প্রেমোদ্দীপক পর্ব ২১

0
641

#প্রেমোদ্দীপক। (পর্ব-২১)
আফিয়া খোন্দকার আপ্পিতা

‘একান্ন, বায়ান্ন, তিপ্পান্ন, চুয়ান্ন…’ মীরা সামনের দিকে তাকিয়ে গুনে যাচ্ছে। লেকচারার মঞ্চে হেঁটে হেঁটে লেকচার দিচ্ছে অভীক। চারদিকে চোখ ঘুরাতে গিয়ে খানিক পরপর তাকাচ্ছে তাহিয়ার দিকে। আর সেটা গণনা করছে মীরা। তাহিয়া ওর পাশেই বসে আছে। গণনা করার মাঝে মীরা বিস্মত স্বরে বলল,
‘তাহিয়া, আজ স্যার একটু বেশিই তাকাচ্ছে তোর দিকে, ঘটনা কী বলতো?’

তাহিয়ার দৃষ্টি অভীকের দিকে নিবদ্ধ। ঠোঁটের কোণে হাসি, চোখ ভরতি মুগ্ধতা। এই মানুষটাকে যেন প্রতিক্ষণে নতুন করে আবিস্কার করে, মুগ্ধতারা নতুন রূপে হানা দেয়। মুগ্ধতায় ডুবে থাকা তাহিয়ার কানে পৌঁছল মীরার কথা। অভীকের দিকে তাকিয়ে জবাব দিল,
‘ মনে মন মিলে যাওয়ার পর তো দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলবেই।’

মীরা কিছু সময় নিয়ে ভাবল কথাটা নিয়ে। বুঝে উঠতেই বিস্মিত চোখে চাইল। চেয়ে রইল কিছুক্ষণ, অনেকক্ষণ।

টপিক বুঝানোর পর মার্কার কলম হাতে নিল অভীক। হোয়াইট বোর্ডে মার্কার কলম দিয়ে লিখে গেল অনবরত। ক্লাসের সব ছাত্রছাত্রীর মনোযোগ বোর্ডে। সবার হাতে কলম, টেবিলের উপর খুলে রাখা খাতা। লিখা শেষে সরে গেল সে। এবার ছাত্রছাত্রীরা লেখা শুরু করল। লেকচার টেবিলের সামনে এসে চোখ ঘুরাতেই ভ্রু কুঁচকাল। সবাই লিখছে, চোখমুখে গম্ভীর ভাব। একমাত্র তাহিয়া ছাড়া। পিছনের এক টেবিলে বসে গালে হাত দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। সে কী হাসি ঠোঁটে! চোখাচোখি হতেই তর্জনী আর বৃদ্ধা আঙ্গুলের ডগা বৃত্তাকারভাবে লাগিয়ে ‘সুইট সাইন’ দেখাল। যার
অর্থ, ‘আপনাকে সুন্দর লাগছে। ‘

অভীক বেচারা ইশারা দিতে ও পারল না। শুধু বলল,
‘সবাই টপিকটা নোট করে নিন। একজন ও বাদ যাবেন না। ‘

ইঙ্গিতটা যে তাহিয়ার দিকে তাক করা হয়েছে, তা বেশ বুঝতে পারল তাহিয়া। তবু ও সে নড়ল না, নিজের অবস্থান পরিবর্তন করল না। চেয়ে রইল, হেসে গেল। অভীক মঞ্চ থেকে নেমে ছেলেদের সারির মাঝে হাটা ধরল। সবার লেখা দেখে এগিয়ে গেলো মেয়েদের দিকে। যেতে যেতে মনে মনে দুইবার ‘তাহিয়া, আপনি’ শব্দ দুটো আওড়াল। ছাত্রছাত্রীর সামনে ‘হিয়া, তুমি’ ডাক বের হয়ে গেলে ব্যাপারটা লজ্জাজনক হবে।
পেছনের দিকে আসতেই মীরা ভীত স্বরে দোয়া ইউনুস পড়তে লাগল। সাথে দোয়া করল,
‘আল্লাহ, এই যাত্রায় বাঁচিয়ে দাও। পরের যাত্রায় আর ক্লাস করব না।’

অভীককে ওর দিকে আসতে দেখে তাহিয়ার হাসি চওড়া হলো। সচেতন চোখে চেয়ে রইল, অভীক কী করে দেখার জন্য। তাকানোর মাঝে মীরার কথার উত্তর দিল,
‘তোর স্যার আজ বকবে না। আমার রাগের কথা ভেবে বকার আগে অন্তত দশবার ভাববে। আপাতত নিশ্চিন্তে থাক।’

মীরার ভয় কমল কিছুটা। অভীক এসে দাঁড়াল তাদের টেবিলের সামনে। পেছনের টেবিলের একটা মেয়ের লেখায় ভুল ধরে দিল। তারপর চারদিক চোখ বুলিয়ে তাহিয়া উদ্দেশ্যে বলল,
‘আপনি লিখছেন না কেন?’

তাহিয়া হাসি থামাল। নিষ্পাপ ভঙ্গিমায় বলল,
‘কলম আনিনি, স্যার।’

অভীক জানে, এটা অযুহাত। তাহিয়ার ব্যাগ খুঁজে দেখলে কয়েকটা কলম পাওয়া যাবে। এসব না লেখার অযুহাত। ফাঁকিবাজ একটা! অভীক সন্দেহী দৃষ্টিতে তাকাল এক পলক, ভ্রু জোড়া বাঁকানো তার। তাহিয়ার মুচকি হাসল। জানান দিল, অভীকের ভাবনাই ঠিক। সে কলম এনেছে, লিখবেনা বলেই তৃতীয় হাতের সাহায্য নিচ্ছে।
তাহিয়ার ‘অযুহাত’ নামক ‘তৃতীয় হাত’ এর আশ্রয় নেয়া দেখে হার মানার পাত্র নয় অভীক। বাস্তবিকভাবেই, বোর্ডের লেখাটা গুরুত্বপূর্ণ। এ টপিক থেকে প্রতিটা পরীক্ষায় প্রশ্ন আসে। নোট না করলে পরীক্ষায় দিতে পারবে না। তার অধীনে থাকা অবস্থায় আর যাই হোক তাহিয়াকে পরীক্ষায় খারাপ করার সুযোগ দিবে না। কঠিন নয় সহজ পথ বেছে নিবে ওকে পড়ালেখায় মনোযোগী করতে।

অভীকের বুক পকেটে সোনালী কালারের সুন্দর একটা সিগনেচার পেন রাখা। পকেট থেকে কলমটা বের করে তাহিয়ার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
‘এটা দিয়ে লিখুন। এ টপিক থেকে পরীক্ষায় প্রশ্ন আসবে। এখন না লিখলে পরে হাজার খুঁজে ও পাবেন না।’

ঘুরিয়ে প্যাচিয়ে বলল, এখন না লিখলে পরে আমি তোমাকে এই নোট দিব না। তাহিয়া ইঙ্গিত বুঝল না, বুঝার চেষ্টা করল না। তার ভাবনায় আছে কলমটা। তাহিয়া ভাবেনি অভীক ওকে কলম দিবে। বিস্মিত হয়ে চাইল, তারপর কলমটা নিয়ে নিল। কথায় ধন্যবাদ জ্ঞাপনের পরিবর্তে চমৎকার হাসল। অভীক সেই হাসি গ্রহণ করে স্বরটা কোমল করে বলল,
‘এবার লেখুন।’

সামনে পা বাড়াল পরপরই। তাহিয়া কলমটার দিকে খানিক তাকিয়ে লেখা শুরু করল। অনিচ্ছাগুলো ইচ্ছেতে রূপ নিয়েছে কেন যেন। অভীক মঞ্চ অবধি চলে যেতেই তাহিয়ার পেছনের টেবিলের একটা মেয়ে বলল,
‘ অভীক স্যার কলম দিয়েছেন তোকে? আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না।’

মীরা মুখ টিপে হেসে বিড়বিড়াল,
‘অভীক স্যার শুধু কলম নয়, মন ও দিয়েছে ওকে। সেটাও তো আমারও বিশ্বাস হচ্ছে না। ‘

তারপর টিপ্পনী কাটল, ‘চোখে চোখে আলাপন, কলম আদান প্রদান। বাহ্! ক্লাসরুমে ছাত্রী শিক্ষকের প্রেম তো দেখি জমে ক্ষীর।’

তাহিয়া শুনল সে কথা। মুখ টিপে হাসল শুধু। লিখতে লিখতে গান ধরল, বসন্তের গান।

.
ক্লাস শেষে বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে বের হলো তিন বান্ধবী। অবেলার বৃষ্টি এসে হানা দিল তখন। আকাশে মেঘের গর্জনে ভবন কেঁপে উঠছে। বারান্দায় মলিন মুখে দাঁড়িয়ে রইল ওরা। এখন বাড়ি যাবে কিভাবে! মীরা শৈলী আফসোসের ঝুলি খুলে বসেছে। তাহিয়ার আকস্মিক চোখ পড়ল অফিসরুমের দিকে। তৃষ্ণার্ত চক্ষু কথা বলে উঠল যেন। চোখের পিপাসা মেটাতে এগিয়ে গেল অফিস রুমের দিকে। মীরা পিছু ডেকে জিজ্ঞেস করল,
‘কোথায় যাস?’

পিছু ফিরে উত্তর দিল তাহিয়া, ‘কলমটা দিয়ে আসি।’

‘কলম নয় বল, মন দেয়া নেয়ার পর্ব চলবে এখন। ডিপার্টমেন্টটাকে তোরা রমনা পার্ক বানিয়ে দিবি যা দেখছি।’ মুখ বাঁকিয়ে বলল মীরা। তাহিয়া উত্তর না দিয়েই চলে গেল।

অফিস রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে ভেতরে উঁকি দিল। গভীর মনোযোগ দিয়ে কী যেন লিখছে অভীক। ভালো করে পরখ করে দেখা গেল, এটেন্ডেন্স খাতায় নাম তুলছে। অভীকের বিপরীত দিকে ডেস্কে বসে আছেন ফারদিন স্যার। মধ্যবয়স্ক শিক্ষক গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু লিখছেন। তাহিয়া পরখ করল। স্যারের ধ্যান এদিকে আসছে কি না যাচাই করল। ফলাফল নেতিবাচক আসতেই ধীর পায়ে অভীকের ডেস্কের দিকে এগুলো। ডেস্কের বিপরীত পাশে দুটো চেয়ার। চেয়ার ঘেঁষে দাঁড়াল তাহিয়া।

অভীক নিজের অবস্থান পরিবর্তন না করে বলল,
‘কিছু বলবেন, মিসেস?’

অভীকের মুখে ‘হিয়া, হিয়ারানী’ ডাক দুটোর মতো ‘মিসেস ‘ডাকটাও চমৎকার শুনায়। লোকটার প্রতিটা কথা, কাজে মুগ্ধ হয় সে। শুধু কথা, কাজে নয় রূপেও মুগ্ধ হয়। শুনেছে, কারো প্রতি মায়া জন্মে গেলে না কি তার চেহারাটা কুৎসিত হলেও সুন্দর লাগতে শুরু করে। লোকটাকে কি বাস্তবিকভাবেই সুন্দর লাগে না কি, প্রেমে পড়ায় ওর কাছে সুন্দর লাগে কে জানে। এই যে এখন ডিপ গ্রীণ কালার শার্ট পরে আছে, হাতা কনুই অবধি গুটিয়ে মনোযোগ দিয়ে লিখছে, এতেও কী চমৎকার লাগছে! কী সুন্দর মুখশ্রী ওর! সুন্দর একটা ব্যক্তিত্ব ফুটে উঠছে, যা তাহিয়াকে মুগ্ধ করছে। এক কথায়, মুগ্ধতার ফুল প্যাকেজ অভীক। ভাবনার মাঝে অস্ফুটস্বরে তাহিয়া বলে ফেলল,
‘আপনাকে সুন্দর লাগছে।’

তাহিয়ার কথা কানে যেতেই অভীক ভ্রু কুঁচকাল। চলতে থাকা কলমটা স্থবির হলো। চোখ তুলে তাকাল তাহিয়ার দিকে। ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
‘ হিয়ারানীর চোখে সুন্দর হলেই আমার সৌন্দর্য সার্থক।’

চমৎকার শুনাল কথাটা! মুগ্ধতার প্যাঁচে আবারও আটকাল তাহিয়া। প্রাণবন্ত হাসল শুধু। অভীক প্রশ্ন করল,
‘ শুধু এটা বলতে এসেছো এখানে?’

তাহিয়া ছোটো করে উত্তর দিল, ‘এমনি এসেছি। বাসায় ফিরব।’

বৃষ্টির খেয়ালটা এতক্ষণে হলো অভীকের। ঘাড় ঘুরিয়ে বাইরে তাকাল। আজ আবার অবেলার বৃষ্টি হাজির হয়েছে। এই বৃষ্টিটা বড্ড খারাপ, ছোঁয়া লাগলেই অসুখ হয়। অভীককে চিন্তিত দেখাল। তাহিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ছাতা এনেছো?’

‘না।’ ছোটো করে উত্তর দিল তাহিয়া। অভীক উদ্ধিগ্ন হয়ে বলল,
‘এই বৃষ্টি গায়ে লাগলেই ঠান্ডা লেগে যাবে। এখন বের হওয়ার দরকার নেই। ‘

‘বাসায় যাব না?’ টেনে প্রশ্ন করল তাহিয়া। অভীক খানিক ভাবল। ডেস্কের ড্রয়ার খুলে রুটিন চেক করল। নাহ্, আজ আর ক্লাস নেই। হাফ ছাড়ল সে। বলল,
‘ বৃষ্টির বেগ কিছুটা কমে এলে আমি নিয়ে যাব। মাস্ক পরে গেলাম না হয়। কেউ চিনবে না। চলবে?’

লোকটা কী ইঙ্গিত করল? ওই যে বিয়ের আগে অবনীকে বলা সেই কথাকে ইঙ্গিত করেছে? আপাতত এটাই মনে হলো তাহিয়ার। তখন লোকের ভয় ছিল, প্রেমে পড়ে সব ভয় কেটে গিয়েছে। তাহিয়া তড়িৎ বলল,
‘চলবে না দৌড়াবে।’

অভীককে প্রাণবন্ত দেখাল। হেসে বলল,
‘দৌড়াদৌড়ি লাগবে না, আপাতত চুপটি করে বসে অপেক্ষা করো।’
তাহিয়া বসল না, দাঁড়িয়ে রইল। খানিক বাদে বলল,
‘মীরা শৈলী আছে বাইরে। ওখানে অপেক্ষা করি?’
‘আচ্ছা যাও।’
বলে লেখায় মন দিল অভীক। তাহিয়া হাঁটা ধরল। কদম বাড়াতেই অভীক পিছু ডাকল।
‘হিয়া!’

তাহিয়া পিছু ঘুরল। ড্রয়ার খুলে একটা বড়ো সাইজের চকলেট বারের প্যাকেট বের করল অভীক। তাহিয়ার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
‘মেহমানদের খালি মুখে যেতে দিতে নেই।’

তাহিয়া অবাক হয়ে চাইল। চকলেট হাতে নিয়ে বলল,
‘আপনার ডেস্কে চকলেট কোথা থেকে এলো? আপনি তো মিষ্টি জাতীয় খাবার পছন্দ করেন না।’

‘আমার ডেস্কে এক বিশেষ মেহেমান আসে কখনো সখনো। বিশেষ মেহমানদের খালি যেতে দেয়া আমার নীতিবিরুদ্ধ কাজ। তাই চকলেট এনে রেখেছি। তার আবার চকলেট বেশ পছন্দ।’
হাসল অভীক। শুধু অভীক নয়, তাহিয়ার হৃদয়টাও হেসে উঠল বোধহয়। বিশেষ মেহমান! ও! ওর জন্য চকলেট নিয়ে রেখেছে লোকটা! এ মানুষ নয়, ইন্দ্রজাল। যার সব কাজ আকর্ষণ করে। তাহিয়া ধন্যবাদ দিল না। ফেরার আগে বলল,
‘মাস্ক না পরলেও চলবে। আমার সমস্যা নেই।’

তাহিয়া চলে গেল। অভীক ভ্রু উঁচাল শুধু।

তাহিয়া চকলেট হাতে মীরাদের কাছে গেল। মীরা টিপ্পনী কাটল,
‘মিয়াবিবির আলাপন শেষ হলো অবশেষে!’

চকলেটের প্যাকেট খুলে এক কামড় নিয়ে হাসল তাহিয়া। চকলেট পরখ করে শৈলী বলল,
‘এবার মীরার মতো আমারও ডিপার্টমেন্টটাকে রমনা পার্ক মনে হচ্ছে। এখানে মন, কলম, চকলেট সব আদান প্রদান হয় দেখছি। ‘
তাহিয়া হাসল। চকলেট সাধল, ‘খাবি?’

মীরা মুখ বাঁকাল,
‘তুই খা। আমার ভয় হচ্ছে স্যারের দেয়া চকলেট ও কখন যেন স্যারের মতো গম্ভীরমুখে বলে উঠে, ক্লাস না করে বারান্দায় দাঁড়িয়ে এসব করেন? যান, ক্লাসে যান! হজম হবে না বোন। শেষে তোর জামাইর মতো ছোটোঘর-বড়োঘর করতে হবে।’

তাহিয়া কপট রেগে মিথ্যে আঘাত করল মীরার বাহুতে। শৈলী বলল,
‘তোদের ছাত্রী শিক্ষকের এই বিবাহিত প্রেম দেখে আমারও একটা প্রেম করতে ইচ্ছে করছে। কোনো সিঙ্গেল স্যার এভেইলেবল থাকলে বলিস তো!’

মীরা বলল, ‘সিঙ্গেল এক লেকচারার পাত্র এভেইলেবল আছে, তুই চাইলে এপ্লাই করতে পারিস।’
শৈলীকে আগ্রহী দেখাল, ‘কে?’

