বাবার ভালোবাসা পর্ব-২৩

0
588

#বাবার_ভালোবাসা

পর্ব:২৩

লেখা: #রাইসার_আব্বু।

– হঠাৎ নিলয় এসে লাথি মেরে ফেলে দিয়ে বলল’দাঁড়া তোর বিয়ের সখ মিটাচ্ছি ।

– রাইসা দৌড়ে গিয়ে কথার পা জড়িয়ে ধরে বলল’ মম বাবাইকে ওই লোকটা মেরে ফেলবে। মম তুমি না করো না। তারা যেন না মারে, আমার বাবাইকে। আমার বাবাই ভালো। মম তুমি না বাবাইকে বিয়ে করবে। বলো না বাবাইকে যেন না মারে বাবাই তো মরে যাবে। মম তোমার পায়ে ধরে বলছি বাবাইকে বাঁচাও।

– কি বললি? কুত্তার বাচ্চা আমি তোর মম? কোন দুশ্চরিত্রের মেয়ের মা আমি হতে পারি না। কোন পতিতার মেয়ে, এসে আমাকে মা ডাকছে। যত্তসব। এই বলে কথা রাইসাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল। রাইসা এসে ঠিক আমার পায়ের কাছে পড়ল। নীলয়ের সাথে, আরো কয়েকজন কথার বন্ধু এসে মারতে লাগল। রাইসা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল’ আপনারা আমার বাবাইকে মারবেন না। জানেন না আমার বাবাই ছাড়া আমার আর এই পৃথিবীতে কেউ নেই। একটা মা ছিল, সে চলে গেছে। আপনারা আমাকে মারেন তাও আবার বাবাইকে মারবেন না। বাবাইকে মারলে আমি মরে যাবো। সবাই মারা বাদ দিয়ে দাড়িয়ে আছে সবাই রাইসার কথা শুনে নীস্তব্ধ হয়ে গেছে।

.
আমি রাইসাকে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছি। ঠিকমতো উঠে দাঁড়াতে পারছি না। রাইসাকে নিয়ে কোন মতো উঠে দাঁড়ালাম। কথার দিকে তাকিয়ে দেখি কথার চোখ নিয়ে অগ্নি স্ফুলিংঙ্গ বের হচ্ছে। মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই আমাকে ধ্বংস করে ফেলবে। রাইসাকে নিয়ে যখন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাচ্ছি। এমন সময় কথার বাবা ডাক দিয়ে বলল’ কি হলো, জামাই বাবাজি কোথায় যাচ্ছো? আর তোমরা আমার জামাই বাবাজীকে এভাবে মারলে কেন? আর রাইসাকে এভাবে মেরেছে কেন? ছোট্ট মেয়েটাকে এভাবে কেউ মারে? রাইসা দৌড়ে কথার বাবার কাছে চলে গেল। রাইসার কান্ড দেখে অবাক হয়ে গেলাম।

.
নানু ভাই, দেখ পঁচা আঙ্কেলরা আমার বাবাইকে মেরেছে। আমার বাবা কী খারাপ হতে পারে? তুমি সবাইকে ইচ্ছতে বকে দাও তো। আর সবাইকে বলো বাবাই এর কাছে সরি বলতে। তাই বুঝি। এই নাজমুল দরজাটা লাগিয়ে দে তো, আর হ্যাঁ জামাই বাবাজীর জন্য একটা গাড়ি রেডি রাখ। জামাইকে তো আর এভাবে পাঠাতে পারি না। নাজমুল যখন দরজা বন্ধ করে ফেলল, রাইসা অবাক হয়ে গেল। কি হচ্ছে বুঝতে পারছে না।

.
আর হ্যাঁ জামাই বাবাজী, খুব সুন্দর মাস্টার প্ল্যান করেছিলে। আর মেয়েটাকে মাশাল্লাহ্ অনেক বড় অভিনেত্রী বানিয়েছো। তা না হলে সবার মন জয় করে নেয় ক্যামনে। আমার মেয়েটাকে বিয়ে করে সব সম্পত্তি তোমার করে নিতে চেয়েছিলে। কিন্তু পারিনি। তোমার সব গোঁমড় ফাঁস হয়ে গেছে। আর এই যে কথা মামনি, তোমাকে বলেছিলাম না যা করো ভেবে করো। এসব ছোটলোকের বাচ্চা সুঁচ হয়ে ঢুকে ফাঁল হয়ে বেরিয়ে যায়। ভাগ্যিস বিয়ের আগে ভিডিওটা হাতে পেয়েছি।
.
আঙ্কেল আপনার এ সম্পদের প্রতি আমার বিন্দুমাত্র চাহিদা নেই। আপনার মেয়েই জোর করে বিয়ে করতে চেয়েছিল। আর আপনাদের কাছে যে ভিডিও সেটা আমি না। আমি এসবের কিছুই জানি না। আর কথা প্লিজ বিলিভ করো, তুমি তো জানো আমি কেমন?

.
কথা আমার কাছে এসে ঠাস করে গালে চড় বসিয়ে দিয়ে বলতে লাগে ‘ কিরে কুত্তা সেদিন হসপিটালে ছিলি? নাকি সারারাত মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করছিস? আর ভিডিও কি এডিট করা যায়। তোর মতো কুত্তা আমার পায়ের স্যান্ডেল এর যোগ্য না। তুই আর তোর মেয়ে দু’টাই চরিত্রহীন। কোন জানি পতিতার গর্ভে তোর মেয়ের জন্ম!
– কথা আর একটা কথাও না। আমাকে নিয়ে বলো, আমার রাইসাকে নিয়ে একটা কথা বললেও তোমার অস্তিত্ব রাখবো না।
তাই বুঝি নষ্টা মেয়েকে নিয়ে এতো কথা।

– ঠাস! অনেক সহ্য করেছি আর না। আমার কলিজার টুকরাকে নিয়ে আর একটা কথা বললে, তোর মতো হাজার কথাকে খুন করতে আমার হাত কাঁপবে না। আমার কলিজা ধরে টান দিয়েছিস।
– তাই বুঝি চরিত্রহীনের মুখে কথা ফুটেছে। চরিত্রহীনের মেয়ে বড় হলে পতিতা হবে। তুই তোর মেয়ে দিয়ে আমাকে ফাঁসাইছর। তোর মুখটা দেখলে আমার ঘৃণা লাগে।

– কি বললি, রাইসা পতিতা হবে? কথার গালে ঠাসঠাস করে চড় লাগিয়ে দিলাম। কেউ কোন কথা বলছে না। কথা চড় খেয়ে মাটিতে পরে গেছে।

.
এই নাজমুলেরা তোরা দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছিস? হারামিটাকে আদর করে দিয়ো আসই। এদিকে নিলয় প্রথমেই এসে লাথি দিয়ে আবারো ফেলে দিল। এলোপাতাড়ি মারতেছে। কথা চিৎকার পেরে কান্না করছে। আর বলছে তোমরা আমার বাবাইকে মেরো না। আর মেরো না। আল্লাহ সব দেখছে। আমি কিন্তু আল্লাহকে বিচার দিবো। মেরো না কি হলো বাবাইকে মেরো না।

– এদিকে, কথা বারবার বলছে, কুত্তাটাকে মার মারতে মারতে মেরে ফেল। আমার ভালোবাসার সাথে প্রতারণা করেছে।
– রাইসা কথাকে গিয়ে অনুনয় বিনয় করে বলে ‘ মম এবার না করো না। বাবাইতো মরে যাবে। তুমি না বলেছো আমার বাবাইকে কখনো কষ্ট দিবে না? দেখো বাবাই এর শরীর থেকে রক্ত ঝরছে। বাবাইকে মারতে না করো। ও মামনি বলো না।
– এই চুপ কর, কে তোর মম? আমি তোর মম না। মম ক্যামনে হলাম?
– বা’রে তুমিই তো বলেছিলে? আমার মম হবে। আমার বাবাইকে বিয়ে করবে। কিন্তু এখন কেন কষ্ট দিচ্ছো বাবাইকে?প্লিজ সবাইকে বলো তারা যেন বাবাইকে না মারে। এই এই আপনারা বাবাইকে মারবে না! আমার বাবাইতো মরে যাবে। রাইসা নিলয় এর পায়ে জড়িয়ে ধরে বলল’ আঙ্কেল আর না, অনেক মারছেন আমার বাবাইকে আর মারবেন না। প্লিজ এবার থামেন। নিলয় রাইসাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। রাইসা এবার দৌড়ে গিয়ে কথার দু’পা জড়িয়ে ধরে বলল ‘ ও ম্যাডাম আর কোনদিন মম ডাকবো না। আমার বাবাইকে ছেড়ে দেন। ছেড়ে দেন প্লিজ। বলেন না আর যেন না মারে। আমার বাবাই এর কিছু হয়ে গেলে কে আমাকে ঘুম পাড়াবে? কে আমাকে খাইয়ে দিবে? কে আমাকে মা বলে ডাকবে? আমার বাবাই আমাকে অনেক ভালোবাসে। কে আমাকে ভালোবাসবে। ম্যাডাম আমরা এ শহর ছেড়ে চরে যাবো। আমার বাবাইকে ছেড়ে দেন। একটু দয় করেন। কথার বাবা কথার পা থেকে রাইসাকে ছাড়িয়ে গালে কষে চড় বসিয়ে দিল। চড় খেয়ে রাইসা পড়ে গেল। নাক ফেটে রক্ত পড়ছে। নাকের রক্ত হাতে নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে ‘ ও আল্লাহ তুমি নাকি সব দেখো? তুমি না সর্বশক্তিমান। তুমি দেখো না আমার বাবাইকে মারছে। তুমি আমার বাবাইকে বাঁচাও। এই যে দেখো আমার নাক ফেঁটে রক্ত বের হচ্ছে।ও আল্লাহ আমি মন খারাপ করিনি। তোমার কাছে অভিযোগ করিনি। তুমি আমার বাবাইকে বাঁচাও। দেখতেছো তুমি? এখানে কেউ আমার কথা শুনে না ছোট বলে, তুমিও কি শুনবে না? তুমি না সবার কথা শুনো? ও আল্লাহ আমি ছোট মানুষ। কাউকে আঁকটাতে পারি না। সবাই লাথি মেরে ফেলে দেয়। তুমি ছাড়া আমার বাবাইকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। তুমি বাঁচাও বাবাইকে। তুমি জানো না আমার বাবাই ছাড়া আর পৃথিবীতে কেউ নেই। তুমি যদি বাবাইকে না বাঁচাও তাহলে আমাকেও নিয়ে নাও। কি হলো? দেখো না আমি কাঁদছি। ও আল্লাহ দেখ বাবাইকে মেরে ফেলছে ওরা। দেখ আমার বাবাই এর মুখ দিয়ে রক্তবের হচ্ছে।

– রাইসার কথা শুনে কথা আর চুপ থাকতে পারল না। সবাইকে বলল ‘ থাম তোমরা। অনেক হয়েছে। ছেড়ে দাও। জীবনে বেঁচে থাকলো কারো সম্পত্তির প্রতি লোভ করে কোন মেয়ের জীবন নষ্ট করবে না। আর এক কাজ করো, অ্যাম্বুলেন্স করে হসপিটাল পাঠিয়ে দাও। মরে গেলে আবার বেজাল হবে।
.
কথার বাবা একটা অ্যাম্বুলেন্স ডেকে হসপিটাল পাঠিয়ে দিল। রাইসা অ্যাম্বুলেন্সে করে হসপিটালে যায়। ডাক্তার যখন রাজকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায় তখন রাইসা দরজায় দাঁড়িয়ে কাঁদতে থাকে।

– এদিকে ডাক্তার কণা এসে দেখে বাচ্চা একটা মেয়ে অপারেশন থিয়েটারের বাইরে কাঁদছে। কণা রাইসার দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যিই একটা রাজকন্যা। মনে হচ্ছে চোখ থেকে মুক্তো ঝড়ে পড়ছে। বাচ্চা মেয়েটার নাক দিয়ে রক্তও পড়ছে, কিন্তু সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। ডাক্তার কণা কোন কিছু না ভেবেই বলল ‘
এই যে বাবু তুমি কাঁদছো কেন? তোমার কি হয়েছে?’
.
আন্টি আমার বাবাই এই বলে আরো জুরে কান্না করে দেয়।

.
কি হয়েছে মামনি বল তোমার বাবাই এর কি হয়েছে?
.
বাবাইকে সবাই মেরেছে। এমন সময় নার্স এসে বলল ‘ ম্যাডাম অাপনি যার অপারেশন করবেন, সে রোগীর মেয়ে এটা।
ও আচ্ছা আর কেউ আসেনি?
.
ম্যাডাম আমার বাবাই এর আমার ছাড়া আর কেউ নেই। আর আমারো বাবাই ছাড়া কেউ নেই। বাবাই এর কিছু হয়ে গেলে আমি বাঁচবো না। কাঁদত কাঁদতে।

.
কিছু হবে না মামনি। তোমার তো নাক ফেটে রক্ত পড়ছে। তোমার নার্স আন্টির সাথে যাও, ড্রেসিং করে দিবে ।

.
না বাবাইকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। আমার বাবাই ভয় পাবে।

.
ডাক্তার কণা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে লেট হয়ে যাচ্ছে। তাড়াহুড়া করে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে যায়। ভেতরে গিয়ে দেখে নির্মম ভাবে পিটিয়েছে। বিশেষ করে মাথায় ক্ষতটা বড়। অপারেশন করে ডাক্তার কণা বের হতেই দেখে এখনো রাইসা দাড়িয়ে আছে। রাইসাকে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না রাজের অবস্থা বেশি ভালো না। অনেক ব্লাড গেছে। বাঁচার সম্ভাবনা কম। ছোট্ট মেয়েটাকে বিভাবে বুঝাবে। আর ভাবতে পারছে না কণা, মানুষ মানুষকে এভাবে পেটাতে পারে?

.
রাইসা ডাক্তারকে দেখেই বলল’ম্যাডাম বাবার অবস্থা কেমন? আমার বাবা আমার সাথে কথা বলবে তো?
.
হুম মামনি বলবে, তবে তোমার বাবার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করো। তিনি সব পারেন।
রাইসা ডাক্তারের কথা শুনে ””

চলবে”””

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here