প্রেমোদ্দীপক পর্ব-১

0
2147

‘অভীককে তোর কেমন লাগে?’

গভীর মনোযোগ দিয়ে ইলিশ মাছের কাটা বেছে খাচ্ছিল তাহিয়া। মায়ের কথা শুনে থেমে গেল। ভ্রু কুঁচকে মনে করার চেষ্টা করল, এ নামের কাউকে চিনে কি না। মস্তিষ্কে চাপ দিতেই স্মরণে এলো ‘অভীক’ নামের একজন মানুষ ওঁর পরিচিত, তাহিয়ার ডিপার্টমেন্টের তরুণ প্রভাষক। অপরদিকে মায়ের বান্ধবীর ছেলে। মা কি উনার কথা জিজ্ঞেস করছেন? নিশ্চিত হতে মুখের ভাত গিলে প্রশ্ন করল,

‘ আমাদের ডিপার্টমেন্টের অভীক স্যারের কথা বলছো তুমি?’

‘হ্যাঁ। ওকে তোর কেমন লাগে?’

আগ্রহভরা চাহনিতে জানতে চাইলেন তাহিয়ার মা মাহমুদা খানম। স্যারের ব্যাপারে মায়ের আগ্রহভাব অদ্ভুত ঠেকল তাহিয়ার। মা হঠাৎ স্যারের কথা জানতে চাইছেন কেন? এমন প্রশ্ন হানা দিল মস্তিষ্কে। উত্তরটা জানা বাধ্যতামূলক। তার কৌতুহলী স্বর প্রশ্ন করেই বসল,

‘ তুমি হঠাৎ উনার কথা জিজ্ঞেস করছো কেন?’

থেমে খানিকটা হেয়ালির সুরে বলল,
‘কারো জন্য সমন্ধ টমন্ধ দেখছো না কি!’

মাহমুদা খানম ইতিবাচক সম্মতিতে হাসলেন। তার বাদামী মণির চোখজোড়ার অন্তর্ভেদী দৃষ্টি মেয়ের পানে। এ পর্যায়ে খানিকটা অবাক হলো তাহিয়া। দাদাবাড়ি, নানাবাড়ির বোনদের মাঝে বিবাহযোগ্য কেউ নেই। তবে মা কার সাথে স্যারের বিয়ের কথা ভাবছেন! চিন্তার সাগরে ডুব দিয়েও সমীকরণ মেলাতে পারল না সে। স্যার রাশভারি গোছের মানুষ। কথা বলেন মেপে মেপে, প্রয়োজনের বাইরে কোন কথা বলেন না। সারাদিন মুখে গম্ভীরতার প্রলেপ মেখে ঘুরে বেড়ান। দু’বছরের শিক্ষা জীবনে স্যারকে হাসিমজা করতে দেখেনি সে। কার ঘাড়ে এমন একজন মানুষকে চাপাতে যাচ্ছে জানতে কৌতুহলী হলো মন। সেই সাথে মেয়েটার আগত জীবনের কথা ভেবে আফসোসের ভারি পাল্লা ছুঁলো তার দুঃখী মন। সে আফসোসের সুরে বলল,

‘ আহহারে বেচারি! মেয়েটার কথা ভেবে খারাপ লাগছে। সুন্দর একটা জীবন অকালেই ঝরে যেতে ধরেছে। তা কোন হতভাগীর কপাল ফ্রাই করার প্রস্তুতি নিচ্ছো তোমরা দুই বান্ধবী মিলে? ‘

তাহিয়ার বিপরীতমুখী চেয়ারে বসেছেন মাহমুদা। ডায়েবিটিসের কারণে রাতে ভারী খাবার খাওয়া মানা তার। এক চামচ সবজি দিয়ে দুটো রুটি খেয়ে রাত পার করেন। রুটি খাওয়া শেষ তার। খাবার পর্বের সমাপ্তি টানতে পানি ভর্তি গ্লাসে চুমুক দিয়েছেন সবে। পানি পানের পুরো সময়টায় মেয়ের দিকে তাকিয়ে ছিলেন অপলক। তাহিয়ার কথায় তার শুভ্র রাঙা চেহারায় অমাবস্যা নামল যেন। চোখের চাহনিতে বিরক্তির রেখা দেখা গেল, যা স্পষ্ট জানান দিচ্ছে, মেয়ের কথা তার পছন্দ হয়নি।

কথা শেষ করে তাহিয়া উত্তরের আশায় মায়ের দিকে চাইল। চোখাচোখি হতেই দৃষ্টি সরালেন মাহমুদা। গ্লাস রেখে গম্ভীর ভঙিমায় বসলেন। পরবর্তী কথা বলার আগে বেশ কিছুক্ষণ সময় নিলেন। ইতস্ততভাবে ধীর কন্ঠে বললেন,
‘ আমরা অভীকের সাথে তোর বিয়ের কথা নিয়ে ভাবছি।’

মায়ের কথাটা বজ্রধ্বনির মতো ধাক্কা খেল তাহিয়ার কানে। বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে গেল। চোখ বড়ো বড়ো করে অবিশ্বাস্য চাহনিতে চেয়ে রইল মায়ের দিকে। মিনিট দুয়েক কথা বলতে পারল না, হা করে তাকিয়ে রইল। মস্তিষ্ক গ্রহন করতে পারছে না কথাটা। খানিক বাদে নিজেকে ধাতস্থ করে হকচকিয়ে বলে উঠল,

‘কী! মা, তুমি কি আমার সাথে মজা করছো?’

মাহমুদা ভ্রু কুঁচকে বললেন,
‘তোর সাথে আমার মজা করার সম্পর্ক না কি যে বিয়ের মতো ব্যাপার নিয়ে মজা করব?’

তাহিয়া অবাক স্বরে বলল,
‘এসবের মানে কী মা? ‘

মাহমুদার বাঁকা ভ্রুজোড়া সোজা হলো, কপালের বিরক্তির ভাজ সরে গেল। স্বরে নেমে এলো নমনীয়তা,

‘ নীলিমার সাথে আমার বন্ধুত্বটা প্রায় তিন দশকের। স্কুলে গড়া বন্ধুত্বটা আজও অমলিন আছে। প্রায় বছর দশেক আগে একদিন কথায় কথায় নীলিমা বলেছিল, তুই বড়ো হলে তোকে অভীকের বউ করে নিবে। আমি সেদিন হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, আগে ছেলেমেয়েদের বিয়ের বয়স হোক, তারপর এসব নিয়ে ভাবা যাবে। আমি ভেবেছিলাম নীলিমা নিচক কথার ছলে বলেছে। আমার ভাবনা ভুল প্রমাণ হলো তোর আঠারোতম জন্মদিনে। জন্মদিন অনুষ্ঠানে এসে নীলিমা সবার অগোচরে আমাকে ডেকে তোর বিয়ের কথা বলল। তারপর ব্যাপারটাকে বিশ্লেষণ করে দেখলাম আমি, তোর মামা চাচাদের সাথে কথা বললাম। অভীকের খোঁজখবর নিয়ে তারা সায় জানাল। অভীককে আমি ছোটোবেলা থেকে চিনি, বেশ চমৎকার ছেলে। ততদিনে তোদের কলেজে লেকচারার হিসেবে যোগদান করেছে। প্রতিষ্ঠিত ছেলে, ভদ্র নম্র ও বেশ। তাই আমিও আপত্তি জানাইনি। নীলিমার প্রস্তাব গ্রহন করে নিজেদের মাঝে কথা বলে রেখেছিলাম, তোর বয়স বিশ পেরুলো তোদের বিয়ে দিব। এখন তোর বয়স একুশ চলছে। তাই নীলিমা চাচ্ছে এবার বিয়েটা সেরে ফেলতে।’

বিস্ময়ের আকাশ ছুঁলো তাহিয়া। দু’চোখের নেত্রপল্লব এক করতে ভুলে গেল। চোখ মুখে রাজ্যের চমক। তার এই একুশ বছরের জীবনে এতটা ভয়ানক আর চমকপ্রদ সংবাদ শুনেনি ইতঃপূর্বে। তার কানে বাজছে মায়ের বলা কথাগুলো।

কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে বসে রইল তাহিয়া। ইতঃপূর্বে বাসায় তার বিয়ের কথা উঠেনি, আজই উঠল। তাও কাকে নিয়ে? তার সবচেয়ে অপছন্দের একজন মানুষকে নিয়ে! মা খুব ভালো করেই জানেন সে অভীক স্যারকে কতোটা অপছন্দ করে।

রাশভারি গোছের মানুষ অভীক। প্রথম বর্ষে ‘পলিটিক্যাল থিওরি’ বিষয়ের ক্লাস নিত। ক্লাসে কোনপ্রকার বিশৃঙ্খলা পছন্দ করে না অভীক । কেউ অমনোযোগী বা কথা বললে দাঁড় করিয়ে কয়েকটা কথা শুনিয়ে দেয়। প্রথম প্রথম তাহিয়া জানতো না অভীকের স্বভাব সমন্ধে। একদিন অভীকের ক্লাস চলাকালীন সময়ে পেছনের বেঞ্চে বসে তার দুই বান্ধবী মীরা আর শৈলীর সাথে ফিসফিস করে কথা বলছিল। কথার রেশ ধরে নিঃশব্দে হেসে উঠেছিল তিন বান্ধবী। তাদের ধারণা ছিল বিশাল এই ক্লাসের শেষ মাথায় স্যারের চোখ যাবে না। কিন্তু তাদের ধারণাকে ভ্রান্ত প্রমাণ করে স্যার পরখ করে নিল তাদের অমনোযোগীতা। ফলাফল হিসেবে ক্লাসসুদ্ধ ছাত্রছাত্রীর সামনে দাঁড় করিয়ে এত জোরে ধমক দিয়েছিল যে ভয়ে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠেছিল। উপরিলাভ হিসেবে কয়েকটা বাঁকা কথা শুনিয়ে দিয়েছিল। ভয়ে অপমানে চোখে বর্ষা নেমেছিল তিন বান্ধবীর। বাসায় এসে মায়ের কাছে কতই না নিন্দা করল তাহিয়া ভদ্রভাষায় গালমন্দ আর অভিশাপ ও বাদ রাখেনি। এই ঘটনার রেশ ধরে মাহমুদা অভীকের কথা বলতে নিলেই রেগে যেত তাহিয়া, ভয়ের কাতারের নাম লেখানোর পর বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও নিলীমার বাসায় যেত না তাহিয়া।

আকস্মিক পুরনো ঘটনা স্মরণে এলো তাহিয়ার। এতে কি মা আন্দাজ করতে পারেনি? অভীককে তার ভীষণ অপছন্দ? তবুও মা কিভাবে এত ভয়ানক পরিকল্পনা কষতে পারল!

‘অভীক স্যার!’ কথাটা মনে আওড়াতেই এক হলদেটে ফর্সা সুঠাম দেহী পুরুষ অবয়ব ভেসে ওঠল চোখের ক্যানভাসে। চোখভরা রাগ, মুখভরা গম্ভীর্য। এই জাঁদরেল মানুষটার সাথে তাকে সারাজীবন কাটাতে হবে? অসম্ভব! ভাবনার সুতো ছিঁড়ে বাস্তবে পদার্পণ করল তাহিয়া। বিস্ময়ী ভাব ঠেলে প্রতিবাদী সুরে বলে উঠল,

‘অসম্ভব! আমি এ বিয়ে করতে পারব না, তুমি আন্টিকে নিষেধ করে দাও।’

মাহমুদা ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলেন,
‘কেন করতে পারবি না?’

‘আমাদের একটা ক্লাস নেয়। সেই ক্লাসকে ‘হাসপাতালের মর্গ’র মতো ভয়ানক বানিয়ে দেয়। ক্লাস নামক মর্গের সেই ডোমের সাথে সারাজীবন কাটাতে বলছো আমাকে! অসম্ভব। আমি উনার সাথে একঘন্টা থাকতে পারব না, সেখানে বিয়ের মতো বন্ধনে জড়িয়ে সারাজীবন কাটানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি উনাকে বিয়ে করব না, কোনভাবেই না।’ দৃঢ়তার সাথে জানাল তাহিয়া।

মেয়েকে বুঝানোর চেষ্টা করলেন মাহমুদা,
‘ অভীক দেখতে শুনতে বেশ, আচার ব্যবহার ও ভালো। সবমিলিয়ে চমৎকার ছেলে, তোকে ভালো রাখবে। পেশাগত কারণে গম্ভীর, ব্যক্তিগত জীবনে বেশ প্রাণবন্ত। ভীষণ অমায়িক ব্যবহার তার। আমি ওকে ছোটোবেলা থেকে চিনি। পড়ার সুত্রে হোস্টেল আর হলে পার করেছে বছরের পর বছর। তোর সাথে কখনো কলেজের আগে দেখা হয়নি, তাই তুই ওর অন্যরূপ দেখিস নি। আমি দেখেছি। ‘

মাহমুদার কথা তাহিয়ার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হলো না। সে ভেবে নিল তাকে রাজি করানোর জন্য মা বানিয়ে বলছেন। স্যারের মতো জাঁদরেল মানুষ কি না প্রাণবন্ত! অসম্ভব, এ লোক তো হাসতেও জানে না।
অধৈর্য হয়ে ওঠে দাঁড়ালো তাহিয়া। পাতে পানি ঢেলে হন হন করে নিজের রুমে চলে গেল। যাওয়ার আগে দৃঢ় গলায় বলে গেল,
‘এই ব্যাপারটাকে এখানেই ইতি টানো, মা। দ্বিতীয়বার এ নিয়ে আমার সাথে কথা বলবেনা। আমি স্যারকে বিয়ে করব না। না এখন, আর না কখনো। ‘

