প্রেমের ঐশ্বর্য পর্ব ৫২+৫৩

0
226

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৫২

“ভাগ্যিস সেদিন আপনি বুদ্ধি করে কারাগারে আগু’ন জ্বালিয়ে পালিয়েছিলেন তাও আমার হাত ধরেই। নয়ত হয়তবা আজকেও আমি সেই একইভাবে ডেভিল কুইন থেকে যেতাম। আপনার ভয় লাগে নি একটুও? যে আপনাকে কারাদণ্ড দিয়েছে, যে আপনাকে আঘা’ত করতে চেয়েছে সেই তার হাত ধরেই পালিয়ে আসতে?”

প্রেম নিজের শুষ্ক ওষ্ঠদ্বয় প্রসারিত করে বুকে দুটো হাতে রেখে স্থির চোখে তাকিয়ে থাকে। ঐশ্বর্য খেয়াল করে এই কয়দিনে প্রেমের দাড়িগুলো বেশ বড় বড়ই হয়েছে। সেই সাথে গায়ের হলুদ ফর্সা রঙটাও কেমন যেন শ্যামলা বর্ণ ধারণ করেছে। তবে মুখের হাসিটা সেই একরকম! মানুষটার ভালোবাসাও ঠিক একই রকম ঐশ্বর্যের প্রতি। ঐশ্বর্য অধীর আগ্রহে তাকিয়ে রইল উত্তর পাওয়ার আশায়। প্রেম এবার মুখে হাসি বজায় রেখে বলে উঠল,
“না ভয় লাগেনি আমার। তোমার মনে আছে? তুমি বলেছিলে, তোমার সবটা স্মরণে থাকলেও তুমি আমার আর সবটা ভুলে গেলেও তুমি আমার। তুমি যখন আমাকে বারবার আঘা’ত করতে উদ্যত হয়েছো তখন বারবার আমার কানের কাছে ওই একই কথা বেজে উঠেছে। যখন তুমি আমাকে আ’ঘাত করতে পারলে না তখনই বুঝে গেছি তোমার পাওয়া সেই শয়’তানি শক্তির স্তরটার নিচে এখনো কোথাও সেই অনুভূতির তরঙ্গ বহমান। যখন তুমি ঘোষণা দিলে যে আমাকে কারাগারে কোনোরকমে খাবারদাবার বা পানি দেওয়া হবেনা তারপর নিজেই লুকিয়ে আমার জন্য খাবার পানি আনলে তখনই বুঝেছি আমি পারব। আমি পারব সেই শক্তির স্তর সরিয়ে পুনরায় তোমাকে সেই ভ্যাম্পায়ার প্রিন্সেস করে তুলতে। আর দেখো! আমি পেরেছি!”

প্রেমের কথাগুলো মুগ্ধ নয়নে শুনে নেয় ঐশ্বর্য। অতঃপর প্রেমের হাত দুটো নিজের হাতের ভাঁজে নিয়ে ফট করে নিজের চিকন দুটো ঠোঁটের স্পর্শ দিতেই তার গালে আলতো গোলাপিবর্ণ ফুটে উঠল। তা দেখে আপনমনে হেঁসে উঠল প্রেম নিঃশব্দে। ঐশ্বর্য শান্ত গলায় বলল,
“আপনি সত্যিই একজন মুগ্ধকর মানুষ! আপনি আসার আগ পর্যন্ত অনেক মানুষের সামনাসামনি হয়েছি। তাদের দেখে রাগ হতো খুব। নিজের রাগে কতগুলো মানুষের প্রা’ণ এই দুটো হাত নিয়ে জানা নেই আমার। ওই নাইট ক্লাবে ওই কৌশিক কেও আমি খু’ন করতে যাচ্ছিলাম। মাঝখানে আপনি বাঁধা হয়ে দাঁড়ান। আপনাকে না জেনে খুব বিরক্ত হয়েছিলাম সেদিন। তারপর আপনি যেভাবে আমাকে নিজের কাছে ধরে সযত্নে আমার ক্ষতগুলো ছুঁইয়ে দিলেন তখন আমার মনে ততক্ষণে অন্যরকম ক্ষতের জন্ম হয়েছিল। সেই ক্ষত সাড়তে যে আপনাকে খুব প্রয়োজন ছিল!”

