প্রেমরোগ-১৭

0
747

#প্রেমরোগ-১৭
#তাসনিম_তামান্না

বিকালের দিকে খবর পেলো গ্রামে মেলা হচ্ছে। মেলার কথা শুনেই কুয়াশা, মেঘা, তুতুল লাফিয়ে উঠে যাবে বলে। পাখির ও যেতে ইচ্ছে করছিল কিন্তু বাদ সাধে কুশান এই অবস্থায় মেলায় যাওয়া ঠিক না অঘটন ঘটতে সময় লাগবে না। পাখির মন খারাপ হলেও নিজেকে নিজে বুঝালো। তুষার, মেঘ, মেঘা, কুয়াশা, তুতুল মেলায় গেলো। তখন সন্ধ্যা নামছে ধরনিতে। রংবেরঙের কৃত্রিম আলো জ্বালিয়ে দিচ্ছে। মরিচবাতিগুলো বিভিন্ন সেডের হচ্ছে। কুয়াশার মেলায় ডুকতেই রেশমি চুড়িগুলোর দিকে মন টানলো। নেড়েচেড়ে চুড়ি দেখলো হাতে পড়লো না। তুষার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো।
” নাও লালটা তোমার হাতে ভালো লাগবে ”
তুষার নিজের হাতে কুয়াশাকে লাল রঙের চুড়ি পড়িয়ে দিলো। ফর্সা হাতে লাল ফুটে উঠেছে। হাত নেড়ে চুড়ির ঝনঝন শব্দ শুনে কুয়াশার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। মেঘা নীল রংয়ের চুড়ি নিলো। তুতুলও ওদের দেখাদেখি করে সবুজ রঙের চুড়ি নিলো। কুয়াশা পাখির জন্যও চুড়ি নিলো। রাতের মেলায় লোকজনের সমাগম বাড়তে লাগলো। টুকটাক আরো অনেক কিছু কিনলো ওরা। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো বেবিদের খেলনাও কিনলো বেশ কয়েকটা। মেঘ বলল
” পাগল হয়ে গেছিস? বেবিদের খেলনা আমরা দোকান থেকেও কিনতে পারবো শুধু শুধু এতো পথ বয়ে নিয়ে যাওয়া ”
তুতুল বলল ” তুমি চুপ করো তুমি এসব বুঝবে না ”
” হ্যাঁ তোমরা তো বুঝদার কমিটির লিডার ”
মেঘা বলল
” ভাইয়া আমরা এখন ঝগড়া করার মুডে নাই তোকে পড়ে দেখে নিবো ”
মেলায় নাগরদোলা, আর নৌকাদোলা উঠেছে। মেঘ বলল ” চল নাগরদোলায় উঠবো ”
কিন্তু মেঘা, কুয়াশা যেতে রাজি হলো না। মেঘ বলল ” মেঘা কে যেতে হবে না আগের দিনের মতো অসুস্থ হয়ে যাবে কুয়াশা তুই যাবি ”
কুয়াশা যেতে না রাজ তবুও মেঘের জোড়াজুড়ি তে বাদ্ধ্য হয়ে যেতে হলো। নাগরদোলা উপরে উঠতেই কুয়াশা নিচের দিকে তাকালো মাথা ভনভন করে ঘুরে উঠলো। তুষার পাশে বসে ছিল। তুষারের হাত খামছে ধরলো নাগরদোলা উপরে নিচ উঠানামা করতে লাগলে কুয়াশা, তুতুল ভয়ে চিৎকার দিলো। কুয়াশা ভয়ে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে তুষারের বুকে মাথা রাখে চোখ বন্ধ করে রইলো। তুষারও কুয়াশা কে দুহাতে আগলে নিলো। নাগরদোলায় চেচামেচি করছে কেউবা ভয়ে কেউবা আনন্দে এক্সাইটমেন্টে। নাগরদোলা থেকে নেমে কুয়াশা টলমল পায়ে হাঁটতে লাগলো। তুষার এসে ধরলো কুয়াশাকে বলল
” কি হচ্ছে? মাথা ঘুরছে ”
” হুম একটু ”
লেবুর পানির দোকানের একটা চেয়ারে কুয়াশাকে বসালো। মেঘা মজা করে বলল
” কি রে কেমন মজা করলি? যঘন্য এটা ফ্যান্টান্সটি কিংডমের রাইডের মতো ভ য়া নক ”
মেঘা হেসে বলল ” তোর চেচানো দেখেই বুঝেছি ”
” শ য় তা ন হাসবি না একদম ”
সবাই লেবুর শরবত খেলো। বাসায় ফেলার সময় সকলের জন্য বেশ অনেকগুলোই কদবেল কিনলো।
বাসা ক্লান্ত হয়ে ফিরে ফ্রেশ হয়ে কদবেল খেতে বসলো। পাখিও টক কদবেল দেখে জ্বিবে পানি চলে এলো। কুশান এবারও বাদ সাধলো
” এগুলো বাইরে থেকে মাখানো কি না কি দিয়েছে তোমাকে খেতে হবে না ”
পাখি এবার রেগে বলল ” সব কিছুতেই তোমার না তুমি চুপ থাকো এটা আমার ফেবারিট এটা আমি খাবোই কোনো বারণ শুনবো না ”
কুশান চোখ মুখ অন্ধকার করে বসে রইলো। কুয়াশা ভাইয়ের অবস্থা দেখে বলল ” এটা আমাদের সামনেই মাখিয়েছে ওনার হাতে গ্লাফস ও ছিল। তুমি এতো চিন্তা করো না কিছু হবে না ”
