প্রেমময় প্রহরে তুমি💖 পর্ব ৩

0
1098

#প্রেমময়_প্রহরে_তুমি💖
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৩

৪.
জিরিশা বাসায় আসতেই তার মা তাশুরা ইসলামের কাছে একগাদা বকা খায়।জিরিশা রুমে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে এসে বিছানায় শুয়ে পরে।মাহাজের শার্টটা সে ধুয়ে তার বারান্দায় মেলে দিয়েছে।এখন বৃষ্টি জোরে পরছে না গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।জিরিশার শরীর ভালো লাগছে না।গা গরম হয়ে আসছে হয়তো জ্বর আসছে।সে কাঁথা বের করে ফ্যান বন্ধ করে শুয়ে থাকে।ফোন দেখতেও ভালো লাগছে না।

তাশুরা ইসলাম মেয়ের কাছে আসেন।মেয়েকে কাঁথা গায়ে শুয়ে থাকতে দেখে বুঝে যান মেয়ের জ্বর আসছে।তাও মেয়ের কাছে এসে কপালে হাত রেখে বোঝার চেষ্টা করেন জ্বর আছে কিনা।শরীর গরম দেখে সে বলতে থাকে,,,
“এই মেয়েকে নিয়ে আর পারলাম না,এই অসময়ে বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর বাধিয়ে ঘরে বসে আমাকে জ্বালাবে।বাপ বেডি সব মিলে আমাকে জ্বালিয়ে মারে”

জিরিশা জ্বরের ঘোরে হাসে।তার আম্মু যে কতবার একই কথা বলবে তার হিসাব নেই।তাশুরা নুডলস বানিয়ে এনে জিরিশাকে খাইয়ে দেয়।জিরিশা লক্ষী মেয়ের মতো সুন্দর করে খেয়ে নেয়।তাশুরা ইসলাম জিরিশার জ্বর মেপে দেখে ১০২ জ্বর।সে ঔষধ খাইয়ে দেয়।তারপর নরম কন্ঠে জিরিশাকে বলে,,,
“তোর কি বেশি খারাপ লাগছে জিরিশা”

জিরিশা মাথা নাড়িয়ে ভাঙা গলায় বলে,,,
“না আম্মু আমি ঠিক আছি কালকে সকালের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ।”

তাশুরা জিরিশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,,,
“কিছু খাবি তোর বাবাকে ফোন করে আনতে বলবো”

জিরিশা হেসে বলে,,,
“হুম হুম খাবো তো আমার না ফুসকা আর পিজ্জা খেতে ইচ্ছে করছে আম্মু”

তাশুরা জিরিশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে যায় মেয়ের আবদার রাখতে।নিজের স্বামী সাহিদকে ফোন করেন।সাহিদ ফোন রিসিভ করতেই তাশুরা বলে,,,
“তোমার মেয়ে বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর বাধিয়েছে এখন ফুসকা পিজ্জা খেতে চাইছে নিয়ে এসো”

সাহিদ ওপাশ থেকে বলল,,,
“কি বলো আমার মামনির জ্বর এসেছে আচ্ছা ওর খেয়াল রাখো আমি কিছু সময় পর আসছি আমার মায়ের জন্য ওর পছন্দের সব খাবার নিয়ে।”

তাশুরা কল কেটে দেয়।আসফি তাশুরা ইসলামের পাশে এসে বলে,,,
“আম্মু আমারও না বার্গার খেতে ইচ্ছা করছে বাবাকে ফোন করে বলো না”

তাশুরা আসফিকে ধমক দিয়ে বলল,,,
“তোর আপুই এর জ্বর যা ওর কাছে গিয়ে ওকে সঙ্গ দে”

আসফি রাগ করে চলে যায়।জিরিশার কাছে এসে দেখে ও ঘুমিয়ে পরেছে।তা দেখে জিরিশার পাশে গিয়ে বসে।তারপর ওর হাতটা ধরে বলে,,,,
“আপুই জানিস আমি না তোকে অনেক ভালোবাসি কিন্তু বলি না হি হি বলবো ও না।তোকে জ্বালাতে না আমার প্রচুর ভালো লাগে বিশ্বাস কর”

আসফি জানে তার আপুই তার একটা কথাও শুনছে না।কারণ তার আপুই যে ঘুম।ঘুমে তলিয়ে আছে।আসফি জিরিশার কপালে একটা চুমু দেয়।তারপর জিরিশার পাশে বসে গেম খেলতে থাকে।

সাহিদ তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরেন।মেয়ে যখন খেতে চেয়েছে সে অবশ্যই তা পূরন করবে।পিজ্জা পেয়ে গেলেও ফুসকা কিনতে তাকে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে।মেয়েকে যে তিনি বড্ড ভালোবাসেন।সে বাসায় আসতেই মেয়ের কাছে চলে আসেন।জিরিশা তখন ঘুমিয়ে ছিলো।জিরিশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে নরম কন্ঠে বলে,,
“জিরিশা মা উঠ খেয়ে ঘুমিয়ে পরিস তোর জন্য আমি তোর পছন্দের ফুসকা এনেছি”

জিরিশা উঠে খেয়ে আবার ঘুমিয়ে পরে।জ্বরটা বেড়েছে।সেদিন সারারাত তাশুরা মেয়ের সেবা করেছে।সেও খুব ভালোবাসে তো মেয়েকে।কিন্তু মাঝে মাঝে বকা দেয়।তারপর নিজেই হাসে মেয়ের কান্ড দেখে।

