#প্রেমপ্রেয়সী
#পর্ব_২০
#লেখিকা_N_K_Orni
রায়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার বলতে শুরু করলেন,
— রাহিয়া তো রুদ্রকে একদিন এই কথাটা বলেও দেয়। কিন্তু তারপর সে জানতে পারে যে রুদ্র আর নিরা সম্পর্কে আছে। এতে তার মন ভেঙে গেলেও সে পুরোপুরি ভেঙে পড়ে না। কিন্তু বাসায় ফিরে নিরা তাকে অনেক কথা শোনায়।
একটুকু বলে তিনি চুপ হয়ে গেলেন। তারপর মাথা তুলে মিসেস নাদিয়ার দিকে তাকালেন। তিনি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। ওনার এসব কিছুই বিশ্বাস হচ্ছিল না। কিন্তু বিশ্বাস না হলেও এটাই যে সত্যি তিনি বুঝে গেছেন। তারপর তিনি কাঁপা কাঁপা স্বরে জিজ্ঞাসা করলেন,
— তুমি এসব কথা জানলে কীভাবে?
কথাটা শুনে রায়ান মুচকি হাসলেন। ওনার চোখের সেদিনের ঘটনা ভেসে উঠতে লাগল।
ফ্লাসব্যাক
সেদিন রায়ান সাহেব যখন ওনার রুমের দিকে যাচ্ছিলেন তখন হঠাৎ দেখলেন নিরা খুবই রেগে রাহিয়ার রুমের দিকে যাচ্ছেন। সেটা দেখে উনি কিছু একটা ভেবে ওর পেছনে গেলেন। রাহিয়ার রুমের সামনে দাঁড়াতেই শুনতে পেলেন নিরা বলছে,
— আপু তুই কীভাবে নিজের ছোট বোনের বয়ফ্রেন্ডকে ভালোবাসতে পারলি? আর তুই ওকে প্রোপোজও করে দিলি! তুই একবারও আমার কথা ভাবলি না?
কথাটা শুনে তিনি খুবই অবাক হয়ে গেলেন। তারপর দরজার একপাশে দাঁড়িয়ে লুকিয়ে ওদের দুজনের সব কথা শুনে নিলেন। নিরা যখন রুম থেকে বের হয়েছিল তখন অনেক দ্রুত চলে যাওয়ায় সে ওনাকে খেয়াল করেনি। নিরা যাওয়ার পর রায়ান রুমের দিকে একবার তাকিয়ে নিরার রুমের সামনে গেলেন। নিরাকে রুমে গিয়ে খুশি হয়ে রুদ্রের সাথে কথা বলতে দেখে তিনি খুবই কষ্ট পেলেন। এজন্যই রাহিয়া যখন দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য বলল তখন আর তিনি না করলেন না।
বর্তমান
মিসেস নাদিয়া ওনার কথাগুলো শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়তেই তিনি বলে উঠলেন,
— নিরা যদি রুদ্রের সাথে সম্পর্কেই থাকত তাহলে বিয়েতে কেন রাজি হলো? আমরা তো ওকে বিয়েতে জোর করিনি? ও তো নিজে থেকেই বিয়েতে রাজি হয়েছিল।
— তুমি হয়তো আমার প্রথম কথাটা ভালো করে শোনোনি। নিরা শুধুমাত্র রাহিয়াকে কষ্ট দেওয়ার জন্য রুদ্রের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছিল।
— ওহ হ্যাঁ বলেছিলে। আর এই কথাটা তুমি কীভাবে জানলে?
— আমার সব কথা এখনো শেষ হয়নি। আমি পুরো ঘটনাটা বললেই সবটা তোমার কাছে ফুটে উঠবে।
— আচ্ছা বলো এসব কীভাবে জানলে?