প্রেম নিরব তখন। সবটা শুনে ঐশ্বর্যের গালে হাত রেখে বৃদ্ধা আঙ্গুল ছুঁইয়ে দিল ঐশ্বর্যের কা’টা জায়গাটা স্পর্শ করল সে। ব্যথায় শব্দ করে আবারও চোখ বুঁজতেই তার চোখজোড়া ছুঁয়ে গেল প্রেমের ওষ্ঠদ্বয়। বারংবার ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে আস্তে আস্তে ঐশ্বর্যের ঘাড়ে গিয়ে ঠেকল তার সেই ওষ্ঠদ্বয়। সেখানেই পড়ছে প্রেমের নিঃশ্বাস। সেই গরম নিঃশ্বাসে তীব্রতা বাড়ছে ঐশ্বর্যের নিঃশ্বাসের। চোখ আর মেলতে পারছে না। এবার প্রেমের একটি কথা কর্ণকুহরে বেজে উঠল তার।
“ঘাড়ে আ’ঘাত ছাড়া কিসের দাগ এটা? এমন লাল হয়ে আছে কেন? তোমাদের প্রাসাদেও বড় পোকামাকড় টাইপ কিছু ছিল বুঝি?”

আস্তে করে চোখ মেলল ঐশ্বর্য। প্রেম অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে ঘাড়ের দাগ দেখে যাচ্ছে। চোখ দুটো সরু করে ঐশ্বর্য তার পেটে গুঁতো মেরে বলে ওঠে,
“খুব ফাজিল হয়েছেন আজকাল!”

“আশ্চর্য! ফাইজলামির কি করলাম?”

প্রেমের লাগামহীন প্রশ্নে চোখমুখ কুঁচকে তাকায় ঐশ্বর্য। তার উত্তরে এবার রেগেমেগে চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে,
“কি করলেন মানে? কি করেন নি? নিজেই তো চুমু দিতে গিয়ে কামড়ও বসিয়েছেন। খেয়ালে নেই? থাকবে কি করে? পাগল হয়ে গিয়েছিলেন…”

কথাটা সম্পূর্ণ না হতেই থমকে গেল ঐশ্বর্য। মুখ যেন তালা বন্ধ করে দিল। বড় ঢক গিলে প্রেমের দিকে তাকালো। প্রেম তার দিকে ভ্রু উঁচিয়ে ঠোঁট কামড়ে তাকিয়ে আছে। এমন মুখভঙ্গি দেখে কাঁদো কাঁদো মুখ করে চোখ বন্ধ করে নিল ঐশ্বর্য। দুটো হাত দিয়ে মুখ ঢাকার চেষ্টা করল। বিরবির করে বলতে থাকল,
“কি বললাম এটা! আমিও এই লোকটার সাথে পাগল হয়ে গিয়েছি…”

ঐশ্বর্যের ওপর লজ্জা ভর করেছে ভীষণভাবে। মুখ লুকিয়ে থাকা দেখে হাসি পাচ্ছে তার। শব্দ করে হেঁসে উঠল প্রেম। তারপর দুহাত ছড়িয়ে ঐশ্বর্যকে নিজের সঙ্গে চেপে ধরল সে। ঐশ্বর্য বিরবির করতেই থাকল। প্রেম তার কানে কানে ফিসফিস করে বলল,
“হ্যাঁ পাগল তো হয়ে গিয়েছিলাম। প্রণয়ের সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছিলাম যে। ভ্যাম্পায়ার প্রিন্সেসকে নিজের করতে উন্মাদ হয়ে উঠেছিলাম!”

“আপনি বড্ড খারাপ একজন মানুষ।”
প্রেমের বুকে মুখ লুকিয়ে চাপা সুরে বলে উঠল ঐশ্বর্য। প্রেম সঙ্গে সঙ্গে আশ্চর্য হয়ে উত্তরে বলল,
“একটু আগেই না বললে আমি ভালো মানুষ? দুই মিনিটের মধ্যে চরিত্রও চেঞ্জ করে দিলে? তুমি তো খুব ডেঞ্জারাস মেয়ে!”

ঐশ্বর্য উত্তর বলল না। শুধুমাত্র মুখ লুকিয়েই রইল। মুখ দেখানোর মতো অবস্থায় সে নেই। তড়তড় করে ঘামছে। লোকটা বোধহয় লজ্জা দিতে খুব পছন্দ করে!

অতীত…
আগুন ধরিয়ে ঐশ্বর্যের হাতটা ধরে দ্রুত সেখান থেকে চলে আসে প্রেম। সামনে এগোতেই রাস্তা ফাঁকা পেয়ে আরো সুবিধা হয় তার। সকল পাহারাদার খেতে ব্যস্ত! ঐশ্বর্যের হাতটা শক্ত করে টানতেই ঠাঁই দাঁড়িয়ে পড়ে ঐশ্বর্য। সে যেতে চায় না। প্রেমের ওপর ক্রুদ্ধ হয়ে বলে ওঠে,
“কি করতে চাইছো তুমি? পালাতে চাইছো? আর কি ভাবছো? আমি তোমাকে সাহায্য করব? তুমি পার পাবে না! শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে।”

“তোমার থেকে পার পেতে আমি কখনো চাইও নি। বর্তমানে সব পাহারাদারদের থেকে নিজেকে আড়াল করতে চাইছি। অন্তত সেই সুযোগ আমাকে দাও। আমার মুখে সবটা শোনার পর যদি তোমার একটুও সন্দেহ জাগে তবে আমি নিজে তোমার আত্মসমর্পণ করব।”

