প্রেমপ্রেয়সী পর্ব ১

0
1958

— আপু তুই কীভাবে নিজের ছোট বোনের বয়ফ্রেন্ডকে ভালোবাসতে পারলি? আর তুই ওকে প্রোপোজও করে দিলি! তুই একবারও আমার কথা ভাবলি না?

নিরার কথা শুনে রাহিয়া স্তব্ধ হয়ে গেল। সে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠল,

— মানে? রুদ্র তোর বয়ফ্রেন্ড?

— হ্যাঁ। কিন্তু তুই কীভাবে পারলি ছোট বোনের বয়ফ্রেন্ডের দিকে নজর দিতে? একটুও লজ্জা করল না তোর। বাসায় সবাই সবসময় তোকে একটু বেশি ভালোবাসে বলে তুই এখন আমার বয়ফ্রেন্ডকেও কেড়ে নিতে চাচ্ছিস?

— তোকে কে বলল যে আমি ওকে প্রোপোজ করেছি?

— রুদ্র নিজেই আমাকে কল দিয়ে এসব বলেছে। তুই এটা ইচ্ছা করে করেছিস তাই না? তুই ওকে আমার থেকে কেড়ে নিতে চাস?

কথাগুলো শুনে রাহিয়া নিজেই নিজেকে মনে মনে বলতে লাগল,

— নিরা যে রুদ্রের সাথে রিলেশনে আছে সেটা তো আমি জানতামই না। এখন আমি নিরাকে কীভাবে বোঝাবো?

রাহিয়া এবার বোনের কাধে হাত রেখে বলল,

— নিরা তুই বোঝার চেষ্টা কর আমি জানতাম না ও তো বয়ফ্রেন্ড। জানলে আমি কখনোই ওকে প্রোপোজ করতাম না।

নিরা নিজের কাধ থেকে ওর হাত সরিয়ে বলল,

— তোর কিচ্ছু বোঝাতে হবে না। আমি সব বুঝে গেছি। এতোদিন আমার অন্য সব জিনিসে নজর দিয়ে তোর শান্তি হয়নি। এখন তুই আমার ভালোবাসার দিকে নজর দিয়েছিস। তুই মনে করিস তুই সবার আদরের বলে সবসময় সব জিনিস তুই একাই পেয়ে যাবি। কিন্তু তোর ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। তুই যদি রুদ্রকে আমার থেকে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করিস। তাহলে এবার আমি তোকে ছাড়ব না?

বলেই সে রাহিয়াকে ধাক্কা দিয়ে ওখান থেকে দ্রুত পায়ে হেঁটে বেরিয়ে গেল। নিরার ধাক্কায় সে কিছুটা পেছনে সরে গিয়ে পড়ে যেতে নিল। কিন্তু সে নিজেকে সামলে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। সে বিছানায় গিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল। তারপর মনে মনে বলতে লাগল,

— এটা আমি কি করে ফেললাম? আমি আবার নিরাকে কষ্ট দিয়ে দিলাম। আমার অনেক কাজই ওকে বারবার কষ্ট দেয় যেগুলোতে আমার তেমন দোষ থাকে না। আর এটা তো আমি সম্পূর্ণ আমার অজান্তেই করে ফেলেছি। আমি তো জানতামই না যে রুদ্র ওর বয়ফ্রেন্ড। জানলে কখনোই ওকে প্রোপোজ করতাম না, ওকে দূর থেকেই ভালোবেসে যেতাম।

ফ্লাস ব্যাক

সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর রাহিয়া বেশ খুশি ছিল। কারণ তার ভালোবাসার মানুষ অর্থাৎ রুদ্র আজকে তার সাথে দেখা করতে চেয়েছে। রুদ্র হলো রাহিয়া আর নিরার কাজিন। সে রাহিয়ার দুই বছরের বড়ো। রাহিয়া তিন বছর ধরে ওকে ভালোবাসে। কিন্তু কখনো ওকে বলতে পারেনি। আজকে যখন রুদ্র ওকে ডেকে ওর সাথে দেখা করতে চায়, তখন ও ঠিক করে সে আজকেই রুদ্রকে তার মনে কথা বলে দেবে। নয়তো পরে সে সুযোগ নাও পেতে পারে। তাই সে সুন্দর করে তৈরি হয়ে রুদ্রের সাথে দেখা করতে যায়। নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে সে দেখে রুদ্র আগে থেকেই ওখানে ওর জন্য অপেক্ষা করছে। সে আরেকটু সামনে যেতেই তাকে দেখতে পেয়ে রুদ্র ওর দিকে এগিয়ে এলো। রুদ্র তাকে কিছু বলত তার আগেই রাহিয়া ওর দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

— রুদ্র আমার তোমাকে কিছু বলার আছে।

ওর কথা শুনে রুদ্র বলে উঠল,

— আচ্ছা চলো আগে দুজনে কোথাও বসি। তারপর তুমি তোমার কথা বলো।

কথাটা শুনে রাহিয়াও মাথা নাড়িয়ে বলল,

— আচ্ছা।

তারপর ওরা দুজন একসাথে গিয়ে বসল। বসার পর রাহিয়া চোখ নিচু করে ছিল আর কোনো কথা বলছিল না। তখন রুদ্র ওর দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

— রাহিয়া কি বলবে বলো?

রুদ্রের কথা শোনের পরেও সে কোনো কথা না বলে চুপ করে রইল। সে তখনো চোখ নিচু করেই ছিল। আসলে সে কিছুটা সংকোচ বোধ করছিল এভাবে কথাটা বলতে। তাকে এভাবে চুপ করে থাকতে দেখে রুদ্র বলে উঠল,

— কি হলো রাহিয়া? কি যেন বলবে বলছিলে সেটা বলো? এভাবে চুপ করে আছো কেন? কোনো সমস্যা?

কথাটা শুনে সে তখন মনে মনে ভাবতে লাগল,

— আমার কি ওকে কথাটা বলে দেওয়া উচিত? কিন্তু এভাবে ওকে এই কথাটা বলতে আমার খুব অস্বস্তি লাগছে সাথে একটু লজ্জা লাগছে। কি করি আমি এখন? বলে দিব? হ্যাঁ বলেই দেই আর তারপর দেখি কি হয়?

এসব ভেবে সে মনে মনে কিছুটা সাহস জুগিয়ে নিল। তারপর সে মাথা তুলে রুদ্রের চোখের দিকে তাকালো। সে কাপা কাপা স্বরে রুদ্রের চোখের দিকে তাকানো অবস্থাতেই বলে উঠল,

— রুদ্র আই লাভ ইউ। আমি তোমাকে অনেক দিন ধরেই ভালোবাসি। কিন্তু তোমাকে কখনো বলা হয়নি।

রাহিয়ার আকস্মিক এমন কথায় রুদ্র কিছুটা হতভম্ব হয়ে গেল। সে তার কাছ থেকে এমন কিছু আশা করেনি তাই সে বিষয়টা কিছুটা অন্য ভাবে নিল। সে অবাক হয়ে রাহিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। তাকে এভাবে চুপ করে থাকতে দেখে রাহিয়া বলে উঠল,

— কি হলো রুদ্র? কিছু বলছো না যে? তোমার কি আমাকে পছন্দ না?

রাহিয়ার কথা শুনে রুদ্র আমতা আমতা করে বলে উঠল,

— রাহিয়া আসলে আমি…

রুদ্র পুরো কথাটা বলার আগেই রাহিয়া ওকে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠল,

— সমস্যা নেই তুমি উত্তর দেওয়ার জন্য সময় নিতে পারো। আমি তোমার উত্তরের অপেক্ষা করব। আর উত্তর যাই হবে আমি তা মেনেও নেব।

রুদ্র এবার উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

— রাহিয়া উঠে দাঁড়াও। এখন আমাদের যেতে হবে। আমি তোমার সাথে এই বিষয়ে পরে কথা বলব।

তখন রাহিয়াও সাথে সাথে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

— কোনো সমস্যা? হঠাৎ চলে যেতে চাচ্ছো? তুমিও তো আমাকে কিছু বলার জন্য ডেকেছিলে?

— হুম ডেকে ছিলাম। কিন্তু এখন আমি বলতে চাই না। আমাকে এখন যেতে হবে। আমি তোমার সাথে পরে কথা বলব।

কথাটা শুনে রাহিয়া কিছুটা মন খারাপ করে বলল,

— আচ্ছা।

বলেই সে ওখান থেকে চলে গেল। সে যাওয়ার পরপরই রুদ্র নিরাকে কল দিল। নিরা কল ধরতেই সে একটু আগে ঘটে যাওয়া সবটা নিরাকে বলল। এদিকে রাহিয়া মন খারাপ করে রাস্তা দিয়ে হাঁটছে আর মনে মনে ভাবছে,

— এটা আমি কি করে ফেললাম? রুদ্র হয়তো আমাকে পছন্দ করেনা। আমার এভাবে ওকে হুট করে প্রোপোজ করা ঠিক হয়নি। ভালো ছিল আমরা বন্ধুর মতো ছিলাম। কেন যে ওকে প্রোপোজ করে ফেললাম? এখন আমাদের মধ্যে সম্পর্কটা খুবই অস্বস্তিকর হয়ে যাবে। এতে আমাদের বন্ধুত্বও নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

এসব ভাবতে ভাবতে রাহিয়া বাসায় চলে এলো। সে বাসায় ফিরেই নিজের রুমে ঢুকে গেল। সকালে সে যতটুকু খুশি ছিল তার একটুও এখন তার ভেতরে নেই। সে রুমে গিয়ে জামাকাপড় বদলে বিছানায় শুয়ে পড়ল। তখনই ওর রুমের দরজায় কেউ নক করল। সে উঠে দরজা খুলতেই তার ছোটবোন নিরাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। সে দরজা খোলার সাথে সাথে নিরা দ্রুত পায়ে ভেতরে ঢুকে গেল। তারপর নিরা তার বয়ফ্রেন্ডকে প্রোপোজ করার জন্য রাহিয়াকে অনেক কথা বলল।

বর্তমান

রাহিয়া শুয়ে শুয়ে নিজের করা কাজটার কথা মনে করতে লাগল। সে সারাদিন এসব কথা ভেবে কাটিয়ে দিল। সন্ধ্যায় সে বিছানায় বসে বসে ভাবছিল,

— আমি যে কাজটা ইচ্ছা করে করিনি সেটা নিরাকে কিছুতেই বোঝাতে পারছি না। ও আবারও আমাকে ভুল বুঝছে। কিন্তু সত্যিটা তো অন্যকিছুই যা ও বিশ্বাস করছে না। কিন্তু রুদ্র তো আমাকে বলতে পারত ও আমার ছোট বোনের সাথে সম্পর্কে আছে। তাহলে তো আর আমি না বুঝে এই ভুলটা করতাম না।

কথাটা ভেবে সে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। তখনই তার ফোন বেজে উঠল। সে ফোনের স্ক্রিনে রুদ্রের নাম ভেসে উঠতে দেখে কাপা কাপা হাতে ফোনটা ধরে কানে দিল।

চলবে,,,

( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। তাই কেউ বাস্তবের সাথে গল্পের তুলনা করবেন না। )

#প্রেমপ্রেয়সী
#পর্ব_১
#লেখিকা_N_K_Orni

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here