#প্রেমময়_প্রহরে_তুমি💖
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২
জিরিশা ইটের সাথে বেঁধে পরে যেতে নিলেই কোথা থেকে মাহাজ এসে জিরিশার হাত ধরে ওকে বাঁচায়।জিনিয়া কিছু বুঝে ওঠার আগেই সবকিছু হয়ে গেলো।ফাহাও হা করে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।মাহাজ জিরিশাকে বাঁচাতে গিয়ে জিরিয়াশার কিছুটা কাছে চলে আসে।জিরিশার অদ্ভুত লাগে তাই তাড়াতাড়ি সরে যায় মাহাজের কাছ থেকে।মাহাজ তা দেখে বাঁকা হাসে।
ফাহা জিরিশার কাছে এসে বলে,,,,
“তোর কোথাও লাগেনি তো জিরিশা,দেখি হাত পা দেখা”
জিরিশা হাসে। মেয়েটা তার অল্প কিছু হলেই কেমন হায়পার হয়ে যায়।সে বলে,,,
“আমার কোথাও লাগেনি গাধি”
মাহাজ ভ্রু কুচকে ওদের দিকে তাকিয়ে ছিলো।কিছু বলবে তার আগেই হুট করে বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়।মাহাজ গিয়ে চার দোকানের ভেতরে ঢোকে।মাহাজ ধমক দিয়ে ফাহাকে বলে,,,
“এইখানে আয় বৃষ্টিতে মোটেও ভিজবি না ফাহা”
ফাহা মন খারাপ করে মাহাজের পাশে গিয়ে দাড়ায়।জিরিশা চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে বৃষ্টির ফোঁটাগুলো অনুভব করছে।ফাহার জিরিশাকে দেখে প্রচুর ভিজতে ইচ্ছে করছে কিন্তু তার জল্লাদ ভাইয়ের জন্য পারছে না।মাহাজ নিজের ফোন দেখছে।জিরিশা হাত মেলে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে।
ফাহা কিছু সময় পর খেয়াল করে জিরিশাকে বাজে দেখাচ্ছে।সাদা ড্রেসে শরীরের সাথে লেপ্টে গিয়েছে।সে জিরিশা জিরিশা বলে ডাকতে থাকে।প্রচন্ড বৃষ্টি আর দোকান থেকে জিরিশা কিছু দূরে থাকায় ফাহার ডাক শুনতে পায় না।মাহাজ ফাহার ডাকা শুনে ফোন থেকে চোখ সরিয়ে ভ্রু কুচকে ফাহার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
“কি হলো চেঁচাচ্ছিস কেনো ষাঁড়েরমতো এভাবে”
ফাহা মাহাজের দিকে তাকিয়ে বলে,,,
“বৃষ্টিতে ভেজার কারণে ওকে খারাপ লাগছে তাই চলে আসতে বলছিলাম।”
মাহাজ জিরিশার দিকে একবার তাকিয়ে ফাহাকে বলে,,,
“ও এখন বৃষ্টিতে না ভিজলেও কাজ হবে না।ও বৃষ্টিতে ভিজে চুপচুপ হয়ে গিয়েছে।আর ওর কি কমনসেন্সের অভাব আছে নাকি সাদা জামা পরে বৃষ্টিতে ভিজছে”
ফাহা বিরক্ত হয়।মাহাজের দিক থেকে চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকায়।কিছু সময় পর জিরিশার দিকে চোখ পরতে বিস্ময়ের পরিমাণ আকাশ ছোঁয়।মাহাজ জিরিশাকে তার শার্ট খুলে পেছন থেকে পরিয়ে দিচ্ছে।ফাহার মুহুর্তটা খুব ভালো লাগে তাই ফোন বের করে একটা ছবি তুলে নেয়।যদি জিরিশা তার ভাবি হয়ে যায় একবার তাহলে আর পায় কে তাকে।তার প্রথমে অনেক শখ ছিলো জিরিশাকে নিজের ভাবি বানানোর কিন্তু পরে ভাইয়ের চরিত্র সম্পর্কে জেনে ইচ্ছাটা মরে গিয়েছে।
জিরিশার গায়ে কিছু অনুভব করতে চোখ খুলে তাকায় সে।সামনে মাহাজকে দেখে ভরকে যায়।মাহাজ জিরিশাকে ধমক দিয়ে বলে,,,
“এই মেয়ে তোমার কি কমনসেন্স নেই সাদা জামা পরে বৃষ্টিতে ভিজছো কেনো হ্যা”