শব্দযোগে দরজা লাগিয়ে বিছানায় বসে পড়ল তাহিয়া। এক রাশ বিস্ময় এসে ঘিরে ধরল তাকে। তার যেন বিশ্বাস হচ্ছে না স্যারের সাথে তার বিয়ের কথা চলছে। পুরো বিষয়টা মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। তার অগোচরে কত বড়ো ষড়যন্ত্র চলছিল তাকে নিয়ে, অথচ সে টের অবধি পায় নি! মা কিভাবে পারল এত বড়ো কথা লুকাতে? এমন প্রশ্ন মস্তিষ্কে হানা দিতেই কপালে চিন্তার ভাজা পড়ল তাঁর। নাকের ঢগায় আসা গোলাকৃতির কালো ফ্রেমের চশমা ঠেলে চোখের উপর রেখে নিজের মনে জাগা প্রশ্নের উত্তর দিল,
‘মা চাপা স্বভাবের মানুষ, মনের কথা সহজে প্রকাশ করতে পারেন না। এই যে বাবা মারা গেল আমার ছোটোবেলায়, তারপর কত ঝড় বয়ে দুই সন্তান মানুষ করেছেন কখনো নিজের কষ্ট কাউকে বুঝতে দেন নি, মন খারাপের মধ্যবেলায় কারো সামনে মনের ডায়েরি মেলে ধরেন নি। মায়ের মনে কী চলে মা ছাড়া কেউ জানে না বোধহয়। নীলিমা আন্টি আন্দাজ করতে পারে শুধু।’

নীলিমার কথা মনে পড়তেই ভ্রু কুঁচকালো। নীলিমা মেয়ের চোখে দেখেন তাহিয়াকে। তাহিয়া মায়ের পর নীলিমাকে দ্বিতীয় মায়ের স্থান দিয়েছে। মা চাপা স্বভাব তিনি না হয় বলতে পারেন নি। নীলিমার সাথে তোর তার ভালো সখ্যতা তবে তিনি কেন বলেন নি! সবাই ষড়যন্ত্র করেছে তার বিরুদ্ধে। একরাশ অভিমান হানা দিল তাহিয়ার মনে। আর স্যার? তিনি কিভাবে পারলেন ছাত্রীকে বিয়ের কথা ভাবতে! মায়ের সিদ্ধান্ত নিশ্চয়ই তার অজানা নয়, তার সম্মতি না পেলে কথা তাহিয়া অবধি আসতো না। তিনি হয়তো আগে থেকেই জানতেন। ভেতরে ভেতরে কী ভেবে বসে আছেন আল্লাহ জানে!

চঞ্চলমনা তাহিয়া হঠাৎ অভিমান ঠেলে রাগের সাগরে ডুব দিল। রাগের অর্ধাংশ মায়ের উপর, বাকি অর্ধাংশ অভীকের উপর। তাহিয়ার রাগটা অভীকের সম্মতি দেয়া নিয়ে।
অভীকের উপর এতদিনের জমে থাকা রাগের সাথে কয়েকগুন রাগ যোগ হলো। রাগ রূপ নিল বকাঝকায়। ইচ্ছামাফিক বকল অভীককে। এসবের মাঝে চোখে ঘুম নামলো না।

.
রাগের বশ্যতায় রাত পেরিয়ে প্রভাত হলো। নিকষ কালো মেঘ চিরে বাংলার কোলে সূর্য উঁকি দিল। রুমের সাথে লাগোয়া বারান্দার মাঝে লবি চেয়ারে বসে সূর্যোদয় দেখল তাহিয়া। নির্ঘুম রাত পার করার ফলাফল হিসেবে মাইগ্রেন এসে হাজির হয়েছে, চোখ জ্বলছে।
এক মুঠো সোনালী রোদ গা ছুঁয়ে দিতেই বারান্দা ছেড়ে রুমে এলো। বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে নিশ্চল শুয়ে রইল খানিকক্ষণ।
সাতটা বাজতেই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ এলো। এক কিশোর ওপাশ থেকে বলে উঠল,
‘আপু, উঠেছিস? মা টেবিলে নাস্তা দিয়েছে, খেতে আয় জলদি।’

রা করল না তাহিয়া। ছোটো ভাই তুহিনের কথা না শোনার ভান করে রইল। তুহিন বার কয়েক ডেকে চলে গেল। এরপর মাহমুদ এসে দরজায় বেশ শব্দযোগে কড়া নাড়লেন,
‘তাহিয়া, দ্রুত ফ্রেশ হয়ে টেবিলে আয়। তোদের খাইয়ে আমাকে বেরুতে হবে। ‘

এবারও রা করল না তাহিয়া। মাহমুদা চলে গেলেন। মাহমুদা স্থানীয় এক হাইস্কুলের বাংলা শিক্ষিকা। ছেলে মেয়েদের খাইয়ে স্কুলে যাবেন। তাহিয়া ফ্রেশ হয়ে কলেজের জন্য তৈরি হয়ে নিল।

