#প্রেমপ্রেয়সী
#পর্ব_২১
#লেখিকা_N_K_Orni
— তুমি এখানে?
— আসলে আপনাকে রুমে দেখতে না পেয়ে এখানে এসেছিলাম।
— ওহ। চলো রুমে যাই।
কথাটা বলে তূর্য মনে মনে বলে উঠল,
— তার মানে ও কিছু শোনেনি।
এরপর ওরা দুজন রুমে গেল। দুপুরের পর রাহিয়া বিছানায় পুরোনো কথা ভাবছিল। তূর্য বাসায় নেই তাই সে রুমে একাই ছিল আর অতীতের কথা মনে করছিল। যদিও ওর জীবনে অতীতে অনেকটা অংশ জুড়ে রুদ্র ছিল। কিন্তু সে এখন আর রুদ্রকে আর জীবনে রাখতে চায় না। রুদ্রের প্রতি ভালোবাসা দেশ ছেড়ে যাওয়ার দিনই চলে গেছিল। কিন্তু সে চেয়েছিল তার জীবন থেকে রুদ্রের অস্তিত্ব মুছে ফেলতে। তাই তো সে বিয়ের আগের দিন তার কাছে থাকা রুদ্রের সব জিনিস ফেলে দিয়েছে আর তার ও রুদ্রের কাটানো সব স্মৃতি মুছে ফেলেছে।
ফ্লাস ব্যাক
বিয়ের আগের দিন বিকালে রাহিয়া তার রুমে বসে বসে ভাবছিল কীভাবে রুদ্রকে পুরোপুরি নিজের জীবন থেকে মুছে ফেলবে। সে আগেই ঠিক করে রেখেছিল বিয়ের আগেই তার আর রুদ্রের সব স্মৃতি সে মন থেকে মুছে ফেলবে। কিন্তু কীভাবে করবে সেটাই ভাবছিল? তখন তার মনে হলো সে নিজের কাছে থাকা রুদ্রের সব জিনিস ফেলে দিবে। সে তারপর কাজে লেগে পড়ল। সে খুঁজে খুঁজে তার কাছে থাকা সব জিনিস বের করে একটা জায়গায় রাখল। তার মধ্যে কিছু জিনিস রুদ্রের তাকে দেওয়া গিফটও ছিল। রাহিয়া ঠিক করলো সে সেগুলোও ফেলে দেবে। সে রুদ্রের কোনো ছোট জিনিসও রাখতে চায় না। কারণ সে চায় না রুদ্রের কোনো ছোট জিনিসও তাকে তার অতীত মনে করিয়ে দেয় আর তাকে কষ্ট দেয়। তাই এসব জিনিস নিয়ে ফেলে দিল। তারপর সে বিছানায় এসে বসল। হঠাৎ তার চোখ গেল বিছানার একপাশে পড়ে থাকা ফোনটার দিকে। তখন তার মাথায় এলো তার ফোনে রুদ্রর একা এবং তার সাথে রুদ্রের অনেক ছবি আছে। যেহেতু রাহিয়া আর রুদ্র ভালো বন্ধু ছিল তাই তাদের একসাথে অনেক ছবিই ছিল। সে ঠিক করল সেগুলো ডিলিট করে দিবে। তাই সে তার চিন্তা মতো সব ছবি একেক করে ডিলিট করে দিল। তখন তার মনে হলো তার আর রুদ্রের করা সব ম্যাসেজ ডিলিট করে দেওয়া উচিত। সে পুরোনো ম্যাসেজ গুলোর দিকে তাকিয়ে ফোনের উপরে থেকেই হাত বুলিয়ে দিল। তাদের সর্বশেষ ম্যাসেজে কথা হয়েছিল তার দেশে ছেড়ে যাওয়ার আগের দিন। ওই দিনের পরে তাদের আর কখনো ম্যাসেজে কথা হয়নি। ওই দিনের আগে পর্যন্ত রাহিয়ার মনে তখনও রুদ্রের জায়গা ছিল। সে শুধু নিজেকে রুদ্রের লজ্জিত হতে দেখতে পারবে না বলে অন্য দেশে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু ওই দিনের পর থেকে সে রুদ্রকে পুরোপুরি মন থেকে মুছে ফেলতে চেয়েছিল। সে রুদ্রকে এক প্রকার ঘৃণাই করতে শুরু করেছিল। রাহিয়া আবার সেই দিনের একে অপরকে করা ম্যাসেজ গুলো পড়তে শুরু করল। সেই দিনের করা প্রথম ম্যাসেজটা রুদ্রেরই ছিল। কারণ তখন সে নিজেকে রুদ্রের থেকে এডিয়ে যাচ্ছিল যার জন্য সে কখনোই তাকে নিজে থেকে ম্যাসেজ করত না। সেখানে লেখা ছিল,
— রাহিয়া শুনলাম তুমি নাকি পড়তে অন্য দেশে যাচ্ছ? যাইহোক, ভালোই হয়েছে। আমি খুবই খুশি হয়েছি যে তুমি আমার আর নিরার মাঝখান থেকে চলে যাচ্ছো। একটা কাজ করো তুমি একটু দেরি করেই ফিরো। তাহলে ততদিনে আমার আর নিরার বিয়ে হয়ে যাবে। তাহলে তখন আর তুমি আমাদের সম্পর্কের মাঝে আসতে পারবে না।
— রুদ্র আমি খুবই দুঃখিত ওই দিনের জন্য। আমি ওই দিন সব না জেনে বুঝেই তোমাকে প্রোপোজ করে ফেলেছিলাম। তুমি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দেও। তুমি প্লিজ ভুলে যাও যে আমি তোমাকে ওই প্রোপোজ করেছিলাম। চলো আমরা আবার আগের মতো বন্ধু হয়ে যাই।
— অসম্ভব রাহিয়া। আমি এবং তুমি আর কখনোই বন্ধু হতে পারব না। তুমি আমাকে পছন্দ করো। তাই তোমার সাথে থাকলে তুমি আমাকে আরও পছন্দ করতে শুরু করবে। এটা আমি কখনোই চাই না। এতে আমার আর নিরার সম্পর্কে বাধা আসতে পারে। এছাড়া নিরা চায় না এখন আর তুমি আমার বন্ধু থাকো। আর আমি ওর কথা কিছুতেই ফেলতে পারব না।
— কিন্তু আমরা তো ভালো বন্ধু ছিলাম তাই না রুদ্র? তাহলে শুধুমাত্র তোমাকে পছন্দ করার জন্য তুমি আমার সাথে বন্ধুত্ব ভেঙে দিবে। দেখো আমি জানি আমাদের মধ্যে সম্পর্কটা এখন কিছুটা অন্য রকম হয়ে গেছে। কিন্তু পরে তো আমরা অন্য কিছু না হয়ে শুধু আবার ভালো বন্ধু হয়েও থাকতে পারি।
— না এটা সম্ভব না। আমরা আর কখনোই বন্ধু হতে পারব না। তাই ভালো এটাই হবে তুমি আমার থেকে দূরে থাকো। আজ থেকে আমাদের বন্ধুত্ব সম্পূর্ণ শেষ। আশা করি আমাকে আর বিরক্ত করবে না।
— আচ্ছা ভালো থেকো। আর কখনো তোমাকে বিরক্ত করব না।
এটাই ছিল ওদের দুজনের শেষ ম্যাসেজ। এরপর আর কোনো ম্যাসেজ করা হয়নি। এসব ম্যাসেজ পড়তেই তার ওই দিনটা চোখের সামনে ভেসে উঠতে শুরু করল। সে চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলল,
— এজন্যই আমি রুদ্রকে আমার জীবনে আর ফিরতে দিতে চাই না। কাউকে পছন্দ করা অন্যায় না। কিন্তু সামান্য একটা প্রোপোজের জন্য ও আমাদের এতো বছরের বন্ধুত্ব এভাবে ভেঙে দিবে সেটা আমি কখনোই ভাবতে পারিনি।
বলেই সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সব ম্যাসেজ ডিলিট করে দিল। এরপর সে ফোনটা রেখে উঠে বারান্দায় চলে গেল।
বর্তমান
ওই দিনের কথা ভাবতেই তার কিছুটা ভালো লাগল। কারণ সে এখন রুদ্রকে নিজের অস্তিত্ব থেকে সরাতে পেরেছে। সে এখন চায় তূর্যর সাথে ভালো থাকতে। হঠাৎ তার মনে পড়ে গেল সেই ম্যাসেজ দেওয়া ব্যক্তির কথা। বিয়েটা ঠিকঠাক ভাবে হওয়ায় সে ওই লোকটার কথা ভুলেই গেছিল। তার কথা মনে পড়তেই তার মনে বিভিন্ন ভয় ঢুকতে শুরু করল। ওই লোকটা আবার তার কোনো ক্ষতি না করে ফেলে। রাতে রাহিয়া বিছানায় বসে তূর্যর দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছিল,
— আমার উচিত ওনাকে সব বলে দেওয়া। কিন্তু ওনাকে কীভাবে বলব এসব কথা? উনি তো আমার আগের কোনো কথাই শুনতে চান না।
তূর্য রাহিয়াকে তার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ওর একদম সামনে এসে দাঁড়ালো। তার ওর মুখের দিকে ঝুঁকে বলে উঠল,
— আমাকে নিয়ে কি এতো ভাবছো? আমাকে একটু বলো। আমিও শুনি আমার বউ আমাকে নিয়ে কি ভাবে?
কথাটা শুনে রাহিয়া ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো। তার মুখে এমন কথা শুনে রাহিয়া লজ্জায় দ্রুত বিছানা থেকে নেমে পড়ল। সে ওখান থেকে যেতে নিলেই তূর্য তাকে পেছন থেকে ধরে ফেলল।
— আরে কোথায় যাও? আমার প্রশ্নের উত্তর তো দিলে না।
রাহিয়া এবার সামনে ঘুরে বলল,
— আসলে আমি আপনাকে আমার জীবনের অতীত সম্পর্কে জানাতে চাই।
— আমি জানতে আগ্রহী নই।
— কিন্তু…
তূর্য রাহিয়ার ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে আর পুরো কথা বলতে দিল না। এরপর সে আঙ্গুল সরিয়ে নেওয়ার পরও রাহিয়া আর কিছু বলতে পারল না। সে এবার আস্তে আস্তে রাহিয়ার ঠোঁটের দিকে তার মুখ নিতে শুরু করল। রাহিয়া বিষয়টা বুঝতে পেরে সরে যেতে নিল। কিন্তু তূর্য একই ভাবে থেকে তাকে দুই হাত দিয়ে চেপে ধরল। তার রাহিয়ার মুখের একদম কাছে গিয়ে বলে উঠল,
— আমি তোমার কাছে নতুন তাই তোমাকে একটু সময় দিচ্ছি। তার মানে এই নয় যে আমি তোমাকে পুরোপুরি ছেড়ে দিব।
বলেই সে রাহিয়ার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরল। তার এমন কাজে রাহিয়ার চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেল। একটা অন্ধকার ঘরে দুইদিন ধরে আ*টকে আছে রুদ্র। তাকে শেকল আর অদেখা জিনিস দিয়ে শক্ত বেঁ*ধে রাখা হয়েছে। সে ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করছে। কিন্তু এখান থেকে ছাড়া পাওয়ার কোনো আশাই নেই তার। হঠাৎ ওখানে হালকা আলো জ্বলে উঠল। সে চোখ পিটপিট করে সামনে তাকালো। তার সামনে একজন লোক চেয়ার টেনে বসল। লোকটা ইশারা করতেই একজন গিয়ে রুদ্রের মুখের কাপড় খুলে দিল। মুখ খুলতেই রুদ্র বলে উঠল,
— আমাকে এখানে আবার ধরে নিয়ে আসার মানে কি? আমি তো ভুল কিছুই করিনি। আচ্ছা আমি একটা কথা বুঝতে পারছি না আপনি কেন রাহিয়ার জন্য আমাকে তুলে নিয়ে এসেছেন? এখন তো রাহিয়ার বিয়েও হয়ে গেছে। এখন আপনি চাইলেও ওকে পাবেন না। তাহলে এসবের মানে কি?
কথাটা শুনে সামনের লোকটা জোরে হেসে উঠল। তারপর শান্ত স্বরে বলে উঠল,
— তুমিও তো রাহিয়াকে ভালোবাসো না। তাহলে ওকে বিয়ে করার জন্য ওইদিন এমনটা করলে কেন?
চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )