#প্রেমপ্রেয়সী
#পর্ব_৮
#লেখিকা_N_K_Orni
লোকটা এবার ছু*রিটা রুদ্রের গলায় জোরে চেপে ধরল। এতে সে ভাবল আজকেই তার শেষ দিন। তবে একটু পরে সে বুঝতে পারল তার কিছু হয়নি, সে কোনো ব্যথা অনুভব করতে পারছে না। সে বুঝল ছু*রির উল্টা দিক ধরায় তার কিছু হয়নি। এরপরও সে কিছুটা আ*তঙ্কে রইল। কারণ সে ভাবল তাকে এতো সহজে ছাড়া হবে না। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে লোকটা তাকে ছেড়ে দিয়ে দূরে ধাক্কা দিল। হঠাৎ এমন ধাক্কায় রুদ্র রাস্তার এক কোণায় পড়ে গেল সাথে হাতেও বেশ ব্যথা পেল। সে কোনো রকমে নিজেকে সামলে উঠে দাঁড়ালো।
তারপর সামনে তাকাতেই দেখল লোকটা পি*স্তল তার দিকে করে আছে। এতে সে আবারও বেশ ঘাবড়ে গেল। লোকটা এবার তাকে গাড়িতে উঠে চলে যেতে ইশারা করল। রুদ্রও ভয়ে ভয়ে গাড়িতে উঠে গেল। গাড়িতে উঠে গাড়ির সামনের আলো জ্বালাতেই সে এক মুহুর্তের জন্য লোকটার মুখ আর হাতের সামনের অংশ দেখতে পেল। আর বাকিটা দেখতে পেল না কারণ সে কালো পোশাকে নিজেকে ঢেকে রেখেছিল। তার এমন কাজে লোকটা রেগে গিয়ে একটা গু*লি ছুড়ে দিল। কিন্তু সে পাশের দিকে গুলি করায় রুদ্রের কিছু হলো না। সে ভয়ে ভয়ে দ্রুত ওখান থেকে বেরিয়ে গেল।
পরদিন সকালে রাহিয়া ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিল। তারপর তার রুমের বাইরে গেল। আজকে বাসায় নিরা আসবে সাথে তার স্বামীকে নিয়ে আসবে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই বাসার সবাই খুব ব্যস্ত। এসব দেশে রাহিয়া রুমে চলে এলো। রুমে এসে সে নিজেই নিজেকে বলতে লাগল,
— ওহ আজকে তো নিরা আসছে। এক মূহুর্তের জন্য আমি তো এসব কথা ভুলেই গেছিলাম। এসে আবার আমার সাথে ঝামেলা না শুরু করে? ওইদিন ওসব না ঘটলে তো জানতেই পারতাম না যে ও এতো খারাপ। তারপর ও আবার যাওয়ার আগে আমাকে হু*মকি দিয়ে গেছে। তার মানে এখানে এসে নিশ্চয়ই কিছু করবে। আমাকে যতটা সম্ভব শক্ত থাকতে হবে। এতোদিন ছোট বোন বলে ওকে সবসময় ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু এখন আর তা করলে চলবে না।
বলেই সে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। দুপুরের একটু আগে নিরা তার স্বামীকে নিয়ে এলো। ওরা এলে মিসেস নাদিয়া সবার সাথে রাহিয়ার পরিচয় করিয়ে দিলেন। দুপুরের পর রাহিয়া বসে বসে ভাবছিল,
— নাহ, নিরার স্বামীকে তো দেখে ভালোই মনে হয়। বাবা নিজে পছন্দ করেছেন ভালো তো হবেই। তবে কারো বাইরে দেখে বলা যায় না ভেতরে কেমন?
রাহিয়া ফোন চালাচ্ছিল আর এসব ভাবছিল। তখনই ওর রুমে নিরা প্রবেশ করল। সে সামনের দিয়ে যেতে যেতে বলল,
— বেশ ভালোই তো আছিস দেখছি।
কথাটা শুনে রাহিয়া সামনের দিকে তাকাল। সামনে নিরাকে দেখতে পেয়ে সে একটা হাসি দিয়ে বলে উঠল,
— হ্যাঁ। একদম ঠিক ধরেছিস। আমি খুবই ভালো আছি।
নিরা বিছানার কাছে রাহিয়ার একদম সামনে বসতে বসতে বলল,
— আচ্ছা তাই নাকি? তাহলে তুই চিন্তা করিস না। আমি খুব তাড়াতাড়ি তোর এই ভালো থাকাটা কাটিয়ে দিব। আমি এমন কিছু করব যাতে তোর এই ভালো থাকাটা কেটে যায়। তোকে থাকতে দেখতে আমার একদমই ভালো লাগে না।
কথাটা শুনে রাহিয়া মনে মনে বলল,
— সেটা তো আমি ভালো করেই জানি। এর থেকে বেশি কিছু তোর থেকে কখনোই আসা করা যায় না।
রাহিয়া এবার ফোনটা একপাশে রেখে দিল। তারপর সে নিরার একদম কাছে গিয়ে তার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে উঠল,
— হ্যাঁ করিস। আমি তোর অপেক্ষায় থাকব।
বলেই সে আবার আবার আগের জায়গায় ফিরে এলো। এরপর নিরা যখন তার মুখের দিকে তাকালো সে একটা বড়ো হাসি দিল। এটা দেখে নিরা রাগে ফেটে পড়ল। সে কিছুটা রাগ নিয়ে বলে উঠল,
— যত ইচ্ছা হাসতে থাক। আমি যখন তোর কিছু করব তখন এমন ভাবে কীভাবে হাসিস আমিও দেখবো?
রাহিয়া এবার কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলে উঠল,
— আচ্ছা তোর সমস্যা কি? আমি তোর কি ক্ষতি করেছি? তুই আমার পেছনে কেন পরে আছিস? আমি রুদ্রকেও তোর জন্য ছেড়ে দিয়েছি। তাহলে এমন কেন করিস?
— তুই জানিস না তুই কি করেছিস? সব জেনেও কেন নাটক করছিস?
নিরার এসব কথায় রাহিয়া আরও বিরক্ত হয়ে গেল।
— আমি সত্যিই জানিনা আমি কি করেছি?
কথাটা শুনে নিরা কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওখানে মিসেস নাদিয়া চলে এলেন। ওনাকে দেখে রাহিয়া আর নিরা দুজনেই কিছুটা ঘাবড়ে গেল। রাহিয়া মনে মনে বলে উঠল,
— মা আবার কোনো কথা শুনে ফেলল না তো? যদি শুনে ফেলে তখন কি হবে?
তখনই মিসেস নাদিয়া বলে উঠলেন,
— কি কথা হচ্ছিল দুই বোনের মাঝে?
রাহিয়া তখন কিছু বলতে যেত তার আগেই নিরা বলে উঠল,
— আসলে এতোদিন পর আপুর সাথে দেখা হয়েছে তাই দুজনে একটু গল্প করছিলাম। আপু যেই দিন এলো তার পরের দিনই তো আমি চলে গেলাম তাই আমাদের মধ্যে আর কথা হয়ে ওঠেনি।
— ওহ। তা দুজনে গল্প পরে করিস। নিরা একটু আমার রুমে আয় তোর সাথে কথা ছিল।
— আচ্ছা মা তুই যাও। আমি একটু পরেই আসছি।
— আচ্ছা।
বলেই তিনি রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। উনি বেরিয়ে যেতেই নিরা ওর দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
— আমি তোর সাথে পরে কথা বলছি। তোকে আমি ভালো থাকতে দেব না।
বলেই সে উঠে চলে যেতে নিল। তখন রাহিয়া পেছন থেকে তার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলল,
— আচ্ছা দেওয়া লাগবে। তোর কথা আগে চিন্তা কর। হ্যাপি ম্যারিড লাইফ।
কথাটা শুনে নিরা মুখ ঘুরিয়ে চলে গেল। ও চলে যেতেই রাহিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
— এই মেয়েটা আসলেই আমাকে ভালো থাকতে দেবে না। এখন আমাকে মনটা ভালো করতে হবে। যাই মনটা একটু ভালো করে আসি।
বলেই সে বিছানা থেকে উঠে গিয়ে দরজা জানালা সব ভালো করে লাগিয়ে দিল। তারপর তার পাশ করে দেখে নিল।
— কালকে যে দুইটা প্যাকেট খোলা বাদ ছিল যাই ওই দুইটা প্যাকেট খুলে দেখি। দেখি ওর ভেতরে কি আছে? এসব জিনিস দেখলে আমার মন ভালো হয়ে যাবে।
বলেই সে খুশিতে লাফাতে লাফাতে সেখানে গেল যেখানে বক্সটা আছে। ওখান সেই বক্সটা বের করে সে রুমের মাঝে নিয়ে এলো। তারপর ওখান থেকে ওই প্যাকেট দুইটা বের করল।
— এখন দেখতে হবে এর ভেতরে কি আছে?
বলেই সে প্যাকেট দুইটা খুলল। একটার ভেতরে একটা কালো ড্রেস আরেকটায় একটা নীলা শাড়ি। এগুলো দেখে রাহিয়া খুবই খুশি হয়ে গেল। সে এগুলো রেখে দেওয়ার সময় তার চোখ গেল চকলেটের ওই বক্সটার দিকে। সে তখন ওই দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগল,
— আমার কি এগুলো খাওয়া উচিত? কে না কে দিয়েছে? না, চকলেট যেহেতু দিয়েছে তাই খেয়েই ফেলি। কে দিয়েছে তাতে কি? আমাকে যখন দিয়েছে তখন আমিই খাব। তাছাড়া খাওয়ার জিনিস নষ্ট করতে নেই।
বলেই সে ওই দুইটা প্যাকেট আবার আগের জায়গায় রেখে চকলেটের বক্সটা নিয়ে বিছানায় চলে গেল। রাতে রুদ্র তার বাসায় ছিল। পুরো বাসায় এই মূহুর্তে সে একাই রয়েছে। সে থমথমে মুখে চেয়ারে বসে আছে। আর তার সামনের টেবিলে একটা খোলা ডায়রি পড়ে আছে।
চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )