প্রেম পিয়াসী পর্ব ৭

0
659

#প্রেম_পিয়াসী 🌼🍁
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্ব_______৭.

উত্তরে মেঘেদের হাট বসেছে। পুনঃপুন, মেঘেদের সংঘর্ষে গর্জন করছে অন্তরীক্ষ। মনে হচ্ছে, আকাশ খানা মাঝখান থেকে ভে-ঙে পরবে এক্ষনি। ইলহাম বেশ মনোযোগ দিয়ে দেখছে তা। গাড়ির সীটের সাথে পুরোপুরি লেপ্টে বসেছে সে। শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা আজ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশ খানিকটা বাড়তি। জ্বর এসেছে বোধকরি। কিন্তু সে এ বিষয়ে উদাসীন।

রাদ গাড়ির স্টিয়ারিং ঘোরাতে ঘোরাতে আঁড়চোখে একবার তাকালো ইলহামের মলিন মুখশ্রীতে। মেয়েটা আর ঠিক কতটা সহ্য করতে পারবে তা যে তার ধারণাতীত। নিজের ভেতরে কি নিদারুন য-ন্ত্র-ণা চেপে রেখে চুপটি করে বসে আছে। যেন কিছুই হয়নি। অথচ তার ভেতরটা ঠিক কতটা ছটফট করছে তা হয়তো তার বোঝার সাধ্যে নেই। মেয়েরা মায়ের জাত। লোকে ঠিকই বলে। মেয়েদের ন্যায় সহ্য শক্তি এই পৃথিবীর কারোর মাঝে নেই।

—-“খুব বেশি পেইন হচ্ছে, সুইটহার্ট?”

রাদের চিন্তান্বিত কন্ঠে ধ্যান ভা-ঙে ইলহামের। হঠাৎ নড়েচড়ে বসতে বসতে মুখের সামনে ঝুঁকে পড়া চুল গুলো কানের পাশে গুঁজে নেয়। আমতা’আমতা করে বলে,

—-“ন..না।”

ইলহামের ইতস্তত গলায় আবারও আঁড়চোখে তাকায় রাদ। ইলহামকে স্বাভাবিক করার জন্য বলে,

—-“শুনেছি এই সময় ডার্ক চকলেট খেলে অনেকটা রিলিফ হয়। ডেস্কের ভেতর রাখা আছে। খুললেই পাবে। খাবে?”

ইলহাম না সূচক মাথা নাড়ে। পূর্বের ন্যায় ইতস্তত গলায় বলে,

—-“খেতে ইচ্ছে করছেনা।”

—-“খেলে হয়তো রিলিফ হতো কিছু টা। একটু প্লিজ?”

রাদের অনুনয়ী কন্ঠস্বর মন কেঁড়ে নিলো ইলহামের। মনে মনে ভারী খুশিও হলো সে। তবে মুখে প্রকাশ করলো না। এগিয়ে গিয়ে ডেস্ক খুলতেই দৃশ্যমান হলো দুটো বড় আকারের চকলেট। ইলহাম চকলেট দুটো উঠিয়ে আনতে আনতে ভ্রু কুঁচকালো। বলল,

—-“কার জন্য এমন করে চকলেট নিয়ে ঘোরেন?”

ইলহামের প্রশ্নে অধিকার বোধটা ঠিকই ধরতে পারলো রাদ। মনেমনে খানিক হেঁসে ইলহামকে জেলাস করানোর উদ্দেশ্যে বলল,

—-“যখন যার প্রয়োজন। এই মনে করো এখন তোমার প্রয়োজন হলো!”

ইলহাম রোষপূর্ণ কন্ঠে বলে ওঠে,

—-“মানে? আপনি কি মেয়ে নিয়ে ঘোরেন নাকি?”

—-“হ্যাঁ! তো আর কি করবো বলো? সবাই তো আর তোমার মতো নয়। তোমার কোনো আইডিয়া আছে, মেয়েরা রাদ বলতে কতটা পাগল?”

ইলহাম ফুঁসে উঠলো। তেতে ওঠা গলায় বলল,

—-“তাই বলে নিজের পাশের সীটে মেয়েদের বসিয়ে রাখবেন!”

—-“হ্যাঁ! তাছাড়া আর কি করবো…”

—-“গাড়ি থামান। আমি যাবো না আপনার সাথে!”

রাদ কথাটা সম্পূর্ণ করার পূর্বেই হাতের চকলেট ফেলে দিয়ে রা-গান্বিত হয়ে বলে উঠলো ইলহাম। রাদ চোখ জোড়া গোলগোল পাকিয়ে তাকালো। অবাক হওয়ার তীব্র প্রচেষ্টা চালিয়ে বলল,

—-“কি হলো? তুমি হঠাৎ রাগছো কেন?”

