প্রেমের ঐশ্বর্য পর্ব ৫৩(বর্ধিতাংশ)

0
279

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৫৩ (বর্ধিতাংশ)

মোটা আর ভারি বইটি খোলার সাথে সাথে রশ্মি যখন আর তীব্র হয়ে উঠল তখন আর সেটার দিকে তাকাতে পারল না প্রেম। হাত দিয়ে ঢেকে নিল নিজেকের চোখ। চোখ বুঁজে রাখা অবস্থায় কানে এলো ঐশ্বর্যের কন্ঠ। একনাগাড়ে কিছু একটা বলছে সে। চোখ থেকে হাত সরাতেই আবারও যখন রশ্মি চোখে পড়ল চোখ খিঁচে নিল সে। অল্প করে তাকিয়ে দেখল এই তীব্র আলোয় ঐশ্বর্য স্বাভাবিকভাবে তাকিয়ে ‘দ্যা ডেভিল বুক’ এর প্রথম পাতার হাত দিয়ে পড়ছে। নেত্রপল্লব সরু করে শোনার চেষ্টা করল কথাগুলো।
“ডেভিল কিংডম! এক নিষ্ঠুর রাজ্য। মিথ্যে, ছলচাতুরী, প্রাণহীনতায় ভরা এক রাজ্য। ভালোবাসা, মায়া এই শব্দগুলোর ব্যবহার এখানে যেমন নেই তেমনই এখানকার প্রজা হোক বা প্রাসাদের কেউ তাদের মাঝেও নেই। শুধু আছে হিং’স্রতা আর তিক্ততা। আর রয়েছে পৃথিবীতে রাজত্ব করার লালসা। তবে এই স্বার্থ ততক্ষণ অবধি সফল হবেনা যতক্ষণ এই রাজ্যের রাণী না চাইবে। সেই ডেভিল ক্রাউনের অধিকারিনী হবে একমাত্র সেই স্বার্থসিদ্ধির চাবিকাঠি।”

পাতা উল্টায় ঐশ্বর্য। চোখে ভাসমান হয়ে ওঠে এক নারীর ছবি। ছবিতে রঙ না থাকলেও কলমেট কালিতে যেভাবে আঁকা হয়েছে তাতে বোঝাই যাচ্ছে মেয়েটা অপরূপ সুন্দরী ছিল। তার মাথায় রয়েছে সেই মুকুট। ঠিক তেমনই মুকুট যা ঐশ্বর্যের হাতের সেই চিহ্নের সাথে মিলে। প্রেম একটু একটু করে আগ্রহের সাথে এগিয়ে এলো। ঐশ্বর্যের পাশে বসতেই ঐশ্বর্য পড়তে থাকল,
“আজ থেকে প্রায় একশ বছর আগে শেষ রাণীর রাজত্ব ছিল এই রাজ্যে। তবে তিনি ভ্যাম্পায়ারদের সাথে পেরে ওঠেন নি। ভ্যাম্পায়ার কিং প্রলয় উনাকে ধ্বংস করেছিল।”

ঐশ্বর্য চমকে ওঠে। ছবিতে আরেকটু চোখ বুলিয়ে নেয়। এটা তাহলে তার আগে আসা ডেভিল কুইনের ছবি। আর প্রলয় নামটার সঙ্গে সে যেন পরিচিত। ঐশ্বর্যের মাথা কিঞ্চিৎ যন্ত্রণা করে ওঠে। মাথা ঝাঁকাতেই তার স্মরণ হয় এটা তার বাবার বাবা অর্থাৎ তার দাদুর নাম। তার মানে উনিই এই রাণীকে মৃ’ত্যু দিয়েছিলেন? ঐশ্বর্য আবারও বইয়ের পাতায় মন দেয়।
“ডেভিল কুইন কখনো ডেভিল কিংডম থেকে নির্ধারণ করা হয় না। তারা ওয়ারওল্ফ কিংডম নয়ত ভ্যাম্পায়ার কিংডম থেকে পদার্পণ করে। ভ্যাম্পায়ারদের মধ্যে অনেকে ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে কোনো ওয়ারওল্ফ অথবা ডেভিলদের সঙ্গে নিজের জীবন কাটাবে বলে ঠিক করে আর তাদের মাধ্যমেই জন্ম হয় সেই কন্যা যে বড় হয়ে ডেভিল কুইন হবার ক্ষমতা রাখে। আবার অনেক সময় কোনো ভ্যাম্পায়ার ভুলে ওয়ারওল্ফদের ডেভিল পাওয়ার নামক কক্ষে প্রবেশ করলে তার মাঝে প্রবেশ করে শয়’তানি শক্তি। ডেভিল ও ওয়ারওল্ফদের মধ্যে বহু বছরের সখ্যতা। আর একবার কারোর মধ্যে সেই শক্তির প্রবেশ ঘটলে সেটা থেকে যায়। ভালোবাসা নামক এই অনুভূতি নিস্ক্রিয় করার ক্ষমতা রাখে এই শয়’তানি শক্তি। তবে শক্তি মুছে যায় না। বরং প্রবেশ করে তার ভবিষ্যৎ সন্তানের মাঝে! সেখান থেকেও হয়ে ওঠে ডেভিল কুইন। ডেভিল কুইন চেনার উপায় হচ্ছে তার ক্রোধ! তার সবকিছু ধ্বংস করে দেওয়ার প্রবণতা। তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। সেই সাথে হাতে থাকা এক চিহ্ন। সেই চিহ্ন হুবহু হবে ডেভিল ক্রাউনের। একমাত্র সে হতে পারে ডেভিল কুইন। তবে পদ্ধতিটি এতোটা সহজ নয়। যদি ডেভিল কিংডমের কেউ তাকে খুঁজে পাবার আগে তার মনে ভালোবাসার সঞ্চার হয় তবে বিষয়টা ততটাই জটিল হবে। বিবাহ নামক বন্ধন সমস্ত পরিকল্পনা ভাঙতে পারে। একজন স্বামী-স্ত্রীর প্রণয় সবটা ছাড়িয়ে যেতে পারে। যদি সেটা হয় তবে মুছে যাবে সেই চিহ্ন। সেই সাথে ডেভিল কুইন হওয়ার আশঙ্কা।”

এতোটুকু পড়ে থামলো ঐশ্বর্য। ঘাড় ঘুরিয়ে প্রেমের দিকে তাকাতেই চোখে চোখ পড়ল তাদের। ঐশ্বর্য চোখ সরিয়ে নিল। কিছু একটা ভেবে চোখমুখ খিঁচে নিল। স্মরণে এলো তার মা মাধুর্যের বলা সেসব কথাগুলো! মাধুর্য বার বার বলেছিল এই বিয়েটা সে তার ভালোর জন্যই দিয়েছে। কিন্তু সে শোনে নি। পাগল হয়ে গিয়েছিল। মায়ের ওপর রেগে ছিল। অনুতপ্ত বোধ হয় তার মনের মধ্যে। প্রেম তখন শান্ত গলায় বলে ওঠে,
“এরপর পড়তে থাকো ঐশ্বর্য। হাতে একটুও সময় নেই।”

চোখ খুলে আবারও নিজের হাতের চিহ্নের দিকে দৃষ্টিপাত করে ঐশ্বর্য। চিহ্নটা জ্বলছে আপনমনে। তারপর বইয়ের দিকে তাকিয়ে পড়তে থাকে।
“এরপরেও যদি এতোকিছুর পরেও চিহ্নটি থাকে তবেই সম্ভব! মহা অমাবস্যার রাতে যখন চাঁদ সম্পূর্ণভাবে মুছে যাবে ঠিক সেই মূহুর্তে শয়’তানি তলোয়া’র জেগে উঠবে। তা দ্বারা পরপর তিনবার সেই কাঙ্ক্ষিত জনকে আ’ঘাত করলে সে প্রথমবারের মতো ডেভিল রূপ ধারণ করবে। সম্পূর্ণ বিগত জীবনের স্মৃতি তার মস্তিষ্ক থেকে মুছে যাবে। পুরোপুরি ভাবে নয়। এটি ফিরতে পারে একমাত্র তার জন্মদাত্রী মা এবং বাবার সঙ্গে দেখা হলে। তাদের চোখে চোখ রাখলে সবটা স্মরণ হতে পারে। তবে সেটাও ক্ষণিকের জন্য। যতক্ষণ না ডেভিল ক্রাউন রাণীর মাথায় না উঠবে ততক্ষণ সে পুরোপুরি ডেভিল কুইন হয়ে উঠতে পারবে না। তার বিগত জীবন ফিরে পাবার আশঙ্কা থেকেই যাবে। সেই জীবনটা সে ফিরে পেতে পারে এই বইয়েরই পাশে রাখা সেই শয়’তানি তলো’য়ারের মাধ্যমেই। যেই তলো’য়ার তাকে শক্তি দিয়েছে সেই তলো’য়ার-ই তার শক্তি শুষে নেবে। সে আগের মতো হয়ে উঠতে পারে।”

শেষ কথাগুলো ব্যাপকভাবে প্রেমের মস্তিষ্কে নাড়া দিয়ে উঠল। দ্রুত তড়িঘড়ি করে বইটা হাতে নিয়ে নিল নিজে পড়তে। সময় যেন বেশ তাড়াতাড়ি যাচ্ছে। বই থেকে আগত রশ্মি কমেছে। তাই ভালো করে বইয়ের দিকে দৃষ্টি রাখলো প্রেম।

সকাল! পরিষ্কার আকাশ। এ যেন আকাশ নয় নীল রঙের এক মাঠ। মাঠে অসংখ্য সাদা মেঘের ছোটাছুটি এবং খেলাধুলা। গাছের সমারোহে হাঁটতে গিয়েই হোঁচট খেলো প্রেম। সে শুধু আশপাশ দেখছে। এ যেন অন্য জগত। তার হাতে সেই শয়’তানি তলোয়ার। পেছন পেছন আসছে মাধুর্য। ধীর পায়ে হাঁটছে সে। তাকে হাঁটতে সাহায্য করছে অনুভব। তার দুটো কাঁধ ধরে সেও আস্তে হাঁটছে মাধুর্যের পাশাপাশি। এই প্রথম ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে প্রবেশ করেছে প্রেম। তার পাশে দ্রুত হাঁটছে ঐশ্বর্য। চোখেমুখে উৎকন্ঠা। সেই সাথে কপাল কুঁচকানো। তার সমস্ত শরীরে কাঁপুনি ধরেছে। ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে প্রবেশ করবার পর থেকে এমনটা হচ্ছে। সামনে এগোতেই তাদের সামনে পড়ল স্বচ্ছ বহমান নদী। জঙ্গলের মাঝ দিয়ে গিয়ে জঙ্গলটাকে ভাগ করেছে। এতো সুন্দর স্বচ্ছ নদী মানুষের জগতে দেখা মিলে না সহজে। স্রোত বইছে নদীতে। প্রেমের ধ্যান ভাঙে অনুভবের কথায়।
“আমরা দুঃখিত প্রেম। এই প্রথম তুমি আমাদের রাজ্যে এলে তাও লুকিয়ে। তোমার জন্য কোনো বিশেষ করতে পারলাম না।”

“আয়োজন তো তখন হবে যখন আপনাদের মেয়েকে আপনারা সম্পূর্ণভাবে ফিরে পাবেন। তার আগে নয়। সামান্য বিষয়ে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হবেন না।”

অনুভব আর কথা বাড়ালো না। ঐশ্বর্য ফট করে দাঁড়িয়ে পড়ল। একহাতে তার কপালের সাইডে হাত রেখে ঠোঁট কামড়ে চোখ বন্ধ করল। ফট করেই চোখ খুলতেই তার সাথে থাকা সকলে চমকে উঠল। ঐশ্বর্যের চোখ মূহুর্তে লাল বর্ণ হয়ে এসেছে। প্রেম তড়িঘড়ি করে তার কাঁধে হাত রেখে তাকে একটু ঝাঁকিয়ে ডেকে উঠল,
“ঐশ্বর্য!”

আবারও আগের রূপে ফিরল ঐশ্বর্য তৎক্ষনাৎ। সম্বিৎ ফিরে উত্তেজনা নিয়ে বলল,
“মনে হচ্ছে আমি আবারও ডেভিল রূপে ফিরে যাচ্ছি। আমি ডেভিল কুইন হতে চাই না। আমি আমার অস্তিত্বে বাঁচতে চাই। মি. আনস্মাইলিং যা করার দ্রুত করুন।”

“হ্যাঁ। তাড়াতাড়ি যেতে হবে প্রাসাদে।”

সকলে প্রাসাদে পৌঁছে। চলে আসে এক কক্ষে। মাধুর্য কাঁপছে। ঐশ্বর্য তার সামনে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। মায়ের দিকে একনাগাড়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বলে,
“মা, আমি তোমার মেয়ে হয়ে থাকতে চাই। কোনো ধ্বংসের সূচনা করতে চাই না। আমি এই রাজ্যের প্রতি প্রথমবার এতোটা টান করছি। এটা আমার জন্মভূমি। আমি এই জন্মভূমির জন্য কিছু করতে চাই। আমার অস্তিত্ব আমি হারাতে চাই না। আর এর জন্য যা করার তোমাকেই করতে হবে। ‘দ্যা ডেভিল বুক’ এর কথা অনুযায়ী আমি আগের মতো হবো তখনই যখন আমার নিজের মাতা আমাকে এই তলো’য়ার দিয়ে পরপর তিনবার আঘা’ত করবে ঠিক আমার জন্মস্থানে! এখানে আমার জন্ম হয়েছিল। আর এখানেই আমি আবারও অস্তিত্ব ফিরে পাব তুমি চাও তো!”

অনুভব নিজের বুকের ওপর পাথর রেখে মাধুর্যের কোমল হাতে ধরিয়ে দেয় তলো’য়ার। এই ধারা’লো ও তীক্ষ্ণ অ”স্ত্র দেখে মাধুর্যের অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে। সে অ’স্ত্র এই প্রথম হাতে নেয় নি। বহুবার নিয়েছে। হাতও চালিয়েছে। তবে এবার যে এটা দ্বারা নিজের নাড়িছেঁড়া মেয়ের ওপর আ’ঘাত করতে হবে! এটা কোন মা পারবে? মাধুর্য সেই মূহুর্তে তলো’য়ার ফেলে দেয়। কাঁপতে কাঁপতে বসে পড়ে নিচে।
“আমি পারব না। আমি তোমাকে ছোট থেকে ছোট্ট একটা আ’ঘাত পেতে দেখতেও পারিনি ঐশ্বর্য। আমি পারব না যেই হাতে তোমাকে নিজে আগলে রেখে বড় করেছি সেই হাতে তোমাকে পরপর তিনবার এই তলো’য়ার এফোঁড়ওফোঁড় করতে।”

মাধুর্যের চোখ দিয়ে পড়ে নোনাজল। অনুভব স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর মনে হয় এই তো একমাত্র রাস্তা! আর যে কোনো উপায় নেই। বড় একটা শ্বাস নিয়ে সে মাধুর্যকে বলে ওঠে,
“ভেবে দেখো মাধুর্য। এটা শেষ সুযোগ আমাদের মেয়েকে ফিরে পাবার। তুমি না পারলে করবে না আ’ঘাত। তবে তোমার এই সিদ্ধান্তে আমরা ঐশ্বর্যকে হারাবো চিরদিনের মতো। সেই সাথে একে একে ধ্বংস হতে দেখতে হবে আমাদের রাজ্য।”

“নাহ!”
চিৎকার দিয়ে ওঠে মাধুর্য। দরজার ওপার থেকে তা শুনে মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে প্রেমের। সে কক্ষের বাহিরে দাঁড়িয়ে। সে যে নিজেও দেখতে পারবে না তার আ’হত র’ক্তাক্ত প্রেয়সীকে। তার হৃদয় থেকে র’ক্ত ক্ষরণ হবে। তাই তো সে অনুভবের হাতে সেই তলো’য়ার তুলে দিয়ে কোনোরকম কথা না বলে চলে এসেছে কক্ষের বাহিরে। দরজার সাথে ঠেস লাগিয়ে একমনে দাঁড়িয়ে আছে। সর্বাঙ্গ শিউরে উঠছে তার। তবে এটাই যদি তার অর্ধাঙ্গিনীকে ফিরে পাবার একমাত্র উপায় হয়। তবে হক!

মাধুর্য ইতিমধ্যে উঠে দাঁড়ায় হাতে তলোয়ার নিয়ে। তলো’য়ারটা ভালো করে ধরতেই ঢক গিলে নেয় সে। অশ্রু ভরা আঁখি দুটি ঐশ্বর্যের পানে যেতেই দেখে ঐশ্বর্যের চোখ দুটো আবারও রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। মুখভঙ্গি হয়ে উঠেছে হিংস্র। চোখ খিঁচে বন্ধ করে এক চিৎকারে মাধুর্য সেই তীক্ষ্ণ তলো’য়ার ঢুকিয়ে দেয় ঐশ্বর্যের পেট বরাবর। ফ্যাকাশে এবং শান্ত হয়ে আসে ঐশ্বর্যের মুখশ্রী। অনুভব অন্যদিকে ফিরে নেয় নিজের মুখ। কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারে না। না জানি মাধুর্যের মনে তাহলে কি হচ্ছে। শব্দ করে কেঁদে উঠেই বাকি দুই বারও অ’স্ত্র চালনা করে মাধুর্য। তলো’য়ার বের করবার সাথে সাথে ধপ করে পড়ে যায় ঐশ্বর্য। মাটিতে পড়ে থাকে তার র’ক্তে ভেজা দেহ। মূহুর্তে তৈরি হয় তার র’ক্ত দ্বারা ভর্তি কক্ষ। মাধুর্য চোখ মেলে তাকায়। ঐশ্বর্যকে এমন ভাবে দেখে প্রাণ যেন বেরিয়ে যায়। ধপ করে বসে পড়ে। কোনোরূপ পরিবর্তন না দেখে মনটা যেন বলে ওঠে, তার মেয়ে আর ঠিক হবে না। আর্তনাদ করে ওঠে,
“আমার মেয়ে!”

অনুভব নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে। দেহে যেন তারও প্রাণ নেই। বুকটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। মাধুর্যের আর্তনাদ শুনে তড়িঘড়ি করে কক্ষে প্রবেশ করে প্রেম। সেই সময়ই ঐশ্বর্যের মাঝ থেকে এক অদ্ভুত রশ্মি বেরিয়ে আসে। লাল সেই রশ্মি বেরিয়ে যায়। অনুভব খেয়াল করে ঐশ্বর্যের হাতে থাকা সেই চিহ্ন আর জ্বলছে না। স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। তার বড় কালো কুচকুচে নখ স্বাভাবিক হয়ে গেছে। প্রেম কাঁপছিল। সারা মুখে তার আতঙ্ক। ঐশ্বর্যের চোখের পলক পড়তে দেখেই হৃদয়ে যেন প্রাণ সঞ্চার হলো। আনন্দে ভরে গেল চোখদুটো অশ্রুতে। দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে মুখটা নিচু করে ফেলল সে। মাধুর্য শুনতে পেলো,
“মা, আমার কাছ থেকে মনে হচ্ছে খুব বড় একটা কিছু নেমে গেছে। হালকা বোধ করছি। আমি কি নিজের অস্তিত্ব ফিরে পেয়েছি?”

