প্রেমরোগ-১৯

0
1005

#প্রেমরোগ-১৯
#তাসনিম_তামান্না

নতুন একটি দিন কারোর জন্য খুশির আবার কারোর জন্য দুঃখের। চৌধুরী বাড়ির সকলের ছন্ন ছাড়া অবস্থা। নাওয়া খাওয়া সব ভুলে বসে আছে। ড্রাইংরুম সকলে মনমরা হয়ে বসে ছিল। তিশা বলল
” এভাবে হলে চলবে কি ভাবে? তোরা তো ম রে যাবি। বাঁচতে হবে তো তোদের। ওরা কি ওদেরকে এভাবে দেখে খুব ভালো আছে? খাওয়া দাওয়া না চল সকালে কেউ খাস নি ”
কুশান তিশার কথায় কুয়াশা, মেঘা, মেঘ, পাখি কে ধ ম কে খাওয়াতে বসালো। খেতে বসে কারোরই গলা দিয়ে খাবার নামছে না। কুশান দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল ” মৃ ত্যু অনিবার্য। আমাদের সবাইকে একদিন না একদিন ছেড়ে চলে যেতে হবে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে। তাই বলে কি এভাবে থেমে ভেঙে পড়লে চলবে? আব্বু আম্মু মামনি বাবাই আমাদের এভাবে কখনো দেখতে চাইতো না। তারা আমাদের কে এভাবে দেখে কষ্ট পাচ্ছে। আমরা তারা ভালো থাকবে। আমরা এভাবে থাকলে তারা কিভাবে থাকবে? আমাদের ভাগ্যে এমন ছিল তাই এমনটা হয়েছে। তাই ভাগ্যকে মেনে নিতে হবে আমাদের এভাবে বসে থাকলে চলবে না। ”
কেউ একটা কথাও বলল না কুশান সবার শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে আবার বলতে লাগলো
” কাল থেকে যে যার কাজে যাবি কাউ বাসায় থাকবি না কাজের মধ্যে থাকলে ভালো লাগবে। মেঘ কাল থেকে অফিসে যাবি। কুয়াশা মেঘা কাল থেকে ইউনিভার্সিটিতে যাবি সামনে এক্সাম ভালো ভাবে দিতে হবে না হলে খুব খারাপ হবে বলে দিলাম আব্বু বাবাই কষ্ট পাবে কথাটা মাথায় রাখিস ”
মেঘা বলল ” আমার খুব কষ্ট হচ্ছে ভাইয়া সবাইকে খুব মিস করছি। আম্মু বকা দিকে রাগ হতো এখন খুব কষ্ট হচ্ছে ভাইয়া ”
কুশান মেঘার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল
” সবটা মেনে নিতে হবে বোনু ”
তুষার রা নিজেদের বাড়িতে চলে গেছে। দিন যায় নতুন একটি দিন আসে…এই মাস শেষে রোজা শুরু পাখি আর তুতুল কাজে হাত লাগিয়েছে। আগের রোজা গুলোই সবটা শাশুড়িরা গুছিয়ে রাখতো বাসার বা রান্নার কাজ তেমন করতো না পাখি। তুতুল শাশুড়ীদের তেমন কাছে পেলো না। এখন তুতুল আর পাখির ই সংসার ওরা না গোছালে কে করবে। কুয়াশা মেঘা নিজেদের ঘরবন্দী করে রাখেছে। কেউ তেমন কারোর সাথে কথা বলে না। আগের মতো হাসি মাজ হয় না আর এ বাড়িতে। মানুষগুলোর সাথে যেনো সব কিছু হারিয়ে গেছে।
পাখির মা পাখিকে কাজ করতে দেখে বলল
” এই তুই কাজ করছিস কেনো? এই অবস্থায় ”
পাখি মোলায়েম কন্ঠে বলল ” কিছু হবে না তুমি গিয়ে রেস্ট নাও ”
” তুই এই অবস্থায় কাজ করবি কেনো? তোর ধিং গি ননদ দুইটা কর। নবাবের বেটির মতো ঘরে পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে? আর আমার মেয়ে এই অবস্থায় খেটে ম র বে? এসে তো কাজ করে দিতে পারে না-কি? ”
পাখি রেগে গেলো ” কি বলছ এগুলা? ওরা ছোট্ট কি করবে? আর আমি কেনো ওরা কাজ করবে? ”
” ছোট্ট ওরা? কুয়াশার বিয়ে হয়ে গেছে তবুও কেনো ও এখানে থাকে? আমার মেয়ের হাড় মাস জ্বালাতে? মেঘার ও বিয়ের বয়স হয়ে গেছে এতোদিনে বিয়ে হলে ওদের বাচ্চা কাচ্চা হয়ে যেতো! আর তুই কি না ওদের ছোট বলছিস ”
পাখি তার মায়ের কথায় বিরক্ত হচ্ছে খুব বিরক্তি নিয়ে বলল
” তুমি আমার সংসারে নাক গলাতে এসো না মা। আমার টা আমাকে বুঝতে দাও। আর তুমি এসেছ ঘুরবে, খাবে, চলে যাবে তুমি কেনো এসব নিয়ে কথা বলবে? ”
কুয়াশা সিরিতে দাড়িয়ে পাখির মায়ের বলা প্রতিটা কথা শুনলো। চোখ ছলছল করে উঠলো। নিজেকে সামলিয়ে কিচেনে এসে। একটা কথাও প্রতি উত্তর করলো না বলল
” ভাবিপু তুমি গিয়ে রেস্ট করো আমি দেখছি তুতুল ভাবিপু তো আছেই ”
পাখি রেগে মায়ের দিকে একবার তাকালো পাখির মা মুখ বেকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে রাখলো। পাখি বলল
” তুই তুতুল তো কিছু ই পারিস না আমি করছি তো ”
পাখির মা বলে উঠলো ” পারে না তো শিখবে না? ওরা কি সংসার করবে না? তুই সারাজীবন এভাবে সবার জন্য গাধার খাটুনি খাটে যাবি? ”
” আহ মা তুমি যাও তো আমাদের মধ্যে কেনো কথা বলছো তুমি ”
” আমি তোর ভালোর জন্যই বলছি। এভাবে করতে থাকলে সকলে মাথায় উঠে বসবে ”
” তোমাকে আমার ভালো করতে বলছি আমি। উল্টো তুমি আমার সংসার ভেঙে দিচ্ছো। আমার সংসারে আ গু ন লাগাচ্ছো! ”
পাখির মা রেগে বলল ” তুই আমাকে এভাবে বলতে পারলি? মা’রা কখনো ছেলেমেয়েদের খারাপ চাই? আমি তোর ভালোর জন্য ব… ”
পাখি তার মাকে থামিয়ে বলল
” ব্যাস বললাম না আমার ভালো খারাপ নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না আমাকে আমারটা বুঝতে দাও ”
পাখির মা রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো। পাখি বলল ” মার কথায় কিছু মনে করিস না আসলে মা একটু… আমি মার হয়ে ক্ষমা চাইছি ”
তুতুল এতোক্ষণ চুপ ছিল। পাখির কথায় তুতুল কুয়াশা একসাথে বলল ” এমন ভাবে বলো না ভাবিপু ”
কুয়াশা বলল ” তুমি গিয়ে রেস্ট করো আমরা সামলাচ্ছি ”
পাখি বলল ” মার কথায় রাগ করেছিস? ”
তুতুল বলল ” রাগ করবো কেনো? ওনি তো ঠিকি বলেছেন। আমাদের ও তো শিখতে হবে না-কি সব কি তুমি করবে না-কি? ”
” আমি করে নিবো। তোদের হাত কে টে বা পু ড়ে গেলে ব্যথা পাবি ”
কুয়াশা বলল ” কিছু হবে না তুমি যাও তো আমরা আজ তিনজন মিলে রান্না করবো ভালো না হলেও খেতে হবে বলে দিলাম ”
পাখিকে একপ্রকার জোর করে রুমে পাঠিয়ে দিলো। তুতুল কুয়াশাকে বলল
” কুয়াশা মন খারাপ করো না। আন্টি একটু অন্য রকম ”
” আরে ওসব বাদ দাও তো কি রান্না করবে সেটা বলো দাঁড়াও মেঘা কেও ডাকি ”
তুতুল, কুয়াশা, আর মেঘা মিলে ইউটিউব দেখে একপ্রকার যুদ্ধ করে আলুভাজি, বেগুন, গরুর মাংস রান্না করলো। পাখি রুমে বেশিক্ষণ থাকতে পারলো না। বার বার রান্নাঘরে এসে দেখে যাচ্ছে। ওরা সকলে মানা করলেও শুনলো না। দুপুরে সকলে খেতে বাসায় আসলে পাখি বলল
” খেয়ে বলো কেমন হয়েছে আজ কিন্তু তুতুল, কুয়শা, মেঘা মিলে রান্না করেছে ”
মেঘ বলল ” তাই না-কি বাহ! তাহলে তো এ খাবার খাওয়ায় যাবে না ”
কুয়াশা মেঘা বা তুতুল কেউ কোনো প্রতিউত্তর করলো না। কুশান খেয়ে বলল ” ভালো হয়েছে। কিন্তু তোদের রান্না করার দরকার নাই আমি কাল থেকে বুয়া আসতে বলেছি ”
কুয়াশা বলল
” তার কোনো দরকার নেই ভাইয়া আমরাই করে নিবো ”
” সেটা আমাকে বুঝতে দে ”
পাখির মা বলল ” কুশান বাবা তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল ”
কুশান বলল ” জী বলুন ”
” আমি পাখি কে আমার কাছে নিয়ে যেতে চাই সামনে রোজার পড়ছে। আমি থাকতে পারবো না আর এই সময় মেয়েদের মায়ের দরকার হয় ”
ঘরভর্তি সকলের মুখে বিস্ময়। পাখি প্রতিবাদ করে বলল ” আমি আমার সংসার ছেড়ে যাচ্ছি না মা তোমার যাওয়ার হলে তুমি যাও ”
” তোকে নিয়ে যাবো আমি ”
” বললাম না যাবো না ”
” কুশান বাবা তুমি কিছু বলো ”
” পাখি যেহেতু যেতে চাইছে না জোর না করায় ভালো। তাছাড়া বাসার সবাই আছে ওকে দেখে রাখবো। আপনি চিন্তা করবেন না ”
পাখির মা রাগে মনে মনে গজগজ করতে লাগলো।
চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here