ফাগুন ছোঁয়া পর্ব ৪

0
212

#ফাগুন_ছোঁয়া
#পর্ব_৪
#লেখিকা_সারা মেহেক

সারারাত মিমের চোখে ঘুম ধরা দিলো না৷ সমস্ত রাত বিছানায় শুয়ে ছটফট করলো সে। যতবার ঘুমানোর চেষ্টা করলো ঠিক ততোবারই আদ্রিশের মুখখানা তার কল্পনায় ভেসে উঠলো। কর্ণকুহরে আদ্রিশের বলা প্রতিটি আশ্বস্ত বাণী ঝংকার তুললো। তাকে সমস্ত কিছু ভাবাতে বাধ্য করলো যেনো আদ্রিশ। সবকিছু মিলিয়ে সে বিশাল সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগলো। শেষমেশ সারারাত না ঘুমিয়ে ভোরে উঠে ফজরের নামাজ পড়ে ডায়েরি নিয়ে বসলো সে। সময় পেলেই ডায়েরি নিয়ে বসে সে। নিজের আনন্দ, দুঃখ-কষ্ট, অস্থিরতা সব ডায়েরির পাতায় লিখে সে।

মিম ডায়েরিতে কলম ছোঁয়ালো,
” ছোট্ট এ জীবনটা বড় বিচিত্র একটা খেলাঘর। ২৫ বছরের ছোট্ট এ জীবনে শেষ ক’টা বছর অনেক কিছু দেখেছি, সয়েছি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা হয়েছে। কখনো এসব অভিজ্ঞতা হতে নতুন কিছু শিখেছি। কখনোবা একই ভুল আরেকবার করে বসেছি। একটা বিষয় লক্ষ্য করেছি, আমি যে জিনিস থেকে বেশি দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করি, সে জিনিসই যেনো আমার কাছে আসতে চায়। এই যেমন বিয়ে। বিয়ের মতো দায়িত্বপূর্ণ একটা সম্পর্কে জড়ানোর ইচ্ছে আরো ২/১ বছর আগে সম্পূর্ণতরে শেষ হয়ে গিয়েছে। চেয়েছিলাম যে করেই হোক, এমবিবিএস পাশ করে একটা চাকরি জোগাড় করে আব্বু আম্মুকে চাকরির উছিলা দিবো, যেনো তারা আমার বিয়ে নিয়ে মাথা না ঘামায়। অথচ এই দুজনে মিলে এমন চালাকি করলো যে আমারই মেডিকেলের একজনকে ধরে নিয়ে এলো আমায় বিয়ে করার জন্য! এখন সে বান্দাকে সরাসরি রিজেক্ট করে দিলেও সে আঠার মতো আমার পিছে লেগে রইলো।
বিয়ে না করার সব কারণ শোনানোর পর ভেবেছিলাম হয়তো আমায় বিয়ে করতে কিছুটা আপত্তি জানাবে সে। কিন্তু সে তো উল্টো পথযাত্রী।এ বিয়েতে নাকচ না করে বরঞ্চ এমন কিছু কথা বলে গেলো যে কঠোর সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া এই আমিও দোদুল্যমান অবস্থায় পড়ে গেলাম। তার কথার বিশেষত্ব যে খুব একটা আছে তা নয়৷ কিন্তু সে কথাগুলো এমন আশ্বস্তবাণীতে বলে যে তার কথায় সায় না দিয়ে পারা যায় না। অদ্ভুত কিসিমের মানুষ উনি!
বিয়ে সারাজীবনের মস্ত বড় এক কমিটমেন্ট। একবার এ কমিটমেন্টে জড়িয়ে গেলে নিজেকে তা হতে বের করা দুষ্কর। তখন জীবনটা অন্য রকম হয়ে যাবে। বউ হিসেবে, স্ত্রী হিসেবে অনেক দায়িত্ব এসে পড়বে আমার ঘাড়ে। শুনেছি বিয়েতে ভালোবাসা না থাকলে সংসার টেকানো কষ্ট হয়ে যায়। যারা মুখ বুজে সব সহ্য করতে পারে তারাই পারে। এখনকার সময় তো ভালোবাসা দিয়েও সংসার চলে না। আমি ভাবি, উনার আর আমার মাঝে সংসার হবে তো? বিয়ে মানে তো কম্প্রোমাইজ। আমরা দুজনই কি কম্প্রোমাইজ করে চলতে পারবো? সবচেয়ে বড় কথা, উনি কি শেষ সময় পর্যন্ত আমার ভরসা টিকিয়ে রাখতে পারবেন? নাকি এখনকার ছেলেদের আচরণের স্রোতে গা ভাসাবেন? যতই এ বিষয়ে চিন্তা করছি ততই যেনো প্যাঁচিয়ে যাচ্ছি। কিছুতেই দৃঢ়ভাবে নিজের সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারছি না। জানি না কি করবো আমি। ”

ডায়েরি লিখতে লিখতে দু চোখের পাতা এক হয়ে এলো মিমের। সে ডায়েরি বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো।

..

আজ শুক্রবার। স্বভাবতই ছুটির দিনের সকালটা ঘুমিয়ে কাটায় মিম। উপরন্তু আজ ফজরের পর ঘুমিয়েছে সে। এজন্য উঠতে আরো দেরি হলো। ঘুম হতে উঠে গোসল করে যোহরের নামাজ পড়ে খেয়েদেয়ে নিলো। খাওয়া শেষ হওয়ার পরপরই ফারহা এলো। ফারাহ আর মিম রুমমেট। যদিও ফারহার বাসা মেডিকেল হতে মাত্র পনেরো মিনিটের দূরত্বে। সে মূলত পড়াশোনার জন্য হোস্টেলে উঠেছে।
গতকাল দুপুরে ক্লাস করে ফারহা বাসায় চলে গিয়েছিলো। রাতে মিম তাকে ফোন করে আদ্রিশের ব্যাপারে সব বলে। মিমের বিয়ে নিয়ে উৎসুক ফারহা পারলে রাতেই চলে আসে। কিন্তু একেবারে দুপুরের খাবারের ঝামেলা শেষ করেই সে হোস্টেলে এসেছে।

রুমে এসে সে ফ্রেশ হয়েই মিমের সামনে বসে। ভীষণ কৌতূহল দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
” কালকে কি কি কথা হলো তোদের মাঝে, সব বলবি। সব শুনতে চাই, ডিটেইলসে।”

মিম ফারহার কান্ডে ভ্রুজোড়া কুঁচকিয়ে বললো,
” এতোকিছু মনে নেই। মেইন মেইন কথাগুলো বলবো শুধু। ”

” উঁহু। আমি সব শুনতে চাই। এ টু জেড। ”

” আচ্ছা বলছি। শান্ত হয়ে সব কথা শুনবি কিন্তু। ”

” আচ্ছা বল। শুনছি। ”

মিম একে একে গতকালের সন্ধ্যা ও রাতের ঘটনা বললো। সবটা শুনে ফারহা বিজ্ঞ ব্যক্তিতের ন্যায় মাথা নাড়ালো, মুখশ্রীর ঢঙ বদলালো। অতঃপর মিমকে ধমক দিয়ে বিরক্তি মাখা মুখভঙ্গিমা নিয়ে বললো,
” তোকে আসলে চ’ড়া”নো দরকার। আদ্রিশ ভাইয়ের সব কথা শোনার পরও তোর সিদ্ধান্ত নিতে এতো সময় লাগবে কেনো! তোর উচিত ছিলো কালকে রুমে এসেই নিজের সিদ্ধান্ত বদলে উনাকে জানানো।”

মিম বিমর্ষ গলায় বললো,
” বিয়ের মতো সিদ্ধান্ত এতো দ্রুত নেওয়া যায় না, এটা তুই জানিস ফারহা। তারপর আমার মাঝে যে ট্রাস্ট ইশ্যু,ইনসিকিউরিটি আছে এর জন্যই এতোটা সময় লাগছে।”

