বাইজি কন্যা ১৯

0
190

#বাইজি_কন্যা
#লেখা_জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_সংখ্যা_১৯
মুনতাহার চিৎকার, জেবার অস্বাভাবিক উচ্চরব বাড়ির প্রতিটি সদস্যই শুনতে পেলো৷ মুনতাহা জ্ঞান হারালেও জেবা জ্ঞানে ছিলো তাই তার চেঁচামেচি, কান্নাকাটিতেই পুরো বাড়ির পরিবেশ বদলে গেলো। কাজের লোক থেকে শুরু করে অরুণা,শবনম সহ প্রেরণাও ছুটে এলো। প্রথমে তারা থমকালো মুনতাহা’কে জ্ঞানহীন অবস্থায় মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে। অনেকেই ধারণা করে নিলো হয়তো শরীর খারাপ তাই মুনতাহা জ্ঞান হারিয়েছে। জেবার স্বভাব সম্পর্কে সবাই অবগত তাই স্বাভাবিক ঘটনা ভেবেই সকলে এগিয়ে এলো। অরুণা ব্যস্ততার সঙ্গে এসে মুনতাহাকে ধরলো। প্রেরণাকে উদ্দেশ্যে করে বললো,
-‘ হেরে ছোট বউ এবার কি সুখবর টুখবর পাবো নাকি! ‘
তখনি জেবা হাত উঁচিয়ে অস্ফুটস্বরে বললো,
-‘ ননদিনী…’
জেবার হাত সই সকলেই সোজা জানালা দিয়ে ঘরের ভিতরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। ফ্যানের সাথে রোমানা’কে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখে কেউ ‘ওমাগো’ কেউ ‘হায় হায় ‘ কেউ ‘আল্লাহরে কি সর্বনাশ ঘটলো!’ বলে চিল্লিয়ে ওঠলো। অমন লোমহর্ষক দৃশ্য দেখে একটি প্রাণও স্বাভাবিক থাকতে পারলো না। নিমিষেই চিৎকার, চেঁচামেচি, ক্রন্দনধ্বনিতে ছেঁয়ে গেলো পুরো পাঁচফোড়ন গৃহ। ওদের মধ্যে সবচেয়ে সাহসী ছিলো শবনম। তাই সকল’কে রেখে সেই প্রথম ছুটে গেলো। কিন্তু ভিতর থেকে দরজা লাগানোতে ভিতরে প্রবেশ করতে পারলো না। কয়েকজন কাজের লোক দরজা ভাঙার ব্যবস্থা করলো, কয়েক জন ছুটে গেলো বাড়ির অন্যান্য সদস্য’কে খবরটা জানাতে। আর দু’জন কাজের মহিলা মুনতাহা’কে তার রুমে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অরুণা’কে সাহায্য করলো। জেবা এককোণে বসে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। সহজসরল পাগলাটে স্বভাবের মেয়েটা বেহুঁশের মতো কাঁদছে। তার ক্রন্দনধ্বনি শুনতেই কি ভয়ানক লাগছে যেনো এই কান্নায় কারো মৃত্যু শোকের চেয়েও ভয়ানক শোক প্রকাশ পাচ্ছে। অলিওর চৌধুরীর স্বপ্নের গৃহের চারপাশে যেনো আজ শুধু অভিশাপের সুর।