সাজগোছ করতে ভালোবাসে তাহিয়া। কলেজে যাওয়ার আগে নিজেকে সবসময় পরিপাটি করে যায়। কুর্তির সাথে ডেনিম প্যান্ট, তার উপর সাদা এপ্রণ পরে। কালচে লাল চুলগুলো পনিটেইল বেধে গলায় স্কার্ফ ঝুলায়। প্রসাধনী হিসেবে মেদহীন গালে লুস পাউডার,পাতলা ঠোঁট জোড়ায় হালকা গোলাপী লিপস্টিক আর চশমার ভেতর থাকা হরিণ চোখে টানানো আই লাইনার। কখনো সখনো আবার চোখে কাজলের রেখা টেনে কপালে মকমল টিপ ও দেয়, সেদিন চুল সাজায় বেনুনিতে। এতেই সুন্দর দেখায় তাকে।

মন কেমনের এই বেলায় কোন সাজগোজ করার ইচ্ছে হলো না। রাতের পরিধেয় পোশাক ছেড়ে অফ হোয়াইট কুর্তির সাথে নীল জিন্স জড়ালো গায়ে। তার উপর এপ্রণ জড়িয়ে প্রসাধনীহীন চেহারায় বেরিয়ে গেল রুম থেকে।

তাহিয়ার রুমের সামনেই ডাইনিং স্পেচ। ডাইনিং স্পেচ পার হতে গিয়ে টেবিলে বসা মাহমুদা খানমকে নজরে এলো। তিনি খেতে বসেছেন। দৃষ্টি মেয়ের পানে। কপালে চিন্তার ভাজ, চোখের শিরায় রাগের আভা। তাহিয়া সেসব তোয়াক্কা করল না, হাতে ধরা নীল স্কার্ফ গলায় জড়াতে জড়াতে পা বাড়াল সদর দরজার দিকে। মাহমুদা খানম মেয়ের যাওয়ার পানে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। ধীর পায়ে এগিয়ে এলেন সদর দরজার দিকে। দরজার পাশে সু রেকের সামনে দাঁড়িয়ে ফ্ল্যট সু পরছে তাহিয়া। মাহমুদা গিয়ে পেছনে দাড়ালেন, নিঃশব্দে। তাহিয়া মায়ের উপস্থিতি টের পেয়ে তড়িৎ পেছনে ফিরল। প্রশ্ন করল,
‘স্যার বিয়ের কথা আগে থেকে জানতেন?’

মাহমুদা খানম ধীর স্বরে উত্তর দিলেন,
‘না।’

মায়ের কথায় বিস্ময়ের রেখা দেখা গেল তাহিয়ার চোখে। আন্টি তাকে ও বলেনি! মেয়ের চোখে ভাসা প্রশ্ন পড়ে নিয়ে মাহমুদা বললেন,

‘ তোদের বিয়ের প্রস্তাব পাকাপোক্তভাবে গ্রহনযোগ্য হয়েছে বছর দুয়েক আগে। তখন তুই অভীকের ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হয়ে গিয়েছিস। বিয়ে ঠিক জানতে পারলে হয়তো তোদের মাঝে প্রেমময় একটা সম্পর্ক তৈরি হতো। তোরা যেহেতু একই ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক,ছাত্রী। তোদের প্রেমময় সম্পর্কের কথা জানাজানি হলে ছাত্রী-শিক্ষকের মধ্যকার সম্মানজনক সম্পর্ক নষ্ট হতো, অভীকের রেপুটেশনে দাগ লেগে যেত। আমি বা নীলিমা কেউ চাইনি, ছাত্রী শিক্ষকের মাঝে বিবাহপূর্ব কোন সম্পর্ক গড়ে উঠুক। তাই তোদের জানানো হয়নি। সরাসরি বিয়ের কথা জানানো হয়েছে। অভীককে দু’দিন আগে বলেছে নীলিমা।’

মন-মাঝে স্বস্তির মৃদু বাতাস বয়ে গেল তাহিয়ার। ইতিবাচক উত্তর হলে সে মানতে পারতো না। কিছুটা সময় নিরবতায় গা মাড়িয়ে প্রশ্ন করল,

‘স্যার সম্মতি দিয়েছে বিয়েতে?’

‘হ্যাঁ। নিজের ভালো মন্দ সবাই বুঝে, একমাত্র তুই-ই অবুঝ।’

কিছুটা রাগ, কিছুটা বিরক্তির সাথে বললেন মাহমুদা। কমে আসা রাগের শিখা আবার জ্বলে উঠল তাহিয়ার ভেতর। স্যার কেন সম্মতি দিল! ছাত্রীকে বিয়ে করার কথা ভাবছে, কত নির্লজ্জ! এমন ভাবনা থেকে স্পষ্ট জানাল,
‘আমার ভালো স্যারকে বিয়ে না করার মাঝেই। তাই আমি বিয়েতে অমত জানাচ্ছি। স্যারের সাথে আমার ভালো আটকে থাকলে সে ভালো আমার দরকার নেই। আমি খারাপেই ভালো আছি। যত যাই হোক, বিয়ে করব না স্যারকে, কোনভাবেই না। আসি।’

দ্রুত বেগে বেরিয়ে গেল তাহিয়া। মাহমুদা খানম সিড়ির দিকে চেয়ে এক নীরব দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। মনে পাথর চাপা পড়া সব দুঃখ যেন উপচে পড়ল সেই নিঃশ্বাসে।

*

বাদামী চোয়ালে রাগের আভা ছড়িয়ে কলেজ গেল তাহিয়া। সে ইংরেজি বিষয়ে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত আছে। প্রতিদিন নিজ ডিপার্টমেন্টে গিয়ে চঞ্চল্য তাহিয়া তার দুই বান্ধবী মীরা এ শৈলীর সাথে হাসি আড্ডায় মেতে ওঠে। আজ সেই চঞ্চলমনা তাহিয়াকে দেখা গেল না। তার পরিবর্তে এক জাঁদরেল কন্যার দেখা গেল। তার এহেন আচরনে দুই বান্ধবী বিস্ময়ের চূড়ায়। দু’পাশে বসে তাহিয়ার চেহারা পড়ার চেষ্টা করল তারা। ব্যর্থ হয়ে মীরা ধীর স্বরে জিজ্ঞেস করল,
‘কী হয়েছে রে তাহিয়া? রেগে টমেটো হয়ে আছিস কেন?’

তাহিয়া দুই বান্ধবীর দিকে তাকাল। একবার ভাবল সমস্যাটা দুজনের কাছে খুলে বলবে। পরক্ষনেই উপলব্ধি করল, বলাটা ঠিক হবে না। এতে দুই বান্ধবী মিলে তাকে হাসির পাত্র বানাবে। এমনিতেই মন ভালো নেই, ওদের হাসি-ঠাট্টা শুনলে রাগ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে নিজের গতি হারাবে। তাই চুপ করে রইল। শৈলী বারকয়েক জিজ্ঞেস করল। কাজ হলো না। হতাশা বরণ করে প্রসঙ্গে বদলাল,
‘মীরা, অভীক স্যার যে থিওরিটা দেখে আসতে বলেছে, দেখে এসেছিস?’

মীরা ঠোঁট বাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘আজ স্যারের ক্লাশ আছে! আমি তো ভুলেই গিয়েছি। ‘
‘হ্যাঁ, ফার্স্ট ক্লাসটাই অভীক স্যারের।’

দুই বান্ধবীর কথা কর্ণকুহরে পৌঁছতেই তড়িৎ উঠে দাঁড়াল তাহিয়া। চলমান যা পরিস্থিতি তাতে স্যারের মুখোমুখি হওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। প্রথমত, রাগ। দ্বিতীয়ত, অস্বস্তি। আগে ছাত্রী-শিক্ষকের সম্পর্ক ছিল, এতে ভয় থাকলেও অস্বস্তি ছিল না। কিন্তু এখন সেই সম্পর্কের বাইরে দ্বিতীয় সম্পর্ক রেখা টানছে, সেই রেখাটা অস্বস্তিতে ভরা। তাহিয়া মনে হচ্ছে বিয়ে না হলেও আর কখনো অভীক স্যারের মুখোমুখি হতে পারবেনা সে।
ব্যাগ কাঁধে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে দুই বান্ধবীর উদ্দেশ্যে বলল,
‘আজ ক্লাস করব না। বের হ।’

শৈলী ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করল,
‘আজ দু’দুটো গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস। অভীক স্যার শিট দেয়ার কথা। ক্লাস করে যাই?’
মীরা বোধহয় তাহিয়া মনের ঘূর্ণিঝড় আন্দাজ করেছে। সে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে উঠে দাঁড়াল। তাহিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘অনেকদিন ফুচকা খাই না। চল। শিট কাল ম্যানেজ করে নিব।’

শৈলী ইতিউতি তাকাচ্ছিল। প্রথম শ্রেনীর ছাত্রী সে। ক্লাস বাঙ্ক দেয়া তার নীতিবিরোধী কাজ। মনের নিষেধাজ্ঞা প্রকাশ করল সে, ‘তোরা যা, আমি যাব না।’
মীরা শৈলীর হাত টেনে দাঁড় করিয়ে বলল,
‘বিদ্যাপুকুরের হবু বেগম, পড়া পরে ও করা যাবে। এই মুহুর্তে তাহিয়ার মন ভালো করা প্রধান কাজ। চল তো!’

অগত্যা শৈলীকেও যেতে হলো। পাঁচ তলা ভবনের তৃতীয় তলায় ইংরেজি ডিপার্টমেন্ট । মীরা শৈলী কথা বলতে বলতে নিচে নামছিল। তাহিয়া শুধু শুনছিল। মনে মনে দোয়া করল, যাবারকালে যাতে অভীকের সাথে দেখা না হয়।
বিধিবাম, দোতলা অবধি আসতেই অভীকের মুখোমুখি হয়ে গেল। সাদা শার্ট, কালো প্যান্টের সুদর্শন পুরুষকে দেখে হাত পা শীতল হয়ে এলো তাহিয়ার। অস্বস্তিতে মুখটা চেয়ে গেল। চাপ দাঁড়ির উপবৃত্তাকার গম্ভীরতর চোয়ালের দিকে তাকিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে গেল সে, এক পলক চেয়ে অন্যদিকে চোখ ফিরিয়ে নিল।
মীরা ভীত চোখে চেয়ে বিড়বিড় করে বলল,
‘আজ ঘুরতে যাওয়ার কথা ভুলে যা তাহিয়া। এখন এই হিটলার আপনি আজ্ঞা করে গুষ্ঠি উদ্ধার করবে, তারপর ক্লাসে টেনে নিবে। ‘

শৈলীর চেহারায় ভয়ের আভাস, ‘আমি আগেই বলেছিলাম। তোরা আমার কথা শুনলি না। ‘

মীরা শৈলী সিড়ির মাঝে দাঁড়িয়ে সালাম দিল অভীকের উদ্দেশ্য।
ব্যস্ত ভঙিমায় সিড়ি বেয়ে উপরে উঠছিল অভীক। মীরাদের সালাম শুনে দাঁড়িয়ে গেল। সালামের উত্তর দিয়ে হাতগড়িতে সময় দেখল। তারপর ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘পাঁচ মিনিট পরেই আমার ক্লাস । এখন আপনারা কোথায় যাচ্ছেন? ক্লাস করার কি ইচ্ছে নেই?’

অভীকের গম্ভীরমাখা কথায় ভয় পেল দুই বান্ধবী। তাহিয়া অবিভক্ত পরিবর্তন হলো না। সে এখনো অন্য দিকে তাকিয়ে অস্বস্তি সংবরণের মত্ত। কিছুতেই অভীকের দিকে তাকাবেনা।

শৈলী ভয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। মুখ থেকে টু শব্দ বের হলো না। কনুই দিয়ে মীরাকে ঠেলে উত্তর দিতে ইশারা করল। মীরা অপ্রস্তুত হয়ে বলল,
‘অসুস্থ বোধ করছি স্যার। তাই চলে যাচ্ছি।’

অভীক ভ্রুকুটি করে বলল, ‘সবাইকে একসাথে অসুস্থতা ঘিরে ধরল! আজকাল রোগশোক দলবেধে আসে না কি?’

এবার ভালোই বিব্রতবোধ করল মীরা। স্যারকে দেয়ার মতো উত্তর খুঁজে পেল না। আমতাআমতা করতে লাগল। অভীক গম্ভীর স্বরে বলল,
‘ পরীক্ষাকে নাকের ডগায় দাঁড় করিয়ে ক্লাস বাঙ্ক দেয়া ভালো কাজ নয়। এই কাজগুলো ছাত্রছাত্রীদের টেনে রিটেইক অবধি নিয়ে যায়। ক্লাসে উপস্থিত থেকে মমনোযোগ দিয়ে ক্লাস করল পরীক্ষার আগের রাতে স্যারদের বিরক্ত করার কথা মাথায় আসে না। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ঘুরে বেড়ালেই মাথায় আসে।’

বলে সামনের দিকে পা বাড়াল। তাহিয়ার পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় তাহিয়ার দিকে তাকাল, পূর্ণ দৃষ্টিতে। চশমার ফাঁকে চোখ জোড়ার রক্তিম আভা আর চেহারার অস্বস্তি পরখ করে নিল এক পলকে। তাহিয়া আকস্মিক মাথা ঘুরিয়ে সামনে তাকাল। চোখাচোখি হয়ে গেল। অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল সে। চোখ সরিয়ে অভীক সামনে পা বাড়াল। অস্বস্তিতে হাঁসফাঁস করতে করতে দ্রুত বেগে নিচ নামল তাহিয়া। স্যারের দৃষ্টিতে কি আজ অন্য কিছুর আভাস ছিল, যা তাকে বিভ্রান্ত করল? না কি সবটাই তার মনের ভুল। দ্বিধায় পড়ল তাহিয়া।

