#প্রেয়সী
#পর্ব: ৯
#তানিশা সুলতানা
মাহিম মস্ত বড় অন্যায় করে ফেলেছে। সে অধরাকে বলে যায় নি। এটা নিয়ে এক আকাশ সমান পরিমাণ মন খারাপ অধরার। সে মন খারাপ করে দূরে দাঁড়িয়ে মাহিমের চলে যাওয়া দেখছে। লোকটা সাদা শার্ট পড়েছে। সাদা শার্টে বরাবরই তাকে দারুণ দেখতে লাগে।
অধরার সুদর্শন পুরুষ। এই পুরুষের দিকে তাকিয়ে অধরা সারা জীবন পার করে দিতে পারবে।
এই যে চলে যাচ্ছে মন পুরছে অধরার। আহহারে কতো দিন দেখতে পারবে না পবিত্র মুখখানি। কতোদিন অধরার নরম হাতের মুঠোয় তার পুরুষালি শক্ত হাতটা পুরতে পারবে না। গম্ভীর গলায় অধরা ডাকটা শুনতে পারবে না। চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে অধরার।
ছলছল চোখ খানিতে মুহুর্তেই বিরক্তি ছেয়ে যায় যখন মুহিত অধরার পাশ ঘেসে মাহিমের পেছন পেছন দৌড় দেয়। তার পরনে হাতাকাটা টিশার্ট আর শর্ট প্যান্ট। এই লোকটার ড্রেসআপ পছন্দ না অধরার। সারাক্ষণ মেয়েদের মতো খোলামেলা পোশাক পড়তে হবে তাকে। লজ্জা শরম নাই না কি?
মুহিতকে দেখে অধরার কান্না থেমে গেছে। মুখে ভর করেছে এক রাশ বিরক্তির ছাপ। এই বাঁদর কি যাচ্ছে না? একে সয্য করবে কিভাবে অধরা?
মাহিম গাড়ির দরজায় হাত দিতেই মুহিত এসে মাহিমকে জড়িয়ে ধরে।
মাহিমের পেছনে মনি শরীফ আরিফ মুন্নি মাহি আসিফ সবাই ছিলো।
মুহিত মাহিমকে জড়িয়ে ধরে বলে
“ব্রো একটু দোয়া করিও যেনো বউ নিয়ে মাম্মার সামনে দাঁড়াতে পারি। বউ ছাড়া বাঁচা দায় হয়ে যাচ্ছে।
মাহিম মুহিতকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নেয়। রাগী দৃষ্টিতে তাকায় মুহিতের দিকে। বাকিরা হেসে ফেলে। এই ছেলেটার কথায় কেউ মাইন্ড করে না। যেনো সে জোক্স বলেছে।
মাহিম গাড়ির দরজা খুলতে খুলতে বলে
” বাঁদরামি কমাও। বউ তোমার কপালে জুটবে না। ওর থেকে দূরে থাকো। নাহলে চোখ দুটো সাথে থাকবে না।
মাহিম গাড়িতে বসে পড়ে। মুহিত ঝুঁকে মাহিমের দিকে। কানে কানে বলে
“ওকে বউ বানিয়েই ফিরবো আমি। সাথে খুব দ্রুত চাচ্চু ডাক শোনাবো তোমায়। জাস্ট ওয়েট এন্ড সী
মাহিম ধাক্কা দেয় মুহিতকে। মুহিত খানিকটা পিছিয়ে যায়। মাহিম শো করে গাড়ি নিয়ে চলে যায়।
অধরা নিয়ের রুমের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। মনটা তার ভীষণ খারাপ। এতো এতো মানুষের মাঝেও সে একা।
তার বেলকনি থেকে উঁচু দেয়াল ডিঙিয়েও পাশের বাড়িটা স্পষ্ট দেখা যায়। সেখানে তার মা উঠোন ঝাঁড়ু দিচ্ছে।
অধরার মনে মাঝেমধ্যে প্রশ্ন জাগে” কোন সুখে সে ছেড়েছিলো এই রাজ প্রাসাদ? কিসের লোভে এতিম করলো তাকে? এখনই বা কি পাচ্ছে সে? সুখ কি তার সয্য হচ্ছিলো না?”
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে অধরা। তখনই মাথায় কারো হাতের অস্তিত্ব টের পায়। পেছন ঘুরে বাবাকে দেখে মুচকি হাসে অধরা।
“খেয়েছো বাবা?
“খেলাম বাঁদর মুহিতের সাথে।
মুচকি হেসে বলে আরিফ। দুজনই খানিকক্ষণ চুপচাপ থাকে। তারা দেখছে একটা মানুষকে। যার ওদের পাশে থাকার কথা ছিলো।
” বাবা নিঃসঙ্গতা তোমার খারাপ লাগে না? ইচ্ছে করে না নতুন করে সবটা শুরু করতে?
অনেক বছর তো হয়ে গেলো। বাঁচতে ইচ্ছে করে না সুন্দর ভাবে?
আরিফের হাসি মুখটা চুপসে যায়। সে দৃষ্টি ফিরিয়ে তাকায় মেয়ের মুখের দিকে। নিঃসঙ্গতা তাকে গ্রাস করছে। দিন শেষে অনুভব করতে পারে ভীষণ একা সে। তবুও কখনো নতুন করে শুরু করা কথা ভাবে না। ধোঁকা মানুষ একবারই খায়।
অধরা বাবার হাতটা শক্ত করে মুঠো করে ধরে। বাবার মনের কথা সে বুঝতে পারে। বয়স পেরিয়েছে তার চুয়াল্লিশ। তবুও দেখতে মাশাআল্লাহ এখনো অনেক স্মার্ট। কি সুন্দর ফর্সা গোলগাল মুখখানা। চাপ দাঁড়ি। পেটানো শরীর। যে কেউ পছন্দ করে ফেলবে তাকে।
তবুও তাকে কেউ প্রত্যাখান করেছে। হৃদয় ভেঙেছে। নিঃসঙ্গ করেছে।
আরিফ অধরার মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে।
“আমি আর ঢাকা যাবো না। এখানেই ভাইদের সাথে ব্যবসায় করবো। তোর সাথে পরিবারের সাথে থাকবো আমি। জীবনে টাকা পয়সাই সব না। ভালো থাকতে হবে। আর আমি নিঃসঙ্গ না তো। আমার মেয়ে আছে আমার সাথে। এক জীবনে সুন্দর ভাবে বাঁচতে এরকম একটা রাজকন্যাই যথেষ্ট।
বাবার কথা শুনে অধরা মুচকি হাসে। কতোবার বাবাকে বলতে চেয়েছে ” বাবা তুমি চাকরিটা ছেড়ে দাও। আমি আর তুমি মিলে নতুন করে বাঁচি চলো।”
কিন্তু বলতে পারে নি। চাপা স্বভাব যে তার।
“বাবা চলো আজকে ঘুরে আসি। কতোদিন তোমার সাথে ঘুরতে যাওয়া হয় না।
” ঠিক আছে। যা মুন্নি মাহিকে বলে আয়।
অধরা দৌড়ে চলে যায় মাহি মুন্নিকে বলতে। আরিফ তাকিয়ে থাকে পাশের বাড়িতে। যেখানে তার প্রেয়সী ক্লান্ত শরীরে ময়লা তুলছে ঝুড়িতে। আরিফ তাচ্ছিল্য হাসে
“সবার কপালে সুখ সয় না”
ঘুরতে যাওয়ার কথা শুনে সবার আগে লাফিয়ে উঠে মুহিত। সে মুন্নি মাহির সাথে কানামাছি খেলছিলো। যখনই অধরা দৌড়ে এসে বললো তারা ঘুরতে যাবে মুহিত এক লাফে অধরার পাশে দাঁড়িয়ে বলে ওঠে
“আমি রেডি চলো এখুনি
অধরা ভ্রু কুচকে তাকায় মুহিতের দিকে। এই হাপ প্যান্ট পড়ে সে যাবে ঘুরতে? তাও এই ভর দুপুর বেলা? মাথা খারাপ লোকটার।
” কি হলো অধরা চলো যাই?
