বহুরূপী পর্ব ৪

0
616

#বহুরূপী, #পর্ব-০৩
____________
দুপুরের কড়া রোদে সাদা রঙের ফতুয়ার সাথে কালো জিন্স পরে বের হয়েছি। ফতুয়ার হাতাগুলোতে ছোট করে দুইটা ভাঁজ দিয়ে রেখেছি। ডান হাতে পরেছি কালো ফিতার ঘড়ি।
.
সকালে ফিরোজ ভাই ফোন করে জানিয়েছেন, তানিয়া নামের কেউ কুরিয়ারে দেওয়া ঠিকানায় থাকে না। আর সে যেই ফোন নম্বরটা দিচ্ছে সেই সীমই এখনো পর্যন্ত বিক্রি হয়নি। আমিও এমনটাই সন্দেহ করছিলাম, কাজগুলো যে করছে তার নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর সবই ভুয়া।
.
ব্যাচেলর পয়েন্টে পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিকাল চারটা বেজে গেল। জায়গাটার নাম ব্যাচেলর পয়েন্ট হলেও এখানে যে শুধু ব্যাচেলররাই আসে ব্যাপারটা ঠিক তা নয়, বিবাহিত-অবিবাহিত সবারই এখানে আড্ডাবাজি চলে। বিকালে এখানে বেশ মানুষের ভিড় থাকে কিন্তু আজ তেমন মানুষ নেই। দুজন রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে লেকের দিকে তাকিয়ে আছে। আমিও রেলিংয়ে দুই হাত রেখে দাঁড়ালাম। রেলিংয়ের নিচ থেকে ধানমন্ডি লেক বয়ে চলে গেছে রবীন্দ্র সরোবরের দিকে। লেকের জলে কিছু হাফপ্যান্ট পরা বাচ্চা ছেলে লাফঝাঁপ করছে।
.
ঘড়ির কাঁটা সাড়ে চারটা ছুঁইছুঁই করছে। আমি অহনাকে ফোন করলাম। অহনা ফোন ধরেই জিজ্ঞাসা করল,
– আপনি কি চলে এসেছেন?
– হ্যাঁ। আমি ব্যাচেলর পয়েন্টে বসে আছি।
– আমার আর পাঁচমিনিট লাগবে। আপনি একটু বসুন, আমি আসছি।
.
কয়েকজন ছেলে-মেয়ে বসে গিটার বাজাচ্ছে। শুনতে ভাল লাগছে। পথচারিরা উৎসুক চোখে তাদের দিকে তাকাচ্ছে, ব্যাপারটা তারাও উপভোগ করছে।
.
অহনা পাঁচমিনিটের কথা বললেও আসলো আধাঘণ্টা পর। মনে মনে নীল রঙের পাঞ্জাবী পরে না আসায় আফসোস হলো। অহনা নীল রঙের শাড়ি পরে এসেছে, ঠোঁটে গোলাপি রঙের লিপস্টিক, হাতে টিয়া-খয়েরী রঙের কয়েকজোড়া কাঁচের চুড়ি, কপালে পেস্ট রঙের ছোট টিপ, গলায় সুন্দর একটা কাঠ খোদাই অলংকার, সবকিছু মিলে তাকে দেখাচ্ছে অপ্সরীর মতো। অহনা অনুতপ্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
” স্যরি, আমার দেরি হয়ে গেল।”
আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালাম। এরকম কারো জন্য সারাজীবনও অপেক্ষা করা যায়। আমি মৃদু হেসে বললাম,
” সমস্যা নেই। এখানে বসবেন, নাকি রবীন্দ্র সরোবরের দিকে যাবেন?”
– এখানেই বসি। ঐদিকটায় অনেক মানুষের খুব ভিড় থাকে।
– তা ঠিক।
– আপনি বসুন, আমি আসছি।
অহনা দুই প্লেট ফুচকা অর্ডার করে আমার পাশে এসে বসে বলল,
” এবার বলুন, কী সহযোগিতা করতে হবে?”
আমি ইনভেলাপে করে ছবি নিয়ে এসেছি। অহনাকে ইনভেলাপ দিয়ে বললাম,
” ছবিগুলো একটু দেখুন।”
অহনা ভুরু কুঁচকে বলল,
” আমি এসব ছবি দেখতে চাচ্ছি না।”
– না দেখলে তো ব্যাপারটা বুঝবেন না। ছবিগুলো দেখুন।
অহনা ইনভেলাপ খুলে ছবির দিকে তাকিয়ে নাক সিটকালো। আমি বললাম,
” ভালোভাবে লক্ষ্য করুন, একটা ছবিতেও মেয়ের মুখ বোঝা যাচ্ছে না। তার মুখমণ্ডল ঘোলা করে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু আমাকে দেখুন, স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে।”
– সে হয়তো তার চেহারা দেখাতে চাচ্ছে না। এটাই তো স্বাভাবিক। একজন নারী তার বস্ত্রহীন ছবি সবাইকে দেখিয়ে বেড়াতে পারে না।
– আপনার কথা ঠিক আছে, কিন্তু এখানে কিঞ্চিৎ সমস্যা আছে। সে প্রমাণস্বরূপ ছবিগুলো আপনাদের বাসায় পাঠিয়েছে, তার মুখই যদি বোঝা না গেল তাহলে এ-থেকে কী প্রমাণ হয়? এরকম ছবি তো ইচ্ছা করলে যে কেউ এডিট করে বানিয়ে ফেলতে পারে। প্রযুক্তি এখন বেশ উন্নত, এর চেয়ে আরো নিখুঁতভাবে বানানো সম্ভব।
– কেউ যদি এরকমটা করেই থাকে তবে কেন করবে? বিয়ে ভেঙে তার লাভ কী?
– এতে তার কী লাভ হবে তা এখনো আমি জানি না। তবে লাভ তো অবশ্যই আছে, যেই কারণে কেউ একজন চাচ্ছে না আপনার সাথে আমার বিয়ে হোক।
.
ফুচকা হয়ে গেছে। অহনা গিয়ে ফুচকা নিয়ে এসে একটা প্লেট আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
” নিন ফুচকা খান।”
আমি ফুচকার প্লেট নিয়ে বললাম,
” আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, আপনাদের বাসায় যে কুরিয়ার করেছে, সে আমাদের বাসাতেও কুরিয়ার করেছে, চিঠি পাঠিয়েছে। সে যেই ফোন নম্বর দিয়েছে সেটা ভুল। আমি আমার অফিসের কলিগ ফিরোজ ভাইকে দিয়ে খোঁজ নিয়েছি। এই নম্বরের কোন সীমই বিক্রি হয়নি। দ্বিতীয়ত, সে যেই ঠিকানা চিঠিতে ব্যবহার করেছে, সেই ঠিকানাটাও ভুয়া।”
– কে এরকম করছে?
– আমার ধারণা, সে আপনার-আমার দুজনের সম্পর্কেই অনেক খোঁজ-খবর রাখে। দুজনের সম্পর্কেই খুব ভালো জানে। না জানলে আমাদের নতুন বাড়ির ঠিকানা জানলো কী করে? আর আপনার সাথে সুমনের সম্পর্কের কথাই বা জানলো কী করে?
– হতে পারে।
– বাসার কী অবস্থা বলুন তো?
– বাসায় এসব নিয়ে তেমন আলোচনা হচ্ছে না। বাবা চুপচাপ আছেন।
– তিনি তো বাবার ফোন ধরছেন না। একবার ভাবুন তো, অনুষ্ঠানের সব এরেঞ্জমেন্ট হয়ে গেছে, এমন সময় বাবা-মা যদি এসব শুনে তাহলে তাদের কী অবস্থা হবে? দুই পরিবারের কথাই ভাবুন।
– আমাকে কী করতে বলছেন?
– আপনি শুধু আমার সাথে থাকুন। বাসার ব্যাপারটা একটু সামলান।
– দেখছি কি করা যায়।
.
আমরা ব্যাচেলর পয়েন্ট থেকে উঠলাম সন্ধ্যার আগমুহূর্তে।
অহনা বলল, “একই রাস্তা দিয়েই তো যাব, চলুন একসাথে যাই।”
আমার মনের কথাটাই অহনা বলে দিয়েছে। আমার বাড়ির পথ যদি পুরোপুরি উল্টোদিকেও হতো তারপরও আমি চাইতাম, অহনার সাথেই যেতে। এই উটকো ঝামেলার কারণেই কিছু বলতে মন সায় দেয় না।
.
আজিমপুর কলোনি পর্যন্ত একটা রিকশা ঠিক করে আমরা দুজন রিকশায় উঠে বসলাম। অহনা হুট করে বলল,
” আপনাকে ফতুয়াতে সুন্দর লাগছে।”
আমার কেমন যেন লজ্জা লাগল। আমি কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে মৃদু গলায় বললাম,
” আপনাকে ‘অহনার’ মতো সুন্দর লাগছে।”
– সেটা আবার কে? কোনো নায়িকা নাকি মডেল?