ফারহা এবার ভীষণ বিরক্তমাখা কণ্ঠে বললো,
” তোর সমস্যা কি মিম! এই টপিক নিয়ে আর কতদিন? এমন হলে সারাজীবন আনম্যারিড হয়েই কাটাতে হবে। এটলিস্ট একজনের উপর ভরসা করে দেখ তুই। আদ্রিশ ভাইকে সবাই ভালো বলছে। তুইই একমাত্র বান্দা যে উনাকে এতো সন্দেহ করছিস। আর এ সন্দেহের কারণ কি, অন্যান্য ছেলেরা চিট করেছে তাই! যেটার সাথে উনার কোনো সম্পর্কই নেই সেটায় উনাকে জড়াচ্ছিস কেনো?”

মিম গোমড়ামুখে চেয়ে রইলো ফারহার পানে। ফারহা পুনরায় বললো,
” শোন মিম, তোকে একটা ভালো পরামর্শ দেই। ফ্রি এডভাইস আরকি। সারাজীবন কাজে লাগবে। এ পৃথিবীতে সবসময় সবাইকে এক পাত্রে মাপবি না। একেকজনের জন্য একেক ইন্ডিকেটর। তেমনই আদ্রিশ ভাই। উনি ভীষণ ভালো একজন মানুষ। সবার সাথে উনার ব্যবহার ভীষণ ভালো। আমাদের সিনিয়র ভাই বা আমাদের ক্লাস নেয় রোজ, এ কারণে না। উনাকে সবাই ভালো বলে, স্যাররা, সিনিয়র ভাইরা সবাই ভালো বলে। তাহলে আর সন্দেহের অবকাশ কোথায়?”

মিম নিশ্চুপ রইলো। এখন ফারহার কথাগুলোও তাকে ভাবাচ্ছে। কোনো সন্দেহ নেই, আদ্রিশের ও ফারহার কথাগুলো তার সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ফারহা পুনরায় বললো,
” আল্লাহ না করুক, আদ্রিশ ভাই যদি কখনো কিছু করেও বসে তাহলে তুই কি কান্না করে সব ভাসিয়ে দিবি নাকি! মেন্টালি দিক দিয়ে তুই স্ট্রং আছিস। সো, তুই নিজেকে সামলে নিতে পারবি। তবে আমার মনে হয় না এমন পরিস্থিতি কখনো আসবে। ”
সে আরোও যোগ করলো,
” আমার চাচা যখন হ’স”পি’টা’লে ভর্তি হয়েছিলো তখন আদ্রিশ ভাই যতোটা সম্ভব উনাকে দেখে রেখেছে। যতটুকু সেবা যত্ন করা এবং করানো সম্ভব উনি সবটা করেছেন। এমন মানুষের আচরণ দেখে তো আর কোনো স’ন্দে’হই থাকা উচিত না।
আর আংকেল, আন্টী তো তোর ভালোই চায় তাই না? উনারা তো সব দেখেই বিয়ের কথাবার্তা এগিয়েছে। তাহলে তোর এতো চিন্তা, এতো সন্দেহ কেনো? একসময় না একসময় তো তোকে বিয়ে করতেই হবে, সংসার করতে হবে। তাহলে এখন আদ্রিশ ভাইকে রিজেক্ট করছিস কেনো? উল্টো তোর তো প্রথমেই বিয়েতে রাজি হয়ে যাওয়া উচিত। কারণ উনি তোর পূর্বপরিচিত। যদিও এজ আ স্যার, এজ আ সিনিয়র ভাই। তারপরও আমি মনে করি, এতে তোর অনেক সুবিধা হবে। বিয়ের পর আনকম্ফোর্টেবল লাগবে না৷ উনাকে ইজিলি মেনে নিতে পারবি। এই যে হাজার হাজার বেনিফিট দেখার পরও কি তুই বিয়েতে রাজি হবি না?”