—-“বললাম তো গাড়ি থামান। সোজা কথা বুঝেন না? নয়তো আমি এই ঝাপ দিলাম গাড়ি থেকে।”

রাদ আঁতকে উঠল ইলহামের কথায়।

—-“হোয়াট! ওয়েট আ সেকেন্ড!”

বলেই গাড়ি পার্ক করলো রাদ। গাড়ি থামার সঙ্গে সঙ্গেই গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো ইলহাম। রাদ কিছু বলার সুযোগ অব্দি পেলোনা।

—-“কোথায় যাচ্ছো? আরে ওয়েট!”

বলতে বলতে রাদও নেমে এলো গাড়ি থেকে। ইলহাম সামনের দিকে হেঁটে গেলো অনেকটা। রা-গে তার শরীরে ফো-স্কা উঠতে লাগলো। কত্ত খারাপ লোকটা। তারই ভুল! সেই বারবার ভুল করে তাকে চিনতে। একজন মা-ফিয়া নাকি হবে, এক নারীতে আসক্ত! এসবও কি সম্ভব?

—-“সুইটহার্ট…”

রাদ দ্রুত পায়ে এসে ইলহামের হাত ধরে ফেললো। কেউ হাত ধরে নেওয়াতে ইলহামের পায়ের গতি থেমে গেলো। পেছন মুড়ে তাকিয়ে যখন দেখলো রাদ তখন যেন রাগটা আরও তরতর করে বাড়তে লাগলো।

—-“কি সমস্যা, হ্যাঁ! হাত ধরেছেন কেন? হাত ছাড়ুন!”

—-”কোথায় যাচ্ছো তুমি? আরে বাবা কি হয়েছে হঠাৎ! এতো রে-গে গেলে কেন?”

ইলহাম অবাক হওয়ার চেষ্টা করে। তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বলে,

—-“ও রিয়েলি? আপনি জানেনই না কেন রা-গ করছি?”

রাদ ঠোঁট উল্টায়। কয়েক মুহুর্ত ভাবে। অতঃপর মাথা চুলকে বলে,

—-“আমি সত্যি বুঝতে পারছিনা।”

ইলহাম ফুঁসে ওঠে রা-গে। রাদের থেকে টেনেটুনে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে,

—-“ওকে ফাইন। কোনো প্রয়োজন নেই আপনার চিন্তা করার। এবার আমার হাত ছাড়ুন।”

—-“আচ্ছা ছাড়ো সব কথা। আমায় একটা কথা বলো, তুমি কি কোনো ভাবে হিং-সা করছো। ইফ আ’ইম নট মিস্টেকেন, ইউ আর বিয়িং জেলাস!”

ইলহাম সা-পে-র ন্যায় ফোঁ-স করে উঠলো। পূর্বের ন্যায় বেশ জোরাজোরি করলো নিজের হাতটা ছাড়িয়ে আনার। কিন্তু যেই না ব্যর্থ হলো ওমনি রা-গটা যেন আরও দিগুণ বেড়ে গেলো। তাই পূণরায় ক্ষে-পা স্বরে বলে উঠলো,

—-“আমার খুব সময় তো আপনার এসব ফালতু বিষয় নিয়ে জে-লাস ফিল করার। অসহ্যকর লোক একটা।”

রাদ আচমকা হেঁচকা টানে কাছে নিয়ে এলো ইলহামকে। তার হাত দুটো নামিয়ে দিলো ইলহামের কোমরে। দু-হাতে ইলহামের কোমর জড়িয়ে তাকে মিশিয়ে ধরলো নিজের সাথে। ইলহাম জড়োসড়ো হয়ে পরলো রাদের ছোঁয়ায়। মুখের কথা বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনুভূতিরাও স্তব্ধ হয়ে পরলো যেন। রাদ মোহিত হাসলো। ফিসফিসিয়ে বলল,

—-“প্রেমে পরেছো তাই না? কেন মানছো না বলোতো?”

—-“ফালতু কথা একদম। আমার প্রেমে পরার মতো এতো অঢেল সময় নেই।”

ইলহাম তটস্থ গলায় জবাব দিলো। নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে গেলে রাদ আরও শক্ত করে হাতের বাঁধন। ইলহাম শ্বাসরুদ্ধ করে ন্যায়। ঢোক গিলে কিছু বলতে যায় তার পূর্বেই অদ্ভুত মোহনীয় স্বরে গেয়ে ওঠে রাদ,

—-“ভালোবাসি বলে দাও আমায়,
বলে দাও,হ্যাঁ সব কবুল।
তুমি শুধু আমারি হবে,
যদি করো মিষ্টি এই ভুল।
হাতে হাত রাখতে পারো~
সন্ধি আঙ্গুলে-আঙ্গুল।
ভালোবাসা বাড়াতে আরওও
হৃদয় ভীষণ ব্যাকুল।”

ইলহাম পলকহীন চেয়ে রইলো রাদের পানে। লোকটা এমন কেন? কত অল্পতেই ভীষণ মায়ায় জড়িয়ে নেয়। কি অদ্ভুত ক্ষমতা তার।

—-“তোমার চোখ বলে, ‘ভালোবাসো তুমি আমায়। মন বলে পা-গলের ন্যায় ভালোবাসো আমায়। অথচ মুখ কি নিদারুন ভাবে অস্বীকার করে যায়। তুমি টের পাওনা আমার ব্যাকুল হৃদয়ের আ-র্ত-নাদ? একদম বুঝতে পারোনা।”

—-“না। আ..আমি বিশ্বাস করিনা আপনার মতো একজন পা/ষা/ণ মানুষ কাউকে ভালোবাসতে জানে।”

রাদ কপাল কুঞ্চিত করে।

—-“আজও তোমার মনে হয়, আমি কাউকে ভালোবাসতে পারিনা?”

—-“হ্যাঁ। আর কেবল আজই নয়। আমি সারাজীবন জানবো,আপনার মতো পা/ষা/ণ ব্যক্তি কাউকে ভালোবাসতে জানেনা।”

—-“আমার অপরাধ?”

ব্যাকুল কন্ঠে প্রশ্ন করে রাদ। ইলহাম জবাব দেয়না। মুহুর্তেই কুলুপ এঁটে ন্যায় মুখে। রাদ ইলহামের নিশ্চলতায় ছোট্ট করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। কথা বাড়ায় না আর। ইলহামের হাত ধরে নিয়ে যায় গাড়িতে। অতঃপর যাত্রা শুরু করে মালিহার বাড়ির উদ্দেশ্যে।

_______________

ছোট্ট এক আঙ্গুলের সমান ধারালো ছুরিটায় কা/টা পড়ে মিশা সরকারের একটা আঙ্গুল। আঙ্গুল টা নীচে পড়তেই র//ক্ত ভেসে ওঠে পুরো ফ্লোর। লোকটা বাঁচার আশায় আ/র্ত/নাদ করে চেঁচাতে থাকে। রাদ র’/ক্তা/’ক্ত ছুরিটা রুমাল দিয়ে মুছতে মুছতে বসে পরে রকিং চেয়ারটায়। গা এলিয়ে টেনে নিঃশ্বাস নিয়ে বিরক্ত দৃষ্টিতে তাকায় একটা ছেলের পানে। রাদের তাকানোতে ছেলেটা বুঝে যায় রাদের আদেশ। তাই দ্রুত পায়ে তেড়ে গিয়ে ঠেসে ধরে মিশা সরকারের মুখ। অমনি বন্ধ হয় ঝনঝন করে বাজতে থাকা তার গলাস্বর।

—-“বড্ড বেশি চেঁচায়!”

বিরক্ত গলায় বলে ওঠে রাদ।

—-“একটা আঙ্গুলই তো কা/’টা পড়েছে। তাতে কি এমন অসুবিধা হলো বুঝিনা। হ্যাঁ, অসুবিধা তো একটা হয়েছে। সেটাও তো বেশি বড় নয়। ছোট্ট। কিরে সামির? বল?”

—-“হ বস। ঠিক কথা।”

সামির মিশা সরকারের মুখটা আরও জোর দিয়ে চেপে ধরে বলে উঠলো। রাদ বাঁকা হাসলো। বলল,

—-“কি অসুবিধা বলতো?”

—-“এই যে, আপনারে কথা দিয়া আর যেন কারোর সাথে ডিল সাইন করতে না পারে। বস? এডি সব হইলো নেমকহা’রা’মের দল। বুঝেন না।”

—-“ইয়েস। এটা তো স্রেফ ডেমো মিস্টার মিশা সরকার। সামনে আরও কতকি অপেক্ষায় আছে তোমার! ইউ হ্যাভ নো আইডিয়া। যাহ! নিয়া যা শা/লা/রে। ডেইলি মনে করে থার্ড ডি/গ্রি ট/র্চা/র করবি। আর যদি না পারিস।..”

—-“এ-একশ বার পারুম বস। আপনি এতো চিন্তা নিয়েন না। এই সামির থাকতে আপনার কোনো টেনশন নাই।”

রাদ মৃদু হেসে মাথা নাড়ে। যাওয়ার জন্য উদ্যত হয়ে বলে,

—-“আপডেট জানাতে থাকবি। ম/রা/র আগ পর্যন্ত ঠিক এমন করেই যেন আ/র্ত/না/দ করতে থাকে।”

—-“ওকে বস।”

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here