ফ্লাস ব্যাক
নিরার যেহেতু বিয়ের বয়স হচ্ছিল তাই বিভিন্ন জায়গা থেকে ওর জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসছিল। রায়ান সাহেব যেহেতু জানতেন ওনার মেয়ে রুদ্রকে পছন্দ করে তাই তিনি প্রতিবারই না করে দিতেন। একবার হঠাৎ ওনার কিছু একটা মনে হলো তাই উনি নিরাকে এই বিয়ের বিষয়ে বললেন। নিরা একটু সময় চাইল। তিনি ভেবেছিলেন নিরা হয়তো পরে না করে দিবে। কিন্তু ওনাকে অবাক করে দিয়ে নিরা বিয়েতে রাজি হয়ে গেল। নিরার রাজি হওয়ার কথা শুনে তিনি খুবই অবাক হলেন। কারণ তিনি জানতেন রুদ্র আর নিরা সম্পর্কে আছে। তাই নিরার বিয়েতে রাজি হওয়ার বিষয়টা কিছুতেই ওনার মাথায় ঢুকছিল না। রাতে উনি রুমে বসে নিরার বিষয়ে ভাবতে লাগলেন।
— নিরা তো রুদ্রকে পছন্দ করে। তাহলে হঠাৎ বিয়েতে কেন রাজি হলো? আচ্ছা ওদের দুজনের মধ্যে কি কোনো সমস্যা হয়েছে? হতেও পারে। হয়তো ওদের মধ্যে কোনো ঝামেলা হয়েছে। আর নিরা অভিমান করে বিয়েতে রাজি হয়েছে। তাহলে তো এটা ঠিক হবে না। কারণ অভিমান ভেঙে গেলে নিরা তখন আফসোস করবে। আমার ওর সাথে একবার এই বিষয়ে কথা বলা উচিত। কিন্তু আমার এই বিষয় নিয়ে কথা বলাটা কি ঠিক হবে? কি বলবো ওকে যে আমি ওদের বিষয়ে জানি? এতে তো নিরা অপ্রস্তুত হয়ে পড়তে পারে। কিন্তু এই বিষয়ে না বললেও তো হবে না। আচ্ছা একবার ওর সাথে কথা তো বলে আসি।
বলেই তিনি উঠে দাঁড়ালেন। নিরার রুমের সামনে যেতেই দরজার এপাশ থেকে তিনি শুনতে পেলেন নিরা কারো সাথে ফোনে কথা বলছে। তিনি আরেকটু মনোযোগ দিলে শুনতে পেলেন,
— বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে। ভাবছি এবার বিয়েটা করেই ফেলব।
— কি বলছিস? রুদ্র! তুই ভালো করেই জানিস আমি রুদ্রের সাথে শুধুমাত্র প্রেমের অভিনয় করেছি। রাহিয়া ওকে তিন বছর ধরে পছন্দ করে। তাই রুদ্রের সাথে এতোদিন এই অভিনয় করেছি। শুধুমাত্র রাহিয়াকে কষ্ট দেওয়ার জন্য ওকে সহ্য করতে হয়েছে। নাহলে ওর সাথে সম্পর্কে যাওয়ার একদমই ইচ্ছা ছিল না আমার। তাই এখন যেহেতু ভালো কাউকে পেয়ে গেছি রুদ্রকে দিয়ে এখন কি করব? আমি তো এখন একে বিয়ে করব।
— রাহিয়া? আরে ওর কথা বাদ দে। এখন যদি ও রুদ্রকে বিয়েও করে তাহলে আমার কোনো সমস্যা নেই। কারণ সে তো আমার ব্যবহৃত জিনিস।
এরপর নিরা আরও বিভিন্ন কথা বলতে লাগল। সে এতোদিন রাহিয়াকে নিচু করার জন্য কি কি করেছে সব একে একে বলতে শুরু করল। এসব শুনে রায়ান সাহেব মনের দিক থেকে একদম ভেঙে পড়লেন। ওনার মেয়ের এমন আচরণ ওনাকে খুবই হতাশ করল। তিনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুমে চলে এলেন। যেহেতু নিরা এখন আর রুদ্রকে পছন্দ করে না তাই তিনি ঠিক করলেন এর সাথে নিরার বিয়ে দিবেন। তারপর ওই ছেলের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে যখন দেখলেন ছেলেটা ভালো তখন আর বিয়েতে না করলেন না।
বর্তমান
সব কথা বলা শেষ করে রায়ান সাহেব ওনার স্ত্রীর দিকে তাকালেন। মিসেস নাদিয়া শীতল চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে রইল। সেটা দেখে তিনি মুচকি হেসে বলে উঠলেন,
— এরপর নিরার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর রুদ্র তখন রাহিয়ার পেছনে পড়ল। নিরাকে পায়নি বলে সে তখন রাহিয়ার সাথে আবার ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে চাইল। কিন্তু এই বিষয়টা আমার কাছে একদমই ভালো লাগেনি। আর এরপর থেকেই রুদ্রকে আমার আর পছন্দ না। বিশেষ করে আমার মেয়েকে বিয়ে করার জন্য তো একদমই না।
তখন মিসেস নাদিয়া মলিন মুখে বলে উঠলেন,
— যতই হোক রুদ্র থেকে এখানে আমাদের মেয়েরই দোষ বেশি। নিরার এসবের শুরু করেছিল। কিন্তু ও যে কেন এগুলো এমন করল বুঝলাম না?
— যাইহোক, এখন তো আমাদের দুই মেয়েই ভালো আছে। এখন পুরোনো কথা ভেবে কি লাভ? আর তূর্য খুবই ভালো ছেলে। ও রাহিয়াকে খুব ভালো রাখবে। তাই আমার মনে হয় এসব অতীত ভুলে যাওয়া। আর আমাদের মেয়েদের সাথে স্বাভাবিক হওয়া।
— হ্যাঁ তুমি ঠিক বলেছ। কিন্তু এখানে তোমারও দোষ ছিল।
কথাটা শুনে তিনি অবাক হয়ে বলে উঠলেন,
— আমার দোষ? কিন্তু আমি আবার কি করে ছিলাম?
— এই যে তুমি পরপর দুইবার লুকিয়ে তোমার মেয়েদের কথা শুনেছ।
— কিন্তু এটা না করলে তো জানতেই পারতাম না।
— হুম সেটা ঠিক। কিন্তু কাজটা করা তোমার একদমই উচিত হয়নি।
বিছানা থেকে কিছুটা দূরত্বে রাহিয়া দাঁড়িয়ে আছে। এই প্রথম সে কোনো পুরুষের সাথে এক বিছানায় ঘুমাবে। বিষয়টা ভাবতেই তার খুবই অন্য রকম লাগছে। তাকে এভাবে দেখে তূর্য পেছনে থেকে বলে উঠল,
— তুমি ঘুমাবে না? এখানে দাঁড়িয়ে কি করছ?
— না যাচ্ছি।
বলেই সে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল। তূর্য বিছানায় শুয়ে তাকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল। তার এমন কাজে রাহিয়া আরও নার্ভাস হয়ে গেল। সে নিজেকে ছাড়াতে চাইলে তূর্য তাকে আরও শক্ত করে ধরল। তাই সে আর কোনো উপায় না পেয়ে ওভাবেই ঘুমিয়ে গেল। পরদিন সকালে রাহিয়া ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখল তূর্য রুমে নেই। সে বারান্দার সামনে আসতেই দেখল তূর্য কারো সাথে ফোনে কথা বলছে। সে সামনে এগিয়ে যেতেই তূর্য ফোন কেটে দিল। তূর্য উল্টা দিকে ঘুরে থাকায় তাকে দেখতে পায়নি। সে পেছনে ঘুরতেই রাহিয়াকে দেখে চমকে উঠল। তারপর নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে উঠল,
— তুমি এখানে?
— আসলে আপনাকে রুমে দেখতে না পেয়ে এখানে এসেছিলাম।
চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )