#প্রেমপ্রেয়সী
#পর্ব_২৪
#লেখিকা_N_K_Orni
তূর্য হয়তো ব্যস্ত ভেবে রাহিয়া বাধ্য হয়ে খেয়ে একাই ঘুমিয়ে পড়ল। গভীর রাতে তূর্য বাসায় ফিরল। সে রুমে এসে দরজা লাগতেই রাহিয়া ধড়ফড় করে উঠে বসল। তখন তূর্য তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
— তুমি ঘুমাওনি?
— হুম। শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে গেছে।
— ওহ। বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। তুমি ঘুমাও।
— আপনার এতো দেরী হলো কেন? এতো রাত পর্যন্ত কোথায় ছিলেন? রাতে কিছু খেয়েছেন? দেরী করে ফিরবেন একবার বলতে তো পারতেন।
রাহিয়া আরও কিছু বলতে যাবে তার আগেই চুপ হয়ে গেল। সে বুঝতে পারল সে মনের অজান্তেই অনেক কিছু বলে ফেলেছে। তাই যখন তার বিষয়টা খেয়াল হলো সে সাথে সাথে চুপ হয়ে গেল। কিছুক্ষণ চুপ থেকে সে বলে উঠল,
— সরি। আমি আসলে একটু চিন্তা করছিলাম। এজন্য ভুল করে এতোকিছু বলে ফেলেছি। আমি বুঝতে পারছি আমার আপনাকে এভাবে প্রশ্ন করা উচিত হয়নি। আপনি প্লিজ কিছু মনে করবেন না।
রাহিয়া কথাটা শেষ করতেই তূর্য হেসে উঠল। ওকে এভাবে হাসতে দেখে রাহিয়া অবাক হয়ে এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইল। তূর্য হাসি থামিয়ে বলে উঠল,
— তুমি কেন সরি বলছ? সরি তো আমার বলা উচিত।
— কেন?
— উমম! সেটা তুমি ভালো করেই জানো। তবে এটা ভেবে খুশি লাগছে যে তুমি আমার জন্য চিন্তা করছিলে। আবার ফেরার পর এতো এতো প্রশ্নও করছিলে। এই বিষয়টা খুবই ভালো লাগত।
কথাটা বলে তূর্য একটা মুচকি হাসি দিল। তারপর কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে উঠল,
— আজকে একটু কাজ ছিল তাই দেরী হয়ে গেছে। এরপর থেকে যদি কখনো এমন হয় আমি অবশ্যই তোমাকে আগে থেকে জানিয়ে দিব।
কথাটা শুনে রাহিয়া কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। সে কি বলবে ভেবে পেল না। সে তো হঠাৎ করেই না বুঝে কথা গুলো বলে ফেলেছে। বলার সময় তার জ্ঞান ছিল না যে সে কি বলছে?
— আমার ঘুম পাচ্ছে তাই এখন আমি ঘুমাবো। তুমিও ঘুমিয়ে যাও।
রাহিয়া আর কোনো কথা না বলে ঘুমিয়ে গেল। দেখতে দেখতে সময় চলে যেতে লাগল। রাহিয়া আর তূর্যের বিয়ের ছয় মাসের বেশি হতে চলল। এই কয় মাসে ওদের দুজনের সম্পর্ক বেশ এগিয়ে গেছে। ওদের দুজনের সম্পর্ক আগের থেকে অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে গেছে। আর রাহিয়া তূর্যকে একটু হলেও ভালোবাসতে শুরু করেছে। এখন তার মনের তূর্যর জন্য বেশ কিছুটা জায়গা তৈরি হয়েছে। সে এখন তূর্যর সাথে অন্য স্ত্রীদের মতোই আচরণ করে। তার মাঝে তূর্যকে নিয়ে এখন আর কোনো জড়তা নেই। আর সে সেটা চায়ও না। সে এখন তূর্যকে নিয়ে নতুনভাবে বাঁচতে চায়। তাই তো সে তূর্যর প্রতি তৈরি হওয়া ছোট ছোট অনুভূতি গুলোকে বাধা দেয় না বরং আরও বাড়তে সাহায্য করে।
দুপুরের পর রাহিয়া রুমে বসে ছিল। তখন ওর রুমে তূর্যর ছোট বোন তিনাকে এলো। তাকে দেখে রাহিয়া উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠল,
— তিনা তুমি কখন এলে?
— এইতো একটু আগেই এসেছি। এসে আম্মুর সাথে দেখা করেই তোমার কাছে এসেছি। তোমার সাথে তো আমার তেমন কথাই হয়নি। পরীক্ষার চাপে বাসায়ই তেমন আসতে পারিনি তাই তোমার সাথে সেই ভাবে কথাও হয়ে ওঠেনি। কিন্তু এখন আমার পরীক্ষা শেষ তাই আমি ঠিক করেছি তোমার সাথে অনেকটা সময় কাটাবো।
— আচ্ছা।
— ভাবি চলো আমি আর তুমি ছাদে গিয়ে গল্প করি। তোমার সাথে গল্প করার অনেক দিনের ইচ্ছা আমার। তাই আজকে যেহেতু সময় পেয়েছি তখন এই সুযোগ ছাড়ব না।
কথাটা শুনে রাহিয়া হালকা হেসে বলে উঠল,
— আচ্ছা। কিন্তু তার আগে তুমি যাও জামাকাপড় বদলে ফ্রেশ হয়ে এসো। তারপর তুমি খাওয়ার পর আমরা দুজনে একসাথে গল্প করব।
— বাকিগুলো আমি ঠিকই করব কিন্তু এখন আমি খাব না।
— আচ্ছা আগে তুমি বাকিগুলো করো তো। তারপর এটা দেখা যাবে।
— আচ্ছা।
বলেই তিনা রুম থেকে বেরিয়ে গেল। বেশ কিছুক্ষণ পর রাহিয়া রুম থেকে বেরিয়ে তিনার রুমে গেল। ওর রুমে গিয়ে ওকে না পেয়ে খেয়াল করল তিনা ওয়াশরুমে। রাহিয়া কিছুটা সামনে যেতেই দেখল টেবিলের উপর একটা ডায়রি অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু ডায়রিটাতে কিছু লেখা নেই। তবে সেটার উপরে রঙিন কাগজে লিখে সেটা ডায়রির উপরে লাগিয়ে রাখা হয়েছে। তখন রাহিয়ার চোখ গেল সেই কাগজ গুলোর উপর থাকা লেখাগুলোর উপরে। তার কাছে লেখা ধরনটা খুবই অদ্ভুত মনে হলো। হঠাৎ তার মনে হলো এই অদ্ভুত ধরনের লেখা সে আগেও দেখেছে। কিন্তু কোথায় দেখেছে সেটা সে মনে করতে পারল না। তখনই তিনা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো। সে রাহিয়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার কাছে এসে দাঁড়ালো। সে একবার ডায়রির দিকে তাকিয়ে তারপর রাহিয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল,
— এখানে কি দেখছ ভাবি?
কথাটা শুনে রাহিয়া তার দিকে তাকালো। সে কি বলবে বুঝতে পারল না। সে কিছুটা ভেবে বলে উঠল,
— লেখাটা সুন্দর। তাই একটু দেখছিলাম।
— ওহ। এটা ভাইয়ার লেখা। ভাইয়া এই ভাবে লেখে। আমার কিছু লেখার দরকার ছিল। সেটা ভাইয়াকে লিখতে দিয়েছিলাম এমন কাগজ দিয়ে। কিন্তু ভাইয়া মাত্র এই কয়টাই লিখে দিয়েছিল। তাই আমি আবার নতুন করে লিখেছি। আর এগুলো এই ডায়রিতে রেখে দিয়েছি।
— ওহ।
এরপর তিনা আর রাহিয়া ছাদে গেল। ওরা দুজন ওখানে অনেকক্ষণ গল্প করল। আসলে তিনা নিজেই সব কথা একা একা বলে যাচ্ছিল। আর রাহিয়া চুপ করে সব শুনছিল আর মাঝে মাঝে ছোট দুই একটা শব্দ বলছিল। কারণ তার মন ছিল অন্যদিকে। সে পুরোটা সময় ওই লেখার বিষয়েই ভাবছিল। এরপর ওরা দুজন রুমে চলে গেল। রাহিয়া রুমে গিয়েও এই বিষয়ে ভাবতে লাগল। হঠাৎ তার একটা বিষয় মনে পড়ে গেল। সে মনে মনে নিজেই নিজেকে বলতে শুরু করল,
— এই লেখাটা আমার বারবার কেন চেনা মনে হচ্ছে? তার মানে এই ধরনের লেখা আমি এর আগেও দেখেছি। কিন্তু কোথায়? আচ্ছা এই হাতের লেখার সাথে কি ওই কাগজের লেখাগুলোর মিল আছে? মনে পড়ছে না ঠিক? অনেক দিন হয়ে গেছে আমি ওগুলো দেখিনি আমার তো মনেও থাকার কথা না। আর আমার বিয়ের পর তো ওই লোকটাও ম্যাসেজ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এরপর আর কিছু দেয়ওনি আমাকে। তাহলে বুঝবো কীভাবে এটা আমি কোথায় দেখেছি?
হঠাৎ তার কিছু একটা মনে পড়তেই তার মনে হলো যে সে বলে উঠল,
— আচ্ছা আমি সাধারণ একটা হাতের লেখা নিয়ে কেন ভাবছি? হতেও তো পারে আমি অন্য কোনো জায়গায় কখনো দেখেছিলাম। কিন্তু এটা যদি ওই লেখার মতো হয়? নাহ, আমাকে এই বিষয়টা নিজের কাছে ঠিক করতে হবে। নাহলে আমি ঠিকমতো রাতে ঘুমাতেও পারব না। কিন্তু কীভাবে ঠিক করব? আমি কি একবার বাসায় যাব?
বলেই সে ঘড়ির দিকে তাকালো। সে সেদিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
— এখনো অনেকটা সময় আছে। এইটুকু সময়ের মধ্যে আমি বাসায় গিয়ে আবার ফিরে আসতে পারব। বেশি দেরী হবে না। যাই দ্রুত তৈরি হয়ে বেরিয়ে যাই।
বলেই সে দ্রুত তৈরি হয়ে নিল। তারপর মিসেস তানহাকে বলে সে বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেল। তারপর বাসা থেকে ওই অচেনা লোকটার দেওয়া সব জিনিস বাসা থেকে নিয়ে এলো। বাসায় ফিরে সে দরজা লাগিয়ে ওই কাগজগুলো নিয়ে বসল।
চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর এতোদিন গল্প না জন্য আমি খুবই দুঃখিত। )