#প্রেমপ্রেয়সী
#পর্ব_১৮
#লেখিকা_N_K_Orni
লোকটা রাহিয়ার মুখ ছেড়ে দুই হাত শক্ত করে ধরতেই মনে অজান্তে তার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো,
— রুদ্র!
কথাটা শুনে পেছনে থাকা রুদ্র একইভাবে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই হেসে উঠল। কিছুক্ষণ পর সে হাসি থামিয়ে বলে উঠল,
— ওহ আওয়াজ শুনেই বুঝে গেছ যে আমি কে? এটা দ্বারাই বোঝা যায় যে তুমি এখনো আমাকে পছন্দ করো।
— এসব তোমার ভুল ধারণা। তার আগে বলো আমাকে এখানে কেন ডেকেছ?
— কেন বুঝতে পারছ না? আমি কখনোই তোমার বিয়ে অন্য কারো সাথে হতে দিব না। তুমি শুধু আমার। তোমার বাবা আমাকে নিষেধ করে দিল আর তুমি ভাবলে তুমি আমার থেকে ছাড়া পেয়ে গেছ। কিন্তু তোমার ধারণা ভুল। আমি কিছুতেই তোমার বিয়ে অন্য কারো সাথে হতে দেব না।
কথাটা শুনে রাহিয়া নিজেকে রুদ্রের থেকে ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করতে করতে বলে উঠল,
— তুমি এতোটা খারাপ মানুষ সেটা আমি কখনোই আশা করিনি। তুমি কি জানো তুমি দিন দিন একদম নিচের স্তরে চলে যাচ্ছ?
— আচ্ছা তাই নাকি? তা তুমিও কি খুব ভালো মেয়ে নাকি? আমি ভাবতাম তুমি অত্যন্ত ভদ্র একটা মেয়ে। কিন্তু সেসব সম্পূর্ণ আমার ভুল ধারণা। তুমি প্রথমে আমাকে বললে আমাকে পছন্দ করো। পরে আমি বিয়ে চাইলে না করে দিলে। আর তোমার প্রেমিককে দিয়ে আমার অবস্থা খারাপ করে দিলে। আর এখন আমাকে আর তোমার ওই প্রেমিককে বাদ দিয়ে অন্য একটা ছেলেকে বিয়ে করতে যাচ্ছো? তো তুমি কি নিজেকে অনেক সরল মনে করো নাকি?
কথাটা শুনে রাহিয়া একদম চুপ হয়ে গেল। সে মনে মনে ভাবতে লাগল,
— প্রেমিক! রুদ্র কার কথা বলছে? আর ওর অবস্থার জন্য কেই বা দায়ী? ও সেই লোকটার কথা বলছে না তো যে আমাকে গিফট দিত?
— রুদ্র তুমি কার কথা বলছ?
— অভিনয় একটু কম করো। এমন ভাবে কথা বলছ যেন তুমি তাকে চিনোই না।
ওর কথা শুনে রাহিয়া বুঝতে পারল এর থেকে কিছু জানা যাবে। তাই সে ওর থেকে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু আজকে জায়গাটা এতোটাই নির্জন হয়ে গেছে যে সে ছাড়া পাওয়ার কোনো আশাই দেখছে না। তারপরও সে ব্যর্থ চেষ্টা করে বলে উঠল,
— রুদ্র আমাকে প্লিজ ছেড়ে দেও। আমি বাসায় যাব।
— যাবে বাসায়। কিন্তু সেটা আমাদের বিয়ের পর। আমি আর তুমি এখন বিয়ে করব। তারপরই তুমি বাসায় যেতে পারবে। তাই এটাই ভালো হবে যে তুমি…
কথাটা শেষ করার আগেই রুদ্র চুপ হয়ে গেল। হঠাৎ অস্ফুট স্বরে বলে উঠল,
— আহ্।
রাহিয়া রুদ্রকে চুপ করে যেতে দেখে পেছনে তাকালো। তখনই রুদ্রের হাত দুটো হালকা হয়ে তার হাতের উপর থেকে সরে যেতে লাগল। কিছুক্ষণের মধ্যেই রুদ্র ওর থেকে সরে গিয়ে তার ডান হাত চেপে ধরল। সে যেতেই রাহিয়া সামনে একজন লোককে দেখতে পেল। সে কালো একটা হুডি পড়া যার কারণে চেহারা বেশিরভাগ অংশই ঢাকা। আর মুখে মাক্স আর হাতে গ্লাভস থাকায় বাকি অংশগুলোও দেখা যাচ্ছে না। রাহিয়া দেখল লোকটা হাতে একটা পি*স্ত*ল। সে বুঝল লোকটা রুদ্রের হাতে গু*লি মেরেছে। কিন্তু সাইলেন্সার থাকায় কোনো শব্দ হয়নি। এসব দেখে রাহিয়া মনে মনে বলল,
— এটা কি সেই লোকটা? হতে পারে। না আমাকে এখন এখান থেকে পালাতে হবে। এখনই সুযোগ এখান থেকে পালানোর। পরে এই সুযোগ আর আসবে না। একজনের থেকে ছাড়া পেয়ে অন্যজনের হাতে ব*ন্দী হওয়ার আগেই আমাকে পালাতে হবে।