ঐশ্বর্য তবুও দমে না। প্রেমের মতো দৌড়ে পালিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছে সে। বড় বড় শ্বাস নিয়ে কন্ঠস্বর জোরে করে বলে ওঠে,
“আমি কিচ্ছু শুনতে চাই না। তুমি একটা মিথ্যেবাদী তাই পালাতে চাইছো। আমি কিছু শুনব না। কে কোথায় আছো! বন্দি ক…”

জোরে জোরে কথা শুনে এক পর্যায়ে ঐশ্বর্যের মুখ চেপে ধরে প্রেম। একহাত দিয়ে ধরে নেয় তার দুটো হাত। অস্থির হয়ে পড়ে ঐশ্বর্য নিজেকে ছাড়াতে। লাভ হয় না তেমন। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নেয় প্রেম। কাউকে না দেখতে পেয়ে পুনরায় ঐশ্বর্যের দিকে ঝুঁকে পড়ে বলে,
“তোমার তো অনেক শক্তি। অনেক ক্ষমতা আমার থেকেও। তবে তুমি কেন সেটা প্রয়োগ করে উল্টো আ’ঘাত করছো না আমাকে?”

নড়াচড়া এবং অস্থিরতা বন্ধ হয় ঐশ্বর্যের। সত্যিই তো! সে চাইলেই এই মূহুর্তে নিজের শক্তি দ্বারা ছিন্নভিন্ন করে ফেলতে পারবে এই সামান্য মানুষকে। কিন্তু কেন তার হাতে দুটোর ক্ষমতা এই সামান্য একটা মানুষের সামনে অচল? কি এর কারণ? ঐশ্বর্যের চুপচাপ হয়ে যাওয়া দেখে তার মুখ থেকে হাত সরে নেয় প্রেম। বড় একটা শ্বাস নিয়ে নিতেই হঠাৎই তার মনে পড়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা। আগে তার মনে থাকলে আরো বেশি কাজে দিতো। চট করে নিজের প্যান্টের পেছনের পকেটে হাত দিতেই একটা দুমড়েমুচড়ে যাওয়া ছবি হাতে চলে আসে। সেটা বের করে মুচড়ে যাওয়া ছবিটাকে স্পষ্ট করে ঐশ্বর্যের সামনে ধরে। সন্দিহান চোখে ছবিটার ওপর রীতিমতো হামলে পড়ে ঐশ্বর্য। কারণ ছবিতে তাকে দেখা যাচ্ছে। শুধু তাকে নয়। সেখানে একজন পুরুষ আরেকজন মহিলাকে দেখা যাচ্ছে। যেই দুজনের ঘাড়ে হাত দিয়ে হাসোজ্জল মুখে ছবি তুলেছে ঐশ্বর্য। ছবিটা দেখে শ্বাস প্রগাঢ় হয়ে ওঠে তার। সবটা ঝাপ্সা হয়ে আসে। প্রেমের দিকে অসহায় পানে তাকায়। বড় শ্বাস নিতে নিতে বলে,
“আ…আমি এদের চিনি। মনে হচ্ছে এরা খুব কাছের কেউ আমার।”

ছবিতে হাত বুলিয়ে দিল ঐশ্বর্য। মনটা ছটফট করে উঠল। প্রেম স্পষ্টভাবে বলে দিল,
“চেনো বলেই তো ছবি তুলেছো! ওরা তোমার মা-বাবা। তোমাকে জন্ম দিয়েছে ঐশ্বর্য!”

চোখের পলক পড়া বন্ধ হয় ঐশ্বর্যের। অস্ফুটস্বরে বলে ওঠে,
“মা-বাবা?”

প্রেম কিছু বলতে চাইতেই ধুপধাপ পায়ের শব্দ পায় ঐশ্বর্য। শ্রবণশক্তি তীক্ষ্ণ হওয়ায় দ্রুত সে টের পায় কেউ এদিকেই আসছে। তড়িঘড়ি করে প্রেমের হাতটা ধরে ছুটতে থাকে সে। ছুটতে ছুটতে নিজের কক্ষের রাস্তার সামনে এসে থামতেই দাঁড়ায় সে। লক্ষ্য করে তার কক্ষের সামনেই দুজন পাহারাদার। এরা আগেই খেয়ে নিয়েছিল! তাই এখানে পাহারা দিতে ব্যস্ত। ঐশ্বর্য কি করবে ভেবে না পেয়ে প্রেমকে ইশারায় বলে দিল এখানেই দাঁড়াতে। তারপর সেখানে প্রেমকে দাঁড় করিয়ে রেখে নিজের কক্ষের দিকে ধাবিত হলো। ঐশ্বর্যকে দেখামাত্র পাহারাদার তাদের মাথা নুইয়ে ফেলতেই সে ধমকে বলে ওঠে,
“প্রাসাদের পেছন দিকে হইচই হচ্ছে তবুও তোমরা দাঁড়িয়ে রয়েছো? আমি আমার কক্ষের সামনে দিয়ে কাকে যেন যেতে দেখেছি। ওই প্রেম বোধহয় পালিয়েছে! ওইদিকে যাও আর খোঁজো।”

