#প্রেমপ্রেয়সী
#পর্ব_১৯
#লেখিকা_N_K_Orni
হঠাৎ রুমের দিকে কারো আসার আওয়াজ শুনতে পেরে রাহিয়া বুঝতে পারল তূর্য আসছে। তাই সে কিছুটা ঠিক হয়ে বসল। তূর্য রুমে এসে তার সামনে গিয়ে বসল। রাহিয়া ঠিক হয়ে বসলেও মনে মনে সে খুবই অস্বস্তি অনুভব করছিল। হুট করে বিয়ে ঠিক হওয়ায় রুদ্রের সাথে তার তেমন একটা কথা হয়নি। সম্পূর্ণ নতুন একটা পরিবেশে একজন অল্প চেনা মানুষের সঙ্গে একা থাকতে তার খুবই অস্বস্তি লাগছে। যদিও তূর্যর সাথে তার কয়েকবার কথা হয়েছে। তবুও এটুকু সময়ের মধ্যে সে জড়তা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। রাহিয়া মুখে তেমন কিছু একটা বললেও তূর্য তাকে দেখে বুঝতে পারল সে অস্বস্তি অনুভব করছে। তাই সে রাহিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
— তোমার খারাপ লাগছে না এসব পরে থাকতে? যাও দ্রুত গিয়ে বদলে এসো। এখনো এসব ভারী ড্রেস পরে বসে আছো কেন?
কথাটা শুনে রাহিয়া একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল। তারপর উঠে গিয়ে দাঁড়াতেই তূর্য রুম থেকে বারান্দায় চলে গেল। বেশ কিছুক্ষণ পর সে রুমে আসতেই দেখল রাহিয়া ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছে। তার পরণে থাকা কালো শাড়ি আর কোমর পর্যন্ত বেয়ে পড়া খোলা চুলে তাকে খুবই মায়াবী লাগছে। তূর্য এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইল। রাহিয়া তার একদম সামনে এসে দাঁড়াতেই তার ঘোর ভাঙল। প্রথমে সে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেও পরে নিজেকে সামলে বলে উঠল,
— বারান্দায় যাবে? চলো আমি আর তুমি ওখানে গিয়ে কিছুক্ষণ কথা বলে আসি। তাহলে তুমি আমার সাথে কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারবে।
কথাটা শুনে রাহিয়া সাথে সাথে রাজি হয়ে গেল। এরকম কিছু শুনে সে মনে মনে বেশ খুশি হয়ে গেল। সে মনে মনে এমন কিছুই শুনতে চাচ্ছিল। সে তূর্যর সামনে বেশ অস্বস্তি অনুভব করছিল। এটা করতে তার জড়তা কিছুটা হলেও কাটতে পারে। তূর্য রাহিয়াকে নিয়ে বারান্দায় গেল। তারা দুজন একসাথে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখতে লাগল। যদিও আকাশে আজ তেমন কিছুই নেই। কয়েকটা তারা আর আকাশের একদম মাঝে থাকা একটা অর্ধেক চাঁদ। তবুও আকাশের তাকিয়ে থাকা শুধুই একটা অজুহাত মাত্র। আসলে তারা তো সেদিকে তাকিয়ে নিজেরা কি দিয়ে কথা শুরু করবে সেটাই ভাবছে। তূর্য অবশ্য ইচ্ছা করেই চুপ করে আছে। কারণ সে চায় রাহিয়া নিজে থেকেই তাকে কিছু বলুক। তবে বেশ কিছুক্ষণ নীরবতা থাকার পর সে ঠিক করে সে এবার নিজে থেকেই কথা শুরু করবে। কিন্তু তার সেটা করার আগেই রাহিয়া বলে উঠল,
— আজকের চাঁদটা অর্ধেক হলেও সেটা সুন্দর।
কথাটা শুনে তূর্য মুচকি হেসে সামনের দিকে তাকানো অবস্থাতেই বলে উঠল,
— হ্যাঁ সুন্দর কিন্তু তোমার মতো এতো সুন্দর না।
তূর্যর এসব কথা শুনে সে তার দিকে কিছুক্ষণ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠল,
— এই ধরনের কথা প্রেমিক প্রেমিকারা বলে। আপনি এই ধরনের কথা কেন বলছেন?
তূর্য এবার তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
— কেন? আমরা কি প্রেমিক প্রেমিকা না? যেহেতু নই তাহলে আমরা কি প্রেমিক প্রেমিকা হতে পারি?
