প্রেমের জোয়ার ভাটা পর্ব ৪

0
534

#প্রেমের_জোয়ার_ভাটা
#পর্ব_০৪
#অধির_রায়

আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে শরতের মেঘমালা। বর্ষা পর শরৎকাল প্রকৃতিতে নতুন আমেজ নিয়ে এসেছে৷ মনোমুগ্ধকর সবুজের ঘেরায় ধরনী৷ হাঁটু পরিমাণে গাঢ় সবুজের ঘেরা চারপাশ৷ শান্ত পরিবেশে মীরার মন অশান্ত। প্রায় তিনমাস হলো আরুশের কোন খুঁজ নেই৷ সেদিন রাতের পর থেকে আরুশের দেখা মেলেনি৷ না দেখতে পেয়েছে ইহান ভাইয়ার সাথে৷ আজকাল আরুশের জন্য খুব মন খারাপ করে৷ মস্তিষ্কের নিউরণ চোখের মণিকে সাড়া দেয় এক পলক আরুশকে দেখার৷ কিন্তু আরুশের কোন দেখা মিলে না৷ ক্লাস না করে একা একা পুকুর পাড়ে বসে আছে মীরা৷ কোথা থেকে আরুশ এসে মীরার গা ঘেঁষে বসে পড়ল৷ মীরা কিছু বুঝার আগেই আরুশ মীরার হাতের উপর নিজের হাত রাখল৷ মীরার সমস্ত দেহ কেঁপে উঠল৷ খিঁচে চোখ বন্ধ করে ফেলল। আরুশ মুচকি হেঁসে বলল,

“আমায় এতো ভালোবাসাে কিন্তু প্রকাশ করো না কেন? আমার খুঁজ নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠছো কেন?”

মীরা রাগে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিল৷ রাগ, অভিমান, ঘৃণা, ক্ষোভ সবই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে৷ মীরা চোখ পাকিয়ে বলল,

“আমার কোন কাজ নেই৷ আপনার মতো ছেলেকে ভালোবাসতে কেন যাব? আপনি ভালোবাসার কোন মানে বুঝেন? ভালোবাসা কাকে বলে জানেন?”

মীরার অভিমানী রাগ দেখে ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠে৷ যা মীরাকে আরও রাগিয়ে তুলে৷ মীরা উচ্চ স্বরে বলল,

“আপনার লজ্জা হওয়া উচিত৷ এখনও বে’হা’য়া, ল”ম্প”ট, বে”‘য়া’দ’বে’র মতো হেঁসে যাচ্ছেন৷”

মীরা রাগ করে চলে যেতে নিলে আরুশ মীরার পথ আটকায়৷ মীরার রাগ সপ্তম আকাশে উঠে যায়৷ নিজেকে পাগল লাগছে৷ ইচ্ছা করছে আরুশের জীবনের ইতি টানতে৷ আরুশের গালে কষিয়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল৷ তবুও আরুশের মুখে হাসির রেখা৷ আরুশ মীরার হাত ধরে পাশে বসাল৷ এক হাতে মীরাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলল,

“আমি আমার অভিমানী মীরাকে খুব ভালোবাসি। অভিমানী মীরার জন্য যতো আয়োজন। আমি দেখতে চেয়েছিলাম তুমি আমায় ভালোবাসো কিনা৷ আমি আমার উত্তর পেয়ে গেছি৷ আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না৷ তুমিও আমায় ছাড়া থাকতে পারবে না৷ সেজন্য তোমার ভালোবাসা আরুশ বিসিএসের পিলিতে টিকে গেছে৷ সৃষ্টিকর্তা যদি চান খুব তাড়াতাড়ি আমি আমার অভিমানী মীরাকে নিজের করে নিব৷”

মীরা আরুশের কাঁধে মাথা রেখে বলল,

“তিনটা মাছ আপনাকে দেখার জন্য কতো চেষ্টা করছি৷ আপনার বাসা পর্যন্ত চলে গেছিলাম৷ কিন্তু আপনার কোন পাত্তা নেই৷ এখন ভুত হয়ে কোথা থেকে আসলেন৷”

“আমি তোমারই ছিলাম। তোমারই আছি৷ তোমার ডাগর আঁখির গভীর মায়ায় নিজেকে হারাতে চাই৷ পলকহীন তোমায় দেখতে চাই৷ তৃপ্তি না মেটানো অব্দি তোমাকে দেখতে চাই৷”

“হয়েছে এখন আর ভালোবাসার কথা বলতে হবে না৷ আপনি আমায় অনেক কষ্ট দিয়েছেন৷ আমি তার দ্বিগুণ কষ্ট আপনাকে যেদিন ফিরিয়ে দিব সেদিনই আপনার ভালোবাসার ডাকে সাড়া দিব৷”

আরুশ মীরার সামনে বসে মীরার পা নিজের বাইস্পে নিল৷ মীরার চোখ রসে গোল্লার মতো হয়ে গেছে৷ আরুশ পুকুর পাড়ের মীরার সিঁড়ি থেকে দুইটা সিঁড়ি নিচে বসে আছে৷ প্যান্টের পকেট থেকে এক জোড়া নুপুর বের করে মীরার পায়ে পড়িয়ে দিল৷ আরুশের প্রতিটি স্পর্শে মীরা কেঁপে উঠল৷ লজ্জায় খিঁচে চোখ বন্ধ করে রেখেছে৷ মীরাকে আরও লজ্জা দিতে মীরার হাতে আলতো করে ভালোবাসার স্পর্শ একে দিল৷ সমস্ত শক্তি হারিয়ে ফেলেছে৷ লজ্জায় আঁখি মেলে তাকাতে পারছে না৷ ওষ্ঠদ্বয় কাঁপাকাপি করছে৷ চোখ মেলে আশেপাশে আরুশকে দেখতে পেল না৷ তবুও লজ্জা লাগছে৷ দু’হাতের পাতা দিয়ে মুখ মন্ডল ঢেকে নিল৷
________________

চার বন্ধু মিলে আড্ডা দিচ্ছে তোলপাড় ক্যান্টিনে৷ আড্ডার মূল বিষয় বস্তু হলো আরুশ৷ আরুশ পিলিতে টিকে গেছে। সবাইকে ট্রিট দিতে হবে৷ রঙ্গন লুকিয়ে পূজাকে বিয়ে করে ফেলেছে। যা নিয়ে চলছে বন্ধু মহলে কোলাহল। আরুশ গিটারে টুংটাং শব্দ তুলে বলল,

“জীবনটা কতো অদ্ভুত। কিছু দিনের মাঝেই সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে৷ সবাই যে যার মতো নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছে।”

ইহান ধোঁয়া উঠা চায়ের কাপে চুম্বন দিয়ে বলল,

“আমাকে রেখে তোরা লাইফে এগিয়ে গেলি৷ আমি এখনও কিছুই করতে পারলাম না৷ জীবনটা বেদনাদায়ক হয়ে উঠল৷”

ইহানের কথায় মাঝে কষ্ট ফুটে উঠেছে। নিজেকে যেন সবার থেকে ছোট মনে হচ্ছে৷ আরুশ ইহানকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“নিজেকে কখনও ছোট করে দেখবি না৷ তুই যদি আকন্দপুরে একটা স্কুল দিতে পারিস খুব ভালো হয়৷ তোদের গ্রামের আশেপাশে কোন স্কুল নেই৷ গ্রামের সবাই লেখাপড়ার জন্য সেই দূরে ছুটে চলে। বর্ষার সময় স্কুলে যেতে পারে না৷ তুই বরং একটা স্কুল খুল৷ গ্রামের মানুষদের জন্য কিছু কর৷ এর থেকে মহান কাজ কিছুই নেই৷”

ইহান তাচ্ছিল্যের সহিত বলে উঠল,

“তুই শহরের সাথে গ্রামের তুলনা বুঝবি না৷ শহরের কোণায় কোণায় কোচিং সেন্টার খুলে বসেছে আছে। কোচিং সেন্টার বললে ভুল হবে এগুলো অসৎ ব্যবসায়ী৷ কিন্তু গ্রামের মাঝে একটা স্কুল করলে লোকের হাজারটা সমালোচনার জবাব দিতে হবে৷”

সাদাফ ইহানের কাঁধে হাত রেখে বলল,

“আরুশ একদম ঠিক কথা বলেছে৷ আমরা সেই ছোটবেলা থেকে পড়ে আসছি শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। কিন্তু মেরুদণ্ড থাকলেও সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না৷ যেমন তুই একজন শিক্ষিত মানুষ হয়ে বাজে চিন্তা করছিস৷ নিন্দুক সমাজ না থাকলে কিভাবে এগিয়ে যাব? মানুষ নিন্দা না করলে তুই সাফল্যের চূড়ায় কিভাবে উঠবি৷”

রঙ্গন বিরক্তির সাথে বলল,

“তোদের কথা শেষ হলে বল। আমার বোরিং লাগছে৷ ইহানকে দ্বারা কিছুই হবে না৷ বাংলাদেশে সাবজেক্ট অনুযায়ী জব নেই৷ থাকলে আজ আমরা এখানে বসে থাকতাম না৷ আমাদের স্থান হতো কোন অফিসে৷ তাই নিজেকে একদম নিচু থেকে উঠে দাঁড়াতে হবে। উপরের দিকে বা তাকিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে চল৷”

ইহান তিন বন্ধুর কথা বুঝতে পারল৷ লাইফে সঠিক সময়ে সঠিক পরামর্শ দেওয়া বন্ধুগুলো তুলনা নেই৷ ইহান রাজি হয়ে যায় স্কুল দিতে৷ রঙ্গন হাসির ছলে বলল,

“তোর স্কুল দিতে হবে না৷ আরুশের বাবার কোম্পানিতে জয়েন্ট হু৷ আরুশ বিসিএস দিয়ে কি করবে বুঝতে পারলাম না৷ আমি আমার বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করব৷ তুই মীরাকে আরুশের সাথে বিয়ে দিয়ে দে তাহলে তোর চিন্তা নেই৷”

সাদাফ মুচকি হেঁসে বলল,

“মীরা শেষে আরুশের গলায় ঝুলবে৷ ভালোই হবে৷ ইহান তুই মানা করতে পারবি না৷ আরুশ যদি মীরার মন পটিয়ে নিতে পারে৷”

বন্ধুদের কথায় ইহানের খুব রাগ হয়৷ টেবিলে থাপ্পড় দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে৷ চোখ রাঙিয়ে বলল,

“থাম এবার৷ অনেক হয়েছে৷ আমি মীরাকে নিয়ে কোন কথা শুনতে চাইনা৷ আমার বোন যাকে পছন্দ করবে তার সাথেই বিয়ে দিব৷ কিন্তু বন্ধুদের মাঝে কারোর সাথে নয়৷”

ইহান আর এক মিনিটও দাঁড়াল না৷ পায়ে শব্দ তুলে হনহনিয়ে চলে গেল৷ আরুশের কপালে চিন্তার ভাজ ফুটে উঠে৷ তীরে এসে তরী ডুবিয়ে যাবে.?
_________________

ইহানকে না জানিয়ে আরুশের মা বাবা মীরাকে দেখতে এসেছেন৷ সাথে এসেছে সাদাফ, রঙ্গন৷ বিয়ে ঠিক হলে ইহান কিছু করতে পারবে না৷ ফ্যামিলি রাজি থাকলে সবই হবে৷ আরুশের ফ্যামিলি বিয়েতে রাজি হয়ে যায়৷ মেরা ছুটিতে বাড়িতে এসেছে৷ চারিদিকে শীতের আমেজ ধরা দিচ্ছে৷ গোধূলি সন্ধ্যা বেলায় কণা দেখার আলোতে মীরাকে নিয়ে আসা হলো৷ আরুশের মা বাবার খুব পছন্দ হয় মীরাকে৷ মীরাকে কিছু না বলে মীরার বাবা মায়ের সাথে কথা বলতে চান আরুশের মা বাবা৷ আরুশের বাবা বলল,

“বিয়ে একটা পবিত্র বন্ধন৷ খুব তাড়াতাড়ি করা ঠিক নয়৷ তবুও আমরা একটু তাড়াতাড়ি করতে চাচ্ছি৷ মীরাকে আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে৷ আমরা আরুশের জন্য মীরাকে আপনাদের কাছে চাচ্ছি৷”

ইহানের বাবা গুরু গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

“আমি যতটুকু জানি কোম্পানি আপনি নিজের চেষ্টায় বড় করেছেন৷ কিন্তু আপনার ছেলে কিছুই করেনি৷ নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতে পারলে আমি এই বিয়েতে রাজি।”

আরুশের বাবা ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা টেনে বলল,

“আমার কোম্পানিতে আরুশের কোন জায়গা নেই৷ আরুশ নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছে৷ জানার হলে আরুশের বন্ধুদের কাছ থেকে জেনে নিবেন৷ কেননা নিজের বিষয়ে নিজেরা বললে ততটা বিশ্বাস করবেন না৷ সব থেকে ভালো কথা আপনি স্ব চোখে সবকিছু দেখে আসতে পারেন৷”

ইহানের বাবা ভারী গলায় বলল,

“হুম৷ আমি সব দিক বিচার বিবেচনা করেই মেয়েকে আরুশের হাতে তুলে দিব৷ আমি মেয়কে অপাত্রের হাতে তুলে দিতে পারিনা৷”

বাবা মানেই সব সমস্যার সমাধান। কোন বিপদ আসলে নিজে আগে ঝাঁপিয়ে পড়েন৷ কোন আঁচ লাগতে দেননা সন্তানের গায়ে৷ প্রতিটি সন্তানের কাছেই বাবা শ্রেষ্ঠ।

চলবে…..

গতকাল না দেওয়ার জন্য দুঃখিত৷ সবাইকে বসন্তের শুভেচ্ছা রইল৷ রিচেক দেওয়া হয়নি৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here