সেদিন ফিরে পেয়েছি ঐশ্বর্য নিজের অস্তিত্ব। হয়ে উঠেছিল সে ভ্যাম্পায়ার প্রিন্সেস। তবে সেই ‘দ্যা ডেভিল বুক’ এ লিখা ছিল ডেভিল কিংডম ধ্বংসের উপায়। সেটা পূরণ করতে তাকে ডেভিল কিংডমে ফিরতে হতো। সব পরিকল্পনা করেই সেখানে ফিরেছিল ঐশ্বর্য। তবে পিছু ছাড়েনি প্রেম। তার সাথে সাথে এই প্রেমিক পুরুষটিও এসেছিল। তবে তার যে প্রা’ণের ঝুঁকি ছিল। সেটা কি সে জানতো না? অবশ্যই জানতো! তবুও সে এসেছিল। তার প্রেয়সীকে রক্ষা করার স্বার্থে।

আবারও ডেভিল কিংডমে প্রবেশ ঘটে তাদের। ভোর হতে আর কিছু সময় বাকি। আর ডেভিলদের ঘুম ভাঙতেও। জঙ্গল পেরিয়ে তাড়াতাড়ি যাচ্ছিল তারা। তখনি ঐশ্বর্য ধরল প্রেমের হাতটা। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে বলল,
“শুনুন কে যেন আসছে!”

প্রেমও শোনার চেষ্টা করল। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে প্রশ্ন করল,
“আমি তো শুনতে পাচ্ছি না।”

“উফফ…আপনি পাবেন কি করে? আমরা ভ্যাম্পায়ার দূর থেকেও কারো আগমন টের পাই। চলুন ওদিকে গিয়ে লুকাই।”

প্রেম কিছু বলতে চাইলেও সক্ষম হলো না। ঐশ্বর্য তাকে নিয়ে এসে দাঁড় করালো এক ভাঙা কুটিরের কাছে। তারা দেখলো কুটির একেবারে খালি। কেউ থাকে না। তখনি ঐশ্বর্য বলল,
“কিছুক্ষণের জন্য এখানে থাকি? তারপর না হয় প্রাসাদের দিকে যাব। ডেভিলদের মাঝে শুধু প্রাসাদের সকলে ঘুমিয়েছে। প্রজারা নয়।”

প্রেমও কথা বাড়ালো না। তারা কুটিরে প্রবেশ করে। কুটিরের ঘরে রাখা খড়কুটো। আর ধুলোমাখা পরিবেশ। প্রেম কয়েকবার হাঁচি দিয়ে নিল। তারা কুটিরের গভীরে যেতেই দেখতে পায় আরেকটা ঘর। সেখানে প্রবেশ করে ঐশ্বর্য তারাতাড়ি করে। ওখানেই তার সামনে পড়ে লম্বা শিকল। তার মাথায় খেলে যায় ছোট্ট বুদ্ধি। প্রেম কুটিরের আশপাশটা দেখতে ব্যস্ত। এইতো সুযোগ। হাতে ধীরে ধীরে শিকল তুলে নিল ঐশ্বর্য। প্রেমের দিকে এগিয়ে গেল। তাকে শিকল দিয়ে বাঁধতে যাবে সেই সময়ই প্রেম তার দিকে ফিরে তাকে ঘুরিয়ে নিজের সাথে চেপে ধরে কাঁধে থুঁতনি রেখে দাঁত চেপে বলল,
“কি করার চেষ্টা করছো? কি উদ্দেশ্য তোমার?”

ঐশ্বর্য মনে মনে নিজেকে বকে জোরপূর্বক হেঁসে দিয়ে বলে,
“কি করব? কিছুই না।”

“এর ফলাফল ভালো হবে না মাই এ্যাংরি বার্ড। ভয়ানক রোমান্টিক পানিশমেন্ট পেতে হবে!”

চলবে…

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি নেই।]

লেখিকার গ্রুপ : আনিশার গল্পআলয় (সাবির পাঠকমহল)?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here