মুহিত অধরার দিকে ঝুঁকে বলে
“বাঁদরের সাথে ঘুরতে যাবো না। বাবার সাথে যাবো।
বলেই অধরা রান্না ঘরে চলে যায়৷ এই লোকটার সাথে কথা বলার রুচি নেই তার।
মনি দুপুরের রান্না বসিয়েছে৷ শীলা তাকে সাহায্য করছে। মমতা বেগম মোড়া টেনে বসে আছে। এটা সেটা দেখিয়ে দিচ্ছে দুজনকে৷
অধরা মনির পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। আলু ভাজা হচ্ছে তরকারিতে দেওয়ার জন্য। এই আলু অধরার খুব প্রিয়। এক টুকরো আলু খেতে চাচ্ছে সে। কিন্তু মমতার ভয়ে তুলছে না।
তখনই মনির ফোন বেজে ওঠে। স্কিনে মাহিম নামটা জ্বল জ্বল করছে। মনি ফোন টেবিলে রেখে রান্না করছে বিধায় অধরা দেখতে পেলো।
খুশিতে অধরা ফোনটা তুলে নেয়।
” ছোট মা তুমি তো কাজ করছো।আমি কথা বলি?
মনি মুচকি হেসে মাথা নারায়। মমতা বাঁকা চোখে তাকিয়ে থাকে৷
অধরা ফোন নিয়ে চলে যায় বাইরে।
বুকটা কাঁপছে। লোকটার গলা শুনবে?
এই তো ঘন্টা খানিক আগেও শুনেছে তবুও এখন অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করছে।
কল কেটে যাবে ভেবে চট করে রিসিভ করে অধরা।
কানে নিতেই শুনতে পায় মাহিমের সুরেলা কন্ঠ
“ছোট মা অধরাকে ফোনটা দাও একটু।
অধরা মুচকি হাসে। তার খোঁজ নেওয়ার জন্যই কল করা হয়েছিলো? বাহহ বাহহহ
সাহেব দেখি কেয়ারিং হয়ে গেছে।
অধরা নিজের হাসি আড়াল করে বলে
” আমি বলছি
অধরার কন্ঠ শুনে মাহিম নিজের কন্ঠ গম্ভীর করে ফেলে
“হাহা হিহি যেনো না করা হয়।
” কার সাথে করবো? আপনি তো নেই।
“মুহিত তো আছে
অধরা বুঝতে পারে মাহিমের জেলাসি।
” উমমম হাহা হিহি করাই যেতো কিন্তু উনি তো হ*টটটটটটটট না।
সারাক্ষণ কুল মুডে থাকে। ঠিক জমে না ওনার সাথে।
মাহিম চোয়াল শক্ত করে ফেলে। নারীদের কাছে কখনোই দুর্বলতা প্রকাশ করতে নেই। তারা মজা উড়াতো জানে।
এই যে অধরা আগে কথা বলার সাহস পেতো না। কিন্তু যখনই দুর্বলতা জেনে গেছে তখন থেকেই রং বদলাতে শুরু করেছে।
“রাতে আসতে দে আমায়। হট কুল বোঝাবো তোকে।
অধরা এবার ভয় পেয়ে যায়।
” আরেহহহ সরি
ওনাকে আমার বিরক্ত লাগে। আশেপাশেও ঘেসি না। আর ঘেসবোও না। পাক্কা প্রমিজ
মাহিম স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছিলো তখনই মুহিত অধরার কান থেকে ফোন টেনে নিয়ে বলে
“প্রেয়সী কার সাথে কথা বলছিলে?
চলবে