মিম ভাবনায় মশগুল হলো। এ মুহূর্তে হঠাৎ তার মন বলছে, আদ্রিশের মতো ভালো পাত্র হাত ছাড়া করা উচিত নয়। যদি আদ্রিশকে হাতছাড়া করে তাহলে হয়তো ভবিষ্যতে পস্তাতে হতে পারে তাকে। আল্লাহ হয়তো ভালোর জন্যই আদ্রিশকে তার জীবনে পাঠিয়েছে। সে যদি খারাপই হতো তাহলে এতোজনে ইতিবাচক কথা নিশ্চয়ই বলতো না।

মিম এবার খানিক নড়েচড়ে বসলো। রয়েসয়ে সন্দেহের সুরে জিজ্ঞেস করলো,
” ফারহা? সত্যিই কি এ বিয়েতে আমার রাজি হওয়া উচিত?”

ফারাহের দৃষ্টি চকচক করলো। সে উৎফুল্ল হয়ে বললো,
” অবশ্যই। ভালো কাজে দেরি করতে নেই। ”

” কিন্তু আমার কেমন যেনো ভয় করছে। বুকের ভেতর অস্থির লাগছে। অদ্ভুত এক অনুভূতি কাজ করছে। ”

” ইশ! এতো চিন্তা কিসের? আংকেল আন্টি তো বিয়েতে রাজিই। তারা জানে, তুইও রাজি। তাহলে তাদের আর এক্সট্রাভাবে কিছু জানাতে হবে না। এবার আদ্রিশ ভাইকে কালকেই নিজের ডিসিশন জানিয়ে দে। ”

” আমি পারবো তো?”

” কেনো পারবি না! এতে এতো ভয়ের কি আছে!”

মিম আর কথা বাড়ালো না। হাতের মুঠো শক্ত করলো। অতঃপর কুঞ্চিতভাব নিয়ে চোখজোড়া বন্ধ করে লম্বা নিঃশ্বাস টানলো। সিদ্ধান্ত নিলো, আল্লাহর উপর আস্থা নিয়ে এ বিয়ে করবে সে।

————

গাইনি লেকচার ক্লাস শেষে মেডিসিন ওয়ার্ডের ক্লাস চললো টানা দু ঘণ্টা। আজকের ক্লাস নিলো অন্য এক রেজিস্টার। আদ্রিশ একজন রোগীকে এটেন্ড করতে ব্যস্ত বলে আজকের ক্লাস নিতে পারলো না সে। টানা দু ঘণ্টার ক্লাস শেষে ছেলেমেয়েরা গোল হয়ে বসে রইলো। আগামীকাল গাইনির আইটেম বলে সে বিষয়ে ওয়ার্ডের এক কোনে বসে আলোচনা করছে সবাই।

এতোক্ষণ যাবত চাতক পাখির ন্যায় আদ্রিশের অপেক্ষা করছিলো মিম। ক্লাসের মাঝেই ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক ওদিক দেখছিলো, এই বুঝি আদ্রিশ চলে আসবে। মাঝে সবার চোখে ফাঁকি দিয়ে আড়চোখেও দেখছিলো আদ্রিশের আনাগোনা। অপেক্ষা ছিলো শুধু ক্লাস শেষ হওয়ার। দশ মিনিট পর এক পর্যায়ে সে আদ্রিশের দেখা পেলো। আদ্রিশ তখন স্টেথোস্কোপ দিয়ে পেশেন্টের হার্টবিটের শুনছিলো।

