প্রেয়সী পর্ব:১০

0
660

#প্রেয়সী
#পর্ব: ১০
#তানিশা সুলতানা

অধরা চোখ পাকিঁয়ে মুহিতের দিকে তাকিঁয়ে বলে ওঠে
“আমার বাচ্চার বাবার সাথে কথা বলতেছি৷ আপনার কোনো সমস্যা?

মুহিত ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে। লম্বা চুল গুলো পেছনে ঠেলে বলে ওঠে
” বাচ্চার বাবা তো আমি। তোমার কি এখনই চাই বেবি?
নো প্রবলেম । আজকেই ফুলসজ্জাটা সেরে
বাকিটা বলার আগেই অধরা ঠাসস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয় মুহিতের গালে। রাগে তার শরীর কাঁপছে। গা ঘিনঘিন করছে।

মাহিম থাপ্পড়ের শব্দ শুনে ঠোঁট মেলে হাসে। আরামসে চেয়ারে গা এলিয়ে দেয়। এতোক্ষণে তার মনটা শান্ত হলো। এভাবেই সে অধরাকে দিয়ে প্রতি পদে পদে নিজের অবস্থান বুঝিয়ে দেবে মাহিম।
এতোদিনে একটা ব্যাপার সে বুঝেছে। মুহিতের সাথে বেশি কথা বললে কথা গুলোই নষ্ট হবে। তাকে অন্য ভাবে শায়েস্তা করতে হবে। আর সেটা অধরাকে দিয়েই।

মুহিত গালে হাত নিয়ে বাঁকা হাসে। চোখ বাঁকিয়ে তাকায় অধরার দিকে।
“ভালোবাসা হলে রঙিন প্রজাপতিরর মতো। তাকে আগলে রাখতে হয়। ছেড়ে দিলে উড়ে যাবে আর শক্ত করে ধরলে ম*রে যাবে। তোমায় আমি আগলে রাখবো।
উড়ার সুযোগ দিবো না। গড প্রমিজ।
যে গালে থাপ্পড় দিয়েছো সেই গালে চুমুও দিতে হবে।

অধরা হাত শক্ত করে মুঠ করে ফেলে। ইচ্ছে করছে আরও একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিতে। কিন্তু নিজেকে সংযুক্ত করে।
মাহিম ফেনটা শক্ত করে চেপে ধরে কানে। তার জানা আছে মুহিত যা বলে তাই করে। অধরা মুহিতের গালে চুমু খাবে?
ভাবতেই মাথা গরম হতে থাকে মাহিমের। সব কিছু ভেঙে গুড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।

অধরা হনহনিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।
মুহিত বাঁকা হাসে। দাঁড়িতে হাত বুলাতে বলাতে বিরবির করে বলে
” ভেবেছিলাম ভালোবেসে পোষ মানাবো কিন্তু ভালোবাসা তুমি ডিজার্ভই করো না। এবার দেখো মুহিত কি করে।

মাহিম কল করে মাহমুদা বেগমকে। সে পরিক্ষার খাতা দেখছিলো। কলেজ থেকে ছুটি নিয়েছে বেশ কিছুদিনের জন্য। শরীরটাও তেমন ভালো যাচ্ছে না।
মিথি মায়ের পাশে বসে বই পড়ছে।
তখনই ফোন বেঁজে ওঠে। মাহমুদা চশমা ঠিক করে তাঁকায় ফোনের দিকে। মাহিম নামটা দেখে খুশি হয়। যাক ছেলে তাহলে মায়ের কথা মনে করেছে।
সময় নষ্ট না করে কল রিসিভ করে তিনি
“মা কেমন আছো?
মাহিমের নরম গলা।
” যেমন রেখেছো।
“সকালেই চলে এসেছি। এখন হাসপাতালে আছি আমি।
মুহিত রয়ে গেছে ওই বাড়িতে। শুনলাম অধরাকে নিয়ে না কি আজকে ঘুরতে যাবে। তোমার ছেলে যে অধরাকে পছন্দ করেছে সে খবর রাখো?
দুদিন পরে দেখবে বিয়ে করে বাড়িতে তুলবে৷ কি করবে তখন তুমি?

মাহমুদা নরেচরে বসে। বড় ছেলে তার কথায় উঠলে বসলেও ছোট ছেলে তাকে পাত্তা দেয় না।
“ওই মেয়েকে আমি ছেলের বউ হিসেবে কখনোই মানবো না৷ খু*ন করে দিবে ওকে।

মাহিম একটু হাসে। তারপর আবারও শক্ত গলায় বলে
” মুহিতকে বিয়ে দিয়ে দাও মা। মনার সাথে বিয়েটা হয়ে গেলে সে সুধরে যাবে।

“কিন্তু

” আমি মানাবো মুহিতকে। তুমি পারলে সামনে সপ্তাহেই বিয়ের ব্যবস্থা করো। আর হ্যাঁ আগে থেকে মুহিতকে কিছু বলার দরকার নেই। জাস্ট মনার সাথে কথা বলে প্লানিং করো। বাকিটা আমি দেখছি।

“কোনো গন্ডগোল হবে না তো?