অভীক চলে যেতেই তাহিয়া রাগে ফোঁসফোঁস করে বলল,
‘হিটলার স্যার শুধু রাগী নয়, সাথে ভীষণ চতুর ও। কিভাবে ধরে ফেলল। জিয়াউল স্যারকে এই অজুহাত দিয়ে কত আর পেয়ে গিয়েছি। আর এই হিটলার সব টের পেয়ে ভদ্রভাষার অপমান করে গেল। ভয়ংকর রকমের চালাক এই লোক।’

বস্তুত, সারাবছর ক্লাস ব্যাঙ্ক দিয়ে ফার্স্ট ইয়ারে থিওরি পরীক্ষার আগের রাতে অভীককে কল করে সাজেশন চেয়েছিল মীরা। সাজেশন তো দেয়নি উলটো কটা কথা শুনিয়ে ফোন রেখেছিল অভীক। ফলাফল হিসেবে মীরার থিওরিতে ফেইল এসেছে। তাহিয়ার ও এসেছে। পাশ করেছে শুধু শৈলী। এসব নিয়ে সুযোগ পেলে টিপ্পনী কাটে অভীক। বিশেষ করে ক্লাসে অমনোযোগী থাকলে।

অভীকের টিপ্পনীতে রাগে অগ্নিশর্মা মীরা ফোঁসফোঁস করতে করতে বলল,
‘ ‘আমার মতো এক নিরীহ মেয়ের অভিশাপে এই হিটলারের জীবনেও ভালো হবে না। বউয়ের হাতে মার খাবে সবসময়। আমাদের টিপ্পনী কাটে তো! দেখবি এই স্যারের বউ হবে ব্যাকবেঞ্চার। প্রতি বছর ফেইল করবে, স্যারের মান সম্মান ডুবাবে। বউকে সারাদিন পড়ার টেবিলে বসিয়ে রেখে, পড়া গুলে খাইয়েও পাশ করাতে পারবে না। তখন স্যার কপাল চাপড়াবে। স্যারের বউ হবে পৃথিবীর সবচেয়ে রাগী, গম্ভীর, জল্লাদ মহিলা। ওই মহিলা স্যারকে নাকে দড়ি বেঁধে নাচাবে। যত রকমের অত্যাচার আছে সব করবে। বউয়ের রাগে চাপা পড়ে থাকবে সবসময়, টু শব্দ করতে পারবে না। আর রান্নাবান্না হবে জঘন্য, বউয়ের রান্না খেয়ে স্যার ছোটো ঘর বড়োঘরে দৌড়াদৌড়ি করবে। আমার মতো নিরীহ মানুষের দোয়া কবুল হবে দেখে নিস!’

শৈলী ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করল,
‘স্যারের বউয়ের কী দোষ? বেচারীকে অভিশাপ দিচ্ছিস কেনো?’

মীরার অভিশাপ শুনে হঠাৎ তাহিয়া সটান দাঁড়িয়ে গেল। চেহারায় অস্বস্তি আর রাগের রেখা সরে গিয়ে আতঙ্কের রেখা দেখা দিল। মনে প্রশ্ন জাগল, স্যারের সাথে যদি তার বিয়ে হয়, তবে সেও এত খারাপ হয়ে যাবে? ডিপার্টমেন্টে সবার অভিশাপ স্যারের বউয়ের উপর। স্যারের সাথে বিয়ে হলে সেই অভিশাপে তাহিয়া শেষ হয়ে যাবে। তার পরিণতি মীরার বলা স্যারের বউয়ের মতো হবে? অসম্ভব! স্যারকে বিয়ে করা যাবে না, কোনভাবেই না। তাহিয়া আতঙ্কিত গলায় বিড়বিড় করে বলল,
‘ আল্লাহ রক্ষা করো!’

ক্লাস পালিয়ে তিন বান্ধবী সারাবেলা ঘুরাঘুরি করল। মাগরিবের আযান পড়তেই বাসার দিকে রওনা হলো। এর মাঝে মায়ের নাম্বার থেকে গোটা বিশেক ফোন এসেছে। সে বরাবরই কেটে দিয়েছে। সারাবেলার ঘুরাঘুরিতে মনটা কিছুটা প্রসন্ন হয়ে উঠেছিল। বাসায় ঢুকতেই সেই প্রসন্নতা কেটে গেল। ড্রয়িংরুমে বসা মানুষ দুটোকে দেখে চেহারায় রঙ বদলাল। ফ্যাকাশে চেহারায় ভয়ের আভা দেখা গেল যখন জানতে পারল পরদিন তার বাগদান। অভীক পরিবার-সমেত এসে অংটি পরিয়ে যাবে। শুনে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল তাহিয়ার।

#প্রেমোদ্দীপক পর্ব-১

আফিয়া_খোন্দকার_

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here