কথাটা শুনে রাহিয়া খুবই অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। সে কীভাবে কথা এড়িয়ে যাবে সেটা ভাবতেই তার কিছু কথা মনে পড়ে গেল। সে নিচের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবল,
— এখনই সুযোগ আমার অতীতের সব কথা ওনাকে বলে দেওয়া। পরে হয়তো এই সুযোগ নাও পেতে পারি। আমি চাই আমাদের সম্পর্কের শুরুটা কোনো মিথ্যা বা গোপনীয়তা নিয়ে শুরু হোক।
— আপনাকে আমার কিছু বলার ছিল। আমি আপনাকে আমার অতীত সম্পর্কে বলতে চাই।
— কিন্তু আমি এসব কথা শুনতে চাই না। তোমার অতীত শুনে আমি কি করব? আমার কাছে অতীত শুধু অতীতই। আমি অতীত থেকে বর্তমানকে বেশি গুরুত্ব দেই।
— কিন্তু এসব কথা না শুনলে আপনাকে পরে আফসোসও করতে হতে পারে। তাই চাই আপনাকে আমার অতীতের সব কথা বলতে।
— না এমনটা হবে না। তাই তুমি অতীতের বিষয়ে চিন্তা করা বাদ দিয়ে বর্তমান নিয়ে ভাবো।
কথাটা শুনে রাহিয়া তার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তূর্য রাহিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,
— আপনি যেখানে নিজের অতীত তোমাকে বলছি না সেখানে তুমি কেন বলবে? ভালো এটাই হবে দুজনেই দুজনের অতীত জানা থেকে বিরত থাকি। কারণ এতেই তোমার ভালো হবে।
— আচ্ছা আপনাকে দেখলে আমার বেশ চেনা চেনা লাগে। প্রথম দিন আপনাকে দেখে আমার মনে হয়েছিল আমি আগেও আপনাকে দেখেছি।
— তুমি ছোট থাকতে আমাকে কয়েকবার দেখেছিলে।
— না। আমি আপনার এই চেহারার কথা বলছি। বড়ো হওয়ার পরের এই চেহারাটা দেখেছি। আমি বাংলাদেশে আসার পর আমি কি আপনাকে কোথাও দেখেছি?
তূর্য এবার রাহিয়ার বেশ কাছাকাছি এসে বলে উঠল,
— তোমার স্মৃতিশক্তি দেখছি খুবই খারাপ।
— কেন?
— আমাদের তো দেখা হয়েছিল। আমি তোমার ড্রেসে পানি ফেলে দিয়েছিলাম।
রাহিয়া কিছুক্ষণ ভেবে অবাক হয়ে বলে উঠল,
— ওহ তাহলে ওটা আপনি ছিলেন? আসলে আমি সামনে দিকে তেমন তাকাইনি। আমি শুধুমাত্র এক নজর ওনার মুখটা দেখেছিলাম। তার মানে ওই দিন আপনি ছিলেন?
তূর্য রাহিয়ার প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে মুচকি হেসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। হঠাৎ এমন করায় রাহিয়া স্তব্ধ হয়ে গেল। সে একদম মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইল। তাকে এমন ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তূর্য হালকা হেসে বলে উঠল,
— চলো রুমে যাই। অনেক রাত হয়ে গেছে। এখন তোমার ঘুমানো দরকার।
রাহিয়াও তূর্যর কথাই সম্মতি জানাল। তাই সে তূর্যর সাথে রুমের ভেতরে চলে গেল। রায়ান সাহেব মন খারাপ করে রুমে বসে ছিলেন। আজকে তার মেয়ে এই বাসা ছেড়ে চলে গেছে। এখন সে অন্য পরিবারের সদস্য। তখন মিসেস নাদিয়া রুমে এসে ওনাকে এভাবে দেখে ওনার কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন।
— তুমি এমন সময় কেন বিয়ে দিলে যে নিরা বিয়েতে থাকতে পারল? তুমি তো জানতে এই সময় ওরা ঘুরতে গেছিল। তাহলে কেন এই সময়ে তুমি বিয়ের তারিখ ঠিক করলে? আচ্ছা তুমি এটা ইচ্ছা করে করেছো তাই না?
স্ত্রীর কথা শুনে তিনি তার দিকে তাকালেন। কিছুক্ষণ চুপ থেকে শীতল কন্ঠে বলে উঠলেন,
— হুম। তুমি একদম ঠিক ধরেছ।
— কিন্তু কেন? তুমি এমনটা কেন করলে? নিরার কি তার বড়ো বোনের বিয়েতে আসার অধিকার নেই? সে আসলে কি হতো?
— সে এলে নিশ্চয়ই কোনো না কোনো ঝামেলা করত।
— এমন ভাবে বলছ কেন? আচ্ছা তুমি এসব কেন বলো? আজকে তোমার আমাকে সব বলতেই হবে। আমি কোনো না শুনতে চাই না।
— আচ্ছা। কিন্তু তার আগে নিজেকে শক্ত করে নেও।
— আচ্ছা। এবার তুমি বলো।
তিনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করলেন,
— নিরা রাহিয়াকে একদমই পছন্দ করে না। সে সবসময় রাহিয়াকে নিজের শত্রু হিসেবে দেখে এসেছে। সে তাকে খুব হিংসাও করে। ভার্সিটিতে ওঠার পর থেকেই রাহিয়া রুদ্রকে পছন্দ করতে শুরু করল। দুই বছরের মধ্যে নিরা এটা বুঝতে পেরে যায়। তাই সে শুধুমাত্র রাহিয়াকে পেছনে ফেলার জন্য রুদ্রের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। রাহিয়া এই কথাটা সবসময় নিজের মনের মধ্যেই রেখেছিল। কিন্তু একটা সময় সে আর এই কথা না বলে থাকতে পারে না। সে ঠিক করে সে তার মনের কথা রুদ্রকে বলে দিবে।
একটুকু বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন তিনি।
চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )