#প্রেমপ্রেয়সী
#পর্ব_১৩
#লেখিকা_N_K_Orni
— আমি তো এসব বিষয় আগে ভেবে দেখিনি। আমি মেয়ের একদিকে ভালো করতে গিয়ে অন্য দিক খারাপ করে ফেলেছি। আমার রাহিয়ার আগে নিরাকে বিয়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। বিয়ের বয়স হওয়া সত্ত্বেও তার আগে তার ছোট বোনকে বিয়ে দেওয়া আমার একদমই ঠিক হয়নি। এতে নিশ্চয়ই রাহিয়া খুবই কষ্ট পেয়েছে। আমার উচিত ছিল আগে রাহিয়াকে বিয়ে দেওয়া। আমি না বুঝেই রাহিয়াকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। কিন্তু এবার আমাকে কিছু একটা করতেই হবে। এভাবে চুপ করে বসে থাকলে হবে না।
বলেই রায়ান সাহেব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। এদিন ওই মহিলা মিসেস নিরাকে বিভিন্ন রকম কথা বলে যাচ্ছেন। কিন্তু মিসেস নিরা সেগুলো মাথায়ই নিচ্ছেন না। তিনি দূর থেকে এসব কিছুক্ষণ দেখে রুমে চলে গেলেন। সন্ধ্যার পর রাহিয়া তার রুমে বসে ছিল। হঠাৎ তার কিছু একটা মনে পড়ে গেল তাই সে উঠে দরজার কাছে গেল। তারপর চারপাশে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে দেখে দরজা লাগিয়ে দিল। তারপর রুমে এসে সেই দিনের সেই বক্সটা বের করে বিছানায় রাখল। রাহিয়া বক্সটা খুলতে খুলতে বলে উঠল,
— খাবারের উপর কখনো রাগ করে থাকতে হয় না। আর চকলেটের উপর তো একদমই না। যেহেতু কে এগুলো দিচ্ছে জানিনা তার ফেরত তো দিতে পারব। আর ফেলে দেওয়াও ঠিক হবে না। তাই এগুলো আমাকেই খেতে হবে। নাহলে ধীরে ধীরে এগুলো নষ্ট হবে। আর খাবার নষ্ট করা ঠিক না।
বলেই সে দাঁত বের করে একটা হাসি দিল। সে কাগজটা পাশে রেখে ওখান থেকে একটা চকলেট বের করে খেতে শুরু করল। রাহিয়া খেতে খেতে বলে উঠল,
— নাহ, যে এগুলো আমাকে দিচ্ছে সে ওতোটাও খারাপ না। আমার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল কেউ যেন আমাকে এভাবে গিফট দেয়। একদিক দিয়ে আমার এই ইচ্ছাটা পূরণ হয়ে গেল।
কিছুক্ষণ পর তার ফোনে ম্যাসেজ আসার শব্দ এলো। রাহিয়া ম্যাসেজটা দেখার জন্য ফোনটা হাতে নিল। সে ম্যাসেজটা পড়তেই স্তব্ধ হয়ে গেল। সেখানে লেখা ছিল, “আমাকে ভালো বলার জন্য ধন্যবাদ। তুমি চাইলে আমি আরও জিনিস তোমাকে দিতে পারি।”
ম্যাসেজটা আরেকবার পড়ে রাহিয়া আশেপাশে তাকাতে লাগল। কিন্তু কোনো কিছুই তার নজরে পড়ল। সে সাথে সাথে নম্বরটার দিকে তাকালো। কিন্তু সে দেখল এখানে এগারোটা নম্বর নেই। এটা দেখে বুঝতে পারল লোকটা নম্বর লুকিয়ে ম্যাসেজ দিয়েছে। সে সাথে সাথে নম্বরটাতে কল দিল। কিন্তু সে কল দিতেই নম্বরটা বন্ধ বলল। সে হতাশ হয়ে ফোনটা পাশে রাখতেই ফোনে আবারও ম্যাসেজ আসার শব্দ এলো। সে ফোন হাতে নিতেই দেখল আবারও সেই নম্বর থেকে ম্যাসেজ এসেছে। এটা দেখে সে খুবই অবাক হয়ে গেল। কারণ সে একটু আগে যখন কল দিয়েছিল তখন ফোন বন্ধ বলল। কিন্তু এখন আবার সেই নম্বর থেকেই ম্যাসেজ এলো। সে ম্যাসেজটা খুলে পড়তে শুরু করল। সেখানে লেখা ছিল, “আমাকে কল দিয়ে কোনো লাভ হবে না। আমার যখন সময় হবে তখন আমি নিজেই তোমার সামনে আসব। তাই এখন আমাকে নিয়ে চিন্তা করা বন্ধ করো।”
ম্যাসেজটা পড়ে রাহিয়া কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেল। সে মনে মনে ভাবতে লাগল,
— কে এই লোকটা? আর এ আমার কথা শুনল কীভাবে? এ কি বাসায়ও আমার উপর নজর রাখছে? কিন্তু কীভাবে?
এরকম বিভিন্ন প্রশ্ন তার মনে এসে ভীড় করতে লাগল। রাতে মিসেস নাদিয়া ওনার রুমে গেলেন। ওনার স্বামীকে কিছুটা চিন্তিত থাকতে দেখে বলে উঠলেন,
— কি নিয়ে এতো গভীরভাবে ভাবছ? কোনো সমস্যা হয়েছে? কি নিয়ে এতো চিন্তাভাবনা করছ?
