প্রেমপ্রেয়সী পর্ব ২৩

0
799

#প্রেমপ্রেয়সী
#পর্ব_২৩
#লেখিকা_N_K_Orni

রাহিয়া ফোনে হাতে নিতেই স্ক্রিনে সাবার নাম ভেসে উঠল। স্কিনে সাবার নাম দেখতেই সে একটা ঢোক গিলল। সে সেদিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবল,

— সাবা কল দিয়েছে? ও নিশ্চয়ই ফিরে এসেছে? এখন আমি ওকে আমার বিয়ের কথা কীভাবে বলব? আমি তো ওকে রেখেই বিয়ে করে ফেলেছি। ও যদি এটা জানতে পারে তাহলে তো আমার সাথে কথাই বলবে না। এখন এসব কথা আমি ওকে কীভাবে বলব?

এসব ভাবতে ভাবতে কল কেটে গেল। রাহিয়া কি করবে ভাবতে গেলে একটু পর আবারও কল এলো।

— না আগে কলটা ধরি। তারপর দেখা যাবে কি হয়? নাহলে কলটা এবারও কেটে যাবে। তাই কল কাটার আগেই ধরে ফেলি।

বলেই সে ফোনটা ধরে কানে দিল। সে ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে সাবা বলে উঠল,

— রাহিয়া তোকে আমার কিছু বলার ছিল। প্লিজ আমার কথাটা রাখবি?

কথাটা শুনে রাহিয়া ভ্রু কুচকে বলে উঠল,

— তোর বিষয়টা কি বলত? তুই যখনই আমাকে কল দিস তখনই এভাবে বলিস যে তোর কিছু বলার আছে আর তোর সেই কথাটা রাখার জন্যও বলিস। বর্তমানে তুই কল দিলে শুধু এটাই বলিস। এটা কি তোর জাতীয় কথা হয়ে গেছে?

— না মানে…

— কি না মানে? তুই তো আমাকে তেমন কলই দিস না। আর যখনই কল দিস এমন প্রস্তাব নিয়ে আসিস। কি হয়েছে তোর? প্রস্তাব দেওয়া ছাড়া আর কোনো কারণ থাকে না তোর কাছে কল দেওয়ার?

— আসলে আমি এভাবে বলতে চাইনি। তুই না চাইলে নাও রাখতে পারিস। আমি কিছু মনে করব না।

কথাটা শুনে রাহিয়া মনে মনে বলল,

— আমি তো নিজেই ওকে এই ছোট বিষয়ে এতো কথা বলছি। ও যখন সত্যিটা জানতে পারবে তখন তো আমাকে স্যুপ বানিয়ে দিবে।

— আচ্ছা এবার কথাটা তো বল।

— হ্যাঁ। তোর কি পরশু সময় হবে? আসলে আমি ওই দিন একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যাওয়ার ছিল। তুই যদি আমার সাথে একটু যেতে পারতি তাহলে ভালো হতো। না মানে তুই না যেতে চাইলে সমস্যা নেই?

— আরে আমি তো তখন তোর সাথে মজা করছিলাম। তুই এতো সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছিস কেন? আমার সাথে এমনভাবে কথা বলছিস যেন আমি তোর অপরিচিত? আর হ্যাঁ আমি যাব সমস্যা নেই।

কথাটা শুনে সাবা খুশি হয়ে বলে উঠল,

— ওহ। তাহলে পরশু বিকালে তুই তৈরি হয়ে আমার বাসায় চলে আসিস। আমি তোকে নিয়ে একটা জায়গায় যাব।

— আচ্ছা।

বলেই রাহিয়া কল কেটে দিয়ে ফোনটা টেবিলের উপর রাখল। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে বলল,

— ভালো হয়েছে ওর সাথে রাজি হয়ে গেছি। ওইদিন গিয়ে ওর সাথে দেখা হয়ে যাবে। তখন সময় বুঝে ঠান্ডা মাথায় ওকে কথাটা বলতে হবে। এভাবে ফোনে বলা ঠিক হবে না।

পরদিন বিকালে তূর্য আর রাহিয়া তাদের বাসায় ফিরে এলো। রাহিয়া যদিও আরও কিছুদিন থাকতে চেয়েছিল কিন্তু তূর্য বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ওকে নিয়ে এসেছে। তাই না চাওয়া সত্ত্বেও রাহিয়াকে বাসায় ফিরে আসতে হলো। পরেরদিন বিকালে রাহিয়া তৈরি হয়ে নিল সাবার কাছে যাওয়ার জন্য। যেহেতু তূর্য বাসায় নেই তাই সে ঠিক করল যাওয়ার আগে তূর্যর আম্মু মিসেস তানহাকে বলে যাবে। তাই সে তৈরি হয়ে ওনার রুমে গেল। তারপর ওনাকে বলে বেরিয়ে গেল। রাহিয়া ওখান থেকে সাবার বাসায় গেল। সাবা আগে থেকেই তৈরি হয়ে তার বাসার বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। রাহিয়া ওর কাছে গিয়ে বলে উঠল,

— তুই আগে থেকে তৈরি হয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে আছিস যে?

— তুই ভেতরে গেলে দেরী হয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি তাড়াতাড়ি করার জন্য বাইরেই দাঁড়িয়ে তোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম।

— এমন কোন জায়গায় যাবি যে একটুও দেরী করা যাবে না?

— গেলেই দেখতে পাবি। এখন চল নাহলে দেরী হয়ে যাবে।

— আচ্ছা।

তারপর সাবা রাহিয়াকে নিয়ে একটা জায়গায় গেল। সেখানের চারপাশের পরিবেশ দেখে রাহিয়া কিছুটা অবাক হলো। কিন্তু সে সাবাকে কিছু বলল না। কিছুদূর যেতেই সে তার বাকি ফ্রেন্ডদের দেখতে পেল। সে অবাক হয়ে সাবাকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে যাবে তখনই ওখানে দিহান এলো। সে এসে একদম রাহিয়ার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল।

— রাহিয়া আই লাভ ইউ। তোমাকে অনেক বছর ধরে ভালোবাসি। এতোদিন আমি তোমাকে ভয়ে বলতে পারিনি যে তুমি যদি আমাদের বন্ধুত্ব ভেঙে দেও। কিন্তু এখন আর আমি অপেক্ষা করতে পারলাম। তাই আমার মনের কথাটা তোমাকে বলেই দিলাম।

হঠাৎ করে এমন কিছু ঘটবে সেটা যেন রাহিয়া কিছুতেই আশা করেনি। দিহান যে তাকে এভাবে প্রোপোজ করে দিবে সেটা সে ভাবতেও পারেনি।

— দুঃখিত দিহান। আমি তোমাকে আমার বন্ধুর থেকে বেশি কিছু ভাবি না আর কখনো ভাবতেও পারব না। না তো আগে আমাদের মধ্যে কিছু হওয়ার সম্ভাবনা ছিল আর না তো ভবিষ্যতে কখনো হবে। তাই ভালো এটাই হবে তুমি আমাকে ভুলে যাও।

— আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু তুমি আমাকে একটা সুযোগ দিয়ে দেখো।

— সেটা সম্ভব না। তুমি আমাকে ভুলে যাও।

বলেই সে যেতে নিল। কিন্তু সে থেমে গিয়ে সাবার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

— তাহলে এটাই ছিল তোর গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এখন আমি চলে যাচ্ছি। তোর যাওয়ার হলে আমার সাথে আয়।

বলেই সে বড়ো বড়ো পা ফেলে যেতে শুরু করল। সাবা একবার দিহানের দিকে তাকিয়ে তারপর দৌড়ে রাহিয়ার কাছে যেতে লাগল। সে রাহিয়ার কাছে গিয়ে বলে উঠল,

— সরি রাহিয়া। আমি তোকে এভাবে মিথ্যা বলে আসতে চাইনি। আসলে দিহান অনেকবার অনুরোধ করেছিল তাই আমি বাধ্য হয়ে এটা করেছি। তুই প্লিজ রাগ করিস না।

— চল কোনো একটা জায়গায় গিয়ে বসি। তারপর এইসব নিয়ে কথা বলা যাবে।

— আচ্ছা।

এরপর রাহিয়া আর সাবা একটা জায়গায় গেল।

— রাহিয়া তুই দিহানকে রিজেক্ট না করলেও পারতি।

— আমি ওকে শুধুই বন্ধু ভাবি। তাছাড়া এখন ওসব নিয়ে ভাবার আর কোনো সময় নেই।

— মানে?

— আমার বিয়ে হয়ে গেছে।

— দেখ রাহিয়া এসব বিষয় নিয়ে মজা করতে নেই। আমি বুঝছি যে তোর বিয়ে করার ইচ্ছা হচ্ছে। কিন্তু এভাবে নিজেকে বিবাহিত দাবী করলে তুই বিবাহিত হয়ে যাবি না।

— আরে সত্যি বলছি আমি বিবাহিত। তোকে একদিন দিয়েছিলাম না? যখন তুই তোর মামার বাসায় ছিলি। ওই সময় আমি তোকে আমার বিয়ের কথা বলার জন্য কল দিয়েছিলাম। কিন্তু তুই ওখানে থাকায় বলিনি।

কথাটা শুনে সাবা অবাক হয়ে বলে উঠল,

— কি! সত্যিই তোর বিয়ে হয়ে গেছে? তুই আমাকে এখন বলছিস?

— বললাম তো তেমন সুযোগ হয়ে ওঠেনি। এই শনিবারেই বিয়ে হয়েছে। প্লিজ রাগ করিস না।

— আচ্ছা। এখন চল আমাকে ট্রিট দিবি।

— আচ্ছা চল।

বলেই ওরা দুজন চলে গেল। অনেক রাত হয়ে গেছে। কিন্তু তূর্য এখনো বাসায় ফেরেনি। রাহিয়া বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে আর তূর্যর জন্য অপেক্ষা করছে। যদিও সে এখনো তূর্যকে ভালোবাসেনি কিন্তু তারপরও তূর্য তার স্বামী। এজন্য তূর্যর জন্য তার চিন্তা হওয়া স্বাভাবিক। রাত সাড়ে দশটার পরও যখন তূর্য এলো না তখন মিসেস তাহনা ওকে অপেক্ষা করে খেয়ে ঘুমিয়ে নিতে বললেন। রাহিয়া না শুনলে তিনি অনেক বুঝিয়ে খাওয়ার জন্য বললেন। তূর্য হয়তো ব্যস্ত ভেবে সে বাধ্য হয়ে খেয়ে একাই ঘুমিয়ে পড়ল।

চলবে,,,

( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here