ফাগুন ছোঁয়া পর্ব ১২

0
211

#ফাগুন_ছোঁয়া
#পর্ব_১২
#লেখিকা_সারা মেহেক

বিকেলের দিকে আদ্রিশ, মিম, তিথি ও নোমান ঘুরতে বের হলো। আশেপাশের এলাকায় ঘুরার পর তারা নোমানদের জমি ঘুরলো। বিস্তৃত এলাকায় নিয়ে নোমানদের জমি। মূলত এ জমি তার দাদার আমল হতে আছে। এ জমির ফসল বেঁচেই মাসিক আয় করেন নোমানের বাবা।

নোমান তাদের জমিগুলো ঘুরিয়ে দেখালো তাদের৷ সর্বশেষ জমিতে এসে নোমান আড়াল করে আদ্রিশকে বললো,
” তুই আর ভাবী এখানে কিছু সময় কাটা। আমি আর তিথি বাড়িতে চলে যাই। ”

আদ্রিশ বেশ খুশি হয়েছিলো। কিন্তু পরক্ষণেই শেষ বিকেলের কড়া রোদে কোথায় সময় কাটাবে তা চিন্তা করেই মুখটা কালো হয়ে এলো। সে বিরক্তিমাখা ভাব নিয়ে বললো,
” এখানে কোথায় সময় কাটাবো বল। মাঠের মধ্যে বসে থাকবো নাকি? বসে থাকাও যেতো যদি ওমন জায়গা থাকতো কিন্তু এখানে তো জায়গাই নেই। ”

” আরে ব্যাটা, তুই দেখি চোখ থাকতেও কানা! তোর বাম দিকেই তো বিশাল পাকুড় গাছ আছে।ওদিকে একবার তাকিয়ে দেখ, গাছের নিচে কত জায়গা আর ছায়া!”

নোমানের কথায় আদ্রিশ সামান্য ঘাড় ঘুরিয়ে তার বাম দিকে চাইলো। চোখে পড়লো বিশাল এক পাকুড় গাছ। যার ডালাপালা চারপাশে ছড়িয়ে একটা তাবুর মতো ছায়াতল গড়ে রেখেছে। সে খুশি হলো এ দেখে। বিস্তৃত হেসে নোমানকে বললো,
” থ্যাংকস দোস্ত। ”

নোমান বাঁকা হেসে আদ্রিশের পেটে আলতো গাট্টা মেরে বললো,
” থ্যাংকস এ কোনো কাজ হবে না৷ বড়সড় একটা ট্রিট চাই।”

” ওকে ডান। তুই যেদিন ফ্রি থাকবি, আমাকে জানাবি। সেদিনকার লাঞ্চ আমার পক্ষ থেকে থাকবে।”

” ওকে। এবার আমি তিথিকে নিয়ে বাড়ি চলে যাই। তুই ভাবীর সাথে গিয়ে বস। আর এখান থেকে তো বাড়ির রাস্তা চিনবি নাকি?”

” হ্যাঁ, চিনবো। এই আইল ধরে সোজা গিয়ে তারপর ডানদিকের আইল ধরবো তাই তো?”

” হ্যাঁ। আচ্ছা আমি যাই তাহলে।”
বলেই নোমান মিমের সামনে হতে তিথিকে নিয়ে সোজা হাঁটা ধরলো। ততক্ষণে আদ্রিশ মিমের পাশে এসে দাঁড়ালো। মিম তাকে জিজ্ঞেস করলো,
” এখন এখানে দাঁড়িয়ে কি করবেন? আমি তিথি আপুর সাথে যেতে চাইলাম। কিন্তু আপু আমাকে থাকতে বললো। ”

” ভাবী তোমাকে থাকতে বলেছে যেনো আমরা একা কিছু সময় কাটাতে পারি।”

” এই রোদে কোথায় সময় কাটাবেন?”

মিমের প্রশ্নে আদ্রিশ তাকে ঘুরিয়ে পাকুড় গাছটি দেখিয়ে বললো,
” ঐ পাকুড় গাছের তলায় সময় কাটাবো। চলো। ”
বলেই আদ্রিশ মিমের আঙুলের মাঝে আঙুল ডুবালো। অতঃপর চিকন আইল ধরে পিছন হতে মিমের হাত ধরে সামনের দিকে এগুলো সে। পাকুড় গাছের নিচে এসে সে মিমের হাত ছেড়ে মাটিতে ঘাসের উপর বসে পড়লো। মিমও তার পাশে বসে পড়লো। প্রকৃতি আজ ভীষণ প্রখর হলেও এ গাছের নিচের পরিবেশ বেশ শীতল। এদিকটায় ঝিরিঝিরি হাওয়া বইছে। সেই হাওয়ার তালে দুলছে জমির ধান গাছগুলো। সেই শব্দই মধুর এক তাল সৃষ্টি করছে। মিম ও আদ্রিশ দুজনেই চোখ বুজে সে শব্দ শুনছে৷ পরিবেশের এ দারুণ রূপ অনুভব করছে।
কিছুক্ষণ পর মিম নিকাব খুলে দু হাঁটু ভাঁজ করে তাতে মাথা ঠেকিয়ে বসে রইলো। তার দৃষ্টি এতক্ষণ যাবত প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হলেও এখন দৃষ্টি আটকে রইলো তার একান্ত পুরুষটির দিকে। সে হাঁটুতে মাথা ঠেকিয়ে আদ্রিশকে নিষ্পলক দেখছে। তার অজান্তেই অধর কোনে মিষ্টি হাসির রেখা ফুটে উঠেছে। আদ্রিশকে মন ভরে দেখতে দেখতে সে আবারো নিজের সওয়াল জবাবের দুনিয়ায় ডুবে গেলো। নিজেকে প্রশ্ন করলো,
” এ অনুভূতি, এ প্রেম ভালোবাসা কি সারাজীবন থাকবে? নাকি হঠাৎ বৃষ্টির ন্যায় হঠাৎ এ প্রেম এসে আবারও বিলীন হয়ে যাবে? তখন বুঝি দুজনের মাঝে শুধু দায়িত্ব ও বোঝাপড়া থেকে যাবে? হ্যাঁ, এমনটাই হবে হয়তো। এ রঙিন অনুভূতি মাত্র বিয়ের কয়েক মাসই স্থায়ী হয়। তারপর যে যার মতো নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সংসার গুছিয়ে নিতে, সংসার সামলাতে, চাকরি সামলাতে পূর্বের তুলনায়ও ভীষণ মনোযোগী হয়ে উঠে। কি হতো যদি সারাজীবন সেই দায়িত্বর পাশাপাশি এ রঙিণ অনুভূতিগুলোও স্থায়ী হয়ে থাকতো! একে অপরের প্রতি সেই গভীর ভালোবাসাও স্থায়ী হতো!”
এই ভেবে মিম দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তার দীর্ঘশ্বাসের আওয়াজ এসে বাড়ি খেলো আদ্রিশের কর্ণকুহরে। তৎক্ষনাৎ চোখ মেলে চাইলো সে। তার প্রতিফলনে মিম তড়িঘড়ি করে সোজা হয়ে বসে পড়লো। দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো আদ্রিশের উপর হতে। আদ্রিশ তখন মিমকে জিজ্ঞেস করলো,
” কি ব্যাপার? ওদিকে ঘুরে গেলে কেনো?”

মিম হিজাব ঠিক করার ভান করতে করতে বললো,
” চারপাশের প্রকৃতি দেখছি।”

” কেনো? এতক্ষণ যে আমাকে দেখছিলে ভালো লাগছিলো না?”

মিম আড়ালেই খানিক লাজুক হাসলো। তবে দৃষ্টি ফেরালো না। বরং অন্যদিকে চেয়েই বললো,
” কে বললো আপনাকে দেখছিলাম? আমি ওদিককার প্রকৃতি দেখছিলাম।”

আদ্রিশ বেশ টের পেলো মিমের মিথ্যে কথা। সে আর কথা বাড়ালো না। বরঞ্চ অকস্মাৎ মিমের কোলের উপর মাথা রেখে আবদার করলো,
” আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও তো!”

মিম আদ্রিশের এহেন কাজে একদম ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো। তৎক্ষনাৎ দৃষ্টি আদ্রিশের উপর স্থাপন করলো। এভাবে সরাসরি আদ্রিশের দৃষ্টির সাথে তার দৃষ্টি আটকালো। তার সমস্ত শরীর বেয়ে মৃদু শিহরণ বয়ে গেলো। খানিক কেঁপে উঠলো সে। উপরন্তু আদ্রিশের এহেন আবদারে সে কয়েক সেকেন্ড নিষ্পলক চেয়ে রইলো তাঁর দিকে। কি অকপট আবদার! মাঝে মাঝে মন হয়, ইশ সেও যদি এমন অকপট কিছু আবদার করতে পারতো! মন্দ হতো কি তাতে!

মিম মৃদু হাসলো। আদ্রিশের মাথার ঘন চুলের ভাঁজে নিজের হাত ডুবালো। আলতো হাতে তার চুলের ভাঁজে ভাঁজে হাত ঘুরাতে লাগলো। আদ্রিশ ভীষণ উপভোগ করছে এ সময়টা। হঠাৎ সে মিমকে বললো,
” এরই মাঝে একটা কল্পনা করলাম, বুঝলে মিশমিশ? ”

” কি কল্পনা?”

” এই যে, আমরা দুজন গ্রামে থাকি। আমি মাঠে কাজ করি আর তুমি বাড়িতে রান্না করো। প্রতিদিন বাড়ি থেকে দুপুরের খাবার নিয়ে এসে এই গাছের নিচে বসে তুমি অপেক্ষা করছো। আমি কাজ শেষে এসে এই গাছের নিচে বসছি। তুমি আমার জন্য খাবার বেড়ে দিচ্ছো। তারপর দুজনে একসাথে খাচ্ছি। কি সহজ সরল একটা কল্পনা না? নির্ঝঞ্ঝাট, অনাড়ম্বর একটা জীবন। যেখানে অল্পতেই আমরা দুজনে সুখী।”

আদ্রিশের এরূপ কল্পনায় মিম মৃদু হাসলো। আদ্রিশের দিকে চেয়ে বললো,
” এসব কল্পনাতেই মানায়। পারবেন কি কোনোদিন ওভাবে থাকতে?”

” হ্যাঁ, পারবো। পারবো না কেনো?”

” ওমন মনেই হয়। দুদিন থাকলেই সব শখ মিটে যায়। কেননা আপনি, আমি কেউই এসবে অভ্যস্ত না। ”

” অভ্যস্ত না ঠিক আছে।
আচ্ছা বলো তো, কখনো যদি আমার চাকরি চলে যায় তখন কি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে নাকি তুমি?”

মিম আকাশের দিকে চাইলো। ছোট্ট নিঃশ্বাস ছেড়ে তৃপ্তির হাসি দিয়ে বললো,
” আমি আপনার প্রেমিকা নই বুঝলেন যে চাকরির অজুহাতে আপনাকে ছেড়ে চলে যাবো।”

” তাহলে কি হও আমার?”

এবার মিম আদ্রিশের পানে চাইলো। বললো,
” আমি আপনার অর্ধাঙ্গিনী। আপনার বউ। বুঝলেন? আপনি চাকরি ছেড়ে দিলে যে আপনাকে ছেড়ে চলে যাবো এ চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন।”

আদ্রিশ মিমের কথাগুলোয় ক্ষণিকের জন্য আচ্ছন্ন হয়ে পড়লো। ভীষণ ভালো লাগলো তার। মেয়েটার কাছ থেকে তো এ ধরণের কথাই আশা করে সে। কিন্তু মেয়েটা যে বড্ড লাজুক। সবসময় এ ধরণের কথা সে বলে না। কালেভদ্রে বলে তাকে ক্ষণিকের জন্য আচ্ছন্ন ও অভিভূত করে তোলে। আদ্রিশ মিমের দিকে চেয়ে বললো,
” তুমি আমার বউপ্রেমিকা মিশমিশ। কেননা এই বউয়ের প্রেমে পড়েই আমি প্রেমিক হয়েছি। সেহেতু এই প্রেমিকের একমাত্র প্রেমিক তুমি। আমার বউ প্রেমিক।”

মিম খিলখিল করে হেসে উঠলো। বললো,
” আর কত নাম দিবেন আমার? এত নাম দিয়ে কাজ কি?”

” যখন যেটা ভালো লাগবে সে সম্বোধনে ডাকবো তোমাকে। ”

” আচ্ছা ডাকবেন। আমিও জবাব নিবো আপনার সম্বোধনের। ”

—————-

বাহিরে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামতে আরম্ভ হলো। কিছুক্ষণ পূর্বেও শুধুমাত্র হাওয়া বইছিলো। সারাদিনের হালকা মেঘলা মেঘলা পরিবেশ রাতে এসে প্রস্তরীভূত হয়ে বৃষ্টি রূপে নামলো। আদ্রিশ ও মিম আজকের রাতটা নোমান ও তিথির রূমে কাটাবে। রাতের খাওয়াদাওয়া শেষে কিছুক্ষণ পূর্বেই তারা রুমে ঢুকেছে।
মিম বিছানা ঠিক করতে করতে জানালার কাছে গিয়ে বসেছিলো। আর ঠিক তখনই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামতে আরম্ভ হলো। জানালার সাথে লাগোয়াভাবে খাট আছে দেখে মিম সেখানে বসেই বৃষ্টি উপভোগ করতে লাগলো। তবে বৃষ্টি আরম্ভ হওয়ার এক মিনিটের মাঝেই বিদ্যুৎ চলে গেলো। সাথে সাথে আদ্রিশ নিজের ফোনে টর্চ জ্বালালো। সে এতক্ষণ ফোনে কিছু পেশেন্টের ফাইল দেখছিলো। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় সে আলোর উৎস খুঁজতে তৎক্ষনাৎ রুম হতে বেরিয়ে গেলো। দু মিনিটের মাঝে সে হাতে মোমবাতি নিয়ে রুমে ফেরত এলো। মিম ততক্ষণে বিছানা হতে নেমে গিয়েছে। আদ্রিশের হাতে মোমবাতি দেখে জিজ্ঞেস করলো,
” চার্জার লাইট নেই?”

” নোমান বললো, একটা ছিলো। কিন্তু আপাতত চার্জ নেই। তাই মোমবাতি দিয়েই কাজ চালাতে হবে।”

” ওহ। কারেন্ট আসবে কখন?”

” আজকে রাতে কারেন্টের আশা বাদ দাও। কারণ এদিকে বৃষ্টির দিনে কারেন্ট চলে গেলে পরেরদিন ভোর রাতে আসে।”

এ সংবাদ শুনে মিমের চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার অবস্থা। সে বিস্মিত কণ্ঠে বললো,
” এর মানে আজ সারারাত এভাবে অন্ধকারে, ফ্যান ছাড়া কাটাতে হবে!”

” জ্বি ম্যাডাম। আর এমনিতেও আমরা তো ঘুমিয়েই পড়তাম। লাইটের দরকার হতো না। আর রইলো ফ্যানের কথা। নোমান একটা তালপাতার পাখা ধরিয়ে দিলো আমার হাতে। আজ সারারাত ভাগে ভাগে দুজন পাখা চালাবো। কোনো সমস্যা হবে?”

মিম মুচকি হেসে বললো,
” না। সমস্যা হবে না।
আচ্ছা, আপনি তাহলে শুয়ে পড়ুন। আর মোমবাতিটা ঐ টেবিলের উপর রেখে দিন। আমি আজকের ঐ শাড়িটা গুছিয়ে, চুল আচঁড়িয়ে তারপর ঘুমাবো। ”

” আচ্ছা। কাজ সেরে তাড়াতাড়ি এসো। কালকে আবার সকালে রওনা দিতে হবে। ”

” হুম। আপনি যান। আমি আসছি।”

আদ্রিশ মোমবাতি রেখে বিছানায় হেলান দিয়ে বসলো। ওদিকে মিম শাড়ি গুছাতে আরম্ভ করলো। কিন্তু একা হাতে ভালোভাবে শাড়ি গুছাতে অক্ষম হলো সে। ফলস্বরূপ আদ্রিশকে ডাকলো সে। আদ্রিশ এসে শাড়ির এক কোনা ধরলো, আর সে ধরলো অপর কোনা। এভাবে শাড়ি গুছিয়ে সে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গেলো। ব্যাগ হতে চিরুনি বের করে চুলে দিতেই আদ্রিশ নরম কণ্ঠে শোধালো,
” আমি আচঁড়িয়ে দিবো?”

” আপনি পারবেন? জট লাগাবেন না তো আবার?”

” আশা করছি লাগবে না। আচ্ছা, দাও তো চিরুনিটা। একটু ট্রাই করি।”
বলেই সে মিমের হাত হতে চিরুনি নিয়ে মিমের চুলে বসালো।

ড্রেসিং টেবিলের বিপরীতে রাখা মোমবাতির আলোয় রুমটা আবছা আলোকিত হয়ে আছে। হলদে আবছা আলো আছড়ে পড়ছে আয়নার উপর। সে আয়নায় ভেসে উঠেছে মিম ও আদ্রিশের প্রতিচ্ছবি। আদ্রিশ মনোযোগ সহকারে মিমের চুল আচঁড়িয়ে দিচ্ছে। আর তাই আয়নার মাধ্যমে দেখছে মিম। ভীষণ ভালো লাগছে তার। এই যে ছোট ছোট এই মুহূর্তগুলো সম্পর্ককে সবসময় তাজা রাখে। মন চায় এ মুহূর্তগুলো ফ্রেমবন্দী করে সারাজীবন নিজের কাছে রেখে দিতে। এ সময় পেরিয়ে গেলে কোনো একদিন সে ফ্রেমবন্দী স্মৃতি আঁকড়ে ধরে বলা যাবে, ‘ এমনও একটা সুখের দিন ছিলো আমাদের।’

আদ্রিশের চুল আঁচড়ানো শেষ হলে সে উৎফুল্ল স্বরে মিমকে বলে,
” নাও, জট পাকানোবিহীন চুল আঁচড়িয়ে দিলাম তোমাকে। একটা কাজ কমিয়ে দিলাম তোমার। এবার এর বিনিময়ে কিছু দাও আমাকে। ”

মিম হেসে উঠলো। জিজ্ঞেস করলো,
” কি চান এর বিনিময়ে?”

” যা চাইবো, দিবে আমাকে?”

মিম কয়েক সেকেন্ড ভাবলো। অতঃপর বললো,
” এখন পারলে দেওয়ার চেষ্টা করবো। নাহয় অন্য সময় দিবো।”

আদ্রিশ এ কথার প্রত্যুত্তর করলো না। বরং মিমের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে তাকে পিছন হতে জড়িয়ে ধরলো। কোমড়ে হাত রেখে তার কাঁধে রাখলো মাথা। তার এহেন স্পর্শে ঈষৎ চমকিত হলো মিম। কেঁপে উঠলো সে। বাইরে এখনও ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামছে। বৃষ্টির গতি বাড়ছে বৈকি কমছে না। মাঝে মাঝে গর্জে উঠছে মেঘ। থেকে থেকে এক হলকা শীতল হাওয়া বয়ে যাচ্ছে।
আদ্রিশ মিমের কাঁধে মাথা রেখে আয়না বরাবর চাইলো। মিমের প্রতিচ্ছবি স্পষ্ট ভেসে উঠছে সেখানে। মোমের হলদে আবছা আলোর ছটায় মিমের শ্যামলা মুখখানা হলদেটে হয়ে উঠেছে। নত দৃষ্টিতে হলদে রাঙা মুখখানায় লাজুক লাজুক ভাব দেখতে পাচ্ছে সে। মিমের এই লাজুক চেহারাখানা দেখলে তার ভীষণ প্রেম প্রেম পায়। মন বলে এই মেয়েটাকে বুকের মাঝে কোথাও লুকিয়ে রাখতে।

মিম নত দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে খানিক জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। তার হৃৎস্পন্দন অল্পবিস্তর বাড়ছে। দৃষ্টি তুলে কোথাও চাইতে পারছে না সে। লজ্জায় কান দুটো গরম হয়ে আসছে। সামান্য অস্থিরতা অনুভব হচ্ছে। তার অস্থিরতাকে আরো বাড়িয়ে তুলতেই যেনো আদ্রিশ প্রগাঢ় কণ্ঠে বললো,
” এখন তোমাকে ছুঁয়ে দেওয়ার অধিকার চাইলে কি ভীষণ বড় অপরাধ হয়ে যাবে মিশমিশ? ”

আদ্রিশের এহেন প্রশ্ন মিমের কর্ণকুহরে পৌঁছানো মাত্র সে দৃষ্টি তুলে চাইলো। কোনো এক অজানা ভয় ও অস্থিরতায় তার হাতজোড়া শীতল হয়ে এলো। কোনো জবাব দিতে পারলো না সে। কেননা আজ সে মোটেও প্রস্তুত নয়। কিন্তু এ জবাব সে বলবে কি করে?
আদ্রিশ মিমের জবাবের অপেক্ষায় রইলো কিছুক্ষণ। কিন্তু মিম জবাব দিতে অপারগ হলো। ওদিকে তিরতির করে কাঁপতে থাকা মোমের আলো এক হলকা হাওয়ায় ধপ করে নিভে গেলো। ক্ষণেই নিকষ কালো আঁধারে ছেয়ে গেলো রুম। আদ্রিশ মাথা তুলে দাঁড়ালো। মিমকে এক হাত দিয়ে আরো দৃঢ়ভাবে জড়িয়ে ধরলো সে। অপর হাত দিয়ে মিমের খোলা চুল সরিয়ে কাঁধে তার অধরের স্পর্শ দিলো। ক্ষণেই আপাদমস্তক কেঁপে উঠলো মিমের। অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেলো তার সমস্ত শরীর বেয়ে। হাতের দু মুঠো শক্ত হয়ে এলো। খিঁচে বন্ধ করে ফেললো দু চোখের পাতা।
তখনই অকস্মাৎ এক মেঘের গর্জনে কম্পিত হলো পরিবেশ। চমকে উঠলো মিম। আদ্রিশের নিকট হতে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো সে। কিন্তু আদ্রিশ এসবের তোয়াক্কা করলো না। বরঞ্চ সে মিমকে পাঁজাকোলে তুলে নিলো। বিছানায় এসে মিমকে শুইয়ে দিয়ে সেও পাশে শুয়ে পড়লো। কিন্তু মিমকে জড়িয়ে ধরতে নিলেই মিম তড়িতে তার বুকে মাথা রাখলো। নিভু নিভু স্বরে আবদার করলো সে,
” আজকে আপনার বুকে মাথা রেখে ঘুমাই?”

মিমের অসম্মতি বুঝতে আদ্রিশের সময় লাগলো না। সে এক হাতে মিমকে জড়িয়ে ধরে শোয়া হতে মাথা উঠিয়ে খানিক এগিয়ে মিমের মাথায় অধর ছোঁয়ালো। নরম কণ্ঠে বললো,
” তোমার অনুমতি ব্যতিত কখনো এগুবো না মিশমিশ। আজকের জন্য সরি।”

মিম প্রত্যুত্তর করলো না। কিন্তু আদ্রিশের কথায় ভীষণ স্বস্তি পেলো সে। মৃদু হেসে আদ্রিশকে জড়িয়ে ধরে বললো,
” সরাসরি না বলার পরও বুঝে যাওয়ার জন্য ধন্যবাদ ডাক্তার সাহেব।”

” নিজের মনের বিরুদ্ধে না গিয়ে আমাকে বারণ করার জন্যও ধন্যবাদ ডাক্তারনী।”
#চলবে

®সারা মেহেক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here