স্ত্রী কথায় উনি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বলে উঠলেন,
— তেমন কিছুই না। ভাবছিলাম আমার এবার রাহিয়ার বিয়ের ব্যবস্থা করা উচিত। এই বিষয়েই একটু ভাবছিলাম।
— ঠিকই আছে। এবার তোমার এই বিষয়ে একটু ভাবা দরকার।
দেখতে দেখতে বেশ কয়েকদিন কেটে গেল। রাতে রাহিয়া তার রুমে বসে ফোন দেখছিল। তখন ওর রুমে মিসেস নাদিয়া এলেন। রাহিয়া ওনাকে দেখে ফোনটা পাশে রেখে বলে উঠল,
— কিছু বলবে আম্মু?
— কালকে তোর কোথাও যাওয়ার দরকার নেই। কালকে তোকে বাসায় থাকতে হবে।
— কেন?
— কালকে তোকে দেখতে আসবে।
কথাটা শুনে রাহিয়া বেশ অবাক হয়ে বলে উঠল,
— কিইই!
তখনই রুমে রায়ান সাহেব প্রবেশ করলেন। মিসেস নাদিয়া ওকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই তিনি বলে উঠলেন,
— নাদিয়া তুই বাইরে যাও। আমি রাহিয়ার সাথে কথা বলছি।
কথাটা শুনে মিসেস নাদিয়া আপত্তি করে বলে উঠলেন,
— কিন্তু?
— আমি তোমাকে যেতে বলেছি। রাহিয়াকে আমিই বুঝিয়ে দেব। তুমি এখন যাও।
— আচ্ছা।
বলেই তিনি বেরিয়ে গেলেন। রায়ান এবার মেয়ের সামনে গিয়ে বসলেন। ওনাকে বসতে দেখে রাহিয়া বলে উঠলেন,
— বাবা আমাকে দেখতে আসবে মানে? তুমি কি আমাকে বিয়ে দিয়ে দিতে চাচ্ছো?
— দেখো মা আমি তোমার আগে তোমার ছোট বোনের বিয়ে দিয়ে ভুল করেছি। তাই আমি এখন চাই তোমার বিয়েটা দিতে। তোমার আগে তোমার ছোট বোনের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় নিশ্চয়ই তোমার খুবই খারাপ লেগেছে।
— না বাবা। নিরার আগে বিয়ে হওয়ায় আমার একটুও খারাপ লাগেনি।
— কিন্তু আমি তো খুবই অনুশোচনায় ভুগছি। আমি তো ভুলেই গেছিলাম তোমারও বিয়ের বয়স হয়েছে।
কথাটা শুনে রাহিয়া কোনো কথা বলল না। সে চুপ করে শুনতে লাগল। তাকে চুপ করে থাকতে দেখে তার বাবা আবারও বলে উঠলেন,
— তা এখন এই বিষয়ে কি ভাবলে?
রাহিয়া কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে উঠল,
— আচ্ছা বাবা তুমি যা ভালো মনে করো তাই করো।
কথাটা শুনে তিনি খুশি হয়ে বলে উঠলেন,
— তাহলে কালকে ওনাদের আসতে বলে দেই?
রাহিয়া মাথা নাড়িয়ে বলল,
— আচ্ছা।
কথাটা শুনে তিনি মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বেরিয়ে গেলেন। তিনি ওখান থেকে বেরিয়ে রুমে চলে গেলেন। রুমে যেতেই মিসেস নাদিয়া ওনার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল,
— মেয়ে এই বিষয়ে কি বলল?
— রাজি হয়ে গেছে।
কথাটা শুনে মিসেস নাদিয়া খুশি হয়ে গেলেন।
— হঠাৎ এসে বললে কালকে ওকে দেখতে আসবে। তা এতো তাড়াতাড়ি ছেলে পেলে কোথায়?
— আমার খোঁজা লাগেনি। আমার কাছে নিজে থেকেই এসেছে।
এদিকে রাহিয়া তার রুমে বসে একটু আগের কথা মনে করছে। এসব কথা মাথায় আসায় ভাবতে লাগল,
— এখন আমি কি করব? বাবা মা তো আমার বিয়ে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে। আমার কি রাজি হওয়া উচিত? আচ্ছা কালকে এই বিষয়ে ভাবা যাবে।
পরদিন বিকালে রাহিয়াকে দেখতে এলো। সব রকম কথা শেষ করে তারা সন্ধ্যায় চলে গেল। ওনারা যেতেই রাহিয়া তার রুমে চলে গেল। মিসেস নাদিয়া তখন ওনার স্বামীকে জিজ্ঞাসা করলেন,
— কি মনে হয় তোমার এই বিষয়ে? বিয়েটা কি এখানে হবে?
— জানিনা। তবে সব দিক থেকে এরা আমার রাহিয়ার যোগ্য। যেহেতু এরা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে তাই বিয়েটা হতেও পারে।
— কিন্তু ছেলেকেই তো নিয়ে আসেনি। তাই এই বিষয়ে নিশ্চিত না হওয়াই ভালো।
— ওহ। তুমি এই বিষয়ে চিন্তা করো না। ছেলেই রাহিয়াকে পছন্দ করেছে।
— কিন্তু তবুও…
— আরে এখনই বিষয়ে এতো চিন্তা করছ কেন? এসব বিষয়ে পরে কথা বলা যাবে।
রাহিয়া রুমে এসে জামাকাপড় বদলে বিছানায় এসে বসল। বেশ কিছুক্ষণ পর তার ফোনে একটা ম্যাসেজ এলো। সে ফোন হাতে নিতেই দেখল সেই নম্বর থেকে ম্যাসেজ এসেছে। সেখানে লেখা ছিল,
“তুমি কীভাবে ভাবলে আমি তোমাকে অন্য কারো সাথে হতে দেব? এটা কখনোই হবে না।”
চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )