প্রীতিলতা আসবে বলে ( সিজন ৩ পর্ব ৯

0
642

প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা: আফরিন ইসলাম
সিজন :৩
পার্ট :৯

আশরাফ খান আর তার ম্যানেজার অফিসের ভেতর এসে কাউকেই দেখতে পেলেন না ৷পুরো অফিস ফাকাঁ ৷ কোথাও মানুষের চিহ্ন নেই ৷আশরাফ খান গার্ডকে ডাকতে লাগলো চিৎকার করে ৷কিন্তু কোনো রেসপন্স পেলেন না ৷অতঃপর তিনি হতাশ হয়ে তার ম্যানেজার কে নিয়ে উপরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালেন ৷দুই তলায় কাউকে দেখতে পেল না ৷তারা আবারো সিড়ির কাছে ফিরে এলেন ৷কিন্তু হঠাৎ একটা চিৎকার নিচ থেকে আসতেই তারা দৌড়ে নিচে নেমে এলেন ৷কিন্তু কোথাও কেউ নেই ৷কিন্তু কারো গোঙ্গানীর আওয়াজ আসছে ৷ কিন্তু আওয়াজটা কোথা থেকে আসছে তা আন্দাজ করতে পারছে না ৷চারিদিকে খোজাঁর পর হঠাৎ আশরাফ খানের ম্যানেজার বললেন

স্যার আমার মনে হচ্ছে সিড়ির নিচ থেকে আওয়াজ আসছে ৷

আশরাফ খান ম্যানেজারের পেছনে দৌড় দিলেন ৷সিড়ির নিচে তাকাতেই তারা অবাক হয়ে গেল ৷সিড়ির নিচে গার্ড রক্তাক্ত অবস্থায় পরে আছে ৷কেউ তার মাথায় সজোরে আঘাত করেছে ৷তার রক্তে সিড়ির নিচে লাল হয়ে আছে ৷ পাশেই একটা স্টিলের ফুলদানী পরে আছে ৷আশরাফ খান গার্ডের কাছে বসতেই গার্ড কাঁপা কাঁপা গলায় বলল

স্যার ও আপনাদের ছাড়বে না ৷আপনাকে আর ম্যানেজার স্যারকে ঐ মেয়েটা ছাড়বে না ৷ও নিজে আমাকে বলেছে ৷আপনাদের শেষ না করে ও শান্ত হবে না ৷আপনারা নিজেদের বাচাঁন স্যার ৷

আশরাফ খানকে কথা গুলো বলতে বলতে গার্ড জ্ঞান হারালো ৷আশরাফ খান ম্যানেজারের দিকে তাকিয়ে বলল

ওকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করো ৷আর হ্যা আজকে যা হয়েছে এই খবর যেন বাইরে না যায় ৷আমি দ্বীপকে সব জানিয়ে দিব ৷প্রীতিলতা ফিরে এসেছে ৷এবার ওকে দ্বিতীয় বারের মতো আমি মারবো ৷সকল সিসি ক্যামেরা ফুটেজের রেকর্ড দেখ ৷যদি কোনো উপায় খুজে পাওয়া যায় ৷ আর হ্যা সব কাজ সাবধানের সাথে করবে ৷ মনে রেখো তুমিও আয়ান আর চারুর খুনের সাথে সংযুক্ত ৷

সকালের আলো চোখে পড়তেই প্রীতির ঘুম ভেঙ্গে গেল ৷কাল অনেক রাত করে ঘুমিয়েছে সে ৷ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো নয়টা বাজে ৷প্রীতি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিল ৷তারপর রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেল ৷

নির্ঝর আজকেও প্রীতিকে নিতে এসেছে ৷মানুষটা গত দিন যেই জায়গায় প্রীতিকে রেখে গিয়ে ছিল ৷আজকে ঠিক একই জায়গায় বসে আছে ৷প্রীতি দূর থেকেই নির্ঝরকে গভীর দৃষ্টিতে দেখতে লাগলো ৷ মানুষটাকে কেন যেন বড্ড মন মরা লাগছে ৷কোথাও যেন মনে হচ্ছে সে ভালো নেই ৷প্রীতিকে দূর থেকে দেখতে পয়ে নির্ঝরের মুখেও হাসি ফুটলো ৷নির্ঝর প্রীতির দিকে এগিয়ে যেয়ে বলল