মিম গিয়ে তার ঠিক পিছনটায় দাঁড়ালো। সে রোগীর দিকে মনোযোগী হওয়ায় মিমকে ঠিক লক্ষ্য করলো না। আদ্রিশের কাজ শেষ হতেই সে স্বভাবত পিছনে ফিরতেই চমকে উঠলো। ফলস্বরূপ কয়েক কদম পিছিয়ে পেশেন্টের বেডের সাথে ধাক্কা খেতে নিলো। কিন্তু এর পূর্বেই মিম তার হাত আঁকড়ে ধরে এ পরিস্থিতি হতে তাকে উদ্ধার করলো। অতঃপরে দুজনে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে উপনিত হলে আদ্রিশ বোকাসোকা হাসি দিলো। তা দেখে মিম স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করেও পারলো না। ফলে নিকাবের আড়ালে ঠোঁট টিপে হেসে নিলো সে। তাদের এ মুহূর্তটা বেশ ভালোভাবেই উপভোগ করলো উপস্থিত নার্স, পেশেন্ট ও স্টুডেন্টরা। ভীষণ লজ্জায় পড়ে গেলো মিম। সে তৎক্ষনাৎ জিজ্ঞেস করলো,
” কিছু বলবে কি?”

মিম এক বাক্যে জবাব দিলো,
” হুম।”

” তাহলে ওয়ার্ডের এক কোনায় গিয়ে কথা বলি? এভাবে সবার সামনে কথা বলা যায় না।”
এই বলে আদ্রিশ যেতে নিলো। কিন্তু মিম দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও ভয়ের কারণে তাকে সে মুহূর্তেই থামিয়ে দিয়ে বললো,
” এখন না। আমি ক্লাস শেষ হলে আপনার সাথে কথা বলবো। ”

আদ্রিশ চোখজোড়া বড় বড় করে বললো,
” ক্লাস শেষে! তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করা সম্ভব না। তুমি নিশ্চয়ই কোনো ভালো সংবাদ নিয়ে এসেছো তাই না?”

আড়ালে লাজুক হাসি হাসলো মিম। সাথে তার আঁখিজুগলও হেসে উঠলো। আদ্রিশের নজর এড়ালো না সে আঁখিজোড়ার পরিবর্তন। সে জিজ্ঞেস করলো,
” এ হাসি কি আমি পজিটিভলি নিবো?”

মিম ঈষৎ চমকে উঠলো। বিস্ময়ে মুখ ফসকে বেরিয়ে গেলো,
” আপনি জানলেন কি করে আমি হাসছি?”

আদ্রিশ হাসলো। বললো,
” তোমার ঐ চোখজোড়াই স্পষ্ট বলে দিচ্ছে তুমি হাসছো।
আচ্ছা, তাহলে কি হ্যাঁ বলছো তুমি?”

মিম জবাব দিলো না। এতক্ষণ এই ‘হ্যাঁ’ বলার জন্যই অপেক্ষা করছিলো সে। অথচ এখন তা বলতে ভয় হচ্ছে! তার ভেতরে অস্থিরতা হচ্ছে, বুকের ভেতরে তোলপাড় হচ্ছে। কেননা এই এক শব্দই তার জীবন পরিবর্তন করে দিতে পারে। সে কিছুক্ষণ সময় নিলো। অতঃপর আদ্রিশের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য সে প্রস্তত হলো। কিন্তু তন্মধ্যে তার ক্লাসের সবাই পরের লেকচার ক্লাসে চলে যাওয়ায় ফারহা তাকে ডাকতে এলো। মিম তবুও কিছু সময় নিতে চাইলো। কিন্তু ইতিমধ্যে তাদের ক্লাসে স্যার ঢুকে পড়েছে। সময়মতো না যেতে পারলে আজকের ক্লাস আর করা হবে না। এজন্য অগত্যা ফারহা মিমকে জোরপূর্বক নিয়ে গেলো। ওদিকে সে আদ্রিশের প্রশ্নের জবাব দেয়নি বলে অস্থির আদ্রিশ হাঁক মেরে জিজ্ঞেস করলো,
” আমি কিন্তু জবাব পেলাম না এখনো। ”

পথিমধ্যে আদ্রিশের কথা শুনে মিম আর সময় লাগালো না। অস্থিরতা ও উত্তেজনা নিয়ে গলা উঁচিয়ে বললো,
” হ্যাঁ।”
এই বলতে বলতে মিমকে ওয়ার্ড থেকে নিয়ে গেলো ফারহা। পিছে মিমের ইতিবাচক জবাবে আদ্রিশের জানে যেনো পানি ফিরে এলো। স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো সে। তীব্র উত্তেজনায় চাপা হাসি বিস্তার করলো তার অধরজুড়ে। বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,
” এটলাস্ট, ইউ উইল বি মাই ওয়াইফ মিস মিশমিশ ওরফে মিস মিম।”