কুশান কিছু বলল না পাখির দিকে তাকিয়ে রইলো পাখি বাচ্চাদের মতো মজা করে খাচ্ছে আর খিলখিল করে হাসছে ওদের আনা খেলনা গুলো দেখে। কুশান ও হাসলো। ভালোবাসা মানুষের খুশির জন্য কিছু জিনিস মেনে নিতে হয়। তাকে তার মুখের প্রাণ খোলা হাসিটা দেখে মনপ্রাণ জুড়িয়ে যায়।
কুশান পাখির প্রেমের বিয়ে প্রথমে সকলে অমত জানেও পরে ছেলেমেয়ে মুখ দেখে মেনে নিয়েছে। পাখিও লক্ষি মেয়ে বিয়ে তিন বছরেও না শাশুড়ী ননদদের সাথে কোনো রকম খারাপ ব্যবহার বা ঝগড়াঝাটি রেকর্ড নেই। খারাপ পরিস্থিতি সবসময় সামলিয়ে এসেছে। শাশুড়ী রাগের মাথায় বকলেও পাখি কখনো মুখের ওপরে কথা বলে নি। রাগ কমে গেলে শাশুড়ীই এসে আমার নিজের ভুলের জন্য মাফ চেয়ে নেই অথবা পাখির নিজের ভুলের জন্য শাশুড়ী কাছে মাফ চেয়ে নেয়। রাগ, অভিমান, সব ভালো খারাপ মিলেই সম্পর্ক পরিবার। পাখি যখন প্রেগন্যান্ট এর পর থেকে যখন মোটা হতে লাগলো তখন বড্ড মন খারাপ করে কুশান কে বলে ছিল
” শোনো আমি দেখতে খারাপ হয়ে যাচ্ছি বলে কি তুমি আমাকে ভালোবাসা ও কমিয়ে দিবে? ”
কুশান মজা করে বলে ছিল ” ভালোবাসা কমিয়ে দিবো না আরেকটা বিয়ে করবো ”
সে কথা শুনে পাখি কাঁদতে কাঁদতে নাজেহাল অবস্থা পাখির অবস্থা দেখে প্রথমে কুশান হাসলেও পরবর্তীতে ভাবে এই মেয়েটা তাকে এতো ভালোবাসে? কুশান পাখির কান্না থামানোর জন্য বলেছিল ” তুমি পাগল হলে না-কি? দ্বিতীয় বার বিয়ে করলে তোমাকে করবো। তৃতীয় বার বিয়ে করলেও তোমাকেই করবো। এবার কান্না থামাও শরীর খারাপ করবে তো ”
পাখি কান্নারত ছলছল চোখে কুশানের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বলেছিল ” সত্যি তো? ”
” হুম তিন সত্যি ”
” আমি মরে গেলেও অন্য কেউকে তোমার পাশে সহয় করতে পারবো না ”
” হুঁশশ এসব কথা কেউ বলে? ”
কুশান বোঝে এই মেয়ের মধ্যে তার শত ভালোবাসা লুকিয়ে আছে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনলো তুষারের বাবা আজ সন্ধ্যায় ইনপ্টেন মিটিং আছে এখনি যেতে হবে। তুষারের বাবা-মা বেরিয়ে পড়লো।
আরও দুদিন পর সকলের ঘোরাঘুরি শেষ করে আজ বাসার দিকে রওনা হবে সকলে। যে যার সিটে বসে গেলো। ছোটরা একগাড়িতে বড়রা একগাড়িতে। ছোটদের গাড়ি আগেই চলছিল সকলে হাসিমজা করছিলো। বড়দের বাড়ি স্প্রিডে বেসামাল ভাবে আগে উঠে গেলো। কুশান বলল
” আচর্য্য এভাবে কেউ চালায়? ড্রাইভার কি পা গ ল হলো না-কি? ”
মেঘ বলল ” এভাবে চালালে তো অঘটন ঘটতে সময় লাগবে না ”
কুশান ফোন দিলো কৌশলের কাছে।
” হ্যালো আব্বু? ”
” হ্যাঁ ”
” এভাবে গাড়ি চালাছে কেনো? ভালো ভানে নরমাল ভাবে চালাতে বলো ”
” গাড়ি ব্রেকফেল করেছে। কিছু কাজ দিচ্ছে না নিজের মতো চলছে ”
কুশানের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো হতভম্ব হয়ে গেলো চিল্লিয়ে বলল ” হোয়াট? ”
” কি করবো বুঝতেছি না ”
কুশান কাতর গলায় বলল ” আব্বু। কি হবে এখান ”
কৌশল বলল ” আমাদের কিছু হয়ে গেলে সবার খেয়াল তুমি রাখবে আব্বু কোনো কিছুতেই ভেঙে পড়বে না। কুয়াশা, পাখি, মেঘ, মেঘা ওদের সব দায়িত্ব তোমার দেখে রেখ ওদের ”
কুশান কেঁদে ফেললো বলল
” আব্বু এখন কি এসব বলার সময়? এভাবে বলো না প্লিজ ”
কৌশল দম ছেড়ে বলল ” বললাম না ভেঙে না পড়তে সবার দায়িত্ব তোমার। তুমি ওদের বট গাছ ”
কুয়াশা ভয়ার্ত গলায় বলল ” কি হয়েছে ভাইয়া কাঁদছো কেনো? ”
” ও গাড়ি ব্রেকফেল করেছে ”
সকলের মধ্যে কান্নাকাটি লেগে গেলো। একপ্রকার তুষার বড়দের গাড়ির পিছনে পিছনে বেশস্প্রিতেই যাচ্ছে।

চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here