আচম্বিত শোকাভিভূত হয়ে গেলো জমিদার বাড়ি। প্রথমে বাড়ির প্রতিটি সদস্য, তারপর পুরো গ্রামের মানুষদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লো শোক সংবাদটি। আশেপাশের প্রায় চার,পাঁচ গ্রামের মানুষদের মাঝেও ছড়িয়ে গেলো। বাড়ির কাজের মহিলা আর শবনম মিলে রোমানার লাশ নামিয়ে গায়ে কাপড় ঢেকে দিলো। পল্লব চৌধুরী শহরে তাই তার ফিরতে বেশ সময় লাগবে। অলিওর চৌধুরী, পলাশ চৌধুরী, প্রণয় চৌধুরী, রঙ্গন চৌধুরী সকলেই বাড়িতে উপস্থিত হলো৷ অঙ্গন কোথায় আছে কেউ জানেনা। বাড়ির এই ভয়ানক পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য অলিওরের পাশে দাঁড়ালো পলাশ এবং প্রণয় চৌধুরী। ভিতর থেকে কান্নার আওয়াজ আসছে, ওঠানের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে অলিওর চৌধুরী, দু’পাশে তার দুই ছেলে পলাশ এবং প্রণয়৷ রঙ্গন বড়ো ওঠানের এক কোণে মাথা নিচু করে ভূমিতে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বাড়ির ছোট সদস্য হওয়াতে সকল ঝড় থেকে সে রক্ষা পেয়ে যাবে। কিন্তু যে প্রাণটি তাদের থেকে চিরজীবনের জন্য হারিয়ে গেলো তাকে কি ফিরে পাবে? কঠিন পীড়ায় বক্ষঃস্থল ক্রমাগত চূর্ণবিচূর্ণ হতে শুরু করলো রঙ্গনের। আপনমনে বার বার একটি প্রশ্নই জেগে ওঠলো, কেন সে পালিয়ে গেলো? কেন সে সাহস করে থেকে গেলো না। থাকলে অন্তত আজ রোমানা এই পরিস্থিতির স্বীকার হতো না।

পৃথিবীতে ভালোবাসা এমন এক অনুভূতি যে অনুভূতি কখনো সুখে বুক ভরিয়ে তুলবে, কখনো এক বুক দহনে হৃদয়’কে দগ্ধ করে তুলবে।ভালোবাসা যেমন তোমাকে গড়ে তুলবে আবার তেমনি ধ্বংসও করে দেবে। ভালোবেসে এক বুক দহনে দগ্ধ হয়ে নিজেকেই ধ্বংস করে দিলো রোমানা। কিন্তু আফসোস রেখে গেলো গুটিকয়েক মনে। বাবা,ভাই’কে অভয় দিয়ে রোমানার কক্ষে পা বাড়ালো প্রণয় কিন্তু তাকে কে অভয় দেবে আজ? রোমানার মৃত্যু তাকে ঠিক কতোখানি নাড়িয়ে দিয়েছে কাকে বোঝাবে সে? এতো সুন্দর মনের একটি মানুষ’কে এতো সহজে, এতো তাড়াতাড়ি হারিয়ে ফেলবে তা কখনো কল্পনাও করতে পারেনি প্রণয়। কেমন যেনো হাঁসফাঁস লাগছে। রোমানার কক্ষ থেকে বেশ দূরে কাজের লোক,জন বসে কান্না করছে। ফাঁসির মরা বলে অনেকে ভয়েই ভিতরে যাচ্ছে না। কক্ষের ভিতরে শবনম ছাড়া শুধু দুটো কাজের মেয়েকে দেখলো প্রণয়। জানালার বাইরে বসে জেবা কাঁদছে। সমস্তটা বুঝে এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল সে। গুরুগম্ভীর প্রণয় চৌধুরীর পরিবর্তে আজ এক অন্য প্রণয়কে দেখলো শবনম। তার বিক্ষিপ্ত চেহেরাটি দেখে ডুঁকরে কেঁদে ওঠলো সে৷ আর্তনাদের সুরে বললো,
-‘ ভাই গো এটা কি হয়ে গেলো!’
প্রণয় ধীরপায়ে এগিয়ে এসে রোমানার নিথর দেহের পাশে হাঁটুগেড়ে বসলো। এমন কঠিন মূহুর্তে কঠিন মানুষ’টি একটি হাত বাড়িয়ে রোমানার ললাটে হাতের তালু চেপে ধরলো, ধীরে ধীরে সে হাতটি নিচের দিক নামিয়ে উল্টে যাওয়া দু’টি চোখ বন্ধ করে দিলো৷ তারপর ঘাড় বাঁকিয়ে শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো শবনমের দিকে, প্রখর সে দৃষ্টিজোড়ায় শীতলতা মিশিয়ে, কন্ঠ খাদে নামিয়ে বললো,
-‘ ভাবি ওদের নিয়ে বাইরে যান। ‘
সকলকে নিয়ে শবনম বেরিয়ে গেলো। প্রণয় এবার তার শীতল দৃষ্টিজোড়া নিক্ষেপ করলো রোমানার বিধ্বস্ত মুখশ্রী’তে। ক্ষণকাল সে মুখে তাকিয়ে থেকে একহাতে পুরো মুখ বুলিয়ে দিলো৷ তারপর একটু মাথা নিচু করে রোমানার কপালে চুমু খেলো। একটি হাত চেপে ধরে বললো,
-‘ এ পৃথিবী’তে আমি আমার জীবনের প্রথম এবং শেষ ক্ষমাটুকু তোমার কাছে চাইলাম রোমানা,আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও তোমাকে ভালোবাসতে না পাড়ার জন্য, আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও তোমার পাশে না থাকার জন্য। ‘
কথাগুলো শেষ করে রোমানার মাথায় হাত বুলিয়ে ওঠে পড়লো৷ আশপাশে সচেতন দৃষ্টি ফেলে কিছু খোঁজার চেষ্টা করলো। যা খুঁজ ছিলো তা পেয়ে চাপা একটি নিঃশ্বাসও ত্যাগ করলো। কক্ষের একপাশে থাকা টেবিল থেকে ত্বরিতগতি’তে রোমানার লেখা শেষ চিঠিটি নিয়ে নিজের কাছে অতিগোপনে রেখে দিলো৷ রোমানা হয়তো তাকে শেষ কিছু কথা বলে গেছে। সে কথাগুলো সকলে জেনে গেলে গতরাতে ঘটে যাওয়া ঘটনাও সকলের সামনে প্রকাশ পেয়ে যাবে। যে মেয়েটা আর নেই সেই মেয়েটার জীবনে ঘটে যাওয়া অঘটনটুকু,সর্বনাশটুকু, লজ্জাটুকু আর কেউ না জানুক। আমাদের সমাজটা এমন যে রোমানার আকস্মিক মৃত্যু’তে তারা যতোটা সমবেদনা জানাবে তার জীবনে ঘটে যাওয়া দূর্ঘটনাটুকু জানতে পারলে ধারালো ভাবে ঘৃণায় মুখ ফিরিয়েও নেবে। হয়তো ঘরের লোকেরাই বলবে, এমন কলঙ্ক নিয়ে মরে যাওয়াই উচিৎ। অমন কলঙ্কিনীর স্থান এই জমিদার বাড়িতে হতে পারেনা! ‘

প্রেরণা বার বার জ্ঞান হারাচ্ছে। ওদিকে মুনতাহার অবস্থাও সুবিধার নয়৷ জেবাও স্বাভাবিক নেই। অরুণা আর শবনম মিলে সবটা সামলাচ্ছে। এমন অবস্থায় অলিওর চৌধুরীর কাছে খবর এলো, রোমানার বাবার বাড়ির সদস্যরা গেটের বাইরে ভাঙচুর করছে, গ্রামবাসীরাও ক্ষেপে গেছে তাদের ভিতরে আসতে না দেওয়ার জন্য৷ জমিদার বাড়ির লোকজনদের আচরণেই তারা সন্দেহ করছে রোমানা সত্যি আত্মহত্যা করেছে নাকি তাকে খুন করা হয়েছে? গ্রামবাসীদের মনে এমন সন্দেহ ঢুকিয়েছে রোমানার চাচা’রা। রোমানার চাচারাও তাদের ভাতিজির আকস্মিক আত্মহত্যা মেনে নিতে পারেনি। তাই ছুটে এসেছিলো এটা জানতে কি কারণে এমনটা ঘটলো। কিন্তু এসে দেখলো জমিদার বাড়িতে বাইরের একটি সদস্যকেও ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না৷ এতেই তাদের মনে বিরাট সন্দেহ বাসা বাঁধলো। সঙ্গে সঙ্গে প্রবাসী ভাই’কেও ফোন দিয়ে সবটা জানালো। অলিওর চৌধুরী’কে যখন রোমানার বাবা ফোন দিয়ে হুমকি দেয় তখনি অলিওরের চৈতন্য ফেরে। আজ যদি পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে না যেতো এই হুমকি সহ্য করতোনা সে। কিন্তু পরিস্থিতিতে পরে দাঁতে দাঁত চেপে সবটা হজম করলো। বাইরের মানুষদের সঙ্গে ক্ষমতার জোরে লড়াই করা যায় কিন্তু নিকট আত্মীয়ের সঙ্গে লড়াই করাটা খুব কঠিন। কারণ এখানে মিশে থাকে আবেগ,ভালোবাসা,শ্রদ্ধা, স্নেহ। তাছাড়া রোমানাও তাদের ভীষণ আদরের,স্নেহের,ভালোবাসার৷ ফাঁসির মরা,আত্মহত্যা, পুলিশ কেস হবেই। তারওপর রোমানার বাবার বাড়ির লোকজন তাদের বিরুদ্ধে চলে গেছে তাই উপায় না পেয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো অলিওর। প্রণয় বাবাকে ধরে বললো,
-‘ বাবা চিন্তা করবেন না সবটা সামলে নেবো আমি।’
এদিকে পলাশের মাথায় কূটবুদ্ধি ভর করলো। সে কাউকে কিছু না বলে কারো সহায়তা না নিয়ে রোমানার কক্ষে ঢুকে পুনরায় রোমানা’কে শাড়ি দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখলো। এদিকে গেট খুলে দেওয়ায় গিজগিজে মানুষ ছুটে ভিতরে প্রবেশ করলো। প্রণয় পলাশের কর্মকাণ্ডে বাঁধা দেওয়ার সুযোগটুকুও পেলো না। পলাশ তাকে ধমক দিয়ে ফিসফিস করে বললো,
-‘ ফাঁসির লাশ পুলিশ ছাড়া নামাতে হয় না। মাতব্বরি করে নামাইছে, এখন যদি পুলিশ এসে বলে আমরা মেরে ফেলে বলতাছি একাই মরছে,তখন কি হবো আমাদের বিশ্বাস করবো? কিন্তু এই ঝুলা দেইখাই বিশ্বাস করবো যে ফাঁসি দিয়ে নিজেই মরছে। ‘
গ্রামবাসী’রা একে একে প্রত্যেকে গিয়েই রোমানার লাশ দেখতে লাগলো। সকলেই ‘আহারে’ সূচক সমবেদনা জানালো৷ রোমানার চাচারা অলিওর’কে চেপে ধরলো। সমানতালে হুমকি দিতে শুরু করলো,
যদি এর পিছনে তারা কেউ জড়িত থাকে প্রত্যেক’কে কোমড়ে দড়ি বেঁধে জেলে নিয়ে যাবে৷ একদম ফাঁসিতে ঝুলিয়েই মারবে সকলকে! যদিও প্রেরণার অবস্থা, বাড়ির সকলের অবস্থা দেখে কিছুটা হলেও সন্দেহ কমলো তবুও অনেকে স্বস্তি পেলো না।
[২৬]
লাশ স্পর্শ করা নিষেধ, সকলেই অপেক্ষা করছে পুলিশ আসার জন্য৷ বিষয়গুলো পুলিশ অবদি পৌঁছাতোই না যদি রোমানার চাচারা এসে হানা না দিতো৷ গ্রামবাসীরা সকলেই একবার করে লাশ দেখে যাচ্ছে। সকলে প্রকাশ্যে হায় হুতাশ করলেও ভিতরে ভিতরে ঠিক সন্দেহ করছে,কেউ কেউ আবার ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। গ্রামের একজন মহিলা তো বলেই ফেললো,
-‘ আহারে মেয়াডা আত্মহত্যা করলো, জানাজাও পাবো না সারাজীবন জাহান্নামের আগুণে পুইড়া মরণ লাগবো। ‘
কেউ বললো,
-‘ খালি কি জানাজা গোরস্তানেও জায়গা পাবো না৷ ‘
সকলের এমন কথাবার্তা শুনে রঙ্গন ধমক দিলো। রঙ্গনের ধমক খেয়ে মুখটা বেশ কাচুমাচু করে সরে গেলো মহিলারা৷ সন্ধ্যার দিকেই শারমিন সহ বাইজি গৃহের সকলেই খবর পেয়েছে রোমানার আত্মহত্যার। কিন্তু ভিতরে সবাই যেতে পারছে,লাশ মেয়েদের সকলকেই দেখতে দিচ্ছে এই খবর পাওয়া মাত্রই সকলে সেখানে যাওয়ার জন্য শারমিনের কাছে অনুমতি চাইলো৷ শারমিন প্রথমে অনুমতি দিলো না। কিন্তু যখন শাহিনুর কান্নায় ভেঙে পড়লো, আর বললো,
-‘ আম্মা ঐ আপাটা খুব ভালো। আমাকে খুব আদর করতো ঐ যে একদিন ফুল চুরি করতে গেলাম সেদিন ঐ আপা আমাকে আর সখী’কে অনেক আদর করছে। ও আম্মা আমি আপারে দেখতে যাবো। তোমার দুইটা পায়ে পড়ি আম্মা আমারে যাইতে দেও। ‘
শাহিনুরের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত রাজি হলো শারমিন৷ এবং সিদ্ধান্ত নিলো সে নিজেও যাবে সকলের সঙ্গে। বাইজি গৃহের সকলেই পাঁচফোড়ন গৃহে প্রবেশ করলো। আজ আর কারো কোনদিকে খেয়াল নেই৷ আজ আর নেই কোন বিধিনিষেধ। শারমিনের হাতটি শক্ত করে চেপে ধরে বেশ জড়োতা নিয়ে গৃহের ভিতরে প্রবেশ করলো শাহিনুর৷ মায়ের হাত ধরেই প্রথম পা রাখলো জমিদার বাড়ির সদর দরজায়। শারমিন,শাহিনুর সহ সকলেই যখন রোমানার কক্ষে প্রবেশ করলো,তখন কয়েকজন মহিলা পুলিশ রোমানাকে নামিয়ে গলা থেকে শাড়ি খুলছে। হঠাৎ বাইজি চুমকি শারমিন’কে নিচু স্বরে বললো,
-‘ আপা ফাঁসির মরায় তো চোখ উল্টাই থাকে। এর তো চোখ উল্টায় নাই এইডা আসলেই আত্মহত্যা তো? ‘
এহেন কথাশুনে শাহিনুর একটু উঁচু গলায়ই বললো,
-‘ আম্মা এই আপারে কি কেউ মাইরা ফালাইছে! ‘
ভারী বর্ষণের মাঝে আচম্বিত যেমন বজ্রপাত ঘটে ঠিক তেমনি শাহিনুরের বলা কথাটি সকলের কর্ণকুহরে বজ্রপাতের ন্যায় আঘাত করলো । বিস্ফোরিত কয়েক জোড়া দৃষ্টি পড়লো মা, মেয়ের ওপর। শারমিন’কে নিজ গৃহে দেখে অলিওর অবাক হলো, কেমন যেনো অদ্ভুত এক শক্তিও পেলো। পলাশ আর প্রণয়ের দৃষ্টি স্থির হয়ে রইলো শাহিনুরের নিষ্পাপ মুখশ্রীতে। মহিলা পুলিশ’দের মধ্যে একজন ওঠে এসে শাহিনুরের কাঁধে হাত রাখলো,প্রশ্ন করলো,
-‘ কেন তোমার এমন কথা মনে হলো কেন তুমি কি কিছু জানো? ‘
শাহিনুর অবুঝ দৃষ্টিতে মায়ের দিকে এক পলক চেয়ে আবার মহিলা পুলিশের দিকে তাকালো। বললো,
-‘ ফাঁসিতে মারা গেলে নাকি চোখ উল্টে থাকে আপার তো চোখ উল্টায়নি। ‘
তরতর করে সুস্পষ্ট ভাবে কথাগুলো বলতেই সকলের হৃদপিণ্ড কেঁপে ওঠলো। শাহিনুরের বক্তব্য শুনে প্রণয়ের পুরো শরীরে শীতল স্রোত বয়ে গেলো। তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে একবার পাশে মেজো ভাই পলাশের দিকে তাকালো। কিন্তু শারমিন আঁতকে ওঠে শাহিনুরের একটি হাত চেপে ধরলো৷ আশপাশে সচেতন দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই দেখতে পেলো, পলাশ চৌধুরী কুৎসিত ভাবে,হিংস্র ভাবে, তীব্র ক্রোধ নিয়ে তাকিয়ে আছে তার নুরের দিকে।

চলবে…
[ কার্টেসী ছাড়া কপি নিষেধ ]
[ জীবনে যেমন পরিস্থিতিই আসুক না কেন আত্মহত্যা কখনোই সমাধান নয়। গল্পের স্বার্থে রোমানা চরিত্রটি এমন পাপ করলেও আত্মহত্যা কে সাপোর্ট করিনি। আত্মহত্যা করলে দুনিয়ায় যতোটুক বাজে পরিণতি হয় আমি এই উপন্যাসে উল্লেখ করার চেষ্টা করবো। আত্মহত্যা ইসলামি শরিয়তে জঘন্যতম একটি পাপ, যার একমাত্র শাস্তি জাহান্নাম। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here