————-

ঠিক সপ্তাহ পর শুক্রবারে আদ্রিশ ও মিমের আকদ সম্পন্ন হলো। পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত হলো, ফাইনাল প্রফের পর যে দু তিন মাস সময় থাকে সে সময়ে পরিপূর্ণ আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে মিমকে তুলে দেওয়া হবে। এতে সকলে খুশি হলেও নাখোশ হলো আদ্রিশ। বেচারা ভেবেছিলো, নতুন বউ নিয়ে নতুন এক বাসায় উঠবে সে। সেখানে তাদের দুজন মিলে ছোট্ট একটা সংসার হবে। কিন্তু বড়দের সিদ্ধান্তে সব ভেস্তে গেলো। আদ্রিশ তীব্র বিরক্তিতে বিড়বিড় করে বললো,
” এখন বিবাহিত হয়েও ব্যাচেলার লাইফ লিড করো আদ্রিশ মিয়া। তোমার কপালটাও একদম ফাটা কলসির মতো। বউ পেয়েও পেলে না তুমি। ”

দু পরিবারের কথাবার্তার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হলো আজ রাতটা আদ্রিশ মিমদের বাড়িতেই কাটাবে। এতে আদ্রিশের মত চাওয়া হলে সে সাথে সাথেই রাজি হয়ে যায়। তার এ আগ্রহ দেখে তার বোন নদী এক পর্যায়ে টিপ্পনী কেটে বলে বসে,
” এতো অস্থির হয়ো না ভাইয়া। তোমার এতো লাফালাফি দেখে শেষমেশ আমার একমাত্র ভাবী ভয় না পেয়ে বসে। না জানি, ভেবে বসে, কি এক লুচু বর পেয়েছে সে। ”

নদীর এহেন কথায় আদ্রিশ তার মাথায় গাট্টা মেরে বলে,
” তোর বিয়ে হলে তোর বরকে ফার্স্ট নাইটে তোর কাছে থাকতে দিবো না। তখন বুঝিস।”

নদী এবার আরো খোঁচা মেরে বললো,
” ওওওওওওও। ফার্স্ট নাইট। আজকে যে তোমাদের ফার্স্ট নাইট তা তো ভুলেই গিয়েছি আমি। শোনো ভাইয়া, আজকের রাতে ভাবী যেনো তোমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না করে। ভাবীকে একটু ক্ষান্ত দিও। ”

আদ্রিশ পুনরায় নদীর মাথায় গাট্টা মেরে বলে,
” ছোট মানুষ ছোট মানুষের মতো থাকবি। যা ভাগ এখান থেকে। আমাকে আমার বউয়ের কাছে যেতে হবে। হয়তো অনেক অপেক্ষা করছে সে আমার জন্য।”

নদী মিটিমিটি হাসলো আদ্রিশের কথায়। ভাইয়ের এই ধৈর্য্যহীনতা দেখে সে মিমের মা’কে বলে দ্রুত মিমের রুমে যাওয়ার ব্যবস্থা করলো।

বিশ মিনিটের মাঝে আদ্রিশ রুমে প্রবেশ করলো। মিম পূর্ব হতেই রুমে বসে ছিলো। আদ্রিশ রুমে প্রবেশ মাত্রই দরজার খিল লাগিয়ে দিলো। দরজার নিকটে দাঁড়িয়েই বললো,
” আসসালামু আলাইকুম। ”

মিম ভীষণ শঙ্কিত ও আড়ষ্টভাব নিয়ে বসে ছিলো। আদ্রিশের সালাম শোনামাত্র দুরুদুরু বুক নিয়ে মিনমিনে স্বরে সে বললো,
” ওয়ালাইকুমুস সালাম।”
®সারা মেহেক

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here