এখন আসার সময় হলো ৷আমি আরো এক ঘন্টা থেকে অপেক্ষা করছি ৷

কেন অপেক্ষা করে ছিলেন ৷আমি তো বলে ছিলাম আসবো ৷আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন কাল আপনার আংটি বদল ৷

নির্ঝর প্রীতির দিকে এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল

আমাদের দেরি হচ্ছে প্রীতিলতা ৷এবার যেতে হবে ৷

প্রীতি নির্ঝরের পেছনে বসে পড়লো ৷কিন্তু গতকালের মতো আর জরিয়ে ধরলো না ৷নির্ঝর বাইক চালাতে চালাতে হঠাৎ বলল

আপনি কখনো কাউকে ভালোবাসেন নি প্রীতিলতা ৷কাউকে কখনো মন থেকে নিজের করে চান নি ৷

প্রীতি বিষন্ন নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বলল জবাবটা দেওয়া কি বেশি জরুরী মিঃ নির্ঝর ৷

না তবে জানতে ইচ্ছে করলো ৷

প্রীতি একটা হালকা শ্বাস ফেললো ৷যেন কত কষ্ট উড়িয়ে দিয়েছে সে ৷প্রীতির চোখে পানির আভাস ৷ নিজেকে একটু শক্ত করে প্রীতি বলল

একজনকে ভালোবাসি আমি ৷সত্যি আমি তাকে ভালোবাসি ৷যতটা ভালোবাসলে তাকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া যায় না ৷যতটা ভালোবাসলে তার সুখে নিজেকে আমৃত্যু যন্ত্রনা দেওয়া যায় ৷যতটা ভালোবাসলে তার জন্য নিজের ভালোবাসাকে গলা টিপে হত্যা করা যায় ৷ঠিক ততটাই আমি আমার আপনিটা কে ভালোবাসি ৷কিন্তু তাকে আর নিজের করে চাই না ৷

নিজের করে চান না মানে কি প্রীতিলতা ৷ভালোবাসার মানুষকে কে চায় না বলুন তো ৷

ভালোবাসাকে বন্দি করে রাখতে নেই ৷তাকে মুক্ত পাখির মতো মুক্তি দিতে হয় ৷ আমি আমার না হওয়া ভালোবাসাকে মুক্তি দিয়ে দিয়েছি ৷

আপনাকে যে পাবে সে দুনিয়ার সব থেকে সুখী মানুষ হবে ৷আপনাকে পেতে ভাগ্য লাগে ৷আচ্ছা আপনার পরিবারের ব্যাপারে এখনো কিন্তু আমায় কিছু বলেন নি প্রীতিলতা ৷

বলবো সময় হলে ৷তত দিন অপেক্ষা করুন ৷

ওকে ৷

কথা বলতে বলতে নির্ঝর আর প্রীতি শপিংমলে পৌছে গেল ৷শপিংমলের সামনে আগে থেকেই মিলা , সাবরিনা সহ সবাই ছিল ৷সবাই এক সাথে ভেতরে ডুকে গেল ৷শপিং এর পুরো সময় প্রীতি নিজে পছন্দ করে সাবরিনা আর নির্ঝরের জন্য জিনিস কিনলো ৷ আর পুরোটা সময় নির্ঝর প্রীতির দিকে তাকিয়ে ছিল ৷কেন যেন চাইলেও মেয়েটার থেকে সে চোখ ফেরাতে পারে না ৷কিন্তু না নির্ঝর দ্বিতীয় ভুল আর করবে না ৷একজনকে ভালোবেসে আজও রাতের আধাঁরে তাকে কাদঁতে হয় ৷এক প্রীতিলতা তার সবটুকু কেড়ে নিয়ে চলে গেছে ৷এইবার আর দ্বিতীয় প্রীতিলতাকে সে জীবনে ঠায় দেবে না ৷তাহলে এবার সে শেষ হয়ে যাবে ৷বাচঁতে পারবে না আর ৷