‘ফারদিন স্যার। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর কবছর যাবত ভদ্রলোক সিঙ্গেল আছেন। শুনলাম ছেলে মেয়েরা স্যারের বিয়ের কথা ভাবছেন। তুই এপ্লাই করতে পারিস। বিয়ে টিয়ে করে ডিপার্টমেন্টে শুধু মন না, আম, জাম, কাঠাল, লিচু, শাক, সবজি, চকলেট, মিষ্টি, কলম সব আদান প্রদান করবি। হেডস্যার কদিন বাদে অফিসরুমের নাম বদলে নতুন নাম রাখবেন, ‘প্রেমময় জিনিস আদান প্রদানের রুম’ কী চমৎকার হবে! ‘
ঠোঁট চেপে হেসে বলল মীরা। তাহিয়া হাসিতে ফেটে পড়ল। শৈলী ক্ষেপল, আবার ঠিক হলো। বান্ধবীদের খুনসুটি চলতে থাকল।

বৃষ্টির বেগ কমে আসতেই অভীক বেরিয়ে এলো। তাহিয়ার কাছে দাঁড়িয়ে ধীরেই বলল,
‘বৃষ্টি কমে গেছে। এবার চলো।’

তিন বান্ধবীর আলাপ থামল। মীরা, শৈলী খানিক দূরে সরে দাঁড়াল। অভীক ওদের উদ্দেশ্য বলল,
‘শালিকাগন, আপনারা ও চলুন। ড্রপ করে দিই।’
অভীকের স্বরটা কোমল। ঠোঁটের কোণে হাসি। মীরা শৈলী আকাশ থেকে পড়ল যেন। কস্মিনকালেও ভাবে নি অভীক হাসিমুখে তাদের ড্রপ করার কথা বলবে। অবিশ্বাস্য চোখে চাইল ওরা। আমতা-আমতা করল,
‘না স্যার। আমরা চলে যেতে পারব।’

অভীক কিছুটা সহজ করার জন্য ‘তুমি’তে নামল। শালিকাদের ‘তুমি সম্বোধন করা হয়। সে হেসেই বলল,
‘শিক্ষক-ছাত্রীর বাইরে শালি-দুলাভাইয়ের সম্পর্ক আমাদের। সেই সম্পর্কে জেরে চলো। রাস্তায় গাড়ি পাবে না। পরে যেতে দেরি হয়ে যাবে। ‘

থেমে তাহিয়ার উদ্দেশ্যে বলল,
‘ আমি যাচ্ছি, তুমি ওদের নিয়ে পার্কিং সাইডে আসো।’

অভীক চলে গেল। মীরা শৈলী হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইল। তাহিয়া তাড়া দিল, ‘চল।’
শৈলী অবিশ্বাস্য গলায় বলল, ‘স্যার হেসে কথা বললেন আমাদের সাথে!’

মীরা অবাকের মাঝেই বলল, ‘আমার বোধহয় এবার পাঁচশো টাকার জিলাপি কিনে মসজিদে দেয়া উচিত।’

তাহিয়া ও জোর করল যেতে। মীরা শৈলী গেল না। তারা এখনো অভীকের সাথে সহজ হতে পারছে না। অগত্যা তাহিয়া একাই চলল। গাড়ির কাছে যেতেই অভীক গাড়ির পেছনের দরজা খুলে দিল। তাহিয়া উঠে বসতেই পাশে বসল। বৃষ্টিভেজা পথ ধরে গাড়ি চলতে শুরু করল। অভীক হঠাৎ প্রস্তাব রাখল,
‘এই বৃষ্টিভেজা মধ্য বেলায় খিচুড়ি খাওয়াটা বাধ্যতামূলক। চলো খিচুড়িময় লাঞ্চ ডেটে যাই?’

আজকাল নেতিবাচক উত্তর দেয়া তাহিয়ার নীতিবিরুদ্ধ যেন। অভীকের আগ্রহের বিপরীতে নেতিবাচক উত্তর দিতে পারল না। হেসে সায় জানাল।

রেস্টুরেন্টে গিয়ে অকল্পনীয় এক ঘটনা ঘটল। দেখা হয়ে গেল তাহিয়ার প্রথম ভালো লাগার পাত্র রেহানের সাথে। আবেগীয় চিত্র ভেসে উঠল। অভীক সচেতন চোখে চেয়ে রইল, তাহিয়া কী করে দেখার জন্য।

চলবে….

স্বল্প সময়ের স্বল্প লেখা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here