প্রেমরোগ-১২

0
773

#প্রেমরোগ-১২
#তাসনিম_তামান্না

কুয়াশা মায়ের বকুনে শুনে আর রুম থেকে বের হয় নি। অন্ধকার রুম করে গান শুনছিলো। হঠাৎ লাইট জ্বলে উঠায় চোখ পিটপিট করে চাইলো। কুয়াশার বাবা হেসে বলল
” কি হয়েছে মামনি? শরীর খারাপ? ”
কুয়াশা উঠে বসে বলল
” না আব্বু ”
” তাহলে কি হয়েছে রুম অন্ধকার করে শুয়ে আছো কেনো? রাতে খাও নি কেনো? ”
। কুয়াশার মা কুয়াশার নামে কুয়াশার বাবার কাছে নিশ্চয়ই নালিশ দিয়ে অনেক কিছু বলেছে তাই তো কুয়াশার বাবা আসলো। নালিশ জানানো টা বড় কথা নয় বাবা কখনোই কুয়াশাকে বকে না দোষ করলে আদর দিয়ে বোঝায় এটা ভুল ছিলো। কুয়াশাও বোঝে। কুয়াশার মনের মধ্যে কেমন অশান্ত লাগছে। কিছু ভালো লাগছে না। হয়ত কিছু ঘটবে খারাপ অথবা ভালো! সময় নিয়ে কুয়াশা বলল ” এমনি খেয়ে ইচ্ছে করছে না। তুমি খেয়েছ? ”
” মা’টা না খেলে ছেলে কিভাবে খায় বলতো? চল খাবি ”
কুয়াশা ছলছল চোখে তাকালো। কুয়াশা বাবা কুয়াশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল
” জানিস ই তো তোর মা’র মাথায় একটু গোলমাল আছে। পাগল। হুটহাট রেগে যায়। তাই বলে না খেয়ে থাকবি? ”
কেয়া কুয়াশা দরজায় দাঁড়িয়ে ছিল বাবা-মেয়ের কথা শুনছিল কুয়াশার বাবার কথাশুনে খেপে গিয়ে রুমে এসে বলল ” বাপ -বেটির নাটক শেষ হলে খেতে আসো রাত কম হয় নি। আমি পাগল বলেই তোমার সাথে সংসার করছি অন্য কেউ হলে এতো দিনে কবে চলে যেতো। ”
কুয়াশার বাবা কুয়াশার কানে কানে ফিসফিস করে বলল ” দেখলি তো আজকাল মানুষ লুকিয়ে আমাদের কথা শুনছে। ”
” এই বুড়ো ওর কানে কানে কি বললে তুমি? ”
কুয়াশার বাবা রেগে গিয়ে বলল
” এই বুড়ো কাকে বলছ তুমি? যানো এখনো কত মেয়ে আমার পিছনে পড়ে আছে। ”
কেয়া মুখ ভেংচি কেটে বলল ” সে আমার ঢের জানা আছে ভালো। তাই ঢং না করে খেতে আসো বুড়ো আমি কিন্তু এতো রাতে তোমাদের নাটক দেখতে পারতেছি না কাল সকাল সকাল উঠে সব গোছাতে হবে। আর আরেক জনের কাছে শুনো সে যাবে কি না। গেলে ব্যাগ গুছিয়ে নিতে বলো। আমি কিন্তু সাধতে পারবো না ”
এতোক্ষণ বাবা-মা এর ঝগড়া এনজয় করছিল। মায়ের শেষের কথা শুনে মুখ চুপসে গেলো। কুয়াশার বাবা বলল ” কুয়াশা অবশ্যই যাবে। মেয়ে না গেলে বাবাও যাবে না ডিসিশন ফাইনাল। কুয়াশা বল কি করবি এখন? ”
কুয়াশা মনে মনে ভাবলো ” একজনের জন্য কেনো সে তার আনন্দ মাটি করবে? সে যাবে না বলছে না। তাহলে আমি কেনো জাবো না? আমি যাবোই। শয়তান টা যা খুশি করুক আমি পাত্তা দিবো না হুহ্। ”
কুয়াশা মিনমিন করে বলল ” আমি যাবো ”
” তাহলে তখন শুধু শুধু সিনক্রিয়েট করার মানে কি?”
কুয়াশা শুকনো ঢোক গিললো। মায়ের কথার উত্তর দিতে পারলো না। কুয়াশার বাবা বলল ” আহ। ছাড়ো তো যাও গিয়ে খাবার রেডি করো আমরা আসছি ”
কেয়া বিরবির করতে করতে চলে গেলো। কুয়াশা বুঝে গেলো তাকেই বকছে। কেয়া যেতে কুয়াশার বাবা বলল ” চল তো ক্ষেপীরানীর কথায় কান দিস না। আর তুমি কিন্তু ভুল করেছ কুয়াশা আর কখনো যেনো এমন না শুনি। তুষার তোমার হাসবেন্ড ওর সম্মান দেওয়া বা রক্ষা করার দায়িত্ব তোমার। তুমি এভাবে তুতুলের সামনে এগুলো বলেছ তুতুলেরও নিজের ভাইয়ের সম্পর্কে এসব শুনতে নিশ্চয়ই ভালো লাগবে না। ”
” সরি আব্বু ”
” আম্মু কে গিয়ে সরি বলবে চলো ”
কুয়াশার বাবা কখনো তুমি বা কখনো তুই করে ডাকে। যখন সিরিয়াস কথা বলে তখন তুমি বলে ডাকে। কুয়াশ নিচে এসে মা’কে জড়িয়ে ধরে বলল
” সরি আম্মু আর কখনো এমন ভুল হবে না ”
” মনে থাকলেই ভালো। খেতে বসো। রাতে হয়েছে ”
কুয়াশা খেয়ে ওপরে চলে আসলো। ফোন হাতে নিয়ে দেখলো তুষারের নম্বর থেকে দুইবার কল এসেছিলো। কুয়াশা ব্যাক করলো না মনে মনে বলল
” থাকুক ওভাবে আমাকে চ,ড় মা,রা না? এখন আমার কাছে ফোন দিচ্ছিস কেনো? তোর সাথে কোনো কথা বলবো না। শা‹লা এটিটিউডের বস্তা ”
ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লো।