শপিং শেষে প্রীতি যখন রিকশাতে উঠে চলে যাবে ৷ঠিক সেই সময় নির্ঝর পেছন থেকে প্রীতির হাত ধরে আটকালো ৷ প্রীতি পেছনে ঘুড়ে নির্ঝরকে দেখে হালকা হেসে বলল

কি হয়েছে ৷

নির্ঝর প্রীতির হাতে একটা প্যাকেট দিয়ে বলল

এটা তোমার জন্য ৷কাল পরে আসলে আমি সত্যি খুশি হবো ৷

প্রীতি হালকা হেসেঁ বলল আপনার খুশির জন্য যেখানে আপনাকে ছাড়তে পারলাম ৷সেখানে এটাও পড়তে পারবো ৷

মানে ৷ কি বলতে চাইছেন ৷

কিছু না ৷ সব কিছুর মানে জানতে নেই ৷আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে ৷প্রীতি দাড়ালো না ৷রিকশায় উঠে চলে গেল ৷আর নির্ঝর তাকিয়ে রইলো গতিশীল সেই রিকশার দিকে ৷

রাত ঘড়িতে আট টা বাজে ৷অফিসারদের সাথে মেয়ে পাচারকারী কেসটা নিয়ে আলোচনা করছে প্রীতি ৷ ভার্সিটি র ভিসির কাছে সন্ত্রাসীরা সুন্দর মেয়েদের ঠিকানা চেয়েছে ৷নইলে তার মেয়েকে ধর্ষনের হুমকি দিয়েছে ৷সমস্ত ফোর্স প্রীতি লাগিয়ে দিয়েছে ৷একটা মেয়ের কোনো ক্ষতি সে হতে দেবে না ৷আর ভার্সিটির ভেতরেও যে সন্ত্রাসীদের দল আছে তা পুলিশ আন্দাজ করে ফেলেছে ৷তাই সব কিছু গোপনে আর সাবধানে করবে তারা ৷

রাত ঘড়িতে দশটা দ্বীপ চৌধুরী পুলিশের কাছে গিয়ে ছিলেন ৷পুলিশ দিহানের কোনো খোজঁ পায় নি ৷ নিরাশ হয়ে বাড়ীর দিকে রওনা দিয়েছেন দ্বীপ ৷ছেলের জন্য তার স্ত্রীর অবস্থা ভালো না ৷নিজের ছেলেকে আর পাবেন কি না তা দ্বীপ জানে না ৷তবুও নিজের প্রান প্রিয় স্ত্রীকে বাচাঁতে তার যা যা করা লাগে সে তার সব করবে ৷এমন হাজারো চিন্তা করতে করতে গাড়ী চালিয়ে যাচ্ছেন দ্বীপ চৌধুরী ৷এখন তিনি যেই রাস্তায় আছেন ৷রাস্তাটা বেশ জনমানবহীন ৷ সন্ধ্যার পর এখানে কেউ খুব একটা আসে না ৷মাঝে মাঝে কয়েকটা গাড়ী আসে ৷দ্বীপ গাড়ী চালাচ্ছিলেন ৷কিন্তু হঠাৎ একটা মেয়ে তার গাড়ীর সামনে দৌড়ে এলো ৷দ্বীপ অনেক কষ্টে গাড়ীটা থামালেন ৷মেয়েটা তার গাড়ীর জানালার সামনে আসলো ৷তারপর জানালায় ধাক্কা দিয়ে কাদঁতে কাদঁতে বলল

আমাকে বাচাঁন ৷একটু দয়া করুন প্লিজ ৷ওরা আমাকে মেরে ফেলবে ৷

দ্বীপ মেয়েটার মুখ দেখতে পারছে না ৷সামনে আসা বড় চুলে মুখটা ঢেকে গেছে ৷দ্বীপ গাড়ী থেকে বলল