এটা ভেবে রাহিয়া আর এক মূহুর্ত ওখানে না থেকে নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে দৌড়াতে লাগল। সেই লোকটা একবার তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে তারপর রুদ্রের দিকে তাকাল। এরপর সে রুদ্রের পায়ে একটা গু*লি করে দিয়ে দিল। রুদ্র এবার ব্যথায় হালকা চিকিৎসার করে উঠল। এদিকে রাহিয়া দৌড়াতে দৌড়াতে প্রায় তার বাসার কাছে চলে এলো। ওখানে এসে সে দৌড়ানো বন্ধ করে একটা বড়ো দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
এবার সে নিজেকে ভালো করে দেখে নিল যে সব ঠিক আছে কিনা। তারপর নিজেকে স্বাভাবিক করে সে হাঁটতে হাঁটতে বাসার ভেতরে চলে গেল। বাসায় গিয়ে সে প্রথমেই তার রুমে চলে গেল। রুমে গিয়ে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বিছানায় বসে পড়ল। তারপর একটু আগের ঘটে যাওয়া সব কথা মনে করতে লাগল। এসব কথা ভাবতেই সে নিজেই নিজেকে বলতে লাগল,
— আমাকে এতোটা বোকামি কীভাবে করলাম? একজন বলল আর আমি তার সাথে দেখা করতে চলে গেলাম? আর সাথে ফোনটাও নিয়ে যাইনি। অল্প একটুর জন্য আমি অনেক বড়ো একটা বিপদ থেকে বেঁচে গেলাম। আরেকটু হলেই এমন একটা দূ*র্ঘটনা ঘটে যেত যার জন্য আমাকে সারাজীবন আফসোস করতে হতো। আজকে আমি শুধুমাত্র মাত্র ওই লোকটার জন্য বেঁচে গেছি।
বলেই সে ঠাস করে বিছানায় শুয়ে পড়ল। হঠাৎ তার কিছু একটা মনে পড়তেই সে মনে মনে ভাবতে লাগল,
— ওই লোকটার জন্য আমি আজকে বেঁচে গেছি এটাও কোনো ভালো কথা না। এবার তো ওই লোকটা আমার বিয়ে আটকানোর চেষ্টা করবে। এখন আমি কি করব?
এসব ভেবে সে বেশ চিন্তায় পড়ে গেল। এরপর সে নিজেই নিজেকে মিথ্যা শান্তনা দিয়ে বলে উঠল,
— আমি এসব উল্টাপাল্টা কথা কেন ভাবছি? হতেও তো পারে এটা সেই লোকটা না, এটা অন্য কেউ। হয়তো এটা রুদ্রের কোনো শ*ত্রু হবে। সেই লোকটা হলে তো আমাকে এতো সহজে ছেড়ে দিত না। হ্যাঁ তাই হবে। এখন আমি এসব নিয়ে চিন্তা বাদ দেই।
বলেই সে ওখানে ওভাবেই শুয়ে রইল। সে এসব নিয়ে চিন্তা করবে না মনে মনে বললেও। একটু পরে তার ঠিকই চিন্তা হতে লাগল। ধীরে ধীরে রাতটা কেটে গেল। রাহিয়া পুরো রাতটা বিভিন্ন চিন্তাভাবনা করেই কাটিয়ে দিল। পরদিন সকালে উঠে রাহিয়া ভাবতে লাগল,
— আচ্ছা আমি যে এসব কথা তূর্যকে বলিনি এর জন্য কি পরে উনি আমার উপর রাগ করবেন? কিন্তু সবকিছুই এতো তাড়াতাড়ি হয়ে গেল যে আমি এসব বলার সুযোগই পাইনি। আর কিই বা বলতাম? আমার জীবনের সবকিছুই যে অদ্ভুত?
এসব ভেবেই সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। দেখতে দেখতে রাহিয়ার বিয়েটা হয়ে গেল। বিয়েটা হওয়া পর্যন্ত রাহিয়া পুরোটা সময় চিন্তায় ছিল যে আবার কোনো সমস্যা না হয়। কিন্তু বেশ ভালোভাবেই তাদের বিয়েটা সম্পন্ন হলো। বিকালের পর বিদায়ের সময় রায়ান সাহেব রাহিয়ার হাত তূর্যের হাতে তুলে দিয়ে অনেক কথা বললেন। রাহিয়া বিভিন্ন চিন্তায় সারারাত ঘুমায়নি আর সারাদিন এতোকিছু হওয়ায় সে বেশ ক্লান্ত হয়ে গেল। তাই গাড়িতে ওঠার কিছুক্ষণের মধ্যেই সে ঘুমিয়ে পড়ল।
তূর্য রাহিয়ার পাশেই বসে ছিল। হঠাৎ তার কাধে রাহিয়ার মাথা পড়তেই সে খুবই অদ্ভুত অনুভব করল। সে রোবটের মতো মাথা ঘুরিয়ে পাশে তাকালো। তার কাধে রাহিয়ার মাথা দেখে সে একটা মুচকি হাসি দিল। ওদের তূর্যর বাসায় যেতে যেতে প্রায় রাত হয়ে গেল। বাসার সামনে আসতেই তূর্য রাহিয়াকে ডেকে ঘুম থেকে তুলল। সব নিয়মকানুন শেষ করে রাহিয়াকে তূর্যর রুমে দিয়ে যাওয়া হলো। রাহিয়া বিছানায় বসে রুমের চারদিকে চোখ বুলাতে লাগল। হঠাৎ রুমের দিকে কারো আসার আওয়াজ শুনতে পেরে সে বুঝতে পারল তূর্য আসছে। তাই সে কিছুটা ঠিক হয়ে বসল।
চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )