প্রেমোদ্দীপক পর্ব ১৭

0
745

#প্রেমোদ্দীপক। (পর্ব-১৭)
আফিয়া খোন্দকার আপ্পিতা

‘বাতাসে বহিছে প্রেম, নয়নে লাগিল নেশা
কারা যে ডাকিল পিছে! বসন্ত এসে গেছে…

গান গাইতে গাইতে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠছে তাহিয়া। প্রায় মাস দেড়েক বাদে আজ কলেজে এসেছে ও। মাহমুদা অনেকটাই সুস্থ, একা একা চলাফেরা করতে পারেন। মেয়েকে আজ তিনিই কলেজে পাঠিয়েছেন।
কলেজে পা দিতেই খুশিতে মনটা ভরে এলো তাহিয়ার। আজ থেকে অভীককে নিয়মিত দেখতে পারবে, আর মীরার মাধ্যমে ভিডিও কলে দেখতে হবে না। এর মাঝে অভীক তিন চারবার এসেছে তাও মাহমুদাকে চেকাপের জন্য নিয়ে যেতে। আর আসেনি।

সেদিন চায়ের আলাপটা ভালোভাবে জমেনি। মূলত অভীকের কথার জন্য তাহিয়া বিশেষ সুবিধা করতে পারে নি। অভীকের সাথে একান্তে সময় কাটাবে বলে তুহিনকে কায়দা করে মায়ের ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছিল।
চা বানানো হয়ে এলে কাপে ঢালতে ঢালতে তাহিয়া ডেকেছিল,
‘তুহিন এদিকে আয় তো!’
বোনের এক ডাকেই চলে এলো তুহিন। বলল,
‘ কাজের বেটি রহিমা, ডাকছিস কেন?’

ট্রে হাতে নিয়ে চোখ রাঙালো তাহিয়া,
‘এখন স্যার বাসায় বলে বেঁচে গেলি। যা, মা ডাকছে তোকে।’

মায়ের তলব শুনে তুহিন কথা না বাড়িয়ে অন্যদিকে মোড় নিল। ট্রে হাতে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে তাহিয়া ওকে পিছু ডেকে বলল,
‘মায়ের কাছে গিয়ে বসে থাকবি, একদম বসার ঘরে আসবি না।’

তুহিন তখন মাহমুদার রুমের দরজায়। মাহমুদা ঘুমাচ্ছেন। ঘুমন্ত মাকে দেখে ভ্রু কুঁচকাল তুহিন। বোনের কথায় এবার সব পরিষ্কার হলো। সে হেসে বলল,
‘মিয়ার সাথে প্রেম করার এতই শখ হলে নিজের রুমে নিয়ে যা। বসার ঘরে বসে কেন মিয়া বিবি প্রেম করবি! আমি তো যাবোই।’

তাহিয়া চোখ রাঙাল,
‘উনার সাথে আমার গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। ‘ মূলত তার নিরিবিলি পরিবেশ দরকার। এখন অবধি অভীক ওর রুমে যায় নি, বসার ঘরেই বসেছে। আজ হুটহাট নিজের রুমে ডাকতে বাধছে ওর। তাহিয়া চলে গেল বসার ঘরে। অভীকের প্রতি তাহিয়ার আগ্রহ দেখে প্রশান্তির আভা ফুটে উঠল তুহিনের চোখে মুখে। বোন ভয়ের পাত্রের সাথে মানিয়ে নিতে পারবে কি না, এই ভয়টা ছিল ওর।

ট্রে হাতে বসার ঘরে যেতেই বুক কেঁপে উঠল ওর। বিয়ের পরপর যখন এসেছিল তখন ভয়ে আর অস্বস্তিতে হাত কেঁপেছিল, আজ কাঁপছে উত্তেজনায়। মানুষটাকে দেখেই হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে। কাঁপা হাতে ট্রে টা সেন্টার টেবিলে রাখল। তারপর সবুজ চায়ের কাঁপটা অভীকের দিকে বাড়িয়ে দিল। ওর হাত কাঁপছে, কাঁপছে কাপ, কাপের ভেতর থাকা চা। অভীক চা হাতে নিয়ে ভ্রু কুঁচকাল,
‘হাসপাতালে তো ক’দিন কাঁপা-কাঁপি ঘামাঘামি বন্ধ ছিল। আজ আবার হানা দিল? ব্যাপারটা কী বলো তো! ‘

অভীক সিঙ্গেল সোফায় বসে ছিল। পাশাপাশি দুটো সিঙ্গেল সোফা পাতানো। তাহিয়া চা দিয়েই অভীকের পাশের সোফায় গিয়ে বসে পড়ল। কোলে হাত রেখে মুঠোবন্দি করে লম্বা শ্বাস ফেলল। শ্বাস আটকে আসছে। অভীককে দেখার জন্য তৃষ্ণার্ত ছিল তার চোখ জোড়া। অথচ মানুষটা পাশে বসে আছে, সে চোখ তুলে তাকাতে পারছে না। লজ্জা ঘিরে ধরেছে। মনে মনে বলল,
‘প্রথম প্রেমের সময় প্রেমপুরুষকে দীর্ঘদিন পর দেখলে এমন অনুভূতি হয়!’

অভীক চায়ে চুমুক দিয়ে ওকে পরখ করছে। ভ্রু বাঁকিয়ে বলল,
‘ তুমি যে আমাকে তোমার হাতের রান্না আর সজোরের চড় খাইয়ে আহত করেছো, এ নিয়ে আমি কিন্তু কিছুই বলিনি। তুমি যে চমৎকার ঝগড়া করতে পারো, রাগলে যে তোমাকে হিংস্র লাগে, মারামারিতে যে তুমি পারদর্শী, আমি সেটা বুঝে ও বলিনি কিন্তু। তবুও তুমি বিব্রতবোধ করছো কেন?’

তাহিয়া চোখ মুখ খিচে ফেলল। এখনো কিছু বলতে বাদ রেখেছে! কী বদ, লোকটা! লজ্জার মাত্রা বাড়ল তাহিয়ার চোখে মুখে। অভীক তাহিয়াকে অন্তর্ভেদী চাহনিতে পরখ করল,
‘তোমার গাল লাল হয়ে গেছে, তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো? কিন্তু আমি তো কিছু বললামই না। তবে লজ্জা পাচ্ছো কেন!’

‘একটা মানুষকে কোন কোন কায়দায় জব্দ করা যায়, এ বিষয়ে কোন পুরষ্কার দেয়া হলে নিঃসন্দেহে এই বদলোকটার কাছে যাবে পুরষ্কার। এমনিতেই এতদিন বাদে দেখে আমি লজ্জা পাচ্ছি, তারপর আবার এসব বলছে! পাজি লোক একটা। আপনার এসব বলা উচিত হচ্ছে না, একদমই না।’

চোখ বন্ধ করেই মনে মনে কত কথা বলে গেল তাহিয়া। তারপর চোখ খুলল। তীর্যক চাহনিতে অভীকের দিকে তাকাতে গিয়ে চোখাচোখি হয়ে গেল। লোকটা তার দিকেই তাকিয়ে আছে, দৃষ্টির ভঙ্গিটা কেমন যেন। তড়িৎ চোখ সরিয়ে ওর বিপরীত দিকে দেয়ালের সাথে রাখা সিরামিকের ফুলের টবের দিকে তাকাল। কালো টবের মাঝে সবুজ ক্রিশমাস কেলাঞ্চু গাছটা কী চমৎকার লাগছে। গাছটার দিকে নজর রেখে বলল,
‘এ কদিন আসেন নি কেন!’

তাহিয়ার প্রশ্নের চমকাল অভীক। মেয়েটা তাকে কি মিস করেছে! সে চাইলে সহজে বলতে পারতো, ‘কাজ ছিল।’ বা ‘ আসার কথা ছিল না কি!’
কিন্তু অভীক তা বলল না। অস্বস্তিকন্যার অস্বস্তি দেখতে মন্দ লাগছে না। এক আধটু বাড়ানো যায়, এতে দোষের কিছু নেই। শুধু দোয়া একটাই, মেয়েটা যেন জ্ঞান ট্যান না হারিয়ে বসে। তাহলেই বিপত্তি বাধবে। সে ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,
‘মিস করছিলে আমায়?’

তাহিয়া আবারও বিব্রতবোধ করল। এভাবে সরাসরি তীর মারে কেউ! এখন কী বলবে সে? বলবে, মিস করতেই পারি, অধিকার আছে আমার? এর পর কী হবে? উত্তর শুনে অভীক হাসিঠাট্টায় মেতে উঠবে। ওর অনুভূতি যে এখনো অভীক অবধি গিয়ে পৌঁছায়নি। পৌছানো অবধি দায়সারাভাবে নিবে অভীক। সে ধীর স্বরে বলল,
‘ মোটেও না। মা জিজ্ঞেস করেছিল বারবার। ‘

অভীক তো তাহিয়াকে জব্দ করার মনস্থির করে মাঠে নেমেছে। সে হেসে বলল,
‘আন্টির সাথে আমার প্রতিদিন কথা হয়েছে। আমার না আসার কারণ আন্টির অজানা নয়। তাই আন্টি জানতে চাইবেন না, নিশ্চিত। আন্টির মেয়ে হয়তো মিসটিস করেছে, তাই জিজ্ঞেস করছে। এতো ভণিতা করার কী আছে, সোজাসাপটা বলে দিবে ‘আমি মিস করছিলাম।’

ধরা পড়ে তাহিয়ার কেঁদে ফেলার অবস্থা। সে রাগত স্বরে বলল,
‘আমি আর জীবনেও আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করব না। একদমই না।’

অভীক হেসেই বলল,
‘জিজ্ঞেস করলেও কিন্তু আমার আপত্তি নেই। আমি উত্তর দিব। কিন্তু শর্ত হলো, সরাসরি কথা বলতে হবে, মাকে টানা যাবে না। মিয়া বিবির মামলায় মাকে টানা বেমানান। জানো না তুমি?’

প্রতিটা চায়ের আলাপের সমাপ্তি টানে তাহিয়া। অভীকের কথায় লজ্জার ভারে দাঁড়িয়ে থাকা দায় হয়ে পড়ে ওর। তখন আলাপে সমাপ্তি টেনে চলে যায়। আজও এর ব্যতিক্রম হলো না। তাহিয়া চলে গেল। অভীক শব্দযোগে হেসে ফেলল। বিড়বিড়াল,
‘ এই মেয়েকে আমি আদৌ বুঝতে পারব না। এই দেখি লজ্জায় কাবু, অস্বস্তিতে কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়েছে, আবার রাগ দেখাচ্ছে। এই মেয়ের ভয় জড়তা কবে কাটবে? বিয়ে মাস পেরিয়ে গেল। ‘
কিন্তু অভীককে কে বলবে, সেদিন ভয়ে কিংবা জড়তায় নয় লজ্জায় নুয়ে এসেছিল তাহিয়া। প্রেমের আভা যে ছড়িয়ে ছিল তাহিয়ার চোখে মুখে, তা কি খেয়াল করেছে অভীক?

শেষ চায়ের আলাপটা সেদিনই হয়েছিল। এরপর আর চায়ের আলাপ হয়নি। হীরেখচিত হাসপাতালেরর সেই মুহুর্ত গুলো আর ফিরে আসেনি। চোখের ক্যানভাসে মুহুর্তগুলোকে ভাসিয়ে কত আক্ষেপ করে তাহিয়া তার ইয়াত্তায়া নেই।

সিড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে আরও একবার ঘুরে এলো সেই সময় থেকে। আজ থেকে নিয়মিত অভীকের ক্লাস করবে। পড়ালেখাটা মূখ্য নয়, অভীককে দেখাই মূখ্য বিষয়। ঠোঁটের কোণে লাজুক হাসি টেনে আবার গাইল,

‘মধুর অমৃত বাণী, বেলা গেল সহজেই
মরমে উঠিল বাজি; বসন্ত এসে গেছে….’

তার গানের মাঝে আকস্মিক কেউ বলে উঠল,
‘বাহ্! কলেজে আসতে না আসতেই বসন্তের দক্ষিণা হাওয়া দোলা দেয়া শুরু করেছে!’

পুরুষালি স্বর কানে বাজতেই তাহিয়া গান থামাল। আশপাশ চাইল। ওর পিছনে সেই মানুষটি দাঁড়ানো, যার জন্য এই অগ্রহায়ণ মাসে বসন্ত এসে গেছে ওর ঋতুতে। সেই কাঙ্খিত পুরুষ, যাকে দেখতে ওর এত আয়োজন, এত অপেক্ষা, এত আক্ষেপ, এত উত্তেজনা, হৃদপিণ্ডের চলকানো ভাব। যাকে দেখলে মনে প্রশান্তি আসে, হৃদয়ে প্রেমের দোলা দেয়। সেই পুরুষ, ওর একান্ত ব্যক্তিগত পুরুষ। তাহিয়া সরাসরি চাইল এক পলক। দৃষ্টিতে দৃষ্টি ধাক্কা খেলেও চোখ সরাল না। চোখের মণিতে দৃষ্টি আটকে চোখের তৃষ্ণা মিটাল, সেকেন্ড দশেক বাদে দৃষ্টি সরিয়ে অন্যদিকে ফিরে হাসল। তার কলেজ আসা এখনি সার্থক হয়ে গেছে।

প্রসন্ন হেসে বলল,
‘দক্ষিণা হাওয়া বলে কয়ে আসে না, হুটহাট চলে আসে। দোলাটা তখনি লাগে। ‘

অভীক ভ্রু কুঁচকাল,
‘আজ এত খুশির কারণ কী? আমাকে ও বলো, দেখি আমিও খুশি টুশি হতে পারি কি না।’

‘সব কথা বলতে হবে কেন! এত বিচক্ষণ মানুষ আপনি, বুঝে নিতে পারেন না?’ মনে মনে বিরক্তিভরে বলল তাহিয়া। মুখে উচ্চারণ করল না সে কথা। চারদিক তাকাল, সিড়িতে কেউ নেই। এই সুযোগটাই নিচ্ছে লোকটা। চারদিকে চোখ বুলাতে বুলাতে গান গাইল,

‘বাতাসে বহিছে প্রেম, নয়নে লাগিল নেশা
কারা যে ডাকিল পিছে! বসন্ত এসে গেছে…’

‘ঋতুতে অগ্রহায়ণ মাস চলছে। তুমি বসন্তের গান গাইছো কেন?’

‘বসন্তের গানের জন্য ঋতুতে বসন্ত আসা লাগে না। মনে প্রেম ছুঁয়ে গেলেই মন পঞ্জিকায় বসন্ত নামে, দক্ষিণা বাতাসে দোলা দেয়া মনে গাইতে হয় বসন্তের গান।’ ধীর স্বরে বলল তাহিয়া। দৃষ্টি অন্যদিকে।

অভীক এক সিড়ি উপরে উঠে তাহিয়ার পাশাপাশি দাঁড়াল। তাহিয়াকে অন্তর্ভেদী নজরে পরখ করল। কালো কুর্তি পরেছে, সাথে নীল জিন্স, গলায় স্কার্ফ প্যাচানো। চশমা পরা চোখ জোড়া কাজলে আঁকা, কপালে কালো মকমল টিপ। চুলগুলো সামনে থেকে টেনে কিভাবে যেন বেধেছে, সামনে থেকে বিনুনির মতো করে একবারে চুলের আগা অবধি নিয়ে গেছে, তারপর এক কাধে এনে রেখেছে। দু’গাছি চুল আবার কপালের দুই পাশে খোলা ছেড়েছে।
ডাচ সাইড বেনুনির সাথে পরিচিত নয় অভীক। ঠোঁটের কোণে হাসি, চেহারায় লজ্জা ভাব। অন্যরকম লাগছে দেখতে। ইন্দ্রজালের মতো ঠেকছে। তড়িৎ চোখ সরাল অভীক। অবিশ্বাস্য স্বরে বলল,
‘ মন পঞ্জিকায় এত তাড়াতাড়ি বসন্ত নামল! আমি তো টেরই পেলাম না?’

‘আপনি টের পেলে তো হতোই।’ বলে দৌড়ে চলে গেল তাহিয়া। আবার চমকাল অভীক। কিছুক্ষণ ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। বিড়বিড় করে বলল,
‘ বসন্তটা কি একটু দ্রুত এসে গেল না! তিন বছর পরে আসার কথা ছিল, বিয়ের দুই মাসেই এসে গেল! আবহাওয়া এত তাড়াতাড়ি বদলাল কিভাবে? সাংঘাতিক ব্যাপারে স্যাপার। ‘

*
অভীক ক্লাসের সম্মুখে দাঁড়িয়ে লেকচার দিচ্ছে। ছাত্রছাত্রীরা সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনছে। সবার দৃষ্টি অভীকের উপর নিবদ্ধ। সাদা শার্ট পরিধেয় এই দাম্ভিক পুরুষটির বাচনভঙ্গি চমৎকার। গালে হাত দিয়ে পেছনের বেঞ্চে বসে তাকে পরখ করছে তাহিয়া। বাদামী চোয়ালে মুগ্ধতার ছোঁয়া। হৃদয়ে কম্পন বয়ে চলছে, থামার নামটি নেই। মানুষটাকে দেখলেই তার হৃদপিণ্ডে রক্ত চলকে ওঠে। সাদা শার্ট পরিধেয় অভীক যখন ক্লাসে প্রবেশ করেছিল, তখন তাহিয়ার শ্বাস আটকে আসছিল। অম্লজানের ঘাটতি টের পেয়েছিল যখন শার্টের হাতে কনুইয়ে গুজিয়ে বক্তব্য দেয়া শুরু করল। ক্লাসের সারাটা সময় সে অভীকের দিকে তাকিয়ে রইল। অথচ অভীক তার দিকে ফিরে ও তাকাচ্ছে না। ছাত্রী শিক্ষকের বাইরে যে মেয়েটা তার স্ত্রী সেটা যেন মস্তিষ্কে থেকে সরে গেছে। প্রতিদিন তাকায়, আজ তাকাচ্ছে না কেন? মুখ বাঁকাল তাহিয়া।

সাদা শার্টটা নিষিদ্ধ করা উচিত। এই শার্টটা বিপদজনক ওর জন্য। তা ছাড়া ক্লাসের সব মেয়ে স্যারের দিকে তাকিয়ে আছে, কারো অনুভূতি জেগে উঠলে ওকে সর্বহারা হতে হবে। বরের সৌন্দর্য দেখার অধিকার একমাত্র বউয়ের আছে, পাঁচজনের সামনে সেজে আসতে হবে কেন? ওকে দেখানোর হলে কলেজের বাইরে পরে আসুক, কলেজে এত মেয়ের সামনে সাদা শার্ট পরে আসাটা অনুচিত। তাহিয়া চোখ ছোটো করে একবার তাকাল। মনে মনে বলল,
‘আমি শুধু একবার আপনার বাসায় যাই, তারপর সর্বপ্রথম আপনার সব সাদা শার্ট পুড়ে ফেলব। তারপর তেল দিয়ে মাথা আঁচড়ে ক্যাবলাকান্ত বানিয়ে কলেজ পাঠাব। আমি ভীষণ হিংসুটে, আপনার দিকে কেউ তাকালে আমি সহ্য করতে পারব না। একদম না, সব লণ্ডভণ্ড করে দিব। ‘

অনুভূতির তাড়ানায় তাহিয়া সাত-পাঁচ না ভেবে অভীককে ম্যাসেজ করে দিল,
‘ কলেজে এত সুদর্শন সেজে আসা উচিত নয় আপনার, একদমই না। মনে কত খেয়াল জাগে, নিয়ন্ত্রণ করা দায় হয়। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কী থেকে কী হয় বলা মুশকিল। অধর টধর এদিক ওদিক চলে যাওয়ার সম্ভবনাটাও বোধহয় প্রবল। তাই আজ থেকে সাদা রংটা নিষিদ্ধ আপনার জন্য। বউকে দেখানোর হলে বউয়ের বাসায় পরে যাবেন। কলেজে এসব ড্রেসাপে যেন না দেখি। ভালো হবে না একদম। ‘

সেন্ড বক্সে ক্লিক করার পর আরেকবার চোখ বুলাল তাহিয়া। বোধগম্য হলো মস্ত বড়ো ভুল হয়ে গেছে! এমন কথা কিভাবে লিখল! অভীক কী ভাববে! আনসেন্ড করতে চাইল, ততক্ষণে ম্যাসেজ চলে গেছে। ডেলিভারি রিপোর্ট এসে গেছে।
অভীকের ভাবভঙ্গি দেখার জন্য তীর্যক চোখে সামনে তাকাল।

অভীক লেকচার দিচ্ছিল। আকস্মিক ভাইব্রেট হলো ফোনটা। কথা বলতে বলতে পকেট থেকে ফোন বের করে ফোনে চোখ বুলাল। ‘তাহিয়া’ নামে সেভ করা নাম্বারের ম্যাসেজ নোটিফিকেশন দেখে ভ্রু কুঁচকাল। সিড়িতে দেখা হলো, তারপর থেকে উধাও মেয়েটা। ক্লাসে আসার পর চোখে পড়ল না, আসে নি নাকি! কোথায় বসে ম্যাসেজ করছে? একবার দৃষ্টি উঠিয়ে মেয়েদের সারিতে চোখ বুলাল। অভীককে তাকাতে দেখে মাথা নামাল তাহিয়া।

দশ সেকেন্ডের তীক্ষ্ম নজরে তাহিয়াকে খুঁজে বের করতে সক্ষম হলো অভীক। সাত নাম্বার টেবিলের এক কোণে বসেছে। মাথা নিচু করে আছে। ক্লাসে তো এসেছে, তবে ম্যাসেজ করছে কেন? কৌতূহল বশত ম্যাসেজ ওপেন করল। তীক্ষ্ম অধিকারবোধ সম্পন্ন তাহিয়ার সতর্কবার্তায় নজর ঘুরাতেই চমকে গেল। মেয়েটা কী লিখেছে এসব! কথার সারমর্ম জানে?
অপ্রত্যাশিত বার্তায় অভীক ভড়কে গেল। বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে আকস্মিক কেশে উঠল।
ভ্রু জোড়ার সন্ধিস্থলে উঁকি দিল বিস্ময়, অস্বস্তি। হাসি ও পেল ভীষণ। চোখ মুখ থেকে গম্ভীরর্যভাব সরে গেল আকস্মিক।

অভীক স্পষ্ট টের পাচ্ছে, শিক্ষকের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসছে ও। ব্যক্তিগত জীবনের ভাবভঙ্গিতে ফিরে যেতে উদ্যত মন। ম্যাসেজে চোখ রেখে ভ্রু উঁচাল একবার। ঠোঁটের কোণে ভাসা হাসিটা নিয়ন্ত্রণ করতে হাত মুঠোবন্দি করে মুখের সামনে নিল। বার দুয়েক কাশল। সামনে তাকাল একবার। ছাত্রছাত্রীদের বিস্মিত চাহনি এসে চোখে ধাক্কা খেল। ক্লাসে কখনো হাসে না ও। লেকচারার অভীক গম্ভীর, প্রাণবন্ত নয়। হঠাৎ পরিবর্তিত আচরণ দেখে অবাক হচ্ছে বোধহয়। ও চোখ ঘুরাল তাহিয়ার দিকে। পাজি মেয়েটা হাসছে। তাকে অস্বস্তিতে ফেলে মজা নিচ্ছে! ফাজিল!
যে কোন মুহুর্তে সে তার খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসবে, এই আশঙ্কা দেখে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার নিমিত্তে বাইরে চলে গেল অভীক।

অভীক যেতেই ক্লাসে কানাঘুষা শুরু হলো। অবিশ্বাস্য চোখে সবাই বলাবলি করছে,
‘অভীক স্যার হাসতেও জানে! ‘
আরেকজন বলল,
‘কিভাবে ব্লাশ করল দেখলি? নিশ্চিত বউয়ের ম্যাসেজ ছিল।’

মীরা এতক্ষণ অভীককে পরখ করছিল। ইতঃপূর্বে সে বা ক্লাসের কেউ অভীককে হাসতে দেখেনি। অভীকের ঠোঁটের কোণে ভাসা মৃদু হাসির রেখা দেখে বিস্মিত হয়েছে। বাইরের দিকে তাকিয়ে পাশে বসা তাহিয়ার উদ্দেশ্যে বলল,
‘তোর লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রেমিকের হঠাৎ কী হলো বলতো! এত ব্লাশ করছিল কেন? আবার বাইরে চলে গেল। ‘

অভীকের অস্বস্তি, বিস্ময়ের মাঝে ফুটে উঠা হাসিটা চমৎকার লেগেছে তাহিয়ার। সে ঠোঁট চেপে হাসছে। মীরার কথা তার কানে যায় নি। তাহিয়ার পক্ষ থেকে উত্তর না পেয়ে মীরা পাশে তাকাল। বান্ধবীকে হাসতে দেখে সন্দিহান চোখে তাকাল। তাহিয়ার দু’গালে লজ্জার আভা দেখে ঘটনার আঁচ করতে পারল সে। হেসে বলল,
‘ ও আচ্ছা! লাইটের আলো তাহলে এদিক থেকে গেছে। যেই আলোতে চোখ পড়তেই স্যারের মুখ লাল হয়েছে। তা কী এমন ম্যাসেজ দিলি যে স্যার সিংহী অবতার ছেড়ে হঠাৎ বিড়াল হয়ে গেল? ‘

ধ্যানভঙ্গ হওয়ায় কথাটা তাহিয়ার কানে গেল। সে হেসে বলল,
‘ মিয়া বিবির মামলায় তুমি থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার। তোমাকে বলা যাবে না।’

‘ থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার হলে ক্লাসটাকে প্রেম আদান প্রদানের পোস্ট অফিস বানিয়ে ফেলেছেন কেন, ম্যাম? আপনাদের মনে রাখা উচিত এটা নীতি আর পড়ালেখা শেখার স্থান, প্রেম শেখার না। ‘ মীরা ব্যাঙ্গাত্মক গলায় বলল।

মীরার সামনে বই খোলা ছিল। তাহিয়া বই টেনে বলল,
‘শিখেছিস পড়া? দেখি বলতো? ‘

মীরা থতমত খেল। পড়ালেখার ‘প’ টাও তার আয়ত্তে নেই। কথা ঘুরিয়ে বলল,
‘ স্যার যে হাসবে আমি আগে জানলে ক্লাসের বাইরে টিকেট কাউন্টার বসাতাম। জনপ্রতি পাঁচ টাকা টিকেট নিয়ে স্যারের হাসি দেখাতাম। চিন্তা কর, কত টাকা আয় হতো? হাসি বিক্রি করে বসুন্ধরায় ফ্ল্যাট কিনতে পারতাম। মিস হয়ে গেল।

তাহিয়া কিছু বলবে তার আগে ম্যাসেজ টোন বেজে উঠল। তড়িঘড়ি করে ফোন হাতে নিয়ে চেক করল,
‘ তোমার স্বভাব চঞ্চল বলে অনুভূতিগুলোকেও চঞ্চল হতে হবে? আমি এখন তোমার টিচার, তেমন ব্যবহার করো। উল্টোপাল্টা ম্যাসেজ দিয়ে জ্বালাচ্ছো কেন? আমাকে আর ম্যাসেজ দিবে না। আমাকে ক্লাসে ফোকাস করতে দাও।’

তাহিয়া হেসে লিখল,
‘ ফার্স্ট ইয়ারে একটা ক্লাসে আপনি বলেছিলেন, ‘আমি, আপনি’ বাদে বাকিসব থার্ড পারসন। আজ আমি বলছি, আমি আপনি বাদে বাকি সবাই থার্ড পারসন। ‘

বাইরে দাঁড়িয়ে ফোন হাতে নিয়ে চোখ বুলাচ্ছে অভীক। এত পাজি কেন মেয়েটা! তাকে খোঁচা মারছে!
‘ ফাজলামো ছাড়ো, তাহিয়া। আমাকে ক্লাস করতে দাও। ‘

তাহিয়া আবার লিখল,
‘ক্লাসের সবাই বলাবলি করছে, আপনি নাকি বউয়ের কথায় ব্লাশ করছেন, ঘটনা সত্য না কি স্যার!’

অভীক উত্তর না দিয়ে লিখল,
‘ ভীষণ জ্বালাচ্ছো তুমি। শুধু কলেজ টাইম শেষ হতে দাও। তারপর আমি ও দেখব, বসন্তটা ঠিক কতক্ষণ থাকে ।’

এবার ভয় পেল তাহিয়া। লোকটা কী করবে? ম্যাসেজে সাহস দেখালে ও লোকটার সামনে গেলে সাহসের ঘাটতি দেখা দেয়। তাহিয়া ফোন রেখে দিল। সোজা হয়ে বসল। জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল। অভীক নেই। আশপাশে উঁকি দেয়ার সময় ক্লাসে এসে প্রবেশ করল অভীক। চেহারায় পেশাগত ভঙ্গি। হাসির রেখা নেই ঠোঁটে। ছাত্রছাত্রীরা হাসাহাসি থামিয়ে সোজা হয়ে বসল। তাহিয়া গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে রইল সামনে। পড়াতে পড়াতে এদিকে তাকিয়ে অভীক মনে মনে বলল,
‘ বউকে সামনে বসিয়ে লেকচার দেয়া যায়! আমার কর্মজীবনে এতটা জড়তা লাগে নি। এই দৃষ্টি উপেক্ষা করে ক্লাস করাতে যতটা অস্বস্তি লাগছে। ফাজিল! এই মেয়েকে ক্লাস করতে আসার কথা বলাই ভুল হয়েছে।’

ক্লাস শেষে বাসায় ফিরল তাহিয়া। অভীকের ফোন এলো তখন। রিসিভ করতেই বলল,
‘এই মেয়ে? সমস্যাটা কি তোমার? এত জ্বালাও কেন?’
তাহিয়া যেন কিছু জানেই না, এমন ভান করল,
‘আমি কী করলাম?’

‘ দিন দিন ফাজিল হয়ে যাচ্ছো তুমি।’
তাহিয়া মুখ টিপে হাসল,
‘আগে ছিলাম না?’
‘আবার মুখের উপর কথা বলে! ফাজিল।’ বিরক্তিতে শাসাল অভীক। তাহিয়ার আজ ভয়ডর নেই। সে হেসে বলল,
‘ঠিক আছে, আর মুখের উপর কথা বলব না। মুখের নিচে কথা বলব। চলবে?’
‘ এই যে তুমি হেয়ালিপনা করছো! তোমার কথার আমি যদি সিরিয়াসলি নিই তাহলে কী হবে জানো তুমি?’
‘কী হবে?’
‘তোমার লজ্জার কারণ হবে। আরও ভেঙে বলব?’

কথার সারমর্ম বুঝতে মিনিট খানেক লাগল তাহিয়ার। বুঝতেই খট করে ফোন কেটে দিল। ফোনটা পকেটে রেখে অভীল হেসে বলল,
‘ আসছে আমার সাথে ফ্লার্ট করতে! আমি ফ্লার্ট করা শুরু করলে পালিয়েও বাঁচতে পারবে না। ও আমার স্ত্রী। আমার গন্ডি কতদূর যাবে মেয়েটা কি আদৌ জানে না? ‘
.

পরদিন ক্লাসে যাবে না যাবে না করেও অভীককে দেখার টান সামলাতে পারল না তাহিয়া। গিয়ে বসল মাঝের একটা টেবিলে। অভীকের ক্লাস শুরু হওয়ার পর পূর্বকার নিয়মে তাকিয়ে রইল। অভীকের চোখ পড়ল ক্লাসের শুরুতেই। একবার চোখ রাঙাল। তাহিয়ার ভাবান্তর নেই। সে স্থবির হয়ে বসে আছে, পলক অবধি ফেলছে না। মীরা বসেছে তাহিয়ার পাশে। তার দৃষ্টি অভীকের দিকে। হাতে খাতা কলম। অভীক তাহিয়ার দিকে কতবার তাকাচ্ছে হিসেব করছে সে।
হুট করে বলে উঠল,
‘তাহিয়া, তোর রাগবিশিষ্ট বর তোর দিকে এই নিয়ে সাতবার তাকিয়েছে।, আবার তাকিয়েছে, আটবার হয়ে গেল। বেচারা স্ত্রীকে চোখে হারাচ্ছে দেখি। আহ্!কী ভালোবাসা! ‘

তাহিয়া চোখ রাঙাল। মীরা অভীককে পরখ করে বলল,
‘শুনেছি মেয়েরা বিয়ের পর সুন্দর হয়, এখন দেখি উলটো। স্যার দিনদিন সুদর্শন হয়ে যাচ্ছে। স্যারের রূপের রহস্য কী বলতো? আজকাল ফেয়ার এন্ড লাভলি ইউজ করা শুরু করেছে না কি! ‘
এবার তাহিয়া তেঁতে উঠল,
‘স্যারের দিকে একদম তাকাবি না। দুলাভাই বাপের সমতূল্য। শ্রদ্ধার চোখে দেখ। বেয়াদব। ‘

মীরা তাহিয়াকে ক্ষেপিয়ে বলল,
‘যত যাই বলিস, স্যারের হাসিটা সুন্দর। কাল না দেখলে বিশ্বাসই করতাম না। স্যারের হাসি দেখার পর থেকে কেন যেন স্যারের প্রতি আমার মনে জমে থাকা রাগটা চলে গেছে। কারণটা কী বলতো!’