” মাম্মা আমি আছি তো।

মাহিম কল কেটে দেয়। আবারও চেয়ারে গাঁ এলিয়ে দিয়ে বুক চিরে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
“মাহিম চৌধুরী হারতে শেখে নি। তাকে মাত দেওয়া বয়স বা বুদ্ধি তোমার এখনো হয় নি মুহিত। এবার দেখতে থাকো আমি কি করি

ঠোঁট এলিয়ে হাসে মাহিম। বুকের ওপর থেকে পাথর সরে গেছে তার।
তখনই জব্বার একটুখানি দরজা খুলে উঁকি দেয়।
” স্যার পেশেন্ট পাঠাবো?
তারা অপেক্ষা করছে?

মাহিম সোজা হয়ে বসে কলম হাতে নিয়ে বলে
“বেশি সিরিয়াস যে তাকেই আগে পাঠাও

জব্বার মাথা নারিয়ে চলে যায়।

🌸🌸
“বাবা” শব্দটার মধ্যেই মিশে থাকে দায়িত্ব, কর্তব্য, এক আকাশ সমান পরিমাণ ভালোবাসা, ভরসা, আর বিশ্বাস। বাবা ছাড়া দুনিয়াটা বিষাদময়। এই তো কিছুদিন আগেও বাবা সাথে ছিলো না। কাকিঁমার বাড়িতে পড়ে থেকে কতোই না অত্যাচারিত হয়েছে। এখন বাবা পাশে আছে কেউ কিছু বলার সাহস পায় না। দাদি অধরাকে দেখতেই পারতো না, সারাক্ষণ বকা দিতো। সেই দাদিও এখন কথা বলে না। চুপচাপ থাকে। কারণ একটাই এখন অধরার পাশে তার বাবা আছে৷ কারো সাধ্য নেই তাকে কিছু বলার।

আজকে একটু বেশিই সেজেঁছে অধরা। বাবার সাথে বেরোবে একটু সাজবে না?
চোখে গাড়ো কাজল ঠোঁটে লিপস্টিক দুই গাল একটুখানি লাল করেছে। কোমর ছাড়িয়ে লম্বা চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে সাদা একটা থ্রি পিছ পড়ে নিয়েছে। ব্যাস তার সাঁজ শেষ।
হাইট টা বেশ কম অধরার। উঁচু জুতো ছাড়া তাকে মানায়ই না।

আরিফ মুন্নির হাত ধরে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। অধরার অপেক্ষায় তারা৷ কারেন্ট চলে গেছে। বাড়ির ভেতরে প্রচুর গরম। তাই বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে।
মাহি যাবে না তার পেট ব্যাথা।
তখনই মুহিত এক লাফে আরিফের সামনে চলে আসে
“মেঝো পাপা আমিও যাবো।

আরিফ হাসে। হাত বাড়িয়ে মুহিতের চুল ঠিক করে দেয়।
অধরা তখনই বেরিয়ে আসে। মুহিতকে দেখে মেজাজ বিগড়ে যায়। তবুও কিছু না বলে বাবার পাশে এসে দাঁড়ায়। আরিফও সাদা শার্ট পড়েছে।

” পাপা চলো রিকশা করে যাই

মুহিত বেশ জানে অধরার রিকশা পছন্দ। তাই অফারটা দিলো।
অধরা ধরতে পারলো মুহিতের মনোভাব। তাই সে বলে ওঠে
“বাবা গাড়ি করে যাবো।

আরিফ মেয়ের কথায় সায় জানায়। ড্রাইভ করতে দেয় মুহিতকে। আরিফ অধরাকে নিয়ে পেছনে বসে। মুহিতের পাশে মুন্নি বসেছে। বাচ্চাটার বয়স ৫ হলে কি হবে? একদম পাকনা বুড়ি। সে সামনে ছাড়া বসবেই না।

গাড়ি ছুটবে তখনই আরিফের চোখ পড়ে রাস্তার পাশে। সেখানে রাস্তা পরিষ্কার করার কাজ করছে একদল মহিলা। তাদের মধ্যে শিউলিও আছে। সে কোদাল ঝাঁকা রেখে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অধরার দিকে। মেয়েকে দেখলো বেশ অনেকদিন পরে। হয়ত বুকে টেনে নিতে ইচ্ছে করছিলো। হয়ত একটুখানি কাছ থেকে দেখতে ইচ্ছে করছিলো।
আরিফ তাচ্ছিল্য হাসে। অধরার মাথাটা নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। গাড়িটা চলে যায়।

শিউলি নরেচড়ে ওঠে। তার পাশে থাকা জরিনা বলে ওঠে
” পরির মতো দেখতে হয়েছে তোর মেয়েটা। ইসস ইচ্ছে করে কাছ থেকে একটু দেখতে। কিন্তু আমাদের মতো গরীবদের কাছে সে কখনোই আসবে না।

শিউলির চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে। তার নারী ছেঁড়া ধন। কতো বড় হয়ে গেছে। পুতুলের মতো দেখতে। তাকে কাছ থেকে দেখতে তো শিউলিরও মন কাঁদছে৷
কিন্তু ভাগ্য কখনোই এটা সম্ভব হতে দেবে না।

জরিনার পাশের আরেকটা মহিলা বলে ওঠে
“শিউলির মেয়ে বলে পরিটাকে অপমান করিস না। সে আরিফ চৌধুরীর মেয়ে। এরকম কলঙ্কিনী মা তার হতেই পারে না।

শিউলি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। এসব তাকে সব সময়ই শুনতে হয়।
” আমারই তো মেয়ে। আমার কলিজা। কপালের দোষে হারিয়েছি তাকে।
বিরবির করে বলতে থাকে শিউলি।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here