৫.
দুইদিন পর আজকে জিরিশা সুস্থ হয়েছে।কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিলো।তাশুরা মেয়েকে খাইয়ে দিলেন।জিরিশাও খুশি মনে খেয়ে নিলো।অতঃপর বের হয়ে পরলো কলেজের উদ্দেশ্যে।কলেজে এসে তাদের সম্পূর্ণ গ্যাং এর সাথে গল্প করতে বসলো।তাদের গ্যাং এ মোট ৮ জন মানবিকে ৪ জন, দুজন বিজ্ঞান বিভাগে আর দু’জন ব্যাবসা বিভাগে।ওরা প্রথম ক্লাস করে এসে আবার সব মাঠে বসলো কোথায় যাবে ঠিক করতে।

ওদের মধ্যে আফিয়া সব থেকে চঞ্চল মেয়ে।ও লাফিয়ে উঠে বলল,,,
“চল আজ ঘাটে যাই সাথে সাদিককেও ডাকবোনি”

জিরিশা কপাল চাপড়ে বলে,,,
“বোইন আমরা সব ফ্রন্ডসরা মিলে যাচ্ছি এখানে কেনো সাদিক ভাইয়াকে ডাকা লাগবে”

জিরিশার কথায় সবাই সম্মতি দেয়।আফিয়া মন খারাপ করে বলে,,,
“ঠিক আছে ডাকবো না কিন্তু আজকে ৭ নং ঘাটে যাবো না,আজকে ৫ নং এ যাবো ওইখানে কেউ থাকে না সেই মজা করবো সব কয়টা মিলে”

ওরা চলে আসে ৫নং ঘাটে।আজকে কেউ নেই আসলে সকাল বেলা কোনো ঘাটেই লোক থাকে না বেশি।অল্প কিছু কাপল থাকে তাও তারা বেশি সময় থাকে না কিন্তু সন্ধ্যায় বা বিকালে এখানে দাঁড়ানোর সুযোগও পাওয়া যায় না।ওরা এসেই নদীর তীরের খোলা জায়গায় বসে পরে আটজন।গোল হয়ে বসে গল্প করতে থাকে।কিছু সময় গল্প করার পর আফিয়ার আম্মু ওকে ফোন দেয়।

ও রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আফিয়ায় আম্মু বলে উঠে,,,
“আফিয়া বাসায় চলে আসো,তোমার নানুর বাসায় যেতে হবে”

আফিয়া কল কেটে ওদের বলে চলে যায়।সানজিদা আর সিহা ও আফিয়ার সাথে চলে যায়।বাকি থাকে জিরিশা ফাহা,মিহা মৌ আর হিরা।ওরা পাঁচজন আরো কিছুটা সময় ঘুরে।মিহা মৌ হিরা বাসায় চলে যায়।ফাহা আর জিরিশা ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে গল্প কটতে থাকে।হঠাৎই কারো বুকের সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যেতে নিলেই ফাহা পেছন থেকে ধরে ফেলে।জিরিশা সামনে তাকিয়ে দেখে তার স্কুল ফ্রেন্ড সাহিন।জিরিশা আর ফাহা সাহিনকে দেখে খুশি হয়।

অনেক দিন পর তাদের দেখা হলো।সাহিন ওদের দেখে বলল,,,
“কেমন আছিস তোরা অনেকদিন পর দেখা হলো তো”

জিরিশা মুচকি হেসে উত্তর দেয়,,,
“আমরা বিন্দাস আছি তুই কেমন আছিস তাই বল”

সাহিন ও হেসে বলে,,,
“আমিও খুব ভালো আছি ঝগড়ুটে আফারা”

ফাহা কোমড়ে হাত দিয়ে রাগি চোখে তাকিয়ে বলে,,,
“ওই তুই কি বললি আমরা ঝগড়ুটে তাই না তুই কি সয়তান জলহস্তি কোথাকার”

সাহিনও রেগে বলে,,”ওই ফাহার বাচ্চি আমাকে মোটেও জলহস্তি বলবি না আমি মোটেও জলহস্তি না”

জিরিশা ওদের থামিয়ে দিয়ে বলে,,,
“ভাই বোইন থাম তোরা কি শুরু করলি এটা রাস্তা তার থেকে বড় কথা তোরা বড় হয়েছিস না এখনো সেই ছোটবেলার মতো ঝগড়া করছিস”

সাহিন আমতা আমতা করে বলে,,,
“ইয়ে মানে সরি দোস্ত চল কোথাও একটা বসি অনেকদিন হলো দেখা হয় না আজকে তিনটা মিলে আড্ডা দেই।”

সাহিন হলো জিরিশা আর ফাহার অনেক ছোট বেলার ফ্রেন্ড।জিরিশার সাহিন ছাড়া আর কোনো ছেলে বন্ধু নেই।ও পছন্দ ও করে না ছেলেদের সাথে মিশতে কিন্তু সাহিনকে ছোট বেলা থেকে জিরিশাকে ভাইয়ের মতো আগলে রেখেছে।ওরা রেস্টুরেন্টে বসে গল্প করে কিছুসময়।তারপর সাহিনকে বিদায় দিয়ে বাড়ির পথে রওনা হয় জিরিশা আর ফাহা।রাস্তায় ফুসকার দোকান দোকান দেখে দুজনে ফুসকা খেতে থাকে।

#চলবে….!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here