তাহিয়া সশব্দে চড় বসাল মীরার বাহুতে। রাগত স্বরে বলল,
‘ আমার বরের দিকে নজর দিস, চোখ খুলে ফেলব। বেয়াদব মহিলা।’

ক্লাসে বিশৃঙ্খলা পছন্দ করে না অভীক। তাহিয়া সেটাই করল। সামান্য অমনোযোগীতা দেখলেই ক্ষেপে যায় অভীক, সেখানে তাহিয়া মারামারি করছে। অভীকের রাগটা মাথায় চলকে উঠল হঠাৎ। মেয়েটা ওর স্ত্রী হওয়ার সুযোগ নিচ্ছে! ভাবছে বিশৃঙ্খলা করলে স্ত্রী বলে মাফ করে দিবে। কত বড়ো ফাজিল! নাহ্, এভাবে চলতে দেয়া যায় না। স্বামী হওয়ার পাশাপাশি সে একজন শিক্ষক। ছাত্রছাত্রীকে শাসন করার অধিকার আছে তার। এই মেয়েটাকে এখন শাসন না করলে পরে হিতে বিপরীত হবে। ফার্স্ট ইয়ারে তিন বিষয় ফেইল করেছে, এভাবে চলতে থাকলে সেকেন্ড ইয়ারেও করবে। সেই চিন্তাও নেই মেয়েটার।

রাগের বশবর্তী হয়ে অভীক ধমকে উঠল,
‘ সাইলেন্স! ‘

তাহিয়া, মীরা আঁতকে উঠল, সোজা হয়ে বসল। অভীক তাহিয়ার দিকে ইশারা করে বলল,
‘এই তু…

শব্দটা উচ্চারণ করল না, এক অক্ষরেই থেমে গেল। ছাত্রছাত্রীদের ‘আপনি’ সম্বোধন করে সে। তাহিয়াকে ‘তুমি’ সম্বোধন করতে করতে মুখ ফসকে বেরিয়ে যাচ্ছিল। তড়িৎ নিজেকে সামলে নিয়ে হালকা কাশল। তারপর বলল,
‘এই যে আপনি, দাঁড়ান। পাশের জন ও দাঁড়ান।’

স্ত্রীকে আপনি সম্বোধন করাটা ও কেমন বেমানান লাগল অভীকের। তবু ও করার কিছু নেই। যতদিন তাহিয়া তার ছাত্রী, ক্লাসে ‘আপনি’ সম্বোধন করতে হবে।

মীরা ভীত গলায় বলল,
‘আজ আমাদের চ্যাপ্টার ক্লোজড, তাহিয়া।’
‘উঠ, দেখ কী বলে!’ মীরাকে টেনে তুলল তাহিয়া।

দুজন দাঁড়াতেই অভীক গম্ভীরমুখে বলল,
‘মারামারিতে দেখি বেশ পারদর্শী আপনারা। তা আসুন, মঞ্চে মারামারি করুন। আপনাদের প্রতিভা আমাদের দেখার সু্যোগ দিন। অনেকদিন কুস্তি দেখিনি, বিনোদন ও হলো।’

মীরা ঢোক গিলে বলল,
‘ভদ্র ভাষায় অপমান করা কাকে বলে, স্যার থেকে শিখা উচিত। ভেবেছিলাম, বিয়ের পর বউ ঠিক করবে। প্রথম আশ্বাস হারালেও পরে তুই স্যারের বউ জেনে স্বস্তি পেয়েছি। ভেবেছি, বান্ধবী আমার, বরকে শায়েস্তা করবে। কিন্তু হলো কী! নিজেই শায়েস্তা হয়ে বসে আছে। তোর বউ হওয়া বৃথা, তাহিয়া।’

তাহিয়া গম্ভীর গলায় বলল,
‘ স্যার আমাকে বকা দিবে! পারবে দিতে?’

মীরা মুখ টিপে হাসল। হাসিটা দেখে অভীকের রাগের মাত্রা বাড়ল। ধমকে উঠল আবার। দাঁড় করিয়ে রেখেছে, লজ্জা পাওয়ার কথা। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছে, হাসিঠাট্টা করছে। এত নির্লজ্জ কিভাবে হয় মানুষ! রাগের বশবর্তী হয়ে ক্লাস থেকে বের করে দিল।

তাহিয়ার চোখে পানি টলমল করছে। অশ্রুসিক্ত চোখে এক পলক চেয়ে চলে গেল। সম্পর্কটার কত উন্নতি হয়েছে। এখন লোকটা ওকে ধমক দিতে পারল! বাইরে এসে কেঁদেই দিল।
চোখ মুছে বলল,
‘ আমি আর উনার সাথে কথাই বলব না। নিষ্ঠুর লোক! না ফোন করব, না দেখতে চাইব, আর না মিস করব। তাকাব ও না। উনি থাকুক উনার শিক্ষকতা নিয়ে। ‘

মীরা সান্ত্বনার বাণী শুনাল,
‘লেকচারারকে বিয়ে করলে এমনই হবে। এটাই বাস্তবতা। কী করবি? চল সময়টাকে অপচয় না করে কোথাও ঘুরে আসি। ‘

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here