন্ট করেছে। রাজের একসিডেন্টের কথা শুনে কথার পায়ের মাটি সরে যাচ্ছে। বাড়িওয়ালার কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে কথা হসপিটালে চলে যায়। হসপিটালে গিয়ে দেখে রাইসা বেঞ্চে বসে আছে।
– কথা গিয়েই রাইসাকে জড়িয়ে ধরে বলে মা তোমার বাবাই কোথায়? তোমার বাবা কেমন আছো?
– রাইসা কথাকে রাজের কেবিন দেখিয়ে দেয়। কথা দৌড়ে রাজের কেবিনে চলে যায়। কেবিনে গিয়ে দেখে রাজের মাথাটা ফুল ব্যান্ডেজ করা অক্সিজেন চলছে।
– কথার হৃদয় থেকে মনে হয় রক্তক্ষরণ হচ্ছে। রাজকে এভাবে দেখতে পাবে সে কোনদিন কল্পনাতেও ভাবেনি। কথা রাজের পায়ের কাছে বসে বলতে লাগল ‘ রাজ তুমি কথা বলবে না আমার সাথে?’ আমি আর তোমাকে কষ্ট দিবো না। তুমি না আমার কলিজার টুকরা। কলিজা ছাড়া কি কেউ বাঁচে?কথা রাজের পা দু’টি জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। রাইসা কথাকে জড়িয়ে ধরে বাবাই বাবাই বলে কাঁদতে লাগল।
– নার্স কথাকে রাজের কেবিনে দেখে বললো’ কি করছেন আপনারা? রোগীর কাছে কথা বলা যাবে না। বের হয়ে যান প্লিজ।
– কথা রাইসাকে নিয়ে বের হয়ে সোজা ডাক্তারের রুমে চলে যায়। ডাক্তার সিফাতের সামনে বসে আছে কথা।
– মিস কথা, কিভাবে যে বলি, উনি এর আগেও গুরুতর আহত হয়েছিলেন। ও যাত্রায় তার বেঁচে থাকার কিছুটা চান্স ছিল। আল্লাহর রহমতে সুস্থ হয়ে ওঠে। হয়ত ছোট্ট বাচ্চা মেয়েটাকে আল্লাহ কষ্ট দিতে চাননি। কিন্তু এবারের একসিডেন্টে ঠিক মাথার আগের জায়গাটাতে আঘাত আনে । তাছাড়া ব্রেনে অনেক আঘাত পাইছে।
– কি হলো আপনি কাঁদছেন কেন?
– এক কাজ করতে পারেন শেষ চেষ্টাটা বিদেশে নিয়ে করতে পারেন।
-আপনি সব রেডি করেন। আমার স্বামীকে কোন ভাবেই মরতে দিতে পারি না।
– স্বামী মানে?
– সেটা আপনার জানতে হবে না।
– এদিকে পরের দিনই কথা রাজকে নিয়ে সিঙ্গাপুর এসে পড়ে।
– সিঙ্গাপুর আনার পর আরেকটা অপারেশন হয়। অপারেশন শেষে ডাক্তার বললো’ আপনারা ঈশ্বরকে ডাকেন। ‘ আমাদের হাতের ক্ষমতা শেষ। তিনি চাইলে সব সম্ভব।
-রাইসা কথাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে আর বলছে মামনি আমি বাবাইকে ছাড়া বাঁচবো না। এদিকে রাজের সাথে, কণাও এসেছে। কণার চোখেও পানি।
– এদিকে অপারেশন ১৪ ঘন্টা পার হয়ে যাচ্ছে রাজের জ্ঞান ফিরছে না।
-চলবে”””’
বিঃদ্রঃ হ্যাপি ইন্ডিং দিবো না স্যাড কমেন্ট প্লিজ?