#বাবার_ভালোবাসা।
পর্বঃ১৫
লেখাঃ #রাইসার_আব্বু।
– আমি চিঠি পড়তে পড়তে শেষে দেখলাম ব্র্যাকেটে লিখা, লাঞ্চের সময় তোমার জন্য খাবার নিয়ে এসেছি। ভালো না বাসতে পারলেও আজ আমার সাথে লাঞ্চ করো। আজ তোমার পছন্দের সরষে ইলিশ রেঁধেছি।
– ইতি, অভাগী!
-চিঠিটা পড়ে শেষ করে বুক পকেটে রেখে দিলাম। লাঞ্চের সময় যখন ডেস্ক থেকে উঠে ক্যান্টিনে যাচ্ছি এমন সময় কথা এসে বলল ‘ রাজ চলো লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে। লাঞ্চ করে আসি।
– ম্যাডাম আমি ক্যান্টিন থেকে খেয়ে নিবো।
– ধুর! আসো না। আমিও সবার সাথে ক্যান্টিনে খাবো।
– কথা আমাকে এক প্রকার জোর করেই ক্যান্টিনে নিয়ে গেল। ম্যাডাম আমাকে নিয়ে মৌ এর পাশের টেবিলে বসলো। মৌ টিফিন বাটি থেকে খাবার বের করতেই দেখে আমি কথা ম্যাডামের সাথে খাচ্ছি।
– মৌ আমাকে কথার সাথে দেখে চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারল না। মৌ এর চোখের পানি গড়িয়ে খাবারে পড়ছে। খাবার মুখে দিতে গিয়েও পারছে না। মন চাচ্ছে মৌ এর চোখের পানিটা মুছে দেয়। কিন্তু না সেটা যে আর সম্ভব না।
– কি হলো রাজ খাচ্ছো না কেন? হঠাৎ কথার চোখ গেল মৌ এর দিকে। কথা খেয়াল করল তার পাশের টেবিলে মৌ কাঁদছে।
– এইযে আপনি কাঁদছেন কেন?
– মৌ কিছু বলছে না।
– কি হলো মিসেস মৌ কথা বলছেন না কেন? আর ইউ ওকে?
– মৌ এবার ফুপিয়ে কেঁদে দিল। অফিসের সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। মৌ এর কান্না থামায় কোন লক্ষণ নেই।
– মৌ আপনি প্লিজ কাঁদবেন। বলেন কি হয়েছে।
– মৌ চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল,’ ম্যাডাম আমি সত্যিই পোড়া কপালী। আমি আমার ভালোবাসাকে অপমান করেছি। এখন আমি খেতে গেলেও মনে হয় সে আমার খেতে গেলেও তার স্মৃতিগুলো মনে পড়ে। বাবাকেও হারিয়ে ফেলেছি। সব হারিয়ে ফেলেছি নিজের ভুলের জন্য।
– কথা মৌ এর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল’ আপু আল্লাহ সর্বোত্তম পরিকল্পনা কারী।
আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন সব ঠিক হয়ে যাবে।
– আমার আর খাওয়া হলো না। কেমন যেন শূন্য শূন্য লাগছে। খাওয়া শেষ না করেই রাইসাকে নিয়ে আসতে গেলাম। এদিকে আজ রাইসার স্কুল তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে গেছে। রাইসা স্কুলের সিঁড়িতে বসে কি যেন অাঁকছে। আমি পা টিপে টিপে রাইসার পিছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। রাইসার দিকে লক্ষ করে দেখি রাইসা কি যেন আঁকছে। রাইসার কাছে গিয়েই দেখি, রাইসা, আর্ট খাতায় সুন্দর করে ছবি এঁকেছে। ছবিটাতে দেখা যায় একটা ছেলে আর মেয়ের মাঝে ছোট্ট একটা বাচ্চা। বাচ্চাটাকে ছেলে আর মেয়ে জড়িয়ে ধরেছে। রাইসা আমাকে দেখেই ছবিটা লুকিয়ে ফেলল।
-আমি আর কিছু বললাম না। রাইসাকে নিয়ে গাড়িতে করে রওয়ানা দিলাম।
-গাড়িতে আসতে আসতে, রাইসা বলল’বাবাই তোমার বাবাই কি তোমাকে আমার মতই আদর করেছে?’ তুমি যেমন আমাকে আদর করে খাইয়ে দাও তেমনি তোমাকেও কি আদর করেছে?
-রাইসার কথা শুনে ভয়ানক সে কথাগুলো মনে পড়ে গেল। এখনও বাবার সে কর্মকান্ডের কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে মা’র কথা। মা’র কথা মনে পড়তেই চোখে জল এসে যায়। বুকের ভেতরে ১৮ বছর আগের স্মৃতিগুলো ঝলমলে ভেসে ওঠল। চোখের সামনে মায়ের সেই মায়াবী চেহারাটা ভাসতেই চোখের কোণে পানি এসে গেল। রাইসাকে কিছু বলতে পারলাম না।
– ছোট্ট মেয়েটাও হয়তো বুঝতে পারল। তাই আর কিছু বলল না।
– অফিসে আসতেই পিয়ন বলল ‘ কথা ম্যাডাম ডেকেছে। ‘
– আমি রাইসাকে ডেস্কে বসিয়ে রেখে, কথা ম্যাডামের রুমে গিয়ে দেখি ম্যাডাম কে বললাম ‘ ম্যাডাম ডেকেছেন আমার?’
– হ্যাঁ বসো।
– আচ্ছা রাজ আমাকে শাড়িতে কেমন লাগছে?
– ম্যাডাম শাড়িতে বাঙালি মেয়েদের পোশাক। আর প্রবাদে আছে শাড়িতেই নারী। আর শাড়িতে আপনাকে ভালোই লাগে। তবে শাড়িটা আরো ভালো করে পড়তে পারতেন। ব্যাপার না আস্তে আস্তেই পারবেন।
– তুমি কি আমার শাড়ি পড়ার দায়িত্ব নিবে সারাজীবনের জন্য কথা ফিসফিস করে বলল।
– ম্যাডাম কিছু বললেন আমায়?
– না বললাম, শাড়ি পড়াটা শিখতে হবে।
– আচ্ছা রাজ আমি কি দেখতে এতই খারাপ?
– না খারাপ হবেন কেন?আপনি দেখতে অনেক কিউট। যে কেউ দেখে আপনার প্রেমে পড়ে যাবে।
– আমি তো চাই না যে কেউ আমার প্রেমে পড়ুক। আমি চাই শুধু একজন আমার প্রেমে পড়ুক।
-রাজ দেখতো আমার কপালের টিপটা টিক জায়গায় আছে কিনা?
– আমি কথা ম্যাডামের মুখের দিকে এই প্রথম ভালোভাবে তাকালাম। ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে দেখি ম্যাডামের কপালের টিপটা বড্ডবেমানান লাগছে। কারণ টিপটা ঠিক জায়গায় নেই। এক প্রকার টিপটা দেখে হেসেই দিলাম।
– কি হলো হাসতেছো কেন?
– কি হলো বলো রাজ।হাসছো কেন? বলো, টিপটা ঠিক জায়গায় আছে?
– ম্যাডাম টিপটা বাম দিকে বেশি সরে গেয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে ছোট্ট বাচ্চারা যেমন সাজু-গুজু করলে সবকিছু উলট-পালট হয়ে যায় তেমনি আপনারো হয়ে গেয়েছে।
– আচ্ছা। তুমি যদি কিছু মনে না করো, তাহলে টিপটা ঠিক জায়গায় বসিয়ে দিবে।
– সরি ম্যাডাম এটা সম্ভব।
– রাজ সরি বলার কি আছে, আমি তোমাকে আমার বন্ধু মনে করি। আর বন্ধু হয়ে এটা পারবে না।
– ম্যাডাম আমরা মনে হয় বন্ধুত্বের লিমিট ক্রস করে ফেলছি।
– ধ্যাত টিপটা ঠিক করে দিবে এতে এত কিছু বলার কি আছে।
– প্লিজ রাজ, সবাই দেখে হাসুক এটা চাও। অফিসে রাফসান
ফাইল দিতে এসে আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো। তাই তোমাকে বললাম।
– আচ্ছা ঠিকআছে আমি, ম্যাডামের টিপটা তুলে যখন কপালের মাঝখানে বসিয়ে দিতে যাবো ঠিক তখনো ম্যাডাম অ্যাঁ করে ওঠল। ম্যাডাম চোখে কি হলো?
– রাজ দেখতো চোখে পোকা গিয়েছে নাকি?
– আমি চোখে ফুঁ দিচ্ছি এমন সময় মৌ ম্যাডামের সাইন নিতে এসে দেখে আমি ম্যাডামের মুখটা কাছে নিয়ে কি যেন করছি।
– মৌ ভাবছে আমি কথাকে কিস করছি। মৌ চোখ বন্ধু করে আছে। কারণ সে এসব সহ্য করতে পারবে না। তাই চোখ বন্ধ করেই বলল ম্যাম আসবো?
– কথা ম্যাডাম মৌকে আসতে বলল।
– মৌ রুমে এসে ম্যাডামকে বলল’ ম্যাডাম এখানে একটা সাইন লাগবে।
– ম্যাডাম সাইন দিয়ে মৌকে পড়ে আসতে বলল।
– মৌ চলে গেলে আমি ম্যাডামকে বললাম ‘ ম্যাডাম আমাকে কেন ডেকেছিলেন?’
– ম্যাডাম নতুন প্রজেক্টের ফাইল দেখিয়ে বলল’ মিঃরাজ আপনাকে এ সাইট হ্যান্ডেল করতে হবে। প্রায় বিশ কোটি টাকার কাজ। তাই বিশস্ত কাউকে পাচ্ছি না ।
– ম্যাডাম এত বড় দায়িত্ব আমি কি নিতে পারবো?যদি কোন চিট করি?
– রাজ আমি তোমাকে আমার চেয়ে বেশি বিশ্বাস করি। তাই কাজটা দেখাশোনার দায়িত্ব তুমিই নাও।
-আচ্ছা ম্যাডাম আমার সবটা দিয়ে চেষ্টা করবো।
– ঠিক আছে এখন তুমি আসো।
– আচ্ছা ম্যাডাম।
– আর হ্যাঁ,নীল শার্টে তোমাকে সত্যিই খুব সুন্দর লাগছে।
– এদিকে মৌ রাইসাকে আমার ডেস্কে বসে থাকতে দেখে, রাইসার কাছে অনেকগুলো চকলেট নিয়ে আসে। অনেক
মামনি কেমন আছো?
– জি আন্টি ভালো। আপনি?
– রাইসা আন্টি ডাকে না মমকে। আমি না তোমার মম?
– না আপনি আমার আন্টি। আমার বাবাই আমার মম।
– আমি মৌ আর রাইসার পিছনে দাঁড়িয়ে আছি।
– রাইসা মামনি মম ডাকো তোমাকে অনেক চকলেট দিবো?
– ছি, আমি চকলেট খায় না। চকলেট খেলে দাঁতে পোকা ধরে। আর আপনি চলে যান। আমার বাবাই দেখলে কষ্ট পাবে। কি হলো কাঁদছেন কেন?
– একবার মম বলে ডাক মা। ডাকটা শুনেই চলে যাবো। রাইসা মামনি আমার দেখ তোমার মম কান্না করছে একবার মম ডাকো না। আমাে বুকটা যে মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে।
– প্লিজ চলে যান। আপনি আমার মম হতে পারেন না। মনে নাই আমার বাবাই যখন দাঁড়াতে পারত না। ক্রাচে ভর করে হাঁটতো তখন চলে গিয়েছেন। আমি না আপনাকে মম ডেকে কান্না করেছি। আপনি শুনেননি। জানেন বাবাইকে যখন আপনার বাবা ধাক্কা মেয়ে ফেলে দিয়ে ক্রাচ ভেঙে দিয়েছিল। সেদিন আমারর বাবা অনেক কেঁদেছিল। আর আপনি তখন পঁচা আঙ্কেলটাকে কবুল বলেছিলেন। আমার বাবা ভাঙা ক্রাচে ভর করে আর আমাকে ধরে উঠেছিল। বলেছিলাম আপনাকে আমার বাবাই এর কষ্ট হচ্ছে আপনি কোন কথা বলেননি। কথা আন্টির বার্থডেতে আপনাকে মম ডাকার জন্য সবার সামনে কি বলেছেন মনে নাই?
আপনি প্লিজ আর কোনদিন মম ডাকতে বলবেন না। আর কোন দিন চকলেট দিতে আসবেন না। জানেন আমার বাবাই যখন আমাকে বুকে নিয়ে গালে চুমু দেয় তখন কোন চকলেটের কথা মনে থাকে না।
– আমি এবার আর পারলাম না শব্দ করেই কেঁদে দিলাম।
– মৌ আমাকে দেখেই রাইসার সামনে জড়িয়ে ধরল।
– আমি মৌ এর আকস্মিক এ অবস্থা দেখে ঘাবড়ে গেলাম। মৌ আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল’ কতো কিস করতে মন চায় আমাকে কিস করো।’ এই বলে তার ঠোঁট জোড়া আমার ঠোঁটে মিলিয়ে দেওয়ার আগেই মৌ এর দু’গালে কষে চড় বসিয়ে দিলাম।
চলবে”””””
বিঃদ্রঃভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।