“এক্ষুনি যাচ্ছি। আপনি চিন্তা করবেন না। এখান থেকে কেউ পার পাবে না।”

বলেই ছুটল পাহারাদাররা। খালি হলো কক্ষের সামনের দিকটা। প্রেমকে ঐশ্বর্য ইশারায় বেরিয়ে আসতে বলেই প্রেম চলে এলো। তারপর দুজনেই কক্ষে ঢুকে পড়ল। কক্ষে ঢোকার সাথে সাথে দরজা সজোরে বন্ধ করল ঐশ্বর্য। তারপর সরাসরি প্রেমের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ল সে।
“ওরা আমার মা-বাবা হলে আমার সঙ্গে আজ নেই। এই রাজ্য যদি আমার হয় তবে ওরা এখানে নেই কেন!”

প্রেম এগিয়ে এসে ঐশ্বর্যের বাহু চেপে ধরে। ঝাঁকিয়ে বলে,
“কারণ তোমার রাজ্য নয় ঐশ্বর্য। ইউ আর অ্যা ভ্যাম্পায়ার প্রিন্সেস। তুমি এখানকার নও ভ্যাম্পায়ার কিংডমের ভবিষ্যৎ রাণী।”

“আ…আমি বিশ্বাস করি না! কারণ তুমি তো আমায় অবহেলা করেছো, কষ্ট দিয়েছো।”

প্রেমের মেজাজ এবার তুঙ্গে ওঠে। ঐশ্বর্যের বাহু আরো শক্ত করে চেপে ধরে চিল্লিয়ে বলে ওঠে,
“শাট আপ! আই লাভ ইউ।”

ঐশ্বর্যের মাঝে ভাবান্তর দেখা যায় না। এবার দীর্ঘ নিশ্বাস নিয়ে ঐশ্বর্যকে ছেড়ে কক্ষের আশেপাশে তাকায় প্রেম। শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে রাখা দেখতে পায় দুটো ত’লোয়ার। দ্রুত হেঁটে গিয়ে সেখান থেকে একটা তলো’য়ার হাতে নিয়ে আবার ঐশ্বর্যের নিকট ফিরে আসে সে। ঐশ্বর্যের হাতে ধারালো তলো’য়ার ধরিয়ে নিজের দিকে তাক করে নেয় সেটি। আর জোরালোভাবে বলে,
“ঠিক আছে। তাহলে মে’রে দাও আমাকে। আজ এখনি!”

ঐশ্বর্যও স্থির। সেই সাথে প্রেমও। হাতটা তীব্রভাবে কাঁপতে কাঁপতে পড়ে যায় তলো’য়ার ঐশ্বর্যের হাত থেকে। ক্লান্ত হয়ে দুটো হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়ে সে। বিচলিত হয়ে বলতে থাকে,
“আমার সবসময় মনে হচ্ছে কোথাও কেউ একটা নেই। কোথাও একটা ফাঁকা বোধ করছি। যখন ওই ছবি দেখলাম তখন মনের মধ্যে আচমকায় শান্তির হাওয়া বয়ে গেল। আমাকে আমার মা-বাবার কাছে নিয়ে যেতে পারবে?”

চলবে…

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৫৩

জঙ্গল ধরে ছুটে চলেছে ঐশ্বর্য ও প্রেম। নিজের হাতটা দিয়ে শক্ত করে ঐশ্বর্যের হাতটা ধরে রেখেছে প্রেম। দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁপিয়ে উঠল তারা। দাঁড়িয়ে পড়ল একটা বড় গাছের নিচে। আঁধার রাতে আশপাশ পুরোটা অন্ধকার। আবছা আলোয় যতটুকু দেখা যাচ্ছে সেটা ধরেই ছুটতে হচ্ছে। ঐশ্বর্য হাঁপিয়ে উঠে বলল,
“হয়েছে। আর দৌড়াতে হবে না। কেউ আসছে না আমাদের পেছনে।”

“এখন অনেক রাত। কত কিছু থাকতে পারে জঙ্গলে তা তো জানা নেই। তাছাড়া ডেভিলদের পানীয় এর সাথে যা মিশিয়েছো সেটা মাত্র দুই প্রহর অবধি কাজ করবে। তারপর সবাই জেগে যাবে। এর মধ্যে অনেক কাজ সাড়ার আছে।”

কথাটা শোনামাত্র সরু চোখে দৃষ্টিপাত করল ঐশ্বর্য প্রেমের দিকে। ফট করে নিজের হাত প্রেমের হাতের মুঠো থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে তেতে উঠে বলল,
“অনেক কাজ মানে? কি কাজ সাড়ার আছে আবার? তুমি বলেছো তুমি আমার মা-বাবার সাথে দেখা করাবে। আর কি কাজ করতে চাইছো? তুমি আমাকে মিথ্যে বলে নিয়ে আসো নি তো? তোমার উদ্দেশ্য অন্যকিছু নয় তো?”

