#বাবার_ভালোবাসা।
পর্বঃ০৩
লেখাঃরাইসার_আব্বু।
– রাইসাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলাম। আমি কি বলল বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি। রাইসা নামায পড়ে মোনাজাতে সবকিছু বলল। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে চোখের জল ফেলছি। হঠাৎ মৌ এর বিয়ের কথা শুনে রাইসা বায়না ধরল। পড়ে রাইসাকে বিয়ে বাড়ি নিলে, যেসব ঘটনা ঘটে তা তো শুনলেনই।
– পরের দিন অটো করে রাইসাকে নিয়ে যখন স্কুলে যায় তখন একটা সিএনজি অটোকে ধাক্কা দেয়। ধাক্কা দেওয়ার সাথে সাথে রাইসার মাথা অটোর গ্রিলে বারি খায়। অনেকটা কেটে যায়। রাইসাকে নিয়ে পাশের হসপিটালে চলে যায়।
– হসপিটাল থেকে যখন রাইসার ব্যান্ডেজ করে নিয়ে বের হবো এমন সময় শুনতে পারলাম ‘ স্যার রক্ত না পেলে আপনার মেয়েকে বাঁচানো সম্ভব না। একসিডেন্টে অনেক ব্লাড বের হয়ে গেছে। আমাদের ব্লাড ব্যাংকে ও নেগেটিভ রক্ত নেই।
– প্লিজ ডক্টর যেভাবে হোক আমার মেয়েকে বাঁচান। আমার একটা মাএ মেয়ে ওর কিছু হলে আমি বাঁচব না।
– স্যার আমরা চেষ্টা করছি। রক্ত ম্যানেজ ও হয়েছে। বাট ঢাকার বাহির থেকে ডোনার আসতে আসতে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব না।
– বাবাই লোকটা কাঁদে কেন? কি হয়েছে তার মেয়ের?
– মামনি একসিডেন্ট করেছে। অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে। রক্ত না দিলে বাঁচবো।
– ওহ্ বাবাই তুমি রক্ত দাও না। দেখো না বুড়ো মানুষটা কিভাবে কাঁদছে।
– রাইসার কথাতে মনে পড়ল, আমার রক্তের গ্রুপও তো ও নেগেটিভ। আমি রাইসাকে নিয়ে ডাক্তার সাহেব আর বৃদ্ধ লোকটার সামনে গিয়ে বললাম ‘ কিছু মনে না করলে আমি রক্ত দিতে চায়।
– আপনার রক্তের গ্রুপ কি?
– ও নেগেটিভ।
– ওহ্ আচ্ছা। তাড়াতাড়ি আসুন। ডাক্তার আমাকে নিয়ে একটা বেডে শুইয়ে দিলো। তারপর রক্ত দেয়া শেষ হলো, রাইসাকে নিয়ে যখন হসপিটাল থেকে বের হবো এমন সময়। বৃদ্ধ লোকটা বলল ‘ কোথায় যাচ্ছো বাবা?
একটু দাড়াও। তোমার জন্য আমার কথা মামনি নতুন করে পৃথিবীর আলো দেখল।
– আঙ্কেল পৃথিবীতে কেউ কাউকে বাঁচাতে পারে না। জন্ম -মৃত্যু তো আল্লাহর কাছে। আমি শুধু আমার কর্তব্যটা পালন করেছি।
– বাবা এই নাও চেক, তোমার যতখুশি একটা অংক বসিয়ে নিয়ো। এটা তোমার জন্য উপহার।
– আঙ্কেল সত্যিই যদি কিছু দিতে চান তাহলে আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আর চেকটা আপনার কাছেই রাখেন। ধন্যবাদ।
– রাইসা মা চলো। আমি রাইসাকে নিয়ে যখন বের হবো এমন সময় পিছন থেকে আঙ্কেল ডাক দিল।
– বাবা দাড়াও! তোমার বাসাটা কোথায় বলবে?
– আমি বাসার ঠিকানা দিয়ে বের হয়ে আসলাম।
– বাসায় এসে নামায পড়ে রান্না চড়ালাম। রান্না করা শেষ হলে রাইসাকে খাবার তুলে দিচ্ছি এমন সময় বাড়ি ওয়ালা এসে বলল ‘ আপনাদের চারমাসের ভাড়া বাকি। এই মাসে দেবেন না ওমাসে দেবেন বলে, ঘুরাচ্ছেন। এক সপ্তাহের সময় দিলাম। যদি ভাড়া না দিতে পারেন তাহলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো।
– ফারহান ভাই এ সপ্তাহেই ভাড়া মিটিয়ে দিবো।
-আচ্ছা কথাটা যেন মনে থাকে।
– বাড়িওয়ালা চলে যাওয়ার পর, রাইসা আমাদের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বাবার অপমানটা মনে হয় মেয়েটাও উপলব্ধি করতে পেয়েছে। এদিকে প্রতিদিন রাইসাকে স্কুলে দিয়ে চাকরি খুঁজতে বের হয়। অনেক জায়গায় সিভি জমা দিয়েছি। যখন তারা আমাকে দেখে ক্রাচে ভর করে চলি। তখন বলে আমার দ্বারা চাকরি নয় ভিক্ষা শোভা পায়।
– এদিকে দেখতে দেখত এক সপ্তাহ চলে গেল। আমি ড্রয়িংরুমে বসে আছি এমন সময় বাড়িওয়ালা এসেই বলতেছে ভাড়া দেন।
– আমি বুঝতে পারছি না ভাড়া কিভাবে দিবো। কিছুটাকা ছিল সেগুলো রাইসার স্কুলের বেতন আর সপ্তাহের বাজার করতেই চলে গেছে। রাইসা আর আগের মতো চকলেট আইসক্রিম খেতেও বায়না ধরে না।
– কি হলো ছোটলোকের বাচ্চা! বাড়ি ভাড়া নেওয়ার সময় তো বলেছিস বাড়ি ভাড়া মাসের পাঁচ তারিখে পরিশোধ করবি তাহলে চারমাস যায় ক্যামনে। আমি ফারহান ভাইয়ের দিকে মায়ের রাখা শেষ স্মৃতি বালা খানা তুলে দিয়ে বললাম ‘ ফারহান ভাই এই বালা বিক্রি করলে আপনার চারমাসের ভাড়া মিটে যাবে। ‘
– মায়ের শেষ স্মৃতিটা আর ধরে রাখতে পারলাম না। জানি না আল্লাহ কি খেলা খেলছে আমার ওপর।
– এই ফাইজলামি করেন কিসের তামা পিত্তল! আমাকে বোকা পাইছেন। আজকে টাকা দিয়ে এখান থেকে বের হবেন। ছোটলোকের বাচ্চাদের ভাড়া দেওয়াই ভুল হইছে।
– আপনার চারমাসের ভাড়া কত পান?
– অপরিচিত মেয়ে কন্ঠ শুনে দরজার দিকে তাকালাম। একটা মেয়ে জিন্স প্যান্টের সাথে ব্লু কালারেরর শার্ট পড়ে দাঁড়িয়ে আছে। চেহারায় কেমন মায়া মায়া ভাব। শরীরের সাথে শার্টটা খাপে খাপ লেগে আছে। মেয়েটির পাশেই হাসপাতালের সেই আঙ্কেলটা দাঁড়িয়ে আছে।
-ফারহান সাহেব তাচ্ছিল্যের সুরে বললেন ‘ আপনাকে বলে লাভ কি? আপনাকে বললে কি আমার ভাড়া মিটিয়ে দিবেন?
– আপনাকে বলছি ভাড়া কতো?
– এই নেন বিশ হাজার সাথে দু’ হাজার আপনাকে বোনাস। এই বলে মেয়েটা টাকাগুলো ফারহান ভাইয়ের সামনে ঢিল দিলে। ফারহান ভাই টাকাগুলো ফ্লরে থেকে তুলে নিল।
– আমি লজ্জায় মাথা তুলতে পাচ্ছি না। এমন সময় মেয়েটা বলে ওঠল বাবা আমি রাজ আর ছোট্ট মেয়েটাকে আমাদের বাসায় নিয়ে যেতে চাই।
– পাগলী মেয়ে তোর খুশিতেই আমার খুশি।
মেয়েটা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল ‘ হাই আমি কথা। সেদিন আপনিই রক্ত দিয়ে আমার জীবন বাঁচিয়েছেন। ‘
– আমি মেয়েটার সাথে হাত না মিলিয়ে বললাম’ আসসালামু আলাইকুম। আমি রাজ।
– আসসালামু আলাইকুম ‘ আমি রাইসা। ‘ আর এটা আমার বাবাই।
– কথা রাইসার কথা শুনে হেসে দিল। রাইসাকে কুলে তুলে নিয়ে দু’গালে চুমু একে দিল।
– আচ্ছা ভাবী নেই?
– না আমার মা মারা গেছে।
– রাইসার কথা শুনে কথা কিছু বলল না। জোর করে আমাদেরকে তাদের বাড়িতে নিয়ে গেলো।
– বাড়িটা অনেকটা রাজপ্রাসাদের মতো দেখতে। এতবড় বাড়ি! বাট বাড়িতে কাজের লোক ছাড়া অন্য কোন মানুষ নেই।
– কথা মেয়েটা অনেক ফ্রেন্ডলি। রাইসার সাথে ভাব জমিয়ে নিয়েছে।
– সোফায় বসে আছি। রাইসা কথার সাথে খুঁনসুটি করছে।
– আমি সোফায় বসে বসে মৌ এর কথা ভাবছি এমন সময়, আঙ্কেল বলল ‘ বাবা এটা নিজের বাড়ি মনে করে থাকবে। আর আমার মেয়েটা অনেক রাগি বাট মনটা অনেক ভালো। ছোটবেলা থেকে আমেরিকায় থেকে পড়ালেখা করেছে। সে জন্য অনেকটা অগুছালো স্বভাবের।
– জ্বি আঙ্কেল।
– আর উপরের রুমটাতে তোমরা থাকবে। যতদিন তুমি পুরোপুরি সুস্থ হচ্ছো।
– আঙ্কেল এটা হয় না।
– কেন হয় না। তোমার উপকারের একটু ঋণ শোধ করার চেষ্টা করতেও দিবে না?
– আমি কিছু বললাম না।
– রাত্রে ডিনার করার জন্য কাজের মেয়েটা ডেকে গেল। রাইসাকে নিয়ে নিচে খেতে আসলাম। আঙ্কেল জোর করে ডাইনিং টেবিলে বসালো। রাইসা আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে। আর আমি বাধ্য ছেলের মতো খাচ্ছি। কথা ম্যাডাম আর আঙ্কেল আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমিও রাইসাকে খাইয়ে দিচ্ছি। এমন সময় কথা ম্যাডাম বলে উঠল’ রাইসা মামনি শুধু বাবাইকে খাইয়ে দিলেই হবে? ‘আমাকে আর তোমার দাদু ভাইকে খাইয়ে দিবে না? রাইসা বাম হাতে কান ধরে বলল ‘ বন্ধু সরি, ভুল হয়ে গেছে। হা করো খাইয়ে দিচ্ছে।
– মনে মনে ভাবছি একদিনের মাঝে পিচ্চিটা বন্ধুও বানিয়ে ফেলল।
– কয়েকদিন পর আমি আর রাইসা বসে আছি।
– এমন সময় কথা ম্যাডাম দরজার দাঁড়িয়ে বলল ‘ আসবো?’
– হুম আসেন অনুমতি নেওয়ার কি আছে?
– মিঃ রাজ ম্যাডাম ডাকবেন না। আমাকে নাম ধরেই ডাকবেন। কারণ আমি আপনার কাছে ঋণী। আর হ্যাঁ রাইসাকে নিয়ে যাচ্ছি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিতে।
– আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিলাম।
– কথা ম্যাডাম রাইসাকে নিয়ে স্কুলে চলে গেল।
– আচ্ছা বন্ধু বড় হয়ে তুমি কি হবে?
-ডাক্তারর হবো বন্ধু। অসুস্থ মানুষকে সেবা করব। জানো বন্ধু আমি বড় হয়ে আমার বাবাই এর পা চিকিৎসা করে ভালো করব। তাই ডাক্তার হবো।
– রাইসার সাথে কথা বলতে বলতে স্কুলে এসে পড়ে কথা।
– ভর্তির সময় জেসিকা ম্যাম জিজ্ঞেস করে মামনি তোমার বাবার নাম কী?
– আসসালামু আলাইকুম। ম্যাম বাবাই বলেছে কারো সাথে কথা বলার আগে ‘ সালাম দিতে হয়।
– আর হ্যাঁ আমার বাবার নাম ‘ জিসান আহম্মেদ রাজ! ‘
– ওহ্ গুড। তোমার আম্মুর নাম কী?
– জিসান আহম্মেদ রাজ।
-এটা তো তোমার বাবার নাম তোমার আব্বুর নাম বলো।
– আমার বাবাই আমার মম আমার।
– জেসিকা ম্যাডাম মায়ের নামের জায়গায় ‘ কথা চৌধুরি লিখেন।
– রাইসা আমার প্রতি অভিমান করে বলছে!
– আচ্ছা।
– রাইসাকে নিয়ে স্কুল থেকে বের হয়ে জিজ্ঞেস করলো ‘ বন্ধু তোমার মমের নাম জানো না?’
– বন্ধু তোমায় বলেছি না আমার মম মরে গেছে। জানো আমার মম আমার বাবাকে রেখে একটা পঁচা লোককে বিয়ে করেছে। তাই আমার বাবাই আমার মম।
– ওহ্ আচ্ছা বন্ধু।
– রাইসা বাসায় আসলে, গালে -মুখে চুমু দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিলাম। স্কুল কেমন হয়েছে জিজ্ঞেস করলাম।
– এদিকে মাস খানেক পর শুনলাম। কথা ম্যাডামের নাকি জন্মদিন। বাড়িটা সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। অনেক বন্ধু -বান্ধুবীকে দাওয়াত দিয়েছে। রাইসার জন্য অনেক কেনা -কাটা করেছে। আঙ্কেল আমার জন্য একটা পাঞ্জাবি কিনে নিয়ে এসে বলল ‘ রাজ এটা তুমি পরে নিয়ো। ‘
– আমি পাঞ্জাবিটা পরে নিচে নামতেই ‘ কথা ম্যাডাম সবাইকে বলল, এখন আপনাদের সামনে গান নিয়ে আসছে রাজ।
– আমি আর না করতে পারলাম না। গিটার টা নিয়ে যখনি সুর তুলতে যাবো এমন সময় বার্থডে পার্টির একজোড়া কাপলদের দিকে চোখ যেতেই থমকে গেলাম! মৌ এখানে কি করছে!
চলবে ””’
বিঃদ্রঃ ভুলক্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।