প্রেয়সী পর্ব ৫

0
1406

#প্রেয়সী
#পর্ব:৫
#তানিশা সুলতানা

অধরা হিসেব মেলাতে ব্যস্ত। এই হাতের লেখা মুহিতের না। এতো সুন্দর করে মুহিত লিখতেই পারে না। সব থেকে বাজে লিখা তার। আর তার থেকেও বড় কথা মুহিত বাংলা লিখতে পারে না ভালো করে। হাজারটা বানান ভুল হয় তার। তার প্রমাণ অধরা নিজে। একবার অধরার নাম লিখতে গিয়েছিলো। নামটাও ঠিকঠাক ভাবে লিখতে পারে নি। তাহলে এতোবড় চিঠি কি করে লিখবে?
এটা মুহিত লিখেই নি৷ তাহলে আসলো কোথা থেকে? আগে থেকেই কি ছিলো এখানে? না কি?

অধরা ভাবতে পারছে না। কি হচ্ছে এসব। মাহিম কিছুতেই বিবাহিত হতে পারে না। একটা মানুষ বিয়ে করে লুকিয়ে রাখবে কিভাবে? এটা হতেই পারে না। অধরাকে বোকা বানাতে চাচ্ছে কেউ।কিন্তু অধরা বোকা না। সে এই চিঠির রহস্য বের করেই ছাড়বে। চোখের পানি মুছে অধরা।
জামাকাপড় গোছানোতে মন দেয়।

মিথি আসে অধরার রুমে। একপাশে দাঁড়িয়ে থাকে। তাদের সম্পর্ক অতো ভালো না। দুজন আড্ডা দিতে পারে না। এবং এক সাথে কলেজেও যেতে পারে না। মাহমুদার কড়া আর্ডার। অধরার সাথে মেশা যাবে না। মিশলে মা*ই*র দিবে। তাই আর মিথি এগিয়ে আসে না। তবে লুকিয়ে চুকিয়ে কথা বলে এতটু আতটু।
অধরার মিথির দিকে চোখ পড়তেই মুচকি হাসে
“ভালো থেকো। মায়ের কথা শুনে চলো। কেমন?

মিথি করুন সুরে বলে
” বাবাকে দেখতে ইচ্ছে করে খুব। তোমার সাথে যদি যেতে পারতাম।

“ঠিক আছে মন খারাপ করো না।

মিথি মাথা নারায়।
অধরা লাগেজ টেনে মিথির মাথায় হাত বুলিয়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে।
প্রথমেই নজর পড়ে মুহিতের দিকে। সে কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনছে আর মাঝেমধ্যে গানের তালে নাচছে। মুহিত ফোন দেখছে বসে বসে। মাহমুদা আশেপাশে নেই। হয়ত রুমে চলে গেছে।
অধরা মাহিমের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। মাহিম ঘাড় উঁচু করে অধরার দিকে তাকায়
” রেডি?
“হুমম
মাহিম ফোন বন্ধ করে উঠে দাঁড়ায়। পকেটে ফোন ঢুকিয়ে হাঁটতে থাকে। অধরা মুহিতের দিকে আরেক পলক তাকায়। সে এখনো নাচের তালে আছে।
অধরা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে হাঁটতে শুরু করে। মুহিত পেছন থেকে বলে চিৎকার করে বলে ওঠে
“কল করবো আমি। মাঝেমধ্যে দেখেও আসবো গিয়ে। বুঝছো অধরা।

চৌকাঠ পেরিয়েছে মুহিত৷ সে দাঁড়িয়ে যায়। অধরাও দাঁড়িয়ে যায়। কিন্তু পেছন ঘুরে তাকায় না। মাহিম পেছন ঘুরে তাকায়।
অধরা বড়বড় পা ফেলে মাহিম ওবদি চলে যায়। মাহিম দাঁতে দাঁত চেপে বলে
” নতুন সিম দিবো তোকে। এই সিম যেনো অন না দেখি।
অধরা মাথা নারায়। মাহিম অধরার হাত ধরে হাঁটতে থাকে।

রাস্তায় আগে থেকেই রিকশা দাঁড়িয়ে ছিলো। প্রথমে লাগেজ তোলে মাহিম। তারপর নিজে বসে পড়ে এবং অধরার হাত ধরে তাকে উঠতে সাহায্য করে।
পড়ন্ত বিকেল। ফুরফুরে হাওয়া বইছে। বর্ষার মৌসুম। রিকশা শহর পেরিয়ে গ্রামে ঢুকছে। দুই ধার পানিতে টলমল করছে। রাস্তা ছুঁই ছুঁই পানি। মাঝখান দিয়ে রাস্তা বয়ে গেছে। সেই রাস্তা দিয়েই যাচ্ছে অধরাদের রিকশা।
অধরা চারিপাশের সৌন্দর্য উপভোগ না করে মাহিমকে দেখছে। লোকটাকে এতো ভালো কেনো লাগে তার? এই যে ইচ্ছে করছে লোকটার হাত জোড়া শক্ত করে ধরে কাঁধে মাথা রাখতে। কিন্তু সাহসে কুলচ্ছে না। এমনটা করলে ধমক দিবে নিশ্চিত।
আবার সেই চিরকুটের লেখাগুলোও চোখের সামনে ভাসছে। মাহিমের থেকে জেনে মনটাকে শান্ত করবে কি?
অবশ্যই জিজ্ঞেস করা উচিত। এতো বড় সাহস তার।

অধরা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে
“আমি একটা চিরকুট পেয়েছি। তাতে লিখা ছিলো আপনি না কি ম্যারিড?

মাহিম তাকায় না অধরার দিকে। নিজের পুরুষালি হাত দ্বারা অধরার ছোট্ট হাত জোড়া মুঠো করে ধরে। নদীর স্বচ্ছ পানির দিকে তাকিয়ে জবাব দেয়
” তুই ছাড়া আমার জীবনে দ্বিতীয় কোনো নারীর অস্তিত্ব নেই।

অধরা চমকে ওঠে। সে কি ঠিক শুনলো? মাহিমের দিকে আরও একটু চেপে বসে। কানটা এগিয়ে দেয় মাহিমের দিকে। আবারও শুনতে চায় সে এই কথা গুলো। মনের মধ্যে উত্তেজনা চলছে তার। ফাপড় লাগছে। গলাটা শুকিয়ে আসছে। শরীর ঘেমে গেছে।
অনুভূতির জোয়ারে ভাসছে সে।
মাহিম ভ্রু কুচকে তাকায় অধরার দিকে। কারণ তার ঠোঁট ছুঁই ছুঁই হয়ে গেছে তার কানে। মাহিম অন্য হাত দিয়ে অধরার কান টেনে ধরে।
ব্যাসসস অনুভূতির জোয়ার থেকে বেরিয়ে ব্যাথার জোয়ারে ভাসতে থাকে অধরা।

“কিহহহ

অধরা ব্যথিত সুরে বলে
” কিছু না ছাড়ুন।

মাহিম ছেড়ে দেয়। অধরা খানিকটা সরে বসে। মাহিমের হাতের মুঠো থেকে নিজের হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পারে না।

তবে অধরা এটা কনফার্ম হয়ে গেছে মাহিম তার প্রতি দুর্বল। এই ভেবেই ঠোঁট জুড়ে প্রসস্থ হাসি ফুটে ওঠে তার।
“মাহিম ভাইয়া আমরা রিলেশনশিপ এ যাই আজকে? আপনি আমায় ভালোবাসেন আমিও আপনাকে ভালোবাসি।

মাহিম কথা বলে না। সে প্রকৃতি দেখতে ব্যস্ত। অধরার কথার জবাব দেওয়ার থেকে প্রকৃতি দেখা বেশি জরুরি যেনো।
অধরা বিরক্ত হয়। লোকটা পাষাণ। সাথে গম্ভীর। একটু বেশিই গম্ভীর। এতো গম্ভীর হয়ে থাকার কি আছে বোঝে না অধরা।
দ্বিতীয় বার অধরা নিজ থেকে কথা বলে না। তার আত্মসম্মান প্রখর। সেও প্রকৃতি দেখতে থাকে।

বেশ খানিকক্ষণ পরে মাহিম বলে ওঠে
” অধরা ক্লাস করা কঠিন হয়ে যাবে তাই না? কয়েকটা মাস একটু কষ্ট কর। তারপর সবটা ঠিক করে দেবো।

এবার অধরা কথা বলে না। কেনো বলবে? একটু আগে অধরা বলেছিলো উনি তো জবাব দিলো না। এখন অধরাও দেবে না। হয়ে গেলো কাটাকাটি।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here