আমার গাড়ীর কাছে কেন এসেছিস ৷তুই মরলে বা বাচঁলে আমার তাতে কি ৷সর আমার গাড়ীর সামনে থেকে ৷

হয় আমাকে বাচাঁন নইলে আমাকে মেরে ফেলুন ৷তবুও আমাকে ঐ ছেলে গুলোর হাত থেকে বাচাঁন ৷

তুই ভুল মানুষের কাছে সাহায্য চেয়েছিস ৷এবার দেখ আমি কি করি ৷দ্বীপ গাড়ী থেকে বের হয়ে মেয়েটার হাত শক্ত করে ধরে বলল

তোকে আমি ওদের হাতেই তুলে দেব ৷মেয়েটা ছুটার জন্য চেষ্টা করতে লাগলো ৷কিন্তু দ্বীপের শক্তির সাথে পারলো না ৷দ্বীপ মেয়েটার হাত টানতে টানতে বলল

কোথায় ছেলে গুলো ৷আজ তাদের হাতেই তোকে তুলে দেব ৷

চুলে ঢাকা মেয়েটা ঘাড় কাতঁ করে হেসে বলল

আমি কারো শিকার হলে তো কেউ আমাকে ধাওয়া করবে চাচাজান ৷বরং আমি আমার শিকারের পিছু করে এখানে দাড়িয়ে ৷আর আমার শিকার আপনি চাচাজান ৷

দ্বীপ পেছনে তাকালো ৷মেয়েটার মুখ এখনো দেখা যাচ্ছে না ৷কিন্তু দ্বীপ বুঝে গেছে এটা কে ৷দ্বীপ চৌধুরী এবার মেয়েটার হাত ছেড়ে গলা চেপে ধরে বলল

তোকে আজ আমি মেরেই ফেলবো ৷আমাদের ঘুম হারাম করে তুই শান্তিতে থাকবি তা হবে না ৷দ্বীপের কথায় মেয়েটা যেন একটু মজাই পেল ৷তাই সে একটু হাসলো ৷

দ্বীপ চৌধুরী কিছু বলতে যাবে ৷ কিন্তু পারলো না ৷তার আগেই হঠাৎ নিজের ঘাড়ে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করতেই সে মেয়েটাকে ছেড়ে দিল ৷দ্বীপের চোখের সামনে সব ঘোলা হয়ে যাচ্ছে ৷সামনে থাকা মেয়েটাকে অস্পষ্ট দেখছে সে ৷দ্বীপের মাথা ঘুড়ছে ৷সামনে থাকা মেয়েটাকে চেয়েও ধরতে পারলো না ৷সে লুটিয়ে পড়লো পিচঢালা রাস্তার মাঝে ৷

চলবে

প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা :আফরিন ইসলাম
সিজন :৩
বোনাস পার্ট

আজ নির্ঝর আর সাবরিনার আংটি বদল ৷নির্ঝরের দেওয়া প্যাকেট টা এখনো খোলা হয় নি প্রীতির ৷ সারাদিন ক্রিমিনালদের পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে এখন সে ক্লান্ত ৷গায়ে থাকা শার্টটা ভিজে নাজেহাল অবস্থা ৷আজ সারাদিন এতটাই কাজের প্রেশার গেছে যে ৷ কিছু খাওয়ার সময় পায় নি ৷ গত কাল রাতে অজানা কারনে প্রীতির ঘুম আসে নি ৷বারান্দায় এখনো সিগারেটের খোসা পরে আছে ৷ভেতরের অস্থিরতা বেড়েই চলেছে প্রতি মুহূর্তে ৷ মাথার উপরে থাকা ঘুড়তে থাকা ফ্যানের দিকে তাকিয়ে রইলো সে ৷চোখে পলক পড়ছে না ৷ হঠাৎ দরজায় করাঘাত পড়তেই প্রীতির ধ্যান ভেঙ্গে গেল ৷ প্রীতি দরজা খুলতেই দেখতে পেল একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে ৷প্রীতি তাকে দেখে হাসলো তারপর বলল

আমার খাবার নিয়ে চিন্তা করতে হবে না ৷তোমরা রেস্ট নাও ৷আমি পরে খেয়ে নেব ৷

মেয়েটা মাথা দুলিয়ে মুচকি হেসেঁ চলে গেল ৷প্রীতি দরজা লাগিয়ে সিগারেট ধরালো ৷কিছুই তার ভালো লাগছে না ৷কেন যেন আজ সিগারেট খেতেও ভালো লাগছে না ৷প্রীতি সিগারেট ফেলে দিল ৷তারপর চলে গেল গোসল করতে ৷

ঘড়িতে সন্ধ্যা সাতটা বাজে ৷প্রীতি দাড়িয়ে আছে বিশাল এক বাড়ীর সামনে ৷এক দিন এই বাড়ীর বউ হওয়ার কথা ছিল তার ৷বাবা তাকে এই বাড়ীর বউ করতে চেয়ে ছিল ৷আজ যদি তার মা বাবা বেচেঁ থাকতো ৷তাহলে বাকি দশটা মানুষের মতো একটা সাধারন জীবন হতো তার ৷বাকি মেয়েদের মতো তারও এত এত বায়না থাকতো ৷নিজের বাবার গলা জরিয়ে হাজারটা বায়না করতে পারতো ৷মায়ের কোলে শুয়ে নিজের মনের সকল কথা বলতে পারতো ৷ভাইয়ের চোখের মধ্য মনি থাকতো ৷ভালোবাসার মানুষটাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরতে পারতো ৷তার মনের সকল না বলা কথা বলতে পারতো ৷ তার জন্য আজ সাজতে পারতো ৷কিন্তু সময়ের ব্যবধানে আজ সে এক ভয়ানক খুনী ৷কেউ না জানুক তবুও সে খুনী ৷সময়ের ব্যবধানে আজ সে মা বাবা হারা এতিম ৷আজ সে চাইলেই ভাইয়ের গলা জরিয়ে ধরতে পারে না ৷ভালোবাসার মানুষটাও আজ অন্য কারো হয়ে যাবে ৷তবুও আজ প্রীতি কাদঁবে না ৷কারন তার অবর্তমানে ভালোবাসার মানুষটা ভালো থাকবে ৷তার অভিশপ্ত জীবনে ঐ মানুষটাকে জড়ালে সে শুধুই কষ্ট পাবে ৷ভালোবাসার মানুষটা তার হৃদয়ে সুপ্ত ভাবে বেচেঁ থাকুক ৷অন্যের ঘরে তার বসবাস হলেও ৷ভালোবাসার মানুষটা তার হৃদয়ে থাকুক ৷

প্রীতি বাড়ীর ভেতরে প্রবেশ করলো ৷নির্ঝরদের বাড়ী আজ আলোয় ঝলমল করছে ৷চারিদিকে মানুষের ছড়াছড়ি ৷প্রীতি একটু সামনে যেতেই মিলা দৌড়ে এসে বলল

ওয়াও প্রীতি তোমায় আজ কত সুন্দর লাগছে ৷সাদা শাড়ীতে একদম সাদা পরীর মতো লাগছে ৷ভেতরে চলো আজ অনেক মজা করবো আমরা ৷প্রীতি ভেতরে যেয়ে দেখলো সবাই যে যার মতো আনন্দ করছে ৷একটু দূরেই তার বাবার প্রান প্রিয় বন্ধু জামিল দাড়িয়ে আছে ৷আজ তার ছেলে নির্ঝরের এনগেজমেন্ট বলে কথা ৷মিলা নির্ঝরের বাবার কাছে প্রীতিকে নিয়ে গেল ৷তারপর পরিচয় করিয়ে দিল ৷নির্ঝরের বাবা প্রীতির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন ৷নিজের বাড়ী মনে করে আনন্দ করতে বলেছে ৷আর কোনো অসুবিধা হলে জানাতে বলেছে ৷প্রীতি মাথা দুলিয়ে হ্যা বোঝালো ৷

অন্যদিকে নির্ঝরের মনটা ভালো নেই ৷তার বোন নিরুপমা আসবে না ৷কেননা তার দেবর দিহান নিখোজঁ ৷তার চাচা শ্বশুড় একটা কাজে নাকি কোথায় গেছে ৷গতকাল থেকে তার খোজঁ নেই ৷নিরুপমার চাচী শ্বাশুড়ীর অসুস্থ ৷তাই আবেশ আর নিরুপমা আসবে না ৷

হঠাৎ করেই সবার চিৎকারে প্রীতি পেছনে তাকালো ৷ঐ তো সাবরিনা আসছে ৷মেয়েটাকে সত্যি একটু বেশি সুন্দর লাগছে ৷এই মেয়েটা আর যাই হোক তার মতো ভয়ংকর নয় ৷নির্ঝর ওর সাথে অনেক ভালো থাকবে ৷কথাটা ভাবতেই প্রীতির মুখে হাসি ফুটে উঠলো ৷কালো রংয়ের লেহেঙ্গাতে একটু বেশি সুন্দর লাগছে ৷সবাই সাবরিনাকে নিয়ে ব্যস্ত ৷

অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে ৷একটু পরেই আংটি বদল হবে ৷কিন্তু প্রীতি তাকিয়ে আছে নির্ঝরে দিকে ৷সাদা পোশাকে তাকে দুনিয়ার সব থেকে সুদর্শন পুরুষ লাগছে প্রীতির কাছে ৷অপর দিকে নির্ঝরের দৃষ্টি প্রীতির দিকে ৷তার পাশে থাকা সাবরিনার দিকে তার নজর নেই ৷তার নজর একটা সাদা পরীর দিকে ৷তার দেওয়া সাদা শাড়ীতে প্রীতিলতা নামক মেয়েটাকে পরী থেকে কম লাগছে না ৷তার হৃদয়ে দ্বিতীয় প্রেমের বসন্তের নাম প্রীতিলতা ৷কিন্তু এই প্রেম সুপ্ত ৷যা অনুভব করা যায় ৷কিন্তু প্রকাশ করা যায় না ৷

আংটি চলে এসেছে ৷সবাই নির্ঝর আর সাবরিনকে অভিনন্দন দিচ্ছে ৷চারদিকে শুধু একটাই কথা ৷তারা একে অপরের জন্য ৷নির্ঝরের মুখে একগাল হাসি ৷আর সাবরিনা তো লজ্জায় তাকাতেই পারছে না কোনোদিকে ৷আংটি আনা হয়েছে ৷সাবরিনা নির্ঝরকে আংটি পরিয়ে দিতেই সবাই হাতে তালি দিতে লাগলো ৷অপর দিকে প্রীতিও হাতে তালি দিচ্ছে ৷কিন্তু একবার চোখের পানি হাত দিয়ে মুছে নিচ্ছে ৷আর একবার হাতে তালি দিচ্ছে ৷প্রীতি হাসছে কিন্তু কাদঁছে ৷চোখের পানি গুলো বড্ড বেইমান হয়ে গেছে ৷আজ থামতেই চায় না ৷সবার পেছনে দাড়িয়ে প্রীতি হাতে তালি দিয়ে যাচ্ছে ৷চোখে পানি আর ঠোটেঁ হাসি ৷সেই সাথে প্রিয় মানুষটাকে অন্যের হতে দেখার সময় হাতে তালি দেওয়া যে কত কষ্ট ৷তা নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসতে জানা মানুষ গুলোই জানে তাদের হাসিটা নকল হলেও চোখের পানিটা খাটিঁ ৷প্রীতি আর জোড় করে হাসতে পারছিল না ৷দুই হাতে চোখ মুছতে লাগলো ৷বুকের ভেতরটা ভারী হয়ে এলো ৷এখানে আর থাকা সম্ভব না তার ৷এখানে থাকলে মরে যাবে সে ৷প্রীতি চোখের পানি মুছতে মুছতে বেড়িয়ে গেল বাড়ী থেকে ৷
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here