এবার হতাশ চোখে তাকালো প্রেম। মেয়েটা এখনো তাকে সন্দেহ করছে। চোখমুখ কুঁচকে বুদ্ধি করে মুখভঙ্গি ফের স্বাভাবিক করে ঐশ্বর্যের দিকে ঝুঁকে পড়তেই চোখ গোল গোল হয়ে এলো ঐশ্বর্যের। চোখমুখ শুকিয়ে এলো। প্রেম ঠোঁট চেপে বলল,
“ঠিকই ধরেছো রাণী সাহেবা! আমার উদ্দেশ্য তো অন্যকিছুই। তবে তুমি আমার উদ্দেশ্য বুঝতে দেরি করে ফেলেছো।”

কথাটা বলেই ঐশ্বর্যের আপাদমস্তক দেখতেই চোখ বড় বড় করে নিজের হাতটুকু নিয়ে ঢাকার চেষ্টা করল ঐশ্বর্য। প্রেম বড় একটা নিশ্বাস নিল অন্যদিক মুখ ফিরিয়ে। অতঃপর এক হাতে ঐশ্বর্যের কাঁধ চেপে ধরল। দাঁতে দাঁত খিঁচে বলল,
“স্টুপিড গার্ল! আমি তোমাকে তোমার মা-বাবার সাথে দেখা করাতেই নিয়ে যাচ্ছি।”

“সত্যি তো?”
তবুও ভ্রু কুঁচকে সন্দেহি নজরে প্রশ্ন করে ঐশ্বর্য। প্রেমের মস্তিষ্ক তখন এলোমেলো হতে থাকে। মেয়েটা দিনকে দিন গোয়েন্দা হয়ে যাচ্ছে। ঐশ্বর্যের হাতের বাহুতে হঠাৎ করে হাত রেখে তাকে কাছে টেনে নেয় প্রেম। আর বলে ওঠে,
“সত্যি। তোমাকে ছুঁতে বা ভালোবাসতে আমার অন্য কোনো বাহানার দরকার হবে না।”

এতটুকু বলা শেষ করেই ঘাড় কাত করে ঐশ্বর্যের ঠোঁটের এক কোণে নিজের ঠোঁটের পরশ সযত্নে এঁকে দেয় প্রেম। ঘাড় সোজা করে ঐশ্বর্যের ঘোর কাটতে না কাটতে বলে ওঠে,
“যেমন এখনো পড়ছে না।”

থতমত খেয়ে তাকায় ঐশ্বর্য। রীতিমতো কাশতে থাকে। সেই সাথে প্রেমকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে,
“আমি শুধু আমার মা-বাবার সাথে দেখা করব বলে চুপ রয়েছি। নয়ত এতোক্ষণে…”

কথাটুকু অসম্পূর্ণ রেখে চোখ রাঙায় ঐশ্বর্য। প্রেম মৃদু হেঁসে বলে,
“কি করতে? মে’রে ফেলতে? এই কথাটা অনেকবার শোনা শেষ।”

ঐশ্বর্য আরো কিছু বলতে চাইলো। তবে প্রেম আশেপাশে তাকিয়ে ঐশ্বর্যের হাতটা পুনরায় নিজের মুঠোয় নিয়ে বলল,
“সময় নেই। লেটস গো!”

বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছে মাধুর্য। মাঝে মাঝে দুর্বলভাবে কেশে উঠছে। পাশেই তার ডান হাতটা ধরে নিজের ঠোঁটের সাথে লাগিয়ে একধ্যানে বসে রয়েছে অনুভব। কপালটা চিন্তায় কুঁচকে গেছে। নীল চোখজোড়া ভীষণ অস্থির ও বিচলিত। নিজের প্রেয়সীর এই অবস্থা চোখে দেখা যাচ্ছে না। পুরোপুরি চোখ খুলতে পারছে না মাধুর্য। বারবার অনুভবের দিকে আধো চোখ মেলে তাকিয়ে আকুতি ভরা কন্ঠে বলে উঠছে,
“ঐশ্বর্য! আমার মেয়েটা কখন আসবে?”

“এসে যাবে। তুমি সুস্থ হয়ে ওঠো। রাজবৈদ্য বলেছে, তুমি নাকি বাঁচার আশায় ছেড়ে দিয়েছো। নিজের প্রাণটাকে নিজের থেকে আলাদা করতে চাইছো। কেন এমন করছো মাধুর্য?”