জিরিশা নিজের দিকে তাকায়।আসলেই তো সে সাদা জামা পরে আছে।তার বৃষ্টি দেখলে মাথা ঠিক থাকে না তাই তার বাবা আর ফাহা তাকে বৃষ্টিকন্যাও বলে ডাকে।জিরিশা মাহাজের দিকে তাকিয়ে দেখে তার টি শার্টের উপরে পরা কালো শার্টটা তাকে পরিয়ে দিয়েছে।সে মাথা নিচু করে ফাহার কাছে চলে আসে।ফাহা হাসছিলো ওকে দেখে।ফাহার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকায়।ফাহা তা দেখে মুখ ভেংচি কাটে।
বৃষ্টি থামার কোনো নাম গন্ধ নেই।অনেক সময় বৃষ্টিতে ভিজে তারপর আবার অনেক সময় দাঁড়িয়ে আছে এমনিই তাতে ঠান্ডা লাগছে জিরিশার।মাহাজ হুট করে বৃষ্টির মাঝে কোথাও চলে গেলো।এই ফাঁকে জিরিশা ফাহার পিঠে কয়েকটা কিল বসিয়ে দিয়ে বলে,,,,
“ভালো লাগছে না তোর!আমার কিন্তু সময় আসবে মনে রাখিস”
মাহাজ কোথা থেকে একটা অটো নিয়ে আসে।তারপর ফাহাকে বলে,,,
“নে উঠে পর এই বৃষ্টি আজকে থামবে না মনে হয়।আমি বাইকে করে যাচ্ছি তোরা অটোতে করে চলে আয়”
জিরিশা আর ফাহা আর কথা না বলে অটোতে উঠে পরে।জিরিশার ভীষণ ঠান্ডা লাগছে আজকে বাড়ি গিয়ে যে মায়ের বকুনি খেতে হবে তা ভালোভাবেই বুঝতে পারছে জিরিশা।জিরিশাদের অটোর পেছনে পেছনে মাহাজও বাইক চালিয়ে আসছে।
৩.
জিরিশাকে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দেয়।ফাহা বলে,,,”সাবধানে যা,দ্রুত পা চালা নাহলে কিন্তু জ্বর চলে আসবে তোর।”
জিরিশা চলে যায় দ্রুত।মাহাজ অটোর সামনে গাড়ি থামিয়ে ফাহাকে বলে,,,
“অটো থেকে নেমে আয়।তোকে বাইকে করে নিয়ে যাবো”
ফাহা অটো ওয়ালাকে টাকা দিয়ে নেমে পরে।তারপর বাইকে উঠে বসে।মাহাজ জোড়ে টান মেরে নিয়ে আসে ফাহাকে।ফাহাকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে বাইক রাখতে যায়।মাহাজ ফিরে এসে দেখে ফাহা এখনো দাঁড়িয়ে আছে।
সে ভ্রু কুচকে ফাহার দিকে তাকিয়ে বলে,,,
“কি হলো তুই এখনো এখানে দাঁড়ানো কেনো ঠান্ডা লাগবে চল চল”
ফাহা আলতো হেসে বলে,,,”তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম মাহাজ ভাইয়া”
মাহাজ সিরি দিয়ে উপরে উঠতে উঠতে বলে,,,
“কেনো অপেক্ষা করছিলি বলতো।তুই তো আমার জন্য অপেক্ষা করার মানুষ না”
ফাহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,,,”তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাই”
মাহাজ ভ্রু কুচকে ফাহার দিকে তাকিয়ে বলে,,”কি বলবি বল”
ফাহা আমতা আমতা করে বলে,,,
“তুমি জিরিশার সাথে বিয়েতে কেনো রাজি হয়েছো তুমি তো ওকে পছন্দ করো না তাহলে বিয়ে করবে বলেছো কেনো আম্মুকে”
মাহাজের মুখটা হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেলো।ফাহা বুঝলো না কিছুই।মাহাজ গম্ভীর কন্ঠে বলল,,,
“তুই ছোট মানুষ ছোট মানুষের মতো থাক এগুলো নিয়ে বেশি ভাবতে হবে না।সামনে এইচএসসি সেইটায় ফোকাস দে”
ফাহার মন খারাপ হয়ে যায়।সে ভেবেছিলো তার ভাইয়া হয়তো জিরিশাকে পছন্দ করতে শুরু করেছে।কিন্তু মাহাজের কথা বার্তা শুনে ফাহার মনে হলো অন্য কারণ আছে। সে বাসায় এসে গোসল করে পড়তে বসলো কালকে আবার ফিজিক্স পড়া আছে।পড়ার চিন্তায় তার মাথা ব্যাথা শুরু করেছে।
সে জিরিশাকে মেসেজ করলো সে সুস্থ আছে কিনা কিন্তু কোনো উত্তর আসলো না ওপাশ থেকে।সে ভাবছে হয়তো ব্যস্ত আছে জিরিশা তাই বিরক্ত করলো না।তার নিজেরও শরীরটা ভালো লাগছে না বই বন্ধ করে শুয়ে পরলো।
#চলবে……!