মেঘা অনেকক্ষণ নিজের সাথে যুদ্ধ করে রিদের নম্বরে ডায়াল করলো। বুকে দুরুদুরু করছে। কাল এমনটা হয় নি। রিদ দুইবারের বার ফোন ধরলো ঘুমঘুম কন্ঠে ঝাঁঝ এনে বলল ” কি সমস্যা রাতের বেলা একটা পুরুষ কে ফোন দিয়ে ডিসটার্ব করা ইভ!টি!জিং এর কেসে জেলে পুরে দিবো একদম বিয়াদপ মেয়ে ”
মেঘা রিদের এসব কথা শুনেও উত্তর না দিয়ে উল্টো প্রশ্ন করলো বলল
” কি করছেন? ”
রিদ বিরক্তি নিয়ে বলল ” এতোরাতে মানুষ নিশ্চয়ই হা-ডু-ডু খেলবে না? কি জন্য ফোন দিয়েছো সেটা বলো ”
” আপনার কথা খুব মনে পড়ছিলো। তাই কাল থেকে হয়ত ফোন দিতে পারবো না। গ্রামে সবার মাঝে থাকবো আপনার খোঁজ নেওয়া হবে না তাই ”
” তুমি খোঁজ না নিজেও যা খোঁজ নিলেও তাই উল্টো তুমি ফোন দিলে আমি বিরক্ত হই ”
” কিন্তু আমার ভালো লাগে ”
” মেঘা রিদ নামক কেউ ছিল সেটা যত তারাতাড়ি ভুলে যেতে পারবে ততই তোমার জন্য মঙ্গল ”
” কেনো? ”
” কারণ তোমার সাথে আমার কখনো যায় না ”
” কেনো যাবে না? আপনিও মানুষ আমি ও মানুষ অবশ্যই যাবে ”
রিদ দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল ” সাবধানে থেকো রাখছি ”
শেষে কথাটুকু মেঘার মনে সব কষ্ট দূর করে শান্তি এনে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। ঠোঁটে কোণে মুচকি হাসি এসে ধরা দিলো। মনে ভালো লাগা পাখি গুলো ডানা ঝাপটাতে লাগলো।

চলবে ইনশাআল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here