মাধুর্য তার জবাব দিল না। উল্টে দুর্বল গলায় ধীর কন্ঠে বলল,
“আমার ঐশ্বর্য কি আসবে না? তুমি বার বার আমাকে এই কথা বলে রাখছো যে ও আসবে। কিন্তু ও আসছে না। তুমি কেন মিথ্যে বলছো আমাকে?”

অনুভব জবাব দিতে না পেরে চোখ বুঁজে ফেলে। মাধুর্য গতকাল ডেভিল রাজ্যে প্রবেশ করার চেষ্টা করেছিল। তবে প্রবেশদ্বারের ভয়াবহ আগুন অতিক্রম করতে পারেনি। যার ফলে সেই আগুনের তাপে তার শরীরে অনেকটা ক্ষত সৃষ্টি করেছে। আর ডেভিল কিংডমের প্রবেশদ্বারের আগুনের শক্তি অনেকটা। যা একটা ভ্যাম্পায়ারের সহ্য ক্ষমতার বাহিরে। এটি একটা ভ্যাম্পায়ারকে মৃ’ত্যু অবধি দিতে পারে। ঠিক এই কারণেই ভ্যাম্পায়ার কিংডমের কেউই সেখানে প্রবেশ করতে পারে না। ঠিক তখন থেকেই মাধুর্য বিছানায় পড়ে রয়েছে। অনুভবও কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। প্রেম কেমন আছে, আদেও বেঁচে রয়েছে কিনা সেটারও খবর তার জানা নেই। এই অবস্থায় নিজের মেয়েকে কি করে উদ্ধার করবে সেটার উপায়ও সে জানে না। এবার নিজেকে বাবা হিসেবে ব্যর্থ মনে হচ্ছে। মাধুর্য বিরবির করছে এখনো। চোখ খুলে মাধুর্যের বড় বড় দুটো চোখের দিকে তাকায় অনুভব। হরিণী চোখদুটো নেতিয়ে গেছে। ঠোঁটজোড়া কেমন যেন শুঁকিয়ে গেছে।

ভালো করে মাধুর্যকে পর্যবেক্ষণ করতেই অনুভবের কানে এলো কলিং বেলের শব্দ। তাতেই ভ্রু যুগল কুঁচকে এলো তার। দেয়ালে থাকা বড় ঘড়ির দিকে তাকালো। অনেক রাত! এতো রাতে কে? চোখ ঘড়ির থেকে সরিয়ে মাধুর্যতে আবারও মনোনিবেশ করল। এই মূহুর্তে তাকে ছেড়ে উঠে যেতে ইচ্ছে করছে না অনুভবের। তবে এতো রাতে কে এসেছে সেটা দেখা প্রয়োজন। কিছুক্ষণ বসে থেকে মাধুর্যের হাতটা বিছানায় রেখে যেই না বসা থেকে উঠতে যাবে তৎক্ষনাৎ ঘরে ঝড়ের মতো প্রবেশ করল এলিনা। চমকে উঠল অনুভব কিছুটা। বিরক্তির দৃষ্টিতে তাকাতেই এলিনা এক নিশ্বাসে বলে উঠল,
“কি…কিং! কে এসেছে দেখুন! অবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটেছে।”

একটু থেমে দুর্বল মাধুর্যের দিকে চেয়ে এলিনা উত্তেজনা নিয়ে বলল,
“কুইন, আপনার চোখের মনি আবার আপনার কাছে এসেছে।”

অনুভব কিছু বুঝে উঠতে না পেরে সন্দিহান নজরে তাকিয়ে থাকতেই দরজার কাছে উপলব্ধি করে কারো উপস্থিতি। ঘার ঘুরিয়ে দরজার দিকে তাকায়। ধীর পায়ে এসে দাঁড়ায় প্রেম। সে একা নয়। কারো হাত ধরে রয়েছে শক্ত করে। শান্ত ভঙ্গিতে এদিকওদিক তাকাতে তাকাতে ঘরে পদার্পণ হয় ঐশ্বর্যের। কালো পোশাকে, কোঁকড়ানো খোলা চুলে, বিস্ময় নিয়ে আশপাশ দেখে চলেছে সে। কতদিন পর অনুভব তার মেয়ের দেখা পেল। চোখ, হৃদয় এবং সমস্ত শরীর যেন ঠান্ডা হয়ে এলো। বুক থেকে কেমন যেন ভারি কিছু একটা সরে গেল। কাঁপা সুরে ঐশ্বর্যকে ডেকে উঠল,
“মাই প্রিন্সেস ঐশ্বর্য!”

ঐশ্বর্য এতোক্ষণ বাড়ির আশেপাশের সবটা দেখছিল। মস্তিষ্কে হানা দিয়ে চলেছিল অতীতের সব স্মৃতি। চোখ দুটো ঘোলা হয়ে এসেছিল। তবে যখন কানে ভেসে এলো এক অচেনা তবুও চেনা কন্ঠ উৎকন্ঠা হয়ে তাকালো সামনের দিকে। সে যেন তারই প্রতিচ্ছবি দেখছে। তার মতোই অগভীর নীল কাঁচের পানির মতো নেত্র দুটো! নাক দুটো হুবহু তার মতোই খাঁড়া। ভ্রু দুটো চিকন। ছোট কপাল। এ যেন তারই অনুরূপ। শুধু সামনের মানুষটা পুরুষ। তখনই ঐশ্বর্যের স্মরণে এলো প্রেমের দেখানো ছবিতে এই লোকটিই তো ছিল। প্রেম ঐশ্বর্যের হাতটা সেই মূহুর্তে ছেড়ে দিল। ঐশ্বর্য না চাইতেও এগিয়ে এলো অনুভবের দিকে।

অনুভব বড় একটা দীর্ঘ নিশ্বাসের মাধ্যমে ভেতরে জমে থাকা সমস্ত ভার যেন ছেড়ে নিল। না চাইতেও চোখে টলটল করতে থাকলো পানি। মেয়েকে এগিয়ে আসতে দেখে তার দুটো গালে স্নেহের সাথে হাত রাখলো অনুভব। ঐশ্বর্য অনুভবের অগভীর চোখের দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে। অদ্ভুত শান্তি উপলব্ধি করতে পারছে সে। হুট করে অনুভব তাকে জড়িয়ে ধরল। আর বিচলিত হয়ে বলল,
“আমি তো আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। বাবা হিসেবে আমি ব্যর্থ। তোমাকে সেই বিপদ থেকে বাঁচাতে না পেরে আমি ভেতর থেকে ম’রে গেছি। আমি ভাবতে পারিনি প্রেম ফিরিয়ে আনবে। তুমি আমাদের জীবন ঐশ্বর্য মা!”

অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল ঐশ্বর্যের। তার বাবা তাকে জড়িয়ে ধরেছে। ঐশ্বর্য এখনো কিছু বিশ্বাস করতে পারছে না। কিছুক্ষণ নিরব থেকে কিছু একটা ভেবে সে নিজেও বাবাকে জড়িয়ে ধরল। চোখটা বুঁজে এলো আপনাআপনি। চোখের সামনে ভাসমান হলো কিছু অদ্ভুত দৃশ্যের। একটা ছোট্ট মেয়ে! সবে হাঁটতে শিখেছে। কোঁকড়ানো চুল বাতাসে উড়ছে আর শব্দ করে হাসছে। হেঁসে নিজের বাবার দিকে কাঁপতে কাঁপতে হেঁটে যাচ্ছে সে। তার বাবাও তাকে ধরতে ঝুঁকে হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তখনি ঐশ্বর্যের মনে হলো এইতো তার ছোটবেলা! ছোট্ট ঐশ্বর্য! এটা তো তারই বাবা। যার হাত ধরে সে হাঁটি হাঁটি পা পা করে হাঁটতে শিখেছে। যার কোলে উঠে কতশত বায়না করেছে। এইতো তার বাবা তাকে জড়িয়ে। হৃদয়ে কম্পন বাড়তেই চোখ মেলল ঐশ্বর্য। আরো জোরে বাবাকে জড়িয়ে ধরল। গলা থেকে কথা বের হতে চাইছে না। তবুও অস্ফুটস্বরে ডেকে উঠল,
“বাবা!”

প্রশান্তিতে ছেয়ে গেল অনুভবের মন। কতদিন পর শুনতে পেলো এই মধুর ডাক! ঐশ্বর্য একটু সরে দাঁড়াতেই দেখতে পেল পেছনে বেডে পড়ে থাকা মাধুর্য উঠে বসতে অনবরত চেষ্টা করছে। আর উৎকন্ঠিত হয়ে তাকিয়ে রয়েছে ঐশ্বর্যের দিকে। বিরবির করে কিছু একটা বলছে। কেউ শুনতে না পেলেও ঐশ্বর্য শুনতে পাচ্ছে। সে ধীরে মাধুর্যের নিকট এগিয়ে তার কাছে শান্ত হয়ে বসল। মাধুর্যও শান্ত হলো। বিস্মিত হয়ে মেয়ের দিকে তাকালো। অদ্ভুত সাজগোজের মাঝেও নিজের মেয়েকে চিনতে ভুল হয়নি তার। এইতো তার সুন্দর মুখশ্রী। সে উঠে নিজের মেয়েকে ছোঁয়ার চেষ্টা করল। সফল হলো না। তখনি ঐশ্বর্য তার দুটো কাঁধ ধরে উঠে বসতে সাহায্য করল। তারপর দুজনে আবারও শান্ত। মাধুর্যের ধারণা অনুযায়ী ঐশ্বর্যের কিছু মনে থাকার কথা নয়। তাই সে দ্রুত বলে উঠল,
“আমাকে একটু ভালো করে দেখো না ঐশ্বর্য! দেখো আমি তোমার মা। তোমায় জন্ম দিয়েছি। আমাকে চিনতে পারছো না? ভালো করে দেখো না একটু।”

কোনো হেলদোল নেই ঐশ্বর্যের। সে চেয়েই রয়েছে একনাগাড়ে। অন্যদিকে অস্থির মাধুর্য। কিছুক্ষণ চুপ থেকে মাধুর্যকে চমকে দিয়ে সে ভার গলায় বলল,
“নিজের জন্মদাত্রী মাকে কি করে ভুলতে পারি? ক্ষণিকের জন্য না হয় মস্তিষ্ক এলোমেলো করে ফেলেছিল ডেভিলরা। তাতে তোমাদের প্রতি ভালোবাসা একটুও কমাতে পারেনি তারা।”

অস্থির মাধুর্য শান্ত হয়ে যায়। মনে শান্তির বাতাস বয়ে যায়। এতটুকু শুনেই যেন নিজের শক্তি ফিরে পায়। কিছু বলতে চাইলেও বলতে পারে না। ঐশ্বর্য আবারও বলে ওঠে,
“আমার শেষ নিঃশ্বাস অবধি আমি তিনজন মানুষকে কখনোই ভুলতে পারব না। এক হচ্ছে ভ্যাম্পায়ার কুইন মাধুর্য, দুই ভ্যাম্পায়ার কিং অনুভব। আর তিন, মি. আনস্মাইলিং!”

এতটুকু বলে আবারও নিরব হলো ঐশ্বর্য। পাশে থাকা র’ক্ত ভর্তি গ্লাসটা নিয়ে মাধুর্যের মুখের সামনে ধরে বলে,
“এটা খেয়ে নাও। শক্তির খুব প্রয়োজন তোমার। নিজের চেহারা দেখেছো?”

মাধুর্য কোনোরকম প্রশ্ন না করে পান করল সেটা। ঐশ্বর্য তার মুখ যত্নে মুছিয়ে দিয়ে বলল,
“খুব করে তো বলতে, আমি তোমাকে সারাজীবন জ্বালিয়ে মে’রে’ছি। আজ যখন তোমার কাছে থেকে দূরে সরে গিয়েছিলাম তখন তো তোমার শান্তি পাওয়ার কথা মা! তবে কেন এতো উতলা হচ্ছিলে?”

“আমার চোখের মণি তুমি। তোমাকে ছাড়া যে এই মা নিঃস্ব। তুমি আমার বাঁচার আশা।”

সকলে স্তব্ধ। মাধুর্যের চোখ থেকে অঝোরে পানি পড়ে যাচ্ছে। কেউ কিছু বলছে না বা বলতে চাইছে না। হোক না মা-মেয়ের কিছু নিজস্ব মূহুর্ত!

এক প্রহর পেরিয়ে গেছে। ঝটপট করে রোজির ঘরে ঢুকে পড়ল প্রেম ও ঐশ্বর্য। আশেপাশে তাকালো। তারপর চোখ পড়ল বিছানার দিকে। ঘুমে মগ্ন রোজি। কোনো হুঁশ নেই। থাকারও কথাও নেই। প্রাসাদের সকলে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিয়েছে। প্রেম তড়িঘড়ি করে খুঁজতে থাকল কিছু একটা। সেই সাথে ঐশ্বর্যও। অবশেষে বড় পালঙ্কের পেছনে তারা আবিষ্কার করল বড় একটা কালো রঙের বাক্স। ভয়ানক কিছু কারুকার্য করা সেখানে। প্রেম তা দেখেই নিচু হয়ে বসে পড়ল। খোলার চেষ্টা করল। তবে তালা দেওয়া সেটাতে। এরপর উঠে ব্যকুল হয়ে খুঁজতে থাকলো চাবি। বিছানার বালিশের নিচেও যখন পাওয়া গেল না তখন সে লক্ষ্য করল ঐশ্বর্য বাক্স ছুঁয়ে দেখছে আর তালা আস্তে আস্তে খুলে যাচ্ছে। হা হয়ে গেল সে। দ্রুত সেখানে ফিরে আসতেই অদ্ভুত রশ্মি বের হলো বাক্সটা থেকে। আর তার মধ্যে খুঁজে পেল একটা মোটা বই “দ্যা ডেভিল বুক”।

চলবে…

[বি.দ্র. অতীতের ঘটনা পরবর্তী পর্ব শেষ হবে। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি নেই।]

লেখিকার গ্রুপ : আনিশার গল্পআলয় (সাবির পাঠকমহল)?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here