আমি মুচকি হেসে বললাম,
” আমার পাশে যিনি বসে আছেন তিনি।”
আমার কথা শেষ হতেই অহনা শব্দ করে হেসে ফেলল।
.
আজিমপুর কলোনিতে এসে অহনার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমি বাসায় ফিরে এলাম। অহনার সাথে দেখা হবার পর থেকে নিজেকে অনেকটা চিন্তামুক্ত লাগছে।
.
বাসায় ইতোমধ্যে আমার দুই কাকাতো ভাই চলে এসেছে। ওরা আগে থেকেই বলেছে, আলপনা, হলুদ মঞ্চ তারা সাজাবে। এরা দুজন জমজ ভাই। দুজন দেখতে অনেকটা একই রকম। হুট করে দেখলে কে কোনটা বোঝা যায় না। এদেরকে বিয়ে দেবার পর এদের বউ পড়বে মহা যন্ত্রণায়, কে কোনটা চট করে চিনতে পারবে না। দুজনের চেহারার মিলের কারণে কাকা তাদের নামও মিলিয়ে রেখেছেন, রিফাত-সিফাত।
বাসায় ফিরে আমি আমার ঘরে গিয়ে ঢুকলাম। আমার পেছন পেছন রিফাত-সিফাতও এসে ঘরে ঢুকল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম,
” কিছু বলবি?”
দুজন একসাথে বলল,
” ভাইয়া টাকা দাও।”
– কিসের টাকা?
– আশ্চর্য! শপিং করব না?
– বাবার কাছ থেকে নে গিয়ে।
– কাকার কাছে চাইতে পারব না। তুমি দাও, নইলে কাকার কাছ থেকে নিয়ে দাও।
আমি একহাজার টাকার দুটো নোট রিফাতের হাতে দিয়ে বললাম, “যা ভাগ।”
সিফাত বলল,
” এই টাকা দিয়ে কী হবে! একটা প্যান্টও তো পাওয়া যাবে না।”
– অনেক দিয়ে ফেলছি, এখন যা।
– আরো দাও।
– আর নাই।
রিফাত বলল,
– এত কিপ্টামি করছ কেন? বিয়ে কী বার বার করবা?
আমি পকেট থেকে আরও একহাজার টাকা বের করে দিয়ে বললাম,
” এবার যা।”
দুইজন আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
” আরো তিন হাজার দাও।”
আমি রাগী গলায় বললাম,
” বেয়াদব যা তো। অনেক দিয়েছি।”
দুইজন আবারও আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
” এই টাকা দিয়ে তো দুইজনের হবে না। একজন কিনব, আরেকজন কী কিছু কিনব না?”
– আর সর্বোচ্চ এক দেবো, হবে?
দুজন মাথা চুলকে বলল,
” আচ্ছা দাও।”
আমি এক হাজার টাকা দেবার পর ওরা দুজন দরজার সামনে গিয়ে হাসতে হাসতে বলল,
” আগে থেকেই জানতাম, টাকা নিয়ে ঝামেলা করবা, সেজন্য কাকা-কাকীর কাছ থেকে ছয় হাজার অগ্রিম নিয়ে নিছি।”
আমি গম্ভীরমুখে বললাম,
” দাঁড়া!”
দুজনকে ধরতে দরজা পর্যন্ত যাবার আগেই ওরা পগারপার হয়ে গেল। ওদেরকে আর খুঁজে পাওয়া গেল না।
.
রাতে খাবার টেবিলে বসে বাবা আমাকে বললেন,
” কিরে বেয়াই সাহেবের ফোন কী হয়েছে? ফোনে তো এখনো ফোন ঢুকছে না।”
আমার ধারণা তিনি বাবার ফোন নম্বর ব্লক করে রেখেছেন। আমি বললাম,
” তোমার কাছে অহনার ফোন নম্বর নাই?”
– না, ওর নম্বরটা ফোনে সেভ করে দে তো। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ওকে ফোনে ধরিয়ে দিস।
– আচ্ছা।
খাওয়া-দাওয়া শেষে বাবাকে ফোনে অহনাকে ধরিয়ে দিয়ে আমি ঘরে ঢুকলাম। কিছুক্ষণ পর অহনা ফোন করল। আমি ফোন ধরে জিজ্ঞাসা করলাম,
” বাবার সাথে কথা হলো?”
– হ্যাঁ।
– কী বলল বাবা?
– কেমন আছি না আছি, সবার খোঁজ-খবর নিলেন, বাবার সাথে কথা বলতে চাইছিলেন।”
– কথা বলিয়ে দিলেন?
– নাহ, আমি একটা মিথ্যা কথা বলেছি।
– কেমন?
– আমি জানি বাবা ভীষণ রেগে আছে। বাবাকে দিলে বাবা রাগারাগি করবে৷ সেজন্য বলেছি বাবা গ্রামে আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত করতে গেছে।
– বাঁচিয়েছেন আমাকে, কথা হলে কী যে হতো! ভাবতে পারছি না।
– আচ্ছা, কাউকে কী আপনার সন্দেহ হচ্ছে?
– এটাই তো সমস্যা কাউকে সন্দেহ করতে পারছি না।
– আপনার কোনো বন্ধু না তো?
– আমার বন্ধুদের এমন করার কথা না। তারপরও ওদের সাথে আমি কথা বলেছি, ওরা কেউ করেনি। আর তাছাড়া, ওরা সুমনের ব্যাপারটা জানবে কী করে? সুমনের সম্পর্কে জানতে হলে, আপনার সাথে ওদের পরিচয় থাকতে হবে।
– বিপরীতও তো হতে পারে। আমার পরিচিত না হয়ে সুমনেরও তো পরিচিত হতে পারে।
– তাও ঠিক।
– একটা কাজ করুন না, আপনার বন্ধুদের ছবি আমাকে পাঠিয়ে দিন, দেখি কাউকে চিনি কিনা।
আমি ফোন রেখে বন্ধুদের ছবি অহনাকে পাঠিয়ে দিলাম।
.
কিছুক্ষণ পর অহনা ফোন করে বলল,
– কাউকেই তো চিনি না। আগে দেখেছি বলে মনে হচ্ছে না। আচ্ছা একটা কথা বলি?
– বলুন।
– আমার কেন যেন মনে হচ্ছে এসবের পেছনে সুমনের হাত থাকতে পারে। কয়েকদিন আগে ও চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছে।
– আপনি না বলেছিলেন, তার সাথে আপনার মিউচুয়ালি ব্রেকাপ হয়েছে।
– তা হয়েছে, কিন্তু আমার পক্ষ থেকে ব্রেকাপের কারণ ছিল যদিও আমি সেটা প্রকাশ করিনি।
– কারণ কী?
– ও আমাকে দীর্ঘদিন ওর বেড পার্টনার বানানোর চেষ্টা করেছে। ওকে সন্দেহ করার আরেকটা কারণ হচ্ছে, ওর সাথে যখন আমার সম্পর্ক ছিল, ও প্রায়ই বলত, আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করলে সারাজীবন জ্বালিয়ে মারব। কোনোভাবে সুমনই এসব করছে না তো?
– আমি বুঝতে পারছি না।
– আমি কী সুমনকে কিছু জিজ্ঞাসা করব?
– আমার মনে হয় না, জিজ্ঞাসা করে কোনো লাভ হবে। সে এরকম করে থাকলে কখনোই স্বীকার করবে না।
– এখন তাহলে কী করা যায়?
– আমি ভাবছি, আপনিও ভাবুন। বিয়ের আছে ছয়দিন। দুই তিনদিনের মধ্যে পারিবারিকভাবে আপনাদের বাড়ির সাথে আমাদের বাড়ির যোগাযোগ হবে। এর আগেই তাকে খুঁজে বের করতে হবে।
– হু, ঠিক আছে।
.
অহনার সাথে কথা বলা শেষ করে আমি মনিরের দোকানে চলে গেলাম। সুজন আর ফয়সাল দোকানের বেঞ্চে বসে আছে। আমাকে দেখে ফয়সাল বলল, ‘কিরে কী অবস্থা?’
আমি ফয়সালের পাশে বসতে বসতে বললাম, ‘এইতো চলছে।’
– বিয়ে নিয়ে খুব ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিস, তোকে ইদানীং একদম দেখাই যায় না।
– ব্যস্ততা কিছুটা তো যাচ্ছেই।
সুজন বলে উঠল, ‘তোর সেই চিঠির রহস্য উন্মোচন হলো?’
আমি বললাম, ‘নারে।’
– অযথা এইসব নিয়ে ভাবিস না, কেউ না কেউ ফাজলামি করেছে।
– আমারও তাই মনে হয়।
ফয়সাল জিজ্ঞাসা করল, ‘চা খাবি তো?’
আমি বললাম, ‘হ্যাঁ, খাওয়া যায়।’
.
আমি বন্ধুদের কেবল চিঠির ব্যাপারে বলেছিলাম। পরের ঘটনাগুলো আর বলিনি।
.
বন্ধুদের সাথে কথা বলে বিশেষ কিছু লাভ হলো না। রাত প্রায় বারোটা পর্যন্ত ওদের সাথে কাটিয়ে আমি বাসায় ফিরে এলাম। চাচাতো দুই ভাই বাদে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি আমার ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বারান্দায় গিয়ে বসে একটা সিগারেট ধরালাম।
.
আমার সাথে কারো কোনোদিন ঝগড়া-বিবাদ হয়নি। খুব বেশি মানুষের সাথে আমার মেশা হয় না, তাই শত্রুও থাকবার কথা নয় কিন্তু যে এই জঘন্য কাজগুলো করছে সে নিশ্চয়ই আমার প্রতি ক্ষোভ থেকেই করছে। কাউকে কী নিজের অজান্তে আমি কখনো কষ্ট দিয়েছি! এযাবৎকাল যত মানুষের সাথে আমার পরিচয় হয়েছে তাদের সবার কথা ভাবতে শুরু করলাম। এমন কাউকে খুঁজে পাচ্ছি না যে এরকম উদ্ভট কর্মকাণ্ড ঘটাতে পারে। একটা ব্যাপার বার বার মনে হচ্ছে, ঘটনাটা অনেকটা এমন হতে পারে, কেউ একজন অহনাকে প্রস্তাব পাঠিয়ে ব্যর্থ হয়ে ক্ষোভে এসব করছে, কিন্তু কে সে! সুমন নাকি অন্য কেউ! সুমনের ব্যাপারে সকালে খোঁজ-খবর নেব ভেবেছি। আমি অহনাকে মেসেজ পাঠিয়ে আমাকে সুমনের ফোন নম্বর আর ফেসবুক আইডি দিতে বলে দিলাম।
.
বেশ রাত হয়েছে, চোখের পাতা জোড়া লেগে আসছে, আমি বারান্দা থেকে উঠে বিছানায় গিয়ে গা এলিয়ে দিলাম।
.
সকালবেলা বাবা আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বললেন,
” তোর অফিসের সবাইকে কার্ড দিয়েছিস?”
আমি বিছানায় উঠে বসতে বসতে বললাম,
” না এখনো দেওয়া হয়নি।”
-এখনো দিস নাই কেন? এত দেরি করলে চলে? সবারই তো ব্যস্ততা থাকে। বিয়ের ব্যাপার, আগে থেকে সবাইকে না জানালে তারা সময় সুযোগ রাখবে কী করে! হাত-মুখ ধুয়ে নাস্তা করে অফিসে গিয়ে সবাইকে কার্ড দিয়ে আয়।
.
বাবা ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। আমি বিছানা থেকে উঠে হাত-মুখ ধুয়ে কাপড় বদলে নিলাম। এরপর নাস্তা করে কার্ড নিয়ে অফিসে চলে গেলাম।
.
অফিসের সবাইকে বিয়ের কার্ড দিয়ে আমি রাকিবকে ডেকে বললাম,
” এক কাপ কফি খাওয়াবে রাকিব?”
রাকিব হাসিমুখে বলল,
” ভাইয়া আপনি একটু বসুন, আমি নিয়ে আসছি।”
.
অহনা রাতেই সুমনের ফোন নম্বর আর ফেসবুক আইডির লিংক আমাকে মেসেজে পাঠিয়ে দিয়েছে। অফিস থেকে বের হয়ে সুমনের নম্বরে ফোন করবো বলে মনস্থির করলাম।
.
কিছুক্ষণের মধ্যে রাকিব কফি বানিয়ে নিয়ে এলো। কফির কাপ শেষ করে আমি অফিস থেকে বের হলাম। অফিসের সামনে দাঁড়িয়েই আমি সুমনের নম্বরে ফোন করলাম। ফোন ধরল তার স্ত্রী পিয়া। পিয়া জানালো, সুমন বি.আর.বি হাসপাতালে ১০২৪ নম্বর কেবিনে ভর্তি আছে, সে খুব অসুস্থ। আমি সোজা বি.আর.বি হাসপাতালে চলে গেলাম।
.
_____
#চলবে

লেখা:
নাহিদ হাসান নিবিড়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here